১৪ ডিসেম্বর ২০২০

নাসের হোসেন এর প্রকাশিত কবিতা




ডাক 



পশ্চিম আকাশ থেকে ভেসে এলো ডাক , এবার বিদায় 


এইবার কষ্ট শুরু হলো প্রকৃত , ডেক্সভরা চিঠি 

ছিঁড়, প্রস্রবণ 

উড়ে যায় চোখের সামনে , ভালবাসা 

বহুদিন ঘড়ি ছুটে গেছে তোমাদের বাড়ি ---

আক্রোশভরে  উঠে যাই তোমার বুকের গভীরে 


পশ্চিম আকাশ থেকে ভেসে এলো ডাক , এবার বিদায় 


 


(কথা পত্রিকা 

১৯৮৯) 

সহায়তাকারী কবি অরু চত্পাধ্যায় 

প্রভাত চৌধুরী




একমাত্র নাসের-ই পারে 


এক


মাটির নীচে কবিতালেখার জন্য 

কাগজ এবং কলম

পাঠাতে হবে , ওখানে বসে 


 লিখবে নাসের।একমাত্র নাসের-ই পারে যেকোনো জায়গায় কবিতা লিখতে।


দুই 


নাসের কাচের গাড়িতে চেপে বহরমপুর চলে গেল শুয়েছিল। কিছু কথা বলল না। শুনলোও না। আগামীকাল ওকে মাটির নীচে  রেখে দেওয়া হবে।

অরু চট্টোপাধ্যায়



কবি নাসের হোসেন কে নিবেদিত 

তিনটে অনুভব।

একটা,সৃজন শান্ত বিবেক,

নদীতীর ধরে,শব্দহীন হারিয়ে গিয়েছে। 

আমি তার সব স্মৃতি বুকে তুলে নিই।

আর কোথা পাবো,এমন আশ্চর্য মানুষ!! 


এমন আশ্চর্য ফুল,

পৃথিবীর সব হাসিনিয়ে, 

শব্দের জগতে ফুটেছিলো,

চলে যাওয়া, অকাল সময়ে!

শব্দের হৃদয় 

ভোরের শিশিরের সাথে

গোপনে কেঁদেছে বোবা স্তব্ধতায়।

ছবি ছিলো, হৃদয়ের রক্তের মতো,

জীবন্ত অনুভবের দলিল,

এমন মানুষ, কবিতার বাগানে

সহজ এক বিচরণে

ফুটিয়েছিলো,

স্তব্ধতার সব মুক্তগুলো,

এসো সব,নতজানু

এই শস্য তুলে নিই।

মৃণালকান্তি সাহা



কবি নাসের হোসেন 


প্রভাত চৌধুরীর বাড়িতে আলাপ হয়েছিল l কতদিন আগে আজ আর মনে নেই l সেটা জানাও আজ খুব জরুরি বলে মনে হয় না l তবে এটা বাস্তব সত্য আড্ডায় , কবিতাকেন্দ্রীক আলোচনায় , বই মেলায় নাসেরের সঙ্গে কাটিয়ে দিয়ে ছিলাম অনেক বছর l 

মিতভাষী নাসেরের কাছে না বলে কোন শব্দ ছিলনা , আমি "কফি হাউসের চার পাশে " মাসিক সাহিত্য পত্রিকা প্রকাশ করতে গিয়ে সব রকমের সাহায্য সহযোগিতা পেয়েছি l কবি জীবনের শেষ কবিতা মৃত্যুর দু -দিন আগে "কফি হাউসের চার পাশে "র জন্য লিখে গেছেন৷ এটা আমার কাছে চরম প্রাপ্তি বলে মনে করি l "কফি হাউসের চার পাশে " নামাঙ্কন   নাসের হোসেন বিরল উচ্চতায় তুলে দিয়েছেন l তিনি মনে করতেন  কবিতায় দেখাতে পারে মানুষের মুক্তির পথ! তাঁর মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে  বাংলা সাহিত্যেও ল আমি কবি নাসের এর প্রতি শ্রদ্ধা জানাই l

রীণা কংসবণিক



নাসের দা কবিতাময় পুরুষ 

                দেবব্রত সরকারের মেসেজটা দেখেই ছ্যাঁক  করে উঠেছিল বুকটা । নাসেরদা আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন। বিশ্বাস করতে পারছিলাম না । এখনো বিশ্বাস করতে পারছি না নাসেরদার সাথে আর কোনোদিন কথা হবে না । মাস খানেক আগে helicone এর জন্য একটি কবিতা চাইলাম , উনি বললেন "কবে লাগবে ? কয়েক দিনের মধ্যে দিয়ে দেব"।


আপাদ-মস্তক আশ্চর্য কবিতাময় পুরুষ ছিলেন তিনি । উনার মুখ থেকে কোনোদিন কোনো খারাপ কথা শুনিনি ।শুনিনি কার সম্পর্কে কোনো বিরূপ মন্তব্য । অজাতশত্রু এমন প্রাণবন্ত মানুষ আমি দুটো দেখিনি।


কবিতার পাশাপাশি তিনি খুব সুন্দর ছবি আঁকতেন। জগতের নিয়ম কানুন,  সর্বোপরি আত্মরহস্য রহস্যময়তার ইঙ্গিত কবিতার মত ছবিতে ও পাই। 

"ঝড়ের মতো এলোমেলো করে দেওয়া চুল ও মনের মানচিত্র /

মানচিত্রের মান শব্দটি এ ক্ষেত্রে খুব কার্যকরী অপীক্ষার"। (অপেক্ষা/নাসের হোসেন )


তবে নাসেরদার কবিতাগুলি বড় বেশি প্রশ্নময়। অথার্ত পড়ার পর মনের মধ্যে রহস্যময় অনুভূতির সৃষ্টি হয়।

"গ্রন্থের আড়ালে যে লেখক অবস্হান করে থাকেন তার সঙ্গে দেখা/

হয় মাঝে মাঝেই,  এতো যে দেখা তবু মেলাতে পারি না গ্রন্থের থেকেও ।

আর কি লিখব ঠোঁটের কোনে সেই মৃদু চাপা হাসি নিয়ে সত্যিই কি তিনি আর দাঁড়াবেন না!!!

কবি হিসেবে যেমন উচ্চস্তরের ছিলেন আবার মানুষ হিসেবে তেমন উন্নত মনের ছিলেন।

তরুন কবিরা হারালো তাদের অভিভাবক আর কবিতা জগত সামগ্রিকভাবে হারালো মুক্তমনা এক সংস্কৃতি প্রেমিককে।


মোফাক হোসেন



নাসের হোসেন স্মরণে


অঙ্কুরের  ইচ্ছে করে

নাসের হোসেন-এর মত, 

কলমের ডগা দিয়ে 

যন্ত্রণার রক্ত ঝরাতে।


আপোষ হীন সংগ্রামের

নিরলস সৈনিক হয়ে ধারালো 

কালিতে খণ্ড-বিখণ্ড করতে।


নিজস্ব ঘর বানিয়ে 

অন্যকে উদ্বুদ্ধ করে,

বসন্তের পাতা বিছিয়ে।

জল-ছল-ছল চোখের আলো হয়ে,

নীরবে নির্ব্বিঘ্নে শুয়ে থাকতে।

জাফর রেজা ( বাংলাদেশ )





প্রয়াত কবি নাসির হোসেনের স্বরণে 

মৃত্যুহীন প্রাণ



অবশেষে চলে গেলেন তিনি 

স্বনামধন্য মানুষটি জীবনের 

সব অর্জন পাঠকের কাছে

সঞ্চিত রেখে ঘুমায় এখন। 

মৃত্যু তাকে করেনি ক্ষমা

জানতে চায়নি তার সাফল্যের কথা,

শুনতে চায়নি তার অসমাপ্ত  কাজের কথা,

মৃত্যু তুমি নিষ্ঠুর হলেও

কবি রবে আমাদের হৃদয়ে।

স্বপন দত্ত




বিলীন 



শোনা কথা 

নাসের মারা গেছে , 

আমি এখনও বুঝতে পারিনি 

এবার বুঝবার জন্যে নাসেরের কাছে যাচ্ছি 

পৌঁছব পৌঁছব হয়েছি 

              তোমরা কেও দেখতে পাচ্ছো আমায় ?

আমি নেই নাসের ...

সানি সরকার



নাসেরদাকে নিয়ে কয়েক পংক্তি  


তোমার চোখের ওপর সেই নীল রঙের পাখিটি এসে বসল 


আমরা পাখিটিকে চিনি , আমরা পাখিটির স্পর্শ গ্রহন করি l 

একটি পৃথিবী নিয়ে পাখিটি এবছরও শীতকাল ভ্রমণ করছে ...

তোমার চোখ পাখিটির চোখ পরস্পর 

এক হয়ে গেলে আমরা থমকে গেলাম মুহূর্তের জন্যে l

দেবব্রত সরকার



কবি নাসের হোসেন


জীবনে ছড়ানো আলো  সবটুকু  বিশ্বাস 

তুমি তো আমারো কবি কবিতাতে নিরবাস 

তোমার হাসিতে পলি গঙ্গাজলের ভাষায়

রেখে যাও এক কলি খুঁটে খুঁটে খাই চাষায় 


তোমার বাঁধানো সিঁড়ি সাজানো শহর ঘুরে 

এলোমেলো পথ ছেড়ে নিজেকে বেঁধেছ সুরে 

কবিতার খাতা ছবিতার খাতা কাঁধে কাঁধে তরিঘরি 

ছুটে চলে যাও এপথ ওপথ ক্লান্ত হওনা পরি


হাসিতে ভরাট লাল টুকটুকে তোমার সে-মৃদুস্বর

মৃদু হেসে ওঠা ঈশ্বর তুমি হবে না কখনও পর 

তোমার ছায়াতে হেঁটে চলে যারা তারা হয়ে তপবন 

ব্যারাক স্কোয়্যার চায়ের দোকান কাঁদছে চতুষ্কোণ ।


আমি তো কাঁদি না জানো কবিতা চেয়েছ কতেক

দিইনি কবিতা অভিমান ছিলো কেন বুকে দিয়ে গেলে শেক

টুলটা বাড়িয়ে দিয়েছি কবিকে বলেছি বসেন বসেন

চুপি হেসে যায় হৃদয়ে প্রাণেতে কবি নাসের হোসেন