০৪ নভেম্বর ২০২০

কবি মিশ্র

 প্রিয় তুই 


অনেকগুলো দিনের পর তোর সঙ্গে কথা বলতে ইচ্ছে হলো ,অনেক কথা.. হয়তো তার মাত্রা লয় ছন্দ কিছুই নেই। তবুও ইচ্ছে হল। তোর ব্যস্ত সময়ের কিছু টা দিতে তুই ও কার্পন্য করিস নি। তুই আমাকে ভালবাসিস, ভাবতে ভীষণ ভালো লাগে, কিন্তু সব কথা তবু বলা হয় না। কলম ও আজ কেমন কথা বলতে চায়। হারিয়ে যাওয়া কথা, ভুলে যাওয়া কথা, ফিরে পাওয়া কথা সবকিছু সব বলতে চায়। কিছুটা সময় তোর সঙ্গে কাটাতে চেয়েছিলাম হারিয়ে যেতে চেয়েছিলাম ঐ নীল আকাশে পাখা মেলে যেখানে শুধু তুই আর আর আমি মেঘেরা আলতো করে ছুয়ে যাবে আমাদের মনের ইচ্ছে গুলোকে। ভাবছিস কেমন পাগল হয়ে গেছি। হয়তবা তাই। আসলে তোর আমার সম্পর্কটা কেমন অভ্যাস হয়ে গিয়েছে। তুই চাইলে ও ভুলতে পারিস না, আমি ও না। কিন্তু তুই বড্ড হিসাব করে চলিস, আমি বেহিসাবি, অভিমানী। তোর কাছে কিছু চাইতে পারি না। তোর হিসাবটি মন ও হয়তো চায় না। কিন্তু আমি তোর অভ্যাস। পারবি না ভুলতে।তোকে আমার অভ্যাসে নিয়ে ছিলাম, অভিনয়ে নয়। যতই তুই আড়ালে থাক, দিনটা শুরু তোকে দিয়েই হয়।


হ্যাঁ, এভাবেই বেঁচে থাকবো তোর মধ্যে

ভাইরাস হোয়ে...যেমন বলেছিলি, জীবাণু হয়ে বেঁচে থাকব তোর  মধ্যে।


আজ অনেক বৃষ্টি হোক। ধুয়ে যাক সমস্ত ঋণ। পাওয়ার থেকে না পাওয়া হয়ত পাওয়ার বাসনা বাড়ায়। আজ একটা গোটা সকাল তোর থেকে চেয়ে নেবো। যেমনটা ঠিক আগে হতো।

কিছু ক্যানভাসে আঁকা

কিছু রং তুলি মোরা..

শুধু জল ছবি আঁকি

মনে রং ছুয়ে থাকা।

         ইতি অসমাপ্তি

সুবীর ঘোষ

কে আইছে

গাছতলার ঠেকে পৌঁছতেই দেখি জাপান বাউরীকে সঙ্গে নিয়ে হরেন ঠাকুর যাচ্ছে । কী হরেন কোথায় গিয়েছিলে এদিকে ? আমার প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার আগেই জাপান বলে উঠল—কে আইছে ?  আমি তাকে সংক্ষিপ্ত উত্তর দিই—কেউ আসে নি । হরেন হেসে বলল—কী যে বলে জাপানটা । কে আইছে নয় । কে ওয়াই সি । ঐ যে ব্যাঙ্কে নাড়ি নক্ষত্র জমা দিতে হয় না ? আর বলবেন না কাকা । এ ব্যাটা তো লিখতে পড়তে জানে না । তা আবার ইংরিজি । এই নিয়ে তিনবার ওর কে ওয়াই সি ফিল আপ করে দিয়ে এলাম । এক এক বার দিই আর বলে ঠিক আছে যান । কিছু দিন পর আবার চিঠি আসে – তোমার কে ওয়াই সি দেওয়া নেই । অবিলম্বে জমা দাও ।


প্রথমবার এক নেপালি অফিসারের হাতে জমা দিয়েছিলাম । তিনি দেখে বললেন-- ঠিক আছে যান । কিছুদিন পর আবার যখন সেই একই কথা তখন গেলাম ব্যাঙ্কে । গিয়ে শুনি সেই নেপালি অফিসার বদলি হয়ে গেছেন আর জাপানের কে ওয়াই সি-র কোনো হদিস নেই ।


মাঝের বার যে অফিসারের কাছে জমা দিয়েছিলাম তিনি অবশ্য বদলি হন নি । তবে তাঁর স্মৃতিভ্রংশ হয়েছিল । তিনি কিছু মনেই করতে পারলেন না --দিয়েছিলেন বুঝি ! আমাকে ? আমি তো কিছুই মনে করতে পারছি না । যাই হোক ইফ ইউ ডোন্ট মাইন্ড আর একবার দিয়ে দিন । বুঝলাম তিনি সেটিকে রেফার টু ড্রয়ার করে দিয়েছেন । এর পর আবার ফর্ম ফিলাপ এবং জাপানের বিলাপ –- দেখুন কেনে আবার আইসতে হবেক । সেবার  এক মহিলা অফিসার । তাঁকে এই সুদীর্ঘ ইতিহাস বর্ণনা করে বসে থেকে কাজটা করিয়ে নিয়ে গেলাম । একজন নিরক্ষর মানুষকে সাহায্য করতে পেরে আমার মনে খুব তৃপ্তি হল -- বলল হরেন ঠাকুর ।


তত দিনে জাপান বাউরীর মোবাইল হয়েছে । শেষের কে ওয়াই সিতে প্যান আধার মোবাইল সব গেঁথে গেছে । হরেন ভাবল যাক নিশ্চিন্ত । জাপান আর ঘ্যানঘ্যান করবে না । কিছুদিন যেতে না যেতেই আবার জাপান। মোবাইল বাড়িয়ে । মেসেজটা পড়া হল । সেই একই--কে ওয়াই সি দেবার সাদর আমন্ত্রণ ।


সেই একই মহিলা । আপনার কে ওয়াই সি জমা আছে তো । তাহলে , কেন এসেছেন ? কেন ? এই দেখুন আপনাদের নেমতন্ন পত্র । মহিলা অফিসার আকাশপাতাল ভেবে যাচ্ছেন এমন ভুল কী করে হল । অফিসার জিজ্ঞেস  করলেন -–আপনার কোনো চেঞ্জ থাকলে বলে যান । জাপানকে ক্ষেতের কাজ ছেড়ে আসতে হয়েছে বলে এমনিতেই ভেতরে ভেতরে ফুটছিল । এই প্রশ্ন তো ইন্ধন । জাপান গম্ভীর মুখে বলল--- হঁ চ্যাঞ্জ আছে তো  । বাপের নাম আর জনমদিন এই দুটো চ্যাঞ্জ হবেক । লিখে লেন ।

আশিস চক্রবর্তী

 বন্দি


ভাল্লাগেনা কার্টুন দেখা 

 ,ঘরের ভেতর বন্দি।

হাত পা ছেড়ে ,দোর ডিঙিয়ে

খুকুর, বাইরে ওড়ার ফন্দি।

রইলো পরে ইংরেজি টা,

আজ মিথ্যে ছড়ার বই।

রান্না ঘরে ডাকলো মা যে

খুকু, হাতের লেখা কই?

হোমটাস্ক সব হয়েছি কি

এবার ধরবো মুখে মুখে?

মা যে কোথায় হারিয়ে গেছে

 টিভি আর ফেসবুকে । 


হেল্থ ড্রিংকসের ঠান্ডা কাপে

গুলিয়ে ওঠে গা-টা।

কবে থেকেই মা এর কথায়,

খেলার মাঠে টা -টা।

সকল খুখুই আনমনা আজ

বুঝলে যাবে জানা।

ভুল শিক্ষা ফাঁদ পেতেছে

তাই ,স্বাধীন হতে মানা।

দীপ্তি চক্রবর্তী

 আমার মা

মা মানেই রান্নাঘর

হলুদ মাখা শাড়িতে তেল চিটে দাগ

নিরলস দুটো চোখ

নিজেকে হাসিমুখে নিঙরে দেওয়ার

কি আপ্রাণ প্রচেষ্টা


মা , আমার মা

ব্যাথায় কাতর ফোলা ফোলা পা দুটো 

একটু একটু করে হারাচ্ছে চলার শক্তি

ডাক্তার ওষুধ 

হাই ব্লাড প্রেশারে হাঁফ টান


মা মানে এক আকাশ অভিমান

ঝেড়ে ফেলে বুকের কষ্ট

ভেঙে পড়া শরীরে একটু যত্নের টান

পাশে এসে একবার বলা

"ভালো আছিস তো মা!"


এক চিলতে উঠোন

রোদে শুকোয় মায়ের শাড়ি

আমাদের সুখ

গঙ্গা যমুনা ভেজা আঁচল

মায়ের স্বপ্নের ঘরবাড়ি


মা এক মহাকাব্য

রামায়ণ মহাভারত ইলিয়ড ওডিসি

নিজেকে ভেঙে ভেঙে 

সন্তানকে এগিয়ে দেওয়ার এক সমুদ্র স্বপ্ন

মা আমার সব কাজের পরে শক্ত দেওয়াল

একটু কান্নার আশ্রয়


পিছল পথের হাত ধরে এগিয়ে দেওয়ার স্বপ্ন 

সেই যে আমার মা

মা মানেই যুদ্ধ জয়

মা মানেই ভালোবাসার পরশ

মা নিজেই আমার কবিতা

তুষার ভট্টাচার্য

নিরুদ্দেশ যাত্রায় 

শীতের হিম কুয়াশা মাখা শুনশান চরাচর, ধান মাঠ, আলপথ পেরিয়ে অবশেষে চোখের সামনে ভেসে উঠছে যে অচেনা অন্ধকার ভুতুড়ে স্টেশন, সেখানে কোনও স্টেশন মাস্টার নেই, যাত্রীদের কোনও  কোলাহল নেই, হকার নেই।
শুধু ঝাঁকড়া চুলের একটা বৃদ্ধ পাগল চোখে হলুদ লন্ঠন জ্বেলে নৈশ প্রহরীর মতন ঘুরে বেড়াচ্ছে প্ল্যাটফর্মের এদিকে ওদিকে ।ঘুরঘুট্টি অন্ধকারে তাঁর জ্বলন্ত চোখে শুধুই প্রশ্ন জেগে উঠছে  - এত রাত্রিরে আপনি মশাই কোথায় যাবেন,কোন ঠিকানায়? এখন কোনও ট্রেন নেই;

                         বরং আমার সঙ্গেই চলুন ।ওই যে একফালি সরু কোপাই নদী, তার পাশেই ছোট্ট শ্মশান; জঙ্গলে জেগে আছে কয়েকটা ক্ষুধার্ত শেয়াল আর শকুন;

                   একটা রাত এখানে কাটালেই বুঝতে পারবেন -এই পৃথিবীতে মানুষ কত একা, নিঃসঙ্গ; এখানে এই যে দেখছেন ইস্টিশন আর নিঝুম শ্মশান!

শুধুই ক্ষণিকের আসা আর যাওয়া।মাঝখানে মাত্র কয়েকটা দিন; তারপরে সবকিছু ফেলে দিয়ে চলে যেতে হবে   দিকশূন্যপুরে, একাকী নিরুদ্দেশ যাত্রায় ।

               আপনার বুঝি এখনও রয়ে গেছে শিকড়ের মায়াটান? তবে ফিরে চলে যান; ভাবছেন সংসারে দু'দণ্ড শান্তি খুঁজে পাবেন!
                   শান্তি যদি কোথাও থেকে থাকে তবে এই ইস্টিশন আর নীরব  শ্মশান।স্নেহ, মায়া মমতা, ভালবাসা বলে কিছু নেই এই পৃথিবীতে; সবকিছুই অলীক বাসনা, মিথ্যের মায়াজাল ।

      '   কোথাও শান্তি নেই,ভালবাসা নেই'
নিঝুম শীত রাত্রির হিমেল বাতাসে শুনশান স্টেশন জুড়ে প্রতিধ্বনিত হয়ে ফিরে আসছে পাগলের কণ্ঠস্বর  -  কোথাও শান্তি নেই, ভালবাসা নেই;
তাঁর চিৎকারে জঙ্গলে জেগে উঠছে কয়েকটা শেয়াল , নিম ডালে বসে ডানা ঝাঁপটায় কয়েকটা শকুন ;
     আর     ফিকে চাঁদ ঘুম দেয় টলটলে নদী জলে।

অমিত কাশ‍্যপ

 বিপ্লব বল




বেশি দূরে না যাওয়াই ভালো 

ফেরার পথে তুমি না থাকতেই পার

চিরকাল সঙ্গ দেবে সবাই, ভাবা মূর্খামি

সাবধানী কথাটা মাথায় রেখে, বিপ্লব বল


সূর্যাস্তের পর কার্তিক মাস ঢুকে যাচ্ছে শহরে 

সে শহর এখন অনেক বদলের

ময়দানে হাওয়া খাওয়ার মানুষ 

ভিক্টোরিয়ার সেই পরির মুগ্ধতা চোখেই পড়ে না 

সাবধানী কথাটার আশ্চর্য ক্ষমতা 

ম‍্যাটাডোর হাঁকিয়ে ছুটছে, বিপ্লব বল


নিপুণ মানুষ মিছিলের শেষ প্রান্তে

খানিক আলোয়, খানিক অন্ধকারে, দূরে দূরে 

সুরভি জাহাঙ্গীর

 লজ্জা ---


 লালসার লালাতে... কামনার জ্বালাতে! 

পুরুষের লোলুপে..,নারী চরিত্রে

ধর্ষনের কালিতে... লেপিছে শরীরে!


কাঁপিছে ধরিত্র!!


মিথ্যা বিচারের দাবিতে..

মোমবাতি মিছিলে মুখোশের আড়ালে...

লোলুপের চোখেতে... নারীর শরীরে

লালসার চোখেতে... ধর্ষণের অপেক্ষাতে!!


মিছিলেরে প্রতিবাদে.. মিথ্যার আবডালে

নিজেকে ঢেকে রাখে... ভদ্রের চাদরে!!


পুরুষের নামেতে... কলঙ্কের কালিতে,

মুখোশের আড়ালে আদরের ছলে,

কাছে টেনে নেই..কন্যা ডেকে...তারপরে রাবণের ছলে!!


নারী মাংসের লোভেতে... কুকুরের চোখেতে!

বহুরুপী রঙ্গেতে.. ঢেকে রাখে নিজেকে!!


কন্যা- জায়া জননীর চেহারা ভুলে.... টপ করে গিলে ফেলে অন্যের মেয়ে ভেবে!


কখনো সে ভাবেনা যে.. তোমার মা"রূপী  কন্যাকে অন্য পুরুষেরা তোমারি মতো খাচ্ছে গিলে !!

একবারে বলো উত্তর আছে কাছে?


নাকি ভেবে নেবো তোমরা জানো সবে!? 

মিলে- মিশে আছো সবে একদলে!

মিশে আছো মুখোশের আবডালে!!


ফিরে যাও অরণ্যেতে... কি হবে সভ্যতার বুলি আওড়িয়ে!!

নির্লজ্জের কালি ঢেলে দাও.. সভ্যতার ললাটে!

লোলুপের হাসিতে.. পশুদের মুখেতে লজ্জার আবরণে...  লুকাবে গভীর বনে!!


থু-থুতে শব্দেরা মুছে যাবে! 

হতাশার নদীতে অভিধান ডুবে যাবে!

নিশ্চুপ ভদ্র পুরুষের মুখে.. লজ্জার কাপড় ছুড়ে মারবে নারী!                   

 কাপুরুষেরা পড়বে শাড়ী,চুড়ি!

আইনের পাল্লার ছিঁড়বে দড়ি!!

কেমন লজ্জা দিলাম নিশ্চুপ পুরুষ তোকে!

শৃংখলা পালাবে তোক ফেলে!

ফিরে যা আদিম যুগে! 

অযথা কি হবে ইতিহাস রচিত করে!!


কখনো কি কাঁপোএাসে...  তাই জ্বলিছে আগুন মহামানবের মহাকাশে!

মানুষ কাদেঁ, মানুষ হাসে.. জবাব মেলে না তার!


আমি ক্লান্ত! বড় অসহায়! হাজারো নুশরাত!

অমর্ত্য সরকার

 আশ্বাস 







ক্ষতবিক্ষত হয়ে আজ আমিও,

চেনার ভীড়ে অচেনা সাজি।

স্বার্থের মুখোশই যখন সঙ্গী তোমার,

আমিও অভিনয়ের বোঝা বইতে রাজি।

জাফর রেজা

 ক্ষমা কর প্রভু





তোমাকে দেয়া কথা

রাখতে পারিনি প্রভু

আমি নষ্ট হয়ে গেছি,

যেদিন পৃথিবীতে তুমি আমায় 

ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছিলে

সেদিন থেকে ময়লা আবর্জনা

গায়ে মেখে মেখে আমি নোংরা হয়ে গেছি,

শুদ্ধ হবার প্রচন্ড বাসনা নিয়ে

জলের কাছে গিয়ে দেখি

জলও ময়লা, 

ফিরে আসতে গিয়েও পারিনি

পিছলে পরে স্রোতে ভেসে গেলাম

নোংরা থেকে আরও নোংরায়;


ক্ষমা কর প্রভু

আমি নষ্ট হয়ে গেছি।

হাবিবুর রহমান হাবিব

 বিস্মৃত স্বপ্ন





ক্রমশ স্বপ্নের রঙ গুলো বিবর্ণ,

দূরন্ত ছাঁয়া পথের কোন আকাশে ? 

জানেনা পুরোনো পৃথিবী, 

জানে না কোন মন,

জানে শুধু আঁখি। 

চিতাঁর ধোঁয়ায় ভেসেছে দিগন্ত, 

তবুও স্মৃতির ধোঁয়া উড়ছে আকাশে । 

নিভৃতে আলো শুধু আঁধার মাখা,

অজান্তে মনের গহনে । 

শেষ রাতের তারা গুলো নিবু নিবু,

আবার সন্ধ্যার প্রতিক্ষায়, 

চাওয়া পাওয়া এ যেন এক

অনন্ত মহা কালের।