২৩ নভেম্বর ২০২১

মমতা রায়চৌধুরী'র ধারাবাহিক উপন্যাস "টানাপোড়েন"৫০

কান্ত মনেই লিখে চলেছেন লেখক।  তার নিত্যদিনের  আসা  যাওয়া ঘটনার কিছু স্মৃতি কিছু কল্পনার মোচড়ে লিখছেন ধারাবাহিক উপন্যাস "টানাপোড়েন "। 






টানাপোড়েন ৫০

উদাসী মন তারে খোঁজে


                                                                 ঠাৎই শীতের সকালে বৃষ্টি শুরু হল। ভোর থেকে বৃষ্টি হচ্ছে। আবহাওয়া দপ্তর থেকে জানিয়েছে নিম্নচাপের জন্য। রেখা যেন আজ 16 বছরের তরুণী সেই আগের মতই বিছানায় পড়ে রয়েছে ,কিছুতেই উঠতে ইচ্ছে করছে না। আজ কোন তাড়া নেই, কারোর জন্য চিন্তা -ভাবনা নেই। শুধুই একান্তে নিজেকে জানা। উদাসী বাউল মন টাকে খুঁজে বেড়ানো।তাই জানলার কাছে মাঝে মাঝে গিয়ে মনে হচ্ছে  বৃষ্টি হাতে নিয়ে অনাবিল আনন্দ অনুভব করতে। 
এমন সময় কাকিমা এসে ডাকছেন ' ননী, ননী, ননী?'
রেখা বলল ' কি কাকিমা?'
কাকিমা বললেন 'তোর ফোন বাজছে?'
রেখা আলস্য জড়িত কন্ঠে বলল ' এত সকালে কে ফোন করছে?"
মনে মনে ভাবল মনোজ ফোন করল ,নাকি রিম্পাদি এই দুজন ছাড়া  আর কে ফোন করার আছে?
এমন সময় আবার ফোন বেজে উঠলো।
ফোনটা রিসিভ করতেই কণ্ঠ ভেসে আসলো
'হ্যালো রেখা ,আমি বড়দি বলছি'।
রেখা এবার বড়দির' গলার আওয়াজ পেয়ে বিছানায় উঠে বসলো, বলল ' 'হ্যাঁ, বলুন দিদি।'
বড়দি বললেন "১৬ * তারিখ থেকে তো স্কুল খুলে যাচ্ছে ।একটা তো মোটামুটি রুটিন তৈরি করা হচ্ছে যারা দূরের টিচার অনেকে বলছেন যে ওদেরকে সময়টা একটু বাড়িয়ে দিতে অর্থাৎ সাড়ে নটায় স্কুলে আসার কথা সেখানে ওরা সাড়ে দশটায় আসতে চাইছে?
তুমি তাহলে সাড়ে নটায়  আসবে তো?'
রেখা বলল  'দিদি ,আমাকে 10:30 থেকেই রাখুন না ,তাহলে আমার সুবিধা হয়।'
বড়দি বলেন ' বুঝতে পারছি কিন্তু আপনি তো ল্যাঙ্গুয়েজ এর টিচার। ক্লাস শূরু ল্যাঙ্গুয়েজ দিয়েই হবে ।সেই ক্ষেত্রে আপনাকে তো আসতেই হবে।'
রেখা বলল 'কিন্তু দিদি তা কি করে হয়?  আমাদের কি প্রতিদিনই সাড়ে নটায় যাওয়া সম্ভব ?এটা যদি হয় যে বাধ্যতামূলক সকলের, সেটা তখন মেনে নেয়া যায়।'
বড়দি বললেন  'তাহলে তো আমি স্কুল চালাতে পারবো না।'
রেখা বলল 'আপনি আমাকে কি করে  লোকাল টিচার ভাবলেন ,আমি বুঝতে পারলাম না। আমার বাড়ি থেকে স্কুলে ডিস্টেন্স টা তো কম নয়?'
বড়দি বললেন ' হ্যাঁ সেটা আমি জানি ।
রেখা বলল '  বাচ্চাকাচ্চা নেই সেইজন্য?'
বড়দি বললেন 'রেখা তুমি রেগে যাচ্ছ'।
রেখা বলল  'একটু রেগে যাচ্ছি দিদি। সব সময় আমাদেরকে কম্প্রোমাইজ করতে হয় ।এইজন্য
জানি আপনি যেখানে বসে আছেন ,সেখান থেকে কাজ করাটা ওটা কঠিন ব্যাপার ।কিন্তু আমাদের কথাগুলো তো ভাবতে হবে দিদি?  হ্যাঁ সপ্তাহে ক'দিন যেতে হবে বলুন ¿আমি ঠিক যাবো । কিন্তু বাকি কটা দিন আমাকে একটু দেরিতে আসতে বলুন ,বাকিদের মতো।'
বড়দি বলেন' আচ্ছা দেখছি, অন্য কারো সাথে তিনদিন করা যায় কিনা?'
রেখা বলল  'অসংখ্য ধন্যবাদ দিদি।'
ফোনটা কাটার পর রেখা বলল ' আচ্ছা তো ,আমাকেও লোকাল টিচার এর মধ্যে ফেলে দিলেন দিদি। লোকাল টিচার আর বাইরে টিচার কি সবাইকে একদিন করে আসতে বললে তো কারোর কোন অভিযোগ থাকে না। কাকিমা বললেন ' কী হয়েছে রে?'
রেখা বললো  'শুনলে না আমাকে সাড়ে নটা থেকে স্কুলের টাইম করে দিয়েছে আর কিছু টিচারের সাড়ে দশটা থেকে।'
কাকিমা বললেন 'এ আবার কি কথা সবার ক্ষেত্রে এক হওয়া উচিত।'
রেখা বলে  'কি সুন্দর ঘুমচ্ছিলাম কোন বাইরের টান ছিল না। কি করতে হবে না করতে হবে কোনো দায়িত্ব নেই। কি সুন্দর সেই শৈশবের দিনের মতো একটা দিন পেলাম ।তাও সাতসকালে মেজাজটা বিগড়ে গেল।
কাকিমা বললেন' ঘুমো  তো ঘুমো?'
রেখা বলল '  ঘুম তো কেটে গেল কাকিমা? আর ঘুম হবে না।'
কাকিমা বললেন  'দিল তো আমার মেয়ের মেজাজটা বিগড়ে?' '
রেখা বলল  'কাকিমা ,আজকে বুলু জেঠিমার
 কাছে নিয়ে যাবে?'
কাকিমা বললেন ' যা বৃষ্টি পড়ছে এর মধ্যে বেরোবি? 'শুধু বুলু জেঠিমা কেন আরো কত জায়গা আছে অমিয়  কাকার বাড়ি যাবি না? কত ভালবাসতেন তোকে?'
রেখা বলল'  'যেতে তো সব জায়গায় ইচ্ছে করছে কাকিমা? কিন্তু এই দুদিনে কি ঘুরবো বলো?
কাকিমা বলেন এই দুদিন থাকবি? তারমধ্যে তো একদিন হয়ে গেল আজকে ধরে।"
রেখা বলে ' কি করবো বলো, স্কুল খুলে যাচ্ছে দীর্ঘ প্রায় এক বছরের পর ।স্কুলে যাওয়া হয় না সেভাবে । এখন তো রেগুলার মাফিক স্কুল শুরু হয়ে যাচ্ছে।
কাকিমা বললেন  ,'কিছু তোর বলার নেই। কি বলবো বল? তুই এসেছিস আমাদের কত ভালো লাগছে।'
রেখা বলল ' সময় পেলে চেষ্টা করবো আসার।'
কাকিমা বললেন-'আসবি। তোদের ই তো বাড়ি? আমরা আর কতদিন?'
রেখা মনে মনে ভাবল ' কাকিমা ছেলের নামে তো লিখে রেখেছ? যদিও জমি ফেরত চেয়ে মামলা করেছ।'
রেখা বলল কাকিমা  'বিপাশা কতদিন পর এসেছিল গো?'
কাকিমা বলেন  ,'বিপাশা না তোর কাকার অসুস্থ হবার আগে এসেছিল ।কী একটা দরকারে তখন আমাদের সঙ্গেও দেখা করে গেছে।'
রেখা বলল-'হ্যাঁ বিপাশা আমাকে ফোন করেছিল?'
কাকিমা বলল  'বিপাশা মেয়েটা কত ভালো বল অথচ  শুনতে পায় যে ওর পর নাকি ওকে অতটা পছন্দ করে না।
রেখা বলল-কি বলছ কাকিমা?'
কাকিমা বললেন  'হ্যাঁ রে ,ঠিকই বলছি ও যতবার আসে ওর বর সঙ্গে আসে না ।তারপর কোথায় কারো কাছে কিছু বলেছে কানাঘুষো শোনা যাচ্ছে।'
রেখা বলে অথচ দেখো বিপাশার ভেতরে কত কোয়ালিটি ছিল ।অমি ও কাকা ঠিকঠাক করে ওকে যদি পড়াশুনা ও আরো অনেক দূর যেতে পারত কিন্ত ও  বিএড বা পিএইচডি যদিও করত?'
কাকিমা বললেন হ্যাঁ ঠিকই বলেছিস অমিয়দাকে  দোষ দিয়ে লাভ নেই রে, ওই তো দোকান থেকে যায় তাই দিয়ে সংসার চলে।
রেখা বলল তা ঠিকই বলেছ দেখেছি
কাকিমা বললেন'জানিস ননী বিপাশা নাকি একটা গানের স্কুল খুলেছে?
দেখা বলল  "আরিব্বাস দারুন ব্যাপার তো?'
কাকিমা বললেন  'হ্যাঁ রে ওর গানের গলা খুব সুন্দর ছিল ।গানটা তো ভালোই গাইত?'
রেখা বললো  'হ্যাঁ তা ঠিক বলেছ? কাকা দেখো ওই দোকান থেকে আয়ের ভেতরে মেয়েকে গান শেখানো ,পড়াশোনা করানো সব ই  তো করিয়েছেন বল?'
কাকিমা বললেন' হ্যাঁ রে'। সবাই কত সংসারে কত প্রতিবন্ধকতা ।তারা তো সংসার করছে আর তোর বোনটাকে দেখ?
রেখা বলল  'ওদের ভেতরে কি সমস্যা হয়েছে সেটা কি তোমাকে জানিয়েছিল কখনো কাকিমা?'
কাকিমা বললেন 'না রে সেরকম কিছু বলে নি।'
রেখা বলল  'আমিও অনেক ওকে বুঝিয়েছি কিন্তু ও আমাকে সব সময় উল্টো কথা বলেছে।'
কাকিমা বললেন  'ও তো ভালো কথা শুনবে না ।ও যেটা ভালো বুঝবে সেটাই। তুই বল পার্থ মতো ছেলে হয়?
রেখা বলে  'আমিও তো সেটাই ভাবার চেষ্টা করেছি ।পার্থ যখন হসপিটালে ভর্তি হয়েছিল  'সেটা কি তুমি জানতে কাকিমা?'
কাকিমা বললেন ,' , না তো?
রেখা বলল  'ও আমাকে ফোন করেছিল। দেখতেও গিয়েছিল ,ভেবেছিলাম ,তোমাকে জানাব কিন্তু ..?তোমাদের জামাই বলল 'কাকিমা, কাকু ব্যাপারটা নিতে পারবেন না থাক।'
কাকিমা বললেন 'কেন রে কি হয়েছিল?'
রেখা বলল  'তোমাকে বলি নি?আমিও আর আগ বাড়িয়ে কিছু বলব না ।যাইহোক পার্থ তো এখন ভালোই আছে।'
কাকিমা বললেন  'সুখে থাকতে ভুতে কিলোয়'। ওর 
কাকিমা বললেন 'যা ভাল বোঝে করুক আর কি বলব?'
এমন সময় মুষলধারে বৃষ্টি পড়তে শুরু করলো। কাকিমা বলেন ' দেখ মনে হচ্ছে যেন বর্ষাকাল।'
এমন সময় ভোলা কাকা এসে বলল 'মামনি, দেখো কেমন বৃষ্টি হচ্ছে,?'
রেখা বলল 'কিন্তু তুমি তো ভিজে গেছ কোথায় গিয়েছিলে?''
ভোলা বলল 'এই জমি দেখতে গেছিলাম।
কাকিমা বললেন 'ভোলা খেয়ে যাবে কিন্তু আবার পালিয়ে যেও না।'
রেখার দুহাত বাড়িয়ে বৃষ্টির ছাঁটে নিজেকে ভাসিয়ে দিতে চাইল,।
এমন সময় গুনগুনিয়ে গান গেয়ে উঠল  ' দেখেছ কি তাকে, ওই নীল নদীর ধারে ।বৃষ্টি পায়ে পায়ে তার কি জানি কি নাম ।জলে ভেজা...
সেই রামধনুকে চায়'।
রেখার কাছে আজকে যেন সব কিছুই ফিকে ধূসর  মনে হচ্ছে। আজ যেন সেই রামধনুর রঙকে বারবার খুঁজে পেতে চাইছে।'
উদাসী বাউল মন পৌঁছে যায় তার নীল নদীর ধারে। সেখানে গেলে কি খুঁজে পাবে তারে?

গোলাম কিবরিয়া শরীফ




সম্ভ্রম 



কোন ও এক রাতে
ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠা জংলার বাঘ..... 
মেতে ওঠে লালসায় - 
ওকে ভিক্ষা দাও। 

নিরবতা যখন ভীতি ছড়ায় -
আলোটা তখন শেকলে বন্দী, 
জোনাকীর ক্ষীন প্রচেষ্টা -
তামাশার সাথে করে সন্ধি .....

ঠিক তখন ই মুগ্ধ  তুমি
প্রানবন্ত, উচ্ছল ছলনায় -
নিজেকে বোঝাও  -
"ভালো আছি বেশ! "

জ্বলজ্বলে মশাল হাতে, 
উত্তাল দেশপ্রেমিক -
সীমানায় আছে,  শুধু কালো ধোঁয়া ...
আলো  নিভে গেছে সেই কখন! 

অন্ধকার, ঘুটঘুটে অন্ধকার ...

তবু প্রচেষ্টা নিরন্তর -
মেহেদী রাঙানো কোমল হাত -
ধরে আছে ব্যানারের লাঠি! 
মায়াভরা প্রেমিকের  সুদৃঢ় হাত -
ছেড়ে দিয়েছে সেই কবে!  

সে তো বিজ্ঞাপনের পন্য -
জানেনা সে নিজেও! 

তবু যায়..নিরালায়,  
চুক্তি হয়, চুপিসারে। 
ভালো থেকো, প্রিয় বোন -
স্বেচ্ছার অভিসারে ....

রুকসানা রহমান




সতী দাহ 


উত্তুরে হাওয়া তখনো যৌবন ছোঁয়নি
তবু লাল বেনারশি আর সিঁথীতে সিঁদুর পড়ে
চলে যেতে হলো অচেনা সংসারে।

যৌবনের কড়া নাড়তেই, সাদাথান আর ঘটি ভর্তি
জলের ধারায় ধুয়ে দিলো সব সিঁদুর।
তারপর প্রস্তুতি নিতে হলো সহপমরণের।

ধর্মের নামে চলে নারী হত্যার মহাজজ্ঞ
সতীত্ব রক্ষার নামে জীবন্ত তুলে দেয় জলন্ত চিতায়। মানুষ তো নই ছিলাম যেন পুরুহিত তন্ত্রের দাসী 
ওরা মানুষ হওয়ার আগেই পুরুষ হয়ে ওঠে, ধার্মিক হওয়ার আগে পুরুহিত সাজে।

নিষ্ঠুর-নির্মম প্রথার বলি হতে সাজালো বিধবাকে লালশাড়ি আর সিঁদুর পড়িয়ে টানতে টানতে নিয়ে গেলো গঙ্গার পাড়ে,
যেখানে সাজানো চিতায় স্বামীর মরদেহ,
ওখানে ছুঁড়ে ফেলা হবে লেলিহান আগুনের কুন্ডে
জীবন্ত শরীর।

তখনই তোমাকে খুব মনে পড়ছিলো মা, আর
চিৎকার করে ডাকছিলাম তোমায়, 
মা দেখো, তোমার আদরের মেয়ে বিয়ে নামক দাসত্বের বলি, জীবন্ত পুড়ছি আমি আর আমার নারীত্ব।

বাচঁতে বড় ইচ্ছে করে মা,
এখনো হয়নি যাওয়া মল্লিকা বনে, মেঘচুলে জড়াইনি শিউলির মালা।

তুমি শুনবে না জানি, পৌঁছুবেনা অস্ফুট স্বর,
তবু তোমার নামের জপ করি।
হয়তো,সেদিন ঈশ্বরের চোখে ছিলো জল।
তাইতো নির্মম-নির্দয় আর নিষ্ঠুর প্রথার অবসান করতে ঈশ্বর পাঠালেন এক মানব দূত।

নারীর আর্তনাদ তাকে ব্যথিত করে তুলেছিলো,
এই জঘন্য কুপ্রথার বিরুদ্ধে বিল্পব করে বন্ধ করেছিলেন সতীদাহ,
 দেখালেন আলোকিত সমাজের দিশা,
এনে দিলেন বেঁচে থাকার অধিকার।
তাইতো হে রাজা রামমোহন তুমি আজও নারীত্বের অলঙ্কার।

লেখক শান্তা কামালী'র ধারাবাহিক উপন্যাস "বনফুল" ২৮

চোখ রাখুন স্বপ্নসিঁড়ি সাহিত্য পত্রিকার পাতায় লেখক শান্তা কামালী'র  নতুন ধারাবাহিক  উপন্যাস "বনফুল" 





বনফুল
শান্তা কামালী
( ২৮ তম পর্ব ) 


তিথি আর শিমূল সৈকত আর অহনার জন্য চা,মিষ্টি নিয়ে এলো। ওদের  বাবা মা'য়ের সাথে পরিচয় করিয়ে দিলো পলাশ। তারপর ঘর থেকে পোশাক চপাল্টে এসে ওরা বেরোতে যাবে,এমন সময় গাড়ি নিয়ে এসে হাজির জুঁই। পলাশের মা জুঁই কে বুকে জড়িয়ে ঘরে এনে একটু মিষ্টিমুখ করালো,তিথি ও জুঁই কে খুব আদর করে বললো, ভাইয়া তোমার অনেক নাম করেছে  কিন্তু পরিচয় আগে হয়নি,খুব ভালো লাগছে তোমাকে। আবার এসো।
ওরা গাড়ি নিয়ে বেড়িয়ে গেলো। একটু পরেই ওরা পৌঁছে গেলো জুঁইদের বাড়িতে। 

জুঁইয়ের আব্বু আম্মু পলাশ কে খুব আপ্যায়ন করে ঘরে নিয়ে বসালেন। তারপর, মিষ্টিমুখের পালা শেষ করে কফি খেতে খেতে জুঁইয়ের আব্বু পলাশ কে বললেন, টিভি তে লাইভ দেখলাম।খুব ভালো লাগলো, গর্ব হচ্ছে তোমার জন্য। একটা কথা তোমাকে জিজ্ঞেস করছি,যদি  দেশের থেকে ও ভালো বিদেশি ভার্সিটির সুযোগ আসে,তুমি কি রাজি আছো?
পলাশ বললো সে-তো অতি উত্তম হবে, কিন্তু..... 
কোনো কিন্তু নয়,তোমার ইচ্ছে টাই বড়ো ব্যাপার। সেটা তোমার আছে কি-না, সেটা বলো।
পলাশ বললো, সুযোগ এবং সামর্থ্য পেলে অবশ্য ই যাবো। কিন্তু, আমার.... 
আবারও কিন্তু! তোমার ইচ্ছে টাই শেষ কথা । জুঁইয়ের আব্বু বেশ জোর দিয়ে পিতা সুলভ ধমক দিতেই, পলাশ চুপ করে ঘাড় নেড়ে সায় দেয়। 
জুঁইয়ের আব্বু খুব শান্ত ভাবে বললেন, তবে মানসিক ভাবে প্রস্তুতি নাও।অনেক বিদেশি ভার্সিটির সুযোগ আসবে।তারা তোমার মতো মানুষের জন্য হাত পেতে আছে। এই বলে উনি উঠে গেলেন ঘর থেকে। আর পলাশরাও রাত নয় টা বেজে গেছে দেখে উঠে  পড়লো। 
জুঁই ড্রাইভার কে গাড়ি বের করতে বলে নিজেও ওদের কে নিয় পৌঁছে দিতে বেরিয়ে পড়লো।

এস, কামরুন নাহার





আনন্দে আজ মন ভাসে


আনন্দে আজ মন ভাসে গো
সুখের নেশায় চোখ হাসে, 
আর মন হাসে, 
দৃষ্টি গোচর হয় বুঝি আজ
লাল সবুজের ও'ই চাষে।
আনন্দে আজ মন ভাসে
গো, মন ভাসে!
আনন্দে আজ মন ভাসে।

দুঃখ দুয়ার খুলে রাখি 
বজ্রধ্বনি লুন্ঠিতে,লুন্ঠিতে
আসবে যত আসুক বাঁধা
ছুঁড়ে দেব তীরের ধাঁধা, 
আত্মশক্তির বিশ্বাসে। 
আনন্দে আজ মন ভাসে 
গো মন ভাসে!
আনন্দে আজ মন ভাসে

আলো-আঁধারীর মেঘের স্রোতে টাপুর-টুপুর বৃষ্টি আসে।
হৃদয় গহীন পাড় ধ্বসে যায়
স্বপ্ন ভাঙ্গা নিঃশ্বাসে বুক 
ফিনকি ছোটে খুন হাসে
আনন্দে আজ মন ভাসে
গো মন ভাসে!
আনন্দে আজ মন ভাসে।

রক্তে ভেসে সিক্ত মাটি 
ধুলোর পথে জল ছিটায়, 
রিক্তবক্ষ অমানিশার মাঝেও 
নেয় দুঃখ শুষে, 
কষ্টগুলো পাঁজর ভাঙ্গে 
মর্যাদাহীন বিশ্বাসে।
আনন্দে আজ মন ভাসে গো
 মন ভাসে,  
আনন্দে আজ মন ভাসে।

রাঙ্গা প্রভাত ঊষার দুয়ারে,
বন্দীশালা অগ্নিতে, 
দাহ নিয়ে চোখ দু'টো আজ
পুড়ে মরে রাত্রিতে
ও-ই লাভার স্রোতে গা-ভাসে।
তাই আনন্দে আজ মন ভাসে 
গো মন ভাসে,
আনন্দে আজ মন ভাসে ।

আলমগীর হোসাইন





সুরভী খুজেঁ 


যন্ত্রনার বাষ্প দাহে তোমার সুরভী খুজেঁ
কষ্টসাধ্য পথের দিশা মিললেও ধন্য হবো
বিষাদের ছায়া হতে দুরের অজানা  পথের
মৃত্তিকার মসৃণ ধুলোয় মিশে সাথে রবো।

কঠিনথেকে কঠিনতর হয়ে উঠে প্রেমী মন
হতাশায় বিবেকহীন হয়ে পড়ে যখন তখন
বাচাঁর স্বপ্ন সখের বসতি নড়বড়ে দেখে
বেমালুম ভুলে যায় জীবনের সকল মানেই।

কতো স্বপ্ন ভাঙার গল্প ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে
কে কার খবর রাখে মিছে মায়ার এ ভবে
তোমার কাহিনীও মিশে যাবে দুর  আকাশে
ব্যর্থ এ প্রেমী অনন্ত অপেক্ষায় ডুবে যাবে।

শামীমা আহমেদ এর ধারাবাহিক গল্প "অলিখিত শর্ত"১৮

 স্বপ্নসিঁড়ি সাহিত্য পত্রিকার পাতায় লেখক শামীমা আহমেদ'র  নতুন ধারাবাহিক  উপন্যাস "অলিখিত শর্ত"




শায়লা শিহাব কথন 
অলিখিত শর্ত 
                                              (পর্ব ১৮)
   শামীমা আহমেদ 



                                                পু, আম্মার রিপোর্টগুলো আজ নিয়ে এসো।আর আমাকে কল দিয়ে জানিও। ডাইনিং টেবিলে এ চায়ের কাপ হাতে তাড়াহুড়োয় রাহাত কথাটা শায়লাকে জানালো। শায়লা টেবিলের ওপ্রান্তে গভীর চিন্তামগ্ন।কি জানি রাহাতের কথা তার কানে পৌছুল কিনা! 
রাহাত অফিসের জন্য তৈরি হতে নিজের রুমে চলে গেলো।সকাল আটটায় গাড়ি নিচে চলে আসে। না অফিস থেকে কোন গাড়ির ব্যবস্থা  নেই। কয়েকজন কলীগ মিলে একজন কলীগের গাড়ি শেয়ার করে।সেই কলীগ একটু সেক্টরের ভেতরের  দিকে থাকে।একে একে তিনচারজন কলীগকে সে তুলে নেয়।খুব সুন্দর একটা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ওদের মাঝে। আসলে এরা সবাই মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান।জীবনে অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে আজ এই অবস্থানে। একটা উন্নত জীবনের জন্য কতই না পরিশ্রম রাতজাগা পড়াশুনা।প্রতিযোগিতায় নিজের শক্ত অবস্থান করতে দিনরাত্রিকে এক করা।ওরা কেউই ওদের অতীত ভুলেনি।কারো কারো জন্য অতীত একটা বিশাল শিক্ষাক্ষেত্র। বর্তমান সময়ে চোখ বন্ধ করে  যখন অতীতের  দিকে তাকায় আরো এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণায় চলে দিবারাত্রির পরিশ্রম।প্রায়ই ওরা একসাথে খেতে যায়,বেড়াতে যায়। যার গাড়ি সেই বন্ধুকে, তার  ফ্যামিলিকে মিলিতভাবে  উপহার দেয়। 

শায়লা আজ যেন অন্য এক ভুবনে বাস করছে! নানারকম রোমাঞ্চ আবার দূর্ভাবনায় আছন্ন হয়ে আছে। বয়সের এই জায়গায় দাঁড়িয়ে এমন অনুভুতিও যে কল্পনাপ্রবণ করে তুলবে শায়লা কখনো ভাবেনি।  সে কি নিজে থেকে সেধেই এই সিচুয়েশনকে ডেকে আনছে? তবে কেন এত  দ্রুত সব কিছু ঘটে যাচ্ছে!যেখানে নিজেকে গুটিয়ে রাখতে চেয়েছিল, আজ শিহাবের এক কথাতেই দেখা করতে রাজী হয়ে গেলো।তবে কী শিহাবের প্রতি তার আস্থা জন্মেছে? শিহাব কি তার নিজের একাকীত্বে শায়লাকে সঙ্গী করতে চাইছে?কেনইবা সে এভাবে দেখা করার প্রস্তাব এগিয়ে দিলো?আর শায়লা তা নির্দ্বিধায়  গ্রহণ করলো।
নীচ থেকে গাড়ির হর্ণ বেজে উঠলো! রাহাত অফিস ব্যাগ নিয়ে  রুম থেকে বেরিয়ে এলো। ওর অফিস গুলশানে।।একটু আগেই বেরুতে হয়।নয়তো বনানীর বিশাল জ্যামে আটকে যেতে হয়।রাতে আবার একসঙ্গে সবার ফেরা।
আপু আসি।মায়ের খেয়াল রেখো।বলে রাহাত দোতালা থেকে নেমে গেলো। দরজা লাগানোর  শব্দে শায়লা নিজের মাঝে ফিরে এলো!
নাহ! এত আনমনা হয়ে যাওয়ার কি আছে। শুধু দেখা করতেইতো যাওয়া। অচেনা কোন যায়গায়তো নয়। কত অপরিচিত  ডাক্তারের সাথেওতো কথা বলতে হয়।একসময় পরিবারের সব দায়িত্ব একার কাঁধে তুলে নিয়েছিল। একা একা অনেক পথ চলেছে। আজীবনের জন্য না হউক কিছুটা সময় কেউ সঙ্গ দিতে চাইলে কেন তা গ্রহন করবে না?ভেতরে ভেতরে নানান ভাঙা গড়ায় শায়লা এক পা দু পা করে নিজের ঘরে এলো। শিহাবের মেসেজ এসে আছে।
শুভ সকাল। 
কেমন ঘুম হলো?
কখন বেরুচ্ছেন?
শায়লা মেসেজ সিন করলো। হাত কিছুতেই কিবোর্ড বাটনে যাচ্ছে না। মোবাইলটা  মনে হচ্ছে অত্যন্ত  ভারী।শায়লার হাত কাঁপছে! 
শিহাবের কল চলে এলো।
কি হলো কোন রিপ্লাই নেই যে?
আমাকে ঠিক সময়টা না জানালে কিভাবে বের হবো?
ওপ্রান্তে শিহাবের খুবই সহজ করে বলে উঠা।
শায়লা  কাঁপা গলায় বললো, সাড়ে নয়টা। 
ওকে।তাহলে আমি নাস্তাটা করে শাওয়ারে ঢুকছি।ও আচ্ছা, আপনি কোথায় থাকবেন? মানে আপনার বাসার কাছাকাছি হয় এমন কোথাও।(কোন মহিলার বাসা কোথায় জানতে চাওয়া শিহাব মনে করে এটা ভীষণ একটা অভদ্রতা।)
আপনি সেখানে দাঁড়ালেন, আমি একটানে বাইকে চলে আসবো।শিহাবের কন্ঠে জিজ্ঞাস্য আছে কিন্তু কোন আবেগ নেই।শায়লাকে আসতে বলা হচ্ছে কিন্তু তাতে কো উচ্ছ্বাস নেই।যেন ডাক্তারের এপয়েন্টমেন্ট নেয়ার মত করে এসিস্ট্যান্টের কাছে  সময় আর সিরিয়াল নম্বর, ফ্লোর নম্বর জেনে নিচ্ছে।
শায়লা হালকা গলায় বলে উঠল,
আপনিই বলুন কোথায়? 
তাহলে উত্তরা মেডিকেলের সামনে একটা চায়ের টং ঘর আছে। আমি ওখানে সকালের চা খাই।ওদের ধোঁয়া ওড়া আদা লাল চা,,একেবারে সকালের আলসেমিটা কাটিয়ে দেয়।
শায়লা  কিছুই  আমলে নিল না।মাথার ওপর দিয়ে সব চলে গেলো।শুধু জায়গাটা জেনে রাখলো।
শায়লা আনমনে বললো, ঠিক আছে। আমি চলে আসবো।
ওকে বাই, বলে শিহাব ওপ্রান্তে মিলিয়ে গেলো।
শিহাবের দৃঢ় কন্ঠ শায়লাকে সাহস যোগালো। শিহাবের কেন এই দেখা করতে চাওয়া! শায়লা তার উত্তর খুঁজে ফিরে।
সে মনস্থির করে নিলো যে সে যাচ্ছে।
ওহ! শাড়ির কথাতো জানানো হলোনা।কিন্তু নিজেই তো ঠিক করেনি কোন শাড়িটা পড়বে।
মনে পড়লো কোটা শাড়িটার কথা। যেদিন
ছোটবোন নায়লার বিয়ের কথা পাকাপাকি করার জন্য মোর্শেদদের বাড়ি থেকে সবাই এসেছিল, সেদিন শায়লা সোনালী চিকন পাড়ের কালচে নীল রঙের একটা কোটা শাড়ি পরেছিল।খুবই সুন্দর লাগছিল তাকে। ওবাড়ির লোকজন সবাই 
চোখ ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে শায়লাকে দেখছিল।
শায়লা ঠিক করলো সেই শাড়িটাই পরবে।
শায়লা তার আলমারির দিকে এগিয়ে গেলো।
মা এখনো ঘুমিয়ে আছে। মা উঠলে তার নাস্তা দিতে হবে।শায়লা গোসলে ঢুকে গেলো। 
সাড়ে আটটা বাজছে। সময় আছে। গোসল সেরে রেগুলেটর ঘুরিয়ে ফ্যানের স্পীড বাড়িয়ে দিলো চুল শুকাতে। শায়লা এখন আর হেয়ার ড্রায়ারটা খুব একটা ইউজ করে না। এখন অফিসের তাড়া নেই। শায়লা শাড়ি পরে নিল।অনেকদিন পর।শেষ কবে শাড়ি পরেছিল মনে নেই।আয়নায় নিজেকে দেখে নিল। নীল শাড়িটায় তাকে বেশ উজ্জ্বল দেখাচ্ছে।।আর কোন প্রসাধনী নয়  শুধু কাঠমেরুণ লিপস্টিকটা দেয়া।  ক'দিন আগেই আইভ্রুটা ফ্রেস করে আসা ছিল। শায়লা চুল আঁচড়ে ডাইনিং এ চলে এলো।
মা উঠেছে। মা অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
শায়লা মাকে সহজ করতে বলে উঠলো,
আজ শাড়ি পরলাম মা।তুমি তো আমাকে শাড়ি পরা দেখতে চাও।তাই পরলাম। কেমন লাগছে মা?
মায়ের চোখে পানি এসে গেলো।
শায়লা মায়ের ওষুধের বক্স এগিয়ে দিল।।নাস্তার আগের ওষুধ খেয়ে নিতে।
শায়লা বারবার ডাইনিংয়ের বড় ঘড়িটা দেখছে। নয়টা বাজছে।
কাজের বুয়া রেনুর মা এলো।শায়লাকে শাড়ি পরা দেখে  সে এতটাই আশ্চর্যান্বিত হয়েছে যে, তার চোখ দুটো  যেন ফেটে বেরিয়ে আসতে চাইছে! মুখে মন্তব্যও বেরিয়ে এলো! "আফারে একদম পরির লাহান লাগতাছে! আহা আম্মা আফার কেমুন একটা বিয়ে দিলেন, জামাই রইল  সাত সমুদ্দুর পাড়ে।এইসময় জোড়া কইতর একসাথে ঘুরবো কতই না সুন্দর লাগবো!"
শায়লা নিজের ঘরে চলে এলো। শিহাবের উপস্থিতি তাকে আছন্ন করে রেখেছে। শিহাবের মুখচ্ছবি চোখের পর্দায় ভাসে।সুদূর কানাডার হাতছানি আজকাল আর তাকে ভাবায় না।
শায়লা গতকালের হ্যান্ড ব্যাগটা হাতে নিল।
ব্যাগটা আড়ং থেকে কেনা। তার চাকরীক্ষেত্রের কলীগরা তার বিদায়ে উপহার দিয়েছি স্মৃতিচিহ্ন  হিসেবে। শায়লা ব্যাগের  চেইন খুলে টেস্টের রিপোর্টের মানি রিসিটটা আছে কিনা চেক করে নিলো।গতকালই সব পেইড করা। আজ শুধু রিপোর্টগুলো আনা। গতকাল এই সময়টাতেও শায়লা জানতো না আজ তার জীবনের মোড় অন্যদিকে ঘুরে যাচ্ছে! কার জন্য কোন সকাল শুভ বারতা নিয়ে আসে সেটা তো তার অজানাই থাকে।আমরাই কেউই কি কখনো জানি একটু পরেই আমাদের জীবনে কী ঘটতে যাচ্ছে?

নয়টা  পঁচিশ বেজে গেছে।শায়লা শেষ বারের মত আরেকবার আয়নায় নিজেকে দেখে নিল।
মাকে জানিয়ে নীচে নেমে এলো। শায়লার পা চলছে না।ভেতরে হাতুরি পেটানোর মত বেদম শব্দে কানে তালা লাগার উপক্রম!  শায়লা একটা রিকশা  দাঁড় করালো। 
কোথায় জাইবেন?
রিকশাওয়ালার প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে শায়লা রিকশায় উঠে বসলো।রিকশা চলছে উত্তরা সাত নম্বর সেক্টর পার্ক রোড  থেকে বাংলাদেশ মেডিকেলের টি স্টলের দিকে..
চলবে....

রাবেয়া পারভীন এর ছোট গল্প" স্মৃতির জানালায়"(২য় পর্ব)





স্মৃতির জানালায় 
(২য় পর্ব)


তিনি তাঁর কৈশোরে যৌবনে আজকের এই সফলতার স্বপ্ন দেখতেন  এবং মনে মনে দৃঢ় হতেন যে লক্ষে  একদিন পৌছাতেই হবে। অথচ  তাঁর ছেলেরা  কাজের প্রতি যেন কোন আগ্রহই নেই। না চাইতেই  সব পেয়ে পেয়ে  ছেলেগুলি এমন হয়েছে। হঠাৎ গাড়ী চলতে শুরু করতেই  চমক ভাংলো মাহতাব সাহেবের। যানজটে আটকে থাকতে  থাকতে অস্থির  লাগছিল ।  পিছনের সীটে  বড় ছেলে মোহন মুখ ভার করে  বসে আছে। মোহন যে গাড়ীতে বসে আছে  সেটা এতক্ষন মনেই ছিলনা মাহ্তাবের। তিনি  পিছন ফিরে  মোহনকে দেখলেন। কয়েকদিন  ধরেই  দেখছেন  ছেলেটা খুব মুখ ভার করে থাকে। অফিসের কর্মচারীদের উপর খুব  হম্বি তম্বি করে। কি হয়েছে  ছেলেটার ?  মোহন কি  দাম্পত্য  সমস্যায়  ভুগছে ? কি জানি হতেও  পারে। কিন্তু পিতা হয়ে  পুত্রকে কি তিনি এ কথা জিজ্ঞেস  করবেন ?  নাহ্ এসব নিয়ে কোন প্রশ্ন  তিনি ছেলেকে করতে পারবেন  না। চিরকালই তিনি সন্তানদের সাথে  যথেষ্ট দুরত্ব বজায় রেখে চলেছেন। ছেলেরা তাকে যথেষ্ট  ভয় করে।  এটুকু ভয় না থাকলে ছেলেরা তাঁকে মান্য  করবে কেন ? নানা রকম ঠুনকো পারিবারিক  সমস্যা  নিয়ে ভাববার তাঁর সময় নেই । তাঁর অন্য  অনেক কাজ আছে। আজীবন তিনি  কাজের মধ্যে ডুবে রয়েছেন। যতদিন তিনি বেঁচে আছেন  আরো অনেক কাজ করতে হবে। নিজের জন্যে  পরিবারের জন্যে  মানুষের  জন্যে , যাতে  মৃত্যুর পরেও মানুষের  মন থেকে তিনি হারিয়ে  না যান। এই ইচ্ছেটাকে সামনে রেখেই  তিনি ছুঁটে চলেছেন অবিরাম।  বয়স তো আর কম হয়নি, মাঝে মাঝে ক্লান্ত হয়ে পড়েন কিন্তু এই ক্লান্তিকে তিনি  আমল দেননা । পারিবারিক ক্ষুদ্র যে সব সমস্যা  আছে সে সব তিনি  তাঁর স্ত্রী রেহানার উপড় ছেড়ে দিয়েছেন।  সে কতটুকু কি করতে পারে  তাঁর খবরও তিনি ঠিকমত  রাখতে পারেন না।
 চলবে.....