২৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

কবি দেবব্রত সরকার এর কবিতা "শিবরাত্রি"

ইলাশটেশন শিল্পী পিয়ালী দাশগুপ্ত











কবি দেবব্রত সরকার










শিবরাত্রি
দেবব্রত সরকার

তোমার চোখে আমিই হবো শিব
তোমার চোখে আমিই আলোযাত্রী
তোমার উপবাসের জন্য দিক
হবেই শুভ জানাই শিবরাত্রি

সাজবে তুমি মনের মতো করে
যেমন ভালো তেমন কিছু আশা
তোমার চোখে আমার আলোধরে
বাঁচুক শত হাজার ভালোবাসা

শিবের মতো এমন কেন চাও
আমি কি শিব তোমার চোখে নই
হৃদয় বুকে আমার মূল্য দাও
আমিই শিব আমিই সর্বত্রই

১৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

মমতা রায়চৌধুরী এর ধারাবাহিক উপন্যাস "টানাপোড়েন" ২০৬
























উপন্যাস 

টানাপোড়েন /২০৬

প্রচ্ছন্ন করুন বেদনা

মমতা রায়চৌধুরী



অনেকদিন পর ইচ্ছে হলো রাত্রের দিকে ছাদে যেতে। আজ পূর্ণিমা । পূর্ণিমার চাঁদ উঠেছে কি মিষ্টি লাগছে। চাঁদ উঠলে মনটা যেন কেমন  উদাস হয়ে যায়। চাঁদ উঠলে মিষ্টি সুবাস হাতছানি দেয় বারবার। কেন যে বারবার রেখার মনটা এমন উথাল পাথাল হয় কে জানে? কার মায়াবী সুবাস ঘোরে চারপাশে। আজকেই কেন ছাদে আসতে হলো নিজের মনকে নিজেই জিজ্ঞাসা করছে রেখা।
বুঝেছি আজ আবার স্বপ্নিলের কাব্য গ্রন্থ প্রকাশ হয়েছে ,সেটা সাহিত্য একাডেমি পুরস্কারের জন্য নির্বাচিত হয়েছে তাই তো??
"হয়তো তাই।"
"হয়তো তাই কেন বলছো? বল তাই।"
"হ্যাঁ, যদি তাই হয় তাতে কি?"
"তাতে কি মানে এ বাবা তোমার চোখ দুটো তো লাল হয়ে গেল। চোখের কোনে জল কেন! তুমি খুশী হওনি?"
"খুশি, আমার খুশি তে কী এলো-গেল।'
"বাবা, সে তো অনেক কিছু…. তুমি তো সব। ওর মন প্রাণ জুড়ে।"
"কে  বলেছে তোমাকে এ কথা?,"
"নিজের মনকেই প্রশ্ন করো।"
যদি তাই হয়, তাহলে কি একবারও…
তোমার অভিমান হয়েছে তো?
"সেটা তো ওর ক্ষেত্রেও হতে পারে।'
কি হলো বাকি প্রশ্নের উত্তর দিয়ে যাও।
নিজের মনকে নিজেই প্রশ্ন করে তালগোল পাকিয়ে ফেলছে।
কেন যে মনের কোণে বারবার দাগ কাটে ওই নাম
নাম ।
মনে পড়ছে সেদিনের কথা"স্কুল থেকে ফেরার পথে গিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল দুজনে একটা ব্রীজের ধারে। 
কতক্ষণ যে একে  অপরের দিকে তাকিয়েছিল কতটা সময় পেরিয়ে গেছিল ,কত কথা চোখে চোখে হয়েছিল ,তার হিসেব কেউ রাখেনি।
স্বপ্নীল বলেছিল"একদিন হয়তো তুমি ভুলে যাবে!'
রেখা বলেছিল" আর তুমি?'
"কক্ষনো নয়।"
"সবাই বলে কাজে করে দেখাতে হয়।"
"কাজেই করে দেখাবো।"
"কিভাবে?"
স্বপ্নীল হাতদুটো কাছে টেনে বলেছিল লিখব তোমাকে নিয়ে ,তোমার সৌন্দর্য ,তোমার অমন সুন্দর ঘন কালো চুল, অমন মিষ্টি  দুটো গোলাপের পাঁপড়ি র  মত ঠোঁট শুধু মনে হয় এঁকে দিয়ে যাই ভালোবাসার চির চিহ্ন। অমন মিষ্টি হাসি দেখলেই তৃষ্ণার্থ প্রাণ জুড়িয়ে যায়।"
রেখা বলল" কাব্য করা ছাড়ো বাস্তব নিয়ে ভাবো।"
"এটাই আমার বাস্তবতা। তুমি বোঝনা?'
"বোঝার চেষ্টাও করলে না?"
"সবকিছু তুমি জানো তারপরেও কেন যেরকম বল?"
"যেদিন আমি তোমার থেকে অনেক দূরে থাকবো সেদিন বুঝবে।"
"সে তো এখনো বুঝি ,তখনো বুঝবো।"
স্বপ্নীল হো ,হো করে হেসেছিল ,সেই হাসির ভেতরে ছিল একটা প্রচ্ছন্ন বেদনা ।সেটা স্পষ্টই রেখা দেখতে পেয়েছিল ,উপলব্ধি করতে পেরেছিল ।
স্বপ্নীল বলেছিল"এখন ইচ্ছে করলে তুমি আমাকে দেখতে পাও স্পর্শ করতে পারো  ।হ্যাঁ, এই স্পর্শের ভেতরে কিন্তু কোন  মলিনতা নেই কালিমালিপ্ত হব না কেউ আমরা  শুধু হৃদয়ের দুটো টান তার বাইরে কিছু নয়। মন নিয়ে টানাটানি, মনের কাছাকাছি শুধু তুমি আমি। তোমার মনে প্রশ্ন উঠতে পারে তুমি কি কখনো শরীরটাকে চাওনি। মিথ্যা কথা বলবো না তোমার শরীরটাকেও আমি চাই । তবে সে চাওয়ার মধ্যে পার্থক্য আছে  কেমন জানো, আমি শুধু তোমার হাতে হাত রেখে স্পর্শ করেই সমস্ত শরীর টাকে আমি নিজের ভেতরে অনুভবে অনুভবে ভালবেসে যেতে চাই, তাতেই আমার পাওয়া।আর যদি তুমি কখনো আমার কাছে চলে আসো সেদিনকার পাওয়াটা হবে অন্যরকম  তবে আমি জানি তুমি কোনদিনও সংসারের গণ্ডি ছেড়ে সমাজকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে পারবে না এ কাজ করতে   ।আমি তা জানি। আমি বুঝি। তার পরেও আমি তোমাকে ভালবেসে যাই। কেন জানো? কারণ শ্রীকৃষ্ণ দেখো রাধাকে ভালোবেসেছিল রাধাকে কিন্তু জীবনসঙ্গিনী করেন নি। রাধাকৃষ্ণের ভালোবাসাটা কি হারিয়ে গেছে ?সে তো চিরন্তন অমর প্রেম।"
রেখা মুগ্ধ হয়ে স্বপ্নিলের দিকে তাকিয়ে থাকে। শুধু মনে হয় ওর কথা শুনে যায়  এই কথাটুকুই যেন চির শান্তি দেয়।
স্বপ্নীল বলে "আমি তো তোমার মধ্যেই আছি। তুমি আমার আগে আগে চলো ।কোন মাটি নীচে নয় অন্তরীক্ষে বিচারন করো ।আমি তোমাকে মাটিতে পা ফেলে জলকাদায় নেমে তোমার দিকে দৃষ্টি রেখে পথ চলতে পারি।'
"তুমি কেন এত আমাকে ভালোবাসো?'
"আমরা তো অসমবয়সী তারপরেও?"
স্বপ্নীল বলল" বারবার কেন তুমি বয়সের কথা টানো বল তো? আমি তোমাকে বলেছি বয়স একটা সংখ্যা মাত্র। যারা শুধুমাত্র শরীরটাকে পেতে চায় তারা বয়সের হিসাব করবে  আমি তো তোমার শরীরটাকে পেতে চাই কিন্তু আমি তোমার মনটা আগে চাই  তোমার মন আমার কাছে থাকলে শরীরটাকেও আমার পাওয়া হয়ে যায় । যার আকর্ষণে  দুটো নরনারী একত্রিত হয় ,সে তো ক্ষনিকের মোহ সেটা পূরণ হয়ে গেলে পড়ে থাকে মন ।মন ভেঙে গেলে আর কিছুই পাওয়া যায় না ।

রেখার এসব কথা ভাবছে আর দু চোখ জলে পরিপূর্ণ হয়ে যাচ্ছে 
একটা দীর্ঘশ্বাস ভেতর থেকে বেরিয়ে আসছে আর বলছে *আজ তুমি কেমন আছো এটুকু জানার অধিকারও আমার নেই   তোমার কন্টাক্ট নম্বর টাও তুমি চেঞ্জ করে ফেলেছ । এতটাই দূরে সরিয়ে দিয়েছো। আজ কি শুধু তোমার কাছে মনে হয় চোখে ধুলো ছুড়ে দিলে যে রকম কাউকে দেখা যায় না ,ধুলো যেমন আপনি উড়তে থাকে তার গতিবেগের হাওয়ায়, ঠিক তেমনি করেই কি আমাকে অন্ধকারে রাখছো?'
আজ তোমার কাব্যগ্রন্থ সাহিত্য একাডেমী পুরস্কার পাবে, আগের মত হলে হয়তো খুশিতে আমাকে নিয়ে নাচতে।"
"তবুও আমি চাই তুমি জীবনে আরো অনেক বড় হও ।তোমার কীর্তি রয়ে যাক তোমার কর্মে,,তোমার সৃজনশীলতায়।"
এসব ভাবতে ভাবতে হঠাৎ ভাবনায় ছন্দপতন ঘটে মনোজের ডাকে । যেন মনে হল সঙ্গে সঙ্গে পূর্ণিমার চাঁদ যেন ঢাকা পড়তে শুরু করল মনোজ হাঁক দিল রেখা ,রেখা ,রেখা আ.আ.আ।

"তুমি কি আজকে ছাদেই থাকবে, বাচ্চাগুলোকে খেতে দেবে না?'
এ কথাটা শুনতে পেয়ে খুব লজ্জিত হল ছি ছি ছি ছোট বাচ্চাগুলোর খিদে পেয়ে গেছে  ওদেরকে খেতে দিতে হবে। তাড়াতাড়ি সিঁড়ি  দিয়ে নেমে চলে আসলো। এসে ওদের খাবার রেডি করল তারপর খেতে দিল। যাবার সঙ্গে সঙ্গেই  তুতু কিউ কিউ আওয়াজে অনেক কিছু বোঝাতে চাইল।
রেখা মনে মনে ভাবল তোমার এই নিষ্ঠুর বাস্তব আজ আমার দৃষ্টি হরণ করে না শুধু  দৃষ্টিকে পীড়া দেয় মাত্র । তুমি আমার কাছে শেষ কথা নও। এটা আমাকে মানতে হবে।
রেখা বাচ্চাগুলোকে খেতে দিয়ে যখন খাবারের থালা টা নিয়ে ঢুকছে এক দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে থাকে রেখা ।আরএকটু লজ্জিত হয় রেখা বসন নামিয়ে রেখে ওয়াশরুমে গিয়ে বেশ ভালো করে চোখেমুখে জল দিতে থাকুন তারপর বেরিয়ে আসলো।, তখন মনোজ জিজ্ঞেস করে' তোমার মনটা কি আজকে খারাপ ,?
তোমার কি কিছু হয়েছে?"
রেখা বলে' কেন?"
"না তোমাকে দেখে মনে হচ্ছে তাই জিজ্ঞাসা করলাম।"
রেখা বললো" তোমাকে  ডিনার সার্ভ করব?'
"দেবে? দাও।"
রেখা কোন কথা না বাড়িয়ে রান্নাঘরে গিয়ে রুটি আর চানা মশলা তরকারি দিয়ে মনোজকে খেতে দিল।
"তুমি খাবে না?"
"আমার খেতে ভালো লাগছেনা।"
"সেকি?" মনোজ অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে।
"খিদে পাইনি তো ।"
"তাহলেও অল্প করে খাও  এতটা রাত খালি পেটে থাকবে?"
রেখা একটু জোরের সঙ্গে বলল" খিদে পেলে কি বলতে হতো? কেনো এক কথা বারবার
 বলছ । তোমাকে কি রুটি দেবো?'
"না আর কিছু লাগবে না  তবে একটু তরকারি দিতে পারো।'
রেখা আরেকটু তরকারী এনে মনোজ কে দিল।
মনোজ খেতে খেতে ভাবছে মাঝে মাঝে চিলেখার কি হয় ওকে বুঝে উঠতে পারিনা নানা কোলাহলকে ছাপিয়ে যেন ওর ভেতরে একটা যন্ত্রনা একটা না পাওয়ার বেদনা কাজ করে আমি ঠিক বুঝতে পারি কি এমন কষ্ট যেটা আমাকে বলতে পারেনা কি এমন যা কেউ ছুঁতে পারে না।
রেখা সবকিছু গুছিয়ে গেছে রেখায় নিজের রুমে চলে যায় শুতে মনোজ তখনও টিভিতে নিয়োগ শুনে যাচ্ছে চোখ দিয়ে দেখছে বটে কিন্তু মনটা পরে রয়েছে লেখার দিকে শুধু মনে হচ্ছে স্রেফ যেন ফাঁকি দিচ্ছে রেখা নিজেকেই নিজের প্রতি একটা নিশ্চয় ওর জীবনে কোন প্রচ্ছন্ন করুন বেদনা রয়েছে কি সেটা?
টিভি সুইচ অফ করে দিয়ে মনোজ যায় শোবার ঘরে। বেড সুইচ জ্বেলে দেখে রেখা একদিকে কাত হয়ে শুয়ে আছে। মনোজ সুইচড অফ করে দিয়ে রেখার পাশে শুয়ে পড়লো। রেখা কে আর জাগালো না শুধু ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করল ঈশ্বর ওর মনের দুঃখ কষ্ট গুলো দূর ক'রো। মনের টানাপোড়েন শেষ করে দাও। 


                                       চলবে ...

১৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

কবি দেবব্রত সরকার এর কবিতা "বসন্তের বাসন্তী"











বসন্তের বাসন্তী
দেবব্রত সরকার


বেশ সুন্দর ছবির ভেতর নিষ্পাপ মুহূর্তগুলো
দেখছিলাম খুঁজে খুঁজে 
বেশ মিষ্টি লাগছে
তোমাকে 
ভালোবাসার আতর মেখে কাজে ডুব দিলে
আমি বুকের ভেতর লুকিয়ে রাখবো প্রেম
তুমি খুঁজে খুঁজে নেবে 
সমস্ত ক্লান্তি উজাড় করে  
বুকের উপর বিছিয়ে দেবে কেশ
পারদ বাড়তে থাকল
তুমিও কখন কাছের থেকে মনে মন মিলিয়ে দিলে

আমাকে কেউ ফুল দেয়নি এখনো
নিশ্চয় তুমি দেবে 
অপেক্ষার প্রহর গুনতে গুনতে
একদিন দেখা হবে ঠিক
তোমার গৃহ কাজে ডুব দেবার মত
আমিও ভালোবেসে যাবো নিষ্পাপ
সেইদিন বসন্তের শ্বাস শেষ হলেও
তুমি যেন আমাকে ফুল দিয়ে যেও 🌹

কবি হৈমন্তী ব্যানার্জী এর কবিতা "মুহূর্ত পূর্বে..."














মুহূর্ত পূর্বে...
হৈমন্তী ব্যানার্জী


এই দী...র্ঘ অকালগ্রীষ্মে
বহুদূ...র শীতলতার চিহ্নটুকু নেই ;সম্মোহিনী বাঁশির ডাকে
শ্রীরাধিকা উষ্ণ হয় মনে মনে
খুব।
        এ দহন যুক্তি মানে না।
        এ দহন সময়ের দাসত্ব
        মানে না।
রাধার অভিমান বাড়ে। মনোহর ভর্ৎসিত হয়।
দ্বৈতসত্তা জেগে ওঠে অদ্বৈত সাধনের উদ্দেশ্যে।
শোন্ খুকি,
জীবনের অমৃতপ্রাপ্তিতে জগতের
মোহ ভেঙে যায়, খোলস ছাড়তে ছাড়তে রিপু তখন ভগ্নপ্রায়
শ্রীকৃষ্ণ প্রশস্তবক্ষে এরপর শ্রীরাধিকা সোহাগ নামায়, তার নুয়ে পড়া মাথা, তার বিস্তীর্ণ জমিন আবাদকালের জন্য হাট্ হয়ে যায়।
              মিশে যেতে চায় রাধা-
              মিশে যেতে চায়।

কবি রাজেশ চন্দ্র দেবনাথ এর কবিতা "প্রেম"












প্রেম
রাজেশ চন্দ্র দেবনাথ 


আমার জীবনের গল্পে
মৃত্যুর শিয়রে রাত জেগে
হাত বুলিয়ে যায় 
বিগত স্বপ্নের প্রেম

কবি আমিনা তাবাসসুম এর কবিতা "ভ্যালেন্টাইনে তুমি ও আমি"















ভ্যালেন্টাইনে তুমি ও আমি
আমিনা তাবাসসুম

জ্যোৎস্নার ভেতর দিয়ে হেঁটে যাচ্ছি তুমি ও আমি

যখন পৃথিবী নেই
কেবল একটা গোলকের মধ্যে
                         জন্ম রহস্য

যেভাবে নদীর বুকে লেগে থাকে চিবুকের দাগ
যেভাবে ফুলের রং সবুজ-সোনালী 
আর বইয়ের পাতা গোলাপ হয়ে যায়

কোনো শিলিং তবু দুঃখ ছুঁতে পারেনি

আমরা জোৎস্না খেয়ে বেড়ে ওঠি রোজ
ভালবাসা বড় হয়,
একটা ভ্যালেন্টাইন শুধু কেঁপে কেঁপে
বাতাস হয়ে যায়

কবি সানি সরকার এর কবিতা "সৃষ্টিকাল"














সৃষ্টিকাল 
সানি সরকার 


এখন অনেক কিছু সৃষ্টির সময় 

কিছু তো হচ্ছে ভেতরে
যেভাবে ছটফট করছে পায়রাগুলি 
যেভাবে ডানার আঁচড় কাটছে শালিখ দু’টি
যেভাবে অশ্বক্ষুর মাটি এফোঁড়ওফোঁড় করছে 
এই স্তব্ধতা, দ্যাখো, দ্যাখো… 

একটি গোলকের নিচে বসে 
পুড়তে পুড়তে, জ্বলতে জ্বলতে 
গলে নেমে যেতে যেতে 
আস্ত একটি গাছ থেকে ঝরাপাতা 
বালির ওপর শুয়ে আছি 

একে কী বলবে— নিঃশ্বাস গিলতে গিলতে  
মানুষটি চলমান গণিতের বাইরে ছিটকে গিয়েছে 
এবং রিবন উড়ছে চারপাশে… 

এখন দেহ থেকে বেরিয়ে গিয়ে 
পরম আত্মার সঙ্গে পরশ নেওয়ার দিন
পুড়ে যাচ্ছে দুঃখ, কষ্ট, দ্রোহ, আগুনলিপি… 

এই যে আমরা যেভাবে সোনালী আলোর নিচে 
পরস্পর আলিঙ্গনবদ্ধ বসে আছি 
কান পাতো— বুকের ভেতর দ্যাখো 
কিছু একটি বাজছে

কবি মমতা রায় চৌধুরী এর কবিতা " যদি একবার বল ভালবাসি"




যদি একবার বল ভালবাসি
মমতা রায় চৌধুরী 


যদি একবার বলো ভালবাসি 
নিমিষেই এক নীল আকাশ হয়ে 
বৃষ্টির ধারা বুকে নিয়ে ঝরে পড়বো তোমার  ঊষর ভূমিতে
হতে পারি মেঘলা দিনের এক মুঠো 
বৃষ্টির শব্দের সঙ্গে সারাদিনের মৌনতা
তবে ঝড় তুলতে পারি উদ্দাম যৌবনাবেগে
নতুন কিছু সৃষ্টিও করতে পারি। 

যদি একবার বলো ভালবাসি, ভালবাসি 
নদীর ধারার যত ফেনিল আছে 
তার উচ্ছ্বাস তোমার বুকের মাঝে দু'কান পেতে
শুনতে পেতে 
হয়তোবা বেদুইনের মত ছুটে বেড়াতাম শুধু তোমাকে পাবার জন্য 
এক মুঠো রোদ্দুর কৃষকের মুখের হাসি 
শত গোলাপের গন্ধ আমার জীবন পদ্মে পেতাম ছন্দ। 

যদি একবার বলতে ভালবাসি, ভালবাসি 
শতবার জন্ম নিতাম তোমার মুখের 
দু’ চোখের ভাষা পড়ে নিতে 
আমি আর কিছুই চাইতাম না 
চাইতাম না আমার একটা ঘর চাই
আমার ব্যালকনির মত বারান্দা চাই
তবে পড়ন্ত বিকেলে বসন্তের আনাগোনা 
কৃষ্ণচূড়ার রক্তিমা তোমাকে মনে করাতো 
আর গোপন মনের ভালোবাসা ধরে রাখতাম আমার অলিন্দে।
যদি একবার বলতে ভালবাসি ভালবাসি 
জীবনানন্দ দাশের’ নাটোরের বনলতার’ মত ফিরে আসতাম হাজার বছর পরেও ।

কবি মহাবীর চৌধুরী এর কবিতা "আমার তুমি"




আমার তুমি 
মহাবীর চৌধুরী

চেয়েছি যাকে আমি, 
দেখিনি তার রূপ,
দেখিনি তার রং,
দেখিনি তার গুণ,

দেখেছি খালি তার, 
উন্মুক্ত ভালোবাসা। 
যে, ভালোবাসা 
প্রকাশ করে না ভাষা,
বয়ে যায় স্রোতের সমান,
দিয়ে যায় অনেক প্রমাণ।
চলার পথে দিয়ে যায়,
হার না মানা বিশ্বাস
এই ভালোবাসা কোনদিনই
শেষ হবার নয়
যতক্ষণ থাকবে নিঃশ্বাস।
 
তুমি শুধুই আমার,
কেবলই আমার তুমি।

২৬ আগস্ট ২০২৪

কবি দেবব্রত সরকার এর লেখা কবিতা 'নারীচোখ '




নারীচোখ
দেবব্রত সরকার

আগুন জ্বলছে 
দোষ দিকে দিকে ছেয়ে
চারদিক জুড়ে 
ঐ ছুটে আসছে রণক্ষেত্রে
নারী চোখের উপর অত্যাচার 
সহ্য করছে বর্ষার শব্দ
পায়ের গর্জনে 
নড়ে উঠল হৃদপিন্ড
এবার সরে যাবার সময় এসেছে 
নিজের হাতের লেখা চিঠি
এগিয়ে দিলেই
সম্মানের সঙ্গে
আগামীর আনন্দ সংবাদ 
হবে রাজ্য।

১৪ আগস্ট ২০২৪

কবি দেবব্রত সরকারের কবিতা "রাত দখল কর,নারী"




রাত দখল করো, নারী
দেবব্রত সরকার

কে আছো কোথায়, কে আছো কোথায়, ছুটে ছুটে চলে এসো
আজ প্রতিবাদ, রাত এগারোটাই, হবে হুঙ্কার
সকলেই মিলে, চোখে জল নয়, বুকে তরবারি নিয়ে এসো !
নারীদের হাতে ফুল থেমে গেছে, একরাত, আজ হোক রণ ঝংকার !

পথে পথে প্রতিবাদ, শুধু প্রতিবাদ, কে আছো কোথায়! 
আজ চলে এসো পায়ে পায়ে, নারীদের মর্যদার লড়াই
রাজপথ ধরে মশালের আলো, মোমবাতি ছুঁয়ে যায়
মুখ কালো হোক রাজা-রাণী তারা না করুক বড়াই

কে আছো কোথায়,কে আছো কোথায়,ছুটে ছুটে চলে এসো
সময় কারোকে করবেনা ক্ষমা, জেনে রাখা দরকার,
স্বাধীনতার রাতেই নারী স্বাধীনতা চাই দেখো,এসো !
এইটুকু চাই ,অভয়া'র কলঙ্কের দাগ তুলেনিক সরকার ।

২২ জুলাই ২০২৪

কবি দেবব্রত সরকারের কবিতা "মিস্টেক"




"মিস্টেক"
দেবব্রত সরকার

কিছুটা এইরকম কেও চাই
হাত পেতে 
তারপর হারিয়ে ফ্যালে 
অথবা
থেকেও ইংরেজি শব্দ "মিস্টেক"
আমি এখনো আছি 
হাতের মুঠোই 
অথবা 
"মিস্টেকে"

০৫ জুলাই ২০২৪

কবি দেবব্রত সরকারের লেখা কবিতা "ময়দান"



ময়দান
দেবব্রত সরকার

আমি লড়াই করবো এমন ভাবিনি
কিন্তু যেদিন আমি আমার মায়ের গর্ভে প্রথম এলাম 
সেদিন আমি প্রথম লড়াই শুরু করেছিলাম জিতেই
কারণ কোটি কোটি আমার মতো শুক্রাণু যুদ্ধ করে ছিনিয়ে নিতে চেয়েছিল আমার মায়ের কোল
জিত তারই হয় যে লড়াইয়ের ময়দানে থাকতে শিখেছে।

সমস্ত ক্ষেত্রেই লড়াই 
সে জন্ম হোক বা মৃত্যু 
আর এই চক্রের মধ্যেই সমস্ত জীবনের লড়াই 
সে রাজনৈতিক হোক বা সামাজিক
প্রেম হোক বা শত্রু, সব্বাই বড় হতে চাই মানে জিততে চাই
ভালো কিংবা মন্দ । 
তবে যে সমস্ত ধর্মগ্রন্থ অথবা সাহিত্য পড়েছি তাতে জয় সত্যের দেখেছি ।
আজও জীবনে বেঁচে থাকার লড়াই চলছে আগামীতেও চলবে ।

আমি ময়দান ছেড়ে যাবোনা
যাবোনা কারণ
হারতে হলে ঐ ময়দানেই হারতে হয়
আর জিততে হলে ঐ ময়দানেই জিততে হবে।