১৩ ডিসেম্বর ২০২১

মমতা রায় চৌধুরী /৬৮





উপন্যাস 

টানাপোড়েন ৬৮
সামাজিক ব্যাধির বলি

মমতা রায় চৌধুরী



                       তকাল স্কুল থেকে ফিরে এতোটাই ট্রায়াড লাগছিল রেখার যে ভালো করে ভেন্দুদের বাড়ির খবরটা নিতে পারে নি, চৈতির মার কাছ থেকে। আসলে এতদিন পর স্কুল আর এত চাপ ছিল। আবার বাড়িতে এসে মনোজের দেখভাল, মিলি তার বাচ্চাদের দেখভাল ,সঙ্গে বাড়ির কাজ কম্ম ।কাজের মেয়েটা তো কাজে আসছে না। আজ ছুটির দিন তাই কাজ করতে করতেই মনে মনে ভাবছিল আমরা মেয়েরা কতটা স্বাধীনতা লাভ করেছি। সমাজ বদলায়। বিজ্ঞানের অভিষেক হয়। বিশ্বজুড়ে প্রতিষ্ঠিত হয় বিজ্ঞানের বিজয় অধিকার। মানুষ ছুটে চলে গ্রহ গ্রহান্তরে ।তবু প্রদীপের তলাতেই অন্ধকার ঘন হয়। অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে অনগ্রসরতার কালিমাও বেড়ে চলে ।সমাজে উপেক্ষিত হয় নারীর মর্যাদা। তাই একবিংশ শতাব্দিতেও নারীকে আগুনে পুড়িয়ে মারা হয় ।আজও লক্ষ লক্ষ নারীর স্বপ্ন অকালে শেষ হয়ে যায়। পুরুষ শাসিত সমাজের অবহেলায়, অবজ্ঞায় এখনো হাজার হাজার শিশু কন্যার জীবন অন্ধকারে ই। আজ ও নারী লাঞ্ছনার শেষ হয় না। হয়তো  মেয়েরা বহু ক্ষেত্রে অধিকার ছিনিয়ে নিচ্ছে।কিন্তু তারপরেও সমাজের কাছে অবস্থিত সমালোচনার সম্মুখীন হতে হয় ।কিছু ক্ষেত্রে কটাক্ষ বিড়ম্বনা। রাজা রামমোহন রায় ,ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের মতো মহান  মনীষীদের ‌দয়ায় আজ নারীরা সমাজে কিছুটা নিজের জায়গা করে নিতে পেরেছে ,শিক্ষার আলোতে আসতে পেরেছে। এটুকুই আশার কথা ।কিন্তু সামাজিক ব্যাধি এখনো নির্মূল হয় নি।
ভেন্দুর বউ কি তাহলে সেই ব্যাধির বলি হলো?
এসব ভাবতে ভাবতেই মিলিদের খাবারগুলো রেডি করে ওদের দিয়ে এসে মনোজকে ব্রেকফাস্টটা টেবিলে দিচ্ছে।
এরমধ্যে মনোজ ব্রেকফাস্ট টেবিলে এসে বসলো এবং বলল ' কি ব্যাপার? আজ কি বানিয়েছো?'
রেখা বলল 'বেশি কিছু বানাই নি ।আসলে একটু স্বাদটা চেঞ্জ করার জন্য মেথি মালাই আর রুটি করেছি।'
মনোজ বলল  'বাহ'
রেখা বলল 'দেখি আজকে তুমি কটা রুটি খাও?'
মনোজ বলল দেখবে আজকে আমি অনেক রুটি খাব?
রেখা হাসতে হাসতে বলল 'আমি তো জানি  মশাই তোমার দৌড়টা কত দূর?'
মনোজ বলল'রেখা তুমি কিন্তু আমাকে শরীর খারাপের পর থেকেই খাবার ব্যাপারে আন্ডারএস্টিমেট করছো? কিন্তু ভীষণ রেগে যাচ্ছি।
রেখা বলল বারে তো তুমি তো প্রমান করবে আমার ধারণাটাকে ভাঙার দায়িত্ব তোমারি ।'একটু মুচকি হেসে মনোজের দিকে তাকালো।
মনোজ বলল 'ঠিক আছে  আজ আমি প্রমাণ দেবো।'
রেখা বলল-'তোমার কিন্তু টাইম স্টার্ট হল।
এবার মনোজ হেসে ফেললো।
অ সময়ে পাশের বাড়ির চৈতির মা ডাকছে ' ও দিদি ,দিদি ,ও দিদি?'
রেখা জানলার নীল পর্দাটা সরিয়ে গলা বাড়িয়ে বলল 'কিছু বলছ?।'
চৈতির মা বললো ও দিদি সেই গত দিনের সেই কেসটা গো?
রেখা বলল ভে'ন্দুদের বাড়ির?'
চৈতির মা মাথা নেড়ে বলল 'হ্যাঁ দিদি।
রেখা বলল' পুলিশ এসেছিল?'
চৈতির মা বললো 'কি জানি ,কি হয়েছে ?তবে তো শোনা যাচ্ছে মেয়ের বাবা এসেছিল?'
রেখা বলল' ও মা তাই বুঝি ?তারপর কি হলো?'
চৈতির মা বলল 'কি আর হবে ?গরিব বাবা হলে যা হয়?'
রেখা বলল 'ওর  তো টাকার অঙ্কে  পেরে উঠবে না।'
চৈতির মা বললো 'ওরা তো সবকিছুকে টাকা খাইয়ে রেখেছে। থানা বল আর যাই বল?'
রেখা বললো 'সত্যিই একটা মেয়ে তার জীবন দিয়ে দিল?'
চৈতির মা বলল 'অথচ সমাজে তার মূল্য নেই।'
রেখা বলল' তবে এক্ষেত্রে মেয়ের বাবা যদি কেসটা করে ।তাহলে কিন্তু অনেক কিছু হতে পারে?'
চৈতির মা সংশয়ের সঙ্গে বলল' কেস অবধি যেতে পারবে ?'
রেখা বলল' সেটাই আসল কথা।'
চৈতির মা বলল' কেন বললাম বলুন তো?'
রেখা বলল 'কেন?'
চৈতির মা বলল' 'কেস ডিসমিস হয়ে গেছে।'
রেখা বলল 'কি বলছ?'
চৈতির মা বললো 'ঠিকই বলছি দিদি।'
রেখা বলল 'কিছু শুনতে পেয়েছো?'
চৈতির মা বলল'মেয়ের বাবা কে টাকা দিয়ে মুখ বন্ধ করা হয়েছে?'
রেখা আশ্চর্য  হয়ে বলল 'কী?'
চৈতির মা বলল মেয়ের বাবাকে বসানো হয়েছিল ওদের সাথে।'
রেখা বলল 'তাই নাকি?'
চৈতির মা বিষন্নভাবে বলল'তবে আর বলছি কি?'
রেখা বলল' কী হয়েছে সেটা বলো তো?'
চৈতির মা বলল'গরিব বাবা 100000 টাকা চেয়েছিল?'
রেখা বলল বা দারুন ইন্টারেস্টিং ব্যাপার তো?
চৈতির মা বলল 'শুনুন'।
রেখা বলল 'হ্যাঁ ‌তারপর?'
চৈতির মা বলল 'ছেলের বাড়ির পক্ষ থেকে 50 হাজার টাকা দেবে বলেছে।'
রেখা বললল 'মেয়ের বাবা ,রাজি হয়ে গেল?'
চৈতির মা বলল 'হবে না অভাবের সংসার?'
রেখা বলল মেয়ের  বোন আছে নাকি?
চৈতির মা বলল' হ্যাঁ, সে ও তো বিবাহযোগ্যা শুনেছি।'
রেখা বলল 'তাহলে তো কিছু করার নেই।'
চৈতির মা বললো' আমার ও  খুব ভয় হয় ,জানেন দিদি?'
রেখা বললো 'কেন তোমার আবার কি জন্য ভয়?'
চৈতির মা বলল' 'আমার মেয়েটাকে নিয়ে?''
এর মধ্যেই মনোজ আবার ডাকতে শুরু করল' রেখা রেখা, রেখা বলে।'
রেখা বলল 'যাচ্ছি একটু পরে।'
চৈতির মা বলল 'দাদা বোধহয় আপনাকে ডাকছে ?কিছু দরকার?'
রেখা বলল ' জানেন তো দিদি ভেবে অবাক লাগছে একটা মেয়ের প্রাণের মূল্য মাত্র 50000 টাকা?'
চৈতির মা বলল 'সেই থেকে তো আমিও দ্বন্দ্বে পড়ে আছি।'
রেখা বলল 'কন্যাসন্তান দরিদ্র পিতা মাতার কাছে এখনো বোঝা স্বরুপ গো?'
চৈতির মা বলল 'একদমই তাই?'
রেখা বলল'এজন্য শিশুকন্যাদের সামনে যথার্থ শিক্ষার ক্ষেত্র প্রস্তুত করা দরকার?'
চৈতির মা বলল 'সমস্যার সমাধানের কি এটাই রাস্তা?'
রেখা বলল অবশ্যই শিক্ষায় মনের অন্ধকার দূর করতে পারে ।পারে অন্ধ ধারণার অচলায়তন ভাঙতে?'
চৈতির মা বলল 'এই মেয়েটি তো বিএ পাশ ছিল গো?'
রেখা বলল 'বলতে চাইছো ,মেয়েটিতো শিক্ষা পেয়েছে তাই তো?'
চৈতির মা  মাথা নেড়ে সম্মতি জানালো 'হ্যাঁ।'
রেখা বলল 'শিক্ষা তো মেয়েটি কাজে লাগাতে পারলো না?'
চৈতির মা'বললে একদম ঠিক!'
রেখা বলল' মেয়েটির মরার কি দরকার ছিল? বাপের বাড়ি চলে যেতে পারত?'
চৈতির মা বলল' আদপে মেয়েটি মরেছে ,না ওকে মারা হয়েছে ।সেটাই তো রহস্যজনক।'
রেখা বলল অথচ জগতে বহু নারী প্রতিভার স্বাক্ষর রেখে গেছে না।'
চৈতির মা বলল 'সে তো জানি। '
রেখা বলল'খুব খারাপ হয়ে গেল'।
চৈতির মা বলল'তাহলে দিদি আমাদের এই কন্যারা কি এভাবেই সমাজে লাঞ্ছনার শিকার হয়ে যাবে?'
রেখা বলল'যেদিন সমাজের প্রতিটি পিতা-মাতা বুঝবে তাদের শিশুকন্যারা ভবিষ্যতে জায়া জননী তাদের এ জন্য যথার্থ শিক্ষার ক্ষেত্র প্রস্তুত করে স্বাবলম্বী করা।'
চৈতির মা বলল 'সবক্ষেত্রে তো সবার সেই আর্থিক বল থাকে না?'
রেখা বলল 'সেটাই তো হয়ে গেছে সব থেকে বেশি দুর্ভাগ্যজনক।'
চৈতির মা বলল আমার মেয়েটাকে যদি তাড়াতাড়ি বিয়ে না দিতাম তাহলে বোধহয় ভাল হত।'
রেখা বলল 'তখন তো কতোবার বারন করেছিলাম শুনলে না?'
চৈতির মা বলল হ্যাঁ দিদি আমরা ছাপোষা মানুষ ভাবলাম ভালো ছেলে দিয়ে দিই।'
রেখা বলল এখানেই তোর ম্যাক্সিমাম বাবা-মা ভুল করেন।
কন্যা সন্তানকে উপযুক্ত করে গড়ে তোলার জন্য পিতামাতাকে উদ্যোগী ভূমিকা নিতে হবে তার সঙ্গে সঙ্গে অবশ্য রাষ্ট্রের ও  দায়বদ্ধতা রয়েছে।'
চৈতির মা বলল 'হ্যাঁ এখন তো আমাদের পশ্চিমবঙ্গ সরকার মেয়েদের জন্য নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছন।'
রেখা বললে অবশ্যই এটাতো পশ্চিমবঙ্গ সরকারের একটি মহতী উদ্যোগ কন্যাশ্রী প্রকল্প সারা বিশ্বে সমাদৃত হয়েছে এটা কন্যাশ্রী প্রকল্পের সাহায্য নিয়ে মেয়েরা পড়াশোনা করে স্বাবলম্বী হতে পারে নিজের ভবিস্যত নিজে করবে।
চৈতির মা বলল একদম ঠিক বলেছেন দিদি।
মনোজ আবারো ডাকতে লাগল রেখা রেখা
রেখা বলল যাই..ই.ই।
সঙ্গে সঙ্গে এটাও বললো নারীদেরকেও 
আপন ভাগ্য জয় করার অধিকার দিতে হবে।
চৈতির মা বলল'পরে এই নিয়ে কথা বলব দিদি।'
রেখা বলল' চৈতি কে নিয়ে ভাবছো?'
চৈতির মার চোখে জল আর মাথা নেড়ে সম্মতি জানালো।
চৈতির মা বলল' তবে আমি হলে না 50000 টাকায় আমার মেয়ের মূল্য চুকিয়ে দিতাম না। আমি লড়তাম। 
রেখা বলল 'প্রতি ঘরে ঘরে কন্যা সন্তানের পিতা-মাতার এরকম মানসিকতা তৈরি করা উচিত।
ঠিক আছে দিদি অত ভেবো না পরে এসো একদিন বাড়িতে তা হবে।'
চৈতির মা ঘাড় নেড়ে সম্মতি জানালো।
রেখা বলল 'কবির ভাষাতেই বলতে ইচ্ছে করছে-
'বিশ্বে যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর
অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।'
এটা সবাইকে মেনে চলতে হবে। নারী শুধু যে বিকিকিনি সহজ পণ্য নয় এটা সমাজের প্রতিটি স্তরের বুঝতে হবে।

রাবেয়া পারভীন /শেষ পর্ব





স্মৃতির জানালায়
(শেষ পর্ব)
রাবেয়া পারভীন

স্যারের শোবার  ঘরের দড়জার সামনে গিয়ে  দড়োজায়  টোকা দিল  মাহতাব। ভিতর থেকে স্যার আওয়াজ  দিলেন -
-  কে ?  ভিতরে  এসো !  
মাহতাব ভিতরে ঢুকল। খালাম্মা  খাটের  উপর  মশারী খাটাচ্ছিলেন । খাটের পাশে চেয়ারে  বসে  স্যার  পান  চিবুচ্ছিলেন। মাহতাবকে  দেখে খাট থেকে নেমে এলেন খালাম্মা । মাহতাবকে জিজ্ঞেস  করলেন
- কি বল্লো  শবনম ?
এই দুটি সরল পিতা মাতার  সাথে  না সূচক কথাটা বলতে  ইচ্ছা  করছিলো না তার । তারপরেও  ভয়ে ভয়ে বলল
- এই  বিয়েতে  শবনমের  মত নেই  খালাম্মা
স্যার  খুব অবাক হয়ে  বল্লেন  
- কেন  কি হয়েছে ?
মুখ ভার  করে খালাম্মা উত্তর  দিলেন
- কি  জানি কেন  শবনমের  খুব মন  খারাপ। ঠিক করে  ভাতও  খেল না তাই  মাহতাবকে  পাঠিয়েছিলাম  ওর মত জানতে। এখন  বলছে  বিয়েতে  ওর মত নেই।
স্যার  মাথা  নীচু করে  করে কি যেন  ভাবলেন  তারপর বললেন
- আচ্ছা  ঠিক আছে  এখন  ঘুমাতে যাও, কাল সকালে  দেখা যাবে কি ব্যাপার। যাও মাহতাব  গেস্ট রুমে বিছানা করা আছে , শুয়ে পড়োগে।
স্যারের ঘর থেকে বেরিয়ে  শবনমের ঘরের সামনে দিয়ে  যাবার সময়  দেখল  শবনম  আলো নিভিয়ে  ঘরের দরোজা  বন্ধ  করে   দিয়েছে।

সে সব অনেক পুরনো কথা তবু  কোন কথাই ভুলে যাননি তিনি। মনের আয়নায়   বন্দী হয়ে আছে সব।  শবনমকে  তিনি নিজোর করে পাননি কিন্তু তাঁর জীবনের  সফলতার  পিছনে  শবনমের  অবদান  অনেক।  সেই সেদিনের  সাধারণ  মাহতাবকে  আজকের  এই  অসাধারণ  মাহতাব সাহেবে পরিনত করেছে। শবনমকে  না পাওয়ার  তীব্র দহন  তাকে পথ চলার গতি দিয়েছে।
-স্যার  আসবো ?
মেনেজারের  ডাকে  চমক ভাংলো  মাহতাব সাহেবের। এতক্ষনে  তিনি টের পেলেন তাঁর দুই চোখ অশ্রুসজল  হয়ে  উঠেছে। মেনেজারের  দিকে তাকিয়ে লজ্জা  পেলেন  তিনি। পকেট থেকে রুমাল বের  করে  তারাতারি  চোখ মুছলেন। মাথা  নেড়ে  মেনেজারকে  ভিতরে আসতে  সম্মতি  জানালেন।  ভিতরে  এসে  বড় সাহেবের  সামনে  জরুরী কিছু ফাইল মেলে দিতে দিতে  আড়চোখে  সাহেবের দিকে  তাকালো মেনেজার। নরম গলায় প্রশ্ন করল
- স্যার। আপনার  কি শরীর খারাপ ?
ফাইল দেখতে দেখতে মেনেজারের প্রশ্নের  উত্তরে মাথা ঝাঁকালেন  তিনি।
- তাহলে  ফাইলগুলু  আজকে থাক  স্যার। কালকে  বরং দেখলেই চলবে।
- না না  আজকেই দেখব। আপনি বরং আমাকে একগ্লাস  পানি দিন।
পানি  খেয়ে,  ফাইলগুলি  দেখে  মেনেজারের হাতে ফিরিয়ে দিয়ে চোখ বুজলেন। মনে হলো ঘন্টা  দুয়েক ঘুৃমাতে পারলে ভালো  হতো।


চলবে...

শান্তা কামালী/৩৯ তম পর্ব 





বনফুল
৩৯ তম পর্ব 
শান্তা কামালী

পলাশ ফিরে এসে জুঁই য়ের পাশে চেয়ার টেনে বসলো। রুমাল বের করে ঘাম মুছে জুঁই কে বললো। অনেক গুলো জায়গা থেকে ই অফার পেলাম। আমার ভালো লেগেছে  মাল্টা ইউনিভার্সিটি অফ বিজনেস ম্যানেজমেন্ট মাস্টার্স ডিগ্রি কোর্সের অফার টা।কিন্তু.... প্রবলেম একটা আছে। 
কি প্রবলেম, বলো...।জুঁই জানতে চায়।
সেটা পরে বলছি,আগে তো তোমার ইচ্ছে টা জানতে হবে। 
আমার ইচ্ছে মানে? 
মানে বিদেশে পড়তে যেতে দেবে কি-না? তোমার মন খারাপ হবে কি-না? তারপর তো অন্য কথা। 
অফ কোর্স তুমি বিদেশে পড়তে যাবে,আমার আব্বু তাই চায়।তুমি তোমার ক্যারিয়ার তৈরী করে দেশের মুখ উজ্জ্বল করবে, আমিও চাই।
আর তোমার মন খারাপ? 
সেটা তো হবেই,কি আর করা যাবে, নিয়ে তো যেতে পারবে না।আমাদের তো এখনো.... 
না থাক সেই সব চিন্তা। আমাকে দিনে ছ'বার করে ফোন দেবে,আর সেটা অবশ্যই ভিডিও কল।
পলাশ হা হা করে হেসে ওঠে। জুঁই বলে হাসছো,তুমি বুঝতে পারছো না, তুমি কতো দূরে থাকবে, আর আমার কি চিন্তা হবে না ? 
 হবে তো,কিন্তু তাহলে ক্লাস কখন করবো,আর স্টাডিজ টাইম কতটা পাবো,সেটা ভাবো।তারচেয়ে বরং সারারাত ভিডিও কলে গল্প করবো, আর.... 
হ্যাঁ, তারপর সারাদিন শরীর খারাপ নিয়ে বিছানায়, পড়াশোনা শিকেয় তুলে দেবে।আসল কথা বলো,প্রবলেম টা কি? আর মাল্টা দেশ টা কোথায় ?

সালমা খান





নিশুতি রাত 
 

নৈশ্য আগুনে বিপর্যস্ত নগরী বসে আছে ছায়া শরীরের খুঁটি ধরে অনন্ত কাল।
কুয়াশা মাখা শীতের রাতে আগুন তাপের মিঠে ছোঁয়ায়,
ফিনফিনে শীতল হাওয়ার শান্ত দোসর ধরে ধরে আমার শহরে শীত এলিয়ে পড়েছে বুকের ভিতর থরে থরে এখন  বৃদ্ধ ,
টুপটাপ ঝরে পড়ে শিশির ফোঁটা
কার হাতে নোয়ায় খসে পড়ে ধূমকেতুর লেজ।
 শব্দে গাঁথা হয় অপরুপ মোহনকথা,
আমার প্রেমিকার বুকে আমার হাতের ছাপ 
যন্ত্রনার শব্দ হয় না ,ইচ্ছে হলেই ছুঁতে পারি না কাঁশফুল, 
শুধু জানালায় তাকিয়ে আছি 
শুধু একটা অনুভব বয়ে চলা ব্যাগভর্তি মন কেমন ,
শীতের নিশুতি শহরটা এখন কেমন ?
হঠাৎ দমকা হাওয়ায় নিভল আগুন।
ঝড়ের সাথে অশনি সংকেত
অকম্মাৎ হেমন্তের টর্নেডোতে তছনছ
উড়ে গেছে হেম শিমুল তুলার মতো।
অপ্রস্তুত হলো গত বর্ষার ফসলি জমি বুক।
সবুজবর্ণের নৈসর্গিক শহর ঝিরিঝিরি , 
যন্ত্রনায় সবুজ পাতাদের করুন নৃত্য ,
টুপটাপ শিশির ভেজায় নরম ডালে হিমে কাতর।
শুকনো গাছের পাতাগুলো বেদনা নিয়ে এলোপাথারি উড়ে যাচ্ছে  ,
শুকনো রাস্তায় লাইটপোস্টে লুটিয়ে পড়েছে অদৃশ্যে। 
মিহি জোছনায় পরী কি সুন্দর করে  ডানা খুলে নাচতো।
বরফপাথর গলে জামা পড়া পরীরা  এখন শোভাবর্ধন করছে নীলিমায়,
ধুলোয় জড়ানো পাখির পালকে এখন  কয়েকটি মুক্ত দানা।
যুবুথবু হয়ে মুখ লুকিযে থাকা পাখিটি শিরিষ গাছের গর্তে থেকে বেরিয়ে এলো ,
যে কুয়াশাচাদর উষ্ণতা ছড়ায় 
তাতে,কেবল আগাছাগুলো নিঁড়ানি পড়ে।
সারল্য বসে থেকে প্রহর গুনে গুনে 
পায়ে পায়ে হাঁটে দিন কোন এক বরষার ভরসায়
নিয়তি আবার প্রতিশ্রুতিতে পরিনিত হবে উর্বর মৃত্তিকায়
বিপন্ন দিন মুখপাত্রে একাকার হবে রুপান্তরে।
জোয়ারে রৌদ্রের আভায় অজস্র কবিতা নব্যতা ছড়াবে হলদে রেশমে। তবুও ব্রহ্মচারী শিশির ফোঁটা নৈঃশব্দে ধোঁয়াসা আঁধারে জানালার কাঁচে লেগে থাকা, 
ধূসরিত ধুলোয় মুখচুম্বন করে সবার অলৈক্ষ্যে ।

শামীমা আহমেদ/পর্ব ৩০




শায়লা শিহাব কথন
অলিখিত শর্ত 
(পর্ব ৩০)
শামীমা আহমেদ 

চোখে মুখে একরাশ কষ্টবোধ আর থমথমে একটা ভাব নিয়ে শায়লা শিহাব দুজনে রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে এলো। যেমন পাশাপাশি হেঁটে দুজনে ঢুকেছিল এখন ঠিক  সেভাবেই বেরিয়ে এলো। মাঝের সময়টাতে যেন দুজনার মনে বয়ে গেলো এক টর্নেডো ঝড়। সে ঝড়ে লন্ডভন্ড হয়ে গেলো শিহাবকে ভেবে শায়লার শত যত্নে গড়া স্বপ্নবাগান। শায়লার ভেতরে যেন এক বিশাল পাহাড় ধ্বস হয়ে গেছে। আর শিহাবও অনুচ্চারিত এক  বোবা পাহাড়। ভেতরে শত ব্যথা কষ্টের বোঝা নিয়েও অটল অজেয় পর্বত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে যেন। শায়লা দাঁড়ালো,  শিহাব পার্কিং থেকে হেলমেট পড়ে বাইক নিয়ে এগিয়ে এলো। শায়লা স্থির হয়ে এক দৃষ্টে তাকিয়ে রইল। শায়লা এই ভেবে ভীষণ  অবাক হচ্ছে যে কত সহজ করেই শিহাব সবকিছুর ইতি টেনে দিলো। শায়লা তার  জীবনের জন্য এটা বুঝে নিলো যে, আমরা যেখানে স্বপ্নতোরণ সাজাই আসলে সেটা শুধুই একটা কল্পনার ভাবাবেগ।বাস্তবতার সাথে  তা  একেবারেই বৈশাদৃশ্য। শিহাব বাইক থেকে নেমে শায়লাকে এক ঝলক দৃষ্টি দিয়ে লুকিয়ে দেখে নিলো। পরক্ষনেই নিজেকে স্বাভাবিক করে বললো,, চলো তোমাকে নর্থ টাওয়ারে নামিয়ে দিচ্ছি।তোমারতো কেনাকাটা বাকী। কিন্তু শায়লার ভেতরে যেন কোন কথাই প্রবেশ করছে না। শিহাব এবার একটু জোর দিয়েই বললো, শায়লা চলো তোমাকে নামিয়ে দেই।
এবার শায়লার মুখ ফুঁড়ে বেরিয়ে এলো, না, আমি আজ আর কেনাকাটায় যাবো না।আমার ভাল লাগছে না শিহাব।শিহাব বুঝতে পারলো তার কথাগুলো শায়লাকে বেশ আহত করেছে।তবে এভাবে না বললে সময় বয়ে যাচ্ছিল দুজনেই ভুল করবার পথে হাঁটছিলাম। শিহাব রিকশার জন্য এগিয়ে গেলো।শায়লা তার পিছু পিছু হেঁটে চললো। শায়লা জানেনা কেন শিহাব সামনে এলে সে নিজেকে এতটা গুটিয়ে নেয়! কেন সহজ সাবলীলতায় কথা বলতে পারে না। শায়লার ভেতরে ভেতরে শুধু জমানো কথার স্তুপ।এই রিকশাতো সে নিজেই করে নিতে পারতো  কিন্তু কেন শিহাবের উপর এত নির্ভরতা। শিহাবের ইঙ্গিতে শায়লা সেই  রিকশাতেই উঠে গেলো।
শায়লা মেইন রোডের বাঁক নিতেই এতক্ষণে শিহাবের বাইকের আওয়াজ পাওয়া গেলো।তবে কি শিহাব এতক্ষন দাঁড়িয়ে ছিল,দাঁড়িয়ে শায়লার রিকশাটা যতদূর দেখ যায় তা দেখছিল।
শিহাব বাইকে স্টার্ট  দিল। মনটাকে বদলে নিয়ে একটা কাজের উদ্দেশ্যে  গুলশানের দিকে এগিয়ে চললো।পুরুষদের বোধহয় এমনি হতে হয়।লৌহ কঠিন মন।যেখানে  মৃতের বাড়ি থেকে ফিরেও আবার কথার বরখেলাপ না করে কোন উৎসব আনন্দেও যোগ দিতে হয়।তাইতো যেখানে ভালবাসা অংকুরিত হয়েছিল নিমিষেই তা ধুম্রকাঠির মত পিষে ফেলে সব নিশানা মুছে ফেলতে পারলো শিহাব।
শায়লার  রিকশা এগিয়ে চললো।শায়লার অনুভুতিতে নিজেকে নিঃসাড় ভাবছে।সে কোথায়?  বা সে কোথায় যাচ্ছে কিছুই খেয়ালে নেই। হঠাৎ ভাঙা রাস্তায় রিকশার এক ঝাঁকুনিতে শায়লা  নিজের মাঝে ফিরে এলো। রিকশাকে নির্দেশনা দিয়ে এগিয়ে নিলো।বাড়ির দরজায় ভাড়া মিটিয়ে দোতলায় উঠে এলো।
শায়লা কেনাকাটা থেকে এত দ্রুত ফিরে আসাতে মা বেশ অবাক হলো।সাধারণত এ ক'দিন  সন্ধ্যা ছুঁইছুঁই করে শায়লা বাসায় ফিরেছে। শায়লা কোন কথা না বলে মায়ের ঘরে শপিংগুলো রেখে নিজের রুমে চলে এলো। দরজা লক করে বিছানায় বসলো।শায়লার কাছে পৃথিবীটা আজ মিথ্যা লাগছে।মনে মনে  এই পৃথিবীকে সে তিরস্কার করছে।
সে যেন শায়লার সুখ সহ্য করতে পারছে না তাইতো একঝাঁপি দুঃখ আজ তার উপর ঢেলে দিয়েছে। শায়লা ব্যাগ থেকে মোবাইলটা বের করে নিলো। শিহাবের প্রোফাইলে গিয়ে ছবিটার দিকে তাকিয়ে রইল। নানান কথা স্মৃতি বিস্মৃতি হয়ে আসতে লাগলো। এতটা কাছে এসেও হঠাৎ  অচেনা হয়ে যেন পাড় ভাঙনে শায়লার সব কিছু তলিয়ে গেলো। বানভাসি মানুষের মত স্রোতের তোরে ভেসে গেলো যত চাওয়াপাওয়া ইচ্ছার অনুভুতিগুলি। শায়লার চোখ থেকে অবিরল ধারায় জল পড়তে লাগল। শায়লার একে একে মনে পড়তে লাগলো শিহাবের সাথে পরিচয়ের সেই প্রথম দিনের কথা। কিভাবে এত দ্রুত সময়ে দুজনের মনের এতটা মিলে এতটা কাছাকাছি হওয়া! 

শিহাব গুলশানে গিয়ে একজন অপেক্ষমান ব্যক্তির সাথে একটা রেস্টুরেন্টে বসে ব্যবসায়িক কথাগুলো সেরে নিলো।খুব একটা বেশি সময় সেখানে বসা গেলো না। শিহাব দ্রুতই কথা শেষ করলো। লোকটি বুঝতে পারছে না যেখানে শিহাবের ব্যবসায়িক স্বার্থের জন্য এই দেখা হওয়া সেখানে তার যেন কোন ভ্রুক্ষেপ নেই। শিহাব সেখানে বেশীক্ষন থাকতে অস্বস্তিবোধ করছিল।
শিহাবের পাশের টেবিলে বুঝাই যাচ্ছিল গুলশান এলাকার ধনীর ঘরের কন্যা 
ভীষণ স্মার্ট গেট আপে মোবাইল স্ক্রল করছে কফিতে চুমুক দিচ্ছে আর শিহাবের দিকে তাকিয়ে আছে।শিহাবকে আজ সেইরকম 
সুন্দর লাগছিল ।  মেয়েটির তাকিয়ে থাকায় দোষ ধরা যাবে না।শিহাব তার সানগ্লাস চোখে মেয়েটির গতিবিধি সব খেয়াল করছিল। শিহাব লোকটির সাথে কথা শেষ করে হ্যান্ড শেক করে বেরিয়ে এলো। হেলমেট পরে নিয়ে বাইকে স্টার্ট দিল। শিহাবের মনের ভেতর ভিন্ন এক অনুভুতির মিশ্রন । বাইক গুলশান দুই নম্বর  গোলচক্কর ক্রস করে বনানীর দিকে এগিয়ে উত্তরার পথে এগুচ্ছে । শিহাবের অনুভুতিতে মনে হচ্ছে শায়লা তার পেছনে বসা। শিহাব সামনের লুকিং মিররে তাকাতেই শায়লার হাসিমাখা মুখটা দেখে চমকে উঠল!



চলবে...

রুকসানা রহমান





আমাকে  সাথে নাও


অরুমিতা,
আমি এসেছি,সবকিছু ছেড়ে তোমার কাছে ফিরে
কেমন সারপ্রাইজ দিলাম বলোতো ?
নয়টি মাসের অপেক্ষা পিছিয়ে যাবে,রুকু থেকে সেজদায়।
তোমার অবিশ্রান্ত ভেঁজা চোখ বন্ধ কেন লাজে ?

এই ওঠোনা চোখতো খোলো,ও অনেক অভিমান ?
জানি তোমার নিঃসঙ্গ জীবনে ভালোবাসার স্বপ্নে
বিভোর রেখেছি, স্বপ্ন আমিও দেখেছি কেবল
সময় দিতে দেখা করতে ও পারিনি,কেবল দুজনায়
ছিলাম একই আমি-তুমি, বিধাতার উপহার ।
দেশকে বাচাঁবো বলে যুদ্ধ  করতে যেয়ে দুরত্ব বেড়েছিলো, তুমিই ছিলে আমার অনুপ্রেরনা
মনের আড়াল তো হয়নি কখনো।
ভেবেছিলে নয়টিমাস পর যখন পাক শয়তানদের
থেকে কেড়ে নিয়ে বিজয়ের 
উঠবেনা,বেশ এবার বুকে তুলে নিয়ে ঘুম ভাঙাবো
একি !
তোমার,দেহটা এতো শীতল কেন?এভাবে কেন ঘুমাচ্ছো,জাগো,তাকাও দেখো আমি এসেছি। 
অরুমিতা
কথা বলো,আমি সত্যি ভাবিনি,বুঝিনি কাজের ব্যস্তটায়,সময় দিতে না পারার জন্য,এতোকষ্ট নিয়ে
দগ্ধশীতল শান্তচূড়ায় বসে অপেক্ষার প্রহর কেবলই
গুনেছো।
তবে কি,আমি ভালোবাসার ব্যর্থতার অভিশাপ বহনকারী, আর তুমি সব সার্থকতা নিয়ে গভীর
মৌনতায় ডুবে থাকবে।

আমরা দুজনায় একই সত্তার ছিলাম প্রণয়ের সৌরভে,হয়তো সময়ের আবরণে গর্বিতমন তুমি আছো, থাকেবে ভেবে কাজকে প্রাধান্য দিতে যেয়ে
অবহেলা করেছি ভেবেছো ?

দেখো অরু,দেখোনা তোমায় বুকে জড়িয়ে চক্ষের জলে তরজমা করছি নতুন জীবনের আয়াত।
তুমিহীন শূণ্যতা,বেঁচে থেকেও মৃত্যুসম আমি...

আমি,যে তোমার ভালোবাসার আর্কষণে বন্দি,
সব স্বপ্ন তোমার চন্ঝলতার আঁচলের ছায়াথেকে
ডুবে যাবে সমস্ত পৃথিবী।

অরুমিতা,
দেখো,দেখোনা অরু,
তোমার পছন্দের রয়েল,ব্লু শাড়ির আঁচল জুড়ে কবিতা
লিখেছি নিজ হাতে,খোঁপায় পড়াবো বেলি,ফুলের মালা,কন্ঠে ফুলের হার,কানে ঝুমকো,ঐ-চরণ যুগল
 রাঙাবো আলতায়।
 ওঠোনা,প্লিজ ওঠো !

এখন আমার হাতে,হাত রেখে যাবে তোমার,সেই
প্রিয় নদীটির  কাছে,আমার কাঁধে মাথা রেখে দেখবে
সূর্য ডোবার পালা।

এখনো যায়নি ফুরিয়ে,স্মৃতিময় সময়গুলো,স্বপ্নের
বাসনার ভিতর প্রকৃতির ললাটে হয়নি লেখা,
প্রেমের গল্পকথা।

তুমিতো আমার তৃষ্ণাতুর প্রেয়সী, যার,সুরভিত দেহের
ভাঁজে, ভাঁজে বুনেছিলাম কত যে কাব্যের ঝংকার।
কেন, কেন তুমি আজ গভীর ঘুমে,অচেতন ?
আমার,জীবন থমকে দিয়ে দুরে সরে,গেলে
ভুলের আগুনের দীর্ঘ লেলিহান স্রোতে ভাসিয়ে ?

 সত্যিই তুমি আর কোনদিন জাগবেনা অরু
এ তুমি কেমন তুমি বলোতো...?
বেশ আমিও এভাবে তোমাকে বুকে জড়িয়ে বসে,থাকবো,কারসাধ্য আছে কেড়ে নেবে
যতক্ষন আমার দেহে প্রাণ আছে।
প্লিজ অরু
আমাকে সাথে নাও, তোমার সাজানে প্রণয়ের নান্দনিক সেই অনন্তের ঘরে...
সাথে নাও প্রিয়তমা,আমাকে সাথে নাও...