১৭ ডিসেম্বর ২০২১

ফেরদৌসী খানম রীনা 





বিজয় মানে


বিজয় মানে সবুজের মধ্যে
লাল একটি পতাকা,
বিজয় মানে বিশ্ব মাঝে 
বাংলাদেশ মানচিত্র আঁকা। 

বিজয় মানে স্বাধীন দেশ
আনন্দ মনের মাঝে,
বিজয় মানে দোয়েল,কোকিল
ডাকে সন্ধ্যা  সাজে।

বিজয় মানে মায়ের চোখে 
ছেলে হারানো জল,
বিজয় মানে ছেলে হারিয়েও
আছে যেন মায়ের বল।

বিজয় মানে বাবার কাঁধে
আদরের ছেলের লাশ,
বিজয় মানে অশ্রু মোছে বোন
হয়েছে তার সর্বনাশ।

বিজয় মানে পরাধীনতা থেকে
মুক্তির গান,
বিজয় মানে মুক্তিযোদ্ধার
রাখলো দেশের মান।

বিজয় মানে মুক্ত -স্বাধীন দেশ
সুন্দর পরিবেশ,
বিজয় মানে স্বাধীন চেতা
বাঙালি অনিমেষ।

মমতা রায়চৌধুরী/ ৭১





উপন্যাস

 টানাপোড়েন ৭১
তরতাজা প্রাণ ঝরে গেল

মমতা রায়চৌধুরী


বাপরে বাপ আগুন লেগেছে যেন বাজার দরে। বাজার থেকে ফেরার পর রেখার মাথাটা গরম হয়ে গেল। সাধারণত মনোজ ই বাজার ঘাট করে।
আজ ছুটির দিন যদিও মনোজই চেয়েছিল বাজারে যেতে কিন্তু রেখা বেরোতে দেয় নি ।সবেমাত্র এত বড় একটি রোগের কোপ থেকে উঠলো। কি করে ওই বাজারে আবার ওকে যেতে দেয়? এই ভাবনা থেকেই গেছিল বাজারে করতে ।পার্থর  শরীর খারাপ ,নইলে ওই করে দিচ্ছিল। তাহলে সাধারণ মানুষ কি খাবে?
দুই হাতে বাজারের ব্যাগ নামিয়ে বকবক করছিল। মনোজ ঘর থেকে শুনতে পেয়ে বাইরে বেরিয়ে এসে বলল' কি হলো ?কার সঙ্গে কি জন্য বকবক করছ?
রেখা মাক্স টা খুলে হ্যান্ডওয়াশ দিয়ে ভালো করে হাত পা হাত ধুয়ে টেবিল থেকে এক গ্লাস জল ঢকঢক করে খেলো তারপর হাত ছেড়ে বলল আর বোলো না বাজার নিয়ে কথা বলছিলাম আপন মনে।
মনোজ বলল-কেন কি হয়েছে বাজারে?
রেখা বলল মূল্যবৃদ্ধি বাজারে আগুন লেগেছে দেখলাম। তবে জানো তো একটা ব্যাপার আমার একটু সন্দেহ লাগলো।
মনোজ বলল 'কি ব্যাপারে,?'
রেখা বলল' বাজারে আজকে দেখলাম  যে কাঁচা আনাজ এর দাম জিজ্ঞেস করছেন বেশ কয়েকজন ব্যক্তি ।ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা ও বলছেন?'
মনোজ বলল 'হঠাৎ এই কথা বলছ কেন?'
রেখা বলল 'আমার না একটা সিক্স সেন্স কাজ করছে জানো ।তার আগে বল তো বাজারে কি প্রতিদিনই এরকম কিছু মানুষ দরদাম জিজ্ঞেস করে?'
মনোজ বলল 'বাবা একদিন বাজার করতে গিয়ে তো তুমি একদম রিপোর্টারের মত কথা বলছ?'
রেখা বলল 'দেখলে তোমাকে আমার একটা বিষয়ে সন্দেহ হওয়াতেই তো আমি তোমাকে এই কথাটা জিজ্ঞেস করছি ,উত্তর দাও?'
মনোজ বলল 'না তুমি যেভাবে বলছে সেভাবে লোক দাম দর করে না ।যারা বাজার করতে যায় তারা।'
রেখা একটু ভাবতে ভাবতে বললো 'দেখো আজকে একটা কিছু বাজারের খবর পাব?'
এরকম কথা হতে হতে হঠাৎ পার্থর বাড়ি থেকে কান্নার আওয়াজ ভেসে আসলো।
রেখা বেশ হকচকিয়ে যায় আর মনোজকে বলল 'হঠাৎ পার্থদের বাড়ি থেকে কান্নার আওয়াজ কেন?'
মনোজ ও  কান পেতে শোনার চেষ্টা করলো।
মনোজ বলল-হ্যাঁ পার্থদের বাড়ি থেকেই পাওয়া যাচ্ছে কি ব্যাপার বল তো?'
লেখাগুলো কাকিমার কান্নার আওয়াজ পাচ্ছো ?
মনোজ বলল' পার্থর কিছু হল?'একটু ওয়েট করো ফোন করি।
রেখা বলল ফোন করাটা শোভনীয় নয় এই মুহূর্তে কেউ ফোন রিসিভ করবে না তার থেকে বরং যায় দেখে আসি।
মনে যে বললে ঠিকই বলেছ চলো যাই।
দেখা বলল-তোমার যাওয়াটা ঠিক হবে না তুমি থাকো। আমি যাচ্ছি।
মনোজ বলল' তাই হয় ?পাশাপাশি থাকি আমরা।
রেখা বলল' আরে আমি তো যাচ্ছি বাবা ।আমি আগে  দেখি কি হচ্ছে। তারপরে না হয় ভেবে-চিন্তে সিদ্ধান্ত নেয়া যাবে ।হঠাৎই তোমার অত ছুটোছুটি করে যেতে হবে না।
মনোজ বলল ঠিক আছে যাও তুমি।
রেখা হন্তদন্ত হয়ে বেরিয়ে গেল দরজাটা খুলতে গিয়ে কলাপসিবল গেটে লাগলো চিৎকার করে উঠল উফ উফ বাপরে বাপ একটু তাড়াতাড়ি যেতে চাইছি সেখানে দেখো দরজা ভেঙ্গে ফেলতে ইচ্ছে করছে।
মনোজ বলল-'এসো হাতে একটু জল দাও।'
রেখা বললো 'থাক আর লাগবে না।
রেখা পার্থ দের বাড়ি নিয়ে পৌঁছালো । যাবার সময় রেখার বাজানো উঠছিল এই না কি একটা চাপা উদ্বেগ কাজ করছিল কি জন্য কিসের জন্য কার এই ভাবনা মাথার মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছিল। রেখা গিয়ে প্রার্থীদের বাড়ির দরজার কাছে গিয়ে কলিং বেল আর বাজাতে হলো না দেখলেও দরজাটা খোলাই আছে রেখা বাড়ির ভেতরে ঢুকলো সরাসরি ওদের ড্রইং রুমে গেল। সেখানে যেতেই শুনতে পায় পাশের ঘরে কাকিমার  কান্নার আওয়াজ আসছে ।রেখা সেখানে গেল ।সেখানে গিয়ে দেখছে পার্থর জেঠতুতো ,খুড়তুতো পরিবারের লোকজন এসে হাজির ।রেখা বুঝতে পারছে না ,কি বলবে ?'
হঠাৎ পার্থ দিকে তাকিয়ে রেখা ঈশারায় জানতে চাইল কি হয়েছে?
দিশা বলল 'পার্থর ভাই শুভায়ন কে দেখিয়ে ইশারায় বোঝালো নেই?
রেখা সবটুকু বুঝতে পেরে একটু ধাতস্থ হবার চেষ্টা করছে কিন্তু ভেবে উঠতে পারছে না কেন একইভাবে এই ঘটনা ঘটলো।
রেখা জানে পার্বত্য প্রেমী এই ছেলে। আবার নিশ্চয়ই কোন দুর্গম স্থানে যাওয়ার প্ল্যান করেছিল।
শুভায়ন এর বন্ধু অনীক বলল'একদম ঠিক বলেছেন।'
রেখা বলল'2019 সালে এক দুর্গম পার্বত্য এলাকায় টেকিং করতে গিয়েছিল।
অনীক বলল তারপর থেকেই তো রীতিমতো কি নেশায় পেয়ে গেছিল।'
রেখা বলল' সত্যি তো পার্বত্য পথ কত দুর্গম হয়।'
অনীক বলল'জানেন আপনারা ।ও দিন রাত গুগলে পার্বত্য পথের এডভ্যাঞ্চার খুঁজতো?'
রেখা তো শুনে অবাক।
পার্থ বলল''করোনা কালে লকডাউন চলায়  ২০২০কোথাও যেতে পারে নি।"
অনীক বলল'পুরনো ট্রেকিং এর ছবি ফেসবুকে দিয়ে স্মৃতিচারণা করেই সে বছর টা কাটিয়ে দিয়েছিল দিব্য ।আর ফোনে ফোন করে বল তো ভাই পাহাড বড্ড মিস করছি।'
অনীক বলল '২০২১ সালে করোনা গ্রাফ নামতেই 
উত্তরাখণ্ডের টিকিট কেটেছিল।'
রেখা বললো ' কোথায় যেতে চেয়েছিল?'
অনীক বলল 'দেশের মধ্যে সবথেকে দুর্গম স্থান।'
এর মধ্যে থেকে থেকে পার্থ শুভায়ন এর মা সেন্স হারিয়ে যেতে থাকলো।
অনীক বললো জানেন 'আন্টি পার্বত্য পথ দুর্গম বলে সেগুলো সঙ্গে নিয়েছিল'.।'
রেখা বললো  'কি কি নিয়েছিল?'
অনীক বলল' জাতীয় পতাকা?'
রেখা বলল'ও জাতীয় পতাকা নিয়ে  শৃঙ্গ  জয়ের স্বপ্ন দেখেছিল তাই তো?'
পার্থ বলল'জানেন বৌদি   থেকে ছিটকুল যাওয়ার পথেই ও নিখোঁজ হয়ে যায়। '
রেখা বলল "ওরা তো সঙ্গে তো আরো পর্বতারোহী ছিল?
পার্থ বলল 17 ও 18 অক্টোবর প্রবল তুষারপাত হয় ওই এলাকায় ।'
রেখা বললো 'ঐ সময়ে কি অঘটনটা ঘটে?'
পার্থ বলল'ওদের হোদিশ না পাওয়াতে
 19 তারিখ থেকে তল্লাশি শুরু করে বাহিনী।'
রেখা বলল" তারপর আর কোন খবর পাও নি তোমরা?'
পার্থ বলল গত বৃহস্পতিবার নামখানা পাশ থেকে 100 সেন্টিমিটার পুরু বরফের আস্তরণ সরিয়ে..
পার্থ আর কথা বলতে পারলো না চোখ দিয়ে জল পড়তে লাগল আর হাউ হাউ করে কেঁদে উঠলো।
শুভায়ন এর বন্ধু অনেক বলল বরফের পুরু আস্তরণ সরিয়ে আমার প্রিয় বন্ধু শুভর উদ্ধার করা হয় নিথর দেহ।'
এরপর শুভায়ন এর বন্ধু অনীক ও কাঁদতে শুরু করে আর বলতে থাকে দুর্গম ট্রেকিং প্রাণ কাল আমার বন্ধুর।'
রেখার চোখ ও  জলে ভরে উঠলো ।শুভায়ন খুব মিশুকে ছেলে ছিল। বাড়িতে গেলেই সব সময় বৌদি বৌদি বলে উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠতো।
রেখা শুভায়ন এর মা দাদা পরিবারের অন্যান্যদের সান্ত্বনা দিতে লাগলো।
ইতিমধ্যেই দেখা গেল তরতাজা এক তরুণের মৃত্যুতে পরিবার-পরিজনদের পাশাপাশি স্কুলের বন্ধুদের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে আসে এবং আস্তে আস্তে সুকান্তের বাড়ির লোকজন এ ভর্তি হয়ে যায়। রেখার অন্তরে ধ্বনিত হতে থাকে 'জীবন ও মরণের সীমানা ছাড়িয়ে বন্ধু হে আমার রয়েছো দাঁড়ায়ে..।'
রেখা আর একটু থাকত কিন্তু বাড়িতে আসতে হল মনোজের খাবার-দাবার ,মিলি ও তার বাচ্চাগুলোর খাবার- দেবার জন্য।
রেখা বাড়িতে এসে দেখছে কলাপসিবল গেট টা ভেজানো আছে তার মধ্যেই দেখছে মন কার সাথে কথা বলছে এসে দেখছে সুমিতার সঙ্গে।
রেখাকে দেখে মনোজ বলল জানো তো তোমার আই ডিয়াটাই ঠিক।'
রেখা বলল' কি ব্যাপারে?'
মনোজ বলল 'আজ করুণাময়ী বাজারে ই'বির অভিযান হয়েছিল।'
রেখা বললো 'বললাম না আমার কেমন সন্দেহ হয়েছিল লোকজনগুলোকে দেখে।
তারপরেই মনোজ বলল' ও বাড়িতে কি খবর?
রেখা মধ্যে কাঁদতে বলল 'শুভায়ন...
মনোজ বলল 'তাহলে দুর্গম ট্রেকিং প্রাণ কাড়ল শুভায়ানের ।'
রেখা বলল 'সেটা তো আছেই। সেইসঙ্গে কাকিমার মনে কি ‌ টানাপোড়েনই না   চলছে ভেতরে ভেতরে ।কত ই না ক্ষতবিক্ষত হচ্ছেন।এক বছর কাকু চলে গেলেন। দুটো ধাক্কা সামলানো মুশকিল ব্যাপার।

শান্তা কামালী/৪৩ তম পর্ব





বনফুল
( ৪৩ তম পর্ব ) 
শান্তা কামালী

জুঁই কেমন যেন নিশ্চুপ হয়ে যায়।মনে বুঝি তার ইচ্ছাপূরণ না হওয়ার বেদনার জ্বালা। পলাশ বললো আন্টি বললেন, অহনা আর সৈকত নাকি কালকে সন্ধ্যা বেলায় আমি চলে যাবার পরে তোমাকে এসে দেখে গেছে,
আমাকে বলোনি তো ?
তোমাকে আর কিচ্ছু বলবো না, তুমি আমাকে একটুও। 
জুঁই য়ের চোখ ভিজে যায়।পলাশ তার পকেট থেকে রুমাল বের করে চোখ মুছে দিয়ে বলে, পাগলী। আমার কি জুঁই ছাড়া আর কোনো বেলী,মালতী রজনীগন্ধা আছে না-কি, যে তোমাকে ছাড়া.... কথা শেষ হওয়ার আগেই জুঁই দুম দুম করে দু-চারটে কিল লাগিয়ে দেয় পলাশের বুকের মধ্যে। পলাশ হা হা হা করে হেসে আবারও বলে পাগলী।
এবারে জুঁই ও হেসে ফেলে। 
কিছুক্ষণ এভাবে কেটে যায়।
পলাশ বলে, ডাক্তার তো বলেছেন,সামনের জুম্মা বারে তোমার ট্রাকশান নেওয়া বন্ধ করে দেবেন। তারপর তুমি যতো খুশী কিল মারতে পারবে।আর আমারও ভিসা ততোদিনে হয়ে যাবে।তারপর, ফ্লাইটের টিকিট পেলেই । জুঁই পলাশের দুটো কাঁধে শক্ত করে ধরে ঝাঁকাতে ঝাঁকাতে বলে, এই শোনো না, তুমি আমাকে রোজ ভিডিও কল করবে তো ?
পলাশ বলে, নিশ্চয়ই করবো।
কতোবার করবে, বলো?
যতোবার সময় পাবো,ততোবারই করবো।তোমার সাথে ছাড়া আর কারোর সাথে তো তা-না হলে বাঙলায় কথা বলাই যাবে না।আর বাঙালায় কথা না বললে কি মনে শান্তি পাবো,বলো?
জুঁই খুব প্রসন্ন চিত্তে বলে,ময়না কে কফি দিতে বলি,কফি খেয়ে তবে বাড়িতে যাবে  রাত সাড়ে আট টা বেজে গেছে। 

এইভাবেই আরো দশটা দিন কেটে গেলো। জুঁই এখন একদম স্বাভাবিক হয়েছে। পলাশের ও অন লাইন এডমিশন হয়ে গেছে। দুদিন বাদেই ফ্লাইট। অহনা আর সৈকত এসে গেছে সি-অফ করবে বলে।পলাশের আম্মু,আব্বু,ভাই-বোন সবাই কে নিয়ে জুঁই আর তার আম্মা আব্বু সবাই এয়ারপোর্টে যাবে বলে জুঁই য়ের আব্বু বড়ো বড়ো দুটো গাড়ি বুক করে দিয়েছেন।

চলবে....

লুৎফুর রহমান চৌধুরী রাকিব ( ইংল্যান্ড ) 





ঠোঁট 



তোমার ঠোঁটের আগায় 
বিন্দু বিন্দু জল 
জল টুকু শুষে নিতে
মনটা হয়েছে পাগল। 

তোমার ঠোঁট দু'টি
যাহা বলতে চায়
আমি ছাড়া অন্য কেউ 
বোঝা ভীষণ দায়।

কাঁপা কাঁপা ঠোঁট
লাল হয়ে যায়
রঙিলা বাঁশীর কাছে
ধরা দিতে চায়।

তোমার ভিজা ঠোঁট 
যেন মিষ্টি ফল
আমার ঠোঁটে ঢেলে দিও
একটু রসের জল।

চিরল চিরল ঠোঁট
কাজল কালো চোখ
তুমি ছাড়া শূন্য 
এই অভাগার বুক।

কালো তিলের ঠোঁট 
যাদুর মতো টানে 
কি যেন লুকিয়ে আছে
মায়াবী ঠোঁটের কোণে।

শামীমা আহমেদ /পর্ব৩৪




শায়লা শিহাব কথন
অলিখিত শর্ত 
(পর্ব৩৪)
শামীমা আহমেদ 

----ফোনে শায়লার খবরটা পেয়ে কথা বলা শেষ করে শিহাব বেশ অস্থিরতায় ভুগতে লাগলো।শায়লা এখন শিহাবের বিল্ডিংয়ের ঠিক পেছনের হাস্পাতালটিতেই আছে।শিহাবের ইচ্ছে করছে এক ছুটে শায়লার কাছে চলে যেতে । শায়লার হাত দুটো ধরে  নিজের উপর সমস্ত দায় নিয়ে বলতে ইচ্ছে করছে শায়লা আমার অনেক বড় ভুল হয়ে গেছে।আমার বুঝা উচিত ছিল আমাকে নিয়ে কতটা  গভীরে তোমার ভাবনা,কতটা  নির্ভরতা আস্থা। শায়লা আমি অনুতপ্ত, তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও।আর কোনদিন এমনটি হবে না।শিহাব অস্থিরতায় ঘরের ভিতর শুধু এদিক ওদিক  পায়চারী করছে।সে এখন কি করবে বুঝে উঠতে পারছে না। এইতো বাসার খুব কাছেই হস্পিটাল,চাইলে পাঁচ মিনিটের মধ্যে সে শায়লার কাছে চলে যেতে পারে।কিন্তু শায়লার পরিবার পরিজন বিষয়টি কিভাবে নিবে?  আমাদের সমাজে কোন বিবাহিত মেয়ের ছেলে বন্ধু থাকাটা সহজভাবে দেখা হয়না। তাছাড়া সেতো শায়লার কোন স্কুল কলেজেরও বন্ধু না।কীভাবে পরিচয় দিবে নিজেকে।তারাও নিশ্চয়ই শিহাবের প্রতি সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকাবে। উফ! শিহাবের মনে হচ্ছে সে খাঁচায় বন্দী একটা পাখি।কেবলি ডানা ঝাপ্টে চলেছে।তাকে ভালোবাসার পরীক্ষায় শায়লা কিন্তু ঠিকই জিতে গেলো! আর শায়লার প্রতি শিহাবের আকুলতাটা  শিহাব চাইলেও  প্রকাশ করতে পাছে না।শিহাবের দম বন্ধ হয়ে আসছে। সে কি করবে ভেবে কোন কূল কিনারা করতে পারছে না। আর যদি  হাসপাতালে সাহস নিয়ে চলেও যায় আত্মীয়স্বজনরা নানান কানাঘুষা করবে।সামনে শায়লার কানাডায় যাওয়ার বিষয়টিও আছে। আমাদের সমাজে সবকিছুতে মেয়েরাই ভিকটিম হয়।শায়লার কোন ক্ষতি হউক সেটা তো শিহাব চায় না।কিন্তু এই অবস্থায় শিহাব খুব ভালো করেই জানে এটা ডাক্তারী কোন চিকিৎসায় ভালো হবার নয়। খুব প্রিয়জন কাউকে ভেবে ভেবে মনের ছোট্ট কোণে অবচেতন মনেই একটা স্বপ্ন জাল বুনে।কল্পনায় একটা ছোট্ট গৃহকোণ সাজায় খুবই নিঃশব্দে, নির্জনতায় কল্পনায় তার সাথে পথ চলে,কথা বলে, একান্তে একটু সময় কাটানোতে জীবনের অনেকখানি প্রানশক্তি ফিরিয়ে আনে। এই ধরনের চাপা স্বভাবের মেয়েরা সবকিছুকে নিজের ভেতরে চালান দেয় যা বাইরে থেকে বুঝবার কোন উপায় থাকে না। তাইতো একসময় তার আউটবার্স্ট হয়! শিহাব শায়লাকে পুরোপুরি বুঝেছে।তার অনুভুতির সাথে শায়লার অনুভব দুজনার অজান্তেই কখন যে মিলেমিশে গেছে তা আজ বুঝা গেলো। কাল রাতে শায়লাকে তার একটা ফোন কিংবা মেসেজ দেয়া
উচিত ছিল । 
শায়লার এই পরিণতির জন্য শিহাব  বারবার নিজেকে আসামীর কাঠগড়ায় দাঁড় করাচ্ছে।হঠাৎ মোবাইল বেজে উঠলো!  
শিহাবের মনে হলো তার ভেতরে কে যেনো খাঁমচে ধরলো।নিশ্চয়ই কোন দুঃসংবাদ আসবে শায়লার। শিহাব উন্মাদের মত ছুটে গিয়ে মোবাইল হাতে নিলো। শায়লার ফোন থেকে কল।নিশ্চয়ই শায়লা নয়। 
শিহাব কল রিসিভ করে কাঁপা কাঁপা গলায় হ্যালো বলতেই রাহাতের কন্ঠ ভেসে এলো।  শিহাব ভাইয়া! এইমাত্র আপুর জ্ঞান ফিরেছে। সামান্য একটু চোখ মেলেছিল। 
আহ! শিহাবের পৃথিবীর ঘূর্ণনটা যেন থামলো।পায়ের তলায় কিছু অনুভুত হলো।
উফ! কি ভয়টাই না সে পেয়েছিল!মনে মনে  সৃষ্টিকর্তার প্রতি শিহাব তার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে চললো। আর এমন ভুল সে কখনোই করবে না।তার বুঝা উচিত ছিল শায়লা খুব কোমল মনের একটি মেয়ে। তবে সেতো শায়লার ভালোই চেয়েছিল।কিন্তু তার বিপরীতে যে এমনটি হবে শিহাব তা একবারো মনে আনেনি।
রাহাত ওপ্রান্তে বলেই চলেছে,,,তবে আপুকে ঘুমের ইনজেকশন দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয়েছে।
ডাক্তাররা কী বললেন?
,বলেছেন নার্ভাস ব্রেকডাউন আর ভীষণ একটা শক থেকে এমনটি হয়েছে। শিহাবের চোখ বেয়ে জলের ধারা নেমে এলো!কেবলি সে বারবার বলছে শায়লা আমি কখনোই এটা চাইনি। তুমি আমাকে ক্ষমা করো।  শায়লার সাথে প্রথম দিনের সেই দেখা হওয়ার ক্ষণটা  শিহাবে খুব করে মনে পড়ছে।কালচে নীল শাড়িতে একটা মায়াবতী মুখের মেয়ে তার জন্য অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে,,সেই যে কফি লাউঞ্জে লজ্জাবনত  শায়লা কিছুতেই শিহাবের চোখের দিকে তাকাতে পারছিল না, সেদিন বাইকের পিছনে শিহাবের পিঠের উপর শায়লার অমন করে নিজেকে সঁপে দেয়া!  শিহাবের সমস্ত শরীরে এক শিহরণ খেলে গিয়েছিল যেন! পাশাপাশি চলতে গিয়ে শায়লার প্রতিটি পদধাপ শিহাবের পায়ের ছন্দে ছন্দে এগিয়ে চলা,শায়লা যে তার এই একাকী জীবনে কতখানি প্রানস্পন্দন তা কখনোই মুখ ফুটে বলা হয়নি, শায়লার আবাহন শিহাবের জন্য যে কতটা কাঙ্ক্ষিত শিহাব  কখনোই তা বুঝতে দেয়নি। কেন আরো কিছুদিন আগে শায়লার সাথে তার পরিচয়টা হলোনা  বারবার শিহাব এই আক্ষেপটাই  করে চলেছে।
শিহাব দ্রুত কাপড় পালটে নিলো। সে এক্ষুনি শায়লার কাছে যাবে কিন্তু পরক্ষণেই ভাবলো তাকে দেখে শায়লা যদি উত্তেজিত হয়ে উঠে তবে তো হিতে বিপরীত হবে। শিহাব নিজেকে সংযত করলো। সে রাহাতের কাছ থেকেই শায়লার খবরাখবর নিবে। শিহাব মোবাইল স্ক্রিনে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখলো।

হাসপাতালে মা অবিরল ধারায় কেঁদেই চলেছেন। শায়লা তার প্রথম সন্তান। কতটা আদরেই না তাকে বড় করেছিল। অথচ এই পরিবারের জন্য মেয়েটি তিলে তিলে নিজেকে শেষ করেছে,একটু একটু করে নিজেকে গুটিয়ে  নিয়েছে।মা আজ নিজেকে, নিজের ভাগ্যকে দোষারোপ করছে। রাহাত বারবার মায়ের মাথায় হাত রাখছে। মাকে সান্ত্বনা দিচ্ছে।মন শক্ত করতে বলছে।নায়লাকে খবরটা দেয়া হয়নি।এ সময় হঠাৎ এমন কোন দুঃসংবাদ দেয়া ঠিক না। নায়লার হাজবেন্ড মূর্শেদকে রাহাত মেসেজে জানিয়ে রেখেছে।মূর্শেদ গাড়ি নিয়ে বের হয়েছে।
ডাক্তারদের রাউন্ড শুরু হয়েছে। শায়লার কেবিনে ডাক্তার আসলেন। মায়ের কান্নাকাটি দেখে তাকে আশ্বস্ত করলেন। মা চিন্তা করবেন না।  আপনার মেয়ে ভালো হয়ে যাবে। রাহাত বুঝতে পারছে না কানাডার ব্যাপারেই কী আপু এতটা ভেঙে পড়েছে?
ডক্টররা নার্স ও জুনিয়র ডাক্তারদের যথাযথ  ইন্সট্রাকশনস দিয়ে রাহাতের সাথে কথা বলতে চাইলেন।
রাহাত ডক্টরদের সাথে ডিসকাশন রুমে গেলেন।
ডক্টর শায়লার ব্যাপারে জানতে চাইলেন।
পেশেন্ট মিস শায়লা  উনি কি  বিবাহিত? 
জ্বি 
উনার হাজবেন্ড কোথায়?
আপুর হাজবেন্ড কানাডায় থাকেন।আপাকে নেয়ার প্রসেস চলছে।
প্রসেসটি দ্রুত করুন।সম্ভবত তাদের দূরত্বটা তাকে একাকীত্বে ভুগাচ্ছে অথবা,,,
অথবা মেন্টালি সে কারো সাথে ইনভলভড  হয়েছেন। আর এর টানাপোড়েনেই  পেশেন্ট  মানসিকভাবে কোন সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছেন। ইনশাআল্লাহ উনি সুস্থ হয়ে উঠলে যার সাথে উনি খুব ফ্রি এমন কাউকে দিয়ে তার সাথে খোলামেলাভাবে কথা বলান।সমস্যাটা কোথায় তা জানার চেস্টা করুন।তবে সর্বোপরি আমাদের এডভাইস হচ্ছে দ্রুতই  তাকে তার স্বামীর কাছে পাঠানোর ব্যবস্থা করুন।মেয়েরা স্বামী সংসার সন্তান--- এ বিষয়গুলোতে সবচেয়ে বেশী সুস্থ থাকে।
রাহাত সব কিছু শুনে ডাক্তারদের আশ্বস্ত করলেন আপার কানাডা যাওয়ার ব্যাপারটি সে খুব দ্রুতই দেখবে।
রাহাত মনে মনে সিদ্ধান্ত নিলো আপা সুস্থ হয়ে উঠলেই যত দ্রুত সম্ভব কানাডার বিষয়টি দেখবে।কিছুতেই আপুর এই অবস্থা কাম্য নয়। আপু আমাদের জন্য অনেক করেছে।এবার আপুর দিকে আমাদের দেখা উচিত।
ডাক্তাররা কী বললো শোনার জন্য কেবিনের ভেতরে মা উদগ্রীব হয়ে আছেন। রাহাত ভেতরে যেতে উদ্যত হতেই মোবাইলে শিহাবের কল এলো। পরক্ষনেই রাহাত তাকিয়ে দেখলো নিচ তলার রুহি খালা রীতিমতো এক ভ্যান ফল নিয়ে এসে হাজির হয়েছে। রাহাত রুহি খালাকে এগিয়ে নিয়ে কেবিনে ঢুকল।
শিহাবের কলটি পুরো এক রাউন্ড রিং হয়ে থেমে গেলো।



চলবে...

সেলিম সেখ





নদী
             

নদী নদী নদী চিনতে আমায় যদি,
দিতাম পাড়ি তোমার সাথে কান্তর মরুছাড়ি।
চলতাম বয়ে তোমার সঙ্গে মনের আনন্দে, 
আসলে বাধা কাটিয়ে যেতাম তোমায় সঙ্গে নিয়ে। 
আমি বইছি হিমবাহ থেকে জল সঙ্গে নিয়ে,
 পার করেছি তিনটে গতি মোহনায় আগমনে।
আমি বইছি কতশত নুড়ি কাকর বালি, 
জমা করে মোহনার বুকে গড়েছি বদ্বীপখানি। 
আমার আছে শাখা নদী আছে উপনদী,
ওরাই করে জলের যোগান ওরাই করে জল খালি।