১৪ মার্চ ২০২২

মনি জামানের ধারাবাহিক উপন্যাস পর্ব ১৬






ধারাবাহিক উপন্যাস


সেদিন গোধূলি সন্ধ্যা ছিল
( ১৬ তম পর্ব ) 
মনি জামান




রাত শেষে ভোরের আলো ফুটলো চারি দিকে,পাখির কিচিরমিচির ডাক শুনতে শুনতে যেন সকাল হলো,সকালের নাস্তার জন্য জান্নাত আসমাকে ডাকলো ভাবি আসেন নাস্তা রেডি।আসমা ঘরের ভিতর বুঝতেই পারলো না এখন সকাল আটটা বাজে,আসমা উঠলো দাঁত ব্রাস করে চোখ মুখ ধুয়ে খেতে এলো টেবিলে।
জান্নাত বলল,ভাবি খেয়ে নিনি আসমা নাস্তা নিয়ে নাস্তা খেলো,খাওয়ার পর বলল,বোন তুমি স্কুলে যাবে না আজ?জান্নাত বলল,হ্যাঁ ভাবি যাবো নয়টায় আমাদের ক্লাশ শুরু আগে ঘরের কাজ গুলো সব সেরে নেই।
বাড়ির সব কাজ সেরে জান্নাত স্কুল ড্রেস পরে আসমাকে বলল,ভাবি আমি স্কুলে যাচ্ছি তাড়াতাড়ি ফিরবো আপনি কোথাও যাবেন না।আসমা বলল,বোন তুমি স্কুলে যাও আমি একটু ঘুমাবো আমার খুব ঘুম পাচ্ছে বলেই আসমা ঘুমাতে গেলো তারপর শুয়ে পড়লো শরীরটা খুব ক্লান্ত লাগছে,কখন ঘুমের অতলে ডুব দিলো আসমা জানে না, যখন জেগে উঠলো আসমা তখন দুপুর হয়ে গেছে কখন টেরই পেলো না তখনো ও আসমা শুয়ে আছে।জান্নাত কখন ফিরেছে স্কুল থেকে আসমা কিছুই জানে না জান্নাত যখন আসমাকে ডেকে বলল,ভাবি উঠেন গোসল সেরে নেন বেলা অনেক হয়েছে,আসমা উঠে বসলো তারপর ওয়াশ রূমে গিয়ে দুপুরের গোসল সেরে নিলো আজ একটু ঝরঝরে ফ্রেশ লাগছে নিজেকে,জান্নাত বলল,ভাবি কিছু লাগলে আমাকে বলবেন আমি একটু থালা বাটি ধুতে যাচ্ছি,আসমা বলল,ঠিক আছে কিছু লাগলে বলবো তোমাকে বোন বলেই আসমা আবার ঘরে চলে এলো।
আসমার ললাটে কলঙ্কের তকমা লাগানোর পর থেকে লজ্জায় কোথাও বের হয়নি আজ দুইদিন,সারাদিন ঘরে কাটে আসমার একাকি সময়।আসমা ভাবছে ফিরোজকে তার কথা গুলো বলা উচিত,কিন্ত ফিরোজ তো ঢাকায় কাজে আছে,বাড়ি ফিরলে আসমা আর যেতে পারবেনা যে সিদ্ধান্ত সে নিয়েছে সেখানে যেতে,চেয়ারে বসে কিছুক্ষণ কি যেন ভাবলো তারপর কাগজ কলম নিয়ে লিখতে বসলো।
সাংবাদিক ফিরোজকে উদ্দশ্যে করে লিখলো-
প্রিয় ফিরোজ ভাই,
জানি তুমি ঢাকায় আছো কাজে,আমাকে আশ্রয় দেওয়ার জন্য আমি চির কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি,তবে আমাকে ক্ষমা করো ভাই আমার কিছুই করার নেই,তাই সেদিন তোমার বিয়ের প্রস্তাবটা ফিরিয়ে দিয়েছিলাম,হয়তো তুমি দুঃখ বা অনেক কষ্ট পেয়েছো আমাকে অহঙ্কারিও ভেবেছো কিন্তু আমি কখনো অহঙ্কারি ছিলাম না। আমার রাজকুমার জিকু আমার হৃদয়ে এতোটা জায়গা জুড়ে আছে,সেখানে আমি আর কারো কথা ভাবতে বা কল্পনাও করতে পারিনা,কষ্ট পেলে ক্ষমা করে দিও ভাই।আর কখনো তোমার সাথে আমার দেখা হবে না কথা ও হবে না,এমন কি আমার বাবা মা ছোট দুটো বোনের সাথে ও না।তুমি ঢাকা থেকে ফিরে যদি আমার মৃত লাশ পাও তবে তোমার কাছে অনুরোধ আমার লাশটা আমার রাজ কুমারের কবরের পাশে আমাকে কবর দিও,যদি অপরাধ করে থাকি বোন হিসেবে এই অভাগী বোনের অনুরোধ টুকু রেখো ভাই এটাই আমার শেষ ইচ্ছে।
---
ইতি  আসমা।
আসমা চিরকুট লিখে টেবিলের উপর সুন্দর করে কাগজটা ভাঁজ করে রেখে দিলো,তারপর ঘরের জানালার সিক ধরে দাঁড়িয়ে দেখছে বাইরের আলো ঝলমলে দুপুরের উত্তপ্ত রোদ যেন ঝা ঝা নৃত্য করছে,তবুও আজ এত সুন্দর দুপুর মনে হয় কখনো দেখেনি সে।আসমার খুব মনে পড়ছে আজ তার ছেলে নয়নের কথা,স্বামী জিকুর কথা।প্রবল ইচ্ছে করছে তার স্বামীর কবরটা ও শেষ বার একটু দেখে আসার জন্য,আসমা জানে সে এই কলঙ্কিত মুখ নিয়ে বের হতে পারবেনা কোথাও,তবুও ইচ্ছে করছে যদি একবার তার প্রিয় রাজকুমারের কবরটা শেষবারের মত দেখতে পেত।আজ সব ইচ্ছের কবর দিয়েছে সে,মোমেনা বেগমের বাড়ি থেকে করব স্থান একটু দুরে ফিরোজদের বাড়ির উঠোনে দাঁড়িয়ে কবর স্থান দেখা যায় দিনের বেলায়।
আসমা জানালা দিয়ে দেখছে কিন্তু সেটা দেখার ব্যর্থ চেষ্টা কিছুই দেখতে পাচ্ছে না, শুধু বাঁশ বাগান আর ঝোপঝাড় ছাড়া কিছুই দেখা যায় না,পুরো কবর স্থান জুড়ে যেন ঘিরে রেখেছে বাগান গুলো।
আসমার আজ বার বার মনে হতে লাগলো পাষান পৃথিবীর এই জীর্ণ কুঠিরে সে একা, অথচ একদিন ভালবাসার বাসরে রাজকুমারের সাথে গল্পে গল্পে কেটেছে কত যে নির্ঘুম রাত কত আনন্দ কত প্রেম দিয়েছে তার রাজকুমার তাকে উজাড় করে।
এ জীবনে রাজকুমার ছাড়া তাকে আর কেউ এত ভালোবাসেনি অথচ আসমা আজ সমাজের চাপিয়ে দেওয়া কলঙ্কের বোঝা মাথায় নিয়ে এ পৃথিবীতে বেঁচে আছে, ভাবছে আসমা চোখ দুটো অশ্রুতে ছল ছল করছে যেন শ্রাবণ শুরু হয়ে গেছে।আসমার এই ক্ষণিক জীবনে ঘটে যাওয়া কষ্ট গুলো তাকে এতোটাই বিমূঢ় করে তুলেছে যা জীবনে কখনো ভাবেনি আসমা এমন হবে তার জীবন,আজ স্মৃতির বাক্স গুলো সব রেখে যাচ্ছে সে।জীবনের সব চাওয়া যেন দুহাত ভরে নিয়েছে কুড়িয়ে, অযত্নে লালিত কষ্ট নামের প্রিয় মুহুর্ত গুলো।আসমা কাঁদছে দুপুর গড়িয়ে বিকেল হলো,আজকের বিকেলটা গোধূলি রঙ মাখাছে যেন আকাশকে, আবির ছড়াচ্ছে দিন আর সন্ধ্যার প্রণয়ের খেলা চলছে এখ ঠিক এই মুহুর্তে।একটু পরেই সন্ধ্যা নামবে আসমা জানালায় দাঁড়িয়ে অবলোকন করে দেখছে পৃথিবীর শেষ দৃশ্য গুলো,এই সুন্দর পৃথিবীতে বেঁচে থাকার কত স্বপ্ন ছিলো তার,আজ সব স্বপ্ন মুছে গেছে তার জীবন থেকে ধনী দরিদ্রের ব্যবধান এক বাস্তব কঠিন সত্যের সামনে।
আসমা ভাবছে পৃথিবীর কোন সংবিধানে,কোন আইন প্রণেতা লেখেছিল কি ধনী গরীবের ভালোবাসা অপরাধ?যদি নাই লিখে থাকবে তাহলে সমাজ এত নিষ্ঠুর কেন,কেন গরীব ঘরের মেয়ে বলে?আসমা ভাবছে তার জীবনে ঘটে যাওয়া কষ্টের কথা গুলো আসমা ঘরে একা সন্ধ্যা নামতে আর বেশি দেরি নেই,আসমার ছেলে নয়নের কথা মনে পড়ছে খুব কষ্ট হচ্ছে ছেলেটার জন্য কিন্তু কিছুই করার নেই তার,বাড়ি ফিরে যাবার ও উপায় নেই শাশুড়ি কলঙ্কের তিলক এঁকে দিয়েছে তার ললাটে আজ সে কলঙ্কিত। এ মুখ নিয়ে সন্তানের সামনে কি করে দাঁড়াবে আসমা?মন স্থির করলো সন্তানের কাছে ফিরে যাবেনা সে হঠাৎ জান্নাত রাতের খাবারের জন্য ডাকলো ভাবি খেতে আসুন ভাত নিয়ে এসেছি।আসমা চমকে উঠলো উঠেই চোখ মুছে বসলো কারণ গভীর ভাবনায় এতক্ষণ মগ্ন ছিলো সে।
আজ কিছুই ভালো লাগছেনা আসমার, জান্নত আবার ডাক দিয়ে বলল,ভাবি আসেন খাবার টেবিলে আমি ভাত বেড়ে রেখেছি এসে খেয়ে নিন।আসমা এবার উঠে ওয়াশ রূমে গিয়ে চোখ মুখ ধুয়ে ফ্রেস হয়ে সোজা খাবার টেবিলে এসে বসলো।
জান্নাত আসমাকে খাবার দিয়ে বলল,জানেন ভাবি ফিরোজ ভাই ফোন করেছিল আমাকে,ফোনে আমাকে কি বলেছেন?আসমা শুধু বলল,কি বলেছে!জান্নাত বলল,ফিরোজ ভাই আমাকে বলেছেন আপনার আদর যত্নের কোন রকম যেন ত্রুটি আমি না করি,সবসময় আপনার সাথে যেন থাকি।কথাটা শুনে আসমা হাউমাউ করে কাঁদে উঠলেনপর যখন আপন হয় তখন এমন মনে হয় আপনত্ব হৃদয় স্পর্শ করে,জান্নাত বলল,ভাবি কাঁদবেন না সব দেখবেন ঠিক হয়ে যাবে কাল সকালে ফিরোজ ভাই বাড়ি আসবে এসে আপনাকে ঢাকায় নিয়ে যাবে ভালো একটা হাসপাতালে ভর্তি করাবে ভাইয়া বলেছে আমাকে।
আসমা কোন রকম একটু খেলো তারপর হাত মুখ ধুয়ে জান্নাতকে বলল,বোন কিছু ভালো লাগছে আজ আমার,আমি একটু ঘুমাবো।জান্নাত আসমাকে বলল,ঠিক আছে ভাবি আপনি রূমে গিয়ে শুয়ে পড়ুন,আমি পড়ার রূমে গিয়ে পড়তে বসি
কালকে আমাদের পরীক্ষা।আসমা বলল,যাও বোন পড়তে বসো,জান্নাত চলে গেলো আসমা খাওয়ার টেবিল থেকে উঠে সোজা রূমে চলে এলো,এসেই শুয়ে পড়লো দেওয়াল ঘড়ি দেখলো রাত আটটা বাজে।আসমার চোখে আজ আর ঘুম নেই একটা অস্থিরতা মনের ভিতর কাজ করছে, কখন রাত নির্জন হবে সেই অপেক্ষা।
এশার আযান হচ্ছে আযানের ধ্বনিতে মুখরিত চারপাশ,জানান দিল রাতের শেষ নামাজ ঘনিয়ে এলো নামাজীরা মসজিদে এসো।আসমা শুয়ে শুয়ে অপেক্ষা করছে কখন নিরব নিঝুম হবে রাত,কখন মানুষের কোলাহল কমবে ভাবতে ভাবতে কখন রাত দশটা বাজলো বুঝতে পারলো না।
ভাবছে আর একটু রাত ভারী হোক তারপর ঘর থেকে বের হবো,অপেক্ষা করছে আসমা সেই মহেন্দ্র ক্ষণের।আজ এই মুহুর্তে আসমা অস্থির হয়ে উঠলো বিতৃষ্ণা তাকে ঘিরে ধরেছে,আসমার মনে হলো সে এখনো বসে আছে কেন তাকে তো বের হতে হবে।কিন্তু এখনো যে রাত গভীর হতে বাকি সবাই ঘুমিয়ে পড়লে তারপর বের হতে হবে।আসমা অপেক্ষা করছে যদিও জানে সে এ অপেক্ষা অনেক কষ্টের তবুও এ অপেক্ষা তার সময়ের।


চলবে.....

মমতা রায় চৌধুরীর ধারাবাহিক উপন্যাস পর্ব ১৩২




উপন্যাস 


টানাপোড়েন ১৩২

দু'মুঠো বিকেল ছুঁড়ে দাও

মমতা রায় চৌধুরী


বাপরে বাপ কি এক উষ্ণতা সারা শরীর 
জুড়ে ।যেন মনে হচ্ছে শরীরটাকে পুড়িয়ে 
দিচ্ছে ।বাড়িতে ফিরে এসে বারবার ওয়াশরুমে গিয়ে ঠান্ডা জলে ছিটে দিচ্ছে শিখা। তবে আজকের বিকেল মনে রাখার মত।
শিখাকে দেখে মাধু বৌদি বলল 'হ্যাঁ রে তোদের আজকে অনেক কেনাকাটা হলো না?
কোন সাড়া না পেয়ে বৌদি ওপরে উঠে আসল 'শিখা ,শিখা, শিখা।'
কেউ কোথাও নেই দরজাটা হাট করে খোলা গেল কোথায়? এদিকে বাথরুম থেকে জলের আওয়াজ আসছে বুঝতে পারল বাথরুমে আছে ।বাথরুমের দরজায় নক করলো 'ঠিক আছিস?'
শিখা চোখেমুখে জল ছিটিয়ে দেয়ার চেয়ে মনে হয়েছিল নিজেকে ঠান্ডা জলে একটু ভিজিয়ে নিলে ভালো হয়  তাই শাওয়ারটা খুলে দিয়েছিল শাওয়ারের কলটা বন্ধ করতে করতে বলল 
'হ্যাঁ বৌদি?'।
'ঠিক আছে ফ্রেশ হয়ে নিচে নেমে আসবি। খাবার দেব?'
'আজকে আমি কিছু খাব না বৌদি।
শিখা মনে মনে ভাবছে এখনো গা টা যেন আনচান করছে।'
'খাবি না মানে? কেন খেয়ে এসেছিস? বাবা, কল্যাণ এখনই তোকে বাইরে খাইয়ে দিচ্ছে। ভালোই তো এরকম ঘুরতে বেরোবি ,বাড়িতে এসে আর কোন রান্নাবান্নার ঝামেলা থাকবে না।',হাসতে হাসতে বলল মাধুরী।
'আমি চললাম রে। যাই ওদিকে তোর দাদা ,বৃষ্টি সব তোর জন্য ওয়েট করছিল।'
মাধুরী তরতর করে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নেমে আসলো ।
বৃষ্টি বলল 'মা পিমনি কি আসবে না খেতে? '
'না মা ,তোমার পিমনি খেয়ে এসেছে।'
সুরঞ্জন বলল 'খেয়ে এসেছে মানে,,,?
'বাইরে বেরিয়ে ছিল  না কল্যান আর শিখা।'
মাধুরী চিকেন রেজালা বাটিতে দিতে দিতে বলল কিন্তু ওর জন্যই তো আজকে চিকেন রেজালা করেছিলাম ।থাক কাল খাবে?'
"আমিও চিকেন রেজালা খেতে ভালোবাসি মা।'
যেই শিখার কথা বললাম ওমনি আমারও ভালো লাগে ।ভালো লাগে তো খাও।'বৃষ্টির  নরম গাল দুটো টিপে দিয়ে বলল' খুব হিংসুটে হয়ে যাচ্ছ না?'
সুরঞ্জন বলল 'এই মাধু তুমিও একবারে নিয়ে নাও। একসঙ্গে খাই।'
শিখা বাথরুম থেকে বেরিয়ে নিজেকে খাটের উপরে এলিয়ে দিল আর ভাবলো কল্যান গাড়ি কিনেছে নিজেই ড্রাইভ করছিল। শিখাকে ড্রাইভ শেখাতে গেছিল। নতুন ড্রাইভ শিখতে গিয়ে একটা কেলেঙ্কারি হয়ে যাচ্ছিল আরেকটু হলে। খুব বাঁচা বেঁচে গেছি।ড্রাইভিং শিখতে গিয়ে যতটুকু না ভালো লেগেছিল তার থেকে বেশি ভালো লেগেছিল কল্যাণের সান্নিধ্য। 
কেন এরকম হয়েছিল কে জানে? আর তো বেশিদিন তাদের আলাদা থাকতেও হবে না। তবুও বারবার অন্যমনস্ক হয়ে যাচ্ছিল। হঠাৎ"একটা গেল গেল 'বলে একটা শব্দ উঠেছিল ।'ঘ্যাঁচ 'করে একটা বিশ্রী আওয়াজ করে ব্রেক কষে গাড়ি দাঁড়িয়ে পড়েছিল। কল্যাণ হ্যান্ড ব্রেক টেনে দিয়েছিল।সঙ্গে সঙ্গে শিখার ডান পাটাও আপনানথেকে উঠে এসে এক্সেলেটর এর ওপর চেপেও বসেছিল। গাড়ির সামনে পড়েছিল একটা বাচ্চা ।ঈশ্বরের অসীম কৃপা যার জন্য বাচ্চাটি বেঁচে গেল।পথচারীরা সব, জড়ো হয়ে গেছিল। ভয়ে গাটা খুব কাঁপছিল সেটা এখনো রয়েছে।
যাক কি বিশ্রী কান্ড হত ভাবতেই পারছি না।
তবু এত কিছুর মধ্যে কল্যাণের সান্নিধ্যটা মন ছুঁয়ে গেছে। অথচ বিয়ের আর বেশি দিন বাকি নেই। হ তখন কল্যাণ কে সব সময়ের জন্য পাবে। তাহলে মনে এত অধৈর্য্য হচ্ছ কেন?
অন্যদিকে আজকে কল্যাণের গলাটা ভালো ছিল না মাঝে মাঝে গলাটা ধরে আসছিল গলায় কি  ইনফেকশন হয়েছে ?একবার ফোন করার দরকার।
ভাবতে ভাবতেই রিং করলো । ফোন বেজে গেল ধরল না। আবার ঘুরিয়ে ফোন করলো ফোনের রিংটোন বাজছে'ক্রমশ গল্পগুলো পাতা জুড়ে যাচ্ছে, দুমুঠো বিকেল যদি চাও ছুঁড়ে দিতে পারি...।'
এবার ফোন ধরল বলল' হ্যালো'।
'আমি বলছি।'
বুঝতে পারছি বলো।
তোমার গলার অবস্থা তো খুব খারাপ।
গারগিল করেছ?
না এখন করা হয়নি।
সেকি?
'এত নেগলেট কেন করো?'
'না ,শিখা এসে একটু কাজে বসে ছিলাম।
একটা ভাইটাল লেকচার দেওয়ার আছে সেটাই রেডি করছিলাম।'
'কিন্তু যা গলার অবস্থা দেখছি তুমি পারবে?
বিশ্রাম দাও না গলাটা কে।.. ছুটি নেয়া যায়না?'
'তা যায় তবে এখনই ছুটি নেব এরপর তো ছুটি কাজে লাগবে।'
'থাক শরীর খারাপ বরং তুমি ছুটি নাও আর গলার  ডাক্তারকে দেখিয়ে নাও।'
'আর কটা দিন দেখিনা?'
'গলাটা তোমার বড্ড খারাপ হয়েছে এরপর আরো কটা দিন দেখবে, বুঝতে পারছ সামনে একটা ভাইটাল তোমার প্রোগ্রাম রয়েছে?'
"সব বুঝতে পারছি।'
"না ,তুমি আগে ডাক্তারের কাছে যাবে, কথা দাও।"
'দেখি কালকে তো একটা জায়গায় যাবার আছে লেকচার দেবার আছে। তারপরে সে না হয়..।'
'তুমি ঠিক আছো?'
"আমি তো ঠিক আছি কিন্তু তোমাকে নিয়ে তো টেনশন হচ্ছে।'
', তোমার রিসেপশনের শাড়ি কেনার জন্য আরেকদিন বেরোতে হবে বুঝলে?'
'আমাকে যেতেই হবে তুমি কিনে নিও তাহলেই হবে।"
'তোমার একটা পছন্দের ব্যাপার আছে বিয়ে বলে কথা সারা জীবনের ব্যাপার তোমার পছন্দটা তাতে থাকবে না?'
শিখা কিছুক্ষন চুপ করে থাকে ।
এরকম দুমুঠো বিকেল পেতে তো ভালোই লাগে। তোমার ভালো লাগলো?'
শিখা বলল' কি করে বোঝাবো তোমায় আমি। আমার ভেতরে কি  যে হচ্ছে।'
কল্যান বললো ' বলো, বলো কি হচ্ছে ?'
"জানিনা।'
'তাহলে আমাদের গল্পের পাতা যেখানে জুড়ে যাচ্ছিল তুমি এখানেই শেষ করে দিতে চাইছ।'
'এসে আমাকে অসময়ে শাওয়ারে ঢুকতে হয়েছে।'
'সেকি?
'তুমি ঠিক আছো?'
'হ্যাঁ স্নান করতে হলো।'
'কেন?
'এই শোনো, তুমি সব বোঝো। তারপরও তুমি এভাবে আমাকে প্রশ্ন করছো?'
ইসসসস স।
'ঠিক আমি কল্পনা করছি তুমি ভিজে  জলে ভেজা গায়ে কোনরকমে বাথগাউনটা জড়িয়ে স্নান থেকে ছুটে এসেছ তাই না ?তারপর তোমার সদ্য স্নাত দেহ থেকে বের হচ্ছে সুবাস। ভিজে চুল লেপ্টে আছে তোমার গালে ,কপালে ,চোখের পাতায় অভ্রচুর্নের মত জলকণা জমে আছে ।কবে যে তোমাকে এই রূপে দেখতে পাবো। নিজেকে সামলাতে পারছি না  ।'
ঠিক এভাবে যখন তুমি আমার বাড়িতে আসবে সদ্য স্নান করে তুমি আমার কাছে এসে দাঁড়াবে চুল থেকে বিন্দু বিন্দু সুরভিত টুপটাপ করে পড়তে থাকবে প্রসাধনহীন মুখের চারপাশে ভিজে চুল লেপ্টে থেকে কি অসাধারণই   না 
লাগবে ।তোমার গাউনের নিচে থাকবে না কোনো বর্ম চর্ম ।শুধুই তুমি আবরনহীন সমস্ত সুবাস আমি আমার ইন্দ্রিয়দিয়ে নিজের কাছে টেনে নেব।'
'হয়েছে মশাই, আর কাব্য করতে হবে না।'
'আমি তোমার বাড়িতে যাইনি ,আমি নিজের বাড়িতেই আছি আর তুমি তোমার বাড়িতে আছো।
এবার বাস্তবে ফিরে এসো'
'শোনো তুমি অবশ্যই কথা দাও যে তুমি ডাক্তার দেখাবে।'
'জো হুকুম ম্যাডাম।'
শোন আমি ফোন রাখছি আমার কালকে একটা ভাইটাল lecture আছে ।ওর জন্যআমাকে রেডি হতে হবে বুঝেছ?
'বুঝলাম।
'রাগ করলে'
'রাগ করে ও তো উপায় নেই।'
'ঠিক আছে এখন রাগ করলেও পরে সুদে আসলে ফেরত দেবো।'
'টেক কেয়ার।'
'তুমিও নিজের প্রতি যত্ন নিও। বাই।'
ফোন কেটে দিল।
সামান্য কিছু খেয়ে নিয়ে ল্যাপটপের সামনে বসে পড়ল। খেতে গিয়ে কষ্ট হচ্ছিল।
ল্যাপটপের অক্ষরগুলো টপাটপ ফণা তুলে স্কিন ভরিয়ে দিতে লাগলো।
আজকে কি হয়েছে কল্যাণের পদে পদেই কি যেন একটা গোলমাল হয়ে যাচ্ছে ঠিকঠাক লেখা গুলো আসছে না। কিন্তু হাল ছাড়বার পাত্র নয়।

এরমধ্যে কলিং বেল বাজল। দরজা খুলতেই দেখা গেল কয়েকজন ভদ্রমহিলা।
ল্যাপটপ বন্ধ করে কল্যান ভদ্রমহিলা দফায় বসার জন্য অনুরোধ করলেন।
নমস্কার।
নমস্কার।
আমরা এসেছি অল বেঙ্গল উইমেনস লীগ থেকে।
আমাদের তিতলি ম্যাম পাঠিয়েছেন।
কিন্তু এতটাই কাজে ব্যস্ত কল্যাণ সে কথা মুখ ফুটে বলতে পারছে না তাহলে সর্বদা মুখে হাসি দেখেই স্বাগত জানাতে হয়।
এবার এদের হাত থেকে কিভাবে অব্যাহতি পাবেন। এদের হাজারো চাহিদা।
এতকিছু মন দিয়ে শোনার সময় ও কল্যাণের কাছে নেই। জানি কি করে এদের কাছ থেকে অব্যাহতি পেতে হয়।
কয়েকটি কৌশল আয়ত্ত করে রেখেছে।
প্রথমে যখন তাদের কথাগুলো আর শুনতে ইচ্ছে করবে না তখন কল্যান হয় একটু অমনোযোগী হয়ে যাবে না হলে কিছু শুনাও শুনতে না পাওয়ার ভান করবে নয়তো জবাব না দেবে তাতেও যদি শেষ রক্ষা না হয় তখন আচ্ছা বলে উঠে দাঁড়াবে।
কারণ আজকে তাকে এই লেখাটা রেডি করতেই হবে।, যা ভাবা সে রকমই কাজ।
শেষপর্যন্ত তাদেরকে বিদায় জানিয়ে দরজাটা বন্ধ করে আবার ল্যাপটপের সামনে বসে পড়ল।
এর মধ্যেই কাজের মাসি এসেছে।
রিতা মাসিএসে বলল 'কফি খাবে?'
,'হ্যাঁ দিলে খুব ভালো হয় মাসি।
ল্যাপটপে চোখ  শুধু হেসে কথাটা বলল।
' আমাকে একটু গারগিল করার জল দাও তো। গলাটা খুব ধরে আছে।'
'হ্যাঁ ,দাঁড়াও আমি এক্ষুনি দিচ্ছি।'
গারগিল এর জল দিয়ে গেল রিতা মাসি ।গারগিল করল তারপর  ব্ল্যাক কফি করে দিয়ে গেল।
মাসি বললো আজকে রাত্রে  কি করব চানার তরকারি আর রুটি খাবে?'
'আজকে আর কিছু খেতে ইচ্ছে করছে না মাসি?'
'না ,না ,না খেলে কি করে হবে। ওভাবে বলো না তো ,কিছুতো খাও।'
'মাসি কফিটা খুব ভালো হয়েছে।'
'যাক তোমার ভালো লেগেছে আমি খুব খুশি।'
'কি করব বল?'
'কি বলি বলতো?  আমার তো খেতে ইচ্ছে করছে না?
ঠিক আছে শোনো ঘরে কলা আছে তো মাসি?'
'হ্যাঁ ,আছে।'
'ঠিক আছে তুমি ডিম টোস্ট করে যাও আর সেরকম হলে আমি  ওটস খেয়ে নিতে পারি।
ঠিক আছে।'
'আর শোন ও মাসি কালকে একটু সকাল সকাল আসবে কালকে কিন্তু আমার একটা জায়গায় ইম্পর্টেন্ট কাজ আছে।'
'তাই আসবো।'
'মাসি খাবার বানিয়ে রেখে বলে গেল শোনো তোমার গলাটা কিন্তু আমার মোটেই ভালো লাগছে না ।তুমি কাল গলার ডাক্তারকে দেখিয়ে ফেলো বাবা।'
'দেখি চেষ্টা করব নিশ্চয়ই। তুমি ভেবো না মাসি।'
'মাসি চলে গেল। আরো ঘন্টাখানেক লেখার সঙ্গে ধস্তাধস্তি করল। একটা লেখা দাঁড়ালো কিন্তু মনের মতো হল না। আর পারা ও যাচ্ছে না।
একটু রিলাক্স করার দরকার।
ল্যাপটপ টা বন্ধ করার আগেই আবার ফোন বেজে উঠল।
কল্যাণ বলল 'হ্যালো।
কল্যাণ মনে মনে এটাই চাইছিল শিখার ফোনটা আসুক।
মনে হচ্ছিল দুমুঠো বিকেল স্পর্শ করে যায় স্নিগ্ধতায়। বড্ড ক্লান্তি লাগছে। কিন্তু না ফোনটা প্রফেশর দত্তর কাছ থেকে।
'আপনার লেখা রেডি?'
'হ্যাঁ রেডি করেছি।'
আমাদের কলেজ থেকে আপনিই যাচ্ছেন।
আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।'
তাহলে নির্দিষ্ট সময়ে আপনি পৌঁছে যাচ্ছেন প্রিন্সিপালকে বলে দিচ্ছি।'
কারণ এই কাজটা আপনার দ্বারাই হত।
ঠিক আছে রাখছি তাহলে আপনি রেস্ট নেন তবে আপনার গলাটা কিন্তু ধরা ধরা লাগছে গলায় কিছু হয়েছে কি?'
'ঠান্ডা লেগে বোধ হয়।'
'ডাক্তার দেখিয়ে নেবেন। রাখি তাহলে।
বেস্ট অফ লাক।'
ফোনটা নামিয়ে রেখে কল্যান চলে গে'ল ছাদে।
একাকী নিজেকে জানতে ইচ্ছে করছিল। এতক্ষণ ধরে একটা টানাপোড়েন চলছিল। ছাদে গিয়ে দেখল মস্ত একখানা তামার পুষ্প পাত্রের মতো লালচে চাঁদ উঠেছে।
অপরূপ তার সৌন্দর্য। শন শন শব্দে হাওয়া বইছে। এই  তামার থালাটি ও একসময়  ঢাকা পড়ে যাবে অসুখী হয়ে উঠবে রাত্রির চিকন মুখ।
তবু এই মুহূর্তে এই চাঁদের সৌন্দর্য তার মনটাকে স্নিগ্ধতায় ভরিয়ে দিল। আর দুমুঠো বিকেল এর যোগাযোগ ধরে রাখার চেষ্টা করছিল।

কবি ফারজানা আফরোজ এর কবিতা





পথের আত্মকথা 
ফারজানা আফরোজ

মনের আরশিতে দেখি-
সেই চেনা পথ,
যেখানে ছুঁয়ে দিয়েছি স্বপ্ন সীমানা।
পথ যেন নীরব হয়ে বলছে,
নিজের আত্মকথা।
অনন্তকাল হেঁটে যেতে পারি,
এই পথ দিয়ে।
সমান্তরাল পথের বাঁকে-
থাকতে পারে চোরাকাঁটা,
কিংবা লুকানো চোরাবালি।
ধূলো ঝড় কিংবা তুষার ঝড়ের,
হাজারো ক্ষণের সাক্ষী এ পথ।
ধূসর আর উজ্জ্বল হাজারো স্মৃতি-
এ পথকে ঘিরে।
চাঁদ,তারাদের মেলা বসেছিল,
পাখিরা ফিরেছিল নীড়ে এই পথ ধরে।
চিরচেনা সেই পথে,
বারে বারে ফিরে আসি।
শিশির ভেজা পথটারে,
বড় ভালোবাসি ।
পথের মাঝে আঁকি,
জীবনের জলছবি।
একদিন শেষ হবে এই পথ চলা,
সব কাহিনী হবে চুপকথা।

কবি বাহাউদ্দিন সেখ এর কবিতা




নিঃশব্দে আওয়াজ
বাহাউদ্দিন সেখ 



নিঃশব্দে আকাশে ভেসে উঠবে- 
                           উথলে পরা মেঘ গুলো,
মেঘের ঘর্ষণে ঘর্ষণে সৃষ্টি হবে 
                  বিদ্যুৎ এর অব্যক্ত আওয়াজ।

ধেয়ে আসবে মৃত্তিকার স্তরে প্রলয়,
দমকা হাওয়ায় নিয়ে যাবে প্রেমের বিষাণ।
সত্য নির্জনতা প্রেম মর্চে মর্চে
                 লৌহোর মত ক্ষয়ে ক্ষয়ে যাবে।

প্রেম ভালোবাসা বয়ে নিয়ে যাবে না,
                             ধর্ম জাতপাত উচ নিচ
তবুও নিঃশব্দে আকাশে ভেসে উঠবে-
        অব্যক্ত মেঘের ঘর্ষণে ঘর্ষণে
                                 বিদ্যুতের আওয়াজ।

শামীমা আহমেদ এর ধারাবাহিক উপন্যাস পর্ব ৬৭



ধারাবাহিক উপন্যাস 





শায়লা শিহাব কথন 
অলিখিত শর্ত (পর্ব ৬৭)
শামীমা আহমেদ 



শায়লাদের পুরো বাসায় এখন বেশ থমথমে একটা ভাব।সারাদিনে ভাইবোনের খুবই কম কথাবার্তা হচ্ছে। সেদিন রুহি খালার কথাগুলো পর রাহাতের মাঝে বেশ পরিবর্তন এসেছে। রাহাত ভাবছে,আসলে মুরুব্বীরা অভিজ্ঞ মানুষ। আমরা এখন যা দেখছি সেটা তারা বহু আগেই পেরিয়ে এসেছে। তাইতো সবকিছুর পরিনতি তারা আগেই বলে দিতে পারে। আর আগে থেকে এই সতর্কবার্তায় রাহাত মনে মনে  রুহিখালার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছে।
রুহি খালার প্রতিটি যুক্তি পালটা যুক্তি শায়লার ভিতরেও প্রতিনিয়ত আঘাত হানছে। শায়লা খুব ভালো করেই জানে,এই সমাজে মেয়েরা অনাকাঙ্ক্ষিত হয়েই জন্মায়। তাদের জন্মটাকে কেউ আনন্দের সাথে গ্রহন করে না। তবে প্রয়োজনের সময় সেই মেয়েই নিজের সুখ বিলাসকে তুচ্ছ করে সংসারের হাল কাঁধে তুলে নিতে পারে।নিজেকে নিঃশেষ করতে পারে। তবে শায়লা কখনো সেভাবে ভাবেনি। পিতৃহারা সংসারে একটি ছেলে থাকলে যা করতো সে তাই করেছে।  বড় সন্তান হয়ে সে তার জায়গা থেকে দ্বায়িত্ব কর্তব্য পালন করেছে। নিজে নিরাপদে থেকেতো  পিছিয়ে আসেনি। কিন্তু তাকে নিয়ে হিসেবের বেলায় সবাই জোড়াতালি লাগাতে চায়।
তার ঘাটতিগুলোকেই সামনে এনে বড় করে দেখা হয়। রুহিখালা আর তার স্বামী এখন তাকে নজরবন্দী করেছে।তাদের কাছে থেকে এক সময়ের আর্থিক সুবিধা নেয়া শায়লাদের পরিবারের উপর এখন অন্যায় আবদার করে চাপিয়ে দিচ্ছে।তবে তাদের এইসব আচরনে শায়লা নিজের ব্যাপারে আরো সচেতন হয়েছে, এটাই প্রাপ্তি।
এখন প্রতিরাতেই নোমান সাহেব কল দিচ্ছেন।শায়লার কি লাগবে?  কানাডা থেকে কি আনতে হবে? কানাডায় এলে,এই দেশের  কোন কোন সুন্দর জায়গা তাকে ঘুরিয়ে দেখাবে। এমনি নানান কথায় শায়লাকে নিজের দিকে টানতে চাইছে।শায়লা প্রতিটি কথায় একেবারেই  নীরব থেকেছে।

শিহাব অফিসে আজকাল বেশ আনমনা হয়ে থাকছে।একটা সময় ছিল শায়লাকে সে তাকে নিয়ে অন্যকিছু ভাবতে বারন করা ছিল।কেমন করে কিভাবে যেন ধীরে ধীরে শায়লার প্রতি তার দূর্বলতা চলে এলো। একদিনতো সবকিছু গুছিয়ে বলে শায়লাকে ফিরিয়েও দেয়া হলো।কিন্তু শায়লার অসুস্থতায় শিহাব নিজেকে পালটে ফেললো।ভেবে নিলো,হয়তো বিধাতাই শায়লাকে পাঠিয়েছেন তার একাকী জীবনে সঙ্গী হতে।কিন্তু এখন তার মনে একটাই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে,এতটা কাছেই যদি এলো তবে বিধাতার এ কোন খেলায় আবার তাদের দূরত্ব হতে চাইছে।শায়লা বিবাহিত,অন্যের স্ত্রী, শায়লা সবইতো জানিয়েছে। কিছুই গোপন করেনি। কিন্তু কেন তবে কোন গভীরের টানে সে শায়লার প্রতি এমন ভালোলাগা এলো।ছেলে আরাফের কথা ভেবে আরাফের মায়ের শূন্যতা পূরণে শায়লাকে তার খুবই আপন মনে হয়েছে আর শায়লাও আরাফকে আপন করেছে, আমাকে ভালোবেসে। নোমান সাহেব দেশে আসতে আর কয়েকদিন মাত্র বাকী।এর মাঝে রাহাতও বেশ নীরব হয়ে গেছে।সেই আগের মত সহযোগিতায় থস্কছে না।গতকাল শায়লার সাথে  কথায় সেটাই বুঝলো শিহাব। 
আইনী বিষয়গুলি রাহাত দেখবে বলেছিল। কিন্তু তার কোন অগ্রগতি দেখছিন্স।তবে কি রাহাত শায়লাকে কানাডায় পাঠাতে চাচ্ছে।আর চাইবেইনা বা কেনো? বিবাহিত বোনকে তার  স্বামীর কাছে পাঠিয়ে ভাইতো তার দায় সারতেই চাইবে। শিহাব বুঝতে পারছেনা কিভাবে শায়লাকে এই শৃঙ্খল থেকে সে মুক্ত করে আনবে।শায়লাকে নিয়ে সে অনেক স্বপ্ন দেখেছে। তার ঘরে শায়লার চলাচল অনুভব করেছে।কত কত রাত জেগে জেগে শায়লার সাথে কথা হয়েছে।সারাদিন সে ব্যস্ততায় নীরব থাকলে শায়লা উৎকন্ঠিত হয়ে উঠেছে, আমার ফিরিয়ে দেয়ার কষ্টে সে নিজের উপর
সেই আঘাত সইতে না পেরে অসুস্থ হয়ে গিয়েছে। শিহাব আর ভাবতে পারছে না।মনের দাবীর কাছে কি কাগজের আর আইনের বন্ধনের অধিকার বেশি হলো?
শিহাব এভাবে ভাবতে চায়নি কিন্তু শায়লার ঐ মায়াভরা মুখ তাকে এভাবেই বেঁধেছে।
তবে আজ দুদিন হলো শায়লা খুব কম কথা বলছে। তবে কি সে অন্যরকম কিছু ভাবছে? শিহাবের ঘর আজ শূন্য লাগে,কই কতদিন যাবৎইতো সে একাই ছিল,তখনতো কাউকে খুঁজেনি,আবার কোন দিন মনে কোন স্বপ্ন উঁকি দিবে তাতো সে কল্পনাও করেনি।কি করবে এখন। শায়লা যে তার জীবনে অনেকখানি যায়গা নিয়ে নিয়েছে। শিহাব আর কিছু ভাবতে পারছে না।দুশ্চিন্তায় রাতের ঘুম কমে গেছে।সিগারেট খাওয়া বেড়ে গেছে।নাহ, এভাবে অন্য, শায়লাকে পেতে হলে তাকে অন্যভাবে অন্যরকম কিছু ভাবতে হবে। 

রাহাতের অফিস থেকে শায়লার মোবাইলে কল এলো।  আপু,আম্মুর কিছু ওষুধ লাগবে।আমাকে কল দিয়েছিল।তুমিওতো জানোই কি কি লাগবে।তুমি একটু বের হয়ে গিয়ে কিনে রেখো।আমি অফিস থেকে বেরুতে পারছি না। ফিরতেও রাত হবে। তুমি রকটু ওষুধগুলো কিনে রেখো।আমি কাল মাকে আনতে যাবো। মা উত্তরায় চলে আসতে চাইছে।নায়লা এখন মোটামুটি ভালো আছে।
 শায়লা সবটা শুনে বললো আচ্ছা আমি বিকেলে বেরুবো।কিনে আনবো।
শায়লা সারাটাদিন একা একাই ঘরে সময় কাটায়। নায়লার বাসা থেকে মায়ের নিয়মিত ফোন আসছে।বড় জামাই কানাডা থেকে আসবে এজন্য তার অনেক চিন্তা ভাবনা। তাকে কি কি দিতে হবে কি কেমন আপ্যায়ন করা হবে।বিয়ের সময় যে কয়দিন ছিল তাতো হোটেলেই থেকেছে।এবার যেন জামাই আদর করতে পারে এ জন্য রাহাতের সাথে কথা বলা।বিদেশের জামাই যেন যত্ন আত্মি ঠিকঠাক মত হয়।মা দু'একদিনের মধ্যেই উত্তরা চলে আসবে।টেলিফোনে রুহি খালার সাথেও দফায় দফায় আয়োজন নিয়ে কথা হচ্ছে। রাহাতের শায়লাকে পাশ কাটিয়ে চলা শায়লার  মনে আঘাত দিলেও কিন্তু পরক্ষনেই  শিহাবের কথা  মনে হলেই সে আবার মনের শক্তিতে দৃঢ় হয়।
শিহাবের দেয়া ব্রেসলেটটি শায়লার প্রতিমূহুর্তের অনুসঙ্গ। ভেবে নেয় শিহাব তার সাথেই আছে।রাহাত যদিও শায়লার সাথে অচেনার মত আচরণ করছে তবে সে এটা ভালো করেই জানে শিহাবের মত একটা ছেলে তার বোনের জন্য কতটা মানানসই।
তবুও রাহাত নিজের সুন্দর আগামীর স্বপ্নে শায়লাকে নিয়ে আর দৌড়াতে আগ্রহী নয়।
  শায়লা দুপুরের খাবার শেষ করে বিছানার কাছে এলো।সকাল থেকে সাংসারিক বেশ একটা চাপ যায়।যদিও বুয়া আসে তবুও গোছগাছ করে রাহাতকে অফিসে পাঠানো 
রান্নাবান্না নিজেকেই গুছাতে হয়।আবার এইসবের জন্য কেনাকাটাও তারই করতে হয়।শায়লা জানে যদিও আজ বা বিগত দিনে তার সাহায্যে সহযোগিতা ছাড়া সংসার না চললেও দিনে দিনে তার প্রয়োজন ফুরিয়ে আসছে।এরপর রাহাতের ঘরে স্ত্রী আসবে আর সে তখন সবকিছুর দায়িত্ব নিবে।মেয়েরা বাবার বাড়িতে আর কয়দিন?তারাতো বাবার বাড়িতে মেহমান হয়ে জন্মায় আর অচেনা একটা পরিবারের সাথে জীবন কাটিয়ে দেয়। তবে অচেনা হলেও শিহাবদের পরিবারের সবাইকে শায়লার খুবই ভালো লেগেছে।খুব মন চাইছে আবার একদিন যেতে। আরাফের আর বাড়ির অন্য বাবুগুলোর কথা খুব মনে পড়ছে।এই বাসায় একটা ছোট্ট শিশু নেই বহুকাল।কবে যে নায়লার একটা বাবু হবে? তবে হলেই বা কি? ওর শ্বশুরবাড়ি যে ধনী মানুষ  তারা কি আর খুব একটা আসতে দিবে?এই নায়লা ছোট্ট বোনটা ছিল।ফ্রক পরিয়ে চুল বেঁধে দিতো স্কুলে যাওয়ার আগে।ছুটির দিনে আপুর হাতে ভাত খাওয়ার বায়না ছিল।দিন শেষে আপুর গলা জড়িয়ে ঘুমানো।আজ কোথায় গেল সেইসব দিন।আজ সে ধনীর ঘরের স্ত্রী।এই বোনের কথা আর খুব একটা মনে পড়ে না।শায়লার চোখটা ভিজে উঠলো!  পরক্ষনেই ভাবলো ছিঃএসব কি ভাবছি?নায়লা ভালো আছে  বড় বোন হিসেবে এটাই তার চাওয়া।
নানান ভাবনায় ডুবে শায়লা একেবারে চুপটি করে দুপুরের ভাত ঘুমে ঢলে পড়লো।
শিহাবের কলে ঘুম ভাঙল।শায়লা কি করছো? 
এইতো একটু ঘুমিয়েছিলাম।
তুমি ঘুমাতে পারছো? আমার যে ক'রাত যাবৎ একেবারেই ঘুম নেই।শায়লা স্মাকে ভুলে তুমি কিভাবে ঘুমাও? 
তোমাকে ভুলে ঘুমিয়েছি কে বললো?এই যে তোমার দেয়া ব্রেসলেটটি আমার হাতে সর্বক্ষন।
আহ! শায়লা তোমার কাছে আমি বারবার হেরে যাই।তবে এই হেরে যাওয়ায়ও আমি তৃপ্ত।তোমার কাছেই তো হেরে যাওয়া!
শিহাব,একটা কথা জিজ্ঞেস করি?
হু,
তুমি কি সত্যই আমাকে তোমার কাছে নিতে চাইছো?
কোন সন্দেহ,,?
না, সেটা নয়, আমাকে আপন করতে হলে রিশতিনার মত আবার সেই নানান আইনী জটিলতায় যেতে হবে।
হউক তা, কষ্ট করে  পাওয়ায় আনন্দ আছে আর রিশতিনাকে পেতে কোন আইনী জটিলতা ছিল না বরং ওরা রিশতিনা ছাড়িয়ে নিতে আইনের প্রভাব খাটিয়েছে, থ্রেট দিয়েছে। শুধু আমার সেই দুধের শিশুটার মুখের দিকে তাকিয়ে আমি সব হজম করেছি।তবে আবার আজ,আরাফের জন্য মা এনে দিতে যদি আইনের কাছে যেতে হয় তো যাবো।তোমার মাঝে আমি আমার জন্য যেমন গভীর ভালোবাসা দেখেছি আরাফের জন্য তেমনি মায়া দেখেছি।
শিহাব,তোমার সাথে পরিচয়টা আরো আগে হওয়া উচিত ছিল।
হু,ঠিক বলেছো।
শিহাব প্রসঙ্গ পালটে বললো,শায়লা এসো বিকেলে একসাথে চা খাই। 
হু হতে পারে, আমার কিছু কেনাকাটা আছে বেরুবো।
তবে শায়লা আজ আমি নিজে হাতে চা বানিয়ে খাওয়াবো। 
কিভাবে? 
আজ তুমি আমার বাসার অতিথি।
তোমার বাসায়?
হ্যাঁ, আজ আর বাইরে না।আমার বাসার বারান্দায় বসে দুজনে চা খাবো।
শায়লা চিন্তিত হলেও, মনকে সামাল দিতে না পেরে বলে ফেললো,  আচ্ছা আমি আসবো।
কখন বেরুবে? আমাকে বেরোনর আগে কল দিও।
আচ্ছা,জানাবো।ভালো থেকো।
তুমিও,দেখা হচ্ছে,,
শায়লা ঘড়ির দিকে তাকালো। সাড়ে তিনটা বাজছে। সাড়ে চারটার দিকে সে বেরুবে মনে মনে ঠিক করে নিলো।


চলবে....