২১ ডিসেম্বর ২০২১





উপন্যাস 


টানাপোড়েন ৭৩
'ধায় যেন মোর সকল ভালোবাসা'
মমতা রায় চৌধুরী



রেখা খুব তাড়াতাড়ি কাজগুলো সেরে গেল পার্থদের বাড়ি। রেখা গিয়ে দেখছে পার্থ মাসিমার পাশে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে যাচ্ছে আর বলছে আমি তো আছি মা তোমার চিন্তা কি?
মাসিমা মাঝে মাঝে ডুকরে ডুকরে কেঁদে উঠছেন
আমার শুভ টা আর কোনদিন আসবে না রে? আদর করে মা বলে ডাকবে না? আমার কলিজা আমায় ছেড়ে চলে গেছে ।আমি কি করে বাঁচবো?
পার্থ বলছে 'মা আমি কি তোমার কেউ নই? আমি কি তোমার সন্তান নই?'
মাসিমা একদৃষ্টিতে পার্থর দিকে তাকিয়ে থাকে আর চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়তে থাকে। এক সময় পার্থর হাত দুটোকে কাছে টেনে নিয়ে বলেন' বাবা তুই তো আশা ভরসা। তুই তো আছিস বাবা আমার শিবরাত্রির সলতে।'
তখন পার্থ বলে 'তাহলে তুমি কি চাও না আমি ভাল থাকি?
মাসিমা বললেন 'সব মায়েরা চায় তার সন্তান ভালো থাকুক।
পার্থ বলল' আমি কি চাই সেটা তুমি জানো না?'
মাসিমার চোখ দিয়ে জল পড়তে লাগলো।
পার্থ বলল' আমি চাই তুমি আবার আগের মত স্বাভাবিক ছন্দ ফিরে এসো।'
রেখা বলল 'পার্থ ঠিকই বলেছে মাসিমা। জানি অত সহজ নয় ।কিন্তু তাহলেও পার্থর  কথা ভেবে আপনাকে স্বাভাবিক ছন্দ ফিরতেই হবে।'
মাসিমা হাউ হাউ করে কেঁদে বললেন' আমি কি করে পারব বলো ?তোমার মেসোমশাই ছেড়ে চলে গেলেন আবার ছেলেটাও...।'
রেখা বললো 'জানি তো কিন্তু তা হলেও জীবন তো থেমে থাকে না। সুখ দুঃখ ,হাসি কান্না 
শোক তাপ নিয়েই জীবন। এভাবেই চলে কান্নাহাসির-দোল-দোলানো পৌষ-ফাগুনের পালা'।
মাসিমা বললেন 'আমি জানি বৌমা কিন্তু আমি বেঁচে থাকতে আমার ছেলে ...এটা আমি ভাবতে পারছি না।
হাউমাউ করে কেঁদে বললেন এতটা সহজ নয়।'
রেখা বলল 'কিন্তু আপনাকে তো ভাবতেই হবে। এখন আপনার সামনে ভবিষ্যৎ তার কথা না ভেবে অতীতটাকে নিয়ে আপনি ভাবছেন মাসিমা?'
মাসিমা কেঁদে কেঁদে বললেন 'চেষ্টা তো করছি ।পারছি কোথায়?'
রেখা বলে রবি ঠাকুরের ওই কবিতার লাইন মনে করুন
"সত্য  সে কঠিন।'
আবার তিনি বলেছেন 'আমৃত্যুর দুঃখের তপস্যা এ জীবন।'
এই সত্যটা উপলব্ধি করুন।
মাসিমা বললেন' বাস্তব বড় কঠিন বৌমা।'
রেখা বলল' আমিও তো সেই বাস্তবের কথাই বলছি মাসিমা'।
রবি ঠাকুরের ভাষায়-
'সে কখনো করে না বঞ্চনা'।
মাসিমা এবারে রেখার হাত দুটো ধরে বললেন 'আমি চেষ্টা করব বৌমা।'
রেখা বলল' বলছিলাম না পার্থ তোমাকে ।মাসিমার মনের বল অনেক বেশি ।সেই জোরেই মাসিমা এবার ঘুরে দাঁড়াবেনএই আশা রাখি। '
পার্থ ঘাড় নাড়তে লাগল।
পার্থ বলল 'বৌদি মা কে ছেড়ে তো এইজন্য আমি কোথাও যেতেও পারছি না।'
রেখা বলল' পার্থ চিন্তা করো না। তোমাদের কাজের মেয়েটা তো আসছে না?'
পার্থ বলল 'ও তো আমার যবে থেকে জ্বর তবে থেকেই আসছে না।'
রেখা বলল 'সব কাজের মেয়েগুলোই না একই ধরনের হয়।'
পার্থ বলল বৌদি তাহলে আপনি মায়ের কাছে থাকুন আমি একটু কাজগুলো সেরে আসি।'
রেখা বলল 'ও শিওর। আরও বলল শোন আমি খাবার বাড়িতে রেডি করছি ।আমি পাঠিয়ে দিচ্ছি মাসিমার জন্য?'
পার্থ বলল' ঠিক আছে মা খাবে।কিন্তু আমার জন্য তো পাঠাতে পারবে না। কারণ আমি  তো হবিস্যি করবো।'
রেখা বলল 'ও ভুলেই গেছি ।তুমি তো কাজটা করবে হ্যাঁ।'
পার্থ বলল 'বৌদি তাহলে এগোই গো?
রেখা বলল' হ্যাঁ ভাই এগোও। হবিস্যির তো  একটা নির্দিষ্ট টাইম আছে।'
এরমধ্যে রেখার ফোন বেজে উঠলো' ধায় যেন মোর সকল ভালোবাসা, প্রভু তোমার পানে..।'
রেখা ফোনটা রিসিভ করে বলল 'হ্যালো বলো?'
মনোজ বলল 'ওই ভদ্রলোক আবার এসেছে?'
রেখা বলল 'কে?'
মনোজ বলল' আরে মিলির বাচ্চাদের নেবে বলে যে বলেছিল।'
রেখা বলল 'ও বাবা লোকটা পাগল করে দেবে গো?'
মনোজ বলল' কি বলবো বলো?'
রেখা বললো 'কি বলি বলো তো?'
মনোজ বলল 'আমি বলেছি আমি বাচ্চার ব্যাপারে কিছু বলতে পারব না।'
রেখা বললো 'তা ওই ভদ্রলোক কি বললেন?'
মনোজ বললো 'ও বাবা ,সে তো জেরা  করছে আপনাদের বাড়ীর বাচ্চা আপনি বলতে পারবেন না তাহলে কে বলবে বলুন?'
রেখা তো কপালে হাত দিয়ে বললো হায়রে কপাল বলে কি?'
মনোজ বলল 'হ্যাঁ গো এরকমই বলছেন?'
রেখা বলল 'বলো বাচ্চার ব্যাপারে কথা বলতে হলে আমার স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলতে হবে?'
মনোজ বলল'ঠিক আছে তাই বলে দিচ্ছি।'
রেখা বলল' শোনো শোনো' এর মধ্যে ফোন কেটে গেছে।
পার্থ বলল' কি হয়েছে বৌদি?'
রেখা বলল 'আর বোলো না ভাই ,মিলির বাচ্চাদের নেবে বলে নাছোড়বান্দা।'
পার্থ বলল 'কি সুন্দর হয়েছে বেবিগুলো গো।'
রেখা বলল 'হ্যাঁ গো মিলির বাচ্চা মাতৃহৃদয় তো একটা আলাদা কাজ করেই।কিন্তু ওদের সঙ্গে থেকে থেকে না আমারও কেমন যেন হয়।যখনই কেউ বলে যে বাচ্চা নেবে আমার না হৃদয় হুহু করে ওঠে।'
পার্থ বলল 'সে তো হবেই বৌদি। মিলি তো বাচ্চা দিয়েছে কিন্তু যা কিছু করার তো আপনি করছেন ।মিলি জন্মদাত্রী আর আপনি হচ্ছেন পালিতা মা যশোদা।'
রেখা বলল 'ওদের মধ্যে দিয়ে না খুব ভালো সময় কেটে যায়। মনে একটা আলাদা প্রশান্তি আসে।'
পার্থ বলল 'একদমই ঠিক। আসলে দাদা আর আপনার মনটা সত্যিই ভীষণ সংবেদনশীল আর মানবিক।'
রেখা হাসলো তারপর বলল 'পার্থ আর সময় নষ্ট করো না । তুমি এগোও।'
পার্থ বলল 'হ্যাঁ বৌদি ,এই এগোচ্ছি ।আপনি আছেন তাই নিশ্চিন্ত।'
রেখার আবার ফোন বেজে উঠল'ধায় যেন মোর সকল ভালোবাসা....।'
রেখা আনমনে ফোনটা রিসিভ করে বলল 'হ্যালো'।
রিম্পাদি বলল' হ্যাঁ রে আমি রিম্পাদি বলছি ।'
রেখা বলল' হ্যাঁ বলো,রিম্পা দি?'
রিম্পাদি বলল' তুই কালকে স্কুলে আসলি না আবার আজকেও আসলি না?'
রেখা বলল 'একটু অসুবিধে ছিল গো?'
রিম্পা দি বলল হ্যাঁরে মানুষ ঠিক আছে তো তুই ঠিক আছিস মিলিরা ঠিক আছে?
রেখা বললো 'হ্যাঁ, হ্যাঁ আমরা সবাই ঠিক আছি।
রিম্পা দি' বলল তাহলে..?'
রেখা বলল 'তোমাকে পরে গিয়ে বলব?'
রিম্পা দি বলল'এখন বলতে তোর অসুবিধা আছে?'
রেখা শুধু সংক্ষেপে বলল 'হ্যাঁ।'
রিম্পা দি বলল ঠিক আছে। তুই কালকে আসছিস তো স্কুলে?
রেখা বলল 'দেখি?
রিম্পা দি বলল'না অনিন্দিতার বিয়েতে যাবি তো?'
রেখা বলল 'অনিন্দিতার কবে বিয়ে?'
রিম্পাদি বলল 'সে কি তুই জানিস না?'
রেখা বলল ' না। বড়দি একবার বলছিলেন অনিন্দিতার বিয়ে।'
রিম্পা দি বলল সে কিরে স্কুলে কার্ড দিয়েছে তা তুই ছিলিস না তাহলে তোকে তো ব্যক্তিগত ভাবে বলা উচিত ছিল অন্তত মেসেজ করে দেয়া উচিত ছিল।
রেখা বলল 'হয় তো ভুলে গেছে।'
রিম্পাদি অবাক হয়ে বলল' ভুলে গেছে?'
রেখা বলল' তাহলে কি তুমি অন্য কিছু গেস করছো ?যেটা আমি করছি এখন।'
রিম্পা দি বলল'তুই কি কাজ করছিস আগে বল?'
রেখা বলল বলবো?
রিম্পা দি বলল আমার তোর মাঝে কোনো ফারাক আছে বল?
রেখা বলল' আমার হাজবেন্ডের করোনা হয়েছিল বলে ভয় পাচ্ছে?
'রিম্পা দি বলল' এগজ্যাক্টলি?'.)
রেখা বলল 'তাহলে আমার না যাওয়াই উচিত কি বল?'
রিম্পা দি বলল' স্কুলে সবার উদ্দেশ্যে নেমন্তন্ন করেছে?'
রেখা বললো' কি জানি যেতেও পারবো কিনা কে জানে?
'রিম্পাদি বলল 'দেখিস পারলে অবশ্যই যাবি।খেলা হবে?'
রেখা বলল 'দেখি পরিস্থিতি কি হয়?'
রিম্পা দিয়ে বলল ঠিক আছে সাবধানে থাকিস ভালো থাকিস ।রাখছি হ্যাঁ।'
তার মধ্যে আবার বলে উঠলো এই শোন শোন শোন।
লেখাগুলো কি?
তোর নাতি নাতনি গুলো ভালো আছে তো?
রেখা বলল হ্যাঁ বিন্দাস আছে।
রিম্পা দি বলল 'পরে তো আবার আমাকে বলবি আমার নাতি নাতনিগুলোকে ভুলে গেলে ।একবারও জিজ্ঞেস করলে না?'
রেখা বলল 'সে তো ঠিক ই?'
রেখা এবং রিম্পা দি দুজনেই হাসতে লাগলো।
ফোনটা রেখে সবে মাসি আমার দিকে তাকিয়ে আছে রেখা তখন মাসিমা বললেন বৌমা তোমার ওই রিংটোন টা আমার খুব ভালো লেগেছে ওই গানটা আমাকে শোনাবে একটু।
রেখা বলল ও রবীন্দ্র সংগীতটা 'ধায় যেন  মোর সকল ভালোবাসা...।'
রেখা বললো নিশ্চয়ই মাসিমা আপনি ওয়েট করুন আমি গানটা চালিয়ে দিচ্ছি'।রেখা ইউটিউব খুলে সার্চ করে গানটা চালিয়ে দিল। গান বাজতে লাগল'ধায় যেন মোর সকল ভালোবাসা
 প্রভু  ,তোমার পানে , তোমার পানে ,তোমার পানে।
যায় যেন মোর সকল গভীর আশা
প্রভু ,তোমার কানে ,তোমার কানে ,তোমার কানে।।
চিত্ত মম যখন যেথা থাকে সাড়া যেন দেয় সে তব ডাকে,
যত বাঁধন সব টুটে গো যেন
প্রভু, তোমার টানে, তোমার টানে ,তোমার টানে।।
......
......
...
..
প্রভু,তোমার গানে, তোমার গানে ,তোমার গানে।।''
..
.তোমায় যেন মোর সকল ভালোবাসা প্রভু তোমার কানে তোমার কানে তোমায় এ যেন

কবি নূরজাহান শিল্পী ( ইংল্যান্ড ) র কবিতা





স্বপ্নের পৃথিবী জাগাই
নূরজাহান শিল্পী
( ইংল্যান্ড ) 



নিজদেশে পরবাসী অস্থির ,
মুক্তির স্বাদ পেতে উম্মুখ সতের কোটি আজ ।
নিপাত যাক  পশুত্বের আবাদ ,
দেশ নিয়ে যারা করে রক্তের চাষাবাদ ।
বায়ান্নোতে রক্ত দিয়ে জাতি কিনলো মুখের ভাষা ।
সেই ভাষাতে সত্য বলায় প্রাণ হারালো  আবরার ।
পরাধীনতার শিকল ভেঙে ,
ভোরের পাখিটা যাক উড়ে।
আকাশ খাঁচায় সোনালী রোদ্দুরে।
অসাম্যের বিরুদ্ধে জাগুক প্রতিবাদী সুর ।
চাইনা আজ প্রভাত ফেরির গান।
শহীদ মিনারে ফুলের সমাহার ।
তার পাশে দেখো উচ্ছিষ্ট খেয়ে বেঁচে থাকা কিছু প্রাণ ,
চাই যে তাদের বাঁচার মৌলিক অধিকার।

আহবান করি জেগে উঠো বীর ।
কালের সাক্ষী হয়ে বলিষ্ট কণ্ঠের।
আবার হোক ধ্বনী উচ্চারন ।
এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম ,
এবারের সংগ্রাম আমাদের বাঁচার সংগ্রাম ।
অগ্নিকান্ড ,ছেলেধরা ,নুসরাত হত্যা ।
নেই আজ কোথাও নিরাপত্তা ।
পেঁয়াজ ,লবন ,সড়ক পরিবহন আইন ।
বুলবুল ,ক্যাসিনো ,ধর্ষন ।
তাজা খবরে ভরপুর আকর্ষন ।
জাতিকে বানিয়ে বোকা ,
লাল সবুজের ভূখণ্ডে চলছে ধোঁকা ।
নতুন সূর্যের হোক দেদীপ্যমান সোনালী  উদয়।
 সাম্যের পরমানন্দে জাগুক হৃদয়।
স্বপ্নের পৃথিবীকে জাগাই প্রিয় পংক্তিমালায়..

মাহমুদা রহমান /যুক্তরাষ্ট্র নিউ ইউর্ক




স্বপ্ন বিলাস
মাহমুদা রহমান 




বেচে আছি নিজেস্ব জগতে যতদিন বাচা যায় !
জীবনের দিনরাত্রি কখনো মনে হয় অনুপম খাচায় !
বড়ো সাধে ঘর সাজাই পূর্নিমার চাদ দিয়ে 
তোমার এ পৃথিবী সাজাবো আমাকে ঘিরে !
অতি যত্নে পরিপাটি এই কক্ষ গৃহদ্বার 
গড়েছি কত শ্রম ঘামে এখন করছি চাষাবাদ !
কিন্তু শূন্য বিবর্ণ ধূসর মাঠ সমস্ত নিষ্ফল ,
বিনা দোষে এ জীবন ধূ ধূ কাটাবন !
নিজেই নিজের হাতে গড়েছি স্বপ্ন নিবাস 
সাজানো ফুলের টবে না ঠোকে কালসাপ !

শামীমা আহমেদ /পর্ব ৩৬





শায়লা শিহাব কথন

অলিখিত শর্ত( পর্ব ৩৬)

শামীমা আহমেদ 



সারাদিন শায়লার আর কোন খবর পাওয়া হলো না। সন্ধ্যায় কল দিয়েও ফোন রিসিভ না করাতে শায়লার শারীরিক অবস্থাটা জানা হলো না। একরাশ দুশ্চিন্তা নিয়ে শিহাব বিছানায় গেলো। সারাদিন ভীষণ অস্বস্তিতে কেটেছে। আজ যতকিছু পূর্ব নির্ধারিত এপয়েন্টমেন্ট ছিল শিহাব সব ক্যান্সেল করে দিয়েছিল। শায়লার এমন অবস্থায় শিহাব কোন দিকেই যাবে না।
আরো কয়েকবার কল করেও শায়লার ফোনটা বন্ধ পাওয়া গেলো আর সেটাই স্বাভাবিক। অসুস্থ রোগীর ফোন বন্ধ রাখাই উচিত।শিহাবের বেশ অস্থির লাগছিল। কবে সবকিছু স্বাভাবিক হবে।একটু শায়লার সাথে কথা বলা যাবে।বুঝিয়ে বলা যাবে, তুমি যা ভেবে এতটা আকুল হয়েছো তা তোমার বুঝবার ভুল। এমনি  নানান ভাবনায় শিহাবের দু'চোখ বুজে এলো। কখন যেন মনের অজান্তে ঘুমিয়ে গেলো। 
সকালের রাউন্ডে এসে ডক্টররা জানালেন রোগী এখন বেশ স্টেবল।প্রেসার পালস হার্টবিট নরমালে আছে। শারীরিক সবকিছু স্বাভাবিক
চলছে।  ঘুম খাওয়া স্বাভাবিক হয়েছে।ডক্টর  জানালেন  স্যালাইনটা শেষ হলেই চাইলে আজ দুপুরে বাসায় নিয়ে যেতে পারেন।
রাহাত বাধভাঙা আনন্দে ভেঙে পড়লো। আপুকে বাসায় নিয়ে ফিরবে এর চেয়ে আনন্দের আর কি হতে পারে! মা ও ভীষণ খুশি! সকালে রাহাত কেবিনে এসে শায়লার ফোনটা চার্জে দিয়ে রেখেছিল। এখন ফোনটা হাতে তুলে নিলো আর ইচ্ছে করেই শায়লার সামনে শিহাবকে কল দিলো। বেশ উচ্চস্বরেই কথা বললো, শিহাব ভাইয়া আপু আজ মাশাল্লাহ  বেশ সুস্থ। আমরা আজ দুপুরেই হাস্পাতাল ছাড়ছি।
শিহাব অফিসে যাওয়ার  জন্য তৈরি হচ্ছিল।খবরটা পেয়ে যেন অনেকটাই মনটা শান্ত হলো। তবুও শায়লার সাথে দেখা করার অপেক্ষায় রইল। শিহাবের সাথে কথা বলার সময় রাহাত শায়লার মুখের অভিব্যক্তিটা বুঝে নিলো।ডাক্তারের পরামর্শ মত রাহাত এখন থেকেই আপুর সাইকোলজিক্যাল বিষয়গুলো খেয়াল করছে।রাহাত  ওর এক বন্ধুকে কল দিয়ে হাসপাতাল রিলিজের কথা জানালো। বন্ধু জানালো গাড়ি পাঠিয়ে দিবে  ওরা যেন এম্বুল্যান্স না নেয়। মাকে সবকিছু গুছিয়ে নিতে বলে রাহাত বিল সেকশনে গেলো। হাসপাতালের সব  রকম প্রসেস মত বিল চুকিয়ে কেবিনে আসতে রাহাতের প্রায় সাড়ে বারোটা বেজে গেলো। রাহাত রুহি খালাকে জানিয়ে দিল আজ আর হাসপাতালে খাবার না পাঠাতে। আমরা সবাই বাসায় ফিরছি আর বাসায় ফিরেই  দুপুরের খাবার খাবো।
মা আর শায়লাকে নিয়ে রাহাত ব্যাগপত্র গাড়ির ব্যাকডালায় দিয়ে রাহাত গাড়িতে উঠল। ড্রাইভারকে জানালো আগেই বাসায় নয় গাড়িটা একটু এয়ারপোর্টের দিক থেকে ঘুরিয়ে আনুন। এখুনি বাসায় যেতে মন চাইছে না। মা আর শায়লা বেশ খুশি হলো! 
আসলে রাহাত চাইছে আপুর ভেতরের দুশ্চিন্তাগুলো নিয়ে যেন আবার বাসায় না ঢুকে।যতটা মাথা থেকে তা ঝেড়ে ফেলা যায়। 

আর কাউকে দিয়ে নয়, রাহাত ভাবলো সে নিজেই আপুর সাথে ফ্রিলি সব কথা বলবে, শিহাবের ব্যাপারে জানতে চাইবে। আপু নিশ্চয়ই সব খুলে বলবে। তারপর দ্রুতই কানাডার প্রসেসটা শুরু করতে হবে।
বাসায় ফিরে শায়লা বেশ ভালো অনুভব করছে। রাহাত আপুর দিকে খুব তীক্ষ্ণ  দৃষ্টি রাখছে। আপাততঃ আপুর হাতে ফোনটা দেয়া যাবে না। ফোনের কথায় আবার আবেগাপ্লুত হয়ে যেতে পারে বা অন্যরকম কোন মানসিক আঘাত আসতে পারে। রাহাতের মনে একটা বিষয়  ঘুরপাক খাচ্ছে। কে এই শিহাব? তার সম্পর্কে  জানতে হবে। রাহাত শায়লার ফোন থেকে শিহাবের নম্বরটা
টুকে নিলো।
দুপুরে মা ও রুহি খালা বেশ যত্ন করে শায়লাকে খাবার খাওয়ালো। রাহাত মাকে আগেই জানিয়ে রেখেছে  আপাতত আপুকে নিজের ঘরে একা যেতে দিবে না। মায়ের ঘরে আজ রাতটা থাকবে। তাছাড়া শায়লার ঘরের দরজার লকটা সেদিন ভাঙা হয়েছিল।সেটাও ঠিক করাতে হবে। সাথে একটা ছোট্ট এসি লাগয়ে দিতে হবে।সেদিন আপু কেমন করে ঘেমেছিল!কতটা অস্থিরতায় না যেন কষ্ট পেয়েছে। 
শায়লা মায়ের ঘরে ঢুকলো। 
বিছানার দিকে এগিয়ে গেলো। ঘুমের ঔষধের প্রভাব এখনো আছে। শায়লা মায়ের বিছানার কাছে গেলো।অনেকদিন পর আজ এই ঘরে ঘুমাচ্ছে।বিয়ের পর থেকে একা একা একটি রুমে থেকেছে।শায়লা ভাবলো,আমরাতো জানি মানুষ  বিয়ের পর দুজন হয়,একা থাকার দিন শেষ হয়।তার জীবনে উল্টো  হলো। বিয়ের পরই মায়ের ঘর ছেড়ে  নিজের ঘরে একা হয়ে গেলো। এমনটি ভাবতেই তার শিহাবের কথা মনে পড়ে গেলো।না, সেতো একা ছিল না।তার সাথে শিহাব ছিল। নাহ! আর শিহাবকে নিয়ে ভাবা যাবে না। সেতো আমার একটা খোঁজও নিলো না।আমিতো প্রায় মরেই যাচ্ছিলাম।আমাকে একটু দেখতেও এলোনা। শিহাবের কথা মনে হতেই ভেতর থেকে একটা চাপা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো। শায়লা মায়ের বিছানায় ঘুমিয়ে পড়লো।
রাহাত আর মা একসাথে দুপুরের খাবার খেতে বসলো। সাথে রাহাত শায়লাকে নিয়ে মাকে প্রাসঙ্গিক কিছু কথা জানিয়ে রাখল। 
মা যেন শায়লার দিকে সার্বক্ষণিক খেয়াল রাখে। যদিও শিহাবের কথাটা মাকে জানালো না। রাহাত বিষয়টি নিয়ে ভীষণ চিন্তামগ্ন হলো। বুঝাই যাচ্ছে শায়লা আপু কোন দ্বন্দের ভিতর দিয়ে যাচ্ছে। 
খাবার খেয়ে রাহাত নিজের রুমে চলে এলো। সারাক্ষনই ভাবছে  আপুর সাথে কিভাবে কথা বলা শুরু করবে। তবে আজ থেকেই নয়। আগে শিহাব সাহেবের সাথে পরিচিত হতে হবে।লোকটি কেমন সেটা জাজ করে আপুর কথা শুনতে হবে।মেয়েদের পক্ষে একটা ছেলের সবদিক বুঝে ওঠা সম্ভব নয়। মেয়েদের কাছে তারা শুধু ভালোটাই দেখায়।আর খারাপ দিকটি আড়াল করে রাখে।কোমলমতি মেয়েরা সেটা ধরতেই পারে না।এইজন্য মেয়েরা প্রতারিত হয় বেশী। নিশ্চয়ই আপু শিহাব সাহেব থেকে এমন কোন ভাবে প্রতারিত হয়েছে। রাহাত আর কৌতুহল  দমিয়ে রাখতে পারছে না।তাছাড়া আপুর খবরটাও তো দিতে হবে। রাহাত নিজের ফোন থেকে শিহাবকে কল করলো। একবার দুবার পূর্ন রিং হয়ে থেমে গেলো। কি ব্যাপার ফোনটা রিসিভ করলো না কেন? অবশ্য হতে পারে আননোন নাম্বার তাই রিসিভ করলো না।কিন্তু ছেলে মানুষরা কি আর আননোন 
নাম্বারকে ভয় পায়? শিহাবকে নিয়ে নানান জল্পনা কল্পনায় ডুবে রইল রাহাত। আবার উল্টো করেও ভাবছে শিহাবকে নিয়ে, আচ্ছা এমনও তো হতে পারে শিহাবসাহেব লোকটি খুবই ভাল। নয়তো কি আর আপু তার সাথে পরিচিত হতো? আসলে খুব তড়িঘড়ি করে আপুর বিয়েটা হয়ে যায়।আগপিছ না ভেবে। অবশ্য তখন কি আপুর শিহাব সাহেবকে চেনা ছিল? তাহলে কেন বলেনি। তাহলে এত দূরদেশে আপুকে বিয়ে দিতে হতোনা। আজ আর এত জটিলতাও  হতো না।কি জানি সব কেমন ঘোলাটে লাগছে। শায়লা আপুর মত মেয়েরা আজো মুখ ফুটে নিজের পছন্দের কথা বলতে পারে না। আপুর সাথে যে একবার মিশবে আপুকে পছন্দ না করে থাকতেই পারবে না।হঠাৎই শিহাবের নাম্বার থেকে কল ব্যাক হলো।
রাহাত ধরতেই শিহাব জানতে চাইল কে বলছেন? দুঃখিত আমি বাইক চালাচ্ছিলাম।তাই কলটি ধরতে পারিনি।কে বলছেন? 
রাহাত জানালো, আমি রাহাত। শায়লা আপুর ছোট ভাই।আপনার সাথে দুবার কথা হয়েছে।এটা আমার নাম্বার।আপুর ফোনটা আপাতত বন্ধ রয়েছে।
শিহাব জানতে চাইল, শায়লা এখন কেমন আছে?
ভালো। দুপুরের খাবার খেয়ে ঘুমিয়েছে। 
বেশ ভালো। ওর রেস্ট প্রয়োজন। 
রাহাত জানতে চাইল, আচ্ছা আমি যদি আপনাকে মাঝে মাঝে কল করি কিছু মনে করবেন নাতো?
আরে নাহ! কেন মনে করবো? যখন ইচ্ছে কল করবেন। আচ্ছা ভাইয়া, আমি রোড সাইডে বাইক থামিয়ে কথা বলছি।আমাকে একটু গাজীপুরের দিকে যেতে হবে।  যদি,,
ওহ! শিওর।  
শিহাব বাইকে স্টার্ট দিল। রাহাত নিজেও একটু  বিশ্রাম নেয়ার জন্য চোখটা বন্ধ করলো। 



চলবে....

মোঃ হা‌বিবুর রহমান /১০তম পর্ব





ইউএন মিশ‌নে হাইতি‌তে গমন
১০তম পর্ব

আবাসস্হ‌লে যে‌য়ে প্রথ‌মে একটু হোছটই খেলাম, শারী‌রিকভা‌বে না হ‌'লেও মান‌সিকভা‌বে কিছুটা বিপর্যস্হ‌তো হ'লামই ব‌টে। তাই এমূহু‌র্তে কিছু না ব‌'লে ‌ঠিক থাক‌তে পার‌ছিনা। আশা যেখা‌নে গগনচুম্বী- পাওয়াটা য‌‌দি হয় তার খা‌নিকটাও কম‌, সেখা‌নেই‌ জ‌ন্মে নিরাশা আর না পাওয়ার যন্ত্রনা, আর তখনই অতৃ‌প্তি‌তে ভো‌গে মানুষ না পাওয়ার বেদনায় আর এই ফাকে টুক ক‌'রে শয়তান‌টি এসে বার বার দেয় ম‌নে তখ‌নি কুমন্ত্রনা। ঠিক যেন এমন‌টি ঘ‌'টে‌ছি‌লো আমার সে‌দিন ম‌নের গভী‌রে, আশাহত হ‌'য়ে নিজ পাওনাটা না পে‌য়ে যথামূহুর্তে-যথাস্হা‌নে।

সাতাশটি বছর আগে ভাবুন‌তো, আমরা গেছি কত শত পাহাড়-

পর্বত, সাগর-নদী, বন-জঙ্গল, শহর-বন্দর আর রাজ্য-মহারাজ্য পেরিয়ে তাও আবার কল্পনার রা‌জ্যে, বলা য‌ায় রূপকথার সেই দে‌শে আর যে দে‌শে স্বশরী‌রে হা‌জির হ‌'য়ে একজন বাঙালী হি‌সে‌বে থাকা খাওয়ার ব্যাপা‌রে তার বাড়‌তি কি ধর‌নের উচ্চাকাঙ্খা থাক‌তে পা‌রে তা সহ‌জেই অনু‌মেয়। থাকার জায়গাটা প্রথম দর্শ‌নে‌ই মনটা যেন পাথ‌রের মত ভারী ক‌'রে দি‌লো। ডবল ডেকার সাই‌জের দোতলা খাট, যেন ম‌নে হ‌'লো দ্বিতীয় মহাযু‌‌দ্ধের কোন একটা ‌সি‌নেমার দৃ‌শ্যের হুবহু চিত্র বু‌ঝি পূনরাবৃ‌ত্তি হ‌'য়ে চো‌খের সাম‌নে এ‌সে জীবন্তভা‌বে ধরা দি‌চ্ছে। 

এখন বিষয়‌টি হ‌লো কে দোতলায় থাক‌বে আর কেবা নীচ তলায়? দীর্ঘ পনের দি‌নের বসবা‌সের মামলা ব‌'লে কথা, এ‌কেবা‌রে নেহা‌য়েতই এটা কিন্তু কম সময় নয়। আস‌লে কোনো সমস্যাই কিন্তু সমস্যা নয়, সমস্যা ম‌নে ক'র‌লেই সমস্যা। যাক, এ সমস্যা মূহু‌র্তের ম‌ধ্যেই সমাধান হ‌'য়ে গেলো। সেনাবা‌হিনীর চাকরীর বু‌ঝি এই একটাই মজা! এ মূহু‌র্তে আমার ঐ ক্যা‌প্টেন পদবীর প্রিয় জ‌ুনিয়ার অ‌ফিসা‌রটি প্রকৃতপ‌ক্ষে কে ছিল সে কথাটি ঠিক আজ আর ম‌নে নেই। সে‌দিন সেই সহৃদয় ‌প্রিয় ক্যা‌প্টেন পদবীর অ‌ফিসার‌টি এ‌সে ব'ল‌লো স্যার,"আ‌মি দোতলায় থাক‌বো"। যাক মুশকিল আসান হ‌লো কিন্তু মনটা বেশ খারাপ লাগ‌তে লাগ‌লো এ‌ই ভে‌বে যে, আ‌মি না হয় নী‌চে থাকলাম কিন্তু আমার জু‌নিয়ার অ‌ফিসার‌টি ‌তো ঠিকই কষ্ট পা‌বে।

‌লো‌কে আমা‌দের দেশ‌কে গরীব দেশ ব‌লে কিন্তু আমা‌দের মনটা অ‌নেক বড়, বিশাল যেন সমু‌দ্রের মত। আমি যখন ১৯৮৫ সা‌লে স‌বেমাত্র নতুন ক‌মিশন পে‌য়ে কু‌মিল্লা ‌সেনা‌নিবাসে ২ লেঃ হি‌সে‌বে যোগদান ক‌'রে‌ছিলাম তখন এধর‌নের ফৌ‌জি খাট-পালঙ্ক মাস দু-তি‌নেকের জন্য মাত্র দে‌খে‌ছিলাম কিন্তু তারপর আর এগু‌লো চো‌খে প‌ড়েনি। এরা এত বড় উন্নত দে‌শের সেনাব‌াহিনীর লোকজন তারপরও বু‌ঝি এর মায়া এখনও ছাড়‌তে পা‌রে‌নি, এর কি রহস্য আর এ‌তে কিইবা মহত্ব আ‌ছে আল্লাহ মাবুদই ভাল জা‌নেন আর বু‌ঝি ওরাই শুধুই জা‌নে? যাক, যে‌ কোন জি‌নি‌সের ভাল মন্দতো ‌নিঃশ্চয়ই থাক‌বে বৈ‌কি ?

লা‌গেজ ভ্যা‌নে আমা‌দের লা‌গেজ ও অন্যান্য ব্যবহা‌রিক সরঞ্জামাদী আস‌তে বেশ  বিলম্ব হ‌ওয়ায় আমরা কিছুটা দেরী‌তে বিছানায় গি‌য়ে‌ছিলাম ঘু‌মো‌তে সে‌দিন রা‌তে। আস‌লে সে‌দিন রা‌তে বাংলায় যেটা‌কে ব‌লে বা‌রোটা বাজা, সত্যিই আমা‌দের সবার ঘু‌মের বা‌রোটাই বে‌জে গিয়ে‌ছি‌লো। অ‌নেকগু‌লো বাস্তব ও অনীবার্য কার‌ণেই সে‌দিন এ হাল-অবস্হার সৃ‌ষ্টি হ‌'য়ে‌ছি‌লো আর‌কি! 

এ‌কে‌তো লা‌গেজ দেরী‌তে আসা, খাওয়া-দাওয়ার একটা ভাল রক‌মের অ‌নিয়ম, আবার অন্যদি‌কে প‌রিবা‌রের অ‌তি আপনজন‌দের থে‌কে হঠাৎ ক‌'রেই এক ধর‌নের সাম‌য়িক বি‌চ্ছেদের কার‌ণেই মনটা বড্ডই খারাপ ছি‌লো যার দরূন ঘ‌টিত সবগু‌লো সমস্যা একসা‌থে ও এক‌যো‌গে যৌথ প্র‌চেষ্টায় দে‌হের স্নায়ু‌কেন্দ্র‌কে সর্বদা সচল ও সবল রাখায় একবা‌রে মোরগবাগ পর্যন্ত আমা‌দের‌কে আর মো‌টের উপ‌রেই চোখ বন্ধ ক'র‌তে দেয়‌নি।

ওহ, ঘুমের বা‌রোটা বাজার অন্যতম মজার কারণ‌টি এখন পর্যন্ত‌ তো বলাই হয়‌নি। আপনারা কি একটু মালুম ক'র‌তে পার‌ছেন ব্যাপারটা আস‌লে কি ঘ'ট‌তে পা‌রে? আসলে ঐ যে দোতালা খাটই এর জন্য দায়ী। খা‌টের উপ‌রে কেউ য‌দি মুড়ামু‌ড়ি ক‌'রে তাহ‌লে নীচ তলার লোক‌‌টি কি শান্তি‌তে ঘুমা‌তে পা‌রে? সবাই‌তো আমরা মানুষ তাই আমার যা হাল হ‌'য়ে‌ছি‌লো উপর তলার ব্য‌ক্তিরও বু‌ঝি একই হাল হ‌য়ে‌ছি‌লো কারণ আ‌মি তাকে সারারাত ধ‌রে বিছানায় এ‌দিক-ও‌দিক অসম‌য়ে নড়ান‌ড়ি-গড়াগ‌ড়ি ও মড়-মড় শ‌ব্দ করা শু‌নে অ‌তি সহজেই বু‌ঝে গিয়ে‌ছিলাম যে, সে বেচারাও আমার মত একই প‌থের প‌থিক এবং একইরূ‌পে সমভা‌বে ভূক্ত‌ভোগী। সকা‌লে উ‌ঠে আমার উপর তলার বা‌সিন্দা‌কে আমি জিজ্ঞাসা করার আ‌গেই সে আগ বা‌ড়ি‌য়ে বল‌লো, "স্যার, গতকাল রা‌তে আমার এক মূহু‌র্তের জ‌ন্যে এক ছটাক প‌রিমাণও ঘুম হয়‌নি"।

যা‌হোক, সু‌বেহ্ সা‌দে‌কের সময় বিছানা থে‌কে উ‌ঠে প্রাতঃক্রিয়া সারার‌ জন্য টয়‌লে‌টে গেলাম। এ আরেক জঞ্জাল স্হান ব‌'লে আমার মনের ভিতর প্রতীয়মান হওয়ায় পো‌র্টো‌রি‌কো তথা ক্যাম্প সা‌ন্টিয়া‌গো সম্ব‌ন্ধে আ‌স্তে আ‌স্তে বা‌জে ধারণার সৃ‌ষ্টি হ‌'তে লাগলো। প্রথমতঃ অ‌ফিসার‌দের জন্য আলাদা কে‌ান বাথরুম বা টয়‌লেট কোন‌টির‌ ব্যবস্হাতো নেই-ই তার সা‌থে বাথরুম আর টয়‌লে‌টেরে চরম বেহাল দে‌খে যেন দ‌ুঃখে-ক‌ষ্টে মনটা একবা‌রে বিষন্নতায় ভ‌রে গে‌লো। নি‌জের চোখে এর করুণ হাল দে‌খে মন‌কেও যেন মানা‌তে পার‌ছিলাম না। 

আজব জায়গায় আল্লার আজব চিজরা যেন এখা‌নে বাস ক‌রে। হয়তবা এটাই তা‌দের কৃ‌স্টি, এটাই সভ্যতা ও এটাই বু‌ঝি তা‌দের রী‌তি। আস‌লে তা‌দের কোন দোষ নেই। টয়‌লে‌টের দরজার নী‌চে দশ ই‌ঞ্চি প‌রিমান ফাক। "প্রাত‌ঃক্রিয়া সম্পন্ন করার সময় পা‌শের টয়‌লে‌টের/বাথরূ‌মের দুই প্র‌তি‌বেশীর ম‌ধ্যে পরস্প‌রের ক‌থোপকথন বা গল্প কর‌ার জন্যই বু‌ঝি এই ব্যবস্হা"। 

মজার ব্যাপার হ‌লো টয়‌লে‌টের উপ‌রিভাগও ম্যানহাইট পর্যন্ত উঁচু করা হ‌'য়ে‌ছে বা এটার উদ্ভব হ‌'য়ে‌ছে বোধ ক‌'রি সব ধর‌নের সা‌পো‌গেশন এড়া‌নোর জন্যই।  আবার একই কায়দায় বাথরুম বা গোসলখানাগু‌লোও তৈরী করা হ‌'য়ে‌ছে যেন একজন পাতলা মানুষ বা তাল পাতার সেপাই শুধুমাত্র কোনভা‌বে ভিত‌রে দাঁ‌ড়ি‌য়ে স্নানকার্য সমাপন ক'র‌তে পা‌রে। কিন্তু ভাবুন‌তো তাহ‌লে ডবল ডেকার সাই‌জ বা ভীম‌াকৃতির একজন মানু‌ষের বেলায় তার হাল কি হ‌'তে পা‌রে?

ম‌নে ম‌নে ধারণা ক'রলাম-বু‌ঝি ইচ্ছা ক‌'রেই তারা ফ‌ন্দি-‌ফি‌কির এঁটে বাথরুম আর টয়‌লেট এরকম ছোট ক‌'রে রে‌খে‌ছে। কিন্তু বিপ‌ত্তি তখনই ঘট‌লো যখন অধীনস্তরা ব'ল‌তে শুরু ক'র‌লো যে, বাথরুমে পা‌নি নেই, ওজু-গোসল ক'র‌বো কি ক‌'রে ইত্যা‌দি। যা‌হোক, স‌রেজ‌মি‌নে নিজ চো‌খে দে‌খে এ‌সে মনটা বেশ স‌ত্যিই খারাপ হ‌'য়ে গে‌লো। স্হানীয় কর্তৃপক্ষ‌কে জিজ্ঞাসা ক‌'রে জান‌তে পারলাম যে, সমস্ত বাথরুম ও টয়‌লেটগু‌লো ইতোম‌ধ্যেই ওভারলো‌ডেড হ‌'য়ে‌ গেছে। 

প্রথম দি‌কে তারা সুর তু‌লে ব'ল‌তে ‌চে‌য়ে‌ছি‌লো যে, বাঙ্গালীরা বাথরুম-টয়‌লে‌টের ব্যবহারই জা‌নেনা এবং না জানার ফ‌লেই নাকি যতসব বিপ‌ত্তি আর কি! যা‌হোক, পুরা পৃ‌থিবীটাই হ‌লো, কথায় ব‌লেনা "শ‌ক্তের ভক্ত আর নর‌মের জোম"। প‌রে তা‌দের‌কে অবশ্য শক্তভা‌বেই বু‌ঝি‌য়ে দি‌য়ে‌ছিলাম যে, তারা এখনও বাঙালী‌কে পুরাপু‌রি চিন্তে পা‌রে‌নি।

এভাবে তিন দিন গুজরান হলো আমা‌দের অ‌তি ক‌ষ্টে। অবশ্য ওয়াটার ট্রেইল‌রে ক‌'রে তারা ২৪ ঘণ্টাকাল পা‌নি মওজুত ক‌'রে‌ছি‌লো। কিন্তু তোলা পা‌নি‌তে কি সব প্র‌য়োজন মেটা‌নো সম্ভব? গোসল, কাপড়কাচা, দৈ‌নিন্দন প্রাতঃক্রিয়ার মত প্রত্যহ নিত্য‌নৈ‌মি‌ত্তিক কার্যক্রম সম্পাদ‌নে যেন সভ্য জগ‌তের মানু‌ষেরা পা‌নির ট্যাপ ও বে‌সি‌নের পা‌নি ছাড়া এক মূহু‌র্তের জন্য ভাব‌তেও পা‌রেনা।  

যাই হোক, আমরা বাঙ্গালী‌তো, তারপর আবার বাংলা‌দে‌শের মি‌লিটারী, আমা‌দের এ ধর‌নের প্রশিক্ষণ তো আ‌গেই দেওয়া আ‌ছে এবং এর চাই‌তেও ক‌ঠিন জীব‌নের সা‌থে আমরা নিত্য প‌রি‌চি‌ত কিন্তু বিষয়‌টি আস‌লে সেটা নয়, বিষয়‌টি হ‌লো আ‌মে‌রিকার মত একটা সভ্য ও ধন্যাঢ্য দে‌শে এ‌সে আমা‌দের এ হাল হ‌বে তা যেন সা‌তে-স্বপ্প‌নেও ভা‌বি‌নি। সবই যেন বাঙালীর নিয়‌তির দোষ। আস‌লে "অভাগা যে‌দি‌কে যায় সাগর শু‌কি‌য়ে যায়"।

যা‌হোক, প্রথম‌দিন আমা‌দের ৫২ জন অ‌ফিসার‌দের‌কে নি‌য়ে যাওয়া হ‌লো বিশাল এক হলরুমে। এটাই হ‌লো আমা‌দের প্র‌শিক্ষণ তা‌লিকায় প্রথম অধ্যায়। আজ‌কের ক্লা‌সের বিষয়বস্তু হ‌লো মি‌ডিয়া হ্যান্ড‌লিং। ইং‌রেজী ভাষায় না‌তিদীর্ঘ দু‌'টি প‌র্বে সকাল ১০টা থে‌কে শুরু ক‌'রে সন্ধ্যা অব‌ধি ক্লাস চ'ললো ব্রি‌টিশ রয়াল আ‌র্মি ও ইউ এস আ‌র্মির গন্ডা দে‌ড়েক মেজর আর লেঃ ক‌র্ণেল পদবীর অ‌ফিসারদের তত্ত্বাবধা‌নে। 

ফিরলাম সন্ধ্যা নাগাদ নিজ আবাসস্হ‌লে। হঠাৎ ক‌'রেই খবর আস‌লো যে, আমরা যারা আপনজন‌দের সা‌থে আইএস‌ডি ফো‌নে কথা ব'ল‌তে আগ্রহী তারা যেন বানব্যাট অ‌ফি‌সে এ‌সে নি‌জে‌দের নাম রে‌জিষ্টা‌রে এ‌ন্ট্রি ক'র‌ে যাই। ছুটলাম অন‌তিদূ‌রে ব্যানব্যাট অ‌ফি‌সে। 

তিন‌দিন ই‌তোম‌ধ্যেই গত হ‌'য়ে‌ছে আপনজন‌দের সা‌থে মনখু‌লে কোন কথা ব'লতে পা‌রি‌নি আবার বাঙালীর প্রধান মেনু ভা‌তের মুখও দে‌খি‌নি। ভা‌লো দিকটা হ‌লো রাস্তার ধা‌রে ধা‌রে  অত্যাধু‌নিক কায়দায় স্হা‌পিত ভ্যা‌ন্ডিং মে‌শি‌নে ০১ ডলারের ০১ টা ক‌য়েন ঢুকা‌নো মাত্রই ০১ টা কো‌ক অথবা ০১ টা পেপ‌সির ক্যান বে‌রি‌য়ে আ‌সে-এটা এখা‌নে এ‌সেই প্রথম দেখলাম আর জানলাম। 

একদিন টে‌লি‌ফোন বু‌থে ক‌য়েন ঢু‌কি‌য়ে কথা ব'ল‌তে যে‌য়ে হঠাৎ ক‌'রে‌ই বেলাইন হ‌'য়ে যাওয়ায় মনটা খুবই খারাপ হ‌'য়ে গি‌য়ে‌ছিল। অব‌শে‌ষে, ব্যানব্যাট অ‌ফি‌সে এ‌সে দা‌য়িত্বপ্রাপ্ত অ‌ফিসার মেজর সাখাওয়া‌তের দেখা পেলাম এবং সে বল‌লো "স্যার, রে‌জিষ্টা‌রে আপনার নামটা তো‌লেন। প্র‌ত্যেক অ‌ফিসার ০৩ মি‌নিট ক‌'রে সময় পা‌বে আপনজন‌দের সা‌থে ক‌থোপকথ‌ন বাবদ"। যা‌হোক, কি কার‌ণে মেজর সাখাওয়াৎ অতি অল্প সম‌য়ের ম‌ধ্যেই আমা‌দের সবার মধ্যম‌ণি হ‌'য়ে গি‌য়ে‌ছি‌লো সেটা না হয় প‌রেই ব‌লি।

চল‌বে....

 শান্তা কামালী ৪ তম পর্ব





বনফুল
শান্তা কামালী
( ৪ তম পর্ব )




পলাশের আব্বু আম্মুদের নিয়ে  গাড়ি চলে গেল। তাদের বাসায় পৌঁছে দিয়ে গাড়ী জুঁই এর আব্বুর কাছে গিয়ে তার প্রাপ্য নিয়ে বিদায় হলো। 

  ততক্ষণে জুঁইরা বাসায় পৌঁছে গেছে। জুঁই রুমে ঢুকেই সোফায় বসতে যাওয়ার আগেই মাথা ঘুরে পরে গেল। জুঁইয়ের আব্বু আম্মু দুজনেই ধরাধরি করে জুঁইকে সোফায় তুলে বসালেন,ময়না দৌড়ে গিয়ে এক গ্লাস পানি নিয়ে এলো। মনোয়ারা বেগম বললেন জুঁই পানিটুকু খাও অনেকটা ভালো লাগবে , জুঁই আস্তে আস্তে পানিটা খেলো। জুঁইয়ের এই অবস্থা দেখে ওয়াজেদ সাহেব ও মনোয়ারা বেগম খুব চিন্তিত হয়ে পড়লেন! জুঁই বাবা-মার এই দুঃশ্চিন্তা দেখে বললো অনেক দিন বাসাবন্দী হয়ে আছিতো, অনেক জার্নি হয়ে গেছে তাই হয়তো মাথাটা ঘুরে গেল। বাবা-মাকে স্বাভাবিক করার জন্য ছোট বেলার গল্প জুড়ে দিলেন, জুঁই বললো আব্বু তোমার মনে আছে আমি যখন ক্লাস সিক্সে পড়ি তখন আমার জ্বর হয়েছিল। পরদিন দুপুর বেলা আমার জ্বর বেড়ে গেলে আম্মু তোমাকে ফোন  করলে তুমি পাগলের মতো এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কান্না শুরু করেছিলে। বিকালে ডাক্তারের কাছে নিয়ে গিয়েছিলে, ডাক্তার ভালো করে চেকআপ করে বলেছিলেন, কিচ্ছু হয়নি সামান্য জ্বর দুই দিন ঔষধ খেলে ঠিক হয়ে যাবে।
 বাবা-মা মেয়ে হাহাহা হাহাহা হাহাহা হেসে উঠলো। ততক্ষণে ময়না চা নাস্তা এনে টি-টেবিলে রাখলো, তিনজনে মিলে চা খাচ্ছে। জুঁই কোনো নাস্তা নেয়নি দেখে জুঁইএর আম্মু বললো, জুঁই তুমি কিছু নিচ্ছো না যে!
জুঁই বললো আমি কিছুক্ষণ পরে ডিনার করে ঘুমানোর চেষ্টা করবো....। এই বলে টিভি অন করে ষ্টারপ্লাসে নাটক দেখতে লাগলো। ঐদিকে পলাশের বাসায় ও মনখারাপের মেলা বসেছে, তিথি তা বুঝতে পেরে সবার জন্য চা নাস্তা নিয়ে এলো। চায়ের পর্ব শেষ হতেই অহনা পলাশের আম্মুকে বললো খালাম্মা এতো চিন্তা করছেন কেন?  মাত্র তো দুই আড়াই বছর, দেখতে দেখতে চলে যাবে।আমরাও তো আছি।  সৈকতও অহননার সাথে গলা মিলিয়ে বললো খালাম্মা আমি সপ্তাহ খানেকের মধ্যে ঢাকায় শিফট্ করছি। সৈকত বললো খালাম্মা আমি অহনা কে বাসায় পৌঁছে দিয়ে আসি? শাহারা খাতুন বললেন যাও বাবা রাত অনেক হয়েছে... ওকে একা ছাড়া ঠিক হবে না,তুমি ওকে বাসায় ছেড়ে দিয়ে তাড়াতাড়ি চলে এসো,সাবধানে যাও।

রাত দশটা বাজতেই ময়না টেবিলে খাবার পরিবেশন করছে, জুঁই তাড়াহুড়ো করে অল্প কিছু খেয়ে মাকে বললো 
আম্মু আমার খুব ক্লান্তি লাগছে, আমি রুমে গিয়ে ফ্রেস হয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করি, মনোয়ারা বেগম বললেন যাও মা।



চলবে....