টানাপোড়েন ( ১৩)
সমস্যা
সন্ধ্যে থেকে এত টানা বৃষ্টি চারিদিকে কিছু দেখা যাচ্ছে না ।ট্রেনে আসার সময় রেখা দেখতে পেয়েছিল জল থৈ থৈ করছে ।মাঠ সাদা হয়ে গেছে।ট্রেন থেকে নামার সময় রিম্পাদি দরজার কাছে এগিয়ে এসে লাগেজটা নিয়ে বললো 'সাবধানে যাবি ।তোর তো আবার একটুতেই ঠান্ডা লাগার ধাত আছে।'
রেখা শুধু মাথা নেড়ে সম্মতি জানায় আর মলিন হাসে বলল ,'তুমিও সাবধানে যেও। '
ট্রেনটা ছেড়ে দিল যতক্ষণ পর্যন্ত দেখা গেল রেখাকে তাকিয়ে থাকল রিম্পাদি ।রেখার অবস্থাও একই হাত নেড়ে নেড়ে।'ট্রেন বেরিয়ে গেলে দেখি অটোর খোঁজে গেল। কিন্তু কাছেপিঠে কোথাও একটা অটো পাওয়া গেল না ।একটু এগিয়ে গিয়ে অটোয়ালাকে জিজ্ঞেস করল 'যাবেন?'
অটোওয়ালা 'কোথায়? (বিরক্তি ভরে)ভেতর থেকে গলাটা বাড়িয়ে।'
রিম্পা কথা না বলে সরাসরি অটোতে উঠে পড়ল, আর বলল 'বুদ্ধ পার্ক।'
অটোওয়ালা বলল 'আমি যাবো, কি যাবো না ,না বলে আপনি উঠে পড়লেন দিদি।'
রেখা বলল 'দেখতেই তো পাচ্ছেন ভিজে গেছি দাদা।চলুন না। (অনুরোধের সুরে)।
অটোওয়ালা বলল 'একজনকে নিয়ে যাওয়া যায় দিদি ,বৃষ্টি বাদলের দিনে?'
রেখা বলল 'হ্যাঁ ।সেটা বুঝতে পারছি। ঠিক আছে ।আমি একটু ধরে দেব, চলুন।'
অটোয়ালা বলল ।'কিছু মনে করবেন না দিদি ,বুঝতেই পারছেন (খুশিতে ডগমগভাব।)ঠিক আছে আপনাকে নিয়ে যাচ্ছি (হেসে হেসে)। '
রেখা অটোতে বসে সাত-পাঁচ ভাবতে লাগল- মনোজ একটা ফোন ও করল না ,।কী হলো, কে জানে ?ভাবতে ভাবতে নিজেই একটা ফোন করলো। পুক পুক করে আওয়াজ হয়েই যাচ্ছে। এরমধ্যে অটো বাড়ির কাছে নামিয়ে দিল। রেখা নেমে ঘরে ঢুকলো ।
পাশের বাড়ি চৈতালির মা বলল 'দিদি ,একদম তুমি ভিজে গেছো গো ।বৃষ্টিটা যা দিচ্ছে।কালকে রাত্রে দাদা আসে নি, না?কোথায় গেছে? '
রেখা বলল 'ওই তো আগের দিন বললাম না যে ছোট পিসি শাশুড়ির বাড়িতে গেছে ।ওখান থেকে অফিস করে বাড়ী ফিরবে।'
চৈতালির মা বলল ' ও আচ্ছা আচ্ছা'।
রেখা বলল 'ঠিক আছে দিদি, আমি একটু চেঞ্জ করে নি, হ্যাঁ, পরে কথা বলব।'
চৈতির মা বলল ' না না না দিদি আপনি যান। কোন অসুবিধা হলে বলবেন।'
রেখা ঘার নাড়িয়ে সম্মতি জানালো। কি বিরক্তি লাগছে পুটুটার কি হলো, কে জানে?'
বাথরুম থেকে বেরিয়ে ফোনটাতে দেখে বেশ কয়েকটি মিস কল। চেক করে দেখে, সোমদত্তার ফোন। রেখা একটু চিন্তিত হয়ে গেল আর ভাবলো হঠাৎ করে সোমদত্তা এতদিন পর ফোন করলো? কাকু কাকিমার কিছু হলো? সেদিন বিপাশা বলেছিল একবার ঘুরে আসতে কিন্তু যাওয়া হয়ে ওঠে নি। পরপর ঝামেলা লেগেই রয়েছে। এক কাপ কফি করে ফোনটা করল। দুবার রিং হয়ে গেল। ওপার থেকে কন্ঠ ভেসে এলো 'হ্যালো'।
রেখা বলল 'সমু আমি দিদি বলছি। সবাই ঠিক আছিস তো? পাবলো সোনা কেমন আছে?'
সোমদত্তা বলল 'পাবলো ঠিক আছে। আমি ঠিক নেই দিদি। আমি ও বাড়িতে যাবো ।তুই একটু মা-বাবার সঙ্গে কথা বলবি ।আমি ওখানে থাকবো।'
রেখা বলল 'যা না ঘুরে আয়। বলার কি আছে? কাকু কাকিমার ভালো লাগবে। কদিন গিয়ে থাকবি ওখানে।'
সোমদত্তা বলল 'আমি বরাবরের মতো যেতে চাইছি'।
রেখা অবাক হয়ে বলল 'মানে! কি আবোল তাবোল বকছিস? তোর গড়িয়ার বাড়িটা কি হবে? আর পার্থ ,ও কি করবে?'
এবার সোমদত্তা একটু চুপ করে থেকে বলল'আমি ওর সঙ্গে থাকতে পারবো না।'
রেখা অবাক হয়ে বলল 'কি বলছিস সমু থাকতে পারবি না ,মানে ,এটাই তো তোর আসল বাড়ি আর এই বুড়ো বয়সে এসে কাকু কাকিমাকে এখন মনে কষ্ট দিবি? কি এমন হয়েছে ?চল আমরা সবাই মিলে বসে একটা সমাধান করব। তোর সমস্যাটা কি?'
সোমদত্তা বলল 'দেখ দিদি ,সবাই তো আর মনোজ দা নয়।"
কথাটা যেন রেখাকে খোঁচা দিয়ে বললো।
রেখা বলল 'নদীর এপার কহে ছাড়িয়া নিঃশ্বাস/ও -পারেতে সর্ব সুখ আমার বিশ্বাস।
'সোমদত্তা বলল,তোকে যা বললাম ,তুই সেটা আমার জন্য কর।'এর মধ্যেই পাবলো মায়ের কাছে এসে বায়না করছে 'আমি মাসিমনির সঙ্গে কথা বলব'। বলেই ফোনটা কেড়ে নিতে গেছে ,তখন সোমদত্তা রেগে গিয়ে বলল ' আঃপাবলো আমাকে কথা বলতে দাও।'শুনছে না বলে কষে এক চড় বসিয়ে দিল।
রেখা স্পষ্ট শুনতে পেল। দিয়ে ফোনটা কেটে গেল।
রেখা মনে মনে ভাবছে 'সোমুর এত রাগ তো ছিল না ।কেমন বদলে গেছে ।ছেলেটাকে মারছে। কি এমন হয়েছে ওর?'ভেবে কফিতে চুমুক লাগাতে গিয়ে দেখে একদম ঠান্ডা জল হয়ে গেছে। এরই মধ্যে আবার ফোন।
রেখা ভাবল আবার সোমু ফোন করল? ফোনটা রিসিভ করতে গিয়ে দেখে মনোজের ফোন। ফোনটা ধরেই রেখা বলল কি ব্যাপার বল তো ?এতটা রাত হয়ে গেল ,তুমি ফিরছ না কেন? বৃষ্টির জন্য আটকে গেছো। হ্যালো হ্যালো.. ও কি কিছু শুনতে পাচ্ছে না? এবার মনোজ টেক্সট করল। রেখা ,আজ ছোট পিসির বাড়িতে একটা মহা ঝামেলা হয়ে গেছে। এখন হসপিটালে আছি। জানি না আজকে বাড়িতে ফিরতে পারব কিনা?
রেখা লিখলো কি হয়েছে? ছোট পিসির কিছু সমস্যা হয়েছে?
মনোজ লিখলো 'বাবান..
কি হয়েছে ?রেখা বলল।
বাবান সুইসাইড এটেম করতে গেছিল।
রেখার যেন সব তালগোল পাকিয়ে যেতে লাগলো।
বাবান কেন সুইসাইড করতে গেল।
ওদিক থেকে মনোজ লিখল 'দুই ভাইয়ের মধ্যে গন্ডগোল।'
রেখা ভাবল 'ছোট পিসেমশাই মারা যাবার পর ছোট পিসি এমনিতেই ভেঙে পড়েছে।এবার ছেলেগুলোর মধ্যে যদি এরকম সমস্যা তৈরি হয় ।তাহলে তো ছোট পিসি সেটা মেনে নিতে পারবে না। মনোজ লিখল 'পরে গিয়ে সাক্ষাতে সব বলবো। তুমি নিজের যত্ন নিও ।গুড নাইট।'
রেখা ও গুড নাইট লিখল।
কিন্তু রেখা ভাবল আদপে রাত্রিটা কি ভালো যাবে?
যত দিন যাচ্ছে মানুষ যেন তত ধৈর্য হারিয়ে ফেলছে ।হাজারো সমস্যা মানুষকে গ্রাস করছে
কেউ ভালো নেই ।কেউ ভালো থাকার চেষ্টা করছে না। এদিকে বৃষ্টির রাত যেন রেখাকে গ্রাস করতে আসছে। আর ভাবছে বাবান যেন সুস্থ হয়ে যায় আর সোমদত্তা কি শেষ পর্যন্ত তার পুরনো প্রেমকে আঁকড়ে ধরতে চাইছে? তাতে কি ওর লাভবান হবে? কেন এই পাগলামীটা করছে ? আসলে প্রথম প্রেম তো ভোলা কষ্ট।
ধারাবাহিক উপন্যাস "টানাপোড়েন"১৩ ক্রমশ