০৯ জুলাই ২০২২

কবি মিতা নূর এর কবিতা "কেই থাকে সব" 





কেই থাকে না 

মিতা নূর 



কেউ একজন চলে গেল, 
গেল তো গেল!
বুকের ভেতর'টা একেবারেই, 
নিগড়ে নিয়ে গেল।
যাওয়ার সময় শুধু' 
শ্রাবণ চোখে তাকিয়ে ছিলাম। 
বুক ফাটা আর্তনাদ  চেপে ধরে.!
একবারও চিৎকার করে বলতে পারিনি,
পিছন ফিরে চাও।
শূন্য করে রেখে যেওনা, 
আমাকেও তোমার সঙ্গে নিয়ে যাও।
কেউ থাকে না, কেউ না..! 
জানি হবে না জীবনে কিছু পাওয়া, 
শুধু আর্তনাদে, মিছে চাওয়া। 
শুধুই মিথ্যে প্রতিশ্রুতি, 
মিথ্যে মায়া বাড়িয়ে' আঁকড়ে ধরে রাখা! 
কেউ আগলিয়ে রাখে না, 
থাকবে বলেও, 
শেষ অব্দি কেউ  থাকে না। 

মমতা রায়চৌধুরী এর ধারাবাহিক উপন্যাস টানাপোড়েন পর্ব ১৮০





উপন্যাস 


টানাপোড়েন ১৮০

ঈশ্বরের ইচ্ছে

মমতা রায়চৌধুরী



"উফ"! কি গরম আর পারা যাচ্ছে 
না ।তারমধ্যে আজ শেষ লটের খাতা জমা দেওয়া। হেড এক্সামিনারের বাড়ি ও তো কম দূরে নয় ।আজকে একা যাবার সাহসই নেই । রেখা মনে মনে ভাবল মনোজকে একবার বলে দেখবে। অবশ্য কদিন আগে বলা হয়েছিল ,নিজের থেকেই ও বলেছিল যাবে ।কিন্তু  যদি ভুলে গিয়ে থাকে ,এখন তো ওর মনটা নানা অবস্থায় আছে।তাই আজকে আর একবার স্মরণ করাবে? মুড কেমন আছে কে জানে? যাই হোক না কেন বলবেই। খুব সকাল সকাল উঠে পড়েছে সব কাজ গুলো গুছিয়ে রেখে দিয়ে যেতে হবে। চা করতে করতেই এসব কথাই ভাবছিল। চা হয়ে গেলে ফ্লাস্কে চা ঢেলে, বাকি চা কাপে ঢেলে নিয়ে মনোজের ঘরের দিকে পা বাড়ালো।
রেখা মনোজকে ডাকলো জানলাটা খুলতে খুলতে'কিগো ওঠো। এত গরমের মধ্যে আবার জানলাটা কখন উঠে বন্ধ করেছ, মাথাটা কি কাজ করছে না নাকি?
সাড়া না পেয়ে আবার ডাকল" কি গো সাড়া দিচ্ছ না যে? এবার মনোজের গায়ে ধাক্কা দিয়ে বলল'ওঠো,।
মনোজ এবার চোখটা খুলে অবাক হয়ে তাকিয়ে বলল" কেন এত তাড়াতাড়ি ডাকছ?'
রেখা জানে সকাল সকাল ঘুম ভাঙানো মানে রেখার পক্ষে সেটা খুবই ট্রাপ ব্যাপার। একটা কুম্ভকর্ণ যে অসময়ে ঘুম ভাঙানো যাবে না, ভাঙ্গলেই বিপদ।
রেখা বলল' আজকে খাতা জমা দেবার দিন। তুমি যাবে তো আমার সাথে?'
মনোজ রেখার দিকে তাকিয়ে বলল 'না গেলে হবে ,এতটা রাস্তা তুমি একা 
যাবে? '
রেখা একটু খুশি হল তারপর বলল 'সেই জন্যই তো তোমাকে ডাকছি।'
মনোজ বলল' একটু ঘুমাতে 
দাও ।তারপর দেখো সত্যি সত্যি উঠে যাব।'
রেখা বলল' ঠিক আছে ।'রেখা দেখল এরপর আর বিরক্ত করা চলে না তাই বেরিয়ে এল। আবার আর একটা কথা বলার জন্য ভেতরে ঢুকলো ' হ্যাঁগো একবার বিরক্ত করছি .দুপুরে বাড়িতে খাবে তো নাকি?"
মনোজ বলল' আজকে দুপুরে রান্নাটা ক'রো
 না ।
রেখা খুশি হয়ে  বলল' মানে?
মানে আজকে রান্না করব না বাইরে খাবার খাবে?'
মনোজ শুধু বললো 'হুম।
রেখা তো মনে মনে এটাই চাইছিল। ঈশ্বর রেখার মনের ইচ্ছেটা পূরণ করেছেন। তাই
রেখার মনের ভেতরে খুশির ঢেউ ফুলে  ফেঁপে  উঠলো 
এমনিতেই গরমে রেখার রান্না করতে ইচ্ছে করছে না ,আর যদি মনের আশাটা পূর্ণ হয়ে যায় তাহলে তো সোনায় সোহাগা।
কিন্তু রেখার তো ছোট বাচ্চারা আছে ওর মা আছে ওদের জন্য তো করতেই হবে। রেখা চটপট  ওদের খাবারটা রেডি করতে গেল।
এরইমধ্যে তুতু এসে কিউ কিউ করতে লাগলো। রেখা বলল "ওমা তুমি আবার কখন আসলে"?
"এখন বিরক্ত করো না তোমাদের খাবার রেডি করছি।"
তারপরেও সমানে কিউ কিউ করে যেতে লাগলো।
রেখা গাল দুটোকে ধরে আদর করে বলল কি হয়েছে? বলবি তো কি হয়েছে?
রেখা আবার কাজে মনোযোগ দেয়। কিন্তু ওর আওয়াজ বন্ধ হয় না। অহ ,তুতু বিরক্ত করো 
না আমাকে ।বেশ তো
 ঘুমাচ্ছিলে ।আবার উঠে আসলে কেন?'
হঠাৎ রেখার সিক্স সেন্স কাজ করলো ওর পটি বা হিসু পায় নি তো?
তাড়াতাড়ি গ্যাসের আঁচটা সিম করে দিয়ে দরজা খুলে দিল। হ্যাঁ যা ভেবেছে তাই। রেখা লক্ষ্য করলো তুতু (তুলি) একটা পা যেন ফেলতে কষ্ট হচ্ছে। রেখা ভাবল ওর পায়ে কী করে লাগল?
তাহলে তো ওষুধ খাওয়াতে হবে। 
 মন্টু ডাক্তার কে ফোন করে ওষুধ জানতে হবে।
এরমধ্যে পটি করে ঘরে ঢুকে পরল এখন যেন রেখাকে চিনতেই পারল না।
রেখা বলল' কি রে আমি দাঁড়িয়ে আছি ,তোর হুঁশ নেই।'
রেখার কথায় একবার পিছন ফিরে তাকাল তারপর ডোন্ট কেয়ার মনোভাব নিয়ে একেবারে ঘরের ভেতরে গিয়ে শুয়ে পড়ল।
রেখা আপন মনে হাসতে লাগলো। এরাই তোর বেঁচে থাকার অক্সিজেন' এদের মধ্যে দিয়ে কেটে যায় কতটা সময় ওদের ভালোবাসায় আবদারে রেখার কল যেন কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। ভাবতে ভাবতে যেই রান্নাঘরে রেখা  ঢুকেছে আবার কলিং বেলের আওয়াজ 'জয় রাধে ,রাধে , কৃষ্ণ, কৃষ্ণ গোবিন্দ গোবিন্দ বল রে…।'
রেখা ভাবল এ সময় আবার কে আসলো?"
"মাসি? কাজের মাসির তো এখনো সময় হয়নি।"
আবার কলিং বেলের আওয়াজ 'জয় রাধে, রাধে, কৃষ্ণ ,কৃষ্ণ ।গোবিন্দ ,গোবিন্দ ,বল রে…।"
দরজাটা খুলতেই রেখা যেন ভূত দেখার মত দেখল চৈতির মাকে?'
'কি ব্যাপার দিদি এত সকালে?'
চৈতির মার চোখ মুখ যেন শুকিয়ে গেছে একটা বিমর্ষ অবস্থা বোঝা যাচ্ছে।
"আর বলবেন না দিদি, একটা বিপদ হয়েছে ,একটু দাদা কে ডেকে দিন না?'
"হ্যাঁ , সে  দিচ্ছি । কিন্তু  কি হয়েছে?"
"আপনাদের দাদার হঠাৎ করে মুখের একটা অংশ বেঁকে যাচ্ছে কথাগুলো সব এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে।"
কথাগুলো বলছে আর চৈতির মায়ের চোখগুলো জলে ভর্তি হয়ে গেছে।
রেখা বলে" এখন দাদা কোথায়?
শুয়ে থাকা অবস্থাতেই হয়েছে।
আপনি দাদাকে রেখে চলে আসলেন?'
'কিছু বুঝতে পারছিনা আমার দিশেহারা লাগছে।'
'মেয়েকে ফোন করেছেন?'
'হ্যাঁ করেছি।'
আর এই জন্য আপনাদের কাছে ছুটে এসেছি।'
'ঠিক আছে চিন্তা করবেন না'
 দাদা কে ডেকে দিচ্ছি।'
'কিগো উঠ তো? অ্যা ই ওঠো।
কি হলো?'
আর একবার চৈতিদের বাড়িতে যাও ওর বাবার কি যেন হয়েছে?
হসপিটালে ভর্তি ব্যাপারে ব্যবস্থা করতে হবে একা মেয়ে মানুষ ?"তো?
হ্যাঁ সে ঠিক আছে একবার পার্থকে ফোন করে দিই। আমিও এই কথাটাই ভাবছিলাম হ্যাঁ যত তাড়াতাড়ি পারো পার্থ কে ফোন করো। সঙ্গে গাড়িটাও যেন নিয়ে আসে।
রেখা চৈতির মাকে বলল" দিদি আপনি বাড়ি যান এখানে দায়ী থাকবেন না ।ওরা যাচ্ছে একটু পরে। আপনি বলুন মেয়ে জামাই কখন আসতে একবার জেনে নিন।
হ্যাঁ ঠিকই  বলেছেন  আমি বাড়ি যাচ্ছি।
মনোজ পার্থকে ফোন করলো

"হ্যালো'

এই আমি মনোজ দা বলছি পার্থ।
হ্যাঁ ,সুপ্রভাত দাদা ।।এ তো দাদা সকাল সকাল মনে করলেন।'
বলেই  হাসতে লাগল।
পার্থ একবার এক্ষুনি গাড়িটা নিয়ে এসে চৈতি দের বাড়ির কাছে দাঁড়াও।

এরমধ্যে রেখা ও দেকগেল আবার কলিং বেলের আওয়াজ
"জয় রাধে ,রাধে কৃষ্ণ কৃষ্ণ গোবিন্দ ,গোবিন্দ বল রে।'
রেখা মনে মনেl ভাবল আজকে খাতা জমা দেওয়ার লাস্ট ডেট এর মধ্যে যদি মনোজও চলে
যায় তাহলে তো।  ..?

মনোজ্ঞ বলল' আমি জানি কি ভাবছো?
এর মধ্যে পার্থ এসে হর্ন বাজালো।
মনোজ বলল' আসছি।'
এদিকে তাড়াতাড়ি চৈতির বাবাকে কোল পাজা করে তুলে  গাড়িতে শোয়ালো।
তারপর দ্রুত গাড়ি চালিয়ে হসপিটালে এসে ভর্তি করে দিল।
এদিকে রেখা ঘড়ির দিকে তাকাতে লাগলো কি জানি শেষ পর্যন্ত মনোজ যেতে পারবে কিনা?
তবুও রেখা মনের ভেতরে ক্ষীণ আশা টুকু জাগিয়ে মনোজ এর জন্য অপেক্ষা করতে লাগলো। কারণ মনোজ যদি না আসতে পারতো, তাহলে ফোন করে দিত।
এসব ভাবতে ভাবতেই রেখা মিলি আর বাচ্চাদের খেতে দিয়ে দিল। নিজেও ব্রেকফাস্ট করে নিল। রেখা সবকিছু গুছিয়ে গাছিয়ে এবার মনোজকে একটা ফোন করলো।
রিং হতে  না হতেই'বলল হ্যালো'
তুমি কখন আসবে?
এইতো ডাক্তার দেখাচ্ছি দাদাকে এডমিট করে নিয়েছে ।
আসলে বেলা হয়ে যাচ্ছে তো। রোদের তাপ টাও বাড়ছে।
সে হোক কি আর করা যাবে বিপদের দিনে মানুষের পাশে তো থাকতেই হবে।
হ্যাঁ সে কথা তো ঠিকই।
রেখা মনোজ যেতে পারবে ভেবে মনে মনে খুশি হল কিন্তু চৈতির বাবার জন্য আবার মন খারাপ হলো ঈশ্বর করুন সবকিছু ঠিক করে দিন।
ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করল রেখা।
চৈতির মা পার্থ আর মানুষকে বারবার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করল।
মনোজ বলল বৌদি এভাবে বলবেন না মানুষ হয়ে জন্মেছি মানুষের জন্য যদি কিছু করতে না পারে তাহলে মনুষ্য জীবনের সার্থকতা কি।
পার্থ বলল হ্যাঁ কিছু চিন্তা করবেন না সব ঠিক হয়ে যাবে।
চৈতির মা বলল তবুও আমি বলার সাথে সাথে যেভাবে আপনারা সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন এইটুকু কৃতজ্ঞতা যদি প্রকাশ না করি তাহলে ভেতরে ভেতরে খুব ছোট লাগবে নিজেকে।"
মনোজ বলল 'বৌদি এসব কথা না ভেবে বরং ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করুন দাদা যেন দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠেন।'
পার্থ বলল" চৈতি আসছে?
চৈতির মা বলল হ্যাঁ আসবে তত সমস্যা রয়েছে ও প্রেগন্যান্ট এই অবস্থায় হুটোপাটি করে আসাটা জার্নি করাটাও তো রিক্স।'
তাছাড়া ওর তো প্রথম বাচ্চাটা নষ্ট হয়ে গেছে।'
পার্থ, মনোজ দু'জনায় বলল"তাহলে তো রিক্স ই  বটে।'
চৈতির মা বলল তবুও বাবার এই অবস্থা শুনে ও তো আর নিজেকে গুটিয়ে রাখতে পারবে না আসবেই। এখন পুরোটাই ঈশ্বরের উপর ভরসা করা ছাড়া কিছুই নয় ঈশ্বর যেটা ভালো বুঝবেন সেটাই করবেন।
'মনোজ বলল কিছু চিন্তা করবেন না ঈশ্বর সব সময় মানুষের ভালোর জন্যই করে থাকেন।
মনোজ ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলল পার্থ আমি বরণ বাসে বেরিয়ে যাচ্ছি কারণ রেখার আজকে খাতা জমা দেবার আছে। তুমি বরংআরেকটু ওয়েট করে ডাক্তার কি বলেন সব শুনে বৌদিকে নিয়ে তার পরে ফিরো।

কবি সালাম তাসির এর কবিতা উত্তরের হাওয়া




উত্তরের হাওয়া 

 সালাম তাসির


প্রেম এক অদ্ভুত অলঙ্কার
কখনও ফুলের কখনও কাঁটার
একবার ভোলে বার বার ভোলায়
কখনও জোছনায় কখনও আঁধার।

অভিমানে হৃদয় খুঁড়ে অশ্রুজলে ভাসায় দু'কুল
কখনও উড়িয়ে আঁচল কখনও ভাঙে সব ভুল
দু'চোখে আনন্দ ধারা মননে  স্বপ্ন জাগায় 
কখনও লালনে সুখ কখনও নজরুল।

ক্ষণিকের ললাট চুমি ভুলে যাওয়া দুঃখগুলো 
কখনও বসন্ত রাত কখনও উষার আলো
জীবনের ফল্গুধারায় সুখ দুঃখ একসাথে রয়
কখনও ক্লান্ত আঁধার কখনও প্রদীপ জ্বালো।

জোছনা ধোয়া বিশ্বাসের ফুল
কখনও কালো গোলাপ কখনো রক্ত শিমুল 
জীবনবোধে জাগুক প্রাণ পূর্ব জন্মের  ঘরে
কখনও ফুটছে বকুল কখনও গন্ধে আকুল।।


কবি সুব্রত চক্রবর্ত্তী এর কবিতা "শেষের ঠিকানা"




শেষের ঠিকানা

 সুব্রত চক্রবর্ত্তী
    

কৃত্রিম মায়াবী আলোর বন্যায়
 ভাসছে সবাই ----
আমিও তারই মাঝে এগিয়ে চলি অনিবার।
হতাশার পাহাড় বয়ে বয়ে বেড়াচ্ছি।
তবুও চলছি , ছুটছি - ছুটেই চলেছি
অজানা কোনো রাজপথ ধরে।
একটা একটা করে মাইল ফলক
তীব্র গতিতে পিছিয়ে যায় দূরে --
সরে সরে আরো দূরে ।

আলোর ঝলকানিতে 
ঝাপসা হয়ে আসে দৃষ্টি।
চলার পথ কেমন যেন আরো অচেনা।
চেনা মানুষের ভিড়েও
আপনজনের দেখা নেই।
আগামীর স্টেশন ঠিকানাহীন --
পথের শেষও অজানা।

তথাপি ভেসে ওঠে ঝাপসা চোখে
ব্যর্থতা,চরম ব্যর্থতাময় আমি।
তবুও চলছি,ছুটেই চলেছি
হতাশার পাহাড় কাঁধে বয়ে বয়ে
ছুটছি একটার পর একটা
মাইল ফলক পিছনে ফেলে --
দূরে আরও দূরে ---।।


এম. আর হারুন এর কবিতা "স্মৃতি বিজরিত"





স্মৃতি বিজরিত

এম. আর হারুন


বৈঞ্চব পাড়ায় গৌরনিত্যানন্দের কীর্তণ
ঢাকের তালে সারা রাত চলবে ভগবানের জয়োগান,
নেশায় মাতাল হয়ে দেবানন্দ তুমিও
সেখানে ছিলে সনাতনী একজন গুনগ্রাহী,
আজ তুমি নেই দেবানন্দ,
স্মৃতির পাতায় বেশ মনে পড়ে।

কলেজ রেষ্টুরেন্টে সিঙ্গারা খেয়ে
দিন কাটাতো ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার স্বপ্ন দেখা
হত দরিদ্র মাহতাব,
তোমার আর ইঞ্জিয়ার হওয়া হলোনা
ক্যান্সার কেড়ে নিলো প্রান।

সুকুমার কবিতা লিখতে লিখতে
এক সময় দেশের সুনামখ্যাত কবি হতে
চেয়েছিলো সুনাম সুখ্যাতির আশায়,
সেই সুকুমার আজ পাগল বেশে
রাস্তায় কুঁড়ানো বিড়ি তুলে টানছে।

ক্লাশের শেষ বেঞ্চে বসে থাকা আজিম
কখনই স্যারের পড়া দিতো পারতো না,
স্যার বলতো কিছুই হতে পারবে না
আজ সেই আজিম কোটি টাকার 
গাড়ি হাঁকিয়ে চলছে শহরের ব্যস্ত নগরীতে।

ক্লাশ রুমে টেবিলে তাল তুলে গান করতো
যে আফজাল শিল্পী হওয়ার আশায়,
আজ সে হাসপাতালের বারান্দায়
মৃত্যুর সাথে যুদ্ধ করছে প্রতিনিয়ত,
তাকে দেখবার কেহ নেই।

বিশ্ব জুড়ে যে ছেলেটি আজ বিজ্ঞানী
নামে খ্যাতি অর্জন করে নোবেল পেলো
সে আজ মাটিতে পা রাখার সুযোগ পাচ্ছেনা
দিবানিশি চন্দ্র গ্রহন নিয়েই ধ্যান জ্ঞানে মগ্ন
অথচ তাকে পাত্তা দিতাম না।

আজ আমরা কে কোথায় আছি
কারো হাড় মাংশ পচে গেছে,
কেউ দেউলিয়া হয়ে পথে বিড়ি টানছে
কেউ বিশ্বের বুকে মহা মানব,
কেউ ছেঁড়া কাঁথায় রাত পার করছে
কেউ মৃত্যুর সাথে যুদ্ধ করছে,
কেউ গলা ফাটিয়ে দ্বারে দ্বারে ঘুরছে
একটি চাকুরীর আশায়,
সত্যিই আমাদের স্মৃতি বিজরিত।

আশ্রাফ বাবু এর কবিতা "দৃষ্টিপাত"




দৃষ্টিপাত

আশ্রাফ বাবু


চোখ তাকে ঘিরে আছে অত্যন্ত উত্তপ্ত 
দেখায় প্রাণবন্ত ও উৎসুক বহির্ভাগের শিখা-চক্র,
যে ভোরে আমি যাত্রা করবো
ভাবছি অতিক্রম করে যাবে আমার দৃষ্টিপাত।

সময়ের ব্যবধানে কাঁটায় পুরো বারো মাস। 
ঋতুও পিছিয়ে আছে এই নগরীতে এখন
রাত্রিকে অতিক্রম করার জন্য, 
আমি অপেক্ষা করি নীরবে। 

অভ্যন্তরে প্রতীক্ষা করছে যা ভাবনার অতীত
তোমার মুখছবিতে হয় না ভাংচুর
নড়েচড়ে আমার স্পর্শ করি বাজে না কোনো সুর
চোখের পুতলি নাড়াতে পারে না পাতা।

কীভাবে বন্ধ করবো অভ্যন্তরে প্রতীক্ষা 
তাবৎ হয়েছে উৎসুক;
ভেতরে আমি এড়াতে পারি না
নির্নিমেষ দৃষ্টিপাত-চাও না ছুঁতে তোমার দুহাত।

কবি কানন রায় এর কবিতা "জীবন"





জীবন

কানন রায়


জীবনকে জীবন দিয়ে জয় করতে হয়,
মরণকে প্রাণের বিনিময়ে
টুকরো টুকরো কথা,
ছোট্ট ছোট্ট ব্যথা
বলে দেয় কত না বলা কথা।
একটু ভালোবাসা,
ছোট্ট ছোট্ট আকাঙ্খা 
কিছু পাওয়া কিছু না পাওয়া
চিনিয়ে দেয় জীবন কতো সহনশীল।
জীবনের চাওয়া এক রকম
জীবনের পায় আরেক রকম।
জীবনের দেয়া এক জীবনের নেয়া আরেক
এতো কিছুর মধ্যে ও জীবন বহতা।