১৭ আগস্ট ২০২১

জাফর রেজা


এক আশাবরীর গল্প 

 ( সংক্ষিপ্ত আকারে লেখা একটি সত্য ঘটনা। আশাবরী নামটি কাল্পনিক)


 পৌষের শেষ রাতে কয়েক জোড়া পা খাটিয়া কাধে 

এগিয়ে যাচ্ছে, মুখে, ' বলো হরি বল '

 খাটিয়ায় শুয়ে থাকা মেয়ে মানুষটির নাম আশাবরী। 

অন্য দশটি মেয়ের মতই আশাবরী'র চোখে ছিল স্বপ্নছিল 

কল্পনার মানুষটি'র সাথে ঘর বাধার, 

পৃতৃহীন আশাবরী'র ভাগ্যে এসব কিছুই জোটেনি, পনের টাকার জন্য বিয়েটি আর হয়নি। 

একদিন মাও চলে গেল শ্মশান ঘাটে, শুন্য ঘরে পার করে দিলো সে জীবনের বাকি দিনগুলো। 

 যৌবনে উপকারী পুরুষেরা হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল, 

কিন্তু একটি হাতও ছিলনা দায়ীত্ব নেবার । 
 সব কামনা বাসনাকে নির্বাসনে পাঠিয়ে পার করে দিয়েছিল যৌবনের রঙিন দিনগুলো, বৃদ্ধা আশাবরী'র পাশে আর দেখা যায়নি উপকারী পুরুষের আনাগোনা। 
আজ আশাবরী অনন্তের পথ যাত্রী। 
 পৌষের শেষ রাতে 'বলো হরি বল ' আরও জোড়ালো হতে থাকে। 

রেবেকা সুলতানা (রেবা ) 


শুধুই তোমার ফাঁদে পড়তে রাজি। 


 তুমি যদি আমার ঠেলে দাও অগ্নিতে, 
বিনা চেষ্টায় মরে যাব চিরতরে 
মৃত্যুর ভয় করে নেবো যে আগেই বিয়োগ। 

 তুমি যদি আমার বলো চলো ডুবে যাই নদীতে, 
 বলবো আমি নদীতে নয় চলো প্রেমের সাগরে ডুবে মরি। 

 তুমি যদি আমায় অবহেলার কালো মেঘে ঢেকে দাও 
বুকের ভিতর টা শিলা বর্ষনের আঘাতে হয়ে যাবে খানখান। 

 শিলা গুলো একটা সময় গলে গিয়ে তৈরি হবে বিশাল জলাশয়। 

 তুমি যদি আমায় পিশে করো ধুলোবালি অসহায়ের মতো এপথ থকে ওপথে উড়ে উড়ে যাবো আমি।

 স্মৃতি গুলো খুঁজে ফিরবে তোমায় এই পথের মাঝে। 
ব্যাথা জমে কালো চোখ নিদ্রা আসেবেনা কভু বেদনার অশ্রু ফোঁটা গড়িয়ে আসবে দুটি চোখে দূর থেকে তোমার কথা বড্ড কানে বাজেবে 
আমি তখন তলিয়ে যাবো তোমার কন্ঠস্বরে। 

 নিমেষেই ঢোকগিলে আবার নিরব হরে যাবো ফুলে ফেঁপে উঠেবে কন্ঠনালির অগ্রভাগে। 

 তুমি যদি আমার ছিঁড়ে দাও পাখা 
পড়তে পড়তে জড়িয়ে ধরবো তোমার শাখা 
যদি শাখা থেকে তুমি ফেলে দাও নিচে 
তখন শক্ত করে জড়িয়ে ধরবো তোমাকে।

আইরিন মনীষা 


অসময়ে এলে তুমি 


দুই যুগ পরে কেন এলে তুমি 
জবাব কি দিবে তুমি মোর জানা নেই, 
অসময়ের এক সারথী হয়ে ঝরাপাতার কাছে তুমি 
কেনই বা আসলে বৃষ্টি ভেজা এই সব্ধ্যা গগণে?  

আমার সমস্ত আশা আকাঙখা দুমড়ে মুচড়ে দিয়ে 
গিয়েছিলে ফিরে তুমি একদিন এমনই এক সন্ধ্যায়, 
আমার স্বপ্ন গুলো ভেঙে খান খান হয়েছিলো 
প্রচণ্ড বেগে ঢেউয়ের তাণ্ডব বয়ে গিয়েছিলো সুকুমার মনে। 

 অনেকদিন পক্ষাঘাত গ্রস্থ হয়ে পড়েছিলাম বিছানায় 
অশ্রু গড়িয়ে পড়তে পড়তে এক সময় দৃষ্টি শক্তি হারিয়ে ফেলি, 
খাওয়া দাওয়া ভুলে গিয়েছিলাম বলে শরীরটাও জীর্ণ শীর্ণ 
 এক বিষাক্ত অতীতের সাক্ষী হয়ে এখনো বেঁচে আছি। 

 তুমি তো ঘর সংসার সবই করলে মনের খেয়ালে 
আর সুখেই ত ছিলে আমি যতটুকু জেনেছি, 
 কিন্তু আজ হঠাৎ কি মনে হলো তোমার 
 আমার কাছে চলে এলে উদভ্রান্তের মত হয়ে? 

 তবে কি তুমি অনুশোচনার অনলে পুড়ে ছারখার হয়ে 
 আমার কাছে শুধু ক্ষমা প্রার্থনা করতে এসেছো? 
তা বেশ তাও দিলান তোমাকে কারণ এর,চেয়ে বেশি কিছু নেই 
যা আমি তোমাকে দিয়ে একটু প্রশান্তির ছোঁয়া দিতে পারব। 

কোথায় ছিলো তোমার প্রতিশ্রুতি সেদিন 
 যেদিন আমার স্বপ্ন সাধ ধূলিস্যাৎ করে চলে গিয়েছিলে? 
 তাইতো হয়নি আমার আর সংসার দুটা আত্মার মিলনে 
তবে হ্যাঁ এখন এতিমদের নিয়ে ভালোই আছি আমি আমার মতই।

ফারজানা আফরোজ




মৃত্তিকার মায়ায় 


 মৃত্তিকার মায়ায় বসে আছি পরিত্যক্ত ঘরে
পরজীবিরা বেঁচে আছে বৃক্ষকে আঁকড়ে ধরে। 
আকাশ চেয়ে আছে দিগন্তের পানে, 
যেখানে সূর্যের আলো আসে জানালার ফাঁকে। 
চাঁদের আলো এসে পড়ে চিলেকোঠায়। 
ধূলি উড়া দীর্ঘ পথবাঁকে ঘাসেরা চিরসবুজ। 
অজস্র প্রশ্ন কড়া নাড়ে মনের দরজায়। 
মেঘের আজ ভীষণ মন খারাপ 
আখর পরে আখর সাজিয়ে লিখেছি কাব্য। 
পূর্বসূরিরা ছিল কোন একদিন এখানেই। 
নিজের অস্তিত্ব নিয়ে ভাবনারা এলোমেলো। 
জীবনের পৃষ্ঠাগুলো উল্টেপাল্টে দেখি, 
কতো রং বদল,পালাবদল চারপাশে। 
রংধনুর রং যেন এসে পড়ে জীবন ধারায়। 
কালের বিবর্তনে মিলিয়ে গেছে অনেক কিছু। 
ভাঙ্গা গড়ার চিরবৈরীতা নিত্য অবনী মাঝে, 
স্রোতস্বিনী নদীবক্ষে জেগেছে বালুচর। 
জীবনের আনন্দ,বেদনা সেতো; 
ঘাসের ডগায় একবিন্দু শিশির কণা। 
বুঝা যায় তা অতীতে দৃষ্টি দিলে।
 মানব জীবনের সময়ের পরিক্রমায়, 
মূহুর্তগুলো বয়ে চলে নিরবে নিভৃতে। 
তমাল বন নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে কালের সাক্ষী হয়ে। 
একলা আকাশেই বুঁদ হয়ে থাকি নিরালা, 
প্রানের ডাহুক পড়ে রয় অরন্যে। 
হেঁটে চলেছি নিরন্তর অজানার পথে।