২৬ মে ২০২২

কবি আলমগীর হোসাইন এর কবিতা "কান পেতে শুনি"




কান পেতে শুনি
আলমগীর হোসাইন 



মাঝ রাতে রিং টোনের শব্দে
ঘুম ভেঙ্গে গেলো মোর প্রিয়ার
ফোন ধরে কথা বললে না
ক্লান্ত দেহ মন অচল অসার।

উওপ্ত নিঃশ্বাস প্রকম্পিত শব্দ প্রবাহ, 
ধাবন প্রতিয়মান তরঙ্গে
সময় বলে গেলো জীবন বড়ো অসহায়
মুল্যহীন, তুমি বিহনে।

দুর থেকে ভেসে এলো নিঃসঙ্গ কাতর কন্ঠের 
করুন না বলা কথার প্রতিধ্বনি
দুঃসময় মধুর স্বপ্ন জলাঞ্জলী দিয়ে
নিশ্চুপ কান পেতে শুনি।

কবি শাহজাদা রিদওয়ান এর কবিতা অপ্রত্যাশিত বইয়ের পৃষ্ঠা "





অপ্রত্যাশিত বইয়ের পৃষ্ঠা 
শাহজাদা রিদওয়ান 



ছায়া পথের খুব গভীরে আমার অস্তিত্বকে রেখেছিলাম কিছু সময়ের জন্যে, 
তাও আবার সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে,
কিছু দেখার জন্য -জানার জন্য!
চারদিকে নিরব নিস্তব্ধতা থাকবে
এটা আমার আশা নয় ছিল বিশ্বাস, 
সেখানে ঝড় দেখিনি তবে হৃদয়ে ঝড় বইতে দেখেছি।

ছায়া পথের গভীরে গিয়ে প্রথমেই 
গভীরতা নামক বইয়ের পৃষ্ঠা উল্টাতে থাকলাম,
আমি আঁতকে উঠলাম কয়েক পৃষ্ঠার পর একটা লাইন পড়ে,
ঠিক তখনই বিশ্বাস ভঙ্গ নামক ঢেউ কাঁপিয়ে দিল পুরো ছায়াপথকে,
আমার বিশ্বাসের অস্তিত্বও কেঁপে উঠল,
শতবার চেষ্টা করেও থামাতে পারিনি।

গোপনে থাকা গভীরতা নামক বইটি দ্বিতীয় বার আর স্পর্শও করিনি,
চাই না আর ছায়া পথের নীরবতা,
গোপনেই থাক না অপ্রত্যাশিত বইয়ের পাতা।

মমতা রায় চৌধুরীর ধারাবাহিক উপন্যাস পর্ব ১৭২





উপন্যাস 




টানাপোড়েন   ১৭২

বিরক্তি ভরা মুহুর্ত

মমতা রায় চৌধুরী



নববর্ষের সকালটা বেশ ফুরফুরে মেজাজে কেটেছে রেখার কিন্তু বাড়িতে এসে পড়েছে আসন্ন সংকটে বোর্ডের খাতা চোখে সর্ষেফুল দেখছে। আকাশকুসুম ভাবছে। কদিনের মধ্যে কি করে খাতা দেখে ফাস্ট লট জমা দেবে। তারমধ্যে গোদের ওপর বিষফোঁড়া মতো রয়ে গেছে হাতের ব্যাথাটা ।দুটো খাতা দেখতে না দেখতেই যন্ত্রণায় কাতর হয়ে পড়ছে রেখা ,শুতে হচ্ছে । মহা বিপদে পড়েছে।
হাতের যন্ত্রনাকে উপেক্ষা করেই রেখা আজ সন্ধ্যে ছটা থেকে হঠাৎ রাত দশটা পর্যন্ত 15 থেকে কুড়িটা    খাতা দেখবে। যেমনি ভাবা অমনি কাজ
কিন্তু হলে কি হবে দুটো খাতা দেখতে না দেখতেই গেস্ট এসে হাজির। অ্যাটেন্ড করতেই হয়।
কলিংবেলের আওয়াজ শুনে বুঝতে পেরেছে অসময়ে কেউ এসেছেন, মানে অতিথি হবে।
গেট খুলে দেখে যা ভেবেছে নৈহাটি থেকে মামাশ্বশুরা এসেছেন।
রেখা গাল হেসে বিরক্তি কে চাপা দিয়ে বলল' "আসুন মামা আসুন।'
মেজ মামা বললেন 'মনোজ কোথায় ,দেখছি না তাকে?"
"আছে কোথাও কাছেপিঠে ।আপনারা আসবেন জানান নি তো । তাই তো বেরিয়েছে।"
মেজ মামা বললেন" হ্যাঁ, সেটা আমাদের করা উচিত ছিল কিন্তু আমরা করে উঠতে পারিনি।?'
"দিদি কোথায় ?'
'মা তো দিদির বাড়িতে গেছে?'
"সেকি!আমাকে জানায়নি তো?'মেজ মামা বললেন অবাক হয়ে।
রেখা বলল "হঠাৎ করে বোধহয় প্ল্যান হয়েছে।"
"এমনিতে তো কি খায় না খায় ,পাই টু পাই হিসেব দেয় আর চলে গেল সেই খবরটা দিতে পারল না।
প্রতিদিনকার ছেলের সংসারিক এ কি হচ্ছে সব খবর না দিতে পারলে তো ওর পেটের ভাত হজম হয়না।"
রেখা বলল" আপনারা বসুন মামা আমি  চা করে আনছি।'
"তা বেশ ভালো। চা খাই। মনটা চা চা করছে।"
রেখা এই ফাঁকে মনোজ কে ফোন করে মামাদের আসার ব্যাপারটা জানিয়ে দিল। সঙ্গে কিছু মিষ্টি আর অন্যান্য খাবার নিয়ে আসতে বলল।
রান্নাঘরে চা চা করতে করতে হঠাৎ ফোন বেজে উঠলো"কোন সে আলোর স্বপ্ন নিয়ে যেন আমায় কে ডাকে আয় চলে আয়।"
রেখার এমনিতেই বিরক্ত লাগছে একটা খাতা ও ঠিক করে দেখে উঠতে পারল না এর মধ্যে গেস্ট আবার ফোন?'
ও ঘর  থেকে মামাশ্বশুর চিৎকার করে বললেন "রেখা তোমার ফোন বাজছে গো?"
রেখা বলল "হ্যাঁ শুনতে পেয়েছি মামা ,যাচ্ছি?"
রেখা গিয়ে দেখতে পেলে ওটা মনোজের ফোন তাই ফোনটাকে রান্নাঘরে নিয়ে আসলো।
"হ্যাঁ বলো, ফোন করলে কেন?"
"বলছি মামারা কি আজকে থাকবে?"
"কি আজব প্রশ্ন করো না তুমি মাঝে মাঝে, মাথা এমনিতেই গরম আছে জানো তো তার মধ্যে…?"
"আরে বাবা সেই জন্যই তো ফোনটা করছি তাহলে রাত্রে রান্নাবান্নার জন্য তো কিছু আনতে হবে।"
"আমি কি করে বলি বলো তো ?"
"যাও না কায়দা করে জানো।"
"ঠিক আছে তুমি জলখাবার নিয়ে এসো তারপর না হয় পরে বাজারে যাবে আবার।"
"আচ্ছা আচ্ছা ঠিক আছে। তাই হবে।"
রেখা চায়ের জল ফুটলে চা পাতা দিয়ে দিল। এক মামাশ্বশুর ঘন দুধের চা আর এক মামাশ্বশুর লিকার।
একজন চিনি ছাড়া আরেকজন চিনি দিয়ে।
চা নিয়ে গিয়ে রেখা হাজির হল।
চায়ের কাপ মামাদের কাছে বাড়িয়ে দিতেই বাইরের কলিংবেল বেজে উঠলো।
"ওম জয় লক্ষী মাতা..।"
 মামাশ্বশুর বললেন "বাহ মনে আছে তোমার, কে কি ধরনের চা খায়?"
ছোট মামা শ্বশুর বলে ন 'মনে থাকবে না ও একজন শিক্ষিকা ।সব মনে থাকে।"
"আবার কলিংবেলের আওয়াজ 'ওম জয় লক্ষী মাতা…।"
মামাশ্বশুরের বলেন" দেখো কেউ এসেছে বোধহয়?'
মেজ মামা শ্বশুর বললেন" বিস্কিট তুলে নাও।"
ছোট মামা শশুর বললেন 'আমাকে দাও।"
মেজো মামার শশুর বলেন আরে প্লেটে রয়েছে নিয়ে নে না ।ঐদিকে কলিং বেল বাজছে ওখানে গিয়ে দরজাটা খুলবে তো নাকি?
ছোট মামা শ্বশুর বললেন 'হ্যাঁ তাই তো ।তুমি যাও রেখা।"
দরজা খুলে দেখতে পেল মনোজ দুই হাতে দুটো প্যাকেট নিয়ে দাঁড়িয়ে।
মনোজ ইশারা করলো" বুঝতে পারলে ?কিছু জানতে পারলে?"
রেখা দরজা বন্ধ করতে করতে বলল''না ,আমি
কিছু জিজ্ঞেস করিনি।'
প্যাকেট দুটো রেখার  হাতে দিয়ে মনোজ। ঢুকলো মামাদের ঘরে।
মামাদের গিয়ে প্রণাম করলো  তারপর জিজ্ঞেস করল 'কেমন আছো,?'
মামারা বললেন 'আমরা ভালোই আছি। তুই কেমন আছিস?'
মনোজ বলল'এই চলে যাচ্ছে নানা রকম ভাবে।'
এরমধ্যে রেখা প্লেট বোঝাই করে কেশরী ভোগ সন্দেশ ,ফিশ ফ্রাই আর লর্ড চমচম নিয়ে এসে হাজির।
মামাদের সামনে প্লেট ধরিয়ে দিতেই মামারা খুব খুশি হয়ে বললেন এত জিনিস এনেছ।
 ছোটমা বললেন "আমার সব খাবারগুলো প্রিয়।" মেজ মামা বললেন 'ভাগ্নের বাড়িতে আসলে এই উপরিপাওনা টা খুবই ভালো লাগে।"
এই সুযোগে মনোজ জিজ্ঞেস করল রাত্রিতে তোমরা কি খাবে বলো ?তাহলে সেই জিনিসই রান্না করাব।"
দুই মামা একে অপরের দিকে তাকিয়ে বলল "মানে?"
,মনোজ  বলল ' মানে তোমরা থাকবে না আজকে?'
মেজ মামা বললেন'  ক্ষেপে ছিস নাকি?'
ছোট মামা বললেন 'থাকতে খুব ইচ্ছে করছে রে ভাগনে কিন্তু থাকার উপায় নেই।"
রেখা যেন স্বস্থির নিঃশ্বাস ফেলল। এমনিতেই অসময়ে এসে যাওয়াতে খুব বিরক্ত লাগছে, যদিও অতিথি নারায়ন। নারায়ন হিসেবে সেবা করা উচিত। রেখা চেষ্টা করেছে যতদূর সম্ভব আপ্যায়ন করার।
অন্যদিকে মনে মনে চাইছিল আজকে যেন উনারা না থাকেন, রেখা জানেন কখনো এরকম বলা উচিত নয় বা ভাবাই উচিত নয়। কিন্তু কি করবে রেখা যে বিপদে পড়ে আছে। কটা দিন থাকা মানেই রেখার এখন বাড়তি চাপ। খাতাগুলো দেখার একটু ফুসরত পাবে না। এরকম ভাবনা চিন্তা করার জন্য ঈশ্বরের কাছে একটু ক্ষমা চেয়েও নিল। অন্যদিকে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করল যে উনারা যেন না থাকেন।
মেজ মামা শ্বশুর বললেন 'হ্যাঁ রে ভাগনে এইগুলো কোন দোকান থেকে আনলি তোদের সেই মোদক সুইটস।"

মনোজ বললে" একদমই তাই?'
ছোট মামা বললেন"দাদা, কেশরী ভোগটা খেয়ে দেখো ,অপূর্ব।,
মেজ মামা' কেশোরি ভোগ মুখে দিতে দিতে বললেন"হ্যাঁ তাই তো রে।'
মনোজ বলল ," মাঝে মাঝে তো আসতেও পারো তোমরা।"
"সময় কোথায় বল?"
"সময় করে নেবে নইলে আত্মীয়স্বজন কেউ কাউকে তো চিনতেই পারবে না।
ছোট মামা বললেন" তুই থাম তুই কবার যাস। তুই তো ভুলেই গেছিস?'
মেজ মামা বললেন," রেখাকে নিয়ে তো ঘুরে ও আসতে পারিস।"
মনোজ বলে" আমাদের ও তো একই হাল আমার অফিস ,ওর স্কুল।'
মেজো মা বললেন" হ্যাঁ রে দিদি হঠাৎ মেয়ের 
বাড়িতে গেল?'
মনোজ বলল 'এইরকমই মূড হলেই বেরিয়ে পরে।"
ছোট মামা বললেন' দিদি চিরকালই এরকম।'
রেখা মনে মনে ভাবলো যে মানুষটা নেই তাকে নিয়ে এত রকম কথা বলতে পারেন?'
মেজো মা বললেন ছোট ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখ,.
রেখা ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে সত্যিই সাড়ে আটটা বাজে। 
রেখা ঘড়ির দিকে তাকাতেই টাইম টা দেখে নিজের  নিজেই যেন চরম চরম করে বেত মারতে ইচ্ছে করছে।
মেজ মামা বললেন 'আর বসা যাবে না ।'

"ঠিক আছে 'ছোট মামা বললেন।
রেখা বলল আবার আসবেন আপনারা।
মামীদের কেও সঙ্গে নিয়ে আসবেন।
মেজ মামা বললেন আমরা তো এদিকে একটা কাজে এসেছিলাম তাই ভাবলাম যাই দেখা করে আসি।
রেখা হাসতে লাগল।
ছোট মামা বললেন আমরা অন্য দিন আসব তখন জমিয়ে আড্ডা দেবো, কব্জি ডুবিয়ে খাবো। বলেই হো হো করে হেসে উঠলেন।
মেজো মা বললেন "একদম ঠিক কথা বলেছিস। তখন দেখবি তোদেরই বিরক্ত লাগবে।'
রেখা গিয়ে দরজাটা খুলল।
সঙ্গে সঙ্গে মিলি আর ওর বাচ্চারা রেখা কে ঘিরে আনন্দ-উৎসবে মেতে উঠলো
মামারা বললেন রেখার বুঝি এগুলো পোষ্য।
মনোজ বলল  "পোষ্য ছিলো না এখন হয়েছে।'
"যাক ভগবান কল্যান করুক' মেজ মামা বললেন।
আসছি তোমরা এসো একদিন আজকের এই মুহূর্তটা খুব সুন্দর কাটলো সবাই ভালো থেকো।