বিচ্ছেদ ও গিটার
সমস্ত বিচ্ছেদের আগের দিন তুমি একটা গিটার কিনলে সন্ধে হবার আগে পাখিদের নির্দিষ্ট ছন্দে দোল খাওয়া দেখে ফেলা যায়।
নতুন গিটার কিনলে তার সাথে একটা গিটার রাখার ব্যাগও পাওয়া যায়।সেটা বাড়তি পাওনা।তাতে একটা বড় পকেট থাকে।সেখানে ক্যাপো রাখতে পারো আর পিক কয়েকটা রাখা যায়।অথবা নতুন একটি নোটবুক।ছক কাটা কর্ডের নামতার বই।
ভারি মিষ্টি একটা গন্ধ থাকে ব্যাগটির গায়ে।বোধহয় বাজনাঘরের গন্ধ।প্রতিদিন যদি রাত্রে ঘুমোবার আগে ব্যাগে তুলে রাখা হয় এইসব গিটার তাহলে সকালে বের করার সময় নাকে এসে লাগে সেই আশ্চর্য গন্ধ।মনে হয় যেন দোকানের আরো কত ছোটো বড় গিটার, হারমোনিয়াম, ইউকিলেলেদের সাথে ব্যাগটির একটা সংসার ছিল অথবা গিটারটির।এ গন্ধটি সেইসব সঙ্গীসাথীদের গায়ের গন্ধ।
যে কোনো বিগিনার প্রথমেই নতুন বাদ্যযন্ত্র পেয়ে ভারি আনন্দ পায়।তুমিও পেয়েছ অথচ বাজাতে বসলে যখন কিছুতেই সেইসব সুর বাজাতে পারো না তখন মনে মনে কষ্ট হয়।মনে হয় এটাতে কিভাবে বাজবে সেইসব দুর্দান্ত ধুন!
আসলে প্রতিটি মানুষ খুব নিভৃতে বাজায় কিছু।কোনো না কোনো যন্ত্র সে নিজের মতো বাজায়।বাজাতে বাজাতে স্মৃতির গভীরে পৌঁছে নিজেকে অনেক দূর থেকে দেখতে থাকে।দেখতে দেখতে তার মাসল মেমরি বাড়তে থাকে।তারপর অনায়াসে বাজাতে থাকে।তখন সন্ধেবেলা একটা বিড়াল তাদের দিকে তাকিয়ে বসে থাকে পায়ের কাছে।একটা মেয়ে স্কুল থেকে ফিরবার পথে রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে পড়ে।একটা ঘুড়ি নির্ঘাৎ তখন আকাশে সবে হাওয়া পেয়ে চোখ খুলল।
বাড়ি থেকে অনেক দূরে চলে যাওয়া যায় এইসব গিটার হাতে পেলে।ফিরবার কথা ভুলে থাকতে পারা যায়।যদিও কোথায় ফিরবে তুমি?রাত্রে ঘরের ভিতর জোনাকি ঢুকে পড়ত যে ঘরে সেই ঘরে!যে ঘরে রাজ্যের দুর্দশা বুকে নিয়ে তুমি কেমন নির্বিগ্নে ঘুমিয়ে পড়তে।যে ঘরের বাইরে তখন কে যেন জ্যোৎস্নার আলোয় ডুবিয়ে ধরেছে এই পৃথিবীকে।সমস্ত বিচ্ছেদের ফাঁকে একটা গিটার তার ছটি তারের নিচে এইসব ফেলে আসা রাতের কথা লিখে রাখে।