১৮ ডিসেম্বর ২০২০

সানি সরকার




হরিণপালিকা 


এই জন্মের কাছে কোনও ঋণ নেই


শুধু তোর চুম্বন ছাড়া


ওই ওষ্ঠের জন্যে এই যাপন 

ওই শিমুলতুলোর জন্যে অমরত্ব  



তোর কোলের ওপর হরিণের মতো মাথা রেখে 

আমি পৃথিবীর সমস্ত সুন্দর এই দেহের ভেতর নিয়ে নেব 

ও-আমার হরিণ পালিকা...



দিবি না?

পিয়াল রায়



ভয় 


স্বপ্নে কুকুরের জিভ

চেটে দিলে পায়ে

চমকে উঠি

ঘুম ভেঙে লালাভেজা পা

শুকবো কোথায়? 




সিঁড়ি থেকে 

পড়ে যেতে যেতে ভাবি

মাথা ঠুকে গেলে

মগজের এত এত রস

রাখব কোথায়? 




একবার একটা বুড়ো লোকের

চোখ চুরি করে পালাতে পালাতে

আরেকটু হলেই ঢুকে পড়েছিলাম 

অন্ধ এক প্রেতাত্মার পেটে



হৈ হট্টগোল বড় প্রিয়

সেখান থেকে মুছে গেলে 

মাঝেমাঝে ভাবি

নিজেকে ভেজাব কোথায়? 




আজকাল এমন হয়েছে/

কেবল ভাবতে ভালো লাগে 




জানি না ভাবতে ভুলে গেলে

ভয়গুলো লুকবো কোথায়?

কাকলী দাস ঘোষ মুক্তগদ্য

 


উপলব্ধি 


অনন্ত বিশ্বের পথে তুমি হাঁটতে চাও। দুপাশে কত গাছ-নদী-মাটি-কত রাস্তা-মন্দির-মসজিদ-গির্জা কত কী। তুমি এগিয়ে যাচ্ছ আবার পিছিয়ে আসছ। মাথার ঊপর নীল আকাশ। কত পাখী উড়ছে সেখানে। তুমি কিছু চাও-কিছু একটা। কিন্তু কী সেটা? অর্থ-সম্পদ-ভালবাসা-স্নেহ-মায়া-মমতা-প্রতিপত্তি-নাম-যশ। তুমি ভাবছ হয়তোবা এই সবকিছুই তুমি খুঁজছ। তাই তো এগোতে চাও। কিন্তু হঠাৎ শুনলে তোমার খুব আপন কেউ তোমাকে পিছু ডাকছে। হয়তো বা তোমার মা-বাবা-ভাই-বোন কিম্বা তোমার স্বামী অথবা স্ত্রী কিম্বা সন্তান। না-সে বা তারা তোমার স্বপ্নের পথে বাধা হতে চায়না-তবুও ডাকছে-হয়তো কেউ অসুস্থ কিম্বা তোমাকে বড় প্রয়োজন। তুমি কেঁপে উঠলে। তুমি পিছিয়ে এলে। তুমি তো সব চাও। কিন্তু এগিয়ে যাওয়ার পথেও এত শূণ্যতা কেন-এত দীর্ঘশ্বাস কেন? 


এর উত্তর কী ? আসলে ব্যথা যে সব হৃদয়ে। সব ভুলে অনেকদূর এগোনোর পরে একটা শ্বশান-একটা গোরস্থান-একটা চার্চের পাশে নিস্তব্ধ সমাধিস্থল। তোমার মনে পড়ে গেল-কতদূর যেতে পার তুমি? কতটুকু ক্ষমতা তোমার??? তোমার পায়ে মাড়ানো পিঁপড়ে আর তোমার মধ্যে কতটুকুই বা তফাত! ! ! 


এবার আরও বড় শূণ্যতা। এবার চাই-চাই চারপাশে মানুষ চাই-আরও আরও কাছের মানুষ। চাইছ সবাই তোমাকে ভীষণ ভালবাসুক-সবাই তোমাকে ঘিরে থাকূক। আলো চাও অনেক আলো। কিন্তু পেলে কী ? 


হৃদয়ে হাত রেখে দেখ-মনে হচ্ছে না-কই কোথাও তো কেউ নেই। আসলে তুমি ভীষণ ভীষণ একা হয়ে এগিয়ে চলেছ সেদিকে যেদিকে তোমার একান্ত নিজস্ব নিঃশ্বাসও হয়তো তোমার সঙ্গে ছলনা করবেই॥  



সোহেল রানা

 



কথা রেখেও কেউ কথা রাখল না

               

  


তোমাকে হারাবো বলে তো হাতে হাত রাখিনি।। 

হৃদয়ে স্পন্দন প্রতিটি শ্বাস প্রশ্বাসে শুধু তোমাকেই চায়। 

প্রথম দেখাটা আজও তোমার মনে পড়ে, 

মাথার চুলের উপর যখন আমার পছন্দের মতো, 

খোঁপা পড়ে অজানা পথে পাড়ি দাও! 

তোমার মাঝপিটের নিচে কালো রঙের তিলটা এখনও আছে। 

আমার পছন্দের মতো শাড়িটা পড়ে বঙ্গ রমণী লাগে। 

তোমার শ্যাম্পুমাখা চুলের গন্ধটা আজও মনে পড়ে। 

তোমাকে হারাবো বলে তো হাতে হাত রাখিনি।। 

মেহুল আজও কি আমার কথা মনে পড়ে, 

মনে নাই বা পড়লো আমার তো মনেই আছে। 

মেহুল আমার মতো কি শাহিনের সাথে কথা গুলো শেয়ার করো। 

কথা রেখেও কেউ কথা রাখল না? 

লাল লিপিস্টিকটা কি আজও শুখনো ঠোঁটে লাগাও! 

তোমাকে হারাবো বলে তো হাতে হাত রাখিনি।। 

কথা রেখেও কেউ কথা রাখল না? 


নীলাঞ্জন কুমার


সারবত্তা 



প্রার্থনা করো , 

সব কিছুর সারবত্তা 

ছুঁয়ে যেন খুঁজে পাই 

নিজস্বতা ।


অহং উড়িয়ে শেষ অবধি 

সেই আকাঙ্ক্ষা স্পর্শ 


এই মনে ।




স্তব্ধতা কি টেনে নিয়ে যায় 

সারাৎসারের কাছে !


জানা নেই।

সুশান্ত কুমার পাল




বেড়াজাল 

      

শত শত মিথ্যার বেড়াজালে-

 সত্যের প্রকাশ বড়ই কঠিন,

স্বার্থান্বেষী-ক্ষমতালিপ্সু- মানুষ  সর্বদা-উদগ্রীব,

মিথ্যা রচনায় ভরিয়ে দিতে-

শতাব্দীর পর শতাব্দী,

দশক এর পর দশক, প্রজন্মের পর প্রজন্ম,

 হজম করে ফেলে,

মিথ্যা রচনার রাঙানো ইতিহাস,

তখন সত্য বড় রুগ্ন হয়ে -

চাপা ক্রন্দনে ভরিয়ে দেয় আকাশ বাতাস ।।

-মিথ্যা কথন সত্যকে ভাসিয়ে দেয় অতল সমুদ্রে,

  ----'টেনে তুলবার বারবার চেষ্টা বিফলে যায় -

 মিথ্যা হজমকারী মানুষের 

আন্দোলনে। 

সত্য বারংবার- 

  দীর্ঘশ্বাস ফেলে ডুকরে-

 ডুকরে কেঁদে ওঠে-

হাহাকার করে,

সত্য-- 

 পুনর্বার চাপা পরে যায়-

মিথ্যার বেড়াজালে ।। 

      --------------

নাসরিন পারভীন

 


 করে সহজ কর জীবনকাল


জমে উঠেছে অস্থায়ী প্রলেপে বরফে পথ 

শুভ্র-সাদা সুন্দর অথচ ভুলে ভরা পিচ্ছল 

দুর্গম পথের এ দিকহীন পান্থনিবাস

 আমাকে সচরাচরই করে ঘরছাড়া 

যেই আমি চলতে শুরু করেছি

গন্তব্যে পৌঁছেই বুঝে গিয়েছি

গোড়াতেই ছিলো গলদ আমার।

কষ্টের জলাশয়ে শব্দহীন চিৎকার

আমার ; আমি লক্ষ্য ভ্রষ্ট  নিথর শৈবাল।

মন খারাপের শহরে 

ইবাদতের পবিত্র  সিজদায় 

নতজানু হয়ে চেয়েছি দিকদিশা,

খুলে দিয়ে অাত্মকথনের রোজনামচা  

প্রভু পথ দেখাও আমারে, করি মিনতি। 


মিনতির দরবারে আর্জিটুকুতে

জ্বেলে দিও হেফাজতে আশীর্বাদের বাতি আলোর দিশারী কর এবার,

অন্তঃকরণে কর তোমার তপস্বিনী 

পূন্য দান, তফসিল তাফসিরে 

স্মরণটুকু আমার গ্রহন কর,

গ্রহন কর তসবিহ তাকবীর 

সিজদার করজোড়ে মোনাজাত,

দুই-দুয়ারী মতাদর্শ বেভুল বান্দারে

মমতা রায় চৌধুরী




মা তোমায় বড্ড মনে পড়ছে


মা তোমায় আজ বড্ড মনে পড়ছে।

ভাবছি পাখির মতো উড়ে যাব স্নেহের  স্পর্শ পেতে।

বেশ তো ছিলাম তোমার স্নেহের নীড়খানিতে,

 ঘটা করে বিয়ে দিয়ে পুরলে খাঁচাটিতে।

 ভেবেছিলে বড়লোক বাড়ির বউ হয়েছে,

এমন সৌভাগ্য কজনার আছে?

 কিন্তু মাগো বড় বাড়িতে বড় যন্ত্রণা,

 বিনি পয়সার ঝি খাটছি সর্বদা।

যন্ত্রণার মন বালুচরের ঢেউগুলো,

আছড়ে পড়ে হৃদয়বীণায়।

এই তো সেদিন ভাতের ফ্যান ঝরাতে

গিয়ে হাতটাই গেল পুড়ে।

কেউ তো তোমার মতো আসলো না ছুটে?

বলল ও   না ,তোমার কি হয়েছে?

বলল শুধু, রান্না‌ হতে কেন দেরি হচ্ছে?

পোড়া যন্ত্রণায় ছটফটাচ্ছি স্নেহ স্পর্শ পেতে। 

সারাটা রাত্রি কেটেছে আজ অনিদ্রাতে,

 ছাড়তে হচ্ছে বিছানা অতি প্রত্যুষে।

 তোমাকে তাই বড্ড মনে পড়ছে।

সকালে বিছানা না ছাড়ার কারণে,

পাড়া-প্রতিবেশী আত্মীয় স্বজনে,

হাজারো কথা শুনিয়েছে তোমাকে।

মিষ্টি হেসে শুধু বলতে-' উঠবে সময় হলে'

আজ কে উঠবে আমার  ঢাল হয়ে?

জানো মা , গতরাতে জ্বরেতে গা যাচ্ছিল  পুড়ে,

সেই ঘোরেতে ভুল বকেছি সারাটা রাত ধরে।

তাতেও বকুনি জুটেছে শতগুণ কপালে।

তোমাদের জামাই এসব তোয়াক্কা  না করে,

 সবার কথা ভেবে চলে শুধুই দিনে রাতে।

ভেবে পাইনা আমার মূল্য কতটা তার কাছে?

যন্ত্রণাদগ্ধ হৃদয়ে বড্ড মনে পড়ছে।

সর্বদা মন খারাপে, যন্ত্রনার ব্যথা উপশমে,

 এখন কোথায় পাবো তোমাকে?

মন বালুচরে তাই মিছেই  মরি খুঁজে।

আমার একলা মনের আকাশ জুড়ে  

শুধু তুমি , তুমি ই আছো যে নক্ষত্র রাজি হয়ে।


মোঃ আমিনুল ইসলাম

 


এ বিজয় অমর 



১৬ ই ডিসেম্বর তুমি বাঙালির অহংকার, তুমি কোটি জনতার, 

১৬ ই ডিসেম্বর তুমি মহা বিজয়ের মহা উল্লাস, 

তুমি বিদবা মায়ের বন্দী স্বাশের শান্তির নিঃস্বাস,

১৬ ই ডিসেম্বর তুমি ১৮কোটি মানুষের চলার পথের

উৎস প্রেরনার, 

তুমি সারা বিশ্বে ছড়িয়ে থাকা প্রতিটা বাঙালির গর্ব। 

দুঃখ -সুখের অনুরণ স্বপ্নীল বাসনার,

কত বিপ্লবী বন্ধুর রক্তে রাঙা 

আমাদের এই স্বাধীনতা

তারা কি ফিরবে এই সুপ্রভাতে

যত তরুণ অরুণ গেছে অস্তচলে,

নাকি অমর হয়ে রয়ে যাবে

শত কোটি বাঙালির বুকে। 

খুলে দাও আজ সব ক'টা জানালা

আমি প্রান খুলে চিৎকার করে 

গাইবো বিজয়ের গান 

ওরা আসবে চুপিচুপি 

দেশ টাকে ভালেবেশে দিয়েছে যারা প্রান........!

তাহসান-কামরুজ্জামান




কবিতা


কবিতাগুচ্ছে ঘুণ পোকা ধরেছে

কবিত্বে মেঘের আনাগোনা শুরু

হয়েছে ;

অস্তিত্বের সঙ্গে কবিতা খুব করে

আড়ি পেতে বসেছে;

অভিমানী চোখেরজল গড়িয়েছে

রাতের আঁধারে নীরব বুকের যন্ত্রণা

থৈথৈ করে বাসা বেঁধেছে,

সুখেরকাঁটা থমকে গিয়েছে

কালস্রোতে অক্ষিকোটরিতে ভ্রম

ধরে মৃত্যুর দেখা দিয়েছে। 

অদ্ভুতদর্শনে মনস্তত্ত্ব বিভ্রান্ত হয়েছে,


বেঁচে থাকার পথঘাটগুলো নালিশ

করে গ্রাম্য বিচার বসিয়েছে ;

ভালোমন্দের ঘরে আগুন জ্বলেছে,

তুমি অক্ষারে ক্ষতবিক্ষত হয়ে

রক্তেজলে হৃদয় ভাসিয়েছে ;

নীল চিরকুটের বিচ্ছেদ ঘটেছে

কত শতাব্দীকাল ধরে গুছানো স্বপ্নে

অগ্নিরথের দেখা মেলেছে।

মানভাঙার জোয়ারে অনুভবগুলো

ভাসিয়ে নিয়েছো,


প্রত্যাশায় আশাহত করে বিনাদোষ 

অভিশাপ্ত করেছো ;

নিয়ম করে চিঠি দিবার ডাকপিয়নের

পথ আটকে দিয়েছো ;

অনিশ্চয়তার বানের জ্বলে শেষ

কবিতা লিখতে রুখে দিয়েছো।