J
মোবাইলে টাইম পাশ, সম্বৃদ্ধ উল্লাস সাহিত্য হাসি ঠাট্টা খুনসুটি বিন্দাস পড়তে হবে নইলে মিস করতেই হবে। মোবাইল +91 9531601335 (হোয়াটসঅ্যাপ) email : d.sarkar.wt@gmail.com
৩১ ডিসেম্বর ২০২০
৩০ ডিসেম্বর ২০২০
২৯ ডিসেম্বর ২০২০
২৮ ডিসেম্বর ২০২০
মোফাক হোসেন
আঁতুড় ঘর
জলের বিছানায় শুয়ে
কি করে ভালো থাকবো?
বড় বড় পাহাড় এসে
চেপে বসে বুকে।
শ্রাবণের বৃষ্টি ধারা
দু'কূল ছাপিয়ে ভিজিয়ে দেয়,
আমার সমস্ত শরীর।
অঝোর ধারায় কেঁদে উঠে,দ্বিবেনী
আপন করে নি কেউ!
প্রতিটা বিনিদ্র রাত
জীবনের দ্বারে দাঁড়িয়ে
মহেন্দ্রক্ষণ জন্ম দেয়
একটি কবিতার।
মনের জঠরে যন্ত্রণার
আঁতুড় ঘরে অনন্ত প্রতীক্ষায়।
শুভ্র ব্যানার্জী
বিচ্ছেদ ও গিটার
সমস্ত বিচ্ছেদের আগের দিন তুমি একটা গিটার কিনলে সন্ধে হবার আগে পাখিদের নির্দিষ্ট ছন্দে দোল খাওয়া দেখে ফেলা যায়।
নতুন গিটার কিনলে তার সাথে একটা গিটার রাখার ব্যাগও পাওয়া যায়।সেটা বাড়তি পাওনা।তাতে একটা বড় পকেট থাকে।সেখানে ক্যাপো রাখতে পারো আর পিক কয়েকটা রাখা যায়।অথবা নতুন একটি নোটবুক।ছক কাটা কর্ডের নামতার বই।
ভারি মিষ্টি একটা গন্ধ থাকে ব্যাগটির গায়ে।বোধহয় বাজনাঘরের গন্ধ।প্রতিদিন যদি রাত্রে ঘুমোবার আগে ব্যাগে তুলে রাখা হয় এইসব গিটার তাহলে সকালে বের করার সময় নাকে এসে লাগে সেই আশ্চর্য গন্ধ।মনে হয় যেন দোকানের আরো কত ছোটো বড় গিটার, হারমোনিয়াম, ইউকিলেলেদের সাথে ব্যাগটির একটা সংসার ছিল অথবা গিটারটির।এ গন্ধটি সেইসব সঙ্গীসাথীদের গায়ের গন্ধ।
যে কোনো বিগিনার প্রথমেই নতুন বাদ্যযন্ত্র পেয়ে ভারি আনন্দ পায়।তুমিও পেয়েছ অথচ বাজাতে বসলে যখন কিছুতেই সেইসব সুর বাজাতে পারো না তখন মনে মনে কষ্ট হয়।মনে হয় এটাতে কিভাবে বাজবে সেইসব দুর্দান্ত ধুন!
আসলে প্রতিটি মানুষ খুব নিভৃতে বাজায় কিছু।কোনো না কোনো যন্ত্র সে নিজের মতো বাজায়।বাজাতে বাজাতে স্মৃতির গভীরে পৌঁছে নিজেকে অনেক দূর থেকে দেখতে থাকে।দেখতে দেখতে তার মাসল মেমরি বাড়তে থাকে।তারপর অনায়াসে বাজাতে থাকে।তখন সন্ধেবেলা একটা বিড়াল তাদের দিকে তাকিয়ে বসে থাকে পায়ের কাছে।একটা মেয়ে স্কুল থেকে ফিরবার পথে রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে পড়ে।একটা ঘুড়ি নির্ঘাৎ তখন আকাশে সবে হাওয়া পেয়ে চোখ খুলল।
বাড়ি থেকে অনেক দূরে চলে যাওয়া যায় এইসব গিটার হাতে পেলে।ফিরবার কথা ভুলে থাকতে পারা যায়।যদিও কোথায় ফিরবে তুমি?রাত্রে ঘরের ভিতর জোনাকি ঢুকে পড়ত যে ঘরে সেই ঘরে!যে ঘরে রাজ্যের দুর্দশা বুকে নিয়ে তুমি কেমন নির্বিগ্নে ঘুমিয়ে পড়তে।যে ঘরের বাইরে তখন কে যেন জ্যোৎস্নার আলোয় ডুবিয়ে ধরেছে এই পৃথিবীকে।সমস্ত বিচ্ছেদের ফাঁকে একটা গিটার তার ছটি তারের নিচে এইসব ফেলে আসা রাতের কথা লিখে রাখে।
এম.সাঈদ
পথশিশু
পথের ধারে আধূল গাঁয়ে
বস্তা হাতে রোজ।
সে'তো এতিম অসহায় এক
কোথায় পাবে ভোজ?
জীবদ্দশায় ভিক্ষে শেষে
সুপ্তি পথের ধারে,
কে বা কারা তাড়িয়ে দেয়,
অ-কারণে মারে!
প্রীতিলীলা পায় না যে সে,
যুগ-শতাব্দির পরে।
একমুষ্ঠি ভাত হবে কী ভাই?
জীবন বাঁচার তরে!
ঈদের পরে ঈদ চলে যায়,
জীর্ণ কাপড় পরে।
নতুনত্বের পায় না সে স্বাদ,
কেড়ে নিলো ঝড়ে?
শিক্ষা নামের পঙ্খিলতায়
তাহার সখ্য -শোক,
দিবস যেনো তাহার চোখে
স্বপ্ন-গড়া হোক।
হাসপাতালের ঐ চত্বরেও
হয়না রে তার স্থান।
শান্তির নিবাস পাবে যখন,
কবর করে প্রস্থান।
কতো কষ্ট অনাদরে,
গড়ে তাদের কায়া।
স্বেচ্ছাসেবী হৃদয়পটে
আছে তাদের মায়া।
স্বেচ্ছাসেবী ভাই-বোনেরা
নিচ্ছে তাদের খোঁজ,
পড়ার নীড়ে সপ্তাহ পরে
দিচ্ছে একটু ভোজ।
সরকার আমার মানব প্রিয়ো
রাষ্ট্র চালক চাবী,
মৌলিক স্বত্ব ফিরিয়ে দাও
এই-তো- আমার দাবী।
২৭ ডিসেম্বর ২০২০
বিকাশ সরকার
খাদ্যশস্যের লোকগান
কুয়াশা সরিয়ে দেখা গেল মুখখানি
চাকু নিয়ে কবে থেকে দাঁড়িয়ে রয়েছি বোকা বোকা
অবশেষে নরম রুটির টুকরো কাছে এলো আজ
বাইরে দুপুর, নানকিং রেস্তোরাঁর গোর্খা বয়
বিয়ারের বোতল খুলে যেন সূর্যাস্ত ঢেলে দিয়ে গেল
ওই যে রজনীগন্ধাগুচ্ছ, তারাও তো ফেনা ও লজ্জায় মাখামাখি হলো
অপরিমিত রোমান্টিকতা হলো, এবার
এসো খাদ্যশস্যের লোকগানে আগামী জীবন কাটিয়ে দেওয়া যাক
কবি মিশ্র
দোসর
আমরা ছিলাম অতি কাছাকাছি-পাশাপাশি
কেউ কারো খোঁজ রাখি না...
এক ওড়া পতঙ্গ খবর দিলো এপাড়ায়...
কিছু আগন্তুক এসেছে ,করছে আলোচনা..
দেখাটাই সব হোলো, অন্তর ফাঁকা
থামো থামো কেন করো , ধ্বংসের গান...
অসহ্য কুঠারাঘাতে শেষ হল আরো কিছু প্রান...
হা হা কারে ভরে গেল প্রকৃতির কান...
প্রানপনে চিৎকারি, ফিরে আয় ওপাড়ার তুই...
সুখে দুখে মোরা ছিনু ভাই ভাই...
দিন যায়, রাত যায়, বছরের শেষে
সব ঋতু বুঝি বরণ করল এসে...
ছুটে এল ওপাড়ার নীড় ভাঙা পাখি...
আবার এসেছে ফিরে , কলতানে ভরে উঠে আঁখি...
নতুন পাতা , ফুলে, ফলে উঠল ভরে ও পাড়ার ঘর...
সুখে দুঃখে দুজনেই ..আমরা দোসর...
কাকলী দাস ঘোষ
সাদা ফুল
তীরভূমি ছুঁয়ে যাওয়া ভেলায় তোমাকে দেখেছি
জলের আশ্রয়ে ভেসে ওঠা সাদা ফুল আমি
খানিক জীবন্ত।
দুরূহ পাঁচিল ভেঙে বারবার ভেসে উঠেছি
তোমাকে দেখেছি।
আশার ব্যাপারী আমি
সাদা পায়রার মত উড়ে যেতে চেয়েছি কোটি কোটিবার
ভেলা ভেলা ছুঁব ভেলা ছুঁব
সাদা ফুল -সাদা ফুল ছোঁয়াছুঁয়ি খেলা-খেলা-খেলা চায়
ভেলা তীর ছুঁই ছুঁই
জল ভাঙা সাদা ফুল মৃত জলেই॥
জারা সোমা
ক্ষত
কিছু সন্ধ্যা ভেসে যায় সুরে সুরে
তানপুরার ধুন নিয়ে যায় সুরালোকে
সেদিনের বাধা তারে ফোটে বোল
স্বর মেলায় প্রথম প্রেম- প্রতিশ্রুতি
যে মেয়ে গাঢ় কাজল আঁকে চোখে
গভীর মোহ ও লিপ্সায় ঢেকে রাখে বুক
সেও জানে শ্রম ও শ্রমণের মাঝের ফাঁক
রঙ্গনফুলে সাজানো খোঁপা রঙ্গ করে
পেটের খাঁজ উন্মত্ত স্তনের অহংকার দেখে
আয়নায় দাঁড়িয়ে নিজেই নিজের স্তুতি করে
সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত নামতেই
মেয়েটা মেহগনি তাক থেকে ধুলো ঝেড়ে
নামিয়ে আনে অতীত, তখনই
নলেনগুড়ের পায়েসের গন্ধ ভাসে বাতাসে
টুকরো স্মৃতি, টুকরো সংলাপ
হঠাৎ করেই নিভে যায় বাতি
মেয়েটি এক লহমায় খসিয়ে ফেলে বুকের আঁচল
যেখানে মায়ের প্রেমিক ছেড়ে গেছে
আজীবনের দংশন-ছাপের ক্ষত।
তাহমিনা সিদ্দিকা
বল সাধু তারে
যে তোরে বেশ্যা বলে তারে তুই বল সাধু,
আমি এক পাগলা কানাই পাগল বেশে সত্য জানাই।
তোর রূপ নয়নে দেখরে শয়নে খেলছে কেরে নিয়ে যাদু,ও তোর ত্রিবেনী তিন দরজায় কালো মেঘে বিদ্যুৎ গর্জায়।
কৃষ্ণ বলে বিষ্ণুলোকে চেয়ে দেখ ঐ যাচ্ছে রাধে,যে তোরে বেশ্যা বলে তারে তুই বলরে সাধু!
অর্কদীপ সরকার
আদর
শীতের আদর, গরম চাদর
কাঁচা ঘুম, ভাঙা চোখ ।
বুক ছোঁয়ানো, নরম ঠোঁটে
আদরের জয় হোক ।।
বোতাম ভাঙা, সাদা জামা
লিপস্টিকে হল লাল ।
ব্যস্ত অফিস, গরম টিফিনে
আদুরে সাতসকাল ।।
রোদে পিঠ পাতা, ছুটির দিন
অগোছালো শাড়ী, সেফটিপিন।
ঘুরতে যাওয়া, কফির ভাঁড়
আদুরে হাঁটা, রাস্তা পার ।।
মাথায় বালিশ, হাজার নালিশ
খুনসুটি মাখা, কান ফিসফিস ।
কপালে চুমু, ঘুমে মাখা চোখ
আদরের জয় হোক।।
সুমি সৈয়দা
ভাবের মন্থন
গোটা বিকেলের সাদাটে বাদামী আকাশটাকে বসিয়ে দিলাম
বিছানার মাথার কাছটিতে।
ধানরঙা গালে আমি এঁকে দিতে চাইলাম
গঙ্গা ফড়িঙয়ের টানটান উন্মাদনা।
জীবনের কোনায় কোনায় বিছানো যায়
সর ওঠা দুধের বলকানি আমেজ।
শ্যাওলা দুপুরের ঘাটটি আমায় নিঃসঙ্গতায় ডুবিয়ে ফেললে
পুকুরের ছায়া মাখি কোন এক আষাঢ়ী বাতাসে।
ময়লা পড়া চাঁদের আলোয় হৃদয় খুলে গেলেই
পাহাড়ী ঝর্ণার কুলকুল হাসি বাড়ি খেতে খেতে পাহাড়ের সবুজ ঘুমটাকে চোখের কোলে এনে
পুরো রাত ডুবে থাকে আধারের প্রেমে।
নুরুল হাসান
নতুন পোশাক
নতুন পোশাকে সেজেছ তুমি,
ফেলে আসা পুরানো ছিন্ন পোশাকের
ভেতরের মানুষটা এখনও ধরা পড়ে
যতই লুকানোর চেষ্টা কর তর্জনে গর্জনে;
পুরানো রক্তের দাগ এখনও
তোমার হাতে খেলা করে।
পুড়ে যাওয়া নগরের ছাই
এখনও উড়ে বেড়ায় তোমার নিঃশ্বাসে;
নতুন পোশাকের ভেতরের মানুষটা
ছটফট করে। ছেদক দাঁত সুড়সুড়ি পায়
রক্তের স্বাদ সে বড় অদ্ভুত!
ঢাকতে পারে না নবসাজে।
শুকানো কান্নার দাগ এখনও
লেগে আছে তোমার পদতলে
ঘৃণার বিষবাষ্প আবৃত আছে
নতুন পোশাকে, সুযোগের অপেক্ষায়
প্রহর গুনছে উপযুক্ত আলো বায়ু জলে
বাড়ছে আগাছার বিষবৃক্ষ।
লুটপাট হয়ে গেছে ফুলের সৌন্দর্য
তোমার আঙুলে, শিশ্নে তার সুগন্ধ
এখনও ভাসে, নতুন পোশাক
আটকাতে পারেনি অবাধ্য বাতাস
মুষলধার বৃষ্টিতে আর্দ্র সজ্জায়
আবরণ হবেই উন্মোচিত।
শান্তা কামালী
একজন স্বাধীনতাকামী বীরের বিপ্লবী গল্প
স্বাধীনতা, স্বাধীনতা,স্বাধী নতা?
তোমরা কি জানো স্বাধীনতা কাকে বলে?
আমি জানি....
আমি জানি স্বাধীনতার মর্মবেদনা।
বর্বর পাকিস্তানী সৈন্যরা যখন ছিনিয়ে নিয়েছিল
আমার প্রাণ প্রিয় প্রেয়সীকে,
কেড়ে নিয়েছিল আমার কলিজার টুকরো সন্তান কে,
রেহাই পায় নি আমার বৃদ্ধ পিতামাতা....
তখন এই মাটি ছুঁয়ে প্রতিজ্ঞা করেছিলাম এই বাংলাকে,
এই বাংলা মা কে স্বাধীন করে তবেই ঘরে ফিরব।
তারপর কত রাত কত দিন
নরপিশাচদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ যুদ্ধ আর যুদ্ধ করেছি....
সে যেন আরেক কারবালা প্রান্তর,
হারিয়েছি বাংলার কত দামাল ছেলেদের!
এক সাগর রক্তের বিনিময়ে...
৩০ লক্ষ বীরের আত্নার আত্নত্যাগে...
কত মায়ের সম্ভ্রমের বিনিময়ে...
বিধবা বালিকা বধুর অশ্রু ধুয়ে ...
আমরা এনেছিলাম স্বাধীনতার এই লাল টুকটুকে সূর্যটাকে,
তোমরা কি পারবে স্বাধীনতার এই লাল সূর্যটাকে বুকের তাজা রক্ত দিয়ে ধরে রাখতে?
যদি পারো, যদি পারো....
তাহলেই বুঝব তোমরা স্বাধীনতা কি বুঝতে পেরেছ।
সেদিন স্বাধীনতা ধরা দেবে তোমাদের।
প্রেমাংশু শ্রাবণ কবির
প্রিয়ন্তী
প্রিয়ন্তী,
তোমাকে দেখার পর মনে হলো
আমি এতো সবুজ ভালোবাসি কেনো---
---কেনো--এরোপ্লেনের চেয়ে ঘাসফড়িং এতো বেশি প্রিয়।
কতো কিছুই মনে হলো....
অগোছালো এ জীবন কতোটা বেমানান,
মনে হলো গায়ের জামাটা কতো পুরনো,
পায়ের স্যান্ডেলটা রঙ চোটে গেছে....
তোমাকে দেখার পর মনে হলো
ঈশ্বর খুব সুন্দর চোখ বানাতে পারেন
গভীরতা দিতে পারেন--
ঘুম মেখেও দিতে পারেন।
মানুষের মুখে এঁকে দিতে পারেন দেবীর ছবি
ঈশ্বর খুব সুন্দর মানুষ বানাতে পারেন
মানুষের চোখে এটে দিতে পারেন
হরিণের চোখ।
তোমাকে দেখার পর খুব বেশি.... মনে হলো
কিছুটা মানুষ হওয়া ভালো
ভালো শিল্পের চেয়ে
প্রেমের জীবন।
২৬ ডিসেম্বর ২০২০
মধুমিতা রায়
নীলখাম
কুয়াশার ভিতর হেঁটে চলি
প্রিয়জনের চিঠি ডাকে
পার করি ঘন আস্তরন।
হাত কাঁপে
নীলখামে নীলবিষ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে
ঠোঁট চোখ সব নীল
কুয়াশা পাতলা হয়ে আসে
ম্যাড়ম্যাড়ে ধূসর মাঠে
তালগাছ একা সেই।
সোনালী শস্য ফুরিয়েছে কবে
নীলখামে আঁকাবাঁকা বিষ অক্ষর
আঙুলে দহন ছড়ায়
মস্তিষ্কের শিরাজুড়ে নীল নদী।
একতারা হাতে কে গায় রবিবাউল!
পথের ধারে ঘাসফুল হেসে ওঠে
রামধনু ফ্রক পরে সেই মেয়ে
ছুটে যায় আলপথ দিয়ে।
টোল খাওয়া গালে তার
হেসে ওঠে ভোর
খাম থেকে ঝরে পড়ে
সহস্র বকুল।
সুশান্ত দাস
মৃত্যু নয় যুদ্ধ চাই!
আজ আর বারুদের গন্ধ নেই
রুদ্ধদ্বারে অপেক্ষারত সৈনিক
তবুও অসংখ্য মৃত্যুর মিছিল।
আজ শুধু যুদ্ধের ঘোষণা
অস্ত্রহীন বারুদহীন কথার খেলা
তবুও অসংখ্য মৃত্যুর মিছিল।
যুদ্ধ নয় শান্তি চাই অর্থহীন
বারুদের কালো ধোঁয়া নেই
তবুও অসংখ্য মৃত্যুর মিছিল।
ধ্বংসে হতাহতের স্তূপ নেই
সৈন্যের রণসাজ নেই
তবুও অসংখ্য মৃত্যুর মিছিল।
আমি তুমি আমরা অসহায়
রাজা-মহারাজা সব কাজ করছে
তবুও অসংখ্য মৃত্যুর মিছিল।
সুপ্রভাত মেট্যা
অন্ধকার সমস্ত জীবন
অন্ধকার সমস্ত জীবন .....
সড়ক রাত দীর্ঘ হয়ে চলে গেছে দূরে ।
কোথাও কোনও ভাই নেই , বন্ধু নেই ,অল্প বিস্তর আলো,নক্ষত্রের ছুঁড়ে দেওয়া ,ওই পড়ে আছে ধুলায়। সেই আলোতে আমি তোমাকে দেখি অপরূপ সুন্দরী , ভয়ে ভয়ে কবিতা হেঁটে আসছ, গুটি গুটি পায়ে ,চুপি চুপি, আমার দিকে। আমার না - খেয়ে বড় হয়ে ওঠা জীবন স্তব্ধ তাকিয়ে থাকে তোমার দিকে। দিগন্ত পাহারায় লাঠি নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে আমার বিশুদ্ধ চেতনা। ঝড় কিংবা প্রবল ঝাপট এলেও একটা পাহাড় বোঝাপড়া করে নেবে সে নিজের ভিতর ।
এখন রৌদ্র উঠলে ,
তোমার গল্প শুরু হবে জানি। পিছিয়ে পড়ার গল্প , ভাতে নুন মাখানো অনেক দুঃখের তোমার পৃথিবী - গল্প , আর অনেক অনেক ভালোমানুষীর ভেসে যাওয়া তোমার কবিতার গল্প ।
আইরিন পারভীন
কায়া
শরীরী বা অশরীরী
অনেক আত্মার আনাগোনা,
মনের ভিড়ের মাঝে আমি খুঁজে চলেছি তারে যারে পাইনা।
শূন্য মাঝেই এঁকে রেখেছি পূর্ণতার জলছবি,
শুন্য মাঝেই খুঁজে নেব বন্ধু আমার প্রতিচ্ছবি।
তুমি আলোর পথে এগিয়ে গিয়েছো অনেক দূরে!
এতটাই দূরে যে
তোমার অবয়ব মনে নেই
শুধু প্রতিচ্ছবি টুকু ধরা আছে হৃদয়ের দেয়ালে।
শুধু তোমার প্রতিচ্ছবি দেখলে ক্ষনিকের নিরাশায়
আজও মিথ্যে বেঁচে উঠতে ইচ্ছে করে'''''''
জন্ম হোক প্রতিচ্ছবি, যেই প্রতিচ্ছবির প্রতিবিম্বে ঝলক পড়বে হাজারো আলোর হাজারো আলোকিত প্রতিচ্ছবি।
মাসুদ আহমদ চৌধুরী
তাসের ঘর
ক্ষণস্থায়ী ভবের মাঝে
কেনই বাঁধিস ঘর,
আপন আপন ভাবিস যারে
সেই হবে তোর পর।
আপন নয় তোর ভিটেমাটি
নয়তো দালান ঘর ,
চোখ বুজলে শুইতে হবে
অন্ধকার কবর।
পাড়া পড়সি কাঁদবে সবে
শুনিয়া খবর ,
তনের খাজনা দিতে কেহ
করিওনা কসর।
রঙ্গের ঐ দালানবাড়ি
রঙ্গের এই সংসার,
সবকিছু রইবে পড়ি
সঙ্গে যাবে ঈমান আমল পূন্য আছে যার।
রীনা দাস
উল্টো পাল্টা
চেরা গলায় কালো কাক
শাঁখ বাজিয়ে আসে
ময়না পাখি উড়তে গিয়ে
বসে পরে ঘাসে ৷
কাঠ ঠোকরা গাছ ঠোকরায়
ঠক্ ঠকাঠক্ ঠক্
এক পায়ে দাঁড়িয়ে আছে
সাদা একটা বক ৷
কোলা ব্যাঙে মাঠ ভর্তি
ডাকছে ঘ্যাঙর ঘ্যাঙ্
ছেলেরা সব মজা পেয়ে
মারছে তাদের ল্যাঙ্ ৷
হাতে লাঠি চলে দাদু
গুটি গুটি পা
কাছাকাছি গেলে দাদু
দেয় এক ঘা ৷
রোববারে জন্ম আমার
শনি,মঙ্গলে নয়
তাইতো আমায় দাদু বলে
ভেরি গুড্ বয় ৷
মনি জামান
বর্ণমালা
অঞ্জলিতে চুম্বন ছিল আশিসের পেলবতা, সৃষ্টির উল্লাসে বর্ণগুলো আজও কাঁদে।
শব্দতে পঙ্কতি মালা অঙ্কনে তুমি মিলে মিশে এক হলে অঞ্জলি তুমি,ইথার কম্পিত মেঘের গর্জন প্রবল বৃষ্টি,আশিস বিন্দুতে এক ফোটা জল বিন্দু বিসর্গ তুমি।
বর্ণতে মহিষী প্রেমে তিলোত্তমা,বায়ান্ন পঙ্কতি লেখে ইতিহাস সে অঞ্জলি কাব্য কথা।
একুশে বাসর সাজে অ আ ক খ অঞ্জলিতে গান গাই,
"আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙ্গানো একুশে
ফ্রেরুয়ারী আমি কি ভুলিতে পারি"
অদৃশ্য প্রেমে দৃশ্যত তুমি আমার আদরের বর্ণমালা।
শর্মিষ্ঠা মজুমদার
শ্যামল রায়
বৈশাখী দাস ঝিলিক
অন্ধকার জীবন থেকে
দূরের পাহাড় থেকে নিয়ে আসা আলো সমতল সাজিয়েছে নদীর সাগরে
মানব জীবন হতে রাস্তা ডিঙাতে গিয়ে মায়ার বাঁধন কেটে কেটে পড়ে !
সেদিন চৈত্র মাস তোমরাতো ছিলে বুকে হৃদয়ে মাখিয়ে ভালবেসে আশা
এ জীবন্ত কায়ার উপর স্বরঋপু এঁকে মায়া ভেঙে চোখ ভাসা ভাসা
দুরাশার ভিড়ে গাঁথা অবুজ পাখির মতো খাঁচা ভেঙে মেলে দিলে ডানা
ছকে গাঁথা প্রতিটি জীবনের মতো সবুজদ্বীপের ছাদে মেঘ ভাঙা ভাঙা
চেয়ে দেখ আমি আছি প্রকৃতির ঘর ছেয়ে একাকীত্বর সাথে হেসে খেলে
ভেঙেছি ভেঙেছি অনেক ভেঙেছি নিজেকে সমুদ্রের মতো ঢেউ খেলে খেলে
নির্জন অন্ধকার ঘেঁটে জলরঙ ক্যানভাসে তোমাদের হারিয়েছি তারাদের মাঝে
রূপালী স্বপ্নের ভেতর তারা ছিল এই আছে কলিজা দাপানো নরম হৃদয়ের খাঁজে !
২৫ ডিসেম্বর ২০২০
শুভমিতা বিশ্বাস
স্মৃতির শীত পোশাক
শীত এলেই আমার মনে পরে যায় পুরোনো রোদ্দুরের কথা
যে রোদ্দুরের প্রতিদিন সাতরঙের মাদুরটা বিছিয়ে দিতাম
নরম উলের ভেতরে নিজের ঠান্ডা শরীরটাকে গুছিয়ে রাখতাম
ঠাম্মার শালের ভেতর মুখ গুঁজে শীত আর আমি লুকোচুরি খেলতাম
এই শীতকালেইতো,গোটা ছাদটা পশমের রাংতা দিয়ে মুরিয়ে দিতাম
পুরোনো বালিশগুলো যখন, মায়ের হাত ধরে রোদ পোহাতে আসত
আমি তখন দৌড়ে গিয়ে মায়ের হাত ধরে লতিয়ে যেতাম
গোটা শীতকাল জুড়ে গল্প লিখতাম,
বুড়ো আকাশের কাছে ছড়া শুনতাম
কুয়াশাতে বসে আগুনের সিদ্ধি লাভ করতাম
শীত এলেই আজও মনে পরে যায়
মায়ের হাতের বোনা নীল হলুদ সোয়েটারের কথা
মনে পরে যায় পুরোনো কুয়াশা,আলসে রোদ্দুর
মনে পরে যায়,চিলেকোঠার পাশে সোনার মতো উজ্বল শাল গায়ে আমার
ধূসর রঙের ঠাম্মাকে।
পরাণ মাঝি
শিরোনামহীন
হয়ত জেনে গেছে পাখি সজনের স্বাদ
অভিজ্ঞতার ফসলের ধারা উপধারা সব উন্মাদ।
শাবককে তাই ডানায় ঢেকেছে, বন্ধ দরজা, বুকের ভেতর ডুব সাঁতার,
সাদা খাতায় তাই মাটি খুঁড়ে সাজাচ্ছি আক্ষরিক কবর ।
লকলক করে বেড়ে ওঠা পংক্তিরা শিরোনামহীন ---
ঋণ বাড়লেও পা রেখেছি সবুজ ঘাসে,
প্রতিক্ষারা হাঁটু মুড়ে বসে আছে
এ জীবন্ত শবের চারপাশে।
চূর্ণী নদীর জলে ভাসিয়ে দিলাম আজ হৃদয়ে যা ছিল সবি তা,
তুমি ভালো থেকো রক্তিমা , ভালোবেসো শ্রেয়সী কবিতা !
মুন চক্রবর্তী
শিশিরে শিশিরে
কবিতা আবৃত্তি হলে শব্দ সুন্দর হয়ে উঠে
অপেক্ষার সকাল শিশিরের আলতো ছোঁয়ায় ঘাস প্রাণ পেয়ে থাকে
শিশিরের বিশাল রাতের কথা জানে শুধু দারিদ্রতা
মূখের আর্দ্রতা মেটাতে বিশাল আয়োজন পার্লরে।
এই শিশিরের শুভ্রকান্তিতে ভূস্বর্গ সেজে উঠে আলাপনে
হলুদ ফ্রকের বাহারিতে শস্য পূর্ণ বসুন্ধরা
পাকা ধানের আইল ধরে ছেঁড়া ফ্রকেরা বেপরোয়া
দুটি শালিক আর চড়ুইয়ের মাতামাতি রৌদ্দুরে
শিশিরে শিশিরে জমে থাকা চোখের জল দারিদ্রতা।
সকাল জানান দেয় দু’টি রুটির তাগিদ পথে প্রান্তরে
বিলাসিতায় ডাইনিং টেবিলে বাহারী শিশির
পাহাড়ি নেমে আসে কমলার বনে শিশিরে শিশিরে!
রবিরাম হালদার
শপথ নিন
মানবিকতা ধুলায় গড়ায়
মনুষ্যত্ব খায় খাবি,
মানুষের আচরণ দর্শনে
পশুত্বে যাবে ভাবি৷
সীমান্তে সংগ্রামের হুঙ্কার
বাতাসে বারুদের গন্ধ,
জাগুক মনুষ্যত্ব মূল্যবোধ
রক্তপাত হোক বন্ধ৷
আমরা সকল মানুষ জন
মূল্যবোধের পাঠ নেব
আদর্শবান মানুষ গড়তে
সঠিক দিশা দেব৷
ভাবছেন দেরি হয়ে গেছে
হোক না দেরি বন্ধু,
মানুষের মত মানুষ গড়তে
লঙ্ঘিব বাধার সিন্ধু৷
আগামী দিনে মানুষ গড়তে
শপথ নিন আজ,
শিক্ষক বন্ধুরা শুরু করুণ
মানুষ গড়ার কাজ৷
পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ জীব মানুষ
ভুললে চলবেনা ভাই,
আসুন আমার মানুষ বন্ধু
মনুষ্যত্বের গান গাই৷৷
মুনমুন ইসলাম মুনা
পাঁজরের হাড়
আমি পূর্ণিমা
মৃদু আলোর রানী ভরা জ্যোৎস্না,
ধারকৃত পাঁজরের হাড়।
ধূসর কালো কার্পেটের বুকে আমার
সকল প্রোজ্জলিত এক গ্রহ
উজ্জ্বলতা সবি তোমার।
তাই বলে কি তুমি চেয়েছিলে?
পূর্ণিমা হয়ে আলো দিয়ে যাবো আর
ক্ষয়ে যাবে অমাবস্যায়।
এক চিমটি আদরের লোভ
মেঘের ঢেউ এসে করে কান্নায় কলরব।
সন্ধ্যা বাতির আলো হয়ে আসি ভোরের ঘোর
অবধি জ্বলে আমার ভালোবাসার জ্যোতি।
অবশেষে মৃদু আলোর ভরা পূর্ণিমা দীর্ঘশ্বাস
ফেলে হারিয়ে যায় আরেকটি শূন্যতার রাত্রি।
তবুও তুমি বুঝলে না,,,
আমি যে তোমার ধারকৃত পাঁজরের হাড়
স্বর্গীয় নিখুঁত শিল্পে বানানো দুই আত্মার
ভালোবাসার সাথী।
মাহমুদু হাসান গালিব
মেঘবলাকার ইতিকথা
মেয়েটি মেঘ হতে চেয়েছিল,
ডিঙি নৌকোর ছেঁড়া মাস্তুলে আঁকতে চেয়েছিল মদিরতার আমেজ,
বলাকার সাদা ডানায় ভেসে;
এক আকাশ লিখতে চেয়েছিল নভোনীলের বুকে
খেয়ালখাতার আস্তিনে লুকোতে চেয়েছিল;
কিছু উদ্দাম যাতনাপুঞ্জ....
যা স্থবির করে বারবার,মুছে দেয় কল্পলোক;
রাতের বিষণ্ণতাঘেরা নির্মোহ কেকাধ্বনির মতো।
কোনো একদিন,ঝাপসা কুয়াসার চাদরে,
দেখা গিয়েছিল রামধনুর রঙমিলান্তি,
সাময়িক;হয়তো বা অলিক
অথবা কোনো আগামী রূঢ়বাস্তবের আগাম খতিয়ান
বোঝেনি; মগ্নঘোরাশ্রিতা শ্রান্ত দিগাঙ্গনা,
জোনাকির আনম্র আলোয় দেখেছিল
বিধাতাকে একটু একটু চুঁইয়ে পড়তে;
কালের শিখিপাখা রঙ বদলেছিল ক্ষণিকেই।
মেয়েটি আর উড়ে বেড়ায় না,
আঁধারিয়া বাতাস ঢেকে শুয়ে থাকে গুটিসুটি,
গম্ভীর স্বরে গোঙায় যন্ত্রণায়; বিশ্বাসভঙ্গের ভাঙাচাবি
আলগোছে ঝোলে পিঠের ওপর,
জঙধরা তালাটায় আর মোচড় দেওয়া হয় না,
খুলে যায় না কোনো আশ্চর্য গুহার জাদুদরওয়াজা
যেখানে থরে থরে রূপকথা লুকিয়ে থাকে।
মেয়েটি এখন বর্ষা হয়েছে,
কারণ-অকারণে ঝরে পড়ে সাহারার বুকে,
প্লাবন নামায়;তছনছ করে যাপনচিত্র
একূলের ধ্বংসায়ণ লেখে ওকূলের সৃষ্টিসূত্র,
ভাঙার মাঝে গড়ে ওঠার এক নৈসর্গিক পিছুটান
তবু কোনো একদিন গুরুগুরু স্বরে;
কিছু ব্যথা নেমে আসে সময়ের বুক চিরে,
বিদীর্ণ করে শুষ্কহৃদয় শোনায় বিরহিয়া অঙ্গীকার,
প্রলয় শেষে;বৃষ্টিস্নাত ছাতিমফুল রোদ মেখে হাসে
সময় চলে আবার সময়ের রাস্তায়;
শুধু এক মেঘদূতী হারায় বিস্মৃতির অন্তরালে।
রিনা নাসরিন
মা তুমি
মা তুমি সতি সাধ্য তুমি অর্ণপূর্ণা
তুমি জন্মধাত্রীর গর্ভধারণী মা
তুমি নচিকেতা তুমি অন্নেশ্বা।
তুমি নির্যাতিত তুমি দেশের অহংকার।
তুমি স্নিগ্ধ মায়াবিনি শরৎ এ উড়া
শান্তির প্রতীক
তুমি অশ্ব তুমি তপস্যা আবার তুমি পূর্ণিমা
রাতের চাঁদ।
তোমার যেমন নাম যশ আছে তেমনি আছে
তোমার বদনাম
শত্রুদের দমন করে হয়েছো তুমি অম্লান।
পিতার অহংকার তুমি তেমনি সবার
চোখে জয়তী
স্বামীর ঘরে হয়েছো রমণী
ক্ষণে ক্ষণে বাদলের ধারায় বদলে যায় নাম
তুমি ছাড়া অচল পুরুষ তবু ও পাবেনা
কখন ও দাম।
কবি সৈয়দা
হিরন্ময় সুখ
আজ কি আকাশ দেখলে?
চোখ ঝাপসা হলে অাকাশ মেঘাচ্ছন্ন ঠেকে
রেলিঙে চিবুক ঠেকিয়ে বৃষ্টি বিন্দু মুখে মেখেছি,জানো।
আহ্ , আহা মন ছলছল দীঘির মৌনতায় ডুবেছি
আজ একবারো কি ডায়েরীর পাতাটা কোলে নিয়ে ময়ূরের পালক ছুঁয়েছিলে?
কি হবে ,স্মৃতির ঝলক তুলে এনে ঝুলিতে ভরে
ঝর্নার জলে মুখ তুলে চোখ ভিজিয়েছি ,শোনো।
মনে হচ্ছিলো ডুবে যাচ্ছি ,ডুবে যাচ্ছি অতল গভীরে
আজ কি হলো এরপর ,বলি আসো
থাক ,বলে তবে কি হবে? শুনবেনা । বড্ড আনমনা হয়েছো । কি ভাবো অমন ,বলোতো।
দেখছোনা লিখে রেখেছি তন্ময়তা বুকের হিরন্ময় তটভূমিতে,
যেখানটাতে বুনন করে গেলে মেঘের ঘনঘটা।
ওয়াসিম খান
পথিক
পথিক ছুটে অজানা পথে
কিসের এতো তাড়া?
থমকে পথে হঠাৎ ভাবে
ঠিকানা তার তো হারা ।
পিছনে ফিরে তাকাই দুরে
কিসের এতো মায়া?
শূন্য পথে পথিক একা
দেখে নাকো কারো ছায়া ।
দুপুর বেলা কিসের টানে
কান্দে কেন মন?
পথিক মনে চৈতী বায়ে
পোড়ায় সারা ফাগুন।
দিবস শেষে পথিক পথে
অকারনে সে হাসে।
ঝড়ের রাতে চাঁদটি খোঁজে
বৃথাই হিসাব কষে ।
ওয়াহিদা খাতুন
বড়োদিন
বড়োদিনের ছুটি
খেলবো লুটোপুটি ;
মণ্ডামিঠাই গজা
হবে ভীষণ মজা;
পড়াশুনা নাই
আনন্দে গান গাই;
মনের সুখে গাবো
ব্রিটানি কেক খাবো ;
মোটরশুঁটি কড়াই
গরম লুচির লড়াই!!
২৩ ডিসেম্বর ২০২০
২২ ডিসেম্বর ২০২০
২১ ডিসেম্বর ২০২০
ভবেশ বসু
অনন্তকালের নিচে বসে আছি
আজ আর কোথাও নয়,বসে আছি অপরাহ্ন বেলায়
ঘাস ঘন সবুজ নদীতীর,পৃথিবী সমান সোনা রূপায়
কান পেতে কথা শুনি,নিরীহ নিরাশ্রয় লতারও প্রেম
প্রতিশ্রুতি, নড়ে উঠে পাতা একে অপরে দুঃখ ভুলায়।
আমি বসে আছি শালুক পাশে,জলে জলে জল খেলা
রূপকথার শিশিরে শিশির,এই অকৃত্রিম ভাঙন বেলায়
বসে আছি জীবনের কান্না ও সুখে,প্রতিটি ঢেউ স্রোতে
কামনার বুক চলকে যায় তোমারই হলুদ মাখা হাতে।
অনন্তকালের নিচে বসে আছি,অবিকল সেই উৎসব
অনন্তকালের নিচে বসে আছি,অবিরাম সেই উৎসাহ
আমায় সজাগ সচেতন রাখে কুয়াশার বুকে কুয়াশা
আমায় সজাগ সচেতন রাখে আমারই মৌন আকাঙ্খা।
কোথাও নয়,তোমার ঘুমিয়ে পড়া মাটি ছুঁয়ে আছি
চার চোখ আমাকে দেখায় কতটা অবহেলা করেছি !
ওয়াহিদা খাতুন
ঘুমের দেশে খোকন
খোকন গেছে বিয়ে করতে নোনাজলের দেশে,
সঙ্গে আছে চিত্রল হরিণ ঘোটক বাবু বেশে;
বানর,ভোঁদড় বেয়ারা সেজে পালকি কাঁধে নিয়ে,
বুনোহাতি শুঁড় তুলেছে টোপর মাথায় দিয়ে ;
লালকাঁকড়াতে বাজায় বাঁশি বালুচরে হেসে--
ডুলি কাঁধে সঙ সেজেছে কুমির জলে ভেসে--;
বাঘ এসেছে গন্ধ পেয়ে মাথায় ধরে ছাতা,
হালুম সুরে বললো ডেকে আমায় দেনা পাতা;
প্রাণ পণে সব ছুট দিয়েছে পড়লো খোকন শেষে,
মা ডাকতেই চেঁচিয়ে বলে ছিলাম ঘুমের দেশে!
দেবব্রত ভট্টাচার্য্য
তুমি
এতদিন দেখেছি তোমার ভালোবাসাকে শরতের মেঘে
বিকেলের রামধনু অথবা শিশির ভেজা ঘাসে।
তোমার গভীর হাসি খুঁজে পেয়েছি
দিগন্তে হারানো সবুজ ধানের দোলায় দোলায়
অথবা প্রজাপতির রঙ বাহারি পাখনার ছোঁয়ায়। তুমি ছুঁয়ে আছো সন্তান কোলে মায়ের মনকে
কোন ভিখারী হাত পেতে পাওয়া খাবারের অংশ
যখন পথ কুকুরের মুখে তুলে ধরে
তুমি সেই পাত্র খানি ছুঁয়ে থাকো ভালোবাসায়।
আজও তোমার ভালবাসার ছোঁয়া পেলাম
রোগদীর্ন মুমূর্ষু প্রাণের অন্তর জুড়ে
আমার স্বপ্নে যেমন ছিলে, তেমনি বাস্তবেও
তোমার প্রেমের জিয়ন কাঠি ছুঁয়ে আছে
মানুষের বিশ্বাসে অবিশ্বাস, আলো অন্ধকারে।
যমুনার স্রোতেও তুমি ,অরন্যের দাবনলেও তেমনি
যন্ত্রণার উৎসে। ধংসের বহ্নিশিখায়
তোমার প্রেমে দেখেছি, যেমন মোনালিসার হাসিতে।
গোলাম কবির
ভালবাসার পরিত্যক্ত বাড়ি
ভালবাসার সুরক্ষিত দেয়াল যেনো
আজ শতবর্ষের পরিত্যক্ত পুরনো বাড়ি,
এখানে ওখানে নোনাধরা পুরনো বাড়ির
ভাঙা ইঁট উঁকি দিয়ে জানাচ্ছে নিজের
অস্তিত্ব, চারিদিকে ঘিরে আছে ঘন সবুজ
বটের ছায়া ছড়িয়ে শিকড় যত্রতত্র!
এখানে এখন মাঝেমাঝে কিছু পর্যটকের
দেখা মেলে, যারা একসময় ভালবাসা
ছিলো বলে লুকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে এবং
মোবাইলের ক্যামেরায় বন্দি করে
সেইসব পুরনো দিনের ইতিহাস!
এখানে এখন স্বাধীনভাবে বাস করে
বাদুড়ের দল, প্যাঁচা এবং তক্ষকের
একটা ব্রিগেড! শুধু ভালবাসাই নেই
মানুষের মধ্যে, ওরা এখন এক একটা
খেলনা রোবটের মতো! অথচ একদিন!
আহা! ভালবাসা ছিলো মানুষের জন্য
মানুষের, প্রেমিকার জন্য প্রেমিকের,
নদীর, বৃক্ষলতা পাতা , পাহাড়ের, সমুদ্রের,
সবুজ ঘাস, পাখিদের কলকাকলি মুখর দিনের, শিশির ভেজা সকাল ; এসবের জন্য
ছিলো মানুষের কী ভীষণ মায়া!
আইরিন মনীষা
বিজয়ের চেতনা
তেইশ বছরের শোষণ নিপীড়ন
সয়েছিলো বাঙালী জাতি,
যায় না ভুলা সেইসব নির্যাতন
রাজাকার ছিলো যেথা সাথী।
সাম্য সমতা ন্যায্যতার দাবীতে
হয়েছিলো বাঙালী সোচ্চার,
যুদ্ধ বেঁধেছিলো এই ভাটিতে
হানাদার হঠাতে বারবার।
বায়ান্ন ছেষট্টি ঊনসত্তর পেরিয়ে
হয়েছিলো বাঙালীর একতা,
সত্তরের নির্বাচনে জয়কে ছাড়িয়ে
পেয়েছিলাম নতুন বারতা।
বঙ্গবন্ধু দিলেন স্বাধীনতার ডাক
আপামর জনতা জড়ালো যুদ্ধে,
স্বাধীনতার চেতনায় পেলো নতুন বাঁক,
১৬:ই ডিসেম্বর বিজয়ের ছন্দে।
চেতনায় শাণিত আমাদের বিজয়ে
শান্তি সম্প্রীতিতে আছি তো বেশ,
বাংলার আলো বাতাসের স্নিগ্ধ বলয়ে
জুড়াই সদা প্রাণের রেশ।
অলোক দাস
স্বদেশী
'জয়দেব ' তুমি এখনো বেঁচে, নাগরিক হয়েও তুমি " বিদেশী "I হাল ছেড়ো না বন্ধু, লড়ে যাও I একমাত্র ছেলেকে হারালে, মরলো ক্যান্সারে I তোমার গায়ে এ দেশের সেঁধো মাটির গন্ধ I লোকে বলে আইন নিতে নেই নিজের হাতে, পুলিশের সাহায্য নিন, জন্ম তোমার এই দেশে, তবু পাছো পদাঘাত I কি যে হচ্ছে, কে জানে? লোকে বলে দেহ, মন ও মুক্তি I মুক্তি তোমার নেই, যদিও তুমি সেঁধো গন্ধে ভরা নাগরিক I কে বলে সংখ্যা লগু I এদেশে নেই তোমার সম্মান, মরে প্রমান করো এদেশ তোমারি ছিলো, ইতিহাস জানুক "জয় হিন্দ "I তুমি ছিলে স্বাধীন, বিদেশী নয় I সম্পূর্ণ খাঁটি স্বদেশী I
সৈয়দা আইরিন পারভীন
সন্দেহবাতিক একটি রোগ
সন্দেহবাতিক একটি রোগ। যারা একবার এই অসুখে আক্রান্ত হয়ে পড়ে তারা আর মুক্তি পায় না। অনেক ফেসবুক ব্যবহারকারিদের মধ্যে এই রোগের লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। তারা অহেতুক ফেসবুকের বন্ধুদের নিয়ে নানা সন্দেহে এটা ওটা অনুমান করে নিচ্ছে। ফেসবুকে কতজন কতরকম মন্তব্য করে, করতেই পারে। সবার চিন্তা তো এক ছাঁচে তৈরি না। শিক্ষা-সংস্কৃতি বোধও আলাদা আলাদা। নারীদের স্ট্যাটাসে অনেক পুরুষ অনেক রকমের চটুল মন্তব্য করে। সেসব মন্তব্যকে গভীরভাবে দেখার কোন মানে নেই। এটি খুব তাৎক্ষণিক ব্যাপার। ফেসবুক আমার কাছে বিনোদন মাত্র। ফেসবুকপ্রেমী হলেও এটিকে জীবনের সবকিছু মনে করি না। কত ফেবু বন্ধু কতরকম লেখে তা কি গণনা করা যায়? জ্ঞান-বিজ্ঞান-সাহিত্য-রাজনীতি নিয়ে অনেক লেখা থাকে। তার মাধ্যমে অনেক শেখার আছে। আমি সেসব থেকে শিখিও। কঠিন বিষয় এড়িয়ে চলি। সবচেয়ে বেশি আলোচিত বিষয় হলো বিনোদন। প্রচুর লাইক কমেন্টে ভরে যায়। এর মধ্য থেকে কারো কোন কমেন্টকে কেন্দ্র করে যদি কেউ স্ট্যাটাসদাতার সঙ্গে তার বিশেষ সম্পর্ক আবিষ্কার করে বসে এবং তা নিয়ে গবেষণা করে, তবে তা অন্যায় বলে মনে করি। কতজনের সঙ্গে কত ঠাট্টা-মশকরা চলে, তার মানে কি তারা পরস্পর প্রেমে পড়ে গেছে? প্রেম কি অতোই খেলনা যে চাইলেই মুদি দোকানে মিলে যাবে? মানুষ লেখাপড়ার মধ্য দিয়ে উদার মানসিকতার পরিবর্তে যদি এরকম সন্দেহগ্রস্ত হয়ে অন্যের মধ্যে খুঁত খুঁজে ফেরে তাহলে সে শিক্ষা অর্থহীন।
সাবা সাবরিন
চেতনার ভাষ্কর্য
পাথরের ভাষ্কর্য ভেঙে ফেলা হয়তো সম্ভব।
কিন্তু যে ভাষ্কর্য , হৃদয়ের লাল-সবুজের
বেদীমূলে চেতনা দিয়ে নির্মিত, সেই ভাষ্কর্য-
আজ পর্যন্ত কেউ কি ভাঙতে পেরেছে?
না কোনদিন পারবে?
এই ভাষ্কর্য সবাই নির্মান করতে পারে না।
পেরেছিলেন বঙ্গবন্ধু। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায়
বিশ্বাসী কোটি কোটি বাঙালির হৃদয়ে তিনি
নির্মান করেছিলেন অত্যুজ্জ্বল এক ভাষ্কর্য।
যে ভাষ্কর্য থেকে দেশপ্রেমের দ্যুতি বের হয়ে-
ছড়িয়ে পড়ে বাংলাদেশের আকাশে, বাতাসে,
পথে, প্রান্তরে, অলিতে, গলিতে, রাজপথে।
যে চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে বাঙালি ছিনিয়ে
এনেছিল স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা।
সেই চেতনার ভাষ্কর্য কি ভেঙে ফেলা যায়?
বঙ্গবন্ধুর চেতনার ভাষ্কর্য- ঊনপঞ্চাশ বছরে
আরো কোটি কোটি ভাষ্কর্য নির্মান করেছে,
হৃদয় থেকে হৃদয়ে। হৃদয়ের লাল-সবুজের
বেদীমূলে নির্মিত সেই চেতনার ভাষ্কর্য, এভাবেই
হৃদয় থেকে হৃদয়ে ছড়িয়ে পরবে, প্রজন্ম থেকে
প্রজন্মে। হাজার বছর পরেও যে ভাষ্কর্য থেকে
দ্যুতি বের হবে দেশপ্রেমের।
বাংলাদেশের দেশপ্রেমী জনগণের হৃদয় থেকে
বঙ্গবন্ধুর চেতনার ভাষ্কর্য নির্মূল করার সাধ্য -
কোন অশুভ শক্তির নেই। অমর, অক্ষয় হয়ে
চিরদিনই দ্যুতি ছড়াবে বঙ্গবন্ধুর চেতনার ভাষ্কর্য।
হাকিকুর রহমান
চঞ্চলা কিশোরী
খেলিছে কিশোরী,
খেলিছে চঞ্চলা বালিকা-
ছাড়িয়া এলোকেশ নাচিয়া চলিছে,
গলাতে ঝুলিছে কুঞ্জলতার মালিকা।।
চপল নয়না, নীরদ বসনা
হরিণী যেন হেঁটে যায়,
যুঁথিকা জড়ায়ে, সুবাস ছড়ায়ে
আড়ে আড়ে ফিরে চায়-
আঁচল ভরায়ে, কেমনে তুলিছে
চন্দ্রপ্রভা, শেফালিকা।।
ভাসালো কে কেয়া পাতার তরী
স্বচ্ছ ধবল ঝিলে,
শাপলা, শালুক উঠায় সেথা
সই-সখীরা মিলে-
কাজলা দীঘির জলেতে ভাসিছে
পদ্ম পাতার থালিকা।।
নাজনীন নাহার
হেমন্তিকা
ধানের শীষে ঝন ঝনাঝন হেমন্তিকা আসে
নতুন ধানের গন্ধে চাষি আপন মনে হাসে,
আমন ধান কাটে কিষাণ, নবান্ন মাঠে মাঠে
নতুন ধানের নতুন চালে উৎসবে দিন কাটে।
শিউলি, কামিনীর গন্ধ ভরা হেমন্তেরই হাঁটে
বাড়ির আঙিনায় রং ছড়িয়ে হলুদ গাঁদা ফোঁটে,
শীতল হাওয়ায় বাজছে বাঁশি ভোরের শিশির বীণায়
দোয়েল, টুনটুনি, বুলবুলিরা সব মিষ্টি সুরে গায়।
নবান্নেরই খুশিতে মেয়ে নাইওরে আসে বাপের বাড়ি
নতুন ধানের কত রকম পিঠা-পায়েস করা হয় তৈরি,
নানা রকম নৃত্য গানে বাংলার ঘর সাজে
হাসিখুশির রূপের ঝলক হেমন্তেরই মাঝে।
ধানের মাঠে নাচে দোয়েল ফিঙে প্রজাপতি
শস্যশ্যামলা ভরা আমার বাংলা রূপবতী,
চাষির গড়া সোনার বরণ দেখতে লাগে বেশ
হেমন্তেরই খুশির দোলায় নাচে সোনার বাংলাদেশ।
১৯ ডিসেম্বর ২০২০
অনিন্দিতা মিত্র
নির্বাসিত শব্দমালা
এক
তোমার চেরিডাউন ইস্টের বাড়িতে রোজ যাই আমি, ছুঁয়ে আসি তোমার কবিতার খাতা, তুমি দেখতে পাও না, সবকিছু দেখা যায় না। ঝিলমিল ঝিলমিল রোদের ফাঁক দিয়ে উঁকি মারে বৃষ্টিভেজা স্বপ্নরা, কঠিন থেকে কঠিনতর হয় বুকের তল। গ্রহ-উপগ্রহের নীল শিরায় শিরায় অচেনা জলছবির শিলালিপি, আত্মহারা হামিং পাখির দল উড়ে আসে তোমার টিউলিপের বাগানে, নাগরিক ক্লান্তি ভেঙে তুমি খুঁজতে চাও সমুদ্রমুখর দিন।
দুই
তোমার দক্ষিণের বারান্দায় এসে ভিড় করছে নরম বসন্তমেঘ, গুঁড়ো গুঁড়ো বরফ জমেছে ফুরুস ফুলের পাপড়ি জুড়ে , মরা প্রজাপতির বিবর্ণ পাখায় স্মৃতির ক্ষতচিহ্ন। ফার পাইনের বনপথ ধরে হেঁটে চলে হরিণ শাবক, নির্জন ছায়াপথের কোনো এক অন্ধকার বাঁকে সে হারিয়েছে জন্ম-জন্মান্তরের আক্ষেপ । তোমার হাতে গীতাঞ্জলির হলুদ পাতা, গোধূলির রঙ মেখে নেমে আসবে আমার অভিমান তোমার কবিতা হয়ে।
হাননান আহসান
বাঘের কাণ্ড
বাঘটি ছিল সোঁদরবনের
বিদঘুটে আর খেয়ালে
সপাটে সে মারতো লাথি
ইট-পাথরের দেয়ালে।
মাথাটাকে করতো সাইজ
জমকালো দুই শেয়ালে
বাঘটি ছিল অন্য রকম
উদ্ভটে আর হেঁয়ালে।
বাঘু মামার নেশা ছিল
ন্যাসপাতি আর ফলেতে
আকাঙ্ক্ষা তার ভিতর জুড়ে
বিরাট হবে দত্যি সে।
আসল কথা, এই কসরত
ফুটবলের-ই ছলেতে
ইচ্ছে ছিল স্টপার হবে
ময়দানের এক দলেতে।।
মোহাঃ হাসানুজ্জামান
বিপ্লব
চলন্ত মেশিনের শব্দ
শ্রবণ শক্তি ক্ষীণ
বয়স প্রায় ষাট ছুঁই ছুঁই
বিরামহীন পরিশ্রমে থাকি ডুবে।
দু-মুঠো অন্নের সংস্থানে
সারাদিন হাড়ভাঙ্গা খাটুনি
শুকনো চোখে ভাঙ্গা কোমর
হাত-পা দুর্বল নেই কব্জিতে জোর।
আমরা করি আজীবন দাসত্ব
কখনো বানাই আট্টালিকা দালান,
শরীরে ঝরে রিক্সা টানার ঘাম
এটা কি নয় জীবন বিপ্লব ?
আমার স্মৃতিতে অন্ধকার অতীত
ঝুপড়ি বস্তিতে করি বাস
মেঘের ও আছে জীবনচক্র
আমাদের ভবিষ্যৎ কি আতঙ্কের আঁচল ?
বিরহী হৃদয়ে অসীম ক্লান্তি
বুকের ভেতর বিষাদের নৃত্য
মনের অন্তবাসে ছুঁয়েছে আশা
আসে যদি আবার নতুন বিপ্লব।
শাহীন চৌধুরী ডলি
কবিতা, বিবর্ণ ধারাপাত
ইতিহাসের পুনরাবৃত্তিতে রচিত
মীরজাফরের পালায়
ভঙ্গুর স্বপ্নগুলো
রাতের নিকষ আঁধারে
আছড়ে পড়ে মৌন মিছিলে।
আলাভোলা চেহারার অন্তরালে
ক্রমশ প্রতীয়মান
ঠায় মিথ্যা স্বত্বার খেলা,
ক্ষয়ে যাওয়া চরিত্রের
বিবর্ণ ধারাপাত।
সন্তর্পণে অস্তিত্বের চৌদিকে
অলংঘনীয় আবেষ্টনী সৃষ্টি,
অনাবাদি স্বপ্ল দাফনে
শেষ পেরেকের ঠোকাঠুকি
কফিনের গায়।
রুমানা পারভীন রনি
আঁধারের গান
বুকের উঠোনে ঘনকালো সন্ধ্যা নামে
আকাশ জুড়ে তারার মেলা বসে,
তবুও উঠোন আলোকিত হয় না।
তুলসি তলায় মঙ্গল দ্বীপ জ্বলে না।
শ্যাওলার আস্তরনে হেঁটে বেড়ানো
ডাহুকী মায়ের কান্নায় বাতাস ভারী হয়,
ঢোঁরা সাপের মত কলমীলতা জলে ভাসে
শুক্লপক্ষের চাঁদের ছায়া পড়ে রাত আরও গাঢ় হয়।
শিশিরের শব্দের মত হীরকদ্যুতি ছড়িয়ে
টুপটাপ ঝরে পড়ে জ্যোৎস্নার আলো।
ভাঁটফুল ভুল করে সুরভী ছড়ায় উজার করে
বাতাসে ভেসে বেড়ায় সুবাস তার।
দাওয়ায় বসে রাত্রি যাপন করি
মনের কোণে লুকানো বিষন্নতা উবে যায়
আমি চাতকের মত রাতের সৌন্দর্য দেখি।
রাতের এমন নয়নকাড়া রুপ আগে দেখিনি
আমার ঘোর লাগে শুধু ।
মামুন সুলতান
সশস্ত্র সালাম
রাতে যেখানে ঘুমাই নিরাপদ নিদ্রায় শুয়ে থাকি
কারো হানায় ভাঙে না তন্দ্রাচ্ছন্ন কাঁচাঘুম
হানাদার হায়েনার বুটের তলায় পিষ্ট হয় না-
নির্মিত স্বপ্নের শত বছরের সুখ।
রক্তিম নদী পেরিয়ে আমরা বিজয় পেয়েছি
নির্ঘুম রাতের ভয় এখন পুষ্পিত মহাকানন
স্বতন্ত্র পতাকা নিয়ে দুনিয়া মাতিয়ে চলি
আমাদের পরিচয় দুর্বিনীত দুনিয়ায় ওড়ে।
আমাদের রক্তরঙ শিল্পমানে সুউচ্চ চূঁড়ায়
এই রক্তে এঁকে চলি আমাদের বিজয়স্তম্ভ
সশস্ত্র সালাম দিই বিজয়ীবীরের আত্মায়
আনন্দ নদীর বুকে আমরা ভাসি মহাহিল্লোলে।
মধুমিতা রায় এর অনুগল্প
বিশ্বাস...
রবীন পৌনে ছটার বনগাঁ লোকাল ধরে তারপর সারাদিন ব্যাগ কাঁধে এ ট্রেন ও ট্রেন।বিক্রি মন্দ হয় না। তিনজনের সংসার মোটামুটি চলে যায়।ক্লান্ত পায়ে যখন সে ট্রেন থেকে নামে তখন রাত প্রায় বারোটা।সারাদিন চেচিঁয়ে তখন আর কথা বলার শক্তি থাকে না।
গত ছমাস ধরেই প্ল্যাটফর্মের শেডের নীচে মেয়েটাকে দেখছে সে।চুপচাপ বসে থাকে, এলোমেলো চুল,বয়স তিরিশ বত্রিশ হবে,শাড়িটার রঙ সম্ভবত নীল ছিল।
অত ভোরে মেয়েটিকে ওভাবে বসে থাকতে দেখে প্রথমে অবাক হয়েছিল পরে বুঝেছে মেয়েটি স্বাভাবিক নয়।চায়ের দোকানের মলয় বলছিল পাগলীটা কারও জন্য অপেক্ষা করে, কেউ নাকি বলেছিল ফিরবে।
কয়েকদিন হল রাতেও মেয়েটিকে দেখছে রবীন। রাত বাড়লে প্ল্যাটফর্ম ফাঁকা হতে থাকে। মদ জুয়ার ঠেক বসে এদিক ওদিক।মেয়েটির জন্য খুব চিন্তা হচ্ছে কদিন ধরেই।পাথরের মত একটা মেয়ে, শূণ্য দৃষ্টি.... কেন যে!
আজও ট্রেন থেকে নামতেই মেয়েটাকে দেখল। তেমনি বসে আছে।শীতের রাত। হাতে গোনা কটা লোক প্ল্যাটফর্মে।
রবীন মেয়েটার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। আস্তে করে বলল..... তুমি বাড়ি যাও।অনেক রাত হয়েছে,বাড়ি চলে যাও।
...... তাহলে যে ও মরে যাবে!
অবাক হয়ে রবীন বলল.... কে?
মেয়েটি চোখ তুলে তাকালো তারপর দূরাগত মন্ত্রধ্বনির মত মৃদু অথচ স্পষ্ট স্বরে বলল.....বিশ্বাস।
আরজু মুক্তা
ভালো আছি
ভালো আছি বলি
কিন্তু ভালো নেই।
ভিতরে হতাশার জং লেগেছে
তাজা দীর্ঘশ্বাস,
ভালোবাসা বিলীন হয়ে
এখন কুয়াশা।
চোখে উদ্বেগের কালি
সারা দেহে ধূলির ঝড়,
হৃদয়ে গোলযোগ।
কোলাহল আর মিছিল
বিক্ষুব্ধ শ্লোগান, হরতাল।
ব্যস্ত পথচারী থমকে আছে
অনাহারপীড়িত এক দুর্ভিক্ষের
মুখ আমি!
ভিতরে উন্মাদনা, অস্থিরতা
ভালো আছি বলি
কিন্তু ভালো নেই।