১১ সেপ্টেম্বর ২০২১

মোঃ হা‌বিবুর রহমান এর লেখা ''সহধ‌র্মিণীর হুঁ‌শিয়ারী বার্তা'' (৩য় পর্ব)

ঘরের ভিতর থেকে কবি ধরেছেন দৃশ্যকথা গদ্যের ভাষায় ধারাবাহিক ভাবেই প্রকাশিত হয়ে চলেছে তাঁর অসাধারন সৃষ্টি। লিখতে সহোযোগিতা করুন লাইক ও কমেন্ট করে । পত্রিকার পক্ষ থেকে সকল পাঠক পাঠিকা লেখক লেখিকা সকলের জন্য রইলো অনন্ত শুভেচ্ছা



সহধ‌র্মিণীর হুঁ‌শিয়ারী বার্তা 
(য় পর্ব)


রবীন্দ্রবলয়ের জা‌লে আট‌কে পড়ার ভয় এখন অ‌নেকটাই কা‌টি‌য়ে উ‌ঠে‌ছি। তাই প্রতি‌দিনই দুএক কলম কিছু না কিছু লেখার চেষ্টা ক‌রে যা‌চ্ছি। কোন কোন দিন কোন বিষয় বস্তু নির্বাচন না ক‌রেই লিখ‌তে শুরু ক‌রে দেই। আবার কোন কোন দিন ই‌চ্ছেমত যে‌কোন এক‌টি বিষয়‌ বা নি‌র্দিষ্ট একটা শব্দ‌কে পুঁ‌জি ক‌রেই লেখা শুরু ক‌রি। 

সহধ‌র্মিণী আমার প্রতি‌টি লেখার বি‌শ্লেষণ ও মূল‌্যায়ন ক‌রতঃ খাবার টে‌বি‌লে তাঁর মূল‌্যবান মন্তব‌্য আওড়াতে কোন‌দিনই ভু‌লেন না। এভা‌বেই লেখনীর কাজ‌টি এ‌গি‌য়ে চ‌লে‌ছে। অন‌্যদি‌কে শুভাকাঙ্খীগণ ও আপনজন ছাড়াও ‌প্রিয় ফেইসবুক বন্ধুরা আমা‌কে সদা উৎসা‌হ যু‌গি‌য়ে যা‌চ্ছেন ও অনুপ্রা‌ণিত ক‌রে চ‌লে‌ছেন তা‌দের অসাধারণ আর চমৎকার মন্তব‌্য আর মতামত জা‌নি‌য়ে।

ক‌্যা‌ডেট ক‌লে‌জে পড়াকালীন সম‌য়ে বন্ধু সাইদুলকে দে‌খে‌ছি এসএস‌সি বোর্ড পরীক্ষার সময়ও ক‌বিতা লিখ‌তে। অা‌মি দে‌খে অবাক হতাম তার এ দুঃসাহ‌সিকতা দে‌খে। মা‌ঝে মা‌ঝে ক্লাশ চলাকালীন সম‌য়ে তা‌কে দেখতাম অন‌্যমনস্ক হ‌য়ে শিক্ষ‌কের কথায় ম‌নো‌যোগ হা‌রি‌য়ে আ‌র্টিকেল লিখ‌তে। বন্ধু সাইদুল অত‌্যন্ত ভ‌াল মা‌পের একজন লেখক। বর্তমা‌নে সে কানাডায় থা‌কে এবং সেখান থে‌কেও নিয়‌মিত সা‌হিত‌্য চর্চা জারী রে‌খে‌ছে।

নিত‌্য সংঘ‌টিত জীবনধর্মী ও সামা‌জিক বিষয়া‌দির উপর লিখ‌তে আ‌মি স্বাচ্ছন্দ‌বোধ ক‌রি। সামা‌জিক রী‌তিনী‌তিতে ‌বি‌ভেদ, সদা দ্বন্দ্ব ও বৈষ‌্যমতাকে নি‌য়ে মানব দর্শনের দৃ‌ষ্টি‌তে সেগু‌লি‌কে লেখনীর মাধ‌্যমে তু‌লে ধর‌তে আনন্দবোধ ক‌রি।

ধর্মীয় আ‌ঙ্গি‌কেও কিছু বক্তব‌্য লেখনীর মাধ‌্যমে প্রকাশ করার চেষ্টা অব‌্যাহত আ‌ছে। যে লেখনী‌তে আ‌ছে দিক নি‌র্দেশনা, সমাজ গড়ার উপ‌দেশ, মানু‌ষের ম‌ধ্যে সামা‌জিক দূরত্ব ঘোচনার উপায় এমন শিক্ষামূলক ও উপ‌দেশধর্মী লেখনীর মাধ‌্যমে মানুষ‌কে উজ্জী‌বিত করার ল‌ক্ষ্যে এমন মহৎ কাজ‌টি কর‌তে নিঃস‌ন্দে‌হে খুবই ভাল লা‌গে আর দারুন আনন্দ‌বোধ ক‌রি। 

সহধ‌র্মিণী মা‌ঝে মা‌ঝেই আজও বেশ খোঁচা দি‌য়েই কথা ব‌লেন আমার লেখাকে কেন্দ্র ক‌রে। তি‌নি একজন অত‌্যন্ত ধর্মপরায়ণ নারী আর তাই ধর্মীয় আ‌ঙ্গি‌কে লেখা‌কে তি‌নি সদা অ‌ধিক প্রাধান‌্য দি‌য়ে থা‌কেন। মা‌ঝে মা‌ঝে তি‌নি মন্তব‌্য ক‌রে ব‌লে বসেন "তোমার এ লেখা প‌ড়ে কয়জন মানুষইবা সৎপ‌থে আস‌বে আর কয়জনইবা তোমার লেখার বক্তব‌্য অনুযায়ী উপ‌দেশ মে‌নে চ‌লে তদানুযায়ী জীবনিপাত কর‌বেন? সমা‌জের সিংহভাগ মানুষের যখন পদস্খলন ঘ‌টে‌ছে তখন তোমার এ লেখা দি‌য়ে কি পু‌রো সমাজ‌ তথা জা‌তি‌কে একাই ঠিক ক‌রে ফেলতে পার‌বে ? এমন অ‌নেক প্রশ্নবা‌নে তিনি প্রায়শই আমা‌কে কু‌পোকাত ক‌রে ফেল‌তে উদ‌্যত হন। আ‌মি তাঁ‌কে এই ব‌লে বুঝি‌য়ে তাৎক্ষ‌ণিকভা‌বে শান্ত ক‌রি যে, দে‌খো বিন্দু বিন্দু জলকণা মি‌লেই তো সাগর অত‌লের সৃ‌ষ্টি হয়।











ধারাবাহিক ৩য়  কিস্তি


 

নাজমা আক্তার


অন্ধকারের হাসি


 

চারিদিকে নেমে আসছে অন্ধকার,

 চলছে জীবনের বেঁচে থাকার লড়াই। 

করুন আর্তনাদ আর ক্ষুধার্ত মানুষের কষ্টের ছাপ যেন স্পষ্ট ভাবে ফুটে উঠেছে প্রতিটি কোনায় কোনায়। 

প্রতিদিন মৃত্যুর সাথে লড়তে লড়তে মুখ থুবরে পড়ে থাকে মাটিতে, 

রাস্তার পাশে পড়ে থাকা মানুষগুলো 

রোদে তাপে ঝলসে যায় তাদের শরীর 

তবুও তাদের মুখে তৃপ্তির হাসি,

এভাবেই তারা অনেক কিছুই বুঝিয়ে দিচ্ছে  আমাদেরকে ।


সোহেল চৌধূরী


প্রেমাস্পদা, প্রেম চাইছি মধুমিলনে


হে অতলান্তিক বিকেলের রোদ, 
তুমি ক্ষয়ে ক্ষয়ে নিঃশেষ হওয়ার আগে,
আজ আরো সুদীর্ঘ হতে চাইবে।
আমার অনুভূতির রেখা প্রসারিত হচ্ছে, 
প্রসারিত হচ্ছে রমণীয় সৌরভে।
আমার কোমল প্রেম, 
আমি জানি ঠিক এই মুহুর্তে তুমি আমার কথা ভাবছো।
তোমার চোখ জোড়ায় বিরাজিত আমি। 
আমার গোপন প্রেমাস্পদা, আমার বুকের থরথর কাঁপন।
আমি তোমাকে দেখতে পাচ্ছি। 
আমি, চিন্তনের রৈখিক সম্পাত এঁকেছি।
একশো কোটি মাইল দূরের, 
সহস্র যুগ আলোক দূরত্বের তোমাতে,
আমি দেখছি, তাকিয়ে আছি ঐ নিলাজ কপোলে কিয়দ ভাবনা রেখা।
গভীর কোঠরে জমা তপস্যার ঘুমহীন রাত্রির মায়া। 
তোমার অধর ছুঁয়ে গেছে আমার চিবুক।
চোখ বুজে আমি অনুভব করছি, 
আমি ভীষণভাবে অনুভব করছি। 

গোধূলি রঙ, ধুসরিত পশ্চিমের আকাশকে প্রগাঢ় রঙিন করে নাও।
মাতম রাত্রির বিনির্মান ঘটবে। 
শূভ্র-জোৎস্না ভেজাবে ঐ ঘন চাঁদোয়া।
আমি ভালোবাসতে চাইছি,
তোমার বুকের তীব্র আবেগ,
সলাজ ঠোঁটের কোণে স্মিত হাসি।
শ্রাবস্তীর নিখাদ ওষ্ঠাদেশের আদ্রতায় ভিজতে চাইছি দীঘল যামিনী।
বিভাবরী স্বপ্নচারিনী, স্নিগ্ধা কামিনী, আজ হও রুক্মিণী।
কুন্তলীন মেখে নিও কেশের  ডগায়, 
আজ রাতভর অক্ষরেরা লহরী সাজাবে। 
ও সাঁকি, শব্দের প্রেমার্ঘ্য ঢেলে দাও।
নেশাতুর হই,
সুধা সরোবর হতে তুলে আনা প্রেমকাথা তব পুরষ্কার হোক সুদীর্ঘ অপেক্ষার মধুমিলনের ক্ষণে।


রুকসানা রহমান




খেয়ালি কবিতার অপ্সরী


আমার মতো বেশ ছিলাম কবিতার স্বপ্নভূমিতে
স্বপ্ন বুনে ভাবনার অতল নিরবতায় তন্ময় মনে
সেদিন রাতে সাজানো কুঁড়ে ঘরের আঙ্গিনায় কে ?
 গুপ্ত আলোক আঁধার থেকে ভেসে আসছে এক 
 মহাসমুদ্রের ডাক! 

আমারই কবিতায় আমি একদ্বীপ তার চোখের সৈকতে ভাসিয়ে নিয়ে গেলো নক্ষত্রপুন্জের দিকে।
আমি হারিয়ে গিয়েছিলাম তার দুহাতের ভিতর
কি মায়াময় সেই স্পর্শ।
 
আমি যেনো তাকে দেখার মুহূর্তের প্রতীক্ষায় ছিলাম
দীর্ঘ আলোর সূর্য পাঠ করছে আমার কবিতা
আর আমি যাত্রা করছি রাতের ভিতর অন্য এক পৃথিবীর তরঙ্গায়িত জলমালায় জড়িয়ে
আমার ওষ্ঠে এঁকে দিলো দুর্লভ কালের রেখা।

তারপর সে রেখে গেলো আমার জন্য আড়াল
অচিন কাব্যের এক পৃথিবীর আলিঙ্গনে উত্তাল ঢেউ
বাতাস বয়ে নিয়ে যায় তার চোখের চারুপ্রান্তে
সেকি ভালোবাসার শূন্যতার কারিগর 
নয়তো কেন শূন্যে বয়ে যায়,নাকি ভালোবাসার মহাপ্লাবন ! 

কান পেতে শুনি, বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকি
আমার শব্দ যদি ফের মিলনের পথ খুলে দেয়
কবিতার ভিতর বদলে যাবে পৃথিবীর সমস্ত রজনী
সেই রজনীর ভিতর সবই যেনো খেয়ালি কবিতার মৃদ্রানৃত্য এক অপ্সরী 
তারই ভিতর আড়ালে স্পন্দন খুলে রাখে।

তাই তো আমি ভালোবাসায় ভেঙে টুকরো -টুকরো
হয়ে পড়ি,
অবাধ্যতায়,ক্ষয়, ধ্বংসের ভিতর ভ্রান্তির মায়ার প্রত্যাশায়
 তার ছায়ায় জীবনের রূপ মিলিত হয় আপন আত্মায়
তাকে ছুঁয়ে যায়  সপেঁ দেওয়া এক কাদামাটির নিছক
শরীরী কাল্পনিক ঐশ্বর্য 
তারই ভিতর অদৃশ্য  আমিই কি একটি কবিতা!





 

শহিদ মিয়া বাহার


মানুষের কোন সূত্র নেই



আকাশের কাছে যেয়ে বলেছি 

হে আকাশ 

দু:খ থাকে যদি পরিবর্তনের তবে তুমি মানুষে রূপান্তরিত হও

মানুষের মত পরিমন্ডিত অভিনেতার রাজপোষাকের শিল্পীত শ্লোক হও

পরিচ্ছদ পাল্টানো বিপ্লবী না হয় প্রেমিকের অভিনিত অভিজ্ঞানের আকর,

মনোরঞ্জিত কন্ঠের উথাল পাথাল হও!

অত:পর তোমাকে নিয়ে চন্দ্র-উৎসব হবে গীতশ্রী উদ‍্যানে, প্রলুব্ধ পৃথিবীর!

হায়---আকাশ সরে গেল আমার কাছ থেকে একটু একটু কোরে

আকাশের সূত্র আছে জানাল;  পরিবর্তনের!


পাহাড়ের কাছে যেয়ে বলেছি 

হে পাহাড় 

দু:খ থাকে যদি পরিবর্তনের তবে তুমি মানুষে রূপান্তরিত হও

মানুষের মত যুদ্ধবাজ না হয় প্রতারক চোখের টিউলিপ সৌরভ, 

লজ্জাহীন মুদ্রায়িত ঠোটের মোহিত সংলাপ হও!

অত:পর তুমি পূজোয় পূজোয় শাণিত হবে

তোমাকে নিয়ে তোপধ্বনি হবে প্রার্থনায়

বন্দনায় বন্দনায় মিছিলের পর মিছিল।

হায়---পাহাড় সরে গেল আমার কাছ থেকে একটু একটু কোরে

পাহাড়েরও কানুন আছে জানাল 

নিয়ম আছে স্থিরতার!


সূর্য, বৃক্ষ, মৃত্তিকা, তরুলতা

সমুদ্র থেকে মহাসমুদ্রের 

জনান্তিকে জেনেছি

সূত্রহীন পরিবর্তনে স্থির থাকে স্বার্থহীন গতিরেখা তাদের!


অথচ পরিবর্তনশীল চর্চিত মানুষের হে বিধাতা 

রূপ রূপান্তরের কোন সূত্র নেই!


হে পৃথিবী

আজো আমি তোমার চলন্তিকায় আরণ‍্যক রাহাগির

জীবের মতই একটি আবিষ্ট জীব হয়ে আছি

এখনও ঈশ্বরের মানুষ হয়ে উঠিনি!


ফরিদা আলম


এই তো সেদিন



ভিজতে চাই বলতেই টুকরো টুকরো মেঘগুলো,একত্র হয়ে মুহুর্তে অমৃত ধারায় আমায় ভিজিয়ে দিত।
সুর্য্যিমামার তীব্রদাহে পুড়েও কাটিয়ে দিতাম ঘন্টার পর ঘন্টা খেলার নেশায়, মিনতি করে বলতাম,মাম্মা একটু তো ছায়া দাও,
মনে হতো সঙ্গে সঙ্গে সূর্যের তীব্রতা লুকিয়ে যেতো মেঘের আড়ালে, 

এখন আর আকাশ কথা শুনেনা,সাঁঝের বেলায় রাঙা গোধূলি পেখম মেলেনা,
সাগর নীলিমায় অচেনা পাখিটা ভরষা হারায়।মেঘেরা সোনালী রৌদ্দুরে সোনাঝরা হাসি হাসেনা।
মামাটাও কেমন যেন বদলে গেছে।
বিদ্যুতের ঝলকানিতে জোছনা আলো ছড়ায় না।

সুভাসিত চাদর বিছানো অভিমানী বকুল শুকায়,ভোর শেষ হয়,ফুল কুড়ানি ঘুম ভাঙ্গে না,
হাসনা হেনার গন্ধে সর্পরাজ নেশায় মাতোয়ারা হয়না।সব কিছুতেই না, নিষেধ,ভেজাল--এইতো যুগের অবস্থান্তর।

কিছুতেই এখন আর মন টলেনা,কি প্রয়োজন এমন সভ্যতার!
আমি চাই আবার সেই অসভ্যতা---
ইচ্ছে মতো পুড়ে যাবো,ভিজে যাবো,
হাসবো কাদবো,গন্ধ নিয়ে মাতাল হব।নিষেধ অমান্যে,কারো বকুনি খাবার কারন হবো।

দিন পেরিয়ে সন্ধ্যে বেলা উফ্ আহ্ চুলের ঝট ছুটাতে ব্যস্ত হব,পড়ার টেবিল ফাকি দিয়ে চোর পুলিশ খেলায় মত্ত রব।চার দেয়ালের ভিতর মশারীর আরেক দেয়াল টানিয়ে ভুত পেত্নীর গল্প শুনে ভয়ের বাহানায় মায়ের বুকে মুখ লুকাবো।

স্মৃতিগুলোতে একটু ছায়া ও পড়েনি,তবু স্বল্পক্ষনের জন্য ও ফিরে পাইনা সেই দিনগুলো। বড্ড্ ইচ্ছে করে ফিরে যেতে সেই সময়টাতে।