উপন্যাস
টানাপোড়েন ১১১
স্বস্তি
মমতা রায়চৌধুরী
নিম্নচাপের জন্য শুরু হয়েছে বৃষ্টির ঘনঘটা রেখা খেয়াল করলো মনের ঘরের জানালা গুলো যেন সব আর্তনাদ করতে শুরু করেছে বেশ জোরেই হাওয়াটা দিচ্ছে ।দেয়াল থেকে ক্যালেন্ডার খুলে পড়ল ,ঘরের বই খাতাগুলো নেচে উঠল মুহূর্তের মধ্যেই কেমন গুড় গুড় করে মেঘ ডেকে উঠল। সামনের কৃষ্ণচূড়া গা ছের মাথাটা যেন পাখির মতো নাচচ্ছে ,এপাশ থেকে ওপাশে। রেখা জানলাগুলো এক এক করে বন্ধ করতে গেছে। নারকেল গাছ গুলো জিমনাস্টিক দেখিয়ে চলেছে।
রেখা নিজের ঘরের জানলা বন্ধ করে মনোজের ঘরের দিকে উঁকি দিলো এবং দেখতে চেষ্টা করলো জানলাগুলো বন্ধ করেছে কিনা? রেখা আপনমনেই বিড়বিড় করে বলতে লাগল কী আশ্চর্য এখনো জানলা বন্ধ করেনি।মনোজ কিন্তু কোনো উত্তর করল না। এর মধ্যেই লোডশেডিং। রেখা ঘরের মধ্যে ঢুকে যেন নাকানি-চুবানি খেতে শুরু করল বাধ্য হয়ে বলল' কিগো শুনতে পাচ্ছ না?'
মনোজ বলল-কি বলছ?
রেখা বলল 'ও বাবা তুমি কোন গ্রহে গেছিলে গো ?এতগুলো কথা বললাম কিছু শুনতে পাওনি?
এদিকে দেখ হাওয়া দিচ্ছে জানলাগুলো এত জোরে আওয়াজ হচ্ছে।
আর মন্টু ডাক্তার কে ফোন করেছিলে?
মনোজ বলল 'হ্যাঁ করেছিলাম ।উনি এক জায়গায় আছেন বলে একটা সিরিয়াস কেস আছে ।একটা কুকুরের নাকি সিজার হবে সেজন্য একটু পরে ফোন করতে বললেন।
রেখা বলল ও আচ্ছা বাপরে বাপ । এ তো সাংঘাতিক অবস্থায় আছেন উনি কথা বলছে মুখে আর দরজা-জানালাগুলো লাগাচ্ছে।
খুব চিন্তার ব্যাপার হলো গো খাওয়া দাওয়া বন্ধ করে দিলেও বাচ্চাগুলো।
মনোজ বলল কিছু খাচ্ছে না?
রেখা বললো হ্যাঁ গো ,কিছু খাচ্ছে না। খাবার দেখলেই মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে।
মনোজ বলল শোনো ওদের আর দুধ রুটি দিও না এখন।
রেখা চিন্তিত মুখে বলল' কেন?'
মনোজ বলল অ্যাসিড ফ্রম করে যেতে পারে।
রেখা বলল' ও আচ্ছা তাহলে কি খেতে দেবো?'
মনোজ বলল-'ভাল বিস্কিট দাও ,দেখো খায় কিনা আর না হলে ভাত দিতে হবে।
শোনো না পারলে একটু দৈ ভাত দিয়ে দেখতে পারো।
রেখা বললো ঠিক আছে তাই দেব তাহলে ওই গদাই দা কে বলে দিতে হবে দই এর কথা।
মনোজ বলেছি আমি এক্ষুনি ফোন করে বলে দিচ্ছি ফোন নম্বরটা রয়েছে তো?
সঙ্গে সঙ্গে মনোজ ফোন মে লায়লা নম্বরে রিং হল ধরল না একটু দাঁড়িয়ে থাকলো কি বললে এদিকে বৃষ্টি পড়ছে প্রাকৃতিক অবস্থাটা দেখো।
রেখা বলল 'তা অবশ্য ঠিকই বলেছ। যাচ্ছেতাই শুরু হয়েছে ।আজকে মাসি তো বিকেলে কাজে আসেনি। মনোজ বলে ডাকো বলতে ভুলে গেছি মাসি কিন্তু খবর পাঠিয়ে ছিল আমার মনে ছিল না জানোতো এতে মাসির কোন দোষ নেই।
লেখাগুলো হ্যাঁ এই মাসে আবার না আসলে আগে থেকে বলে দেয় এটা ভালো দিক।
এ বাবা তাহলে তো দুপুরের বাসন টাসন গুলো জমে আছে কালকে আবার আসবে তো কিছু বলেছে তোমায়? রেখা চিন্তিত হয়ে বলল।
মনোজ বলল না সেরকম তো কিছু বলেনি যে কালকে আসবে না তাহলে নিশ্চয়ই আসবে দেখো।
রেখা বললো তাহলে বাসনগুলো আর মারছি না রেখে দিচ্ছি যেটুকু নয় সেই কটা বাসন মেজে নিচ্ছি।
মনোজ বলল যেটা ভালো বুঝো সেটাই কর।
আবাররেখা রান্নাঘরের দিকে গেল কত কাজ পড়ে রয়েছে স্কুল থেকে প্রোগ্রাম শেষ করে বাড়িতে এসে একমুহুর্ত বসার টাইম পায় নি।
মনোজ ঘর থেকেই চিৎকার করে বলল রেখা রেখা রেখা আ,. আ. আ।
রেখা রান্নাঘর থেকে একটু বিরক্তির স্বরে বলল আবার কি হলো চিৎকার করছো কেন?
মনোজ বলল মাথাটা ছাড়ছে না একটু চা হবে গো?
রেখা বলল হ্যাঁ হবে একটু ওয়েট করো।
মনোজ বলে ঠিক আছে।
কয়েকটি গ্লাস, বাটি, ডিস মেজে নিল। তারপর গ্যাসের চুলায় চায়ের জল বসিয়ে দিল।
বাবা ,কি ঠান্ডা লাগছে । জলটা যেন বরফ হয়ে আছে?
এরমধ্যে রেখার ফোন বেজে উঠলো।
রেখা রান্নাঘর থেকে আওয়াজটা পেল কিন্তু ফোন ধরার সময় কোথায় এখন।
মনোজ ঘর থেকে চেঁচিয়ে বলল রেখা তোমার ফোন বাজছে।
রেখা বলল' বাজুক, যার দরকার
তিনি আর একবার ফোন করবেন।
আবার ফোন বাজলো 'তুমি রবে নীরবে হৃদয়ে মম…
রেখা আটা মাখছিল, কি করবে আটা মাখা হাত নেই এসে ফোন ধরতে হলো। ফোনটা রিসিভ করে বলল হ্যালো'কি ম্যাডাম খুব ব্যস্ত?'
রেখা বলল' ও আপনি? আর বলবেন না ,তা একটু ব্যস্ত বটে।'
অপরপক্ষ বললেন এপিসোড টা রেডি হয়েছে?
রেখা বেমালুম ভুলে গেছিল আজকে বাচ্চাগুলোকে নিয়ে যা ব্যস্ত তার মধ্যে কেটেছে হাফ লিখে রেখে দিয়েছে, শেষ তো করতেই হবে?
আবার বললেন 'কি ম্যাম, রেডি হয়েছে তো?'
রেখা একেবারে না বলল না বলল হ্যাঁ হয়ে যাবে।
সম্পাদক একটা বড় নিঃশ্বাস ছাড়লেন সেটা স্পষ্ট ফোনেতে বোঝা গেল তারপর বললেন ওহ বাঁচালেন যে টেনশনে থাকি?
রেখা বললো কেন কেন টেনশন কেন?
সম্পাদক বললেন বাজি আছে যে ম্যাম।
সে আপনি বুঝবেন না পরে বলবো আপনি শুধু লিখে যান।
রেখা বললেন হ্যাঁ সে তো চেষ্টা করবোই।
সম্পাদক বলেন কোনো অবস্থাতেই লেখা থামাবেন না মনে রাখবেন এটা কিন্তু ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হচ্ছে।
রেখা বলল মাথায় থাকবে। আর ভুলে গেলে তো আপনি মনে করিয়ে দেবার জন্য আছেন জোরে হেসে উঠলো।
সম্পাদক বলেন প্রান খুলে হাসুন , আর লিখুন প্রান খুলে ।
রেখা বলে অসংখ্য ধন্যবাদ দাদা এভাবে উৎসাহিত করার জন্য।
সম্পাদক বললেন ঠিক আছে রাখছি তাহলে।
রেখা বললো 'হ্যাঁ ,রাখুন।'
ফোনটা রাখতে রাখতেই মনোযোগ ঘর থেকে চেঁচিয়ে উঠলো রেখা রেখা. আ. আ আ।
দেখা হন্তদন্ত হয়ে ছুটল মনোজের ঘরে ।কি হয়েছে ?কি হয়েছে?'
মনোজ তখন কাউকে একটা ফোন করছে ,'হ্যাঁ বলুন?'
রেখা হাঁপাতে হাঁপাতে এসে হাতের ইশারায় মনোজকে দেখালো কি হয়েছে?
মনোজ বলল ইশারায় ডাক্তার বাবু কে ফোন করেছে। কিছু জিজ্ঞেস করলে তু,মি বলতে পারবে তাই ডাকলাম।
রেখা একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছাড়লো।
ওদিকে মনো জ কথা বলছে, ডাক্তারবাবু বলছেন যে ওষুধগুলো বললাম সেই ওষুধগুলো আনিয়ে নিন।
মনোজ বলল 'ঠিক আছে, ডাক্তার বাবু।
ডাক্তারবাবু বললেন 'কি কি সিমটম দেখতে পাচ্ছেন ।যে গুলো বললেন তার বাইরে আর কিছু কি দেখা যাচ্ছে?'
মনোজ!কথাগুলো শুনে রেখার দিকে' হাতের ইশারায় জানতে চাইল।স্পিকারে কথা হচ্ছে তখন।
রেখা বলল' হ্যাঁ চোখে পিচুটি ও দেখা যাচ্ছে মানে ঠান্ডা লেগেছে আর বমি করেছে।
মনোজ রেখার কথাগুলো ই রিপিট করছিল।
ওদিক থেকে ডাক্তারবাবু জিজ্ঞেস করছেন 'জ্বর এসেছে কি?'
রেখা আবার মনোজকে বলে দিলো না আজ সেরকম ভাবে জ্বর-টর বোঝা যাচ্ছেনা।
মনোজ বলল ডাক্তার বাবু আপনি নাম গুলো বলুন আমি লিখে নিচ্ছি।
মনোজ হাতের ইশারায় রেখাকে একটা প্যাড আর পেন দিতে বলল।
রেখা হাতরে হাতরে কোনরকমে একটা প্যাড নয়,একটা সাদা পাতা জোগাড় করল আর একটা পেন এনে মনোজকে দিল।
মনোজ বলল' হ্যাঁ ,ডাক্তারবাবু ,বলুন। '
ডাক্তারবাবু বললেন-
1Rantac(R) syrup75mg,5ml
2taxim-o(dry syrup)
মনোজ বললো 'কিভাবে খাওয়াবো?'
ডাক্তারবাবু বললেন ' rantac খাওয়াবেন 5ml করে দিনে দুইবার খাবার আগে।
আর taxim-o খাবেন 2ml করে দিনে দুইবার খাবার আগে।'
মনো জ বলল 'এতে সেরে যাবে ডাক্তার বাবু।'
ডাক্তারবাবু বললেন এ'টাই তো ছেড়ে যাওয়া উচিত দেখা যাক। ডাক্তারবাবু আরো বললেন
এদেরকে কি অন্য কুকুরের সঙ্গে মেলামেশা করতে দেন?
মনোজ বলল না না একদমই নয় শুধুমাত্র রাত্রিবেলা একটু রাস্তা ফাঁকা হলে ওদেরকে একটু খেলানো হয়।
ডাক্তারবাবু বললেন এখন তো একটা ভাইরাস এসেছে এইজন্য একটু চিন্তার বিষয় ঠিক আছে দেখুন খাইয়ে।
মনোজ বলল অসংখ্য ধন্যবাদ ডাক্তারবাবু।
ডাক্তারবাবু বললেন আপনারা যেভাবে রাস্তার কুকুরগুলো কে এত যত্ন করছেন সবাই যদি এরকম করত তাহলে পৃথিবীটা অন্যরকম হতো।
মনে যে বলল আমার স্ত্রী এ ব্যাপারে অগ্রণী ভূমিকায় ।বাচ্চাগুলোর শরীর খারাপ বলে মনে হচ্ছে যেন ওর কিছু একটা না হয়ে যায়।
ডাক্তারবাবু বললেন 'আপনার স্ত্রী তো মানবিকতার অধিকারী ।ওনাকে স্যালুট জানাই।
মনোজ বলল 'একদিন আসবেন ডাক্তারবাবু আমাদের বাড়িতে ।আমাদের বাচ্চাগুলোকে একটু দেখে যাবেন।'‽
ডাক্তারবাবু বললেন 'এর আগে তো ভ্যাকসিন দিতে গেছিলাম বাচ্চাগুলোর মাকে। যদি ও আপনার বাড়িতে যাওয়া হয়ে ওঠেনি।'
মনোজ বলl'ওই জন্যই তো বললাম আসবেন।'
ডাক্তারবাবু বললেন হ্যাঁ মাথায় থাকলো ।ঠিক আছে রাখছি।'
মনোজ বললো 'ওকে ওকে।'
রেখাও একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল। আর বলল এত তাড়াতাড়ি ওষুধগুলো আনার ব্যবস্থা করো।
মনোজ বলল দাঁড়াও এক্ষুনি বেরোচ্ছি কিন্তু দেখো বৃষ্টিটা সময় হয়ে যাচ্ছে।
রেখা বলল এরপরে কিন্তু দোকান বন্ধ হয়ে যাবে তুমি ছাতা নিয়ে বের হলেই ঘর থেকে রান্নাঘরের দিকে গেল।
রান্নাঘর থেকে আরেকবার বল কটা রুটি খাবে রাত্রে।
মনোজ ছাতা খুঁজতে খুঁজতে বলল এখানেই তো রেখেছিলাম ছাতাটা দেখেছো কাজের সময় আর খুঁজে পাই না কি বলছিলে দুটো করো।দুটো।
রেখা বললো ঠিক আছে আরে এই তো ছাতা তুমি ছাতা খুঁজছো চোখ কপালে তুলে রাখ কে জানে বাবা?
মনোজ বলল 'আরে বাবা ,দেখতে পেলে কি আর বলতাম। মনোজ বেরোতে যাবে এমন সময় আবার ফোন।'
বিরক্তির স্বরে বলল মনোজ' এখন বেরোবো, এই সময় ফোন?'
দেখি কে করল?
ফোনটা খুলেই দেখল মায়ের ফোন?
রেখা রান্নাঘর থেকে বলল কে ফোন করেছে?
মনোজ বলল'' মা। রেখা আর কোন কথা বাড়ালো না।
মনোজ ফোনটা না ধরেও পারল না । বলল 'হ্যালো'।
অপরপ্রান্ত থেকে বলল কিরে বাবা কখন থেকে ফোন করছি ধরছিস না?
মনোজ বলল ,'শুনতে পাইনি মা।'
অপরপক্ষ বলল নাকি ফোন ধরলেই..
মনোজ বলল 'কি বলতে চাইছ বলো?'
অপরপক্ষ বলল 'তাহলে কি সিদ্ধান্ত নিলি।'
মনোজ বলল তুমি আসবে তাতে আবার বলাবলির কি আছে?'
মনোজের মা বলল 'নিশ্চিন্ত করলি বাবা। ভীষণ অসুস্থ ছিলাম একটু স্বস্তি ফিরে পেলাম।