১৯ ফেব্রুয়ারী ২০২২

মমতা রায়চৌধুরী'র ধারাবাহিক উপন্যাস পর্ব১১১





উপন্যাস 


টানাপোড়েন ১১১
স্বস্তি

মমতা রায়চৌধুরী



নিম্নচাপের জন্য শুরু হয়েছে বৃষ্টির ঘনঘটা রেখা খেয়াল করলো মনের ঘরের জানালা গুলো  যেন সব আর্তনাদ করতে শুরু করেছে  বেশ জোরেই হাওয়াটা দিচ্ছে ।দেয়াল থেকে ক্যালেন্ডার খুলে পড়ল ,ঘরের বই খাতাগুলো নেচে উঠল মুহূর্তের মধ্যেই কেমন গুড় গুড় করে মেঘ ডেকে উঠল। সামনের কৃষ্ণচূড়া গা ছের মাথাটা যেন পাখির মতো নাচচ্ছে ,এপাশ থেকে ওপাশে। রেখা জানলাগুলো এক এক করে বন্ধ করতে গেছে। নারকেল গাছ গুলো জিমনাস্টিক দেখিয়ে চলেছে।
রেখা নিজের ঘরের জানলা বন্ধ করে মনোজের ঘরের দিকে উঁকি দিলো এবং দেখতে চেষ্টা করলো জানলাগুলো বন্ধ করেছে কিনা? রেখা আপনমনেই বিড়বিড় করে বলতে লাগল কী আশ্চর্য এখনো জানলা বন্ধ করেনি।মনোজ কিন্তু কোনো উত্তর করল না। এর মধ্যেই লোডশেডিং। রেখা ঘরের মধ্যে ঢুকে যেন নাকানি-চুবানি খেতে শুরু করল বাধ্য হয়ে বলল' কিগো শুনতে পাচ্ছ না?'
মনোজ বলল-কি বলছ?
রেখা বলল 'ও বাবা তুমি কোন গ্রহে গেছিলে গো ?এতগুলো কথা বললাম কিছু শুনতে পাওনি?
এদিকে দেখ হাওয়া দিচ্ছে জানলাগুলো এত জোরে আওয়াজ হচ্ছে।
আর মন্টু ডাক্তার কে ফোন করেছিলে?
মনোজ বলল 'হ্যাঁ করেছিলাম ।উনি এক জায়গায় আছেন বলে একটা সিরিয়াস কেস আছে ।একটা কুকুরের নাকি সিজার হবে সেজন্য একটু পরে ফোন করতে বললেন।
রেখা বলল ও আচ্ছা বাপরে বাপ । এ তো সাংঘাতিক অবস্থায় আছেন উনি কথা বলছে মুখে আর দরজা-জানালাগুলো লাগাচ্ছে।
খুব চিন্তার ব্যাপার হলো গো খাওয়া দাওয়া বন্ধ করে দিলেও বাচ্চাগুলো।
মনোজ বলল কিছু খাচ্ছে না?
রেখা বললো হ্যাঁ গো ,কিছু খাচ্ছে না। খাবার দেখলেই মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে।
মনোজ বলল শোনো ওদের আর দুধ রুটি দিও না এখন।
রেখা চিন্তিত মুখে বলল' কেন?'
মনোজ বলল অ্যাসিড ফ্রম করে যেতে পারে।
রেখা বলল' ও আচ্ছা তাহলে কি খেতে দেবো?'
মনোজ বলল-'ভাল বিস্কিট দাও ,দেখো খায় কিনা আর না হলে ভাত দিতে হবে।
শোনো না পারলে একটু দৈ ভাত দিয়ে দেখতে পারো।
রেখা বললো ঠিক আছে তাই দেব তাহলে ওই গদাই দা কে বলে দিতে হবে দই এর কথা।
মনোজ বলেছি আমি এক্ষুনি ফোন করে বলে দিচ্ছি ফোন নম্বরটা রয়েছে তো?
সঙ্গে সঙ্গে মনোজ ফোন মে লায়লা নম্বরে রিং হল ধরল না একটু দাঁড়িয়ে থাকলো কি বললে এদিকে বৃষ্টি পড়ছে প্রাকৃতিক অবস্থাটা দেখো।
রেখা বলল 'তা অবশ্য ঠিকই বলেছ। যাচ্ছেতাই  শুরু হয়েছে ।আজকে মাসি তো বিকেলে কাজে আসেনি। মনোজ বলে ডাকো বলতে ভুলে গেছি মাসি কিন্তু খবর পাঠিয়ে ছিল আমার মনে ছিল না জানোতো এতে মাসির কোন দোষ নেই।
লেখাগুলো হ্যাঁ এই মাসে আবার না আসলে আগে থেকে বলে দেয় এটা ভালো দিক।
এ বাবা তাহলে তো দুপুরের বাসন টাসন গুলো জমে আছে কালকে আবার আসবে তো কিছু বলেছে তোমায়? রেখা চিন্তিত হয়ে বলল।
মনোজ বলল না সেরকম তো কিছু বলেনি যে কালকে আসবে না তাহলে নিশ্চয়ই আসবে দেখো।
রেখা বললো তাহলে বাসনগুলো আর মারছি না রেখে দিচ্ছি যেটুকু নয় সেই কটা বাসন মেজে নিচ্ছি।
মনোজ বলল যেটা ভালো বুঝো সেটাই কর।
আবাররেখা রান্নাঘরের দিকে গেল কত কাজ পড়ে রয়েছে স্কুল থেকে প্রোগ্রাম শেষ করে বাড়িতে এসে একমুহুর্ত বসার টাইম পায় নি।
মনোজ ঘর থেকেই চিৎকার করে বলল রেখা রেখা রেখা আ,. আ. আ।
রেখা রান্নাঘর থেকে একটু বিরক্তির স্বরে বলল আবার কি হলো চিৎকার করছো কেন?
মনোজ বলল মাথাটা ছাড়ছে না একটু চা হবে গো?
রেখা বলল হ্যাঁ হবে একটু ওয়েট করো।
মনোজ বলে ঠিক আছে।
কয়েকটি গ্লাস, বাটি, ডিস মেজে নিল। তারপর গ্যাসের চুলায় চায়ের জল বসিয়ে দিল।
বাবা ,কি ঠান্ডা লাগছে । জলটা যেন বরফ হয়ে আছে?
এরমধ্যে রেখার ফোন বেজে উঠলো।
রেখা রান্নাঘর থেকে আওয়াজটা পেল কিন্তু ফোন ধরার সময় কোথায় এখন।
মনোজ ঘর থেকে চেঁচিয়ে বলল রেখা তোমার ফোন বাজছে।
রেখা বলল' বাজুক, যার দরকার
 তিনি আর একবার ফোন করবেন।
আবার ফোন বাজলো 'তুমি রবে নীরবে হৃদয়ে মম…
রেখা আটা মাখছিল, কি করবে আটা মাখা হাত নেই এসে ফোন ধরতে হলো। ফোনটা রিসিভ করে বলল হ্যালো'কি ম্যাডাম খুব ব্যস্ত?'
রেখা বলল' ও আপনি? আর বলবেন না ,তা একটু ব্যস্ত বটে।'
অপরপক্ষ বললেন এপিসোড টা রেডি হয়েছে?
রেখা বেমালুম ভুলে গেছিল আজকে বাচ্চাগুলোকে নিয়ে যা ব্যস্ত তার মধ্যে কেটেছে হাফ লিখে রেখে দিয়েছে, শেষ তো করতেই হবে?
আবার বললেন 'কি ম্যাম, রেডি হয়েছে তো?'
রেখা একেবারে না বলল না বলল হ্যাঁ হয়ে যাবে।
সম্পাদক একটা বড় নিঃশ্বাস ছাড়লেন সেটা স্পষ্ট ফোনেতে বোঝা গেল তারপর বললেন ওহ বাঁচালেন যে টেনশনে থাকি?
রেখা বললো কেন কেন টেনশন কেন?
সম্পাদক বললেন বাজি আছে যে ম্যাম।
সে আপনি বুঝবেন না পরে বলবো আপনি শুধু লিখে যান।
রেখা বললেন হ্যাঁ সে তো চেষ্টা করবোই।
সম্পাদক বলেন কোনো অবস্থাতেই লেখা থামাবেন না মনে রাখবেন এটা কিন্তু ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হচ্ছে।
রেখা বলল মাথায় থাকবে। আর ভুলে গেলে তো আপনি মনে করিয়ে দেবার জন্য আছেন জোরে হেসে উঠলো।
সম্পাদক বলেন প্রান খুলে হাসুন , আর লিখুন প্রান খুলে ।
রেখা বলে অসংখ্য ধন্যবাদ দাদা এভাবে উৎসাহিত করার জন্য।
সম্পাদক বললেন ঠিক আছে রাখছি তাহলে।
রেখা বললো 'হ্যাঁ ,রাখুন।'
ফোনটা রাখতে রাখতেই মনোযোগ ঘর থেকে চেঁচিয়ে উঠলো রেখা রেখা. আ. আ আ।
দেখা হন্তদন্ত হয়ে ছুটল মনোজের ঘরে ।কি হয়েছে ?কি হয়েছে?'
মনোজ তখন কাউকে একটা ফোন করছে ,'হ্যাঁ বলুন?'
রেখা হাঁপাতে হাঁপাতে এসে হাতের ইশারায় মনোজকে দেখালো কি হয়েছে?
মনোজ বলল ইশারায় ডাক্তার বাবু কে ফোন করেছে। কিছু জিজ্ঞেস করলে তু,মি বলতে পারবে তাই ডাকলাম।
রেখা একটা দীর্ঘ  নিঃশ্বাস ছাড়লো।
ওদিকে মনো জ  কথা বলছে, ডাক্তারবাবু বলছেন যে ওষুধগুলো বললাম সেই ওষুধগুলো আনিয়ে নিন।
মনোজ বলল 'ঠিক আছে, ডাক্তার বাবু।
ডাক্তারবাবু বললেন 'কি কি সিমটম দেখতে পাচ্ছেন ।যে গুলো বললেন তার বাইরে আর কিছু কি দেখা যাচ্ছে?'
মনোজ!কথাগুলো শুনে রেখার দিকে' হাতের ইশারায় জানতে চাইল।স্পিকারে কথা হচ্ছে তখন।
রেখা বলল' হ্যাঁ চোখে পিচুটি ও দেখা যাচ্ছে মানে ঠান্ডা লেগেছে আর বমি করেছে।
মনোজ রেখার কথাগুলো ই রিপিট করছিল।
ওদিক থেকে ডাক্তারবাবু জিজ্ঞেস করছেন 'জ্বর এসেছে কি?'
রেখা আবার মনোজকে বলে দিলো না আজ সেরকম ভাবে জ্বর-টর বোঝা যাচ্ছেনা।
মনোজ বলল ডাক্তার বাবু আপনি নাম গুলো বলুন আমি লিখে নিচ্ছি।
মনোজ হাতের ইশারায় রেখাকে একটা প্যাড আর পেন দিতে বলল।
রেখা হাতরে হাতরে কোনরকমে একটা প্যাড নয়,একটা সাদা পাতা জোগাড় করল আর একটা পেন এনে মনোজকে দিল।
মনোজ বলল' হ্যাঁ ,ডাক্তারবাবু ,বলুন। '
ডাক্তারবাবু বললেন-
1Rantac(R) syrup75mg,5ml

2taxim-o(dry syrup)

মনোজ বললো 'কিভাবে খাওয়াবো?'
ডাক্তারবাবু বললেন ' rantac খাওয়াবেন 5ml করে দিনে দুইবার খাবার আগে।
আর taxim-o খাবেন 2ml করে দিনে দুইবার খাবার আগে।'
মনো জ   বলল 'এতে সেরে যাবে ডাক্তার বাবু।'
ডাক্তারবাবু বললেন এ'টাই তো ছেড়ে যাওয়া উচিত দেখা যাক। ডাক্তারবাবু আরো বললেন
এদেরকে কি অন্য কুকুরের সঙ্গে মেলামেশা করতে দেন?
মনোজ বলল না না একদমই নয় শুধুমাত্র রাত্রিবেলা একটু রাস্তা ফাঁকা হলে ওদেরকে একটু খেলানো হয়।
ডাক্তারবাবু বললেন এখন তো একটা ভাইরাস এসেছে এইজন্য একটু চিন্তার বিষয় ঠিক আছে দেখুন খাইয়ে।
মনোজ বলল অসংখ্য ধন্যবাদ ডাক্তারবাবু।
ডাক্তারবাবু বললেন আপনারা যেভাবে রাস্তার কুকুরগুলো কে এত যত্ন করছেন সবাই যদি এরকম করত তাহলে পৃথিবীটা অন্যরকম হতো।
মনে যে বলল আমার স্ত্রী এ ব্যাপারে অগ্রণী ভূমিকায় ।বাচ্চাগুলোর শরীর খারাপ বলে মনে হচ্ছে যেন ওর কিছু একটা না হয়ে যায়।
ডাক্তারবাবু বললেন 'আপনার স্ত্রী তো মানবিকতার অধিকারী ।ওনাকে স্যালুট জানাই।
মনোজ বলল 'একদিন আসবেন ডাক্তারবাবু আমাদের বাড়িতে ।আমাদের বাচ্চাগুলোকে একটু দেখে যাবেন।'‽
ডাক্তারবাবু বললেন 'এর আগে তো ভ্যাকসিন দিতে গেছিলাম বাচ্চাগুলোর মাকে। যদি ও আপনার বাড়িতে যাওয়া হয়ে ওঠেনি।'
মনোজ বলl'ওই জন্যই তো বললাম আসবেন।'
ডাক্তারবাবু বললেন হ্যাঁ মাথায় থাকলো ।ঠিক আছে রাখছি।'
মনোজ বললো 'ওকে ওকে।'
রেখাও একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল। আর বলল এত তাড়াতাড়ি ওষুধগুলো আনার ব্যবস্থা করো।
মনোজ বলল দাঁড়াও এক্ষুনি বেরোচ্ছি কিন্তু দেখো বৃষ্টিটা সময় হয়ে যাচ্ছে।
রেখা বলল এরপরে কিন্তু দোকান বন্ধ হয়ে যাবে তুমি ছাতা নিয়ে বের হলেই ঘর থেকে রান্নাঘরের দিকে গেল।
রান্নাঘর থেকে আরেকবার বল কটা রুটি খাবে রাত্রে।
মনোজ ছাতা খুঁজতে খুঁজতে বলল এখানেই তো রেখেছিলাম ছাতাটা দেখেছো কাজের সময় আর খুঁজে পাই না কি বলছিলে দুটো  করো।দুটো।
রেখা বললো ঠিক আছে আরে এই তো ছাতা তুমি ছাতা খুঁজছো চোখ কপালে তুলে রাখ কে জানে বাবা?
মনোজ বলল 'আরে বাবা ,দেখতে পেলে কি আর বলতাম। মনোজ বেরোতে যাবে এমন সময় আবার ফোন।'
বিরক্তির স্বরে বলল মনোজ' এখন বেরোবো, এই সময় ফোন?'
দেখি কে করল?
ফোনটা খুলেই দেখল মায়ের ফোন?
রেখা রান্নাঘর থেকে বলল কে ফোন করেছে?
মনোজ বলল'' মা। রেখা আর কোন কথা বাড়ালো না।
মনোজ ফোনটা না ধরেও পারল না ।  বলল 'হ্যালো'।
অপরপ্রান্ত থেকে বলল কিরে বাবা কখন থেকে ফোন করছি ধরছিস না?
মনোজ  বলল ,'শুনতে পাইনি মা।'
অপরপক্ষ বলল নাকি ফোন ধরলেই..

মনোজ বলল 'কি বলতে চাইছ বলো?'
অপরপক্ষ বলল 'তাহলে কি সিদ্ধান্ত নিলি।'
মনোজ বলল তুমি আসবে তাতে আবার বলাবলির কি আছে?'
মনোজের মা বলল 'নিশ্চিন্ত করলি বাবা। ভীষণ অসুস্থ ছিলাম একটু স্বস্তি ফিরে পেলাম।

মমতা রায় চৌধুরীর ধারাবাহিক উপন্যাস পর্ব ১১০




উপন্যাস 

টানাপোড়েন ১১০
চিন্তার ভাঁজ
মমতা রায় চৌধুরী


বাড়িতে ঢুকেই রেখা মনোজের ঘরে হট টকের আওয়াজ শুনতে পেল। কখনো বলছে তোমাদের এত দিয়েও তোমাদের মনের আশা পূর্ণ করতে পারলাম না। কখনও কি  আমার কি নিজস্ব কোন আশা-আকাঙ্ক্ষা থাকতে পারে না ?আমার ভালো লাগা থাকতে পারে না ?আমি কার সাথে ভালো থাকবো, সেই সঙ্গী নির্বাচন করার ক্ষমতা আমার থাকবে না? কেন বলতে পারো প্রতি পদে পদে আমাকে এত কথা তোমরা শোনাও।'
রেখার কাছে সব কিছু যেন মুড়িঘন্ট হয়ে গেল।
রেখা ভাবছে 'কার সাথে কথা বলছে?'
কোথায় সারাদিন ক্লান্ত হয়ে ফিরলাম একটু বাড়িতে এসে খোশমেজাজে থাকবো। কালকে আবার অনুষ্ঠান 


আছে স্কুলে। তার কিছু স্ক্রিপ্ট তৈরি করতে 
হবে । চিন্তার ভাঁজ পড়ছে কপালে। এর মধ্যে যদি বাড়ির একজন লোক সবসময় হটটক করতে থাকে। সেখানে কি ভালোভাবে কাজ করা যায়? রেখা এসব ভাবতে ভাবতেই ওয়াশরুমে দিকে যায় ,যাবার সময় লক্ষ্য করে মনোজের ঘরের জানালার নীল পর্দাগুলো যেন হাওয়ায় দুলছে। ওয়াশরুমে যেতে যেতেই রেখার পা মনোজের ঘরের কাছে এসে একটু থমকে দাঁড়ালো। রেখার আওয়াজ পেয়ে বাচ্চাগুলো চিৎকার শুরু করেছে। রেখা ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে একবার হাঁক দিল'মিলি ,তুলি ,পাইলট এত চিৎকার কিসের?
রেখা যেই না  কথাটি বলেছে অমনি সঙ্গে সঙ্গে চুপ। রেখা কি জাদু জানে, ভানুমতি?আপন মনেই হাসতে থাকে।
এরমধ্যে ফ্রেশ হয়ে গোবিন্দের ভোগ চাপিয়ে , গোবিন্দকে শয়ন দিয়ে , রান্নাঘরে ঢুকলো ,মেপে জল নিল প্যানে, গ্যাস চুল্লিতে বসিয়ে দিল। তারপর ওদের জন্য একবারে মাংসের ঝোলটা গরম করে ভাতটা মেখে খাবার খাওয়াতে গেল।
কিন্তু কি আশ্চর্য  তুলি খাবার খেতেই  এলো না।
ওকে কোলে তুলে নিয়ে রেখা আদর করে খাওয়াতে গেল খাবার দেখলেই মুখ সরিয়ে নিচ্ছে। রোজ খাবার দেখলে পাগল হয়ে যায়।
রেখার মনের ভিতর একটা দুশ্চিন্তা ঢুকলো কী হলো কে জানে?
রেখাnএসে সেন্টুদাকে ব্যাপারটা বলছিল । সেন্টুদা বলল'বৌদি  ওর বোধহয় গ্যাস ফর্ম করেছে?_'
রেখা বলল' কে জানে, কি হলো?'
কথা বলতে বলতে একটু দেরি হয়ে 
গেল ।রান্নাঘরে ঢুকেই দেখল কফির জল ফুটে  একটুখানি হয়ে গেছে। কি আর করবে আবার আর একটু জল মেশাল। এবার ভালো করে দুধ ফেটিয়ে দিয়ে দিল। তারপর কপি ফেটানো হলো। এবার কাপে ঢেলে এককাপ নিজের জন্য,আর এক কাপ মনোজ এর জন্য নিয়ে মনোজের ঘরের দিকে পা বাড়ালো। এই সময় কফি না খেলেও হয় কিন্তু নেশার মত স্কুল থেকে ফিরে চা বা কফি খেতেই হবে।
রেখা দেখল' মনোজ চুপচাপ জানলার কাছে দাঁড়িয়ে। টিভি টাও বন্ধ। সিগারেট খাচ্ছে। রেখার পায়ের শব্দতেও তাকালো না মনোজ?'রেখা
ভেতরে ঢুকতে ঢুকতে বলল তোমার কফিটা, বলেনহাত বাড়িয়ে দেয় কাপটা দেবার জন্য। মনোজ আপন-মনে তাকিয়ে আছে জানলা দিয়ে বাইরের দিকে ।রেখার অস্তিত্ব যেন তার কাছে কোন মানেই রাখেনা। রেখার একবার কাছে গিয়ে মনোজকে ধাক্কা দিয়ে বলল 'তোমার কফিটা নাও ,ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে।'
মনোজএকদৃষ্টে ওর দিকে তাকিয়ে 
থাকলো ।তারপর হাত বাড়িয়ে কাপটা নিল । মনোজের চোখের অভিব্যক্তি রেখা যেন আজকে বুঝতে পারছেনা ।কী আছে ওর চোখেতে? তবে এটুকু বুঝল চোখদুটো ছলছল হয়ে আছে ।রেখা আবিষ্কার করার চেষ্টা করলো কে এমন আঘাত দিল যার জন্য আজকে ওর চোখে জল?'
রেখা বলল'' কফির সাথে বিস্কিট খাবে?'
মনোজ ঘাড় নেড়ে নিষেধ করল।
রেখা কোন কথা না বলে বেরিয়ে আসছে'তখন মনোজ নিজে থেকেই বললো ,'আজকে মা ফোন করেছিল?'
রেখাও জিজ্ঞাসু নেত্রে থেকে চোখের ভাষাতে বোঝাতে চাইল কেন?
মনোজ বললো' মা এ বাড়িতে এসে থাকবে?'
মনোজ যেন রেখার উত্তরের অপেক্ষায় উৎসুক ভাবে তাকিয়ে থাকলো।
যেন মনে হচ্ছে রেখার ' হ্যাঁ বা না 'এর ওপর অনেক কিছু নির্ভর করবে। মনে হল যেন গোটা ভবিষ্যৎ টাই রেখার একটা  হ্যাঁ বা না উপর দাঁড়িয়ে আছে। 
রেখা শুধু হেসে বলল 'বাড়ি তোমাদের সুতরাং এখানে আমি কি মন্তব্য করব বলো?
মনোজi তখন বলল কিন্তু তোমাকে বলার একটাই কারন মা দিদি তো তখন ঝগড়াঝাটি করে সম্পত্তির সব টাকা-পয়সা বুঝে নিয়ে চলে গেছে। যদিও এটা আমরা সকলেই জানি যে আজকে দিদির উস্কানিতে আমাদের সংসার এত বড় অশান্তি। গয়নাগাটি টাকা পয়সা সবই তো নিয়ে চলে গেছে। মাসে মাসে ৬-৮ হাজার করে  টাকা পাঠাতে হয়। এজন্য অবশ্য আমার কোন দুঃখ নেই সম্পত্তি গয়নাগাটি কেউ কোনো কিছুর উপরে দুঃখ শুধু একটাই আমাদের মিথ্যে অভিযোগে অভিযুক্ত করল। তোমার সাথে যে ব্যবহারগুলো করেছে নিজের মা দিদি বলে বলব না একদমই ঠিক করেনি। 
এখন হঠাৎ কি কারণে। আজ সেটাইতো বুঝতে পারছিনা।
সংসার শুধু অশান্তি আর অশান্তি।
তবে মনোজ বলল 'আমি তো মাএর উপর কোন অবিচার করতে পারব না, মা যতই ভুল করুক না কেন ? রেখা বলল তো সমাধান হয়ে গেল।  আর কোন সমস্যা নেই।'
মনোজ অবশ্য মনে মনে ভাবল রেখাএই কথাটাই বলবে, সে  জানে অথচ রেখাকে মা দিদিরা কেউ মেনে নিতে ই পারল না মানুষের ভিতরে একটা টানাপোড়েন একটা চিন্তার ভাঁজ লক্ষ্য করা যায় গেল ।রেখা চলে গেল ঝড়ের বেগে। মনোজ জানে আবার নতুন কোন ঝড় আসতে চলেছেআর বাড়িতে। তাই শক্ত হাতে মোকাবেলা করতে হবে।।
মনোজ মনে মনে ভাবল কি করবে?.
তার দিদি সম্পত্তির লোভে মাকে হাতিয়ার করেছে। মাও তার বোধ বুদ্ধি সব হারিয়ে দিয়ে দিদির কথায় নাচছে। সব ভাগবাটোয়ারা করে নিয়েও গেল ।তার পরেও এখন কি চাইছে,?
রেখাকে ব্যাপারে দোষ দেয়া যায় না আমিতো নিজে দেখেছি কত ভালো-মন্দ খাবার হলেও রেখাকে দেয়া হতো 
না । কিন্তু কখন ওর মুখ থেকে এসব কথা শোনা যায়নি।
মনো জ  মনে করতে থাকে একবার সরস্বতী পূজার সময় দিদিরা সবাই এসেছে ,মাসিরা এসেছে। চিংড়ি মাছের মালাইকারি ,মটন কষা,আর মোরোলা মাছের টক এছাড়া তো ডাল ,সবজি হয়েছিলই।
মনোজ সেদিন অনেক পরে 
খেয়েছিল ।খাবার পর এসে রেখাকে জিজ্ঞেস করেছিল 'চিংড়ি মাছ টা কেমন  খেলে আর মোরোলা মাছের টক?'
কেমন অবাক হয়ে মনোজ এর দিকে তাকিয়েছিল। তারপর মজা করে রেখা বলেছিল আজ সরস্বতী পুজো ,আমি তো মাছ খাব না, জানি না?'
মনোজ বোকার মত দেখার কথাগুলো সব মেনে নিয়েছিল।
পরের দিন যখন ইলিশ মাছের তেল ঝোল হয়েছিল সেদিনও খাওয়ার পর মনোজ এসে বলেছিল ইলিশের তেলঝোলটা কি ভালো হয়েছিল না গো?
রেখা সেদিনও হেসেছিল তবে হাসির মধ্যে লুকিয়ে ছিল প্রচ্ছন্ন মলিনতা, চোখের কোনে জল চিকচিক করছিল।
ধরা পড়ে যাবার ভয়ে সরে গিয়েছিল কাজের অজুহাত দেখিয়ে।
 সেদিন মনোজ খুব কষ্ট পেয়েছিল।
এরকম ঘটনা প্রায় লেগেই থাকত। এই ছোট ঘটনাগুলোই একসময় মহীরুহ আকার ধারণ করেছিল ওর বীজ নিহিত ছিল ছোট ঘটনার মধ্যে। রেখাও কষ্টগুলোকে হজম করতে শিখেছিল সহ্যশক্তি টাকে  বাড়িয়েছিল।
একদিন মনে পড়ে একটা নতুন কিছু খাবার হলেই মনোজ ব্যাপারটা বুঝতে পেরে না খাওয়ার অছিলায় পাতে রেখে দিত আর বলতো রেখা এটা খেয়ে নিও।
মনোজের মা বলেছিল কেন রে তোকে যেটা খেতে দিয়েছি তুই না খেয়ে ওর জন্য রেখে দিচ্ছিস তোর বউকে কি আমরা না খাইয়ে  রাখি?'
মনোজ বলেছিল' খেতে পারলাম না তাই রেখে দিলাম।'
মনোজের মা বলেছিল' তাহলে আগে বললি না কেন, তুলে নেয়া হতো?'
মনোজ ও কথার কোন উত্তর দেয়নি।
পরিবার থেকে তো কত কষ্ট পেয়েছে রেখা মনোজ এর থেকেও অনেক আঘাত পেয়েছে কারণে-অকারণে আজকে মনটা খুবই ভারাক্রান্ত রেখার জন্য।
এরইমধ্যে দেখল মনোজ রেখা রান্নাঘরের দিকে যাচ্ছে। মনোজ বেরিয়ে রেখাকে বলল' রেখা, রেখা, রেখা।'
রেখা কেমন একটু আশ্চর্য হয়ে
 গেল ।বেশ কয়েকদিন পর মনোজ রেখা কে ডাকছে।
রেখা কাছে গিয়ে বলল 'আমাকে ডাকছো?'
মনোজ  বলল 'তুমি কিছু বললে না?'
রেখা বলল' কোন ব্যাপারে?'
মনোজ  বলল 'কেন মায়ের ব্যাপারে?'
রেখা বলল তুমি বোধহয় খেয়াল করো নি  আমি উত্তরটা কিন্তু দিয়ে দিয়েছি।'
মনোজ  বলল'এটাই তোমার লাস্ট উত্তর?'
রেখা বলল  ' তাছাড়া আমি কি বলতে পারি বলো?
তিনি তার নিজের বাড়িতে আসবেন ছেলের কাছে থাকবেন আমি কি বাধা হয়ে দাঁড়াবো ।এটা কখনো আমার কাম্য নয়।
মনোজ বলল সে আমি জানি? কিন্তু..?
রেখা বললো ' কোন কিন্তু নয়?'
মনোজ বলল কিন্তু রেখা তুমি তো জানো আসলেই দিদি কল কাটি নাড়বে আর বাড়িতে অশান্তি?
রেখা বলল 'তা হয়ত হবে আর তাছাড়া তোমার মা যখন আমাকে পছন্দই করেন না ,আমার মনে হয় যদি অশান্তি চূড়ান্ত পর্যায়ে যায় আমার আলাদা জায়গায় থাকা উচিত।'
মনোজ চুপ করে কথাগুলো শোনে।
মনোজ বলল 'তুমি এরকম কথা বলছো কেন ?তুমি আলাদা জায়গায় থাকবে?'
রেখা বলল 'ঝগড়া করে তো কোনো লাভ নেই।'
মনোজ বলল আমি নিজে এ নিয়ে  টেনশনে আছি রেখা।'
রেখা বললো আর একটা টেনশন তোমাকে বাড়িয়ে 
দিচ্ছি ।মনোজ ভ্রু কুঁচকেজিজ্ঞাসু নেত্রে তাকালো আর বললো কি?
রেখা বলল 'তুলি , পাইলট কোন খাবার খাচ্ছে না।'



মনোজ বলল' সে কি? এ তো চিন্তার ব্যাপার হয়ে দাঁড়ালো।'একটু অন্যমনস্ক ভাবে জানলার দিকে তাকিয়ে থাকলো।
রেখা বললো' একবার মন্টু ডাক্তার কে ফোন করো ব্যাপারটা খুলে বলো।'অত চিন্তা নিয়ে বসে থাকলে হবে না।

মামাতা রায় চৌধুরীর ধারাবাহিক উপন্যাস পর্ব ১০৯




উপন্যাস 

টানাপোড়েন ১০৯
দায়িত্বের বেড়াজাল
মমতা রায়চৌধুরী


যেমন মাথাটা ব্যথা করছে ঠিক তেমনি গলাটাও জ্বালাচ্ছে,খুসখুসে কাশি হচ্ছে। রেখা ভাবল বাড়িতে গিয়ে গরম জলে লবঙ্গ, লবণ ফেলে,কারগিল করতেই হবে। ওদিকে বড়দিকে আবার ফোন করতে হবে। কি দরকার ছিল আমাকে দেবার। এবার দায়িত্বটা অনিন্দিতার হাতে তুলে দিলেই  পারতেন। সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে অটোস্ট্যান্ড পৌঁছালো। 
বিধান এগিয়ে এসে বলল ' ও দিদি, চলুন।'
রেখা বলল 'ও বিধান ,আছো?'
বিধান অটোওয়ালা বলল'হ্যাঁ দিদি একটা ঝামেলা হয়ে গেল। না হলে আমি আগেই চলে
 যেতাম ।আপনার সঙ্গে হয়তো দেখা হতো না।'
রেখে একটু উৎসুক হয়ে বলল 'ঝামেলা কেন
 গো ?কি নিয়ে ঝামেলা?'
বিধান বলল' আর বলবেন না দিদি, আমারই লাইন ছিল ,আমি একটু অটোটা রেখে গেছিলাম একটু খেতে ,তার মধ্যে অন্যজনা লাইন দিয়েছে এই নিয়ে। তা দেখলাম ঠিক আছে যা। তুই আগে যা বাবা ।আমি না হয় পরেই গেলাম।'
রেখা হেসে বললো 'সত্যি তোমাদেরকে এই নিয়েও ঝামেলা পোহাতে হয় ,হ্যাঁ।'
বিধান বলল' ঝামেলা করলে 
ঝামেলা । এ তো নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার।'
রেখা বললো' তা ঝামেলাটা কে করলো ওই গেরা।'
বিধান হেসে বলল' দিদি, আপনিও জানেন?'
রেখা মুচকি হেসে বললো 'তা কি ভাবো আমরা কিছু খবর রাখি না?'
বিধান মাথা চুলকে বলল 'হ্যাঁ ঠিকই দিদি, আমারই ভুল।
রেখা বলল' ধুত ক্ষ্যাপা। ভুল আবার
 কি ?তোমাদের যে জোরে জোরে চেঁচানোর আওয়াজ হয়, যে কোনো যাত্রী বলে দিতে
 পারবে ।শুধু আমি নই।'
বিধান হে হে করে হেসে উঠলো।
রেখা বলল 'নাও এবার চলো। এ বাবা এ তো ফাঁকা ।ক'জন হলে ছাড়বে গো?'
বিধান বলল' কি বলি বলুন তো দিদি ?আমার তো সব প্যাসেঞ্জার নিয়ে চলে গেল। '
অন্য দু'জন প্যাসেঞ্জারকে আসতে দেখে হাসতে লাগলো আর অত্যন্ত ভালোবাসার সুরে বলল ', আসুন ,আসুন, আসুন। এই গাড়ি আগে ছাড়বে , এই গাড়ি আগে ছাড়বে।'
রেখা দেখল ', এত করে ডেকে নিয়ে আসলো। ওর গাড়ীতে না গেলে বেইমানি করা হবে।'
রেখা অটোতে উঠে  নিজের জায়গা নিয়ে বসলো।
এর মধ্যে দু'জন ষন্ডামার্কা লোক এসে বসার চেষ্টা করল।
রেখা বলল সামনের সিট ফাঁকা আছে, বসুন না?
ষন্ডামার্কা চেহারার লোক দুজন রেখার দিকে এমন ভাবে তাকাল যেন মনে হচ্ছে চাহনিতে রেখাকে  ভস্ম করে দেবে। লোক দুজনকে মোটেই সুচারু মনে হচ্ছে না। রেখাও ভয় পাওয়ার মেয়ে নয়। নিজেদের এরিয়া এখানে সবাই তাদের কে চেনে। সুতরাং এমন তেমন কিছু করলে মার খেয়ে   ভূত হয়ে যাবে। রেখাও কটমট করে তাকালো দুজনের দিকে। দুজন লোক যা ভেবে বদ মতলব আঁটছিল, তা সে গুড়ে বালি ভেবে একটু কাচুমাচু হয়ে বলল' ও ম্যাডাম কেউ না কেউ তো বসবে ।আমরা বসেছি তাতে কি আপনার খুব অসুবিধা হচ্ছে?'
রেখাও দমবার পাত্রী নয়, বলল 'অসুবিধা না হলে কি আর আপনাদের বলছি।'
 ষন্ডামার্কা চেহারার লোক দুজন বলল 'কিন্তু কেউ না কেউ তো …
রেখা তাদের কথা শেষ হওয়ার আগেই আঙ্গুল দিয়ে থামিয়ে দিয়ে বলল' যখন আসবে তখন দেখা যাবে। আর কিছু প্রশ্ন?'
ষন্ডামার্কা চেহারার লোক দুজন চুপ করে রইলো।
এর মধ্যেই বিধান আরো দুজন ভদ্রমহিলা কে ডেকে নিয়ে আসল।
বিধান বলল 'ও দাদা আপনারা দুজনেই সামনের সিটে যান দুজন লেডিজ এখানে বসে যাক।'
রেখা বলল 'আমি তখন থেকে আপনাদের দু'জনকেই একই কথা বলে যাচ্ছি।'
বিধান বলল 'ও দাদা, শুনতে পাচ্ছেন না।'
ষন্ডামার্কা চেহারার দুজন লোক বলল "ধেততেরি, আপনার অটোতে বসবই না। 'বলেই মেজাজ দেখিয়ে দুজন উঠে পড়ল।
রেখা ভাবল এই যা গরিব মানুষ বিধানের ও দু'জন প্যাসেঞ্জার নেমে গেলে তো খুবই ক্ষতি হবে,শুধুমাত্র রেখার জন্য। রেখা কি করবে সেটাই ভাবছে। রেখা দ্বিধার মধ্যে পড়ে গেল। একদিকে লোকগুলোর লোভনীয় আচরণ অন্যদিকে বিধানের দুজন লোক নেমে যাওয়া মানে...।
এরমধ্যে বিধান দেখে বলে উঠল 'দেখি আপনারা কোন অটোতে যান?
অটোতে উঠে আবার নেমে যাওয়া আবার মেজাজও উপরি পাওনা হিসেবেদেখানো।,'
লোক গুলো কি একটা ভাবল ভেবে নিয়ে আবার বিধানের অটোতে উঠে
 বসলো ।এবার ঠিক সামনের সিটে বসলো আর দুজন ভদ্রমহিলা রেখার কাছে বসলো।
বিধান বলল আজকে যদি আপনারা মেজাজ না দেখিয়ে এমনি বলতেন যে 'ঠিক আছে ভাই আমরা অন্য  অটো দেখছি, তাহলে মেনে নিতাম । কিন্তু এইভাবে ?আজকে কি করে যেতেন আমরাও সেটা দেখে নিতাম ।আমাদের মধ্যে ইউনিটি নেই ভেবেছেন?'
ষন্ডামার্কা চেহারার লোক দুজনা কোন কথা বলল না ।বিড়বিড় করে দুজনে কি বলল সেটা শোনাও গেল না।'
রেখা তো মুখ টিপে টিপে হাসতে লাগল আর বিধানকে তাড়া দিল'বিধান তাড়াতাড়ি চলো।'
বিধান অটোতে স্টার্ট দিয়ে বলল  'এই তো যাচ্ছি।'
বিধান জিজ্ঞেস করল আপনারা কোথায় যাবেন? মানে কোথায় নামাবো?'
ষন্ডামার্কা চেহারার লোক দুজন বলল 'বুদ্ধ পার্ক।'
আর পাশের দুজন ভদ্রমহিলাকে জিজ্ঞেস করল কোথায় নামবেন?
দুজন ভদ্রমহিলা বললেন' এইতো আমরাও বুদ্ধ পার্ক এ নামবো।'
বিধান বলল তাহলে মোটামুটি একই লাইনে আছেন সবাই।'
বিধান বলল 'দিদি আজকে একটু আপনার লেট হয়ে গেল না?'
রেখা বলল হ্যাঁ, তা একটু হলো বটে, কি আর করা যাবে বলো।'
বিধান চেঁচাতে লাগল বাগের মোড়, বাগের মোড়।
রেখা মনে মনে হাসতে লাগল অটোওয়ালাদের সবারএক  রোগ ।যতক্ষণ ওদের কোটা পূর্ণ না হবে ,ওরা হাঁকতেই থাকবে ।
ড্রাইভার এর পাশে একটি সিট ফাঁকা ওটাকেও ফিলাপ করতে হবে।
বিধান আবার হাঁকতে থাকে বাগের মোড়, বাগের মোড়, বুদ্ধ পার্ক, বি ব্লক...।
রেখা মনে মনে ভাবতে থাকে বড়দি তো নাছোড়বান্দা কিছুতেই অনুষ্ঠান পরিচালনার ভার অন্য কারও হাতে ছাড়বেন না কিন্তু সেদিনকার অপমানটাও তো ভুলতে পারছে না রেখা ।যদি এখানে বড় দির কোন কিছু করনীয় ছিল
 না ।এমন ভাবে ঘটনাটা ঘটলো। যদিও পরবর্তী ক্ষেত্রে বড়দির হস্তক্ষেপে এই ব্যাপারটা সামাল দেয়া গেল।
কী করবে বুঝে উঠতে পারছে না বড়দির কথা তো ফেলতেও পারবে না।
এরইমধ্যে বিধান বলল' বুদ্ধ পার্ক এসে 
গেছে ।নামুন ,নামুন, নামুন।'
রেখার ভাবনায় ছন্দ পতন ঘটল।
রেখা অটোতে একা আর কিছুক্ষণ পরেই রেখা নাববে। ম্যাগনেট হাউস পার হয়ে আরো একটু যেতে হবে।
বিধান বলল 'দিদি আপনার বাড়ি।'
রেখা ব্যাগ থেকে মানিব্যাগটা বের করে বিধানের ভাড়া মিটিয়ে দিল।
বিধান একগাল হেসে বলল' দিদি কাল কটার গাড়ি ধরবেন?'
রেখা বলল 'কালকে একটু বেলায় বেরবো গো।
পরের ট্রেনটা ধরবো।'
বিধান বলল ঠিক আছে যদি আমি ওই সময় যাই তাহলে আপনাকে তুলে নেব।'
রেখা বলল 'ঠিক আছে।'
বাড়িতে ঢুকে কলিং বেল বাজালো, কলিংবেল বাজানোর সঙ্গে সঙ্গে' জয় শ্রী কৃষ্ণ ,জয় শ্রী কৃষ্ণ, জয় শ্রী কৃষ্ণ।"
মনোজ এসে দরজাটা খুলল তারপর দরজাটাকে না ভেজিয়ে চলে গেল নিজের ঘরে।
রেখা অবাক হয়ে গেল রেখাকে একবার জিজ্ঞেসও করল না ভালো-মন্দ।
রেখা দরজা বন্ধ করতে করতে একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছাড়লো।
এরপর ব্যাগটা টেবিলের উপর রেখে চলে গেল ওয়াশরুমে ভালো করে ফ্রেশ হয়ে গোপালের সন্ধ্যারতি করে কফি করবে বলে রান্নাঘরের দিকে গেল।
তাড়াতাড়ি দু'কাপ জল প্যানে দিয়ে গ্যাসের চুলায় বসিয়ে দিল। আজকের রেখা ঠিক করে নিয়েছে আজকে ব্ল্যাক কফি খাবে কিন্তু মনোজ এর জন্য ব্ল্যাক কফি চলবেনা। তাড়াতাড়ি কফি বানিয়ে এসে বসল বসার ঘরে ।রেখা ওখান থেকেই মনোজকে ডাকতে লাগল এই শুনছো,এই শুনছো?'
কোন সাড়া না পেয়ে রেখে চলে গেল মনোজের  ঘরে।
রেখা গিয়ে দেখে মনোজ ল্যাপটপ নিয়ে বসে আছে। তারপর অত্যন্ত বিরক্তির স্বরে বলল' কিগো তোমাকে কখন থেকে ডাকছি সাড়াই দিচ্ছ না।'
মনোজ এবার ল্যাপটপ থেকে মুখ তুলে বললো কি জন্য ডাকছ?'
রেখা বলল 'তোমার জন্য কফি করেছি খাবে না?''
মনোজ বলল 'না'।
রেখা অবাক হয়ে বলল' তুমি কফি খাবে না আমি বানালাম।'
রেখা উত্তরের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলো অনেকক্ষণ পর মনোজ কি ভাবলো কে জানে তারপর বলল ঠিক আছে এখানে দিয়ে যাও।
রেখা মনে মনে ভেবেছিল দুজনে একসাথে বসে কফি খাবে। পুরনো দিনগুলোর কথা মনে করছিল একসময় স্কুল থেকে ফিরলে মনোজই কফি এনে রেখার মুখের সামনে তুলে ধরতো। আর আজ…?

রেখা কিছুক্ষণ মনোজের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকল সাক্ষী থাকলো শুধু ঘর, ঘরের আসবাবপত্র ।মনোজ কিন্তু ল্যাপটপেই মনোনিবেশ।'

তারপর রেখা ধীরে ধীরে ভেতরের কষ্ট, যন্ত্রণা কে পাথর চাপা দিয়ে চোখের জল গোপন করে হিম শীতল হয়ে গেল। ধীরে ধীরে ঘর থেকে বেরিয়ে আসলো বসার ঘরের থেকে কফির কাপটা হাতে তুলে নিয়ে মনোজের ঘরে গিয়ে দিয়ে আসলো আর বলল তোমার কফি থাকলো খেয়ে নিও।
রেখা কোন উত্তরের অপেক্ষা না করেই বেরিয়ে আসলো আপন মনে নিজেই কফি খেতে খেতে ফিরে যেতে চাইল তার সোনালী দিনগুলোতে কিন্তু তারই মাঝে হঠাৎই মনে হলো বড়দিকে তো একটা ফোন করা দরকার। নম্বর ডায়াল করে ফোন লাগাল বড়দিকে।
কিন্তু ফোনটা ব্যস্ত ফলে রেখা ফোনটা রেখে দিল ফোনটা রাখার সঙ্গে সঙ্গেই রেখার ফোন বেজে উঠলো। রিং হতে থাকলো 'তুমি রবে নীরবে, হৃদয়ে মম...।'
রেখা ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখে বড়দির 
ফোন ।সঙ্গে সঙ্গে ফোনটা রিসিভ করে বলল 'হ্যাঁ বড়দি বলুন।''
বড়দি বললেন 'তাহলে কালকের ব্যাপারটা কিন্তু না ক'রোনা রেখা।'
রেখা বলল কিন্তু…
বড়দি বললেন "আর কিন্তু নয় রেখা তোমাকেই দায়িত্ব নিতে হবে ।'
রেখা বলল'এবার যেন ওরকম সিনক্রিয়েট না হয় বড়দি.।'
বড়দি বললেন না এবার আর কোন সিনক্রিয়েট হবে না।'
রেখা বলল 'আপনি তো কালকে থাকবেন তাহলেই হবে।'
বড়দি হেসে বললেন 'আমি কালকে থাকতে পারছি না ,রেখা ।একটা আর্জেন্ট কাজ আছে।'
রেখা বলল' তাহলে দিদি?'
বড়দি বললেন 'আমি তো তোমাকে আশ্বাস দিচ্ছি সেরকম যদি কিছু হয় ,তুমি কিছু বলতে চাও ললাল পরের দিন আমি স্কুলে গিয়ে আচ্ছা করে ঝারবো। রেখা চুপ করে থাকলো।
 বড়দি বললেন 'তাহলে তুমি আগামীকালের জন্য প্রস্তুতি নাও। ভালো থেকো কেমন.,…



মমতা রায় চৌধুরী'র ধারাবাহিক ১০৮উপন্যাস




উপন্যাস 



টানাপোড়েন১০৮
সুখানুভূতি

মমতা রায় চৌধুরী


রেখা আজকাল কোন কিছুতে বেশি গুরুত্ব দিতে চায় না রাগ, অভিমান, ক্ষোভ এসব সে মেনে নিয়েছে ।এগুলো নিয়ে সে যত বেশি ভাববে তার মনের কষ্ট তত বাড়ে। কি দরকার? যারা তাঁর প্রতি বিরক্ত ,যারা তাকে নিয়ে বেশি রাগ অভিমান দেখায় ,সে তাদের প্রতি এগুলো করা ছেড়েই দিয়েছে। ভালোবাসার মানুষটিই আর তার ভালোলাগার প্রতি কোন গুরুত্ব নেই। তাহলে কার কাছে প্রত্যাশা? বাবা-মা তো কবেই মারা গেছে। আছেন কাকু কাকিমা। তারাও সবসময় আমাকে নিয়ে ভাবেন। রেখার মনে হল  ট্রেন থেকে একটা ফোন করি কাকিমাকে।
ব্যাগ হাতড়ে হাতড়ে ফোনটা বের করলো। ডায়াল করল নম্বর। ফোন বেজে গেল। 
কটা বাজে ,কাকিমা ফোন ধরছে না ?ওরে বাবা সাড়ে ছয়টা বাজে, নির্ঘাত ঠাকুর ঘরে গিয়ে বসে আছে। একটু পরে করছি ফোন।
উপন্যাসের নেক্সট পর্ব টা নিয়ে ভাবি, কাজে দেবে।
এরমধ্যেই জায়গা নিয়ে দুই ভদ্রমহিলার মধ্যে তুমুল ঝগড়া শুরু হয়ে গেল।
এক ভদ্রমহিলা বলছেন 'জায়গাটা কি আপনার শ্বশুর মশাই কিনে রেখে গেছেন?'
আর এক ভদ্রমহিলা বলছেন " হ্যাঁ, হ্যাঁ, হ্যাঁ , আমার শশুর মশাই কিনে রেখে গেছেন।
উঠুন জায়গাটা ছাড়ুন। আপনার তো লজ্জা হওয়া উচিত ।আপনি আমার জায়গাটায় বসে পড়লেন  ।দেখতে পাচ্ছেন আমার বাচ্চা  কোলে?'
রেখা খেয়াল করল 'সত্যিই তো ভদ্র মহিলার কোলে বাচ্চা।
আর বসে থাকা ভদ্রমহিলা বললেন' 'বাচ্চা আমারও আছে '।
বাচ্চা কোলে ভদ্রমহিলা এদিক ওদিক তাকিয়ে  বললেন 'আপনার বাচ্চা কোথায়?'
বসে থাকা ভদ্রমহিলা  বলেন 'কেন বাড়িতে রেখে এসেছি?
যে ভদ্র মহিলা দাঁড়িয়ে আছেন 'তিনি বললেন 'আপনার বাড়িতে ,এখানে নেই তো! ছোট বাচ্চা দেখছেন কোলে  আমি দাঁড়িয়ে যেতে পারি ?একটু সহানুভূতির দৃষ্টিতে দেখুন।'
বসে থাকা ভদ্রমহিলা বললেন 'সহানুভূতির দৃষ্টিতে দেখলে তো বসা যায় না। এত দূরের রাস্তা?"
রেখা ভাবে  বাহ দারুন তো এরাই তো উপন্যাসের চরিত্র হয়ে উঠতে পারে। বাহ বাহ 'কি কথা বলছে দেখি ।
অন্য একজন বয়স্ক ভদ্রমহিলা বললেন এটাতো ঠিক , বাচ্চা আছে উনাকে তো আগে একটু জায়গাটা দিতে পারতেন?'
বসে থাকা ভদ্রমহিলা বললেন একে রামে রক্ষা নেই সুগ্রীব দোসর।বাচ্চা থাকলে সাতখুন মাপ বলুন?আমাদেরও তো কোনো সমস্যা থাকতে পারে?'
বয়স্ক ভদ্রমহিলা বললেন' না, সে তো থাকতেই পারে । তবে..


দাঁড়িয়ে থাকা ভদ্রমহিলা বললেন ঠিক আছে, আপনি একটু বসুন, তারপর নয় আবার আমাকে দেবেন, এই ভাবেই যাবো এত দূরের রাস্তা।'
বসে থাকা ভদ্রমহিলা বিড়বিড় করে বললেন পথে এসো বাবা। তারপর বললেন 'ভাবছি কি করব ?এখন আপনি দাঁড়ান।'
রেখা সব কথা শোনার পর বলল' ও দিদি, আপনি এদিকে আসুন  আপনি আমার জায়গাটায় বসবেন ,আসুন।'
ভদ্রমহিলা বললেন আপনার
 জায়গায় ?আপনি কোথায় যাবেন?'
রেখা বলল' আমি কল্যাণীতে নেমে যাব।'
বাচ্চা কোলে ভদ্র মহিলা বললেন' সব ই তো চাকদহ। আপনি একটু বসুন ।আমি কল্যাণী এলেই  বসব।'
রেখা মনে মনে ভাবল এই ভদ্রমহিলার তো দেখি নীতিজ্ঞান ঠিক আছে । খারাপ নয়।
তারপর বললো 'আপনি বসুন না, বাচ্চা কোলে নিয়ে আছেন।'
 বাচ্চা কোলে ভদ্রমহিলা বললেন ,'না আপনিও তো কোথাও না কোথাও যাচ্ছেন জার্নি করেই। আমার খারাপ লাগবে।
রেখা বলল' ঠিক আছে।'তাহলে আপনার বেবিটিকে আমার কাছে দিন।'
ভদ্রমহিলা একগাল হেসে অত্যন্ত প্রসন্ন হয়ে বললেন ঠিক আছে দিদি একটু ধরুন তাহলে খুব ভালো হয়।
এবার হাত বাড়িয়ে বাচ্চাটাকে রেখার কোলে দিতে গেল কিন্তু বাচ্চা আসবে কেন ?এই বাচ্চা তো মনে হচ্ছে বেছে বেছে কোলে চাপে।
রেখাও খুব আদরের সঙ্গে বলল-এসো বাবা ,এসো,  আমার কোলে এসো সোনা বাচ্চা।'
ভদ্রমহিলা শেষ পর্যন্ত বাচ্চাটিকে রেখার  কোলে দিতে পারলেন।
বাচ্চাটা কোলে এসে রেখাকে দুচোখ ভরে দেখতে লাগলো। তারপর খিলখিল করে হেসে উঠলো। কি অপূর্ব হাসি ।রেখার মন প্রাণ জুড়িয়ে গেল।
রেখা বাচ্চাটাকে কোলে নিয়ে ওর সাথে খুনসুটি  শুরু করে দিলো ।বাচ্চাটিও ঠিক রেখার মতো সঙ্গে সেট হয়ে
 গেল ।ভদ্রমহিলা দেখে খুব খুশি হলেন বললেন আমার ছেলের না সবার কাছে যেতে চায় না ।কিন্তু দেখুন আপনার কোলে কি সুন্দর রয়েছে।
রেখা বল হ্যাঁ এক নিমিষেই চিনে গেল কেমন।'
ভদ্রমহিলা বললেন' আসলে শিশু তো ওরা মানুষ চেনে। আপনার মনটা খুব ভালো।'
রেখা শুধু হাসল আর বাচ্চাটাকে গাল ধরে আদর করতে লাগল।
আর যে ভদ্রমহিলা ঝগড়া করছিলেন তার অবস্থাটা দেখার জন্য রেখা মুখটা ঘোরাল, দেখল নাক ডেকে অত ভিড়ের মধ্যে ঘুম দিচ্ছেন।
এরমধ্যে রেখার ফোন বেজে উঠলো। রেখা একটু  বিরক্ত হলো। এখন ব্যাগ খুলে হাতরে হাতরে তার থেকে ফোন বের করে রিসিভ করতে হবে ভেবে।এদিকে বাচ্চাটিও কোলে আছে।
ফোন বেজে কেটে গেল আবার ফোন বাজতে শুরু করলো ।এবার চেষ্টা করল ফোনটা বের করার ।মনে হচ্ছে যেন কোন আর্জেন্ট কল। বাচ্চাটাকে খুব সাবধানে সাইড করে নিয়ে ,ব্যাগটাকে কায়দা করে বের করল ।তারপর তার ভেতর থেকে হাতরে হাতরে ফোনটা বের করল। ফোন ধরতে ধরতে কেটে গেল। রেখা ফোনটা বের করে দেখলো কে ফোন করেছে।
অবাক হয়ে দেখল যে বড়দি ফোন করেছেন। রেখা ভাবছে এই সময় বড়দি কি কারনে? সাত-পাঁচ ভেবে ফোনটা ঘুরিয়ে করল। 
রিং হতেই বড়দি ফোনটা রিসিভ করে বললেন' রেখা তুমি কি বাড়ি পৌছে গেছো?_
রেখা বলল  'না ,দিদি। একটু দেরি হবে।'
বড়দি বললেন"তোমাকে কি ডিস্টার্ব করছি?'
রেখা অত্যন্ত আনুগত্যের সঙ্গে বললো 'এভাবে কেন বলছেন দিদি?'
বড়দি বললেন 'রেখা নেতাজী সুভাষ চন্দ্রের 125 তম জন্মবার্ষিকী আমি চাই তুমি প্রোগ্রামটা অ্যারেঞ্জ করে সঞ্চালনা কর।'
রেখা বললো' কিন্তু দিদি,?
বড়দি বললেন  'আবার কি হলো?'
রেখা বলল 'দিদি ফেয়ারওয়েলএর অনুষ্ঠান ঘিরে বিতর্ক এবং  কেওয়াস সৃষ্টি করা হয়েছিল। তারপরে আর এর মধ্যে থাকতে ইচ্ছে করছে না।'
বড়দি বললেন' আমি সব জানি ,বুঝি।'
রেখা বলল' এর পরে কি করা ঠিক হবে দিদি?'
বড়দি বললেন 'তুমি হালটা ধরো। এরপর যদি অন্যরা কেউ কিছু বলে সেটা আমি দেখব।'
রেখা বলল ', আপনি অনিন্দিতাকে দিয়ে দিন না?'
বড়দি বললেন 'তুমি খেপেছো রেখা। 'বদনাম করে ছেড়ে দেবে স্কুলের।'
এরমধ্যে ওই ভদ্রমহিলা বলে উঠলেন 'ও দিদি বাচ্চা আমাকে দিন। আপনি কথা বলুন।'
রেখা ভদ্রমহিলার দিকে তাকিয়ে ইশারায় বোঝাতে চাইলেন কোনো অসুবিধা হচ্ছে না।
অন্যদিকে ট্রেন মদনপুরে আসতেই যাত্রীরাএতো হইচই বাধিয়ে দিল ,বড়দির কথাগুলো শোনা যাচ্ছে না।
রেখা বলল' দিদি আমি বাড়িতে গিয়ে আপনার সঙ্গে কথা বলব।'
বড়দি বললেন ঠিক আছে। ঠিক আছে।
রেখা ফোনটাকে এক হাতে ধরে এবার ভদ্রমহিলার দিকে তাকিয়ে বললেন' দিদি আপনি আস্তে আস্তে এদিকে চলে আসুন ।আমিতো নামবো ।আপনি আমার এই জায়গাটা বসুন ,আসুন।
ভদ্রমহিলা একগাল হেসে বললেন' হ্যাঁ এই তো যাচ্ছি।'
তারপর ভদ্রমহিলা বললেন ', কি উপকার যে করলেন আপনি?'
রেখা বলল 'না ,নাকি এমন করেছি ।কেউ না কেউ তো এই জায়গাটা বস্তুই সেখানে আপনি না হয় বসবেন।
ভদ্র মহিলা বললেন সব ঠিক আছে কিন্তু আপনি এতো সুন্দর করে বললেন আপনার ব্যবহারটা আমার খুব খুব ভালো লেগেছে আর আমার বাচ্চাকে এতক্ষণ কোলে করে রাখলেন।'
রেখা বলল বাচ্চারা তো ভগবানের রূপ ওরা কত সুন্দর একটু না হয় কোলেই নিলাম।
ভদ্রমহিলা রেখার সামনে এসে দাঁড়াতেই বললেন  আপনি বসে ওকে কোলে নিন।
ভদ্রমহিলা বললেন হ্যাঁ হ্যাঁ ।তারপর জায়গাটায় কোনরকমে বসলেন ,বসে বাচ্চাটিকে, কোলেনিলেন। আসলে একটু হেলদি তো।
মায়ের কোলে যেতেই বাচ্চাটি চোখ মেলে তাকাল এতক্ষন ঘুমিয়ে পড়েছিল তারপর আর একবার কাউকে যেন খোঁজার চেষ্টা করলো বাচ্চার মা বুঝতে পেরে বলল দিদি ও দিদি দেখুন আমার বাচ্চা আপনাকে খুঁজছে কেমন?
রেখা বললো ভালো থেকো সোনা ।টা টা।
ভদ্রমহিলা বললেন ভালো মানুষ বাচ্চারাও বোঝে।
রেখা হেসে ব্যাগগুলো নিয়ে গেটের কাছে চলে গেল আর বলল সাবধানে যাবেন আপনারা।
ভদ্রমহিলা বললেন হ্যাঁ দিদি আপনিও আবার যদি কখনো দেখা হয় কথা হবে।
রেখা শুধু হাসল।
ট্রেন থামতে রেখা নেমে পড়ল তারপর জানলা দিয়ে উঁকি দিয়ে ভদ্রমহিলার তার বাচ্চার উদ্দেশ্যে হাত নাড়লো।
ভদ্রমহিলা ভাবনার নেম ট্রেন ছেড়ে দিল রেখা বাচ্চাটাকে কোলে নিয়ে তাকে স্পর্শ করে যে সুখানুভুতি তার অনুরণনে জেগে উঠেছিল তা কিছুতেই ভুলতে পারছে না ।আজ রেখার একটি সন্তান থাকতে পারতো  হৃদয় কাঁদে একটি সন্তানের জন্য ।কখনো দুই হাতে ছোট ছোট আঙ্গুলের স্পর্শ করে আমাকে আদর করবে আধো আধো কথা বলবে এই অনুভূতিগুলো স্বর্গীয় অনুভূতি রেখার জীবনে সেটা কোনদিনও পূর্ণতা পাবে না ,ভাবতেই রেখার দুচোখ জলে ভরে উঠলো।
অথচ রেখা মনোজের দাম্পত্য জীবনে হঠাৎই কেন এরকম ছন্দপতনের মতো ঘটনা ঘটতে চলেছে। মনে হচ্ছে যেন তাদের সম্পর্কের ভেতরে একটা মরচে ধরেছে কিন্তু রেখা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে সম্পর্কটাকে ধুয়ে-মুছে ঝকঝকে করে নিতে কোনো অবস্থাতেই যাতে ভেঙে না যায়। তাই মাঝে মাঝে ভাবে একটু চেষ্টা করলে কি তাদের দাম্পত্য জীবন টা মধুর হতো না ?আসতো কিনা  একটি টুকটুকে, ফুটফুটে ছোট্ট অতিথিরহাতছানি? ভরে যেত কিনা অপূর্ব স্বর্গীয় সুখানুভূতিতে? চলে যেত কিনা তাদের দাম্পত্যের  টানাপোড়েন? এই ভাবনাগুলো ভাবতে ভাবতেই হাঁটতে থাকে অটো স্ট্যান্ডের দিকে।

কবি শিবনাথ মণ্ডল এর কবিতা




দৃষ্টি হীনকে দৃষ্টি দাও

 শিবনাথ মণ্ডল


যারা জন্মগত অন্ধ তারা
দেখেনি সুসজ্জিত পৃথিবী
তাদের মনে ফুটে ওঠে
কত জলছবি।
চোখের সামনে থাকতেও
সবিই  অদৃশ‍্য
জন্মে দেখতে পেলোনা চোখে
এত সুন্দর বিশ্ব।
যাদের দৃষ্টিআছে জানেনা তারা
দৃষ্টি হীনের ব‍্যাথা
অসহায় মানুষদেরজন‍্য দেহদান করার
সবাই দাও কথা।
যারা দেখতে পায়না চোখে
অসুস্থতায় অন্ধ
অনুভব করে শুধু
পায় নানা গন্ধ।
এত ব‍্যাথা বুকে নিয়ে
বেঁচেআছে যাদের প্রাণ
তাদেরজন‍্য কেন পারিনা দিয়েযেতে
মরণের পরে দেহ দান।
মৃত দেহখানি নষ্টকরার আগে
সমাজকে করেগেলে দান
গোটা বিশ্বটা এক দিন
হয়েযাবে সর্গের সমান।।