১৫ নভেম্বর ২০২০

অরু চট্টোপাধ্যায় এর দুটি কবিতা

কবি চেয়ে কবির বাড়িতে 



ঘুম


ঘুম যেন ঘুমের ভিতর নিজে জেগে আছে,

কে কার হৃদয় পোড়ালো,এখনো বৃষ্টি নামেনি!

ফুল শুধু একা হেসে গন্ধের ভিতর, রেখে দেয়,

এক নদীবুক বাতাস প্রবাহ প্রতিলিপি।


ঘুম বলে আমি তার ভাঙাবো না ঘুম,

এখন স্বপ্নে ভাসে,পৃথিবীর স্বর,মগ্ন গায়কের,

দুলে ওঠে প্রাচীন কবিতার শেকড়বাকড়,


বটের ছায়ায় উদাসী পথিক, হাঁটু গেড়ে বসে,


চোখের ভিতর, সেতারের মতো এক দেহ শুয়ে আছে,

যেন ঠান্ডা জলে,এক ডুব স্নান!

আহা! মাঠভরা শস্যের কনা,

হরিণের পায়ের মতোই নেচে ওঠে।


শান্তি 


একটা অপার শান্তি 

শিরদাঁড়া দিয়ে, গাছের শেকড়ে চলে যায়।

গাছ ফুল দেবে,

সমুদ্র, মুক্তার দেহে রাখবে আলোকিত এক বন্দর,

যেন এক সকালের রাগ সেতারের দেহে বেজে ওঠে।

অসহায় মানুষের গমন, গল্পের রেখার বিস্ময়ে,

ফিরে আসে একান্ত নদীটার তীরে।


দিগন্ত ছুঁয়েছে কখন, সব কথামালা,

ঘাসের ওপর জ্বলে,

প্রদীপের মতো এক আত্মার শিখা।।



রেবেকা সুলতানা রেবা



ধৈর্য্য 


জীবনে অনেক ঝড় দেখেছো 

শিখেছো তুমি অনেক কিছু

ঝড়কে নিয়ন্ত্রণ করার 

শক্তি তোমার  নেই।

তোমার   আছে অঢেল ধৈর্য্য 

যার বিনিমরে ঝড় কাটিয়ে

পরবর্তী  পদক্ষেপ নিতে শিখেছো,

ধৈর্য্য  একটি মানসিক শক্তি

একদম নিজস্ব  অন্য কারো নয়,

ওটা  আছে যার সাফল্য তার

 চলমান বিপদে যার আছে ধৈর্য্য 

কঠিন কাজ সহজ হতে 

লাগেনা তো  অসজ্য

প্রাকৃতিক গোপন শক্তি টি 

দেখার জন্য ও লাগে ধৈর্য্য। 

বিশ্বাসের হাত টাও ধরে রাখে ধৈর্য্য, 

চরিত্র  হবে না খুন্য যদি তোমার

সাথে থাকে ধৈর্য্যে র সঙ্গপ্রিয়, 

ধৈর্য্যের সারাদেহে কাঁটায় পরিপূর্ণ 

খাওয়াতে হয় অধিক মিষ্টন্য।

ধৈর্য্যেতে তুমি সয়ং সম্পুর্ন 

 সব কিছুতে তোমার পূর্নতা 

সাফল্য অনিবার্য।


(যুক্ত রাজ্য )

জি এম কাউসার আলী



অবাধ আকুতি 


একবেলা বৃষ্টি হয়ে এসো

আমার পৃথিবীতে।

নয়নে দেবো রংধনু জল।

সিনার জমিতে বুনে দেবো নেশার প্রেম।

অবোধ চাহিদারা

যখন নিঃশব্দে 

ভালবাসার সারণীতে

স্বাক্ষরিত।


এসো তোমার সময় নিয়ে।


ঝড়োঝড়ো আবৃতিতে

ধুয়ে দেবো সাগরের নীল।

নিস্ফলা অগ্রহায়ণ

বা সমীচীন সেঁজুতিতে।


অদ্ভুত ইচ্ছেদের 

শুভ্রতার শিরোনামে। 


একদিন বর্তমান হয়ে এসো।

এসো আমার এই বিশাল ভালোবাসার গহীন সাগরে!!

এসো তোমার উর্বর শোষন ক্ষমতা নিয়ে

আমার যত প্রেম মাখা আদর নিশেষ করতে।


                                   (অষ্ট্রেলিয়া) 

পরাণ মাঝি




মধুমাস 


আমার একলা ঘরে আসলে তুই 

বল না কেমন ক'রে তোকে  ছুঁই 


ও কোকিলা কেন এত ডাকিস 

খোলা বুকে কী যে সুর তুলিস 

                                                  ধক ধক ধক 


মনখরাপী ভোরে এত কেন 

                                এত কেন মন ধুকপুক.


কার কথা শুনে কোথায় চলে যাস 

তুই কী জানিস ? তুই আমার নির্জনের মধুমাস 


আমার একলা ঘরে আসলে তুই

বল না কেমন কোরে তোকে ছুঁই

অন্তরা দাঁ


আহত ভাস্কর্য 


যদি প্রেম মরে যায় 

নুন-তেল জারিত যাপনে 

ইলেক্ট্রিক বিল আর রেশনের লাইনে 

দু'হাতে ঠেলে সরিয়ে রাখছি প্রাণপণ 


ব্যথা নিরাময়ে আই-ব্রুফেনে'র সন্নিবেশ 

নিভু নিভু আঁচে সেঁকে নিই 

ইচ্ছে'র বাসি রুটি 

ছন্নছাড়া  সংসারে খেলনাবাটি'র আবেশ 


এ'সব নেহাত'ই মনভুলোনো গল্পগাছায় 

নিরাপত্তা ঝেড়েছে লাথি জোর 

সিউডো-বোহেমিয়ানিজমের পাছায় 


জীবন দূর অস্ত 

মৃত শরীরের অধিকারটুকুও 

স্ত্রী'র একচেটিয়া 


প্রেমিকা'র ব্রা-হীন বুকে 

বয়ে বেড়ানো সন্তাপ 

আর মিছিমিছি কথা দেওয়া 

গোপন সে প্রেমিক আজ নিরুদ্দেশ। 

রাজেশ চন্দ্র দেবনাথ



তাপ



পাতা ফুঁড়ে বেরিয়ে আসে

গতজ্যোৎস্নার ফেরারি 

জৌলুশ। 


আবেগের কৌটায় ভুল নামতায়

কেটে যায় রাতের তাপ...

অলোক দাস এর মুক্ত কথা



স্বপ্নসিঁড়ি

  আকাশ একই জায়গায় চিরস্তির চিরদিন,

 শব্দচয়ন সারা আকাশ জুড়ে, 

সিঁড়ি দিয়ে ওঠাই ভালো, 

তাতে পড়ার ভয় থাকে না, 

ওটাই হোক স্বপ্ন, 

কে যেন বলে কবিতা লিখুন, 

কবিতা, এতে প্রাণ আছে, 

আছে আনন্দ, লিফ্ট এ নাই বা উঠলেন,

 ধীরে ধীরে ধীরে, দেখবেন 

দেওয়ালির শুভেচ্ছা আসছে সুখতারা থেকে মুক্তির আনন্দে ভেসে যান, কেউ দেবে না বাধা, 

পূর্ণিমা ভট্টাচার্য (টুকুন)



দীপান্বিতা

ব্যলকনি গুলো রঙিন হয়েছে

এক থেকে বহু তলে,

শ্যাওলা ধরা ছাদের কার্নিশ

আজ আলো ঝলমলে।


ইতিহাস ও যে কথা বলে ওঠে

প্রাসাদ কেল্লার সাথে,

প্রাচীন মন্দির নজর কাড়ে

ক্লাবের পাশের মাঠে।


চেনা রাস্তা, গলি গুলো সব

অচেনা অজানা লাগে,

নিজের পাড়া মনে হয় যেন

আসিনি কখনো আগে।


হিন্দি বাংলা গানের সাথে

বাজছে ঢাক ও কাসর,

রঙিন জলের ফোয়ারা তুলে

জমছে রাতের আসর ।

সঞ্জয় আচার্য

চকজন্ম


বোটানি ক্লাস আমার বড় ভালো লাগে, ম্যাম


বুকের ওপর আছড়ে  পড়ে নদী

আলগা হয়ে যায় বাঁধ

জলকল্লোলে ভেসে যায় ঠিকানা

একটা প্রলয়োল্লাস পেরিয়ে যেন আরও একটা।


কাঁচা হলুদ রঙা তর্জনী মধ্যমা আর

বৃদ্ধাঙ্গুলের মাঝে একখন্ড সাদা চক 

আর আপনি লিখে চলেছেন মেদুর বাতাস।


আচ্ছা, আপনি কি বোঝেন না

বহমান স্রোতের ওপরে তখন আমি কেবলই

আমি কেবলই হালকা হয়ে যাচ্ছি আকাঙ্ক্ষায়?


যদি ডাস্টার পায়, চক পায় 

সদ্য পাশ করা মধ্যমা আর তর্জনীময় একখন্ড আয়ু

তবে দ্বিতীয় বর্ষের এই ছাত্রও কেন বদলে নেবে না শরীর

ক্ষয়ে ক্ষয়ে মিশে যাবে না আঙুলে আঙুলে?


বোটানি ক্লাস আমার বড় ভালো লাগে,ম্যাম.....

সুদীপ্ত বিশ্বাস



মিঠির চিঠি 


ছোট্ট মেয়ে মিঠি

এই তো সেদিন মেঘের ডানায় লিখল সে এক চিঠি-

'বড্ড একা আমি!

তোমরা কি কেউ বন্ধু হবে, দেবে আমায় হামি?'

একলা ছিল গাছ

মিঠির চিঠি পেয়েই সে তো করল শুরু নাচ।

ছোট্ট নদীর ধারে

মাছেরা সব মিঠির চিঠি পড়ল চুপিসারে

উঠলো নেচে খুব

বন্ধু হয়ে স্রোতের টানে আবার দিল ডুব।

চলল চিঠি ভেসে

গাছ-পাখিরা বন্ধু পাতায় মিঠির কাছে এসে।

পাহাড় ছিল একা

মিঠির চিঠি পেয়েই পাহাড় করতে চাইল দেখা।

চলল চিঠি চাঁদে

চাঁদের সবাই চিঠি পেয়ে আটখানা আহ্লাদে!

বলল সবাই, 'মিঠি!

আমরা তোমার বন্ধু হব,আজ পেয়েছি চিঠি।'