২০ নভেম্বর ২০২০

অরু চট্টোপাধ্যায়

যা হারায়না 


কিছু হারায়না বলে, নদীজল দিয়ে গেছে


জাহাজের রত্নশরীর,


যেন এক ঋতু এসে রেখে গেল,


গাছের শেকড়ে, ফুল ফোটার অন্তিম বিলাস।




রক্ত যেন এক মহাদেশ,


হাতে নিয়ে মায়াযাদু অক্ষরমালা,


কোথাও, বজ্রপাত বিদ্যুৎ চমকায়


কেঁপে যায় ত্রিভুবনের সমস্ত অসুখ।


সমুদ্র ফিরে এসে


শান্ত করে তীরেরই ভাঙন।

মুনমুন ইসলাম মুনা

ঘুমন্ত প্রেমী


ভালোবাসা ঘুমন্ত দুইটি আত্মা,

স্বপ্ন বিভোর পথে 

আসা যাওয়া আর কথা। 


এক আয়নায় দুইটি 

প্রতিফলিত মুখ,

একে অপরকে দেখার সুখ।


কাছে নেই,তবুও খুব পাশে,

স্পর্শ নিঃশ্বাসের ভাঁজে ভাঁজে।


মোমবাতির চিৎকারে 

পুড়ে যাওয়া মন,

হৃদয় ঝরায় সমুদ্রের নোনাজল।


তাতে কি ?

আমি তো সেই প্রেমী

ঘুমিয়ে আছি দেখি না কো

অন্য আলোর ঝিকিমিকি,

হারিয়ে সর্বস্ব,হৃদয় শূন্য,

তোমাতেই আবদ্ধ বিন্দুতে পরিণত।

নূরজাহান শিল্পী



অযাচিত অভিমান

উপচে পড়া জলের কথা তুমিই বলো
আমিতো জানি শুধু কান্নার রং গুলো
আমার ইচ্ছেরা অমাবস্যার আঁধারে লুকায়
নিজেকে বড় বেমানান লাগে ভরা পূর্ণিমায়
আমার কিছু নির্ঘুম রাত আছে কিছু কষ্টের কাহন জমা তাতে
মন খারাপের গল্প আছে
একাকিত্বের খরায় জলের গহীন যাচে
জোসনার আমন্ত্রণে হৃদয় খুঁজি
ভালোবাসা বুকে নিয়ে ঘুরে চলছি আজন্ম সূর্য পথে
অপেক্ষার নাম হয়েছে দীর্ঘশ্বাস
গড়িয়ে পড়া অশ্রুগুলো মিথ্যে নয়
নির্বাক! সেও তো বোঝে ক্ষোভ
চোখের পাতায় অভিমান
সেও বুঝে উপলব্ধি বোধ
জড়িয়ে ধরে রোজ
আজ পালিয়ে বেড়ায় ক্ষত নিয়ে লৌকিক আঁধারে
মুমূর্ষ শহরের ইট পাথরের জীর্ণ দেয়ালে প্রতিধ্বনি  শুনি
মন ভালো নেই মন ভালো নেই...

যুক্তরাজ্য


কবি মিশ্র


প্রিয়জন না প্রয়োজন

আজ কোর্ট এর রায় বেরোবে। সকাল থেকেই খুব টেনশন এ আছে মনামী। কয় দিন ছুটি নিয়েছে। প্রাইভেট সংস্থা, সহজে ছুটি দিতে চায় না। তাও আবার বেশি দিন হয়নি কাজ। বাধ্য হয়েই অবশ্য কাজটা নিয়েছে। নিজে স্বাবলম্বী হওয়ার জন্য। এই ভাবে যে জীবনটা পাল্টে যাবে কোনদিন ও ভাবে নি। 

স্কুল থেকেই দীপেশকে চেনে মনামী। একই স‍্যারের কাছে টিউশন, যাওয়া আসা, রেস্টুরেন্টে খাওয়া সব কিছু। তখন ঠিক প্রেম বা ভালবাসার ব‍্যাপারটা ছিল না। বন্ধুত্বটা বেশি ছিল। দুজনের ভালোলাগা গুলোও ছিল একই রকম। ছবি আঁকা, গান, সাঁতার দুজনেই ভীষণ ভালোবাসত। ক্রমশ মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক পাশ করে মনামী কলেজ , দীপেশ এগ্রিকালচার নিয়ে ভর্তি হল উড়িষ‍্যায়। দূরে চলে যাওয়ার জন্যই দুজনেই অভাব অনুভব করল । বুঝতে পারল দুজনে দুজনকে ভালোবাসে। 

কিন্তু কেউ কাউকে সেই ভাবে বলে উঠতে পারল না । ফোনে কথা বলা, চ‍্যাট ভিডিও কল নিয়মিত হত। এইভাবে মনামী কলেজ পাস করল। দীপেশ ও ক‍্যাম্পাসিং এ ব‍্যাঙ্ক থেকে সার্ভিস পেয়ে গেল। একদিন দীপেশ ঠিক করল একটা বড় রেস্টুরেন্টে পার্টি দেবে। সেখানে সারপ্রাইজ আছে, মনামীকেও ইনভাইট করল। যথারীতি ওইদিন মনামী পার্টিতে উপস্থিত হল। দীপেশ ওই দিনই তার ভালোবাসার কথা জানায় এবং বিয়ের প্রস্তাব ও দেয়। যা ছিল মনামীর কাছে অভাবনীয়। তবে খুশিই হয়ে ছিল। কারন সেও তো কোন দিন বলে উঠতে পারেনি তার ভালোবাসার কথা।


দীপেশ ভালো চাকরি করে, মনামী ও যথেষ্ট সুন্দরী, তাই দুই বাড়ি থেকে কেউই আপত্তি করেনি। যথারীতি ওদের বিয়ে ও হল। বেশ আনন্দেই কাটছিল দিনগুলো। স্বপ্নের মতো। দীপেশকে যে এইভাবে এত কাছে পাবে ভাবতেই পারে নি। কারণ কলেজ পাস করার পর , দীপেশের তখনও একবছর বাকি ছিল কলেজ শেষ হওয়ার, এরই মাঝে বাড়ি থেকে সম্বন্ধ দেখা শুরু করে দিয়েছে। দীপেশকে বলেছিল, কিন্তু কোন উত্তর দেয়নি। কি করবে ভেবে উঠতে পারছিল না।তাই দীপেশ যখন নিজেই প্রস্তাব দিল একটু অবাকই হয়েছিল।


কিন্তু কোথা থেকে যে কি হয়ে গেল, বিয়ের ছয় মাস না যেতে যেতে দীপেশ কেমন যেন পাল্টে গেল। রাত করে বাড়ি ফিরতে লাগল, জিজ্ঞেস করলে গালাগালি করা শুরু করল। ক্রমশ সেটা বাড়তে বাড়তে গায়ে হাত তোলা ও শুরু করল। সব কিছুই মেনে নিয়ে ছিল মনামী। কিন্তু যে দিন দেখল দীপেশের মোবাইলে তারই কলিগের সঙ্গে অন্তরঙ্গ ছবি। আর মেনে নিতে পারেনি মনামী। মাত্র একবছরের সংসার জীবন তাদের। সব ছেড়ে বাপের বাড়ি চলে আসে। কেন জানে না দীপেশ ও বাধা দেয়নি। আরও বলেছে মনামীকে নাকি বোরিং লাগে। দীপেশই ডিভোর্সের মামলা করেছে। একবছর ধরে মামলা চলার পর আজ রায় দেবে। 


ইস্ খুব দেরি হয়ে গেল। মনামী ভাবতে ভাবতে বেরিয়ে পড়ল। খুব কষ্ট হচ্ছে ওর। আজ ও তো একমাত্র দীপেশকেই ভালোবাসে। তার জীবনে অন্য কোন পুরুষ নেই। সেই তো সব থেকে প্রিয়জন ছিল দীপেশের জীবনে। আজ কি তবে প্রয়োজন ফুরিয়েছে ?

কিছুই আর ভাবতে পারছে না... আনমনে হেঁটে চলে মনামী... অনিশ্চিত জীবনের পথে...

রাহুল গাঙ্গুলী : শব্দরূপ



আলো।আলোকবর্ষ।আলেয়া

(কবি অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত স্মরণে)


ফোঁটা//ফোঁটা-অর্থগুলো

                   }}

                        কমতে//কমতে  

                        ক্ষয়

                               »»»

                              শারীরিক সমাংশ 


                               ]]


  সাদাপাতা উল্টোমুখ


              ||


আলাপচারী প্রিয়-কবি"

                                    নেপথ্যে

                            {{

                                  এলোমেলো এখন


       পিহু ও পাপিয়া

ভবেশ বসু




দক্ষরাজ-এর বাকি অংশ 


আমার মা আমারই ভিতর পড়ে আছেন আলুথালু হয়ে যেমন আমি ছিলাম তার অতলে
কি গভীর পদ্মাসন,জলের বিন্দু নয়,তিন ভাগ জলে আমার পূর্ণ শরীর------মিস্ত্রির উলটো পথে হেঁটে প্রথমে প্রাণ তারপর জ্যোৎস্নার মতো সুন্দরী হরিণ
সেখানে হাত পা শরীর আমার দ্বিতীয় বিশ্ব, জোনাকির মতো জ্বলে সূর্য আর শত শত ঠোঁট ও আঁখি
বলেছ জাগো দেব,এই নাও সাজি ভরা ফুল------ছায়ার পিছনে আছে মায়া,প্রেমের চেয়েও অধিক তোমাকে দিলাম রূপ।

আমার মা আমার ভিতরেই আছেন,অভিযান ও নৃত্যে আমি শিবের মতো---বিষ্ণু হতে ধার নেওয়া ধারালো চক্র
তোমার মর্তে আসার অনুমতি তো ছিল না মা
তাই স্রোতে লেখা যত প্রবাহ তার অনেক বেশি ঝড় মেঘ ------নাক মুখ ঠোঁট, জিহ্বা হতে যোনী অবধি আমার আকাশ
ক্ষমতার চতুর্ভূজে এক নারায়ণী সেনা আমি,অহরহ সময়-ঘড়ির হাতে তুলে দিচ্ছি তোমার শস্যের একান্ন ক্ষীর।

আমার মা আমার ভেতরেই আছেন,শিরা হতে উপশীরা----শিশির মাখাতে সময় নিয়েছে অল্প সময়
আমার হৃদয়ে তাকে অগ্নি দিতে একা পারি নি,দল বেঁধে ব্রহ্মাণ্ডের আয়ু খেলাম দেহ নিলাম
শিবহীন পৃথিবীর জন্য কান্নাকাটি করো না আজকের নারী
আমাদের যাগযজ্ঞ আসলে সভ্যতারই নিঃশব্দে বলী হতে চাওয়া ছাগমুণ্ড ধারণের লক্ষ্যে-----মুখে না অক্ষর না শব্দ------ 
যদি পারো দক্ষের বাকি অংশ খেতে রান্নাঘরে আগুন ছড়াও।

অলোক দাস

ফেলুদা


ফেলুদা কে বলে তুমি নাই, তুমিতো হৃদয়ে চিরো আয়ুষ্মান, তুমি কোনোদিন হারো নি, তাই তুমি অরিজিৎ, শুকতারার দেশে রবি, তপেন ও সত্যজিৎ তোমার অপেক্ষায়, তুমি যে মহারাজ, রাজা ছাড়া কি আসর মানায়? তোমাকে আর পাবো না মরুদেশে কিংবা কাশিতে, তুমি এখন আমাদের হৃদয়ে, নমস্কার


মধুমিতা রায়



তোমার হৃদয় খুঁড়ে


ভেবেছি,  একদিন

তোমার হৃদয়ের কপাটিকা খুলে

অলিন্দে উঁকি মেরে দেখবো

তুমি আগের মত স্বপ্ন দেখ কিনা!


আগের মতো ভালবাসলেই

গাইতে পারো কিনা সেসব গান..


এখনও সেই সরল চোখ

কথা দিতে পারে কিনা

গভীরতার।


জেদী ঘোড়ার মত এখনও

তর্ক করো কিনা

এখনও অস্থির হও কিনা তেমনটি


এখনও কি মনখারাপ চেপে রাখ?

কষ্ট পেলে কঠিন হতে হতে 

গলে তরল হও, নরম হও অজান্তেই?


ভেবেছি, একদিন তোমার হৃদয় খুঁড়ে

দেখবো।

দীপিকা সাহা



কোনো এক কিশোরী

                           
গোধূলির আলো ঝরে পড়েছে 
নতুন বিকেলের ওপর
প্রশান্ত চোখে আকাশ বেপরোয়া
খেলার ছকে সন্ধ্যে আঁকে,
ধূসর আবহে কোন এক কিশোরী
শরীর ভেজায় উষ্ণ নদীর পাড়ে।
চোখে চোখ রেখে দাঁড়িয়ে আছে
বাঁকা চাঁদের মতো হেসে
সেই অবাধ্য নীলকন্ঠ ইচ্ছের চৌকাঠ পেরিয়ে
চাঁপার গন্ধে বিভোর,
ভেজা অলংকারের বুকে মুখ ঠেকিয়ে
বর্ষা ডেকেছি দীর্ঘ উপোসের পর।
ধূসর আবহে কোন এক কিশোরী
আজও পথ চেয়ে আছে
রাত্রিযাপনের অর্ধেক কাল ফেলে।

শ্যামল রায়




সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় স্মরণে


চলে তো যেতেই হবে

তবুও যেন ভালো লাগে থাকলে

কিন্তু থাকেন না কেউই

থাকেন যারা সৃষ্টিকর্মে

তাদের বেঁচে থাকাটাই বেঁচে থাকা

সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় তার মধ্যে একজন।

শ্রদ্ধা জানাই অভিনেতা নাট্যকার

সর্ব গুণের অধিকারী প্রিয় মানুষকে।

কত অন্ধকারকে দূরে সরিয়ে

যাতায়াতে বিরাম ছিলনা তার

সাবলীল ভাষায় কত কণ্ঠস্বর শুনেছি

আজ  সংসারের সীমান্ত পেরিয়ে

নিরিবিলি জায়গায় অবস্থান করেছেন তিনি।

তবুও ভাবি তিনি আছেন থাকবেন

সকলের কাছে চিরটা কাল।

হাসিমুখ ,সকলকে আপন করে নেওয়ার

আন্তরিকতা ছিল সেই মানুষটির

সুন্দর কথার মধ্যে দিয়ে তার অভিনয়

এখনো যেন উজ্জ্বল নক্ষত্র

সাদা পাতা জুড়ে 

শুধুই অক্ষরে অক্ষরে তার মুখ

তিনি হচ্ছেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়।

শুধুমাত্র চোখ বুজে ঘুমিয়ে আছেন

আমরা শুনতে পাচ্ছি সমুদ্রের গর্জন

অসংখ্য ঢেউ আমাদের স্বপ্ন দেখাবে আগামীতে

তাই স্মরণে রেখে শ্রদ্ধা সৌমিত্রকে।

                  (2)


সূর্য হয়ে থেকো

আমি তো বেশ আছি, ভালো আছি

অন্ধকার দেখে দেখে ।   তবুও

নদীর পাড় ভাঙ্গা শব্দ বন্ধ রেখে

উষ্ণতা খুঁজে নেবো

তুমি পাশে থেকো

সূর্য হয়ে থেকো।

এই পৃথিবীর সবকিছু সুন্দর

ভাবনাটার রকমভেদ হতে পারে

রং-তুলিতে নানান ছবি হতে পারে

তবুও আমরা চাইছি সুন্দরতা

বেঁচে থাকার জন্য স্বপ্নে মোড়া

সুন্দর একটা পৃথিবী---।

তাই কপূরের মত উবে যাওয়া

ভালোবাসা, গতিশীল চিন্তা, উন্নয়ন

চাইনা কখনো---

চিরস্থায়ী সবুজতা নিয়ে,

 নীল আকাশ দেখবো

এ পৃথিবীর সব কিছুই সুন্দর

আমরা সকলেই পাশাপাশি থাকবো

ভালোবাসাবাসিতে---

তুমি সূর্য হয়ে থেকো খুব কাছাকাছিতে।