২৫ নভেম্বর ২০২১

কবি জাফর রেজা কবিতা



শাড়ি


আপনি শাড়ি পরেন না কেনো
শাড়িতে আপনাকে খুব মানাবে
আর যদি কপালে থাকে একটি লাল টিপ 
আরও অনেক- অনেক...
বাকিটুকু আর বলতে পারলাম না হয়তো সে বুঝে নিয়েছে। 

শাড়ি আমি সেদিনই পরবো
যেদিন আপনি থেকে তুমি হবো। 

তারপর শুরু হয় আমার অপেক্ষা 
ধানসিঁড়ির পাড়ে বসে বসে ভাবি
সেদিনের পর থেকে সে কেনো আসেনা ? 
নিজেকে প্রবোধ দেই তার আসা না আসায় আমার কি যায় আসে?
কিন্তু ভাবনাটা মন থেকে তাড়াতে পারিনা
তার অপেক্ষায় থাকি।
নাহ্, এবার তাকে তুমি বলেই ডাকবো। 
প্রতিক্ষার অবসান ঘটিয়ে সে এলো
পরনে ঢাকাই শাড়ি কপালে লাল টিপ।
এতোদিন কোথায় ছিলে ? 
কতোদিন তোমার অপেক্ষায় । 

এই জন্যই আসিনি, 
জানতাম আজ তুমি বলবে। 
কষ্ট যে আমার হয়নি তা নয়
কষ্ট আমারও হয়েছে,
কিন্তু তোমার তুমি ডাকের জন্য
কষ্টটা সামলে নিয়েছি। 

আকাশের নিচে ধানসিঁড়ি
ধরনীতে মুখোমুখি আমরা দুজন।

মমতা রায় চৌধুরী





টানাপোড়েন ৫১
বিরক্ত






                                                   ঠাৎ রেখার ফোনে ফোন বেজে উঠলো"দুর্গে দুর্গে দুর্গতিনাশিনী মহিষাসুরমর্দিনী জয় মা দুর্গে'। রিং হয়ে কেটে গেল। আচ্ছা জ্বালাতন মূলত এ বাড়িতে এসে একটু ভালো করে ঘুমাতে পারবো না। কাঁথাটা মুড়ি দিয়ে ,আবার শুয়ে পরল। 
আবারো রিং হয়ে যাচ্ছে ।
বাধ্য হয়েই রেখাকে ফোনটা রিসিভ করতে হলো' ।বলল-হ্যালো"।
অপরপ্রান্ত থেকে বলল  'দিদি  জামাইবাবু আছে?'
রেখা বলল  'কে রে সোমু?'
সোমদত্তা বলল"হ্যাঁ দিদি।'
ততক্ষণে কাকিমা এসে হাজির। কাকিমা ইশারায় বোঝাতে চাইলেন ,সোমু হলে ,তুই এখানে আছিস বলবি না।
রেখা ফোনটা মিউট করে বলল ' কি করে বলব ?এবার তো জানতে চাইবে জামাইবাবুকে ফোনটা দে। তাহলে কি বলবো?'
কাকিমা ইশারায় বোঝাতে চাইল' কায়দা করে কিছু একটা বলতে।'
রেখা বললে ' কেন রে?":
সোমদত্তা বলল 'আজকে কেসের ডেট আছে না?'
রেখা এবার হ্যালো হ্যালো করে শুনতে না পাবার নাটক করলো।
কাকিমা ওদিক থেকে হাসতে লাগলো। কাকিমা যে সোমুর ওপর ভীষণ বিরক্ত বোঝা গেল।
ফোনটা ছেড়ে রেখা কাকিমাকে বলল'এবার তো মনোজকে ফোন করবে ।ও যদি বলে দেয়।'
কাকিমা বলল' বলে বলুক গে।'
রেখা মনোজকে ফোন করল। মনোজের ফোন রিং হয়ে গেল। ধরল না।
রেখা  'ভাবলো ৯টা বাজে,।ও  কি করছে?''
আবার ফোন করল রিং হয়ে গেল।
কাকিমা জিজ্ঞেস করলেন "কিরে জামাইকে ফোন করছিস?'
রেখা বলল" হ্যাঁ,কিন্তু রিং হয়ে গেল জানো কাকিমা?'
কাকিমা বললেন 'চিন্তা করিস না। পুরুষ মানুষ ।দেখ কিছু একটা করছে হয় তো ,শুনতে পায় নি।'
রেখা বলল  'গতকালকেও তো ফোন করি নি ।ফোনটা করা উচিত ছিল কাকিমা ।কি করছে ,কে জানে?'
কাকিমা বললেন 'আয় তো ননী ,জল খাবারটা খেয়ে নে'।'
রেখা বলল  'কাকুকে আগে দাও।'
কাকু বললেন সবাই একসাথে খাব। কেউ কারোর আগে-পরে নয় ,আয় ননী।‌'
রেখা বলল 'আজ জলখাবারের কি মেনু কাকিমা?'
কাকিমা বললেন ,' হিঙের কচুরি আর হচ্ছে আলু চচ্চড়ি।'
রেখা বল ল  'দারুন ব্যাপার। ছুটে গিয়ে আগে একটা গরম পুরি তুলে নিয়ে খেতে শুরু করল।
কাকিমা বললেন 'এই তো আমরা পুরনো ননী ফিরে পেলাম'
কাকু উৎসুকভাবে  বললেন ' কেন কি করেছে ননী ? 
কাকিমা বললেন ও যখন ছোট ছিল। আমরা যখন বাড়িতে ওর পছন্দ মাফিক কোন খাবার বানাতাম। তখন কি করত?'
কাকু হো হো করে হেসে বললেন  'দু'চারটে তুলে নিত।'
কাকিমা বললেন 'ওটা দেখে আমার সেই ছোট্টবেলার সেই দিনগুলোর কথা মনে পড়ে গেল।'
কাকু বললেন  'একবার মনে আছে ওর মা এজন্য কে একদিন মেরেছিল?'
কাকিমা বললেন  'মনে আর নেই।এক চোখে হাত দিয়ে চোখের জল মুছছিল, আর এক হাত দিয়ে খাচ্ছিল।'
কাকু বললেন 'তখন আমরা ওর কান্নার আওয়াজ শুনে কি করেছিলাম?'
কাকিমা বললেন  'এসে খুব বকাবকি করছিলে তোমরা আমাদের ওপর?'
কাকু বললেন ' আর কি?'
কাকিমা বললেন  'ওর খাবার ইচ্ছে মঞ্জুর হয়ে গেছিল যখনই কিছু হবে ও খেতে চাইলে ওকে দিতে হবে।''
রেখা বলল  'আর সেই নিয়ে সোমু আমার সাথে কি ঝগড়াটাই না করেছিল।'
কাকিমা বললেন  'সেই দিনগুলো কত ভালো ছিল বল?'
কাকু বললেন 'একান্নবর্তী পরিবার দাদা ভাইয়ের সম্পর্ক কত দৃঢ় ছিল।'
কাকিমা বললেন 'পরস্পর পরস্পরের প্রতি বিশ্বাস ,আস্থা ,ভালোবাসা পরিবারকে কতটা এগিয়ে নিয়ে যেত।'
রেখা খেতে খেতে বলল' অথচ কাকিমা দেখো আমরা জয়েন্ট পরিবারের মেয়ে হয়েও যে পরিবারে বিয়ে হয়ে গেলাম ।সেখানে কোন মূল্য নেই।'
কাকিমা বললেন  'মন খারাপ করিস না মা।'
আবার ফোন বেজে উঠলো' দুর্গে ,দুর্গে, দুর্গতিনাশিনী মহিষাসুরমর্দিনী জয় মা দুর্গে...'।
কাকিমা বললেন 'এবার তোর রিংটোনটা আমার জানা হয়ে গেল।'
রেখা বলল 'বোধহয় তোমাদের জামাই ফোন করেছে।'
রেখার আবার ফোন বেজে উঠল।
রেখা ফোন ধরে বলল 'হ্যালো বলো।'
সোমদত্তা বলল ' দিদি আমি।'
রেখা  মিউট করে কাকিমাকে বলল  'কাকিমা সোমু ফোন করেছে, কি বলব ( ইশারায়)?'
কাকিমা বললেন ' কি বলি বল তো ?যদি সেরকম কিছু জিজ্ঞেস করে বলে দে আর কিছু বলার নেই।'
রেখা বলল  'হ্যাঁ বল।'
সোমদত্তা বলল 'জামাইবাবুকে তো পেলামই না ফোনে ।তাহলে কি আজকে কোর্টে  আসতে পারবে না জামাই বাবু?'
রেখা বলল ' তুই তো আমাকে আগে জানাস নি কোর্টের  ব্যাপারে? আমি তো কিছু জানি না ।'
সোমদত্তা বলল ' কি জানি আজকে ফাইনাল ডিসিশন নেবেন কিনা জজ?'
রেখা বলল  'এসবের কি দরকার ছিল সোমু?'
সোমদত্তা বলল তুই বুঝবি না দিদি?
রেখা বলল  'আমার বুঝে কাজ নেই বোন? তবে তুই যেটা করছিস, সেটা মোটেই ঠিক করলি না?'
সোমদত্তা বলল  'দিদি ,আমি তোর কাছ থেকে কোন এডভাইস চাই নি।'
রেখা বলল 'আমি তোর ভালোর জন্যই বলছি ,এখনো সময় আছে।'
সোমদত্তা বলল ' আমার পক্ষে ফেরা সম্ভব নয়?'
কাকিমা নিজেকে কন্ট্রোলে না রাখতে পেরে বললেন 'অসভ্য মেয়ে কোথাকার? কি করে আমার পেটে জন্ম নিয়েছে জানি না।'
রেখা বলল  'কাকিমা তুমি চেঁচিয়ো না ।তোমার প্রেসার বেড়ে যাবে।'
সোমদত্তা বলল ' তুই ওখানে আছিস? ভালোই
আছিস তাই না?'
রেখা বলল  'বাবার বাড়িতে আসলে সবাই ভালই থাকে বোন। তুইও চলে আয়।''
সোমদত্তা বলল ' বাড়িটা কি আর আমাদের জন্য ?আমরা নিজের মেয়ে হয়েও এত আদর পাই না। আর তুই...?'
রেখা বলল ' সেটা তোর দুর্ভাগ্য।'
সোমদত্তা বলল  'তোর কপালটা সবদিক থেকেই ভালো দিদি।'
রেখা বলল  'তোকে একদিনই বলেছি এডজাস্ট করতে শেখ।'
কাকিমা বললেন'একই বাড়ির মেয়ে হয়ে দিদির কাছ থেকে কিছু শিখতে পারো নি? শুধু বড় বড় কথা।'
সোমদত্তা বলল'ছোট থেকেই দেখে আসছি দিদিকে সবাই বেশি পছন্দ করে।'
কাকিমা বললেন 'পছন্দ করার মত ওর অনেক গুণ আছে তাই?'
এর মধ্যেই পাবলো বায়না ধরেছে দিদুনের সাথে কথা বলব ?ফোনটা আমাকে দাও মাম মাম।'
সোমদত্তা বলছে' আমাকে বিরক্ত করো না ।মার খেয়ে মরে যাবে তুমি।'
রেখা বলল  'এসব কি বলছিস তুই সোমু'?
সোমদত্তা বলল 'ঠিকই তো বলছি দিদি ।বড়দের সঙ্গে কথা বলার সময় ছোটরা কেন কথা বলবে?'
রেখা বললো ' আহা,ঠিক আছে ।তুই অন্য সময় ওকে এগুলো শেখাবি ।এখন তোর বাবাকেও কাছে পাচ্ছে না ।একটু দিদার সাথে কথা বলবে দে না ফোনটা?'
সোমদত্তা বলল 'তোমার তো বাচ্চাকাচ্চা হয় নি। তুমি বুঝবে কি করে?'
কাকিমা রেখার কাছ থেকে ফোনটা নিয়ে বলেন ''তুমি তো একদম সার্থক মা হয়েছ, তুমি তো সব বোঝো?'
সোমদত্তা বললো  'মা ,তুমি আমার সঙ্গে এভাবে কথা বলবে না?'
কাকিমা বললেন 'তোমাকে তো কেউ ফোন করতে যাই নি ।তুমি কেন সবাইকে বিরক্ত করো ফোন করে।'
সোমদত্তা বলল ' দরকার ছিল বলেই করেছি ।না হলে করতাম না।'
কাকিমা বললেন  'সে জন্যই তো বলছি ,দরকারের সময় তোমার মনে পড়ে,। বাকি সময়েগুলো তো তোমার মনে পড়ে না কিছু?'
রেখা বলল  'কাকিমা ছেড়ে দাও।ও তো ছোট ,বুঝতে পারছে না।'
কাকিমা বললেন  'তুই থাম তো ননী ।বড্ড বাড় বেড়েছে ওর।'
সোমদত্তা বলল  'সামনের সপ্তাহে আমি পাবলোকে  তোমার কাছে রাখতে যাচ্ছি।'
কাকিমা বললেন ' খবরদার এমুখো হবে না।'
সোমদত্ত বলল  'মা?'
কাকিমা ফোনটা কেটে দিলেন। কেঁদে ফেললেন।
রেখা কাকিমাকে ধরে বসালো।
কাকিমাকে কেদেঁ কেঁদে বললেন  'কি শত্তর জন্ম দিয়েছি রে ননী?'
রেখা বলল ' সব ঠিক হয়ে যাবে কাকিমা ।তুমি এত কষ্ট পেয়ো না।'
কাকু ও ঘর  থেকে বলেন  'কী হয়েছে রে ননী?'
রেখা বলল  'কিছুই না কাকু?'
কাকু আবার বললেন 'কাকিমার চেঁচানোর আওয়াজ পেলাম। নিশ্চয়ই সোমু ফোন করেছিল ‌। '
রেখা আর কাকিমা চুপ করে রয়েছে।
কাকু আবার উত্তেজিত হয়ে বলে উঠলেন' 'বলতে পারিস ননী ও সবাইকে কেন এত বিরক্ত করে ্?''
কাকিমা বললেন ' তুমি  অস্থির হোয়ো না ।শরীর খারাপ হবে?'
কাকু বললেন 'আমার এই দুই সন্তান সব সময় আমাদেরকে একটা টানাপোড়েনের যন্ত্রনায় রেখে দেয়,। হায় ভগবান আমাদেরকে মুক্তি দাও।'(কপাল চাপড়াতে লাগলেন)
 রেখা কাকার কাছে  গিয়ে বলল  'কাকু এরকম করলে কিন্তু আমি থাকবো না ।তুমি শান্ত হও।'
কাকু বললেন  'শান্ত হবো একবারে চিতায় গিয়ে।
বেশ আনন্দে ছিলাম ননী মা ,তুই আসাতে। কপালেতে সুখ সহ্য হবে না রে ।বলেই গান ধরলেন 'এই তো 'জীবন। হিংসা বিবাদ লোভ ,ক্ষোভ বিদ্বেষ।চিতাতেই সব শেষ'।
হঠাৎই কেমন একটা থমথমে পরিবেশ হয়ে গেল।

আমিনুর রহমান জুন্নুন ( ইংল্যান্ড লুটন শহর )





কই রইলায় বন্ধুরে


কই রইলায় কই রইলায় বন্ধুরে
ও বন্ধু আমারে ভুলিয়া
আমি রইলাম বন্ধু তোমার 
স্মৃতির চাদর জড়াইয়া।

ফুল বাগানে ফুটেরে ফুল 
ভমর আসে উড়িয়া
আমি রইলাম তোমার আশায় 
মনের ভাগান সাজাইয়া।

কোনবা দোষে গেলায় তুমি
আমায় ফাঁকি দিয়া
কথা ছিলো রইবায় তুমি
অন্তরে অন্তর মিশাইয়া।

চাদনী রাতে কাছে আইসা 
গেলায় ভালোবাসিয়া 
হাতে খোসবো চন্দন দিয়া
কেন গেলায় লুকাইয়া।

তোমার প্রাণে রইলাম তাকাই
আগুন দাও নিবাইয়া
জুন্নুন বলে পাগল মনরে
আর দিওনা জালাইয়া।

লেখক শান্তা কামালী'র ধারাবাহিক উপন্যাস "বনফুল"২৯

চোখ রাখুন স্বপ্নসিঁড়ি সাহিত্য পত্রিকার পাতায় লেখক শান্তা কামালী'র  নতুন ধারাবাহিক  উপন্যাস "বনফুল" 





বনফুল 
( ২৯ তম পর্ব ) 


                                                          জুঁই, পলাশ, অহনা আর সৈকতকে বাসায় পৌঁছে দিয়ে নিজের  বাসায় ফিরলো, আজকে জুঁই ভীষণ খুশি... 
বাবা-মার সাথে অনেকটা সময় বসে গল্প করলো জুঁই, ঘড়িতে এগারোটা বাজতেই ময়না টেবিলে খাবার পরিবেশন করলো।
 জুঁই বাবা-মায়ের সাথে  ডিনার শেষ করে গুডনাইট বলে উপড়ে উঠে এলো।

 অনেক ক্ষণ কি যেন আকাশ কুসুম চিন্তা করে দাঁতব্রাস করে ড্রেস চেঞ্জ করে বিছানায় শুয়ে পলাশকে ফোন দিলো।ওপাশ থেকে পলাশের কণ্ঠস্বর শুনে জুঁই বাস্তবে ফিরে এলো। 
পলাশ প্রশ্ন করছে জুঁই তোমাকে একটু অন্যমনষ্ক লাগছে, জুঁই কথাটা এড়িয়ে গেলো....। 
জুঁই পলাশকে প্রশ্ন করলো তুমি খেয়েছ?
পলাশ বললো হ্যাঁ, তুমি?
 জুঁই ও উত্তর দিলো আমিও খেয়েছি। জুঁই বললো, জানো,আমার না আজ খুব ইচ্ছে করছে লং-ড্রাইভে যেতে। পলাশ বললো, আমরা অন্য একদিন নিশ্চয়ই যাবো আজ নয়। কাল ভোরে সৈকত  ট্রেন  ধরবে, তাই একটু তারাতাড়ি ঘুমাতে হবে। জুঁই তুমি কিছু মনে করো না ।

 সৈকতও ফোনে অহনার সাথে কথা বলছিল, সৈকত বুঝতে পারছে অহনা ভিতরে ভিতরে কাঁদছে....
 সৈকত বললো আমি তো মাস দুয়েকের মধ্যে ঢাকায় আসছি, তাহলে এতো কান্না কিসের! ফোনে তো প্রতিদিনই কথা হবে, মনেই হবে না আমরা দূরে আছি,প্লিজ তুমি স্বাভাবিক ভাবে কথা না বললে আমি কি সকালে যেতে পারবো? অহনা বিষয়টা বুঝতে পেরে নিজেকে স্বাভাবিক করে নিলো।ঠিক আছে তুমি ভালো থেকো, এই বলে শুভ রাত্রি জানিয়ে ফোন রাখলো অহনা।
ভোর বেলা পলাশ  সৈকতকে সুর্বণা এক্সপ্রেসে উঠিয়ে দিয়ে এলো। 
রাতে ভালো ঘুম হয়নি বলে পলাশ শুয়ে ঘন্টা দুয়েক ঘুমিয়ে নিলো। জুঁই ঘুম থেকে উঠে পলাশকে ফোন দিয়ে বললো আজ ওরা বাইরে লাঞ্চ করবে,একটায় পলাশকে  পিক আপ করবে।

বেলা বারোটায অহনা একবার ফোন দিয়েছিলো সৈকতকে তখন সৈকত জানালো ও ফেনি পার হয়েছে।



চলবে...

রুকসানা রহমান




কোন এক শ্রাবণে


শ্রাবণ নিশীথে কে তুমি অসময়ে এসে দাঁড়ালে শিয়রে
আমাকে  আজ যেতে হবে, কি ভাবে হেঁটে যাবো
ঐ-শ্রাবণ মাঠে।

আজও কি হবেনা তারসাথে দেখা, অথচ তাকে
সন্ধান করি, স্পর্শ করি  দেহের ভিতরে প্রতিটি শ্রাবণের বাতাসের জলতরঙ্গ। 

 বৃৃষ্টি ভেঁজা আচঁলে কবিতা  লিখেছিলে
আমার ঈশ্বরী নেমে এলো মর্তে, আলতা রাঙানো
পায়ে নূপুরের ছন্দে খোপায় শিউলি ফুল যা কিছু
আমার কল্পনা ঠিক তেমনই আমার ঈশ্বরী।

কাজল চোখে চোখ রাখতেই সেদিন আকাশ হয়েছিল
 আয়নায় পরম প্রেমের দৃশ্যমঞ্চের মিলনের 
স্পন্দনের ভিতর নতুন  এক রূপান্তর  অপার মুগ্বতায় শ্রাবণের দিগন্ত সূচনার সৌরভ ছড়িয়ে।
 
কথা দিয়েছিলো কিন্তু সে আর এলোনা 
বাতাসে ছড়িয়ে দেওয়া হয়নি ভালোবাসার সেই আদিম তৃষ্ণা।
রেখে গেলো স্মৃতির স্বপ্নের লেখা আচঁলে ,আকস্মিক আঘাত।
প্রতিটি বছর ছুটে যাই সেখানে গভীর বেদনার
নকশাআঁকি কষ্টের চূড়ায়, বিনম্র ইচ্ছে-দুঃখ যাতনায়।

ঐ শোন-গভীর অপেক্ষার সুবিন্যাস্ত শ্রাবণ মাঠে 
আজও তার মৃদু পায়ের শব্দ ভেসে আসছে
এই অস্হিরতা,দিশেহারা মন শ্রাবণের মহাপ্লাবনে
ভেসে যেতে চায়।

কে তুমি আমাকে অসাড় করে রেখেছো শয্যায়...?
একটিবার যেতে দাও, কথা দিলাম ফিরে আসবো
তখন না হয় বাঁশিটি বাজিও।

তুমিও শুনলেনা জীবনের শেষ আর্তি,ধীরে,ধীরে
নাড়ীর স্পন্দন টুকু কমিয়ে দিচ্ছো
আর কোনদিনই যাওয়া হবেনা একটিবার তাকে
দেখার বাসনাটুকু ও কেড়ে নিচ্ছো...?

এতো আলো,তবু কেন আজ শ্রাবণ জানালা নিঝুম আধাঁরে  ঢাকা
আমার দু'চোখের পাতা ঘুমিয়ে পড়ছে কেন..?
কিছুতেই খুলছেনা শেষ বাঁশিটি বাঁজিয়ে ফেললে...!?

তবুও নৈঃশব্দ নৈবেদ্য তমসার শ্রাবণ মাঠে 
বিস্ময়ে তাকিয়ে আছে আমার আত্মা তাকে খুঁজে
স্পর্শ করতে চায় তার অতলান্ত চোখ।

সে হারিয়ে ফেলেছে ঢেউয়ের মাতালত্ব স্বপ্নভূমি
সেই উজানে ভেসে গেছে আমার সাজানো
ভালোবাসার তরী,তার আপন স্বভাবে।
প্রতিক্ষায় থাকবো আদি, অনন্ত কাল
,যদি সে ফিরে আসে কোন এক শ্রাবণে...

রাবেয়া পারভীন





স্মৃতির জানালায়  
( ৩য় পর্ব)  

 
সংসারে উদাসীনতার জন্য রেহানা  মাঝেমাঝে অভিযোগ করে  বলে 
- আপনিতো চিরকাল  নিজের কাজ নিয়ে থাকলেন  আমার দিকে তো আর তাকিয়ে দেখলেন না
মৃদু হেসে মাহ্তাব  সে সব কথার জবাব দিয়ে দেন। রেহানা বড় ভালো মেয়ে। সহজ সরল। এমন পতি পরায়না স্ত্রী  খুবই বিরল। কিন্তু তারপরও কি মাহ্তাব সুখি হয়েছেন ?  যখনি রেহানার কথা ভাবেন  তখনি বিদ্যুৎ  ঝলকের মত  তার চোখে ভেসে উঠে অনেক দিন আগে হারিয়ে যাওয়া এক নারীর মুখ। ব্যাথায় টন্ টন্ করে উঠে বুকের বাম পাশটা।  একটা দীর্ঘশ্বাস  পড়ল  সমস্ত  বুক কাঁপিয়ে। শবনম!  এক অসাধারণ নারীর নাম। উচ্চশিক্ষিতা  ব্যাক্তিত্বসমন্না অপরূপ সৌন্দর্য, কি ছিলোনা তার!  চমৎকার গানের গলা।  খুব ভালো কবিতা লিখতো  সে।  প্রতিটা কবিতা কাগজে ছাপতে দেয়ার আগে মাহতাবকে পড়ে শোনাত । মন্ত্রমুগ্ধের মত  তাঁর কাছে বসে কবিতা শুনত মাহতাব আর মুগ্ধ  হয়ে সেই কবিতা পাঠরতা অসাধারণ রমনীর  মুখাবয়বের দিকে চেয়ে থাকত। কবিতা পড়া শেষ হবার পরেও দৃষ্টি  ফিরতোনা। মিষ্টি  লাজুক  হাসি হেসে শবনম বলত
- এমন করে তাকিয়ে  আছো কেন ?  কবিতাটা কেমন হয়েছে বলবে না?
 কি বলবে মাহ্তাব,  বলার ভাষা যে হারিয়ে যেত। আহা শবনম !  সেই শবনম!   এতো বছর পরেও  যার স্মৃতি  এতটুকু ম্লান হয়নি।  পিতার খুশির দিকে চেয়ে তিনি ত্যাগ করেছিলেন  শবনমকে। পিতার পছন্দে  বিয়ে করেছিলেন  অল্পশিক্ষিতা  অতিসাধারণ এক গ্রাম্যবালা  রেহানাকে। পিতাকে কষ্ট দেওয়ার কথা তিনি ভাবতেই  পারেন নি। উফ্ কেন যে  ঘুরে ফিরে আজকে আবার এসব মনে পড়ে গেল?  অফিসে  এসে চেয়ারে বসে  পিছনে হেলান দিয়ে তিনি চোখ বুজে রইলেন। তাঁর মন হু হু করে ছুটে চলে গেছে  পঁয়ত্রিশ  বছর  পেছনে।
 চলবে......

মহুয়া চক্রবর্তী






সাধের বাগানে
 

আমার সাধের বাগান সাজিয়ে ছিলাম
মনের মত করে,
ভালোবাসা ও অতি যত্ন দিয়ে একটু একটু করে।
সেদিনের কোন সে ঝরের ভুল ঝরিয়ে দিল ফুল
যেদিন প্রথম মাধুরী মেলেছিল তার মুকুল।
নব প্রভাতের তারা
সন্ধ্যাবেলায় হয়েছে পথহারা।
সে কি মায়া,  নাকি স্বপ্ন ছায়া , নাকি শুধুই ছলনা
তারে বোঝা গেল না ও যে চিরবিরহের সাধনা।
তবে কেন সে সাজালো মোরে মিছে মায়ার সাজে
আমি যে আজও একা আপন ভুবনে বসে আছি
পাওয়া না পাওয়ার মাঝে।
আমি কি শুধুই যাব স্রোতে ভেসে
দুর দয়াহিন দেশে।
জানিনা দিন অবসানে কোনখানে পাবো ঠাঁই।
বিধাতার নিঠুর বিদ্রুপে নিয়ে এলো চুপে চুপে
হৃদয়হীন মানুষগুলোকে আজ দেখি 
নানা সাজে নানারূপে।
সেদিন আমার দুঃখ জোয়ারের জলস্রোতে
ধুয়ে নিয়ে যাবে মোরে এই সব লাঞ্ছনা হতে।
কৃপা কণা দিয়ে আর ফিরে দেখোনা
দীর্ঘশ্বাসের মাঝেও কখনো আর 
আমায় মনে রেখো না।
যেদিন চলে যাব সরে তখন চিনবে মোরে
অবহেলা আর ছলনা দিয়ে 
সেদিন আর আমায় বাঁধতেত পারবে না।

শামীমা আহমেদ




শায়লা শিহাব কথন 
অলিখিত শর্ত 
( পর্ব ১৯)
শামীমা আহমেদ 

শাওয়ার থেকে বেরিয়ে শিহাব দ্রুত তৈরি হয়ে নিলো।সারাদিনের কাজের ম্যাপটা একবার এঁকে নিলো মনে মনে। শায়লার সাথে দেখা করা, হসপিটালে যাওয়া, কুরিয়র অফিসে গিয়ে আবার বাসায় ফেরা তারপর গুলশানে যাওয়া। আপাতত দিনের প্রথম ভাগে যা যা করণীয় তার ছক কেটে মাথায় বসিয়ে নিল ।শিহাব কোন কিছুই ঝোঁকের মাথায় করে না।খুব ধীর স্থিরভাবে ভেবে চিন্তে করে। রিশতিনাকে নিয়েও তার কোন তাড়াহুড়া ছিল না কিন্তু কিভাবে কি ঘটে গেলো!  আজ তাই  পরিস্থিতি সবকিছুর নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলো।
পোষাকের ব্যাপারে ভীষণ চুজি শিহাব,
বাইকে লং ড্রাইভে যেতে হলে ধুলাবালি এড়াতে জিন্সের ভারী শার্ট প্রেফার করে। শার্ট আয়রন করাই ছিল। সাথে ব্ল্যাক প্যান্ট। আজ কেডস পরতে মন চাইছে। সাদা নীল কম্বিনেশনের নতুন এডিডাস কেডস প্যাকেট থেকে বের করে নিলো। হায়! নয়টা বেজে গেছে! শিহাব চট করে তৈরী হয়ে এক ঘড়া পারফিউম ঢেলে  দ্রুতই ছুটলো গন্তব্যের দিকে। আয়নায় তাকানোর সময় নেই।শিহাব রুম লক করে নীচে নেমে এলো।
পথটা শায়লার চেনাই ছিল ।রিকশা একটানে চলে এলো।শুধু শায়লার মনের ভেতরের অস্থিরতা উৎকন্ঠা সামনের সবকিছুকে অদৃশ্য করে রাখল।
আফা কোন গেটে নামবেন? রিকশাওয়ালার কথায় শায়লা নিজেকে রিকশায় আবিষ্কার করলো!
ওহ! এখানেই এখানেই।রাখেন রাখেন।
শায়লা রিকশাভাড়া চুকিয়ে নামল।
আশেপাশে উৎসুক মানুষের দৃষ্টি। এটা এই দেশে খুবই কমন দৃশ্য। একজন মহিলা দেখবে আর তাকাবে না সেটা আমাদের দেশে খুবই রেয়ার ঘটনা।শায়লা দেখলো হ্যাঁ, কোনায় একটা চায়ের টং ঘর দেখা যাচ্ছে জনাকয়েক মানুষ দাঁড়িয়ে  তবে কোনো  মুখ চেনা লাগছে না। শায়লা তাই সেখানেই স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। 
অনেক অফিসযাত্রী মানুষজন কর্মক্ষেত্রে ছুটছে। শায়লার নিজের অফিস টাইমের কথা মনে পড়লো।
হঠাৎই  উল্কার বেগে একেবারে উর্ধ্বশ্বাসে একটা লেটেস্ট মডেলের বাইক এসে থামল। শায়লা খুবই নিখুঁত  দৃষ্টি ফেলে  হেলমেটের আড়ালের মুখটা চিনে নেয়ার চেষ্টা করছে। লোকটি বাইকটা সাইড করে স্টার্ট বন্ধ করলো।চাবিটা হাতে  নিয়ে  হেলমেট খুলে সানগ্লাসে ঢাকা চোখের একটা লুক এদিক সেদিক ঘুরছে। শায়লা এফবির পিকের সাথে মেলাতে চাইছে। হু, বুঝা গেলো ইনিই সেই কাংখিত ব্যক্তি। শায়লার ভেতরে ধক ধক শব্দ স্পষ্ট! দেখলো অপূর্ব মুখশ্রী! হিরো হিরো টাইপ।নীল জিন্স শার্টের সাথে শুভ্র মুখখানি যেন এক খন্ড শরতের আকাশ! বেশ পরিপাটি পোষাকের  ব্যক্তিটি তার দিকেই এগিয়ে আসছে আর সুগন্ধি তা জানান দিচ্ছে। শায়লা কিছুক্ষণের জন্য  যেন এই মহাবিশ্বের বাইরে ছিটকে পড়েছিল।একেবারে ভাবলেশহীনতায় হাত পা অবশ হয়ে আসছিল।
শায়লার কাছে এসে বেশ কনফিডেন্স নিয়েই লোকটি বললেন, আমি শিহাব। আসতে একটু দেরি হয়ে গেলো, আমি দুঃখিত! অনেক রাতে ঘুমিয়েছি।উঠতে তাই লেট হয়ে যায়।
শায়লা বলে উঠল,না না, ঠিক আছে। আমি শায়লা।
আমি বুঝেছি।
কিভাবে বুঝলেন,শাড়ির রংতো বলিনি।
ফেসবুকের ছবির সাথে মিলিয়েছি। কোন ধরণের ভনিতা বা অতিনাটকীয় কোন ভাব নেয়নি বলে শায়লা খুব দ্রুতই সহজ হয়ে গেলো।
দুজনে টি স্টলের দিকে এগিয়ে গেলো। আশেপাশে মানুষের চোরাচাহনী, চাপা হাসি, হাত আড়াল করে বিড়বিড় করে পাশের জনকে কিছু বলা।যেন তারা অনেক কিছুর সাক্ষী হয়ে যাচ্ছে। কার বউ আর কার স্বামী আজ ঘর পালিয়ে এখানে দেখা করতে এসেছে তারা যেন তার চাক্ষুষ সাক্ষী হয়ে রইল!
মামা, দুই কাপ চা দেন, বলে শিহাব  শায়লাকে লক্ষ্য করে কথা বলতে শুরু করলো, ওদের আদা লাল চা  খুব ভালো হয়। আমি সকালে কাজে বেরুলে এখানে একটু থেমে যাই।
পারিপার্শ্বিক পরিবেশের  লোকজনের তুলনার শায়লা আর শিহাবের বেশভূষা বেশ উন্নত। বুঝাই যাচ্ছে এমন একটা যায়গায় তারা এসেছে লোক চক্ষুর আড়াল হয়ে নিছক সময় কাটাতে।
ধোঁয়া ওড়া চা এলো।হাত বাড়িয়ে শিহাব প্রথম কাপ হাতে নিয়ে শায়লাকে এগিয়ে দিল। শায়লা চায়ের কাপ হাতে নিয়ে শি্হাবকে এক নজর দেখে নিল।বেশ সাবলীল ভঙ্গীতে কথা বলছে। আর হাইটটাও  তার বরাবরই মনে হচ্ছে।শায়লাও নিজেকে স্বাভাবিক করে নিল। আড়ষ্টতা নিয়ে থাকলে শিহাবকে মানুষ খারাপ ভাবতে পারে। জনসমক্ষে মানসন্মান রক্ষা করা শুধু যে মেয়েদের জন্যই, সেটা নয়, ভদ্র পুরুষদেরও সেটা রক্ষা করতে হয়। আর যাদের আত্মসম্মান জ্ঞান নেই তারা তো চিরকালের বেহায়া।সমাজ সংসার এদের কাছে তুচ্ছ।ব্যক্তিত্বহীন এইসব পুরুষের কর্মকান্ডে লজ্জিত হয় হয় দেশ সমাজ তথা পরিবারের লোকজন। সন্তানের নিস্পাপ মুখটাও এরা ভুলে যায়।

শিহাব নীরবতা ভাঙল,
আপনার মা কেমন আছেন? কি হয়েছে উনার?
শায়লা বললো, না না তেমন কিছু না, রুটিন একটা চেকাপের জন্য টেস্টগুলো করা।
শিহাব বললো, তাও তো ভালো! আমার মাকে তো চেকাপের জন্য রাজীই করানো যায় না।
এরপর টুকটাক কিছু কথা হলো। এই পারিবারিক অন্য খোঁজ খবর নেয়া । 

আপনারা কতদিন উত্তরায়? কোথায় পড়াশুনা করেছেন?বাবা কী করতেন? কবে মারা গেলেন?
শায়লা একের পর এক উত্তর দিয়ে যাচ্ছে।
কিন্তু শিহাবকে নিয়ে তার কোন প্রশ্ন মনে আসছে না। নাকি শিহাবই তাকে নিয়ন্ত্রণ করছে?
স্টলের ক্রেতা বিক্রেতা সবাইকে স্বাভাবিক দেখালেও কানটা কিন্তু তাদের দিকেই খোলা!কোন প্রেমালাপ হচ্ছে কিনা কিংবা কথা থেকে কোন ক্লু ধরা যায় কিনা? এরা যে স্বামী স্ত্রী নয় সেটা তারা শতভাগ নিশ্চিত। বিদেশে হলে এসব ওরা একেবারেই ওভারলুক করে।
কিন্তু আমাদের দেশের মানুষের প্রতিবেশীর ঘর নিয়েই বেশি কৌতুহল।  
শায়লা চায়ের পোকা হলেও খুব গরম চা সে খেতে পারে না৷ প্রচন্ড গরম কাপটা ধরে সে দাঁড়িয়েই আছে। 
শিহাব চায়ে চুমুক দিতে দিতে কথার ফাঁকে ফাঁকে শায়লাকে আপাদমস্তক দেখছে। যদিও সানগ্লাসের আড়ালে তার চোখের দৃষ্টি বুঝা মুশকিল।
ছেলেরা কিন্তু খুব সহজেই মেয়েদের স্টাডি করে নিতে পারে।যেখানে মেয়েরা শুধু তাদের ড্রেস আপ আর প্রেজেন্ট করা নিয়ে ব্যস্ত থাকে, সেখানে ছেলেরা একটা মেয়েকে পাঁচবার এসেস করে ফেলে।
শিহাব বুঝে নিলো শায়লা খুবই সিম্পল  এবং সহজ সরল একটা মেয়ে। পোশাকের শালীনতায় সভ্যতা ভব্যতা স্পষ্ট হয়। একটা শাড়ি পরার ধরণেই একটা মেয়ের চারিত্রিক গুনাবলী বুঝা যায়। অবশ্য যদি সে সেটাতে  কোন চালাকির আশ্রয় না নেয়।
শিহাব ইশারায়  শায়লাকে খেয়াল করিয়ে দিল, চা খেয়ে নিতে। শায়লাকে চায়ে ব্যস্ত করে আবার এক ঝলক দেখে নিল শায়লাকে।নেভি ব্লু শাড়িটায় শায়লাকে খুব সুন্দর লাগছে। চোখ দুটোতে বেশ গভীরতা আছে। ফিগারের ব্যাপারে অতটা সচেতন না হলেও অতিরিক্ত কিছু চোখে পড়ছে না।হাইট নরমাল বাঙালি মেয়েদের তুলনায় একটু লম্বাটে ধরা যায়, যেহেতু পায়ে ফ্ল্যাট জুতা।
শিহাব শায়লার মুখটায় রিশতিনাকে ভেবে নিলো। এমনি হয়তো লাগতো রিশতিনাকে।
যদিও শাড়ি পরায় রিশতিনা অতটা এক্সপার্ট ছিল না। 
শায়লা  চায়ে চুমুক দিলো। নিজের বোকামিতে লজ্জা পেল। দুজনে চা শেষ  করলো। খুব বেশি ব্যক্তিগত কথায় শিহাব যেতে চাইল না। শত হলেও একেবারেই অচেনা একজন মহিলা । আর এখানে ওরা স্থায়ী বাসিন্দা। 
শায়লার চা খাওয়ার অপেক্ষায় শিহাব বলে উঠল, চলেন লুবানার দিকে যাওয়া যাক।আপনাকে নামিয়ে আমার কুরিয়র অফিসে যেতে হবে।
শায়লা ইতস্তত করছিল।কিভাবে  অচেনা একজন মানুষের সাথে বাইকে চড়ে যাবে!  
না না! আমি চলে যেতে পারবো। আপনি কুরিয়র অফিসে চলে যান।
আরে নাহ! মায়ের রিপোর্টটা জেনে যাই। আসেন। শায়লা বুঝতে পারলো আশেপাশের লোকজন থেকে বাঁচতে শিহাব তাড়া দিচ্ছে।শায়লা শিহাবকে অনুসরণ করে  এগিয়ে এলো। শায়লার বাইকে চড়ার অভিজ্ঞতা একেবারেই নেই।কিভাবে মানুষ খোলাভাবে এত স্পীডে বাইক চালাতে পারে সে অবাকই হয়। যখনি রিকাশায় করে কোথাও গিয়েছে পাশে সিগনালে কোন বাইক থামতে দেখলেই খুব ইচ্ছে হতো একটু চড়বার! 
আজ অজান্তেই তা ঘটে যাচ্ছে। শায়লা পিছনের সীটে উঠে বসলো।শিহাব তাকে বেশ ফ্রি করে দিলো।বললো  ভয় পাবেন না। আমাকে শক্ত করে ধরে বসবেন। শায়লা শিহাবের জিন্সের শার্টের কলার শক্ত হাতে খামচে ধরল।খুব স্বল্প সময়ের পথ। শিহাব চোখের পলকে একেবারে রকেটের বেগে লুবানার গেটে পৌছে গেলো। 
খুবই সাধারণভাবে নেমে দুজন রিপোর্ট কালেকশন বুথে গিয়ে  রিপোর্টগুলো কালেক্ট করলো। শিহাব একে একে সব কয়টা রিপোর্ট খুলে দেখলো। শিহাব কোন জড়তা বোধ করলো না বা অনুমতি নেবার প্রয়োজন মনে করলো না। তারওতো মা আছে।একজন মায়ের মেডিকেল রিপোর্ট পুত্রসম সন্তান শিহাব তা  দেখতেই পারে।
শিহাব সব দেখে শায়লাকে জানালো, আলহামদুলিল্লাহ,আপনার আম্মার সব রিপোর্ট ভালো এসেছে। আল্লাহ উনাকে দীর্ঘজীবী করুন। 
শিহাব সব কয়টি রিপোর্টের প্যাকেট নিজের সাথে নিয়ে নিলো।
দুজনে বেরিয়ে এলো। একটা রিকশা ডেকে শায়লাকে ইশারায় উঠতে বললো। শায়লা ধন্যবাদ দেয়ার সুযোগ পাচ্ছে না। রিকশায়  উঠতেই হাতে প্যাকেটগুলো দিয়ে বললো, সাবধানে যাবেন।আপনার আম্মাকে আমার সালাম জানাবেন। আবার দেখা হবে। বলে নিজের বাইকের দিকে এগিয়ে গেলো।
সো মাচ কেয়ারিং পার্সন!! 
শায়লা একরাশ মুগ্ধতা আর কৃতজ্ঞতার অনুভুতিতে বিগলিত হয়ে  গেলো! মুখে বিজয়িনীর হাসি ফুটে উঠল!
আফা কোনদিকে জাইবেন?
ওহ! সাত নম্বরে চলো।
শায়লা দ্রুত মিলিয়ে যাওয়া বাইকটির দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। 
চলবে....