টানাপোড়েন (পর্ব-৯)
চাপ
পরের দিন যখন স্কুলে গেলো রেখা, সেদিন এত চাপ মুখ ই তুলতে পারে নি। 10 ক্লাসের ক্লাস টিচার। মেয়েদের চেকলিস্ট এর সই, তথ্যগুলো সঠিক কিনা সেগুলো ভালো করে যাচাই করে অনলাইনে পুট করতে হবে। এর মধ্যে রিম্পাদি কয়েকবার এসে তাড়া দিয়ে গেছে। কি রে টিফিন করবি তো ,চল?
হ্যাঁ ,এই যাচ্ছি রিম্পাদি। কিছু মেয়ে এত ভুল করছে, ডকুমেন্টস রয়েছে ।তা সত্বেও দেখে দেখে ভুল। এখনো দশটা মেয়ের মত বাকি।
ম্যাম আমি কি কাস্ট লিখব?
হ্যাঁ রে, বন্দনা ।তোর মাথা কি গেছে? তুই কি .st. sc. obc ,না জেনারেল?
ম্যাম ,আমি জেনারেল। তাহলে বোকা বোকা কথা বলিস কেন? সেটাই লেখ।
ওকে ম্যাম।
আর কথায় কথায় ok বলতে হবে না। ঠিক আছে। এতক্ষণে কম্পিউটার থেকে ওঠার সময় হল। রিম্পা দি এসে আবার হাজির। আসলে কালকের ওই রোমিও জুলিয়েটের কথাটা ,এখনো রিম্পাদির মনে আছে । আর যদি প্রেমের গন্ধ পায় তাহলে আর রক্ষে নেই। একদিন শুনতে হবে রিম্পাদি কারো প্রেমে পড়েছিল কি না?গল্পটা যখন জানতে চাইছে, বলতেই হবে। আজকে কি সময় হবে? এরইমধ্যে
রিম্পা দি চায়ের কাপ হাতে নিয়ে এসে বলল ' এই নে চা ।চা খা রেখা। মাথাটা ছেড়ে যাবে দেখ।'
রেখা ঘাড়টা একটু মটকাল তারপর বলল
'সত্যি মাথাটা ধরে আছে রিম্পা দি। কিন্তু তুমি চা নিয়ে কেন ?সন্ধ্যা দি কোথায়?'
'আছে কোথাও ।আমি নিয়ে আসলাম রিম্পাদি বলল।
'মাথা ধরবে না? কখন এসে বসেছিস বল তো? তারপর বকবক, বকবক।
হ্যাঁ রে ,কালকের ঘটনাটা বলবি?'
রেখা জানে তো গতরাত্রে রিম্পাদির ঘুম হয় নি , কথাটি না শুনতে পেয়ে।এমনিতেই রোমান্টিক গল্প পেলে রিম্পাদি সেখান থেকে উঠতে চায় না।
আমার ক্লান্ত অবসন্ন মুখ দেখে রিম্পা দি বলল_
'দাঁড়া তোর কপালটা একটু টিপে দেবো -বলেই মেসেজ করতে শুরু করলো রিম্পাদি'।
আমার এত আরাম লাগলো চোখটা বুজে আসলো তখনই ভাবতে লাগলাম এবার তো বলতেই হবে।
আর বোলো না রিম্পাদি ।আমার হাসবেন্ডের বন্ধু সুরঞ্জন ।ওর বোনের সাথে কালকের সেই রোমিওকে দেখালাম ,ওর সম্পর্ক ছিল।
রিম্পাদি বলল-ওমা ,ওই মেয়েটি শিখা নাকি?
ধুত্তুরি খেপেছো নাকি? আরে সেদিনই ফোনে কথা বলছিল সুরঞ্জনদা।একটা ভালো ছেলে দেখতে। আমার বর বলল 'কার জন্য?
সুরঞ্জনদা বলল ' কার জন্য আবার। ভুলে গেলি আমার বোন শিখা।ওর তো এবার ফাইনাল ইয়ার হয়ে যাচ্ছে। এবার তো ভালো ছেলে দেখতে হবে,,।
মনোজ অবাক হয়ে 'কিন্তু.. তোর বোনের..? বলেই থেমে যায়।"
হ্যাঁ ওর সম্পর্কটা ভেঙে গেছে। আমরাই ভেঙে দিয়েছি। তোর বৌদি কিছুতেই ওই ছেলেটির সঙ্গে শিখার বিয়ে দেবে না। যদিও ওর যথেষ্ট যুক্তি আছে। আর আমার বোন ও রাজি না। যতসব থার্ড ক্লাস ছেলে। আমার বোনের ওর থেকে অনেক ভালো জায়গায় বিয়ে হবে।'
মনোজ বলল 'যদি
ও জিজ্ঞেস করা ঠিক নয় ,তবুও বলছি। এতদিনের সম্পর্ক।
সুরঞ্জনদা বলল 'কুকুরের পেটে ঘি হজম হয় না জানিস তো? একটা লাইন করা মেয়ের সাথে এখন নাকি লটকে গেছে। এজন্য আমরা ব্যাপারটা জানতে পেরে ওর থেকে সরে এসেছি। শিখা খুব কষ্ট পেয়েছে।
আজকাল কাকে বিশ্বাস করব বল তো ?পারিবারিক সূত্রে চেনাজানা ছিল। ছেলেটা ও ভালো ছিল কিন্তু কি করে যে এতটা চেঞ্জ হয়ে গেল। সেটা তো আমরা ভাবতেই পারছি না। বোনটার মুখের দিকে তাকানো যাচ্ছে না। যতই হোক এতদিনের একটা সম্পর্ক। আমরা যতই বলি না কেন? ভেতর থেকে তো সেটা মেনে নেওয়া সম্ভব হয় না। তবু ওকে বোঝানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। ও নিজেও সেটা বুঝতে পারছে। এইজন্য একটু তাড়াতাড়ি ভালো ছেলের সম্বন্ধ খুঁজছি।
দেখ না মনোজ তোদেরও কোন জানাশোনা ভালো ছেলে থাকলে..?
মনোজ বললো ' নিশ্চয়ই'। শিখা তো আমার বোনের মতোই।
এই পর্যন্ত শুনেছি রিম্পা দি।
রিম্পা দি সব শুনে বলল-হ্যাঁ রে ,রেখা মেয়েটি কেমন?
রেখা বলল-মেয়েটি দেখতে শুনতে খুব সুন্দর।
কেন ?
তোমার কাছে কোন ছেলের সন্ধান আছে?
রিম্পা দি বলল-আছে তো?
কে গো?
তোমার ভাই আছে নাকি?
ধুত্তরি, আমার আবার ভাই কোথা থেকে থাকবে।
আরে সেদিন শুভ্রাদি বলছিল ওর ভাইয়ের কথা।
ভাই নাকি বিদেশে থাকে। এই তো কদিন হলো দেশে এসেছে।
একেবারে বিদেশে থাকা ছেলে? চিন্তাগ্রস্ত অবস্থায় রেখা বলল।
এসব ছেলে কি আর বিদেশে কাউকে না পছন্দ করে রেখেছে বলো।
রিম্পা দি বলল 'আরে না শুনলাম ওর জন্য নাকি মেয়ে দেখা হচ্ছে।'
এরইমধ্যে মিলি এসে কথাগুলো শুনছে। শুনে বলল তুমি সৌরভ এর কথা বলছো?
রিম্পা দি বলল হ্যাঁ।
মিলি মুখটা । বেঁকিয়ে বলল 'শুনছি ওই ওই ছেলের নাকি মেয়ে ঠিক করা আছে।'
রিম্পা দি বলল : তাহলে শুভ্রাদি এত মেয়ের কথা বলছে কেন এত ঘটা করে?
আরে আমরা তো পাশে থাকি আমরা জানি।
একটু যেন রহস্যের গন্ধ পাওয়া গেল কথায়।
রেখা বলল 'এই কি ব্যাপার রে মিলি?
মিলি বললো 'আরে সে ছেলে তো বিবাহিতা সম্পর্কে আবদ্ধ?
অবাক হয়ে রিম্পাদি ও রেখা বলল-কি যা তা বলছিস মিলি?
মিলি 'ঠিক ই বলছি। বিয়ের আগে থেকে একটি মেয়েকে ভালবাসত। সেই মেয়েটার বিয়ে হয়ে গেছে। এখনো নাকি সেই মেয়েটিকে ভালোবাসে।'
রেখা বলল 'ওই বিবাহিতা মেয়েটি কি রাজি হবে?
মিলি বললো 'ঘটনা অনেক দূর এগিয়ে গেছে।
মেয়েটি যদি রাজি থাকে তাহলে ওদের বিয়ে হয়ে যাবে।'
রিম্পা দি বলল 'আমরা এত কাছে থেকে জানতে পারলাম না ।তুই কি করে জানলি?
গুপ্তচর হয়ে ।বুঝলে? মিলি বললো।
রেখা বলল 'না গো রিম্পাদি ।শিখা এমনিতেই কষ্টতে আছে। এই ধরনের ছেলের সঙ্গে সম্বন্ধ ঠিক করা অনুচিত। জেনেশুনে ওরকম একটা ছেলের সঙ্গে শিখার সম্বন্ধ ঠিক করা ,ঠিক হবে না।
'কি দিনকাল পরলো 'রিম্পা দি বলল।
এদিকে বড়দি এসে তাড়া দিলেন ' কি হলো ,আপনাদের গল্প হল?
ওদিকে পরবর্তী রোল নম্বরের মেয়েরা লাইনে দাঁড়িয়ে আছে। একটু দেখুন।বলে চলে গেলেন।
রেখা বলল 'দেখলে রিম্পাদি ,বড়দি কেমন খোঁচা দিয়ে কথাটা বলে গেলেন। শুধুমাত্র টিফিনটা খেলাম।
না বাবা, উঠি। কে যে কখন বড়দির কানে গিয়ে লাগাবে,..? এমনি কপালটা ভালো নয়। তার উপর মিথ্যে কথার কারসাজিতে কি কষ্ট বা দুর্ভোগ আছে কপালে কে জানে? মানে মানে সরে পরি। রিম্পা দি চাপ নিও না,পরে কথা হবে।