০৭ নভেম্বর ২০২০

শেখ কাকলী


তোমাকেই ভালোবাসি

তুমি মরুভূমি হলে আমি হবো জল

তোমার ক্লান্তিতে হবো আমি বল,

তুমি আকাশ হলে আমি হবো নীল

যেনো অবাধ বিচরণে মুক্ত শঙ্খচিল।


তুমি শীতল হলে আমি হবো কাঁথা

তুমি দুঃখ পেলে এই হৃদয়ে ব্যাথা,

তুমি অরণ্য হলে আমি হবো সবুজ

তোমায় পেতে হবো আমি অবুঝ।


তুমি বাগান হলে আমি হবো মালি

তুমি অন্যের হলে হৃদয় হবে খালি,

তুমি ভুল হলে আমি হবো শুদ্ধ

তোমায় ভালোবেসে হবো আমি ঋদ্ধ।


তুমি কবিতা হলে আমি হবো কবি

তোমার স্মৃতিতে হবো ফ্রেমে বাঁধা ছবি,

তুমি বাস্তবতা হলে আমি অভিলাষী

তুমি অন্যের তবু তোমাকেই ভালোবাসি।


(বাংলাদেশ)

সাইফুল আলিম এর ছোট গল্প

 

আসামীর জবানবন্দি 



 বিজ্ঞ আদালতে একজন মেয়ে তার স্বামীর বিরুদ্ধে সি আর মামলা দায়ের করা হয়েছে অভিযোগটি ছিল ৫০০০০০ (পাঁচ লক্ষ টাকা) যৌতুক দাবি করে মারধর করে। অভিযোগের ভিত্তিতে বিজ্ঞ ম্যাজিস্ট্রেট সাহেব গ্রেফতারি পরোয়ানা ইস্যু করা হয় এবং পরবর্তীতে ধার্য তারিখে আদালতে আসামী স্বেচ্ছায় আত্মসমর্পণ করার জন্য এ্যডভোকেট সাহেব এর মাধ্যমে আদালতে হাজির হয়। বিজ্ঞ কৌশলির শুনানীন্তে বিচারক সাহেব আসামীকে কিছু প্রশ্ন জিজ্ঞেস করে যে,

তুমি যদি আমার প্রশ্নের সঠিক উত্তর দাও তাহলে তোমাকে পুরষ্কার দেওয়া হবে ।

সত্যি বলছেন সার!

জি আজ্ঞে সত্যি বলছি 

নাম কি তোমার ?

হেসে হেসে বল্লো - সুমন,

কি করো তুমি ?

ব্যবসা। 

তোমাদের বিয়ে হয়েছিল কতো দিন হলো?

এক বছর তিন দিন।

নাম কি তোমার স্ত্রীর?

নদী। সার্টিফিকেটে - তামান্না আক্তার নদী 

কাবিন হয়েছে কতো টাকা?

৫ লাখ টাকা।

ডিভোর্স দিয়েছো বিয়ের কতো মাস পর?

তিন মাস পর। 

ভরনপুষন এর খরচ দিয়েছো ?

না সার ।

মেয়ের কাবিনের টাকা কখন দিয়েছো?

দেই নাই। 

মেয়েকে নিয়ে সংসার করবে না কেন?

মেয়ে ভালো না,

কি খারাপ মেয়ে তোমাকে পাগলের মতো ভালবাসে?

না সার,স্বাভাবিক ভাবে ভালোবাসতো। তবে অন্য ছেলের সাথে হষ্টিনষ্টি করতো ।

মেয়ের বাবা কি করে?

রিস্কা চালক।

প্রেমের বিয়ে না ম্যারেজ ?

হেসে হেসে বল্লো - লাভ ম্যারেজ।

তাহলে কি তিন মাসে ভালবাসা ফুরিয়ে গেছে? তিন মাসে  তো বিয়ে করা বৌ এর ঘ্রান ই  যায় না।

একটি মুশকি হাসি দিয়ে......

সার মেয়ে সুন্দর চেহারা দেখিয়ে আরো কয়েকটা ছেলের সাথে রিলেশন করেছে ।

তুমি দেখেছো 

না সার শুনেছি।

কোথায় থেকে শুনেছো? কে বলেছে তোমাকে?

অনিকা।

কে সে?

বোন সার, অনিকা আমার ছোট। সে আই এ থার্ড ইয়ারে আছে সার।

খুব আদরের দুলালি সার।

মাঝে মাঝে অন্য বোনের সাথে ঝগড়া করে।

কিন্তু আমাকে খুব ভালোভাসে।

তুমি কয়টি মেয়ের সাথে প্রেম করো।

সাতটি । 


তৈমুর খান

 রণযাত্রায় 




চুপিচুপি ডাকি । কাকে ডাকি? 

চেতনাই বোঝে । মরমে বসে এক পাখি। 

সমস্ত আকাশ জুড়ে রামধনু লীলা 

আমার নিভৃত টংকার শব্দবাদী খেলা। 


অলৌকিক উষ্ণতার কাছে কেঁপে ওঠে ছোঁয়া 

উচ্চারণে তাকে আর কতটুকু পাওয়া? 

পুরোনো চাঁদের কাছে মেয়েলি স্বভাব 

সংকুচিত হতে থাকে নতুন বিপ্লব। 


গান্ধর্বীর বাতায়নে ছলছল চোখ 

বার বার বলে ওঠে : ওকে ডাকা হোক! 

রণযাত্রায় সমূহ কৌতূহল 

আজন্ম তীর্থের কাছে ফেলে কান্নাজল।

আশিস চক্রবর্তী'র দুটি অনুগল্প

  ব্যালকনি




খুব যত্ন করে তে তলার ব্যালকনি টা সাজিয়ে ছিলাম গাছ গাছালি দিয়ে । উদ্দেশ্য ছিল আমি আর আমার স্ত্রী সুমনা রোজ সকাল বিকেল বসে চা খেতে খেতে সূর্য উদয়াস্ত দেখবো। এখন সে ব্যালকনি আমাকে গিলে খেতে আসে ।কিছুতেই ওদিকে চোখ মেলতে পারিনা। 

এখনো বাতাসে কান পাতলে ওখান থেকে ঝাঁপিয়ে পড়ার সময় সুমনার শেষ কথা গুলো শুনতে পায় -- আমাকে ক্ষমা করো, আমি তোমার স্বপ্ন পূরণ করতে পারিনি !


আমি ক্ষমা করতে পারিনি নিজেকে! কারণ সন্তান না জন্মানোর সমস্যা টা ছিল আমার।



অভিশাপ



আমার ঘরে ঘুল ঘুলির মধ্যে দুটো পাখি বাসা বেঁধে ছিল। হামেশাই খড় কুটো, পালক ,এটা ওটা ছড়িয়ে ঘর নোংরা করতো। একদিন রাগের বশে বাসা টা ছুঁড়ে ফেলতেই দুটো, ডিম মাটিতে পড়ে ফেটে গিয়েছিল।এরপর আর ওরা আসেনি। অনেকটা স্বস্তি পেয়েছিলাম।


বিয়ের দশ বছর পর আমার স্ত্রী কে ডাক্তার সমাদ্দার যখন মাথা নামিয়ে বললেন -- আমি দুঃখিত, আপনি কখনো মা হতে পারবেন না !

 তখন আমার ,এক মুহূর্তে সেই ফাটা ডিমের কথাটি মনে পড়ে গিয়েছিল।

মধুমিতা রায়

 বাড়ি..



চোখ বুজলেই বাড়ি

আসলে বাড়িটা বহু দূরে।


উনুনের সামনে বসা মায়ের

ফরসা মুখ,উজ্জ্বল সিঁদুর

কাগজে মুখ ডোবানো বাবা

পড়ার টেবিলে দিদি

খুব স্পষ্ট।


মনে হয় সবকিছু হাতের নাগালে

ঝকঝকে শৈশব রঙচঙে খেলাঘর

হাসিখুশি বিস্ময়।


বাড়িটা আছে নিজের জায়গায়

মানুষ বদলে যায়।

'আমার' শব্দটা মুছতে মুছতে মুছতে

একসময় নেই।


আমার সেই বাড়িটা এখন আমার নয়,

আসলে আমার কোন বাড়িই হয়ত নেই।

সুচিতা সরকার

 নীল !



নীল !

তুই কি বলতে পারিস, কেনো এমন হয় !!


একা একা তোর সাথে মন, 

শত-শত কথা কয়।

সামনে তুই এসে দাঁড়ালেই,

মুহূর্তে বাক্য নিখোঁজ হয়।


তোকে দেখার প্রয়াসে, 

চক্ষুদ্বয় প্রতিপলে ব্যাকুল হয়।

এপানে চাইলে তুই,

কোনো গভীর খাদে সে লুকায় রয়।।

জানিস কি তুই, কেনো এমনটা হয়?


হিমেল বাতাসের প্রতিটি শিহরণে,

শরীর তোর স্পর্শ চায়।

হাতদুটো এসে ছুঁয়ে তুই দিলেই,

লজ্জায় মন ছুট্টে পালায়।।

পারবি বলতে, এমন কেনো হয়?


মরমের নিদারুণ ব্যাথা,

অপেক্ষায় ছন্দ মিলায়।

তুই বুকে জড়াস যখন,

অবিরাম বৃষ্টিতে মন ভিজে যায়।।

বলনা রে, এমনটা কেনো হয়?


সবাই বলে এসবই আবেগ,

সাজানো, চেনা-জানা পুরোনো ধাঁচে।

তোর সাথে কেনো তবে,

আমার সব অনুভূতিই সাজে, নতুন লাজে?

সাকিল আহমেদ

 ব্যর্থ মানুষ




ঘাসে মুখ দিয়ে যত থাকো না কেন ,গরুও হবে না

গরু হতে যোগ্যতা লাগে।একটা গরু বদলে দিতে পারে তাঁবুতন্ত্রের ভবিষ্যৎ। জাতির বাছুরলিপি


যত তুমি গাছ লাগাও না কেন ফুল ও ফল হবে না

একজন বিফল মানুষ নদীর ঘাটে এসে ভাবতে থাকে ভাবতে থাকে...

বাপের কোন জমিজমা নেই যে সেটা দিয়ে জীবন গড়বে।

জমি বলতে আছে দশভূজ শরীরের রক্ত কৃমি পুঁজ।


দূরে শ্মশান।

কিছু না পোড়া চ‍্যালা কাঠ হাসছে, ব্যঙ্গ করছে...

বলছে হায় মানুষ তোর অহংকার সবটুকু পোড়ানো গেল না


ব্যাঙ্গের একটা বড়ো ব্যাঙ্ক ব্যালেন্স থাকে।

থাকে একটা ফিক্স ডিপোজিট ও ।

সে ব্যর্থ মানুষ দেখে তাই ব্যঙ্গ করে।


ব্যর্থ মানুষটি নদীর পাড়ে বসে ভালোবাসার ঢেউ গুনছে।

কিছু ঢেউ কিছু ঢেউয়ের বুকে আছড়ে পড়ছে।

কিছু ঢেউ পত্র মিতালি খেলছে।কিছু ঢেউ ঢেউয়ের আঘাতে চুর মার হয়ে যাচ্ছে।

একটা কাক তার কানের কাছে এসে কা কা কা স্বরে বিরক্ত করছে আর বলছে: ' আমিতো উচ্ছিষ্ট খাই।তুই ও খা।পৃথিবীর উচ্ছিষ্ট খেতে খেতে তুই ও একদিন বড়ো হবি।অপরিহার্য হবি...'

একজন ব্যর্থ মানুষ চেষ্টা করলে কেমন অপরিহার্য হয়ে উঠতে পারে কাক শেখাল।

আসলে একজন ব্যর্থ মানুষ , ব্যর্থ মানুষের নোংরা ঘাঁটতে ঘাঁটতে অব্যক্ত যন্ত্রণা বুকে নিয়ে অপরিহার্য হয়ে ওঠেন।

লীনা দাস

 প্রেম-বুভূক্ষা



প্রেমিকা আমার, তোমার মনের হিংস্রতাকে মানিয়ে নিয়েছি।

চেয়ে দেখো নীল আসমান

যেখানে জমাট মেঘের  মিনার,

মন ভাঙার মতো ভেঙে

টুকরো টুকরো হয়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে 

যেন ঠিক মেঘের পালক।


ভালবাসার নাম উচ্চারণের সাথে

  ভুলে যাই তোমার,"সুন্দর অসম্মান!"


(আমি তোমার সব কিছু মানিয়ে নিয়েছি মাধবী!)

লেপ্টে আছ তুমি আমার অস্থি মজ্জায়।

সমুদ্র জোয়ারের শ্বেত জলোচ্ছ্বাসে দিশেহারা  আমি!

শব্দহীন ডানা মেলা ছায়া ঘুরছে  রুপালী শঙ্খচিলের

মাথার উপর চক্রাকারে!


দেখো মাধবী,মেঘের ছোটো ছোটো  পালক আর নেই!

আকাশে নীল রঙ লাগছে

দিগন্ত বিস্তৃত নীলাকাশ।

এতো নীল হয় আকাশ?


অস্তরাগের মূর্ছনায় নীলাকাশে লেগেছে

গোলাপি তুলির টান।

ঝিকিমিকি তারাদের রাজ্যে আজ বাসর সাজায় চল মাধবী!

আমার ধমনীতে তোমার রক্ত হোক প্রবাহিত।

সঙ্গী থাকুক নৈঃশব্দ রাত।

ওয়াহিদা খাতুন

 ক্রোধানল

ক্রোধানলে পুড়ে ছাই মানব জীবন,

হিতাহিত জ্ঞান শূন্য করে দেয় ক্রোধ;

বেছে নেয় আত্মহত্যা অকালে মরণ,

ক্রোধান্ধ পাপাত্মা কাড়ে মানবিক বোধ;

নিদ্রাহীনতায় ব্যধিরা শরীরে জোটে--

নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে বর্বরতায়,

উন্মাদ মত্তত্তে শুধু নিজ মাথা কোটে--

নটরাজ তাণ্ডব তার অস্থিরতায়;


আয়ত্তাধীন নিজ বিবেক রোষানলে,

সংসার ছারখার ক্রোধের আগুনে, 

রিপুর তাড়নাতেই সর্ব অঙ্গ জ্বলে;

বিষাক্ত বাতাস বয় রঙের ফাগুনে, 


ক্ষুধামান্দ্য বদহজম ক্রোধের কারণ--!

আয়ুক্ষয়,বার্ধক্য তার উদাহরণ --!!

দেবাশিস সাহা'র দুটি কবিতা

 কাঠকয়লা 




তুমি তো কাঠকয়লা 

শুধু অপেক্ষা করো


আগুনের জন্য 





না-বলা কথা


জিভ ছিঁড়ে নেবার পর

পিছু পিছু কিছুটা পথ

তেড়ে গিয়েছিল 

ফোঁটা ফোঁটা রক্তবিন্দু


শালিখের ঠোঁটে ঠোঁটে 

আমার কথা

ফিরে এসেছে মানুষ সমাজে


আমার না-বলা কথা

শীতকাল হয়ে জমে থাকে

মেহনতী মানুষের রক্তে


কোনো  কোনো কথা

বারবার বলবার জন্যে

জন্ম নেয় পাখি 


সুরে তালে ছন্দে 

সবার মুখের কথা


শোষণের বিপরীতে 

মুখর হোক মানুষ।