১২ নভেম্বর ২০২০

সৌমিত বসু



হস্তান্তর 


চেনাগলি দিয়ে হেঁটে আসছে 

হাত ধরাধরি করা অন্ধকার , 

কতো বছর পর আপন মনে হচ্ছে তাদের |

আলোর কথা আজ থাক |

ঘাতক যেন চিনতে না পারে আমাদের |


এইসব তামাটের পাতারা সবুজ হয়ে উঠবে একদিন 

ছিনিয়ে নেওয়া জলে ভাগ বসাবে সাইবেরিয়া 

এতখানি আকাশ আর মানুষের অধিকারে থাকবে না কিছুতেই |


যেদিন বিষ নেমে যাবে 

তুমি যেন পা টিপেও যেওনা টিলার ওপর 

ওখানে যে ঘুমিয়ে আছে থাক 

তার কপাল থেকে চুল সরিয়ে দিলে 

সে কিন্তু ভেঙে যাবে আগের মতন |


চেনাগলি   অন্ধকার    ঘাতক 

আর যেন ফিরে না আসে |

পূর্ণিমা ভট্টাচার্য (টুকুন)



শ্রাবণ সন্ধ্যা

একাকি পথ চলে শ্রাবণের সন্ধ্যা

মনের সুখে ভিজিয়েছে আজকের দিনটা,

রাস্তাটা ভিজে গেছে ভিজেছে বারান্দা

ভেজাতে পারেনি শুধু অভিমানী মনটা।


আবীরের রং ধুয়ে গোধূলি ও ভিজলো

ভিজে গেছে পুকুরের সবকটি পদ্ম,

ভিজে স্নান কাকগুলো, ঘাসফুল ভিজলো

ভিজলো না কিছুতেই চিরকুটের শব্দ।


অলিগলি ভিজেগেছে, থইথই রাস্তা

এখনও ভিজে আছে পার্কের বেঞ্চটা।

সীমান্ত পেরিয়ে দিগন্ত ভিজলো

ভিজলো না একটুও  স্বপ্নের কথাটা।

         

দেবজ্যোতি কর্মকারের দুটি কবিতা


কথাছায়া

সব কথা বলা হয়নি এখনও

ফুরিয়ে যাবার আগে

সাজিয়ে নিচ্ছি কথার বিন্যাস


কোন কথা আদর ভালোবাসে

কোনওটা অভিমান মেখে আছে


পরপর দাঁড়িয়ে আছে কথাছায়া

আমার পাশে হাঁটছে রোজ


এই অবাধ্য পাতায়

কীভাবে কথার মৃত্যু হয়!


কীভাবে জন্ম নেয়!


প্রতিটি জন্মদাগ,

             মৃত্যু ভয়--

শুধু আমিই টের পাই

আর

লিখে রাখি এই অবাধ্য পাতায়

কবি মিশ্র



তুই আমার হবি ?


মুই তোর মতো হতে চাই

এক মুঠো সোনা রোদ

চোখে মুখে মেখে ,তোর সামনে এলে

তুই নিবি না আমায়, তোর করে ?


ভালবাসবি আমায়, সোহাগ করবি

দুরের ওই পাহাড়ের কোলে আমার বসত

ওখানে আমরা দুজনে ঘর করব

তোর মতো করে সাজাব দুজনের সংসার-


পারবিনা- না?

আমি এক সাধারণ মেয়ে

লিখাপড়া জানি না,

আদব কায়দা জানি না,

কিন্তু ভালবাসতে জানি-

তোকে খুব ভালোবাসব 

বিশ্বাস কর ক‍্যান !


গাঁদা ফুলের গন্ধে

ভরে উঠবে মোর ভালোবাসার ঘর,

বল তুই আসবি তো?

মোর সোহাগ রাত ভরিয়ে দিতে

ভালোবাসার ঘর বাঁধতে ???

দিবাকর কুন্ডু

প্রিয়তমা


আমার প্রাণের সুন্দর প্রিয়তমা,

দেখলাম তোমায় মুক্ত কেশে,

কলসী নিয়ে কাঁখে নদীর ধারে,

ভোরের বেলা এক সুন্দর বেশে।

কোথায় ছিলে এতদিন তুমি,

কত যে খুঁজেছি তোমায় আমি,

তুমি যে অপরূপ রূপের মোহিনী,

হৃদয় গগনে তুমি আমার প্রণয়িনী।


তুমি যে মৃগনয়নি, তুমি আমার প্রণয়কাহিনী,

তুমি কৈরব রূপের অধিকারিণী,

তুমি আমার প্রতি নিশীথের,

ঘন আঁধারের স্বপনচারিণী।


লাল মাটির রাস্তায়,

যখন তুমি চলেছিলে হেঁটে,

দেখনি কেন তখন তুমি?

আমি যে ছিলাম তোমারই পিছে।

ওয়াহিদা খাতুন

জালিয়াতদের ফাঁদে

 

সবখানে জালিয়াতদের পাতা ফাঁদ,

কে শত্রু,কে মিত্র,তা উপায় নেই জানা--

কূচক্রীদের জালে--জীবন বরবাদ;

অন্তর দহনে জ্বলি-- বলতেও মানা--

ঘরে-বাইরে দত্য-দানবদের হাসি;

কোন ছকে পড়ে,কিভাবে হারাবে মান,

সুরে অসুর ঢুকেছে -- মন পুড়া বাঁশি ;

বিষাক্ত ছোবলে অকালেই যাবে প্রাণ! 


রিপুর তাড়নায় জ্বলে--জ্বালো আগুন;

স্বার্থ-লোভে আত্মীয়তা নিয়ে করো খেলা--

হিংসার অনলে পোড়ে-- বসন্ত-ফাগুন;

পৈশাচিক তান্ডবে কাটাচ্ছো নেচে বেলা--


আত্মার সাথেই আত্মার অমিল হলে--! 

তাদেরকে কী আর আত্মীয় বলা চলে--!! 

দেবাশিস সাহা'র দুটি কবিতা

না-বলা কথা


জিভ ছিঁড়ে নেবার পর
পিছু পিছু কিছুটা পথ
তেড়ে গিয়েছিল 
ফোঁটা ফোঁটা রক্তবিন্দু

শালিখের ঠোঁটে ঠোঁটে 
আমার কথা
ফিরে এসেছে মানুষ সমাজে

আমার না-বলা কথা
শীতকাল হয়ে জমে থাকে
মেহনতী মানুষের রক্তে

কোনো  কোনো কথা
বারবার বলবার জন্যে
জন্ম নেয় পাখি 

সুরে তালে ছন্দে 
সবার মুখের কথা

শোষণের বিপরীতে 
মুখর হোক মানুষ।



ছায়াঘর

ঝন ঝন করে ঝরে গেলো সিঁদুর 
টুকরো টুকরো সিঁথিতে
খেলে বেড়াবে যৌনতা 

রাত ডিঙিয়ে পার হচ্ছে মেয়ে
শরীরে অমাবস্যা নেই
জোৎস্না দিয়ে রঙ করে বিছানা 

শরীর আজ অনলাইন 
ডিজিটাল দুনিয়ায় 
ভদকা মেশার জন্য খোঁজে সুন্দরী জল

জীবনের প্রতিটি পিরিয়ড বিজ্ঞাপন 
বিজ্ঞান আর অংক নিয়ে
বসে থাকে ছায়াঘর। 

কৃষ্ণা সাহা

শেষ ঘুমের দেশে 

 হয়তো একদিন 

     যাবো হারিয়ে

        শেষ ঘুমের দেশে ;

      রঙীন পৃথিবী 

  সাদা-কালোয় বদলে যাবে

চোখের নিমিষে!


পথ ঘাট 

     খোলা মাঠ 

            রইবে পড়ে নীরবে ;

         হয়তো রইব 

    আমিও সেদিন 

শুধুই অনুভবে !


শ্রাবণের বৃষ্টিতে 

      ভরে উঠবে 

            খাল-বিল ; 

         বিরহের জ্বরে 

    পুড়বে রোজই

হেরে যাওয়া গাংচিল!


স্নিগ্ধ সকাল 

       সুগন্ধ হারিয়ে 

             রইবে এক কোণায় দাঁড়িয়ে ; 

         অনিহা বাঁধবে ঘর 

   ইচ্ছেমতীর ইচ্ছেদের

দূরে সরিয়ে!


তবুও চাইবো 

      অনিন্দ দা 

            তুমি ভালো থেকো ;

         তোমার চিলেকোঠায় 

    আদরের চাদরে মুড়িয়ে 

অন্তত স্মৃতিটুকু রেখো!

এস এম শামীম রেজা



নিস্তব্ধ কলরব

কে ওখানে...

কেউ কি আছো.

কথা বলছো না কেন?

আমার কথা কি শুনতে পাচ্ছো,


কেউ তো হবেই...

চুপচাপ নিরব হয়ে আছো...

সবাই দেখবে বলে একাকী নির্জনে,

রাতের গহীনে চুপি চুপি হেটে যাচ্ছো।


আমি জানি...

তুমি সেই জনা...

যে আধার রাতে আসো...

স্বপ্নে এসে ভালোবেসে চুপটি করে থাকো,


স্বপ্ন রানী...

হয়ে আনমনা...

নদীর জলে ভাসো..

কেন আমায় সেথাঁয় ডাকো।

হাবিবুর রহমান হাবিব

ঠিকানাহীন



রাতের আকাশ কখন যে জোস্ন্যা হল 

তোমার ভাবনায় দেখা হল না। 

কখন যে গোপনে ঠাই নিলে মনের নয়নে

জানা হয়নি কিছুই। 

নয়নের দৃষ্টি যদি যায় আঁধারে হারয়ে

ব্যথার আগুন হয়ে যদি যায় প্লাবন

অজানার ঠিকানায় ভাসিয়ে নিয়ে যাবে তরী,

মনকে বুঝানো যায়না ভূবণ ভুলিয়ে 

মনের ঠিকানা অজানা। 

ভেঙে যায় যদি ভালো লাগা

ভালঅবাসার অন্ধকার ব্যথার আকাশ

রেখোনা মনে কোন স্মৃতির পরশ।