০৭ জানুয়ারী ২০২২

আলোক দাস এর লেখা




মানুষ কোথায় 


 একি খেলা চলছে এখানে, আগেই হোলো স্কুল বন্ধ I 
পানসালা সব খোলাই থাক I  শিক্ষার আর দরকার নেই I এখন হচ্ছে এখানে হীরক রাজার দেশ I ট্রেন চলছে ভিড়ে, মাস্ক নেই কারও মুখে I করোনা এখন ঘরে ঘরে I আসছে গঙ্গাসাগর মেলা I বহু লোক আসবে সাগর তীরে I পুন্য স্বান হবে I কতলোক মরবে পাপে I হাসপাতালে ডাক্তার নেই, তাঁরা সব অসুস্থ হোয়ে ঘরে বন্দি I মেরুদন্ড ভাঙতে হোলে শিশুর, শিক্ষায় আঘাত আনো আগে I আসছে আবার ভোট I মিছিল, মিটিং হোক জোর কদমে I আবার সব হবে গড়ে পাশ I সবাই পাবে একশো I আহা কি মজা I পরীক্ষা বালাই সার I রায় ও মার্টিন তো হাতেই আছে I শিক্ষার হোক বিনাশ I ডোমের পরীক্ষা আবার হবে I জীবন হোক ছন্নচ্ছাড়া I সবাই যাবে হাইকোর্ট I ভোট আমাদের চাই I সবাই বোলবে দেবো কোরে পার্ক, দেবো আলো, দেবো লম্বা রাস্তায় গাছ, দেবো পুকুর, তার ওপরে উড়াল পুল I কলকাতা হবেই তিলোত্তমা I করোনা কিছু ই নয় I আমরাই দেবো মাস্ক I ভোট আমাদের চাই I

কবি খালেদা লিপি 'র কবিতা





ঘ্রাণ 
খালেদা লিপি 


অন্ধজন স্বপ্ন দ্যাখে
যদিও তার স্বপ্ন ঘুরে ফিরে এক জায়গায় স্থির 
দেখতে পাওয়ার স্বপ্ন।
বলেছিলো, 
পৃথিবীকে দেখতে চাই
যাকে ভালোবাসি তাকে দেখতে চাই
যে আমার ঔরসজাত তাকে দেখতে চাই।
দেখে দেখে সব চিনতে চাই
মানুষ চিনতে চাই 
ঘ্রাণে আর কতোটা চেনা যায়
পৃথিবীর সব কিছু ঘ্রাণে চিনে রাখা যায়?
প্রশ্ন শুনে ব্যাকুল হই
দেখতে না পারার জন্য এই যে ব্যাকুলতা সেটা খুব ভাবায়। 
ভাবি,দেখে দেখে কতোটা চিনেছি মানুষ কতোটা স্বপ্ন হয়েছে পূরণ কতোটা বাকি!
বরং পৃথিবীর মানুষের ভয়ংকর রূপ দেখে 
থমকে গেছি। 
দেখতে পাওয়ার যে ভয়াবহতা হয়তো তা থেকে  বেঁচে গেছে অন্ধজন।
দেখেও না চেনার বিষাদী আছন্নতা 
ঘিরে রেখেছে জীবনকে সেই জীবনে ঘ্রাণ শুঁকে চিনে রাখার ক্ষমতাকে অসীম মনে হয়।

কবি সেলিম সেখ এর কবিতা





বৃষ্টি
সেলিম সেখ

জমেছে মেঘ আকাশেতে
ঝরে পড়বে বৃষ্টি হয়ে,
নদী-নালা ভরবে জলে
প্লাবন আনবে লইয়ে।

বৃষ্টির ওই ফোঁটা
পড়বে যখন নিচে,
ভিজাবো মোর দেহখানি
আসবে জ্বর মিছে।

আকাশ ভরা মেঘ দেখি 
হয়েছে যে কালো,
উঠেছে ঝড় পুব দিকে
নিভেছে তাই আলো।

গ্রীষ্মের ওই তপ্ত দুপুরে 
আসেনা ঘুম কারও,
যদি হতো বৃষ্টিপাত
মন চায় ঘুমোতে আরো। 

মরুর বুকে যদি হতো
এক পশলা বৃষ্টি, 
সবুজে  ভরতো সেথা
হতো অনেক প্রাণের সৃষ্টি।

অনাবৃষ্টির ফলে আজ
হচ্ছে অনাবাদী জমি, 
এভাবেই চলতে থাকলে
বাঁচবে ভূমি কমই। 

কোথাও দেখো অতিবৃষ্টি
প্লাবন ডেকে আনে, 
কোথাও দেখো হয়েছে মরু 
অনাবৃষ্টির টানে। 

বৃষ্টির পর সতেজ হাওয়া
দিয়ে যাই মনে দোলা, 
বৃষ্টি শেষে মাটির গন্ধে 
প্রাণ থাকতো মোদের খোলা।

কবি মহুয়া চক্রবর্তী 'র কবিতা




পরম আত্মীয় 
মহুয়া চক্রবর্তী 

কে আমার আত্মার আত্মীয়
যে কিনা আমার আত্মার সাথে জড়িয়ে আছে
সেই  কি আমার পরম আত্মীয়।
পৃথিবীর এই গোলক ধাঁধায়
দিবারাত্রি ঘুরে চলেছে নতুন সম্পর্কের বাঁধনে।
কিন্তু আজও বুঝলাম না কে আমার আত্মার আত্মীয়।
নিত্য দেখি চাঁদের হাটে সম্পর্ক গড়ে আর ভাঙে
সম্পর্ক যে  আজ নিছকই খেলনা
যা কিনা দুই পয়সার মূল্য দিয়ে সাঝের হাটে বেচে আর কেনে।


পথে-ঘাটে নিত্যদিন কত সম্পর্ক ঘোরে আশেপাশে,
স্বার্থ ফুরালে সব সম্পর্ক গুলো পালায় নিরুদ্দেশে। 

যে আমায় এই পৃথিবীর আলো 
দেখিয়েছিলে একদিনসেই আমার পরম আপন আমার গর্ভধারিনী মা
বাকি সব সম্পর্ক গুলো সব টাই ফাঁকা
উপর টাই শুধু চকচকে রঙিন। 

একমাত্র নিঃস্বার্থ ভালোবাসে' পিতা মাতা
আর যার নাই পিতা-মাতা তার আছে দয়াল বিধাতা। 

আরে ও আমার অবুঝ মন
এই পৃথিবীতে কেউ নয় তোমার আপন।
এক মুঠো ভালোবাসার আশায়
অনেকতো ঘুরলে পথে পথে
এবার চলো নিজ নিকেতন।

শামীমা আহমেদ/৫০ পর্ব






শায়লা শিহাব কথন 
অলিখিত শর্ত (পর্ব ৫০)
শামীমা আহমেদ 

দরজায় কলিংবেল শুনে শায়লা  নিজের ঘর থেকে এগিয়ে এলো। দরজা খুলতে গেলে ডাইনিং এর দেয়াল ঘড়িটাতে তাকিয়ে নেয়া শায়লার বহুদিনের অভ্যাস।কে কোন সময়টাতে  এলো এটা দেখা শায়লার একধরনের ভাবনার খোরাকও বটে! 
ঘড়ির কাঁটায় রাত নয়টা।শায়লা দরজা খুললো।রাহাত অফিস থেকে ফিরলো।আজ বেশ দেরি হলো।রাহাত অবশ্য আগেই অফিস থেকে তা জানিয়েছিল।সামনে ওদের অফিসে বোর্ড মিটিং।অনেক পেপারস রেডি করতে হচ্ছে।তাই দেরি হবে।না জানালে মা বেশ অস্থির হয়ে উঠে। রাহাত আর কোন দিকে না তাকিয়েই বলে উঠলো, 
আপু, খুব ক্ষুধা পেয়েছে, খাবার দাও।
মা ঘর থেকে বেরিয়ে এলো।
শায়লা তড়িঘড়ি করে কিচেনের দিকে পা বাড়ালো।
দিচ্ছি, হাতমুখ ধুয়ে এসো।
রাহাত নিজের রুমে ঢুকতে গিয়ে আবার ফিরে এলো।
ওহ! আপু, আজ অনেক ব্যস্ত ছিলাম।তাই শিহাব ভাইয়াকে কল করতে পারিনি।আজ সারাক্ষনই সবাই গ্রুপে কাজ করেছি।একেবারেই ফুসরত মেলেনি।তবে ইনশাআল্লাহ  অবশ্যই  কাল কথা বলবো।
শায়লা বেশ আড়ষ্ট হয়ে কথাগুলো শুনছিল।রাহাত যতটা সহজভাবে বলছে মনে হচ্ছে শিহাব ইতিমধ্যে  এই পরিবারের একজন সদস্য হয়ে গেছে।আসলে  শিহাবের সাথে কথা বলে রাহাতেরও খুব ভালো লেগেছে!তাইতো তাকে পরিবারের সদস্য করে নিতে আর যেন ত্বর সইছে না।
---তোমাদের কী কথা হয়েছে আপু?
শায়লা রাহাতের দিকে চোখ না তুলেই জানালো,হ্যাঁ,হয়েছে।
ঠিক আছে আপু,কাল অবশ্যই কথা বলে নিবো।একটু ব্যস্ততা কমবে কাল।আমি আসছি,বলে রাহাত ঘরে ঢুকে গেলো।
শায়লা কিচেনের দিকে এগিয়ে গেলো।মাঝখানে  দাঁড়িয়ে মা দুই ভাইবোনের কথার কিছুই বুঝলা না।সে অবাক হয়ে শুধু এদিক ওদিক করলো। তবে একটা নাম নিয়ে আলোচনা যে হলো সেটা সে শুনেছে,তা হলো শিহাব।শিহাব কে!মা ঠিক বুঝতে পারছে না।  শায়লার দিকে দৃষ্টি দিতেই শায়লা দ্রুত রান্নাঘরে চলে গেলো।শায়লা মায়ের এমন বিব্রতকর অবস্থা  দেখে নিজেকে খুব অপরাধী ভাবছে।

প্রায় পৌনে দশটার দিকে শিহাব ঘরে ফিরলো।পথিমধ্যে বাইক থামিয়ে  একটা  ক্যাটারিং হাউজে চাওমিন অর্ডার করলো।তাকে সেখানে বিশ মিনিট অপেক্ষা করতে হলো।যেহেতু টেক এওয়ে খাবার তাই ওরা বেশ যত্ন নিয়ে খাবারটি তৈরি  করে।আর তাই একটু সময় বেশি নেয়।আর শিহাবকে তো সার্ভিসম্যানগুলো খুবই পছন্দ করে।ওদের খুব ইচ্ছা,স্যার একদিন আমাদের এখানে বসে ডিনারটা করেন,ম্যাডামকেও একদিন আনেন। ওদের ধারনা শিহাবের উপস্থিতি ওদের কাস্টমার বাড়াবে।বিশেষ করে নারী কাস্টমার!শিহাব এসব কথার একেবারেই পাত্তা দেয়না। সে নিজেকে এতটা সস্তা করে দিতে রাজী নয়। পুরুষের  সৌন্দর্য  তার ব্যক্তিত্বে আর নারীর  সৌন্দর্য  শালীনতায়।শিহাব বাইরে বাইকে বসেই অপেক্ষা করে। আজ বাইকে বসেই শিহাব ভেবে নিলো,ঘরে খাবার ফুরিয়েছে।মা,ভাবীকে জানাতে হবে আবার কিছু খাবার তার জন্য পাঠাতে। পরক্ষণেই ভাবলো।না পাঠাবে কেন? খুব শীঘ্রই সে নিজেইতো জিগাতলায় যাবে, শায়লাকে নিয়ে। শায়লার কথা জানিয়ে মা আর ভাবীকে আগে থেকেই ব্রিফ করে রাখতে হবে।মা খুশি হলেও ভাবী কিভাবে নিবে শিহাব তা বুঝতে পারছে না।ভাবীর খুব ইচ্ছা ছিল তার খালাতো বোনের সাথে শিহাবের বিয়ে দিতে।ভাবীর খালাতো বোন জেরিন,মেয়েটি নিঃসন্দেহে খুবই ভালো কিন্তু শিহাব ঠিক মেয়েটির সাথে নিজেকে মিলাতে পারেনি।বেশ ধনীর ঘরের মেয়ে। বিয়ের তিনদিনের মাথায় ডিভোর্স হয়ে যায়।ছেলেটি ড্রাগ এডিক্ট ছিল। বিয়ের সময় বুঝা যায়নি একেবারে।আর বিয়ের পর তা বুঝতে পেরেই জেরিন আর তার সাথে সংসার করতে চায়নি। শিহাব ভেবে নিলো, আসলে পৃথিবীতে কেউই সুখী বয়।অর্থ বিত্তও সুখ এনে দিতে পারেনা।টাকার অভাবে দরিদ্ররা মেয়ে বিয়ে দিতে পারে না, অর্থাভাবে স্ত্রীর প্রতি নির্যাতন চালায় আবার ধনীদের প্রচুর অর্থ থাকলেও,তাদের কাছে  অর্থের চেয়ে এডজাস্টমেন্ট বড়! 
চাওমিন তৈরি হয়ে এলো।শিহাব বক্সটি নিয়ে বাইকে বাসার উদ্দেশ্যে দে ছুট! বাসার গ্যারেজে বাইক পার্কিং করার সময় কেয়ারটেকার বেলাল এগিয়ে এলো।কিছু একটা বলার জন্য কাছে এসে হাত ঘষাঘষি করছিল।
কিছু বলবে বেলাল?
জ্বী স্যার,একটা কথা।
বলো।
বেলাল বেশ ভীত মুখেই বললো, স্যার নিচতলা অপুর আম্মু ম্যাডামে আমার কাছে আপনার মোবাইল নম্বরটা চাইছিল।আপনার অনুমতি ছাড়া তো আমি দিতাম পারিনা।
শিহাব আবার জানতে চাইল,,,,, কে?
ঐ যে স্যার, আপনারে যে জ্বরের সময় নাস্তা পাঠাইছিলো।অপুর আম্মু ম্যাডামে।
ওহ! বুঝেছি।নিশ্চয়ই কোন বিয়ের প্রস্তাব আসবে।হয় ছোট বোন,নয়তো ননদ নয়তো কোন বান্ধবীর ছোট বোন নয়তো কোন ভাবীর অবিবাহতা খালাকে নিয়ে।শিহাব এসব ভালোই বুঝে।এইসব সে এত ফেইস করেছে যে শিহাব এ সবে অভ্যস্ত হয়ে গেছে।তাকে নিয়ে কে কি বলতে চায় শিহাব খুব ভালো করেই বুঝে।তাইতো শিহাব নিরাপদ দূরত্ব রেখে চলে।পারতপক্ষে কোন ধরণের পারিবারিক আয়োজনেও এজন্য সে যায় না।
শিহাব বেলালকে বেশ কড়া করেই নিষেধ করে দিলো নম্বর না দিতে। শিহাব ভেবে নিলো খুব শীঘ্রই এইসব যন্ত্রনার দিন শেষ  হচ্ছে।শায়লাকে দ্রুতই সে ঘরে নিয়ে আসবে। আমাদের দেশে এইসব ব্যক্তিগত বিষয়গুলো নিয়ে মানুষের অতি উৎসাহ একেবারেই ভদ্রতার বাইরে।
শিহাব ঘরে ঢুকে খাবারটি টেবিলে রেখে ফ্রেশ হয়ে নিলো।
শায়লার মেসেজ এলো।আজ রাতে কি মেনু?
শিহাব উত্তর লিখে জানালো,চাওমিন এনেছি।
হু, গরম থাকতেই খেয়ে নিও।
শিহাব বুঝে না মেয়েরা যত্ন আত্তির ব্যাপারে কিভাবে যে এত পারফেক্ট?
শিহাব লিখলো, শায়লা, তোমার সাথে শেয়ার করে চাওমিনটা খেতে ইচ্ছে করছে।
আচ্ছা, সে হবে কোনদিন।তুমি চাওমিন অর্ডার করে আমায় কল দিলেই  আমি চলে আসবো।
ওকে,,জাস্ট মাইন্ড ইট!
শায়লা নীরব হলো।শিহাব মনের ভাবনায় শায়লাকে নিয়ে চাওমিন বক্স এক নিমেষে খালি করে ফেললো! শিহাবের খুব প্রিয় এই আইটেমটা।ভাবীর হাতেরটা চমৎকার হয়।একদিন ভাবীই খাইয়েছিলো। শিহাব ভাবলো শায়লাকে বলবে ভাবীর কাছে থেকে  রান্নাটা শিখে নিতে।শিহাব কি যে সব এলোমেলো ভাবছে! নিজেই মনে মনে হাসছে।
শিহাব এক কাপ গরম কফি বানিয়ে বিছানায় নিয়ে বসলো। মাকে কল দিতে হবে।আজ জীবনের বিরাট একটি সিদ্ধান্ত মাকে জানাতে যাচ্ছে।শিহাব খুব করে জানে,মা কতটা খুশি হবে! মায়ের চাওয়াটা শিহাব ঠিকই বুঝতো কিন্তু তা পূরণ করতে পারছিল না। 
মাকে কল করে শিহাব বাবা মায়ের শারিরীক খোঁজ খবর নিয়ে জানালো, মা আমি দুদিন পর শুক্রবার দিন জিগাতলায় আসছি।মা আমার সাথে একজন অতিথি  থাকবে সে সারাদিন তোমাদের সাথে থাকবে।আরাফের সাথে সময় কাটাবে।
মা এবার বুঝতে পারলো কেমন অতিথি!
মা, আমি যাকে নিয়ে আসছি সেই হবে আরাফের মা।আমি চাই, তুমি ও বাসার সবাই আরাফকে এটাই বুঝাবে, যে ইনিই তোমার মা।
শিহাবের কথায় মা একেবারেই নিরুত্তর হয়ে রইল।এ ব্যাপারটিতে তার কোনই আপত্তি নেই বরং আরাফ মায়ের আদর পাবে শিহাবের মা এতেই খুশি।
মা,তুমি বাবা আর ভাবীকে জানিয়ে রেখো।আর ভাবি যেন ভাইয়াকে আগে থেকেই জানিয়ে রাখে।যদিও এ ব্যাপারে 
শাহেদ কোন আগ্রহই দেখাবে না।কোন কালেই সে শিহাবকে নিয়ে অতিরিক্ত কোন কৌতুহল দেখায়নি।একজন আত্মকেন্দ্রিক মানুষ তিনি।শিহাব জানালো,
মা,আমি তোমাদের ওর ব্যাপারে সব জানাবো। দয়া করে তোমরা ওকে কোন কিছু নিয়ে প্রশ্ন করবে না। শুধু দেখবে সে আরাফকে আপন করতে পারছে কিনা আর আরাফও তার কাছে স্বেচ্ছায় যাচ্ছে কিনা। তোমরা ওদের কে আপন হতে সাহায্য করো।
আচ্ছা মা,রাত হয়েছে,ঘুমিয়ে পড়ো।
কথাগুলো এক নিঃশ্বাসে বলে শিহাব কল শেষ  করলো। একটা সিগারেট  ধরিয়ে  দীর্ঘ এক টান দিয়ে সাথে কফি কাপে দারুণ এক সিপ টেনে নিলো।মূহুর্তেই দেহের ভেতরে একটা রক্তের ছলাৎ চলনে দেহটা কেঁপে উঠলো। শায়লার মুখটা যেন চোখের সামনে এসে থামলো! যেন শায়লার স্পর্শ টের পেলো।শিহাব মনের অজান্তেই হেসে উঠলো। হাতে টিভি রিমোট নিয়ে স্পোর্টস চ্যানেলে স্টিক হলো।ফুটবল খেলা চলছে।ম্যানচেস্টার আর রিয়েল মাদ্রিদের খেলা।দুই পক্ষেই গোল হয়ে হয়েও হচ্ছে না! একপক্ষ কর্ণার কিক মিস করছে তো আরেকপক্ষের লং শট বারবার গোল পোস্টে লেগে ফিরে আসছে! ভীষণ উত্তেজনাকর খেলা চলছে। শিহাব খেলার মাঝে বারবারই আফসোস করে উঠছে।
গ্যালারিতে  সমর্থক দর্শকদের চোখ ফেটে বেরিয়ে আসতে চাইছে।কোন ভাবেই যেন নিজ দলের গোল দেয়া দেখাটা মিস না হয়ে যায়!
শিহাবের মোবাইলে 
একটা রিং এলো। শিহাবের মনযোগ কিছুটা হলেও সেদিকে গেলো।কোন নাম ছাড়া অচেনা একটা নম্বর থেকে।শিহাব কৌণিক চোখে একবার দেখে নিলো। নাহ! নাম্বারটা একেবারেই চেনা নয়। ফ্যাক্টরির ম্যানেজার কিনা? কোন ঝামেলা হলো কিনা আবার?
ভাবতে ভাবতে এক রাউন্ড রিং শেষ হলো।শিহাবের মনে খেলার আগ্রহের চেয়ে এখন মোবাইল স্ক্রিনে চোখ আটকে গেলো।
আবার কল।শিহাব এবার এক রিংয়েই ধরলো।
হ্যালো, কে বলছেন।
ওপাশের নীরবতা শিহাবকে উৎকন্ঠিত করে তুললো।বারবার একই প্রশ্ন করে যাচ্ছে শিহাব।
কে বলছেন? কে বলছেন? 
এবার উত্তর ভেসে এলো।যা শুনে শিহাব একবারে যেন  ভাবনার কক্ষপথ থেকে ছিটকে বেরিয়ে এলো। টিভি স্ক্রিনে ম্যানচেস্টার  এক গোল দিয়েছে,গ্যালারিতে দর্শক আনন্দে ফেটে পড়ছে কিন্তু  শিহাবের সবকিছু যেন পানসে হয়ে থমকে গেলো।ওপ্রান্তে কে? শিহাব ভেতরে অস্থির হয়ে উঠলেও এমন রহস্যজনক আচরণে বেশ রাগও হচ্ছিল।
কিছুক্ষন পর উত্তরটা ভেসে এলে, শিহাব যেন হঠাৎ থমকে গেলো! নিজের কানকেও বিশ্বাস করতে পারছিলো না। এত উত্তেজনাকর খেলাও আগ্রহে ভাটা পড়লো। মনে হলো সুদূর অতীতের 
ভুলে যাওয়া একটা খুবই চেনা কন্ঠস্বর থেকে উত্তরটি ভেসে এলো,,,,,আমি রিশতিনা। গত পরশু দেশে এসেছি।তুমি কেমন আছো শিহাব?
চকিতেই যেন শিহাবের ভেতরে বিশাল এক ভূমিধ্বস হলো।চলার গতির হঠাৎই থেমে গেলো। সেই বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকা রিশতিনার মায়াবী মুখটা বুকে এসে আঘাত করলো।
ওপ্রান্ত থেকে আবার একই প্রশ্ন,,,কেমন আছো শিহাব ?


চলবে....

মমতা রায়চৌধুরী /৮৭




উপন্যাস 

টানাপোড়েন ৮৭
উথাল পাথাল মন

মমতা রায়চৌধুরী



শিখার গতরাতে উত্তেজনায় ঘুম আসে নি হঠাৎ করে মনটা যেন কেমন উথাল-পাতাল করছে।কেন এমন হলো ?তবে কি মেসেজগুলো তার ভেতরে কোন রেখাপাত করল ।নাকি অন্যকিছু? উদাসী বাউল মনটাকে আবার কি ঘরের দিকেই আবদ্ধ করার জন্য কোনো মন তাকে ডাকছে, সোনার আলোয় ভরিয়ে দেবার জন্য ।
খুব ভোরবেলায় উঠে পরেছে শিখা। ভোরে উঠে ফ্রেশ হয়ে ঠাকুরঘরে গেছে। ঠাকুর ঘরে প্রেমের ঠাকুর 'রাধামাধব 'এর সামনে 'তুমি নির্মল কর, মঙ্গল করে ,মলিন মর্ম মুছায়ে..।'গান গাইছে একাগ্রচিত্তে।
গান শুনে মাধু ,সুরঞ্জন ,বৃষ্টি সকলের ঘুম ভেঙে গেছে ।সকলে হা করে ব্যালকনিতে এসে দাঁড়িয়েছে। তিন তলার ঠাকুর ঘর থেকে আওয়াজ আসছে। 
মাধু সুরঞ্জনকে ধাক্কা দিয়ে বলল 'এই শোনো ,শোনো ।দেখো, শিখা গান গাইছে আবার ।আজ কতদিন পরে ঠাকুর ঘরে ঢুকলো বলো তো।'
সুরঞ্জন বলল 'একটা গুড সাইন লক্ষ্য করা যাচ্ছে।'
মাধু বললো 'অপূর্ব গাইছে গো। '
সুরঞ্জন মাথা নেড়ে সম্মতি জানালো আর বলল 'বোনটা কার দেখতে হবে তো,?'
মাধু  হেসে বলল 'ননদটা  কার দেখতে হবে তো?'
বৃষ্টিটা আবার বলল" পি মনিটা কার দেখতে হবে তো?'
 মাধু আর সুরঞ্জন তো বৃষ্টির কথায় অবাক হয়ে গেল। তারপর মাধু বৃষ্টিকে গাল দুটো টিপে দিয়ে বলল 'একটা পাকা বুড়ি।' 
এরপর বৃষ্টির হাতটা ধরে বলল  'চলো চলো চলো ঠাকুরঘরে চলো সবাই ।শিখা গান করছে।'
মেজ পিসি ঘর থেকেই বললেন 'কে গান করছে মাধু? শিখা?'
মাধুরী বলল'-হ্যাঁ মেজ পিসিমা।'
মেজ পিসি বললেন' গানের গলা তো ভালো। ওকে তো আমি এসে অবধি গান করতে শুনি নি।'
সবাই গিয়ে ঠাকুরঘরে বসলো। মাধু আর সুরঞ্জন দেখছে' কি ভক্তিভরে একান্তমনে ,একনিষ্ঠভাবে ঠাকুরের পুজো করছে গানের মধ্যে দিয়ে। অন্য কোন দিকে ধ্যান নেই। গান শেষে শিখা দু' হাত জোড় করে ঠাকুরের কাছে প্রণাম করলো ।প্রণাম করার সময় মাধুরী লক্ষ্য করল  শিখার চোখে জল।'
মাধুরী মনে মনে ভাবল 'শিখার আত্মা শুদ্ধিকরণ হলো আঘাতে -আঘাতে , দগ্ধে -দগ্ধে পুড়ে পুড়ে ।
শিখা পুজোর শেষে পেছনে ঘুরে তাকিয়ে দেখে পরিবারের সবাই উপস্থিত। শুধুমাত্র মেজ পিসি ছাড়া। এমনিতেও মেজো পিসির তিনতলা ওঠার ক্ষমতাও নেই, হাঁটুতে ব্যথা।
শিখা সবাইকে প্রদীপের শিখার তাপ, রাধা মাধবের আশীর্বাদ দিল ।তারপর প্রসাদ দিল।
মাধু দেখছে শিখাকে কি স্নিগ্ধ লাগছে। কি সুন্দর একটা লাল পেড়ে শাড়ি পরেছে।
বৃষ্টির পি মনি বলেই শিখাকে জড়িয়ে ধরতে যাচ্ছে ।ঠিক তখনই মাধু বৃষ্টিকে ধরে বলল ' একদম 
নয় ।পি .মনি কে এখন ছোঁবে না ।বিছানা থেকে উঠে এসেছ।'
শিখা বলল' ছেড়ে দাও না বৌদিভাই। ও তো শিশু কিচ্ছু হবে না।সবকিছুর মধ্যেই ভগবান বিরাজ করেন ।এ'খানে কোন আচার-বিচার, রীতিনীতি খাটে না।'
মাধুরী তো  শিখার কথায় হা  হয়ে গেল। কি শুনছে শিখার কাজ থেকে।
মাধুরী বলল' ঠিক আছে । আমি নিচে যাচ্ছি প্রত্যেকে  নাও ফ্রেশ হয়ে নাও। বৃষ্টির হাত দুটো ধরে নিয়ে বলল'বৃষ্টি চলো, চলো, চলো তোমাকে ব্রাশ করিয়ে দিই তারপর তুমি দুধ খেয়ে হোমওয়ার্ক করবে।'
শিখা আর সুরঞ্জনকে বলল 'তোমরাও  তাড়াতাড়ি চলে এসো। আমি নাস্তা রেডি করছি। '
মাধু সিঁড়ি দিয়ে তরতর করে নিচে নেমে গেল।
সুরঞ্জনও নিচে নেমে গেল। শিখা কিছুক্ষণ ঠাকুরঘরে রাধামাধবের দিকে তাকিয়ে থেকে আপন মনে কি যেন বলল তারপর দরজা বন্ধ করে শিখাও নিচে নেমে আসলো।
ইতিমধ্যে শিখার ফোন বেজেই চলেছে।' 
মেজ পিসি বললেন 'কার ফোন এতবার করে বেজে যাচ্ছে গো মাধু ,ফোনটা কেউ ধরছে না?'
মাধু বলল 'আমরা তো কেউ এখানে ছিলাম না পিসিমা।'
শিখা নিচে নেমে আসলে মাধু কানের কাছে গিয়ে বলল' তোর ফোনটা বেজে গেছে ।যা  দেখ কে ফোন করল?'
শিখা হেসে নিজের ঘরে চলে গেল।
ভেতরে ভেতরে একটা উত্তেজনা ছিলই। সে তাড়াতাড়ি ফোনটা দেখল। দেখছে 'কল্যান ফোন করেছিল?'
তারপর হোয়াটসঅ্যাপটা খোলে। দেখল বেশ কয়েকটা মেসেজ ঢুকেছে।
প্রথম মেসেজটা'তখন ফোনটা ধরতে পারি নি।
এর জন্য দুঃখিত।'
পরের মেসেজটা আছে'অভিমান হয়েছে?'
তারপরে মেসেজে আছে 'বললাম তো একটা কাজে ছিলাম।'
এবার শিখা মেসেজ দিল'মনে করব কেন?'
সঙ্গে সঙ্গে কল্যান রেসপন্স করলো'
'অভিমান পাই খুঁজে কিছু,
পাই খুঁজে কিছু ব্যথাময়।
তাই আমি করে মাথা নিচু,
দুরু দুরু মনে সংশয়।'

শিখা টেক্সট করল
'অভিমানে নেই কোনো মূল্য
শীতের ঝরে যাওয়া 
পাতার মতই শুধু শূন্য।'
মনের সংশয় ছেড়ে 
এগিয়ে যেতে হবে বহুদূর।
তাই পিছনে ফিরে তাকানো
শুধু  ভুল আর ভুল।'

কল্যান মেসেজ করল
'অভিমান মূল্যহীন হলে
কি করে যে যায় দিনকাল?
কালোমেঘ মনে ভেসে এলে
বদলাবে কিছু হালচাল।'

শিখা লিখল'
'কিছুই বদলাবে না
হয়তো বা ভাসিয়ে নিয়ে যাবে বহুদূর।'

কল্যান লিখলো '
শীতে শুধু পাতা নয় মনে,
ঝরে পড়ে বসন্তের পাতা।
চেয়ে থেকো প্রেমী আনমনে,
আমি হই হেরে যাক ব্যথা।
শিখা লিখল
'মনের জীর্ণতা যখন এসে বাসা বাঁধে,
কোন বসন্ত এসে তাকে নিয়ে যাবে উড়িয়ে।'

কল্যান লিখলো'
' এর চেয়ে বেশি কিছু তুমি,
ভালোবাসা মেখে মনময়।
প্রেম ছুঁয়ে লিখে যাই আমি
ভাষা নিয়ে করে নির্ণয়।'

শিখা লিখল
'তবুও তো ফুলের সুবাস
 প্রত্যেকে চায়।
ঝরে যাওয়া পাঁপড়ির
সে রূপ গন্ধ কোথায়?'

কল্যান লিখল
' কোথায় ঝরেছে পাতা বলো,
সুগন্ধি ছেয়েছে হৃদি মন।
ঘুরে আসি মনে মনে চলো
পাহাড় সমুদ্র আর বন।'

এবার শিখা একটা হাসির চিহ্ন পাঠায়।

কল্যান আবার লিখলো
'শীতের গায়ে তুমি যদি  একে দাও
পলাশের গান।
আমি তো অনন্ত যতি ছিল যত বোধে 
আঁকা অপমান।
সবই তো  ধুয়ে মুছে যাবে খুশির ফিরে পাবে
হৃদয়ের টানে।'

শিখা লিখল '
সব সময় শুধু চাওয়া ভালো থাকা
এই প্রত্যাশাটুকুই বেঁচে থাক।'

কল্যাণ লিখেলো 'সেই প্রত্যাশা পূরণ করবে কে?'
শিখা কোন জবাব দেয় না।
এরমধ্যে মাধু বৌদি ', শিখা ,শিখা  আ..আ . আ বলে ডাকতে শুরু করেছে।'
কল্যান আবার লিখল উত্তর কোথায়?
মাধু আবার ডাকছে শিখার নাম ধরে।
মেজ পিসি নিচ থেকে চিৎকার করছেন।
বলছেন'এত বড় ধিঙ্গি মেয়ে। তাকে সব সময় খাবার জন্য ডাকতে হবে?'
শিখার কানে কথাটা আসলো। লিখল এখন আমি নিচে যাচ্ছি বৌদি ডাকছে?'
কল্যান বলল 'ok কিন্তু জবাব চাই। মনে থাকে যেন।
শিখা হাসির চিহ্ন দিয়ে পাঠায়।
এবার শিখা শাড়িটা চেঞ্জ করে তাড়াতাড়ি নিচে নেমে আসে। মাধুরী লক্ষ্য করে শিখার ভেতর আজকে রাগ নেই ।মেজপিসিমা যেভাবে কথাগুলো শোনালেন তাতে মাধুরী ভেবেছিল শিখা এসে আবার কোনো কাণ্ড করে না বসে।'
শিখা নিচে এসে বৌদিকে বলল'বৌদিভাই, আমার খাবার দাও।'
মাধুরী বলল' এই দিচ্ছি।'
শিখা বললো 'বৌদিভাই আজকে আমি একটু বেরোবো।'
কথাটা শুনতে পেয়ে মেজ পিসি বললেন 'কেনো রে ,যখন- তখন, যেখানে -সেখানে বেরোস কেন এত?'
শিখা কোন কথার উত্তরই দিলো না এভয়েট করে গেল। 
মাধু বলল 'পিসিমা প্রয়োজন থাকলে তো বেরোতেই হবে না?'
পিসিমা বললেন 'আর এত ঢাকো কেন মাধু তুমি?'
শিখা বলল 'বৌদি ভাই আমি বেরোচ্ছি।'
মাধু শুধু হেসে ঘাড় নাড়লো।
শিখা ঘরে গিয়ে ড্রেস পরতে পরতে গান গাইতে লাগল 'ঘরেতে ভ্রমর এলো গুনগুনিয়ে...।
তারপর একটা কি উত্তেজনা মাদকতা সারাক্ষণ মনটাকে উথাল পাথাল করে দিতে লাগলো । এই উত্তেজনাতেও কি আনন্দ ? ভালো লাগছে শিখার।'আজকে  কি সারাটা দিন ধরেই চলবে মনের ভেতর অস্থিরতা? সারারাত ঘুম হয় নি কিন্তু তাতে টায়ার্ড লাগছে না। শিখার মনে কি হলো সেটাই খুঁজে পাবার চেষ্টা করছে। আজকে বাইরে বেরোবে ফুটপাতে রাস্তা ধরে হাঁটবে অনেকটা দূর পর্যন্ত নিজেকে জানার জন্য।