২৪ মার্চ ২০২১

আশিস চক্রবর্তী



প্রতিশ্রুতি


এখনো ক্ষুধার্ত মানুষের ভিড়ে তোমার উপস্থিতি

 শরীরের ওপর চড়ে শোনাচ্ছো বাসি প্রতিশ্রুতি।


তোমার মঞ্চের তলায় রোদহীন হলদেটে ঘাস।

অমূল্য কার্পেটে হারিয়েছে সহস্র মানুষের শ্বাস।


বিশাল সম্ভাবনায় লেগেছে আজ মড়কের ঘ্রাণ

ছেঁড়া পকেটের নীচে ধুঁকছে ভবিষ্যতের প্রাণ।


দুর্গন্ধের মতো শোনায় তোমার সমস্ত ভাষণ।

অজান্তে উধাও দেখো তোমার সাধের আসন।


তোমার উদ্ধৃত দৈব বাণী যেন ধ্বংসের পরিচয়

তোমার হাতের রেখায় লেখা আসন্ন পরাজয়।


দিকে দিকে ওই শোনা যায় সময়ের ভ্রুকুটি

ভাগাড়ে শকুনের মতো ওড়ে বাসি প্রতিশ্রুতি।

রীনা ঘোষ




সমুদ্রকান্তা 



তুমি ছলাৎ ছলাৎ এগিয়ে চল খোঁপায় কাশফুল,

তুমি আগমনীর নতুন সাজে ছাপিয়ে দুই কূল।


তুমি ইছামতি ইচ্ছেপূরণ রাত রুপোলি জল,

তুমি সূর্য সাথে সোনার বরণ বইছো যে কলকল।


তুমি মেঘ মেদুরে ঝগড়া করে অম্বু ডাকো তাই,

তুমি টাপুর টুপুর অঙ্গে মাখো আগুন করো ছাই।


তুমি তন্বী তোমার চলার গতি সর্পিল বাঁকাপথ,

তুমি নিষ্পাপ সে পুষ্প সমান তোমার পবিত্র শপথ।


এই আকাশ জানে বাতাস জানে দৈব জানে সব,

ময়ূরপঙ্খী প্রাচীনতরু জানে তোমার কলরব।


তুমি যেমন খুশি তেমন সাজো নীল কালোয় সে 

ডুব,

সোনা রূপা ধুলার রঙেও মানায় তোমায় খুব।


সরিৎ তুমি মন্দাকিনী তোমার কল্লোলিনী মন,

সমুদ্রের কান্তা তুমি, তোমার বিস্তার ত্রিভুবন।

বিধান সাহা



বলিষ্ঠতা


বলছিল বটে
সব করে দেবে
কিন্তু করে দেওয়ার মত
সবিশেষ বলিষ্ঠতা
হয়তো ছিল না

চেনা অচেনার
স্রোত পা্র হয়ে
অনন্ত জীবনে
পৌঁছনোর মত
কায়দা কানুন
হয়তো বা ছিল

তবু জানি
তেমন বলিষ্ঠতা
মোটেই ছিল না
যা দিয়ে জীবনের
একেবারে শেষ প্রান্তে
চলে যাওয়া যায় ....

গোলাম কবির




প্রেমে পড়া বারণ 


চোখের সামনেই হৃদয় যাচ্ছে পুড়ে, 
কে জানে সে কথা আর আমি ছাড়া? 
অথচ চোখে ছিলো পারিজাত স্বপ্নের ভিড়।
 এতো যে ভালোবাসি সেই প্রিয় নদীটা ও
 জানেনা এই হৃদয়ের খবর। 
যে তোমাকে আমি ভালোবাসি সেই তুমিই
 কী জানো কবে ঘটেছিল সেই হৃদয়ের
 হত্যাকান্ড? হয়তো তুমিও জানো সে কথা! 
 তবুও বলে যাই এই নৃশংসতার কথা,
 বিভৎস হৃদয়ের ক্ষতচিহৃ বুকে নিয়ে তবু
 এখনো বেঁচে আছি, ভালবাসি বলে জীবন,
 যদিও জানতাম প্রেমে পড়া বারণ।

প্রেমাংশু শ্রাবণ




চৈত্রের শেষ বেলা



বাতাবী লেবুর ফুল
প্রজাপতি ফড়িং আর ভ্রমরের খেলা
দেখেছো কি তুমি?
অনন্ত গোধূলি আর চৈত্রের শেষ বেলা।

আমাদের দীর্ঘশ্বাস জমেছে দ্যাখো----
ক্লান্ত কৃষকের পোড় খাওয়া পিঠে মুক্তোদানার মত
তবু আজ চৈত্রের শেষ বেলা
অভিমানী কিশোরী বউ তার
করেছে অবহেলা।

আগুনের হল্কা মাখা গরম নিঃশ্বাসে
তিরতির কাঁপছে তার নাকের নোলক
দ্যাখো--লকলকে ভালোবাসাও জমেছে ঠোঁটের ডগায়
নাগর দোলায় উঠছে নামছে অভিমান।

গেলো বছর আর আগামীর সন্ধিক্ষণে 
হাতে তার পাওয়া না পাওয়ার হালখাতা।

উঠোনে ছড়ানো শাশ্বত বাংলার রুপ
এখনো শূন্য ধানের গোলা তবু----
বেতের ধামা ভরা বিন্নি ধানের খই,
খেজুর গুড়, তালপাখার বাতাস
(নবান্নের আয়োজনে বাংলাদেশের মেয়েরা আজও বুকের উত্তাপ দিয়ে খই ভেজে রাখে)

উঠনে খেলছে শিশু, 
এইতো বাংলার বহুকালের জমানো ফসল।

দেনা পাওনার হিসাব মিটেছে
চৈত্রের বেলা শেষে---
অবশেষে 
ভাঙা বেড়ার ফাঁক গলে
শোঁ-শোঁ শব্দে বাতাস আসে ঢের
কিশোরীর শরীরে আবার ফসলি আবাদ হয়।

যেনো বঙ্গোপসাগরের তীরে
আছড়ে পড়া ফেনীল উচ্ছ্বাস। 
মাটির বিছানায় তারা এখনো পাশাপাশি শোয়।

দেবব্রত সরকার




বসন্তপলাশ



দেখ দেখি চোখ উঠিয়ে লজ্জা ভেঙে অমি প্রিয়া

রঙের খেলায় হৃদয় পুড়ায় এ কেমন তর হিয়া

জানো তুমি কি যে কখন আমার উলটো পালটা দাবি

প্রেমে পড়ে দিয়ে ছিলাম তোমায় হৃদয় পাড়ের চাবি


এই পরে আর ওই পরে সব বসন্তকাল এলেই

পাতার মতন তোমার প্রেমের আগুন জ্বালায় সেই

তোমার প্রেমের প্রশ্ন উত্তর হারিয়ে যাবার আগে

চোখ নদী কে জানতে চাইলেই তোমারই অনুরাগে 

হারিয়ে যাওয়া ঝরাপাতা আবার উঠুক বেঁচে

বুকের ভেতর  ভাঙছে পাথর একা ভালোবেসে

সাজিয়ে দিলাম মানিয়ে নিলাম পলাশ তিয়াস জুঁই

তোমার বুকে মাথা রেখে হাজার বাছর শুই

এই তো ছোট্ট স্বপ্ন আমার আর কি চেয়ে ছিলাম

মাথার মধ্যে যা কিছু সব হৃদয় দিয়ে দিলাম

তবুও আমায় ভাসিয়ে একলা কোথায় যে যাও রানি 

দেখ চেয়ে  সেই তোমার জন্য একা দাঁড়িয়ে আছি আমি


অথচ আজও গভীর ভাবের তুমিই অমর নারী

তোমার ভেতর দেখেতে পেতাম আমার বেঁচে থাকার বাড়ি

এখন তুমি অবাক প্রিয়া হারিয়ে গেলে কই 

তাই তো লিখি তোমার কথা বেঁচে থাকার সই


এই গল্পের শেষ হবে না শেষ হবে না প্রেম 

এ কবিতা পড়ছো যারাই জেনে যাও তার শেষ

আমি যাকে ডেকে ছিলেম আমার সর্বনাশে 

বেশ কিছু দিন কাটিয়ে পালায় এই বসন্ত পলাশে

তহিদুল ইসলাম





দারিদ্র



ঘরে সন্ধ্যা দেয়ার তেল নেই

দিনে প্রদীপ জ্বেলে আগুন পোহায়

একটা অভাব মিটলে,আরেকটা এসে পড়ে

বিয়ের পরে সুখ নাই

ঈশান কোণে মেঘ নিকষ কালো

চোখাঁধারি অন্ধকার,আসন্ন ঝড়ো হাওয়ায়

কটা মুদ্রা পর্ণের সাথে উড়ে এলো

কুঁড়ে ঘরের দেউড়িতে

আমি বেমুখ হয়ে দাঁড়িয়ে রইনু

স্নেহের একমাত্র মেয়ে , চোখের জলে

মহাজনের গাড়িতে গিয়ে উঠলো।

তারপর,মেঘ ডেকে বৃষ্টি নামলো।

ঘরদোর খাঁ,খাঁ করছে

ক'টা টাকা দিয়ে ক'টা দিনই বা চললো

ক'দিন হলো উনুনে  হাঁড়ি চড়েনি

টাকা!  বেচে দেবো ,সব বেচে দেবো

বৌ'য়ের হাটে বৌয়ের নিলাম

তোমরা,কে কত দিবে তার দাম?

পাড়ায় পাড়ায় কানাকানি

বাতাস এসে বলে গেল

শ্রাবণের জলেও মাটি শুকনো

ভিজার কোনো  লক্ষন নাই

চোতের আগুনে পুড়ে অঙ্গার কালো

ভালোবাসা বেচে দেবো

বেচে দেবো জ্বলন্ত পৃথিবীটাকে

সুখের সন্ধানে,

হাজার বছর পথ হাঁটবো

আরেকটা পৃথিবীর সন্ধানে

________________________

স্বপন কুমার ধর




সরে যাক ভয়


 অজানা,অচেনা,অলীক

এই তিনেতেই যে রয়,

না-জানা, না-চেনা, কল্পিত,

সব ধরনের ভয়।

বিশেষ বিষয়ে অধিক চিন্তা,

দেহে আনে মানসিক অবসন্নতা,

ঘিরে ধরে হানির আশঙ্কা,

হয়ে পড়ি ভীত, সন্ত্রস্তা।

প্রাণী ভীত হয়ে পড়লে,

বাঁচার আশা যে, তার যায় চলে,

অন্ধকারের অক্টোপাস ঘিরে ধরে,

নীরব আর্তনাদে গুমরে মরে।



ভয়কে অবশ্যই করতে পরাজয়,

মানসিকভাবে সবল হতে হয়,

অশিক্ষা, কুসংস্কার,বহু প্রচৃলিত ধারণা নয়,

চাই যুক্তি,তর্ক বিশ্লেষণে;পর্যবেক্ষন ও সিদ্ধান্তগ্ৰহণ।

অজানাকে জানো, অচেনাকে চেনো,

অলীকের খোঁজো যথার্থতা,

বিজ্ঞানভিত্তিক প্রমানিত তথ্যেই,

ভয় সরবে,বাঁচবে বাস্তবতা।

ফরমান সেখ




শিশু


শিশু মোদের ফুলের মতো

    কিংবা দূর্বাঘাস,

যেমন তুমি গড়বে তাকে

    ছড়াবে সে সুবাস|


প্রকৃতি যার চলন দাতা

    মাতা-পিতা আশ্রয়|

অসৎ পথে ডেকোনা তার

    দিয়োনা সে প্রশ্রয়!


ভালোবাসায় কাছে টানো

    দিয়ে দুটি চুম্বন,

দেখবে তারাই জীবন দেবে

    রাখতে তোমার সন্মান।


তাকে নিয়ে করো যদি

    বড়ো কোনো আশা,

দিয়ো তারে মনের থেকে

   স্নেহ-ভালোবাসা।

অলোক দাস

 


নন্দন 


সকালটা অন্য দিনের মতো নয় আজ I বাতাসে শুধু শব্দ চয়ন I কি কোরে বাতাস বয়, কে জানে I আমরা শুধু ছন্দের পূজারী I মেঘ আজ নীলাকাশ ডেকেছে I বাঁ চোখ যেদিকে চায়, সেথা কোকিল  ডাক সোনা যায় I বিস্মৃতির অন্তরালে চলে যায় মোন I যেখানে শুধুই আনন্দ I ডানদিকে যেই তাকাই সব ধোঁয়া I সূর্য আলো দিচ্ছে অনন্তকাল I যা দেখি ভবিষৎ তা অজানা I বর্তমান  যেন বালির স্রোত I আমি ও আমার মোন অস্থির I তবুও দেখি পলাশ I ইচ্ছে ডানা মেলে উড়ে যায় মোন I যেখানে পলাশ অনাবিল আনন্দে মাতোয়ারা, সে আমার শান্তিনিকেতন I তাই ভাবি ভালোবাসা ভালো নেই I হাসতে ভুলে গেছে মোন I তাই বসাই কবিতার আসর মাঝে মাঝে I