১২ ডিসেম্বর ২০২১

সানি সরকার 







শিকড়ে জলের শব্দ 



প্রেমের মানুষটির জন্যে এই বুকে পুঁতেছি
চন্দন গাছ 

মাটির গন্ধ পাখির কুজন 
প্রতিনিয়ত নড়াচ্ছে পাতাগুলি ডালগুলি 

প্রেমের মানুষটির জন্যে একটি মন্দির 
বানিয়েছি এই বুকের মধ্যিখানে 
সেখানে সে থাকেন 
আমাদের ঈশ্বর থাকেন 

আমাদের ঈশ্বর, প্রেমের মানুষটি, আমাদের ইরা ও আমি 
শীতের চাদর খুলে ফেলে দেখছি 
কতগুলি অগোছালো মানুষের অট্টহাসি ও মিছরির ছুরি 

এইসব ছোঁয় না ইদানীং 
শোনো সোনা, যাঁরা মাটির ওপর পা রেখে 
এই ব্রহ্মাণ্ডের গতিবিধি দেখেন 
তাঁদের মুখ বাঁধা থাকবে শক্ত রুমালে 
তাঁদের চোখ খোলা থাকবে, হাসবে, কিন্তু 
চোখ দু'টি হাসতে হাসতে সূর্যের মতো জ্বলবে 

আর 
আমার প্রেমের মানুষটি কান পেতে শিখে নেবে 
শিকড়ে জলের শব্দ শোনার সহজ সুত্র 

সোমা বিশ্বাস





ভালোবাসা থেকে যায়...
(কথোপকথন, মুঠোফোনেএকটি ছেলে ও মেয়ে)

হ্যালো... কেমন আছো?
তুমি!? হঠাৎ?
না, আজ খুব ইচ্ছে হচ্ছিল কথা বলতে..
তাই-অনেকদিন পর মনে পড়লো!
না ,তা ঠিক নয়-
তবে?
আসলে ক'দিন ধরে খুব মন কেমন করছে..
সেজন্য ছ' বছর দীর্ঘ বিরতি?
তুমি তো ভুল বুঝেছিলে সেদিন...
আমি! এখনোও আমি?
না মানে আমার রাগও আছে ভুলে থাকার কারণ!
তা হঠাৎ ফোন করলে কেন?
তোমার কী কথা বলতে কোন অসুবিধা আছে?
আমার অসুবিধা, সুবিধায় তোমার কি কিছু এসে যায়?
আমি না হয় রাগী, তোমার অভিমান তো এখনও তীব্র!
আমার রাগও আমি, অভিমানীও আমি, তুমি কে?
আমি কেউ না?
হঠাৎ ফোনের কারণটা জানতে পারলে ভালো লাগতো...
না, মানে আমি ভালো নেই!
ও...
কিছু বলবে না?
যা করেছ সবই তো নিজের জেদ আর ইচ্ছায়..
আমার কিছু বলার নেই!
কিচ্ছু বলার নেই?
না...!
তুমি মন থেকে বলছো?
আমার মনের খোঁজ তুমি কি কখনো রেখেছো; যে আজ বলছো?
তুমিও তো আমার খোঁজ রাখোনি!
আমি ফোনটা রাখছি, কোন...
শোনো একটু কথা বলো, কথা শেষ হয়নি-
আমরা আগের মতো বন্ধু হতে পারি না?
না, আমার কোনো ইচ্ছে নেই, আর থাকলেও তোমার সঙ্গে না।
পারবে এতটা নিষ্ঠুর হতে?
আমিতো নিষ্ঠুর ই তুমি জানো না?
আমি... আমি তোমায় খুব...
আমি তোমায় মিস করি না, রাখছি-
শোনো ,তোমাকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছে;
আমার করছে না ,তুমি ভালো থেকো।
এতটা এড়িয়ে যাচ্ছো লক্ষীটি দোহাই তোমার..
আমার সময় নষ্ট হচ্ছে ফোনটা রাখছি-
তুমি এখনো আমায় ভালোবাসো নিজে কষ্ট পাচ্ছ তাও..!
কষ্ট ?কিসের কষ্ট আমি দিব্যি আছি-
অনুভূতিহীন, ভালবাসাহীন যন্ত্রমানবের মত!
তোমার মন জুড়ে এখন ও তো আমি..
আমার মন জুড়ে..
থামো, সব মিথ্যা, তোমার মত সুবিধা ভোগী;
সুখ বিলাসীর এসব আজ মানায় না!
আমি.. আমি ভুল করেছি, একটা সুযোগ?
না..! আমি তোমাকে ছাড়া ভালোই আছি;
আমি, আমার ভালোবাসা সব আমার মত ...!

মমতা রায়চৌধুরী /৬৭






উপন্যাস

 টানাপোড়েন ৬৭
চিন্তার ভাঁজ 
মমতা রায়চৌধুরী



                    টানা বৃষ্টিতে প্রাণ হাঁপিয়ে উঠেছে, আজকের সোনা ঝরা রোদ বেরিয়েছে। রেখা সকালে উঠেই ঘরের জানলাটা খুলে দিয়েছে ,সেই সোনা ঝরা আলো জানলা দিয়ে এসে উঁকি মারছে। মনোজ দুচোখ ডলতে ডলতে হঠাৎই জানালা দিয়ে আসা আলোর দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে 'অ্যাই ,রেখা। আজ আকাশে নির্মল রোদ উঠেছে ।
মনোজ গান শুরু করল' ও আকাশ সোনা সোনা,  এ মাটি সবুজ ,সবুজ। নূতন রঙের ছোঁয়ায় হৃদয় রেঙেছে,আলোর জোয়ারে খুশির বাঁধ ভেঙেছে।'
রেখা গান শুনে ঘরে ঢুকতেই মনোজ রেখাকে জড়িয়ে ধরল।
 রেখা বললো 'কি হচ্ছে ?এগুলো কি হচ্ছে ?আমি বুঝতে পারছি না। '
মনোজ বলল 'প্লিজ, চুপ করো ।এই কদিনে হাঁপিয়ে উঠেছি ।একটু শরীর ঠিক হয়েছে ।কোথায় একটু ওয়েদার ভালো থাকবে ,সে নয়।'
 রেখা মজা করে বলল''তাতে কি হয়েছে ?মেঘলা ওয়েদারতে তো অনেক বেশি কাছাকাছি আসা যায় ।মনোজ রেখার চোখে তাকিয়ে মাথা নাড়ালো আর বলল 'হ্যাঁ ,তুমি ঠিকই বলেছ ।কিন্তু তা হলেও অসময়ে এটা একদমই ভালো লাগে না ।দেখো কালকে যখন আমার হৃদয় তোমাকে চাইছিল কাছে পেতে ।তুমি কালকে স্কুলে চলে গেলে ,তার মানেটা কি হলো? সেই তো আমাকে একাকী থাকতে হলো। তার থেকে যদি একটু ওয়েদারটা ভালো থাকতো ,তাহলে আমিও একটু বাড়ির বাইরে না ,এদিক ওদিক ঘুরাঘুরি করতে পারতাম বলো? আমরা তো পুরুষ মানুষ। আমরা এক জায়গায় বসে থাকতে পারি না। বন্ধু-বান্ধবও ছাড়া  ।'
রেখা বলল 'খুব বুঝলুম মহাশয় ।ঠিক আছে ।এবার ছাড়ো আমাকে ব্রেকফাস্ট বানাতে দাও ।'
তখনও রেখার হাতে আটা লেগে আছে।
রেখা চলে যাচ্ছে মনোজ তখন আবার ডাকে 'অ্যাই রেখা এই শোনো না।'
রেখা কৌতুহলী হয়ে বলল 'আবার কি হলো ?'
মনোজ আমতা আমতা করে বলল 'না ,বলছিলাম মানে সুমিতাকে কবে থেকে আসতে বলবে?'
রেখা বলল ' দাঁড়াও ।এই তো ভাবছি দুদিন পরে ফোন করবো?'
 তারপর রেখা রান্নাঘরের দিকে চলে   যেতে গিয়ে আবার একটু পেছন ফিরে বলল'পার্থর খবর কি বল তো ?'
মনোজ বলল 'কোন পার্থ ?'
রেখা বলে' এই মশকরা করো না তো ।আরে আমাদের প্রতিবেশী পার্থ ভাই? '
মনোজ বলল 'হ্যাঁ ,ঠিক বলেছ তো ।ওর তো খবর নেয়া হয় নি । দাঁড়াও আমি একটু ফোন করি ।'
রেখা বলল '  তুমি ফোন করো আমি বরং রান্নাঘরে কাজগুলো করি ।শুনতে পাচ্ছ না বাচ্চাগুলোর চিৎকার?'
মনোজ  বলল 'না, ওদের খেতে দেয়ার ব্যবস্থা করো।'
মনোজ ফোন করল পার্থকে। রিং হয়ে গেল ।আবার ফোন করল'ফোসকে গেলে এমন ছেলে আর পাবে না তাই তো বলি ও সুন্দরী আমায় ছেড়ে যেও না...।'
মনোজ রিং টোন শুনে  মাথা নাড়তে লাগল আর ভাবতে লাগলো 'বাবা পার্থ ,বেশ মজার রিং টোন লাগিয়েছে তো ।'
ফোন ধরলেন এক ভদ্রমহিলা'হ্যালো'।
মনোজ বলল 'কে মাসিমা বলছেন?'
সুনীতা দেবী বললেন'হ্যাঁ বলছি আপনি কি বলছেন?'
মনোজ বলল 'আমাকে চিনতে পারছেন না? আমি মনোজ বলছি পাশের বাড়ির।'
সুনীতা দেবী বলেন 'ও তুমি? কেমন আছো বাবা?'
মনোজ বলল' এখন আমি ভালো আছি ।আপনারা সবাই ভাল আছেন?'
সুনীতা দেবী বলেন' আমরা ঠিকই আছি কিন্তু পার্থর একটু শরীরটা খারাপ বাবা।'
মনোজ বলল 'কি হয়েছে পার্থর? ওই জন্য ভাবছি পার্থ ফোন করছে না কেন?'
সুনীতা দেবী বলেন' ওর জ্বর এসেছে বাবা। আজ তিন দিন হল?'
মনোজ কেমন একটু শিউরে উঠলো ।কি জানি বাবা মনোজের  সংস্পর্শে থাকা থেকে কি পার্থর জ্বরটা  এল?ভয়ে ভয়ে বলল' কিছু টেস্ট করিয়েছেন?'
সুনীতা দেবী বললেন 'না, বাবা ।ডাক্তার দেখানো হয়েছে।ডাক্তারবাবু বলেছেন' চারদিন পর যদি জ্বর না কমে তাহলে টেস্ট করাতে বলেছেন?'
মনোজ বলল 'পার্থকে কি একটু ফোনটা দেয়া যাবে মাসিমা?'
সুনীতা দেবী বলেন 'এভাবে  বলছো কেন?একটু ধর ওই ঘরে যাচ্ছি গিয়ে ফোনটা দিচ্ছি।'
সুনীতাদেবী ডাকছেন 'পার্থ, পার্থ , বাবা পার্থ ।'
পার্থ কম্বল সরিয়ে নিয়ে মুখ বের করে বলল' কী মা?'
সুনীতা দেবী বলেন 'মনোজ ফোন করেছে বাবা?'
পার্থ হাত বাড়িয়ে বলল' দাও ফোনটা।
সুনীতা দেবী ছেলের পাশে গিয়ে মাথায় হাত বোলাতে থাকেন, তারপর টেম্পারেচার দেখতে থাকেন।
পার্থ বলল 'হ্যালো ,মনোজ দা কেমন আছো?'
মনোজ বলল 'আমি তো ভালো আছি । কিন্তু পার্থর জ্বর।এখন টেনশন হচ্ছে , তুমি আমার সঙ্গে থাকার জন্য আবার কিছু না হয়ে যায়?'
পার্থ বলল 'দাদা, এসব কথা কেউ বলে নাকি? মানুষ হয়ে মানুষের পাশে থাকবো না ?বিপদের দিনে তাই কখোনো হয়?'
মনোজ বলল' সব ঠিক আছে। তবুও নিজেকে খুব অপরাধী মনে হচ্ছে জানো তো?'
পার্থ বলল' দেখবেন ,আমার কিছুই হবে না ।আমার আজকের মধ্যে জ্বর কমে যাবে। '
মনোজ বলে 'তাই যেন হয় ভাই।'
পার্থ বলল'তাই হবে , তুমি অত টেনশন নিও  শরীরের দিকে নজর দাও।'
মনোজ বলল 'আমাকে নিয়ে ভাবিস না ভাই ।এবার নিজের শরীরের দিকে একটু নজর দে।আমি তোকে দেখতে যেতাম এই মুহূর্তে যাওয়াটা ঠিক হবে না।'
পার্থ বলল' না ,না দাদা। আপনি পুরোপুরি আগে সুস্থ হন।'
মনোজ বলল" আমি না গেলেও মাঝে মাঝে ফোন করে খবর নেব।'
পার্থ বলল 'ঠিক আছে ,তাই করবেন।'
 মনোজ বলল 'ঠাকুর করে তোর যেন আজকেই টেম্পারেচার নেমে যায় ।ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করব। নইলে যে নিজেকে ক্ষমা করতে পারব না ভাই।'
পার্থ বলল' দাদা ,আপনি খামোখা নিজের প্রতি দোষারোপ করছেন ।'
এরইমধ্যে রেখা এসে কথাগুলো শুনতে থাকে তারপরে বলে 'কি হয়েছে পার্থর?'
মনোজ বলে 'পার্থর জ্বর হয়েছে?'
রেখা তড়িঘড়ি করে মনোজকে বলে 'ফোনটা আমাকে দাও তো?'
রেখা বলল' পার্থ ,পার্থ ভাই?'
পার্থ বলল' হ্যাঁ ,বৌদি বলুন?'
রেখা বলল 'তোমার জ্বর হয়েছে ,আজ কদিন হলো ?'
পার্থ বলল '৩দিন ।দাদার টেনশন শুরু হয়েছে ।আচ্ছা বলুন তো তার ওপর নিজের ওপর দোষারোপ করছেন?'
রেখা বলল 'হ্যাঁ, সেটা তো করারই কথা ভাই ।কদিন আগেই তোমার দাদা যে মহামারী রোগ থেকে রক্ষা পেলেন?'
পার্থ খুব হেসে বললো 'বৌদি দেখবেন আমার কিছু হয় নি ।আজকে ই আমার জ্বর কমে যাবে। দেখুন না ?ঈশ্বরে বিশ্বাস রাখুন।'
রেখা বলল 'সেটা তো একশো বার ভাই। আর ওটাই তো চাই।'
পার্থ বলল 'আচ্ছা, বৌদি বলুন তো ?আজকে যদি আমি বাড়ি না থাকতাম, আমার মায়ের যদি কিছু হতো ,কোনো অসুবিধা হতো ?আপনারা কি আমাদের পাশে থাকতেন না?'
রেখা বললো 'এটা আবার কি কথা বলছ ভাই ।আমরা পাশে থাকব না?'
পার্থ বলল 'তাহলে ভাবুন আজকে আমার জ্বর যদি না কমে , সেইজন্য দাদা নিজেকে ,নিজের প্রতি দোষারোপ করবে ?তাই কখনো হয়?'
রেখা বললো' হ্যাঁ। তোমার দাদা দেখো ,মনমরা হয়ে বসে আছে। আজকে একটু প্রাণ খুলে হেসে গান ধরেছিল জানো তো, ভাই?'
পার্থ বলল' দাদা যদি মনমরা হয়ে বসে থাকে তাহলে আমি কি শিখবো? তার থেকে দাদাকে গান গাইতে বলুন আমি একটু শুনি।'
সুনিতা দেবী বললেন 'কি হয়েছে রে বাবা পার্থ ?কে কথা বলছে বৌমা?'
সুনীতা মাসিমা সত্যিই অমায়িক ভদ্রমহিলা। সবসময় মা-বাবা করে কথা বলেন আর এত সুন্দর ব্যবহার ।নিজের শ্বশুরবাড়ির পরিবার থেকেও পায় নি।'
সুনিতা দেবী বললেন 'বাবা পার্থ ফোনটা আমার কাছে...।'
পার্থ বলল 'মা, একটু এদিকে এসো ।হাত বাড়াও।'
সুনিতা দেবী বলেন 'এই যাই বাবা ।দাও ফোনটা আমাকে ।আচ্ছা শোনো তোমার কিন্তু এরপরে খাবার টাইম আছে। বৌমার সঙ্গে একটু কথা বলে নিই। তারপর তোমার খাবার দেব ।লক্ষ্মী ছেলের মত খেয়ে নেবে কিন্তু।'
সুনিতা দেবী বললেন' বৌমা, কেমন আছো মা তোমরা?'
রেখা বলল 'আমরা তো ভালো আছি মাসিমা কিন্তু..?"
সুমিতা দেবী বলেন' ও সব নিয়ে একদম ভেবো না তো ।শরীর থাকলে শরীর খারাপ হবে ।তার জন্য ট্রিটমেন্টের ব্যবস্থা করতে হবে ,খাওয়া -দাওয়া ঠিকঠাক করতে হবে, যা যা ডাক্তার বলেন। সেগুলো মেনে চলতে হবে ।আমি কিন্তু ভয় পাচ্ছি না ।তোমরাই ভয় পাইয়ে দিচ্ছ আমাদেরকে।'
রেখা হেসে বলল 'হ্যাঁ ,মাসীমা ।আপনার মত মনের জোর সবার তো হয় না। তবে আপনার কাছ থেকে অনেক কিছু শেখার আছে।'
সুনিতা দেবী বললেন 'দেখি কালকে তো ডাক্তার ওকে টেস্ট করতে বলেছেন ।আশা রাখি  আজকেই জ্বর কমে যাবে। এরমধ্যেই সুনীতা দেবীকে কেউ যেন বলছেন 'ও কাকিমা ,ও কাকিমা...।'
সুমিতা দেবী রেখাকে বললেন 'বৌমা তুমি একটু ধর মা ।দেখি আমার ওই কাজের মেয়েটা কি বলতে চায়? গলাটা বাড়িয়ে-'কি বলছিস রে পেঁচি।'
পেঁচি বলল 'আমি কাল থেকে কাজে আসব না?'
সুনিতা দেবী বলেন 'কেন কাজে আসবি না কেন? তোর কি হয়েছে?'
কাজের মেয়েটি চুপ করে আছে। তারপর সুনীতা দেবী আবার বলেন কি হলো বলছিস না কাজে আসবি না কেন ?কোথাও যাবি?'
পেঁচি বললো 'না ,দাদার জ্বর এসেছে না । আমি কাজে আসব না।'
সুনিতা দেবী বলেন' দাদার জ্বর এসেছে তো তোর কি ?তোর তো আর জ্বর আসে নি ?'
পেঁচি বলল 'না ,না ,এখন করোনার সময়।'
সুনীতা দেবী বলেন'ওই জন্য কাজে আসবি না? তবে আসিস না ।তোমার বাড়িতে যদি তোমাদের কারোর জ্বর হয় ,তখন তুমি কি করবে?'
কাজের মেয়েটির চুপ করে আছে দেখে , সুনীতা দেবী বলেন 'ঠিক আছে মা ,তোমায় কাজে আসতে হবে না ।তোমার দাদার জ্বর সারুক। তারপর তুমি কাজে এসো ,কেমন?'
পেঁচি বলল'কাকিমা আমাকে ভুল বুঝলে হবে না ।আমি কিন্তু..?'
সুনীতা দেবী বলেন 'না মা, ভুল বুঝবো কেন ?সাবধানতা অবলম্বন। ভালো কথা।'
কাজের মেয়েটি চলে যাবার পর রেখাকে বললো কথা শুনলে বৌমা ?ওরা আমাদের থেকে কত সচেতন। বাহ এটা কিন্তু ভাল দিক কি বল?'
রেখা হাসতে হাসতে বলল' হ্যাঁ, কাকিমা। আমার যে কাজ করে সুমিতা ।ও তো এমনি কাজে কামাই ।তারপর ওর যখন এই করোনা পজিটিভ হল তারপর থেকে ওকে আমরা নিজের থেকেই ছুটি দিয়ে দিয়েছি ।আজ অব্দি এখনো ডাকি নি।'
সুনিতা দেবী বললেন 'তা বেশ করেছ। ভালো থেকো মা ।এসো তোমরা। বাবুর আবার খাবার টাইম হয়ে গেল তো ফোনটা এখন রাখি মা?'
রেখা বলল-হ্যাঁ ,মাসিমা রাখুন।'
রেখা মনোজের দিকে তাকিয়ে আছে তারপর বলল 'কি হল তোমার? তুমি এমন  হয়ে গেলে কেন ?এই সোনা ঝরা রোদে  গান গেয়ে উঠল' ও আকাশ সোনা সোনা ...।আজকে আমার সোনার মনে অন্ধকার কেন?'
মনোজ শূন্য দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে থেকে বলে 'কেন বুঝতে পারছ না ?ভীষণ ভয় লাগছে আমার ।আজ সোনা রোদও মনের অন্ধকার দূর করতে পারবে না।'
মনোজের এসব নেগেটিভ কথাবার্তা শুনে রেখার ও চিন্তার ভাঁজ পরল।

মোঃ হা‌বিবুর রহমান/৬ষ্ঠ পর্ব





ইউএন মিশ‌নে হাই‌তি‌তে গমন 
( ৬ষ্ঠ পর্ব ) 
মোঃ হা‌বিবুর রহমান

বিশ্রা‌মের জন্য য‌থেষ্ট প্রস্তু‌তি নি‌য়ে‌ছিলাম ঠিকই‌ কিন্তু চোখ যেন কাঠ হ‌'য়ে গি‌য়ে‌ছি‌লে‌া তাই শুধুমাত্র ‌চোখ বন্ধ ক‌'রে নি‌জের মন‌কে বুঝ দেওয়া আর‌কি! মানু‌ষের কোন কোন সময় এরকম সময় আ‌সে বিছানার কথা ম‌নে মনে চিন্তা ক'র‌লেই ব‌ু‌ঝি ঘুমা‌নোর আ‌গেই ঘুম এ‌সে যায় কিন্তু বিছানায় যে‌য়ে ঘুম‌তো আ‌সেই না এমন‌কি জ্ঞানীগুণী ব্য‌ক্তি‌দের পরামর্শ অনুসরণ ক‌রে ১০০ থে‌কে উ‌ল্টোগু‌ণে ০ (শুন্য) পর্যন্ত ম‌নে ম‌নে বার বার গুনতে-গুনতে মু‌খে ফেণা তোলার পরও কোনক্র‌মেই ঘ‌ুম আ‌সেনা; কো‌নো কে‌ানো সময় ঘুম যেন এ‌কেবা‌রে নির্বাস‌নে যায় কিংবা ছয় মা‌সের জন্য ব্যা‌ঙের মত একবা‌রে শীত‌নিদ্রায় চ‌'লে যায়। ঠিক যেন এমন‌টিই হ‌'য়ে‌ছি‌লো সে‌দিন আমার। 

এরই ম‌ধ্যে আবার বঙ্গ‌দে‌শে ক‌য়েকঘণ্টা আ‌গে ফে‌লে আসা অ‌তি আপনজন‌দের ম‌লিন অবয়বগু‌লো ম‌নের গভী‌রে বার বার ছায়াসদৃশ আ‌বির্ভূত হ‌'য়ে অস্পষ্ট ছ‌বির মত ম‌নের ম‌ণি‌কোঠায় এ‌সে ঘন ঘন কড়া নাড়‌ছি‌লো আর সা‌থে সা‌থে মনটা বিষা‌দে ভ‌'রে উঠ‌ছি‌লো। তখন সেই মুহূর্তে শুধু কেবলই ম‌নে হ‌'চ্ছিল আহা‌রে! টাকা-ক‌ড়ি তুই আমার কা‌ছে অতি তুচ্ছ আর অ‌তি নগণ্য!

বার বার কেবলই ম‌নে হ‌'চ্ছিল আহা! য‌দি আপনজন‌দের সা‌থে কথা ব‌'লে অন্ততঃ একবার হ্যা‌লো ব'ল‌তে পারতাম তাহ'লে কতই না ভা‌লো হ‌তো! কিন্তু সে স্বপ্ন তখন বাস্ত‌বে যে রুপ নে‌বে না তা জে‌নেও যেন শুধুমাত্র কল্পনার জগতটাই তখন উপ‌ভোগ করার নেশায় ধ‌'রে‌ছি‌লো। যোগা‌যো‌গের বিড়ম্বটা আমার প‌রের ধা‌পে ম‌া‌র্কিন নেভী প্র‌শিক্ষণ কেন্দ্র, ক্যাম্প সা‌ন্টিয়া‌গোর বাস্তবতায় চিত্রা‌য়িত করার সু‌যোগ পা‌বো, ইনশাল্লাহ। 

যাক, অ‌নেক দর্শন বিষয়ক কথাবার্তা হ‌লো কিন্তু এখনও তো আসল কথার একটা শব্দও শব্দ‌ায়িত হয়‌নি; এম‌নি‌তেই আজ আমার এক শ্র‌দ্ধেয়া ফেইস বুক বন্ধুর মন্ত‌ব্যে ক‌লিজাটা ঝাজরা ও ক্ষত-‌বিক্ষত হ‌'য়ে গে‌ছে, আ‌মি না‌কি বেশী কথা ব‌লি, তাই আর না বাবা, ন্যাড়া বেল তলায় একবারই যায় কিন্তু স্বভাব‌ কি অ‌তি সহ‌জে পাল্টায়?

‌এরই ম‌ধ্যে এরকম আ‌বোলতা‌বোল ভাব‌তে ভাব‌তে কখন‌ যে প্রায় তিন ঘণ্টা পার ক‌'রে ফে‌লেছি তা এ‌কেবা‌রেই টের পায়‌নি। আবার মা‌র্কিনী সা‌র্জেন্ট সা‌হেব এ‌সে বাংলা‌দে‌শের মি‌লিটারী সম্বন্ধে বা‌জে মন্তব্য ক'র‌বে ভে‌বে এ‌কেবা‌রে ত‌ড়িঘ‌ড়ি ক‌'রেই নি‌জে‌কে মি‌লিটারী সা‌জে সা‌জি‌য়ে নিলাম। 

হা, এই‌তো মা‌র্কিনী ওস্তাদ বু‌ঝি এ‌সে গে‌ছে, এখনই যেন তার সেই তিন-চার লাইন গদবাঁধা ইংরেজী শু‌নি‌য়ে দি‌য়ে আমা‌দের‌কে ধন্য ক'র‌বে। হা, এইমাত্র ক‌লিং বেল বে‌জে উঠ‌লো, একই ভ‌ঙ্গিমায় বাপধনের মু‌খে তোতা পা‌খির বু‌লি উচ্চা‌রিত হ‌লো; 

"Sir, I think you have enjoyed your rest hour, I am sorry sir, this is the time you need to hurriedly go to Honolulu International Air Port. Sir, please get down to the ground floor, your bus is ready, board on to the bus and soon we will move to airport, kindly do hurry up as the time is very short".

একজন সা‌র্জেন্ট টোকাই ক'র‌বে বাংলা‌দেশী অ‌ফিসার‌দের? ম‌ান-সন্মান আর ইজ্জ্ব‌তের ভ‌য়ে তাই আমরা সব লে‌ভে‌লের অ‌ফিসাররাই খুবই সি‌রিয়াস, তার ‌সে সু‌যোগ পাওয়া থেকে তা‌কে বেশ ক‌য়েকবারই ই‌তিপূ‌র্বে ব‌ঞ্চিত ক‌'রেছি, এবারেও তা‌কে ব‌ুঝি‌য়ে দি‌য়ে‌ছি ‌যে, বঙ্গীয় ‌মি‌লিটারী অ‌ফিসাররা কত স‌চেতন আর দা‌য়িত্বশীল, আর এজন্যই বু‌ঝি সে‌দিন বাংলা‌দে‌শের নাম‌টি তারই মা‌ধ্যমে অন্যান্য মা‌র্কিনীদের‌কে একটা অত্যন্ত প‌রিষ্কার ধারণা দি‌তে পে‌রে‌ছিল যা হয়ত তারা তা‌দের জীবদ্দশায় আজীবন ধারণ ক'র‌বে। 

যা‌হোক, নিজ কামরা থে‌কে নে‌মে সবাই বা‌সে উঠা মাত্রই যেন চাল‌কের কেরাম‌তি‌তে একেবা‌রে ভোঁ-‌দৌঁড় ‌দি‌য়ে মুহূর্তের ম‌ধ্যেই বিমানবন্দ‌রে পৌ‌ঁছে গেলাম। অতঃপর সেই মা‌র্কিনী সি-৫, আকা‌শ প‌থের রাজা ই‌তোম‌ধ্যেই তার প্রাথ‌মিক ওয়ার্মাপ শেষ ক‌'রে শেষ দৌঁড় দেওয়ার অ‌পেক্ষায় শুধুমাত্র নিয়ন্ত্রণ ক‌ক্ষের আ‌দে‌শের অ‌পেক্ষায় যেন প্রহর গুণছে। 

দা‌য়িত্বপ্রাপ্ত পূ‌র্বের সেই বাংলাদেশী সা‌র্জেন্ট ই‌তোম‌ধ্যে আমা‌দের সবুজ রং‌য়ের পাস‌পোর্টগুলো এক এক ক‌'রে হা‌তের ভিতর আবার গু‌জে দিয়ে বললো, "স্যার, এখন থে‌কে ঠিক আনুমা‌নিক এগার ঘন্টা পর পোর্টোরি‌কো আন্তর্জাতিক এয়ার পো‌র্টে ল্যান্ড করার ‌ঠিক পূর্বমূহু‌র্তে আ‌মি আপনা‌দের কাছ থেকে একইভা‌বে এটা সংগ্রহ ক'রে নেবো। ই‌মি‌গ্রেশ‌নের জন্য এটার প্র‌য়োজন হ‌বে, ততক্ষণ এটা আপনা‌দের কা‌ছেই সয‌ত্নে নিজ হেফাজ‌তে রাখুন"। 

এরই ম‌ধ্যে পাইলট অ‌তি সু‌কৌশ‌লে জায়ান্ট আকাশযানটি কোনরকম ঝুটঝা‌মেল‌া ব্যতীতই রানওয়ের মাঝামা‌ঝি মাঝারী গ‌তি‌তে নি‌য়ে আস‌তে সমর্থ হ‌'য়ে‌ছেন। আ‌স্তে আ‌স্তে যে গ‌তি বাড়‌ছে তা প্লেন‌টির দৌড়ের ব্যস্ততা দে‌খেই অনুমান ক'র‌তে পার‌ছিলাম। 

হা, আকা‌শে উ‌ঠে গে‌ছি, এ‌কেবা‌রে হনুলুলুর ঠিক মাথার উপর দি‌য়ে উড়াল দি‌য়ে‌ছি। দোওয়া-দরূদ প‌ড়ে আল্লাহপা‌কের না‌মে আকাশপ‌থে পথ চলা শুরু হ‌লো অজানা-অ‌চেনা পোর্টোরি‌কো মা‌র্কিনী অঙ্গরাজ্যের অ‌ভিমু‌খে। রেস্ট-‌রি‌ফিট পূর্ণমাত্রায় হওয়ায় আমা‌দের মনটাতে বেশ ফুরফু‌রে ভাব বজায় থাকায় তখন পর্যন্ত আকাশ ভ্রমণটা বেশ মজাই লাগ‌ছি‌লো।

এরই ম‌ধ্যে অ‌নেকটা হঠাৎ ক'রেই বু‌ঝি সূ‌র্যি মামা অত্যন্ত রহস্যজনকভা‌বে সবাই‌কে একরকম ফা‌ঁকি দি‌য়ে লোকচক্ষ‌ুর অন্তরা‌লে নিরু‌দ্দেশ হ‌'য়ে গে‌লো। তাই সূ‌র্যি মামার এরূপ নিঃশব্দ প্রস্হা‌নে আমরা সবাই এ মুহূর্তে যেন চরমভা‌বে ব্য‌থিত, বিমর্ষ ও হতবম্ভ হ‌য়ে গেলাম। 

চল‌বে............

শামীমা আহমেদ/পর্ব ২৯





শায়লা শিহাব কথন
অলিখিত শর্ত (পর্ব ২৯)
শামীমা আহমেদ 

উল্কা গতিতে,প্রায় এক নিমেষেই  রেস্টুরেন্ট "থাই এমারেল্ড" এর সামনে এসে শিহাব বাইক থামালো।আর বাইক থামতেই শায়লা ব্যাকসিট থেকে নেমে  হাতের শপিং ব্যাগগুলো আর শাড়ি ঠিক করে নিলো। শায়লা তার হ্যান্ডব্যাগ ও শাড়ির কুচিগুলো ঠিকঠাক করে নিচ্ছিল। শায়লা  বুঝতে পারছে না কেন এভাবে সব কিছু হচ্ছে।
তবে সব ভাবনা সে শিহাবের উপর ছেড়ে দিলো।জীবনের কোন একটা সময়ে সাহসী হয়ে উঠতে হয় আর সেটাই থাকে জীবনের  টার্নিং পয়েন্ট। শিহাব বাইকটি পার্ক করে শায়লার দিকে তাকালো। শিহাব একমনে তাকিয়ে রইল।  শায়লাকে আজ অন্যরকম সুন্দর লাগছে।
যদিও এভাবে দৃষ্টি  দিয়ে সে কোনদিনই দেখেনি।
বরাবরই একজন ভদ্র মহিলাকে  যেভাবে সম্মান জানাতে হয় সেটাই করেছে শিহাব। তবে আজ শাড়িটির রঙটায় শায়লাকে খুব মানিয়েছে।লিপস্টিকও বেশ মিলিয়ে দেয়া।  সাইড ব্যাগটি গোল্ডেন রঙের রোদের আলোয় চকচক করছে।বাহাতে কালো বেল্টের ঘড়িটাই যেন হাতের অলংকার হয়ে আছে।শিহাব এগিয়ে এলো। শায়লা পরবর্তী নির্দেশনার অপেক্ষায়। শিহাব রেস্টুরেন্টে ঢুকলো। শায়লা আজ শিহাবের পাশাপাশি হেঁটেই এগিয়ে গেলো। একটা অধিকার জন্মালেই কেবল পাশাপাশি হাঁটা যায়।

ঢোকার দরজায় অভ্যর্থনায় স্বাগতম জানানো হলো। ভেতরের স্পট লাইটগুলোতে একটা মায়াবী পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে। শিহাব শায়লা রেস্টুরেন্টের মাঝামাঝি একটি টেবিল ফাঁকা পেয়ে এগিয়ে গেলো। মৃদু আলো আঁধারিতে সবার চাপা স্বরে কথা বলা আর ওয়েটারদের ব্যস্ততায় চলাচল। একেবারে লাঞ্চের পিক টাইম চলছে।শিহাব শায়লাকে বসতে অনুরোধ জানালো। যেহেতু শিহাব আজ হোস্ট তাই তাকেই কাজটি করতে হবে। আচার ব্যবহারে শিহাব বেশ মার্জিত। শায়লা এ ক'দিনের পরিচয়ে সেটা বেশ বুঝেছে। অভিনয় দু'একদিন করা যায়।কিন্তু যেটা যার মজ্জাগত সেটা আপনিতেই বেরিয়ে আসে। শায়লা শিহাব মুখোমুখি বসলো।শায়লার  ভেতরে একটু  ইতস্তত  ভাব এলেও পরক্ষণেই পরিবেশের সাথে নিজেকে খাপ খাইয়ে নিলো। তার প্রতি শিহাবের
যতখানি আস্থায় আজ তারা এখানে  এসেছে তার প্রতিদানে শিহাবের সম্মান রক্ষা করাও তার দায়িত্বের মধ্যে পড়ে।
ওয়েটার এগিয়ে এলো। শিহাব মেনু চার্ট দেখে নিজের জন্য একটা থাই স্যুপ আর কোক অর্ডার করলো আর শায়লা কিছু বলার আগেই শিহাব শায়লার জন্য একটা ফুল কোর্স লাঞ্চ অর্ডার দিলো।শায়লা চোখের ভাষায় বাধা দিতে চাইলেও শিহাবের দৃঢ়তার কাছে নীরব রইল।
শিহাব শায়লাকে জানালো আজ সকালে বেশ নাস্তা করা হয়েছে।ইন ফ্যাক্ট একেবারেই ক্ষুধা নেই।তবুও লাঞ্চ টাইম  কিছু খাচ্ছি।তবে তুমিতো শপিং করে ক্লান্ত আরো সময় হয়তো বাইরে থাকবে।একটু ভরপেট কিছু খেয়ে নাও। আর তাছাড়া,বলেই শিহাব একটু থামল।শায়লা শোনার জন্য আগ্রহী হয়ে উঠলো।শিহাব বুঝতে পেরে কথা এগিয়ে নিলো। তাছাড়া আজ আমরা বেশ কিছুক্ষণ সময় এখানে বসবো। তোমাকে  আমার কিছু কথা বলার আছে শায়লা।তোমার খাওয়ার ফাঁকে ফাঁকে আমরা কথা বলবো। শায়লা ভেতরে শংকিত হয়ে উঠলো! কি বলতে চাইছে শিহাব? সে কি কোন সিদ্ধান্তে আসতে চাইছে, সেকি তবে রিশতিনার শূন্যতাটিতে আমাকে ভাবছে। শায়লার ভেতরে অস্থিরতা উঁকি দিচ্ছে।
শিহাব তাকে আশ্বস্ত করলো,না,না, তেমন ভয়ের কিছু নয়। তোমার আমার এই চলমান সম্পর্কটা ভালভাবে বুঝে নিতে।
শায়লা এবার কথা বলে উঠলো! কি রকম?
দেখো শায়লা, বর্তমান যুগে মোবাইলের কারণেই তোমার আমার পরিচয়।আর সময়ের সাথে আমরা একসাথে চলছি দেখা হচ্ছে কথা বলছি।কথায় কথায়া আমরা আমাদের নিজেদের জানিয়েছি, পরিবারকে চিনিয়েছি, সময়ে ব্যক্তিগত বিষয়গুলোও কেউই লুকাইনি। তবে,তুমি আমি কেউই অনুভুতিহীন নই। দুজনার মনের ভেতর নানান ভাবনার উঁকি দিতেই পারে। আমি তা অস্বীকার করিনা।কেননা যার যেখানে শূন্যতা সে সেটা সবসময়ই চাইবে পূর্ণ  করতে।আমরা সবাই ভালোবাসার কাঙাল।তোমার আমার অতীতে যা ঘটে গেছে তা আমাদের দুজনারই নিয়ন্ত্রণের বাইরে ছিল। কিন্তু সেটাকে অস্বীকারও করা যাবে না। তাছাড়া তুমিও একটা বন্ধনে আবদ্ধ।কানাডায় একজন তোমার অপেক্ষায়। পরিচয়ে শুরুতেই বলেছিলাম আমার প্রতি 
অন্য কিছু চাওয়া পাওয়ার আশা করা যাবে না। সম্পর্কটি বন্ধুত্বের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে। বিশ্বাস করবে কিনা জানিনা তুমি ছাড়া আর কোন মেয়ের সাথে আমি কথা বলি না।
শায়লা একমনে সব শুনে যাচ্ছিল।শিহাব কি বলতে চাইছে শায়লা বুঝলেও সে শেষটা শোনার অপেক্ষায়। 
শিহাব বলেই চলেছে, তবে তোমাকেও যে আমি কোন দূর্বল মূহুর্তে কাছে পেতে চাইনি মিথ্যে করে সেটা বলবো না। আর যখনই নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে যাচ্ছিল আমি খুব বুঝতে পারলাম তোমাকে আমি নিজের করে পেতে চাইছি। আর  ভেতরেও তাই নানান ইচ্ছারা ডালপালা মেলছে। একজন পুরুষ হয়ে এই একাকী জীবনে কাউকে পেতে চাওয়া   নিশ্চয়ই দোষের কিছু নয়।ঠিক তখনই আমি ভেবে নিলাম,নাহ, ভাবনাটা ঠিক হচ্ছে না। নিজেকে থামাতে হবে। তবে চলার শুরু হতে হয়তো সময় লাগে কিন্তু একবার তা চলতে শুরু করলে আটকানো কঠিন হয়ে পড়ে।

টেবিলে খাবার চলে এলো। শায়লার আর কিছুই ভালো লাগছে না। সে বেশ বুঝতে পারলো শিহাব কি বলতে চাচ্ছে।শিহাব বেশ গুছিয়েই সব বলেছে। ছেলেরাতো  কতভাবেই মেয়েদের সাথে মিথ্যে ভালবাসার অভিনয় করে আনন্দ ফুর্তিতে সময় কাটায়।তারপর আরেকজনকে পেলে তাকে ছেড়ে  যায়।কিন্তু শিহাব কখনোই তাকে সেভাবে,,, 
এই যে আজো এত সুন্দর করে, সুন্দর  একটা পরিবেশে এনে সব গুছিয়ে বলছে, শায়লা ভাবছে এ সম্মানটাইবা কয়জন দেখায়!  
তবে এই যে দুজনের আকুলতায় একই সময়ে একই অনুভব হওয়া সেখানেতো 
দুজন একই সাড়া পেয়েছি।কেন তবে সেটা হলো।কেন তবে শিহাবের যে রাতে প্রচন্ড  জ্বর এলো শায়লার তার কাছে ছুটে  যেতে ইচ্ছে হলো।কেন তবে একটা অজানা অচেনা মানুষ এত দ্রুত আপন হয়ে গেলো। কেন সে শিহ্যবের উপস্থিতি টের পায়,কেন দুজনের মান অভিমানে অভিযোগ করা,,
কথাগুলো শায়লার ভেতরে তোলপাড় করছে।
কিন্তু ওপ্রান্তে শিহাব যে থামছে না, সে বলেই চলেছে,,
শায়লা,আমাদের পথ ভিন্ন তবুও মনের যে আকুলতায় আমরা কাছে এসেছি সেটা মিথ্যে নয় আর কোনদিন তুমি বা আমি সেটা অস্বীকার করতে পারবো না।তবে সেটা এখানে এ পর্যন্তই থামাতে হবে শায়লা। আমরা শুধু খুব ভালো বন্ধু হয়েই থাকবো।
চাওয়া পাওয়ার ধাপ থেকে একটি ধাপ দূরে থাকবো। তবে পরিচয়টা থাকুক আজীবন। 
শায়লা গভীর ভাবনায় ডুবে আছে।
শায়লা তুমি কিছু খাচ্ছ না। সব ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে। শায়লা খেয়াল করলো টেবিলে স্যুপ সার্ভ করা হয়েছে। শিহাব হাত আগাতেই শায়লা স্যুপের কমন বাটি থেকে শিহাবের বাটিতে ক' চামচ স্যুপ তুলে দিলো সাথে নিজের জন্যও নিলো।শিহাব এক দৃষ্টে শায়লার দিকে তাকিয়ে রইল। শায়লার চোখ জলে ভরা।  তবুও মুখে হাসি ধরে রাখার চেষ্টা।শিহাব বেশ বুঝতে পারছে শায়লার ভেতরে কি চলছে। শিহাব ভুলেই গেছে সে কোথায় বসে আছে।কল্পনায় সে শায়লাকে তার বাসার ডাইনিং এ ভাবছে।


চলবে....

শান্তা কামালী/৩৮ তম পর্ব 





বনফুল
( ৩৮ তম পর্ব ) 
শান্তা কামালী

ঠিক এভাবেই জুঁইয়ের ট্রিটমেন্ট চলছে.... কখনো সকালে কখনো বিকালে নিরবচ্ছিন্ন মমতা মাখানো পলাশের  হাতের ছোঁয়ায় রুগী দ্রুত আরোগ্যের পথে। 

এই আসা-যাওয়ায় জুঁই পলাশের সম্পর্ক আরো গভীরতায় পরিণত হয়েছে।
শুধু গভীরতা নয়,জুঁই য়ের মন যে চায় আরো নিবিড়তা;
পলাশ বলে, এখন নয়।তোলা থাক ওড়না ঢাকা রেশমি চুড়ির বাক্সে সেদিনের অপেক্ষায়। 
জুঁই য়ের ঠোঁট দুটো কাঁপে অভিমানে। পলাশ ওর হাতের আঙুলগুলো টেনে দেয়,কব্জিতে চুড়ি গুলো নাড়াচাড়া করে রিনঝিন শব্দ করে মন ভোলায়।
 এদিকে জুঁইয়ের বাবা-মা দুজনেই বুঝলেন এর চেয়ে ভালো ছেলে খুঁজে বের করা তাদের পক্ষে সম্ভব হতো না। 
মেয়ের পছন্দের উপর তাদের  নির্ভরতা  ক্রমশ বেড়ে গেলো।
 
প্রতিদিন সকালে এসে জুঁইয়ের নাস্তা,ঔষধ খাওয়ানো থেকে শুরু করে সবরকম দায়-দায়িত্ব পলাশই পালন করছে। 
একসপ্তাহ পরে একদিন সৈকতের ফোন। পলাশ ওকে সমস্ত ঘটনা জানায়।জুঁইয়ের অসুস্থতার খবর পায় অহনাও। কয়েক দিন পরে  অহনা পাগলের মতো ছুটে এলো,ঘড়িতে তখন এগারোটা 
বাজে।এসে নিচে ড্রয়িং রুমে আন্টি আঙ্কেলের সাথে দেখা, অহনা বললো জুঁইয়ে এই অবস্থা আমি আগে জানতে পারিনি। সৈকত আমাকে কয়েকদিন আগে জানাতেই মনটা ভীষণ খারাপ হয়ে গেলো। মনোয়ারা বেগম বললেন, মা জুঁইয়ের এই অবস্থায় মাথায় আসেনি কাউকে খবর দেবার কথা।  আজ দশদিনের উপরে আমি রান্না ঘরে যাই না ময়না যা পারছে তাই রান্না করে টেবিলে দিচ্ছে....। 
পলাশ ছেলেটা এতো খাটাখাটুনি করছে ওর জন্য যে ভালো কিছু রান্না করে টেবিলে দেবো সেটা ও পারছি না। 
অহনা বললো স্যরি আন্টি, আঙ্কেল, আমি উপরে যাচ্ছি। জুঁই য়ের আব্বু বললেন, হুম যাও।
 দ্রুত উপরে উঠে এলো অহনা। জুঁই শুয়ে আছে, পলাশ চেয়ারে বসে আছে। অহনা জুঁইয়ের কাছে গিয়ে, জুঁইয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললো জুঁই তোর এই অবস্থা আমি একবার জানতেও পারিনি! তাও দুদিন আগে সৈকত ফোন করে বললো.... 
পলাশ অহনাকে দেখে বললো তুমি এসেছো ভাল হয়েছে, তুমি জুঁইয়ের কাছে থাকো। আমার কিছু কাজ আছে, ওগুলো সেরে বিকালে আসবো, তোমরা গল্প করো। আর দুপুরে খাওয়ার পরে ঔষধ আছে খাইয়ে দিও, এই বলে পলাশ বেড়িয়ে গেল।

 আরো দু'চারটে ভার্সিটিতে এ্যাপ্লাই করার বাকি ছিলো, আজ যখন অনেকটা সময় পেলাম কাজগুলো আজই করে নিই। 
পলাশের কাজ শেষ করে বাসায় ফিরতে চারটা বেজে গেল। দ্রুত শাওয়ার শেষ করে, তাড়াহুড়ো করে খেয়ে বেরোলো। 
দুই বান্ধবীর অনেক কথা জমা ছিলো একে অপরকে বলে হালকা হলো।
পলাশ পাঁচটায় জুঁইয়ের বাসায় পৌঁছোতেই অহনা নিজের বাড়ি চলে গেলো।

রাবেয়া পারভীন /১১তম পর্ব)





স্মৃতির জানালায় 
(১১তম পর্ব)
রাবেয়া পারভীন 



                              বুকের ভিতরটা দারুনভাবে তোলপাড় করে  উঠল মাহতাবের। দম বন্ধ হয়ে আসতে চাইছে।  দুই হাত দিয়ে নিজের মুখ ঢেকে  ফেলল  সে।  মনে  হলো শবনমের  দৃষ্টি  থেকে নিজেকে  আড়াল করতে পারলেই যেন  বাঁচে। এবার  ঝাঁঝালো  কন্ঠে  শবনম  আবার বলল
- চুপ করে আছো কেন ?  জবাব দাও।
মাহতাবের  দুই  চোখ ভরে গেল  পানিতে। কি জবাব  দেবে  সে  শবনমের  প্রশ্নের। ওর  প্রশ্নের  উত্তর  দেবার মত কোন জবাব সে খুঁজে  পেলনা। হাত দিয়ে মুখ ঢাকা অবস্থায়  সে টের পেল  শবনম  তাঁর  খুব  কাছে  এসে দাঁড়িয়োছে। মাহতাবের  মাথায়  একটা  হাত  রাখল  সে। এই অল্প  একটু স্পর্শ , শবনমের  পদ্মকলির মত আংগুল  ছুঁয়ে আছে  মাহতাবের  চুল। ওর শারা শরীর  থর থর করে কেঁপে  উঠল। শরীরোর প্রতিটা লোম খাড়া হয়ে গেছে। মনে হচ্ছিলো সে  খাট থেকে নীচে পরে  যাচ্ছে । শুধুমাত্র। মাথায় হাত রেখেই  মাহতাবের  পুরো অবস্থাটা  টের  পেল  শবনম।  আস্তে আস্তে  বলল
- কেন এত ভীতু  তুমি ?  নিজের জিনিস সাহস করে চাইতে পারোনা ?
ফুপিয়ে কেঁদে উঠল  মাহতাব।  ডানে বায়ে মাথা দুলিয়ে বলল  
- না শবনম না, সে সাহস আমার নেই।
- কেন নেই ?  নিজের  জিনিস  অন্যে নিয়ে গেলেও নেই ?  
- না তোমাকে চাইবার যোগ্যতা  আমার নেই
- আমার দিকে তাকাও মাহতাব , তাকিয়ে বলো  আমাকে চাওনা ?
মুখ থেকে হাত সড়িয়ে করুন দৃস্টিতে  শবনমের দিকে তাকালো মাহতাব। শবনম তার ডান হাত প্রসারিত  করে দিল  মাহতাবের সামনে। বলল
- ওদের দেয়া এই আংটি  তুমি হাত থেকে  খুলে দাও,  তারপর আব্বার সামনে  গিয়ে বল, তুমি আমাকে চাও।
বিস্ময়ভরা চোখে শবনমের  মুখের দিকে তাকিয়ে রইল মাহতাব।  শবনমের  চোখে  কোন দ্বিধা নেই  কোন মলিনতা নেই।  তার সিদ্ধান্তে  সে একেবারে  অটুট।  কিন্তু  যে স্যারর তাকে  নিজের ছেলের মত ভালোবাসেন, তাকে বিশ্বাস  করে  নিজের  মেয়ের  সাথে  মিশতে  দিয়েছেন  সেই  দেবতুল্য  মানুষটির কাছে গিয়ে  সে  কি করে এই অন্যায়  আবদার  করবে ?  না না  এটা সে মরে গেলেও পারবেনা । সে অসহায়ের মত শবনমের মুখের দিকে তাকিয়ে রইল। আবার তাগিদ দিল শবনম।
- কৈ  খোলো  আংটি !  
- না শবনম  আমি এটা  পারবোনা।
- তুমি তো  আমাকে  ভালোবাস তাহলে কেন পারবেনা ? সত্যি  করে বলো  তুমি আমাকে ভালো বাসোনা ?
-অস্বীকার  করলে মিথ্যা বলা হবে
-তাহলে ?  
-তবুও। আমি পারবোনা।
- তবে  আমার এতদিনের  ভালোবাসা কি ভুল ?  আমি কি আমার প্রানের  অর্ঘ  ভুল মানুষকে  সমর্পণ  করেছি ?
- হয়তো ।
মাহতাবের  কথায় একটা  দীর্ঘশ্বাস  ছাড়ল শবনম  তারপর  নিজেই নিজের হাতের আংটি  খুলে ছুঁড়ে  দিল  টেবিলের  উপর। তারপর বল্ল
ঠিক আছে তোমাকে কিছু বলতে  হবেনা  আমিই আম্মাকে বলব  যা বলার ।
মাহতাব  বলল
- কিন্তু  খালাম্মা যে  আমাকে তোমার কাছে পাঠিয়েছিলেন  তোমার মতামত জানার  জন্য !  
- ওহ্ হো তাই নাকি  তাহলে যাও  গিয়ে বলো  এ বিয়েতে  আমার  মত নেই।
- এসব কি তুমি  ভেবে চিন্তে বলছো ?
- অনেক আগেই৷ ভেবেছি  আর ভাবতে পারবোনা।
দ্বীর্ঘশ্বাস ফেলে  শবনমের ঘর থেকে বেরিয়ে  খালাম্মার  ঘরের  দিকে গেল  মাহতাব। রাগে দুঃখে  ওর চলে যাওয়া  পথের দিকে  চেয়ে রইল শবনম।



 চলবে....

আমিনুর রহমান জুন্নুন  ( ইংল্যান্ড লুটন শহর )





দয়াল


আমি একদিন রইবোনারে স্বজন 
দুনিয়ার মাজারে
দয়াল যে দিন ডাক দিবেন
মায়ার বাঁধন ছিন্ন করে
চলে যাব অন্ধকার মাটির ঘরে
ভাই-বন্ধু স্বজন ছিলাম মনে রেখে 
যেও আমার কবর জিয়ারত করে। 

স্বজন সাথী যতন করে
বিদায় দিবে কান্না করে
মাটির কাজ শেষে 
সবাই যাবে আপন ব্যস্ত তরে
চল্লিশ কদমে দেবে মাটি চাঁপা 
হিসাব নিবেন করাগণ্ডা করে। 

দিন দুনিয়ার স্বাদ পেয়ে 
যেওনা অবিচার করে
ঘর বাড়ি সবই রবে
যাইতে হবে আগে পরে
হিসাব করে চলরে মন 
যাইতে হবে সবই ছেড়ে। 

জুন্নুনের অন্তর কাঁপে 
দেহের হাওয়া যাবে উড়ে
পাড়া পড়শী আসবে 
নিতে পালকি করে 
থাকে যদি নেক আমল 
সাক্ষী হয়ে থাকবে ঘিরে।