০৪ মার্চ ২০২২

মমতা রায়চৌধুরীর ধারাবাহিক উপন্যাস পর্ব ১২১




উপন্যাস 

টানাপোড়েন ১২১
প্লিজ ভালো থেকো

মমতা রায়চৌধুরী



আজ সকাল সকাল কাজের মাসি 
এসেছে ।মাসিকে বলাই ছিল রেখার স্কুলে প্রচুর দায়িত্ব রয়েছে। মাসি কথা রেখেছে। মাসির আজ কয়েকটি বাড়তি কাজ রয়েছে।
 তাই মাসি জিজ্ঞেস করছে রেখাকে'বৌমা, বৌমা, ও বৌমা।
তখন রেখা শাড়ি পড়ছে । কুচিগুলো ঠিক করতে করতে সেফটিপিনটা মুখে ধরা অবস্থায় বলছে  ' কি মাসি কিছু বলছ?'
দরজার কাছে  মসি এসে বললো' হ্যাঁ বৌমা।'
'কি বলছ?'
'উফ বাপরে বাপ কোনরকম করে কুচিগুলো পিনাপ করে পেডিকোটে ঢুকিয়ে দিল। তারপর চিরুনি দিয়ে চুল আঁচড়াতে আঁচড়াতে বললো 'বলো মাসি ,তাড়াতাড়ি বলো।'
'বাচ্চাগুলোকে কখন কখন খেতে দেব?'
' ওই তো ঠিক ,বারোটা সাড়ে বারোটার মধ্যে দেবে। তারপর ওদিকে সাড়ে তিনটের মধ্যে দেবে খেতে কেমন ।আর তুমিও খাবার খেয়ে নিও।
তোমার কোন অসুবিধা হবে না তো মাসি?'
'না ,বৌমা।'
ড্রেসিং টেবিলের ড্রয়ার খুলে হাতরে হাতরে দুল খুঁজছে ।আসলে প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও তাড়াহুড়ো করে রেখে দিচ্ছে।দুলের একটা নির্দিষ্ট জায়গায়  রাখার কথা কিন্তু সেখানে তো নেই। কোথায় রেখেছে সেটা বুঝে উঠতে পারছে না। আমার সেই ঝুমকো কানের দুল টা কোথায় গেল খুঁজে পাচ্ছিনা। আছে এদিক ওদিক কিন্তু এখন কাজের সময় পাবো না আর একটা কথা বলি 
,'মাসি অসুবিধে হলে পাশের বাড়ি পার্থকে ডেকে নিও ,বলে দেবে বা আমাদের এই সামনের দোকানে সেন্টুদা ,ঠিক আছে । তাছাড়া চৈতি, চৈতির মা জানে ব্যাপারটা। তোমার কোন অসুবিধা হবে না ।আর  কোন অসুবিধা হলে, তুমি সঙ্গে সঙ্গে ওদেরকে বলবে। ওরা ফোন করে 
দেবে ,ঠিক আছে ।কোন টেনশন করো না।
 ট্রেনের টাইম হয়ে গেছে মাসি আর বেশি বকতে পারবো না। তুমি দরজা লক করে দাও ।ঠিক আছে?'
'ছেলে কখন খাবে?'
থাকবে না বলেই জানি। অফিস যাবে আজকে আজকে আবার কিসের অফিস কে জানে  বাবা। যাইহোক যখন বলবে ওকে খেতে  দিও আর তুমিও খেয়ে নিও ঠিক আছে ।আসছি ।টা টা।
সঙ্গে সঙ্গেই অটো দেখতে পেল হাতের ইশারায় ওকে দাঁড় করালো। 
অটোআলা কাছে এসে বলল 'বসুন দিদি।
আজকে আপনাদের যেতে হবে দিদি?'
মাঝে মাঝে এত বেশি কৌতূহল দেখালে বিরক্তি লাগে তবু রেখা বলল
' তা যেতে হবে না ।তাহলে পূজোর কাজ গুলো কে করবে?'
'ও আচ্ছা ,আচ্ছা দিদি।'
'ট্রেনের টাইম হয়ে গেছে একটু দ্রুত চালাও।
আমিতো দ্রুত চালাচ্ছি দিদি। আমিও তো ট্রেনটা ধরাবো।আসলে আমি ট্রেনের কিছু প্যাসেঞ্জার পাব আমার ই তো লাভ। '
রেখা আর কথা বাড়ায় না।
একা মনে মনে ভাবছে পুরোহিত যদি এসে যায় কি হবে ওদিকে কে জানে। পঞ্চমীদিকে তো বলা আছে ,কটা মেয়ের রাখা আছে, সব জোগাড় যন্ত্র করে রাখতে। সব ভালই ভালই হয় ।তবেই ভালো। বড়দি কত আশা করে দায়িত্ব দিয়েছেন।'
ট্রেনের খবর হচ্ছে ।স্টেশনে নামিয়ে দিল। ভাড়া মিটিয়ে দিয়ে রেখা ছুটল। এই ট্রেন মিস করলে চলবে না। 
উফ হাফ লেগে গেল অবশেষে ট্রেন পাওয়া গেল।
ট্রেনে যেতে যেতে মনে পড়ে গেল স্বপ্নিলের কথা আজ ক বছর আগের কথা পাগলের মত চেয়েছিল রেখাকে। সরস্বতী পুজোর দিন স্বপ্নীল ওয়েট করেছিল বাইক নিয়ে।
রেখা বলেছিল তার আসার কোন দরকার নেই কেন শুধু শুধু মিথ্যে মরীচিকার পেছনে ছুটছে। মানুষ তো কোন আশা নিয়েই বাঁচে। স্বপ্নিলের কোন আশাi তো রেখা  পূর্ণ করতে পারবে
 না ।তাহলে?'
আজ অনেকদিন পর আবার মনে পড়ছে। কেন এতদিন পরে আবার স্বপ্নিলের কথা মনে পড়ছে?কোন ছবি ওর কাছে নেই তবুও মনের হৃদয় আকাশে যে ছবি এঁকে রেখেছে। তাকেই যেন বারবার ছুঁতে ইচ্ছে করছে। পেসেঞ্জার এমন ধাক্কা দিলো রেখাকে ।রেখা তো কিছু বুঝে ওঠার আগেই প্যাসেঞ্জার ট্রেন থামলে ষ্টেশনে নেমে গেল অদ্ভুত ।এইভাবে কেউ ধাক্কা মারে?'
এরপর রেখা জিজ্ঞেস করতে লাগল 'কে ,কোথায় নামবে ।তার মধ্যে একজন বলল'আমি রানাঘাট নামবো।'
', বাবা, তার আগে কি আজকে কোথাও জায়গা পাওয়া যাবে না ।সরস্বতী পূজার দিনেও এত ভিড়?
আর হবেই বা না কেন এটাই তো বাঙালির ভ্যালেন্টাইন্স ডে।
আরো একজন প্যাসেঞ্জার কে জিজ্ঞেস করল আপনি কোথায় নামবেন দিদি। ও দিদি কোথায়?
ভদ্রমহিলা ট্রেনে উঠে বোধহয় একটা সুখনিদ্রা দিচ্ছিলেন ।তাই রেখার কথা থেকে বিরক্তি প্রকাশ হলো কিন্তু মুখে কিছু বললেন না।
'  আমি নামবো পালপাড়া।'
' তাহলে সিটটা আমাকে দেবেন। যেটুকু বসে
যাওয়া যায়।'
তারপরই রেখার ভাবনা চলে যায় অন্য জগতে।
রেখা মনে মনে ভাবলো রাতের আকাশে নিশ্চুপ সাক্ষী আছে ধ্রুবতারা। প্রাণের কাছাকাছি, হৃদয়ের কাছাকাছি যেতে পেরেছিল কি তারা? শুধু সেই জানে মন । হৃদয়ই শুধু জানে। 
  আর স্বপ্নীল ফিরবে না রেখার কাছে।  ভাবতে ভাবতেই পালপাড়া স্টেশনে এসে গেল ।
তিনি বললেন'ও দিদি আপনি বললেন 
বসবেন ।জায়গা নিন।'
রেখা কোন রকমে এগিয়ে আসলো  তারপর নির্দিষ্ট স্টেশন আসার সঙ্গে সঙ্গেই রেখা উঠে পড়ল।
ট্রেন থেকে নেমে রেখা দ্রুত ওভারব্রিজ অতিক্রম করে টোটো ধরল। তারপর স্কুলের গেটের কাছে এসে নামল । টোটো থেকে নামতেই দেখা গেল পঞ্চমীদি গেটের কাছে দাঁড়িয়ে।
' সব ঠিকঠাক হয়েছে তো?'
' কোন চিন্তা করবেন না । সব ঠিকঠাক করে রেখেছি। শুধু যেটুকু আমরা করতে পারবো না সেইটুকু আপনর জন্য রেখেছি।'
' ওকে, ওকে। চলো ,চলো।'
'মেয়েরা আসেনি।'
'ওদের নিয়েই তো করলাম।'
'খুব টেনশন ছিল।' 
 ' আমাকে যখন দায়িত্ব দিয়েছেন দিয়েছেন, পালন করব ই।'
জানি পঞ্চমীদি  শরীর বলেও তো একটা কথা আছে নাকি, বলো?তোমার হাতে তো সব কিছু নেই।'
পঞ্চমী একটু হাসল। হেসে বলল 'চলুন ,চলুন কিছু বাকি আছে ।দেখে নিন।'
রেখা সবকিছু দেখে নিতে নিতেই পুরোহিত মশাই এসে গেলেন ।পুজো হল ।পুজোর পর কয়েকজন সিনিয়র টিচার আসলেন ।তাদের সাথে কথা বলা হলো  ।
স্নিগ্ধাদি বললেন'পুজো হয়ে গেল রেখা?
ভেবেছিলাম অঞ্জলি দেব।
রেখা জিভ কেটে বললো এ বাবা দিদি আমাকে যদি একবার ফোনটা করতেন তাহলে ঠাকুর মশাইকে একটু ওয়েট করতে বলতাম।'
হ্যাঁ কি আর করা যাবে।
আসুন তো ভেতরে আসুন তো দিদি প্রসাদ নিন।
পঞ্চমী সব গুছিয়ে গেছে?
হ্যাঁ দিদি। এইতো মেয়েরাও এসে গেছে।
এই তোরা আয় প্রসাদ নিবি আয়।
দিদি চলুন স্টাফ রুমে চলুন।
 মেয়েদের প্রসাদ বিতরণ করে একটু স্টাফ রুমে গিয়ে বসল এর মধ্যেই ফোন বেজে উঠল।
ব্যস্ত থাকার দরুন ফোনটা রিসিভ করতে পারেনি
এবার ব্যাগ টা খুলে ফোনটা বের করতে যাচ্ছে ঠিক সেই সময়ে পঞ্চমী দি এসে বলল 'ও দিদি ,ফোন টোন পরে ঘাটবেন। আগে একটু প্রসাদ । তারপর জল খান।
'আমি কেন একা খাব? দিদিরা এসেছেন উনাদেরকে দাও ।আর তোমার প্রসাদ টুকুও 
নাও ।
সব মেয়েরা পেয়েছে!
হ্যাঁ , যারা এসেছিল,সবাইকে দিয়েছি ।আরেকটু প্রসাদ দিদিমনিদের জন্য তুলে রাখলাম ।'
'ভালো করেছো?
জোগারের বাসনপত্রগুলো ধুয়ে নি। আবার সন্ধ্যেবেলায় জোগাড় আছে তো?'
'যাও তুমি তোমার কাজগুলো সেরে নাও। এর মধ্যে কোন সিনিয়ার দিদি এসে গেলে আমি দিয়ে দেব।'
স্নিগ্ধা দি   বললেন'রেখা আসছি। এবার রিম্পা কে দেখতে পেলাম না।'
'এ বাবা ,দিদি। জানেন না রিম্পাদি তো টান্সফার হয়ে গেছে।'
অবাক হয়ে বললেন' ওমা কবে? সেকি গো?'
এইতো কিছুদিন আগে।
ও বাড়ির কাছে হলো বুঝি?
হ্যাঁ দিদি।
কবে শুনবো তুমিও চলে গেছো।
তুমি চলে গেলে স্কুল টা একটু অন্যরকম হবে এই যে সব অনুষ্ঠানে থাকো আমাদের এত আপ্যায়ন করো।
না দিদি ,কারোর জন্যই কোনো কিছু ঠেকে থাকে না ।ঠিক চলে যাবে। দেখবেন।'
জানি রেখা কিন্তু আজকাল কৃত্রিমতায় মোড়া আন্তরিকতায় বড্ড বড় অভাব।
'ঠিক আছে রেখা ।আসছি। খুব ভালো 
লাগলো ।ভালো থেকো।'
'হ্যাঁ, দিদি, ভালো থাকবেন আর এইভাবে স্কুলের সাথে যোগাযোগ রাখবেন। আসবেন ।বিদ্যালয়ের পাশে থাকবেন।'
এরপর রেখা ফোনটা ঘেটে দেখতে লাগল, বাড়ি থেকে কোন ফোন এসেছে কিনা?
' না ,কোন ফোন আসেনি। তাহলে মাসি ঠিকঠাক সামলাতে পারছে ,কোন অসুবিধা হয়নি 
একটু সন্ধিগ্ধ চিত্তে' তাহলে ফোনটা করলো কে?একটা আননোন নম্বর থেকে ফোন 
এসেছে  ।বেশ কয়েকবার মিসকল
 হয়েছে ।ফোনটা করবে ,কি করবে না ?এই দোটানায় পড়েছে রেখা।
ভাবতে ভাবতেই ফোন নম্বরটা ডায়াল 
করলো ।  ফোন টা বাজতে শুরু করেছে।
বুকের ভেতরে টিপটিপ করছে কে ফোন ধরবে কে জানে বাবা।
অপরপ্রান্ত থেকে কন্ঠ ভেসে আসলঃ
"হ্যালো
'বলছি এই নম্বর থেকে আমার ফোনে ফোন এসেছিল ।তাই আমি ফোনটা করলাম।
'কে বলছেন?'
তার আগে আপনি বলুন কে বলছেন?'
 গলাটা একটু চেনা চেনা লাগছে।
 তাহলে তো আপনি ধরেই ফেলেছেন।
 ঠিকই ধরেছেন ।বলুন তো কে ?
' ওই তো সিঁড়ি সাহিত্য পত্রিকার সম্পাদক।
'কোথায় আছেন স্কুলে?'
হ্যাঁ, আর সরস্বতী পুজো ,স্কুলে তো থাকতেই হবে?
কিছু বলবেন?
না ,না। ঠিক আছে ।আমি এমনি ফোন করেছিলাম।
ও আচ্ছা।
একটা কথা জিজ্ঞেস করবো?
'ও শিওর, বলুন।'
আপনার কোন ফুল পছন্দ?
রেখা ভেতরে একটা অদম্য কৌতূহল সৃষ্টি হলো হঠাৎ ফুলের কথা জিজ্ঞেস করছেন কেন আপন মনে ভাবল।
কি ম্যাডাম উত্তর দিচ্ছেন না।
সাধারণত যে ফুল পছন্দ আমারও সেই ফুল পছন্দ।
ম্যাক্সিমামই তো বলে গোলাপ।
রেখা হো , হো, হো,করে হাসতে লাগলো।
হাসলে হবে না ম্যাডাম বলুন না ,দরকার আছে।
স্বর্ণচাঁপা।
'এটাই জানার ছিল।
তারপর বললেন ঠিক আছে ম্যাডাম রাখছি আপনি পুজো ভাল করে কাটান।'
স্বর্ণচাঁপার প্রসঙ্গে রেখার মন চলে গেল বর্ষার সেই দিনগুলোতে বর্ষায় কি করে এই স্বর্ণচাঁপা ফুল গুলোকে স্বপ্নীল তার জন্য নৈবেদ্য সাজিয়েছিল খুব অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করেছিল রেখা এগুলো কোথায় পেলে তাতে স্বপ্নীল বলেছিল তুমি খুশি হয়েছো একরাশ মুগ্ধতা আর চোখে মুখে সেই প্রশ্ন বুঝিয়ে দিয়েছিল সে কতটা খুশি এতটাই মুগ্ধ হয়েছিল যে অনেকক্ষণ সে কথা বলতে ভুলে গেছিল সে ভেবেছিল কোথা থেকে ফুলগুলো তার জন্য এনেছে সে ?সে পরম আদরে আদরে চাপা ফুলগুলোকে তার মুঠোয় ভরে নিয়ে গভীরভাবে তার ঘ্রাণ নিতে থাকলো  সেই সুগন্ধ যেন তার হৃদয়ের প্রতিটি রন্ধ্রে রন্ধ্রে ছড়িয়ে পরলো। আবার রেখা  মৃদু স্বরে বলেছিল 'এত সুন্দর উপহার সে কখনো জীবনে পায়নি।'
কেন বারবার এই সম্পাদকের কথায় পুরনো দিনগুলো স্মৃতিতে ভিড় করে ফিরে আসে। আবার যেন তার মনে হলো কেউ যেন তার বসন্তের দরজায় নতুন করে নাড়া দিচ্ছে কিন্তু কে তার ছবিও তো কখনো সে দেখেনি অনেক কথাতে মিল খুঁজে পায়।
মনে পড়ে সেই গান 'কেন এতদিন পরে আজ তোমায় মনে পড়ে।
আমি কাঁদি নতুন করে সে তোমার ছবি ধরে।
আমার লাগছে যে অসহায় ... আমার হয়না ছোঁয়া তোমায় স্বপ্ন কেনার দরে।'
সত্যি তাই একবার সরস্বতী পুজোর সময় না জানিয়ে কেমন স্কুল গেটে এসে দাঁড়িয়েছিল স্কুল থেকে বেরোনোর সময় হঠাৎ করে তার বাইক এসে সামনে দাঁড়ায় কেমন হকচকিয়ে গেছিল রেখায় দিশেহারা হয়ে এদিক ওদিক তাকিয়ে যখন বলেছিল কেন তুমি এখানে এসেছ ,,?তখন স্বপ্নীল বলেছিল আর যদি তুমি আমার বাইকে না যাও তাহলে কিন্তু আমি এখানে দাঁড়িয়ে 
থাকবো ?বাধ্য হয়ে রেখাকে বাইকে চাপতে হয়েছিল ।সেদিনের সেই যাত্রাপথ কতটা সুন্দর ছিল। একমাত্র রেখাই জানে আর স্বপ্নীল 
জানে ।সেখানে ছিল না কোনো মলিনতা। একরাশ বিশ্বাস,.....।
শুধু এখন ভেবে কষ্ট লাগে জানি তুমি আর ফিরবে না ।নিভে যাওয়া দ্বীপ আর জ্বালবে না শুধু প্রতি নিঃশ্বাসে কষ্ট  আমি না হয় আমার মত থাকলাম ।শুধু নিজে ভালো থেকো ।অনেক ভালো থেকো আর নিজের খেয়াল রেখো ।প্লিজ নিজের খেয়াল রেখো।'

মমতা রায়চৌধুরীর ধারাবাহিক পর্ব ১২০




উপন্যাস 

টানাপোড়েন ১২০
অনুসন্ধিৎসু
মমতা রায়চৌধুরী।



উফ কাজের চাপে আর মাথা তুলতে পারছে না রেখা ।স্কুলের কাজগুলো বাড়ি বয়ে  নিয়ে চলে এসেছে। না এনেই বা কি করবে? প্যানডেমিক সিচুয়েশনে তো মেয়ের সংখ্যা বেশি নেই,  যদিও স্কুল টা খুলে দিয়েছে  ।ম্যাগাজিনের প্রকাশের গুরু দায়িত্ব তার ওপর পড়েছে । সময় বেশী নেই তাই লেখাগুলো কারেকশন করতে  এবার দিদিমণিদের হাত লাগাতে হচ্ছে ,সেগুলিকে ফ্রেশ করে লেখার জন্য। তারপর চারিদিকে কাটিং এর কাজ আছে ,কাটিং এর কাজ করতো রিম্পা দি, 
তার তুলনা নেই।  খুব মিস করছে। তবে অনুরাধাদির হাতের লেখা খুব ভালো। অনুরাধাদি বলেছেন " চিন্তা ক'রো না  তুমি কিছুটা লেখ তারপর আমাকে দিও ।আমি করে দেব।'
এরপর বিদ্যালয় সাজানো। নাভিশ্বাস উঠে যাচ্ছে। শরীরটাও বেশি ভালো যাচ্ছে না । ভালো থাকলে এরকম কষ্ট হয়না। এরমধ্যে বাচ্চাগুলো আবার অসুস্থ হয়েছে।  পারা যায়?
না গিয়ে দেখি ,কিছু খায় কিনা? এতক্ষণ ঘাড় গুঁজে লেখাগুলোকে কারেকশন করা
 হলো । মাথাটা তুলে একবার দরজার দিকে তাকিয়ে ভাবল 'আজকে তো চেঁচাল না ।'দেখি তো কি করছে ?
রেখা বাচ্চাগুলোর কাছে গেল ।কাছে গিয়ে ওদের  টেনে টেনে তুলতে হচ্ছে ,শুয়েই আছে।
ওমা একি পাইলট তুই বমি করছ?
কি বাবা এসব কি বেরোচ্ছে বমি দিয়ে, কি 
খেয়েছ ?এগুলো কি? এত ভালো জিনিস তোমাদের খাওয়ানো হয় , তারপরেও হিজিবিজি কাঠের গুঁড়ো, ইটের গুঁড়ো ,এগুলো কোথায় পেয়েছ? পুরনো দেয়ালটাকে নিচের অংশটুকু
 খু ড়ছ ,তারপর খেয়েছ?'
একরাশ বিরক্তি আর দুর্ভাবনা নিয়ে রেখা বলল
'তোমাদের খেতে দেয়া হয় না তো।'
কি বলবে? ওরা কি আর রেখার ভাষা বুঝতে পারছে? শুধু ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে আর মাঝে মাঝে রেখার গালদুটোকে এসে আদর করে দিচ্ছে।'
একটা উৎকণ্ঠা আর দুর্ভাবনা নিয়ে ভাবলো আবার ডাক্তার বাবুকে কল করতে হবে।
মনোজকে  ব্যাপারটা খুলে বলি।
রেখা দ্রুতগতিতে মনোজের ঘরে ঢুকলো।
দরজায় নক করল ।'কিছু বলবে?'
'হ্যাঁ বাচ্চাগুলোর ব্যাপারে কথা ছিল?
'কি হয়েছে?'
'দুপুরবেলা তুমি খেয়াল করো নি বাচ্চাগুলো খেয়েছি কিনা?'
"না দুপুর বেলায় ওরা তো খায় নি।'
আমি এখন গেলাম গিয়ে দেখছি তিনজন শুয়ে আছে ।ওদেরকে ধরে ধরে তোলা হলো  আসলো কাছে। পাইলট বমি করল।'
মনোজ আশ্চর্য হয়ে বলল ' কি বমি করেছে?'
'তবে আর বলছি কি সবথেকে আশ্চর্য লাগছে বমির সাথে কি বেরোচ্ছে জানো?'
 মনোজ হাঁ করে রেখার উত্তরের অপেক্ষায় থাকলো।
বমির সাথে ইটের গুঁড়ো ,কাঠের গুঁড়ো এসব বেরোচ্ছে।
'ওরা এসব পেল কোথায়?'
তোমাদের পুরনো বাড়ি না ,পুরনো দেয়ালের কিছুটা অংশ বেরিয়ে আছে আর তার সঙ্গে মেজেটার অবস্থাও ওই। ওখান থেকেই।'
'না এদের নিয়ে তো আর পারা যাচ্ছে না।
এত ভাল ভাল খাবার খাওয়ানো
 হচ্ছে ।তারপরেও এই।'
রেখাও চিন্তিত মুখে মনোজের কথাবার্তা শুনতে লাগলো। তারপর মনোজ বলল 'হ্যাঁ দেখি ডাক্তার বাবুকে কল করি।'
"আমি তো সেই জন্যই বলতে আসলাম।'
মনোজ একটু চিন্তিত ভাবে বলল'তবে এখন তো ডাক্তার বাবুকে ফোন করলেও পাওয়া যাবে না। একটু পরে ছাড়া।'
তাহলে এক কাজ করি এর আগের বারে ডাক্তারবাবু যে ওষুধগুলো দিয়েছিলেন সেগুলোই ওদের খাইয়ে দি একটু করে কি বল?'
"হ্যাঁ সেই ভালো সেটাই করো আপাতত।'
রেখা বিন্দুমাত্র দেরি না করে তাড়াতাড়ি ছুটে গেল ঘরে ওদের যে ওষুধের ডিব্বা আছে তার থেকে দেখলো কি কি ওষুধ আছে বেঁচে আছে ওষুধের শিশি টা ভালো করে নাড়ালো।
Rantac syrup হাতে নিয়ে মনোজ কে উদ্দেশ্য করে বলল 
'তাড়াতাড়ি এসো তুমি ।ধরবে। না হলে খাওয়ানো যাবে না।'
মনোজ বলল ', চলো, চলো, চলো, যাচ্ছি।'
যেতে যেতে রেখা শুনতে পেল কাকে যেন বলছে 'এসে পরে কল ব্যাক করছি।'
কার সাথে এত কথা বলে কে জানে অথচ ঘরের লোকের সঙ্গে কথা বলার সময় নেই। আজকাল আমার দিকে ঠিক করে তাকায়ও না। কপালে যেটুকু নিয়ে এসেছি সেটুকুই তো…।
মনোজ বললো' কই ওষুধ টা  কই? ভালো করে ঝাকিয়ে  নাও।'
রেখা ওষুধ টা ভালো করে ঝাঁকাতে শুরু করলো এরমধ্যে মনোজ বাচ্চাগুলোর কাছে গিয়ে বললো
' কই আমার পাই লট, আমাদের তুলি সোনা ,কই ? সবাই সব এক এক করে বেরিয়ে আসলো ।একটা বড় হাই তুলল।
একটা একটা করে ধরলো'রেখা ওষুধ খাইয়ে দিল।
খাওয়ানোর শেষে প্রত্যেককে দুজনে মিলে আদর করল ।তারপর  মনোজ বললো 'দেখা যাক কি হয়  রাত্রিবেলায় ফোন করবো ডাক্তারবাবুকে।'
রেখা বাথরূমে গিয়ে ভাল করে হাত পরিষ্কার করল । কিছুটা চোখেমুখে ঠান্ডা জল দিল কিন্তু বাথরুম থেকে জলের শব্দের সঙ্গে সঙ্গে তার কাছে ফোনের শব্দটাও শোনা যাচ্ছে । 
রেখা বেরিয়ে এসে হাতমুখ ধুয়ে মুছে নিতে নিতে একবার ভাবলো' কি যে হচ্ছে বুঝতে পারছে না সে। সারাদিন গেল এভাবেই। একটু ক্লান্তি লাগছে কিন্তু না চা খেতেই হবে। এই সময়টা কফি হলে খুব ভালো হতো। প্রতিবার শীতের মরসুমে খুব ভালো করে কফি খায় ।ভাবতে লাগল আগে স্কুল থেকে ফেরার সঙ্গে সঙ্গেই ও (মনোজ)কফি করে 
ফেলত ।দুজনের জমানো কথা যেন সেই কফি টেবিলে বসেই শেয়ার
 করত ।কোথায় গেল সেই সোনালী দিনগুলো। একটা দীর্ঘশ্বাস  ফেলে নিয়ে নিজেই গেল রান্না ঘরে। তারপর গ্যাসের চুলায় প্যানে চায়ের জল বসিয়ে 
দিল ।ভাবছিল কফি করবে কিন্তু দেখল কফি নেই ।যাই হোক গ্যাসের চুলায় প্যানেতে জল গরম হতেই দুধ দিয়ে দিল, কি করবে চা ই খাবে ।যা হবে, হবে। ভালো করে জল ফুটলে ফোটানো দুধ ভালো করে মেশালো, চা পাতা 
দিল ।রেখার যেন কেমন পাগল পাগল মনে হতে লাগলো। খুব সুন্দর গন্ধ বেরোচ্ছে চা পাতাটা  থেকে ।নতুন এনেছে আপনমনে বললো।
নিজের কাপে চা ঢাললো , মনোজের জন্য  কাপে ঢেলে, কাপ দুটো নিয়ে মনোজের ঘরের দিকে গেল।একদম ভালো লাগছে না। একটু মুখরোচক কিছু খেতে ইচ্ছে করছে। চানাচুর নিল। মনোজ ঘরে গিয়ে চা টা নামিয়ে বলল '
' চা ।বিস্কিট খাবে তো?'
মনোজ তখন ফোনে কার সঙ্গে কথা বলছিল । 
' চায়ের সঙ্গে বিস্কুট নেবে ।'
'দাও একটা  '।
'বেশ খোশ মেজাজে গল্প করছে ।কে ফোন করেছে মনোজকে ?'
কার সাথে কথা বলছে।তাচ্ছিল্যের স্বরে আপন মনে বলল' বলুক গে যার সাথে খুশি। '
ঘর থেকে বেরিয়ে যেতে যেতে শুনতে পেল হাসির শব্দের সঙ্গে বিয়ে 
শব্দটা ।রেখা ভাবতে লাগল কার বিয়ে?
 এত হাসিখুশি নিজের টেবিলে বসে চা খাচ্ছে আর পেপারটা উল্টাচ্ছে।'
'বাহ ,আবার লেখা বেরিয়েছে 
স্বপ্নীলের ।অসাধারণ ।কি দারুন লিখেছে। এত ভালো লাগছে, মনটা ভাল হয়ে গেল। এক চুমুক চা খেয়ে, বাকি স্বপ্নিলের লেখায় নিজেকে ডুবিয়ে দিল।চা ঠান্ডা হয়ে গেল। ক্লান্তি দূরে চলে গেল। যেমন ছন্দ ,তেমনি বাস্তবতা, কি অসাধারণ ভাবে ফুটে উঠেছে।
হঠাৎই মনোজের গলা পাওয়া গেল 'রেখা ,রেখা ,রেখা. আ. আ. আ...।
মনোজ একদম বাইরে বেরিয়ে এসে চিৎকার করে বলল 'কার ভাবনায় মগ্ন বলো তো তুমি ?তোমাকে কখন থেকে ডাকছি ,পাড়ার লোক বোধহয় এবার ছুটে আসবে আমার ডাক শুনে।
রেখা একেবারে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো বলল  হ্যাঁ, কি বলছো ?বলো?'
সুরোফোন করেছিল ? আবার আজকে  ফোন কেটে দিল ।তুমি এত বেয়াক্কেল হয়ে যাচ্ছ কেন বলতো? কোন কান্ডজ্ঞান নেই ।কি হচ্ছে এসব। কি জানি বাবা।
মনোজ মেজাজ দেখিয়ে আবার ঘরে চলে গেল।
ভাবলো তাইতো সে এতটাই মগ্ন হয়ে পড়েছিল, আনমনে চায়ের কাপে চুমুক দিতে গিয়ে দেখল  'ওরে বাপরে কি ঠান্ডা হয়ে গেছে ।সত্যিই রেখার খুবই ভুল হয়ে গেছে। কি জন্য ফোন করছে কে জানে?'
রেখা একটু ভয়ে ভয়ে আর উদ্বিগ্নচিত্তে মনোজের ঘরে গেল ।দেখে মনে হচ্ছে এক মনে ল্যাপটপের দিকে তাকিয়ে বসে কি যেন মাঝে মাঝে টাইপ করে যাচ্ছে। রেখার উপস্থিতি টের পেলো কিনা বোঝা যাচ্ছে না। এর মধ্যেই একটা টিকটিকি ধপ করে পড়ল নিচে ।দুজনার মাঝে যেন দুজন দুজনের উপস্থিতিটাকে স্মরণ করিয়ে দিল । মনোজ রেখার দিকে তাকিয়ে বলল' কি ব্যাপার তুমি এখানে?'
না মানে সুরোদা কেন ফোন করেছিল সেটাই জানার জন্য এসেছি।
কোন কথার উত্তর দিল না ল্যাপটপে টাইপ করেই যাচ্ছে।।
 খুবই কি দরকার?
মনোজ বলল' দু দুবার এরকম হল। তুমি এমন ভাব দেখাও যেন সারা রাজ্যের কাজ তুমি শুধু একাই করো। অন্য কেউ করে না। '
'তুমি এভাবে কেন আমার সঙ্গে কথা বলছ ?'
তুমি প্রায়ই আজকাল আমার সঙ্গে এভাবে কথা বলো।
 কেন ?কেন বলতো?'
'কেন তুমি বোঝনা ?কেন কথা
 বলি ?'
রেখাএকটু ভেতরে ভেতরে ফুসছে '
বলল 'না আমি বুঝিনা  ।তাই তো তোমাকে সরাসরি জিজ্ঞেস করছি। বলো কি জন্য?'
'তুমি কি আমার সঙ্গে ঝগড়া করার মুড নিয়ে এসছে এখানে ।তাহলে সরি এখন তোমার সঙ্গে ঝগড়া করার আমার কোন মুড নেই।'
Ok
রেখা আবার চলে আসলো।
কাপ  খুব যত্নে রেখে দিল ।তারপর ভাবল একটু নিজের বিছানায় গিয়ে ঘুমিয়ে নেবে ।এতগুলো কথা  ভেবে ভেতরে ভেতরে খুব কষ্ট হচ্ছে।
কিন্তু রাত্রে খাবার  তো তৈরি করতে হবে আগের মত মনোজর মন ভালো থাকলে আমার এত কাজ অসুবিধার কথা জানলে ও বলত' থাক কিছু করতে হবে না  ।আমি হোটেল থেকে নিয়ে আসছি কিন্তু আজকাল সেটাও করে না।
কি করবে ভেবে পাচ্ছে না। রান্নাঘরে গিয়ে ফ্রিজ থেকে আটা বের করে গোটা চারেক রুটি করে ফেলল ।আর রুটির সঙ্গে খাবার জন্য ব্রকলি ফ্রাই বানিয়ে ফেলল।  আর একটা করে ডিম সেদ্ধ।
বাচ্চাগুলোর জন্য অল্প করে খাবার নিয়ে গেল খাওয়াতে। অল্প পরিমাণে খেলো। হাতে ওদের এঁটো থালাটা নিয়ে রাখতে যাবে তখনই কলিংবেলের আওয়াজ ''জয় গনেশ,' জয় গনেশ , জয় গনেশ দেবা'। 
রান্না ঘর রেখা বলে উঠল ' এখন আবার কে আসল?'
এবার মনোজই  গিয়ে দরজা খুলল।
এ কি পার্থ, এই সময়?
'এসো ,এসো ,ভেতরে এসো ।
রেখা দেখ,  পার্থ এসেছে। '
হাতের  এঁটো থালা নামিয়ে
'আরে পার্থ ভাই , এই সময়?
সব ঠিক তো,?
"হ্যাঁ এমনি সব ঠিক আছে  একটা কথা বলার জন্য আসলাম বৌদি।"
 রেখা
উৎসুক ভাবে মনোজের মুখের দিকে তাকাল ,সঙ্গে সঙ্গে পার্থর মুখের দিকেও।
সে রকম ব্যাপার কিছু নয় বৌদি।'
'মা একবার আপনাকে যেতে বলেছে।'
'কেন কিছু ব্যাপার আছে?'
পার্থ হেসে বলল 'সেটা আপনি মায়ের কাছ থেকেই শুনে নেবেন। এটাই বলার জন্য এসেছিলাম । অবশ্যই কিন্তু যাবেন কেমন।'
পার্থ চলে যাবার পর রেখা ভাবতে লাগলো 'আজকের পার্থ র চোখ মুখে ফুটে উঠেছে দুশ্চিন্তামুক্ত এক অনাবিল ভালোবাসার মুক্ত আকাশ।'এতদিনের টানাপোড়েন কি তবে শেষ হলো? ভাবতে ভাবতেই রেখা র হৃদয়ে থেকে গেল একরাশ কৌতূহল ।
অনুসন্ধিৎসু মন রহস্যের সাগরে ডুব দিল।

কবি সানি সরকার এর কবিতা "খাঁচার বাইরেটা যেমন"




খাঁচার বাইরেটা যেমন

সানি সরকার



স্বপ্নে এত গোলাপ ফুটেছে বাগানে 
ওই শীতের গোলাপ 

খাঁচার বাইরেটায় এত হাসি, আনন্দ... 

মায়া-ডাক এমনি, ঘূর্ণির মতন 
ভেতরে তোলপাড়... 

কিন্তু ঘুর্ণির সময়কাল নির্দিষ্ট 

সূর্যের থেকে প্রকৃত আলো 
আর কিছু নেই,লক্ষ্য করো 
ঈশ্বর হাসছেন,একইভাবে সর্বত্র 

মোঃ ইসমাঈল এর কবিতা





রীতি
মোঃ ইসমাঈল 

আহা কতই না সুন্দর দেখতে ফুল
চোখ আসে জুড়িয়ে হয়ে যায় ব্যাকুল। 
যখনই নাকে আসে ফুলের ঘ্রাণ
পরম শান্তিতে জুড়ায় এ মন ও প্রাণ। 

মৌমাছিরা ফুল থেকে করে মধু আহরণ
তোমারই মনের গহিনে আমি করিবো বিচরণ।
ফুল ফুটে বসন্তের ঋতুতে
আমি হারিয়ে যাবো কেবল শুধু তোমাতে।

ফুল ফুটে ফল ধরিয়ে যায় সে ঝড়ে
মানুষ অভিনয়ের মাঝে যায় যে মরে।
অবশেষে হয়ে যায় ফুলের ইতি
অপরদিকে মানুষের বেঁচে থাকে শুধুই স্মৃতি।

এম এ শোয়েব দুলাল এর কবিতা




নদীও ভালোবাসা
এম এ শোয়েব দুলাল

নদীকে ভালোবেসে
নদীর কাছে এসো
নদীর মতো আপন করে
আমাকে ভালোবাসো।

নদীর জলে দেখবো শুধু
উতাল পাতাল ঢেউ
তুমি থাকবে আমি থাকবো
থাকবে না আর কেউ।

হেসে হেসে কথা বলে
হবো দিশেহারা
আমাদের দেখে হাসবে শুধু
আকাশের তারা।

কথা গুলো গুছিয়ে রাখো
সময়ের জালে
তোমার আমার ভালোবাসা
হবে মহাকালে।

মনি জামান এর ধারাবাহিক উপন্যাস পর্ব ১৫




ধারাবাহিক উপন্যাস
সেদিন গোধূলি সন্ধ্যা ছিল
( ১৫ তম পর্ব ) 
মনি জামান

রাত্রি শেষে ভোরের আলো ফুটলো ফজরের আযান ধ্বনিতে মুখর চারিদিক,মোমেনা বেগম ভোরে পাড়ার লোকজন ডাকলো তার আর যেন তর সইছে না,চারি দিক যত ফর্সা হচ্ছে ততো দলে দলে পাড়ার সবাই হাজির হচ্ছে মোমেনা বেগমের বাড়ি মনে হয় আজ কোন মহাযজ্ঞ অনুষ্ঠিত হবে।
আজ দুশ্চরিত্রা আসমার বিচার হবে মানুষের ভিতর উৎসাহের কমতি নেই,সবাই এসে হাজির হয়েছে,ঘর থেকে আসমাকে বের করে আনা হলো,পাড়ার গণ্যমান্য ব্যাক্তিরা এসে সবাই উপস্তিত হলো,আসমা এক পাশে মুখ নীচু করে দাঁড়িয়ে আছে।
মোমেনা বেগম বললেন,আপনরা সবাই উপস্তিত আছেন এই মেয়ে আমার বংশে চুনকালি মাখিয়েছে,আজ বিচার আপনাদের উপর ছেড়ে দিলাম আপনাদের মতামত বলুন কি শাস্তি দেওয়া যায়।
আসমা যে অপরাধ করেছে সে নিয়ে এক জন মন্তব্য করলো যেহেতু আসমা চরিত্রহীন খারাপ একটা বাজে মেয়ে,সে হাতে নাতে ধরা পড়েছে তাই তার শাস্তি হওয়া উচিত তার শাস্তি হোক মুখে চুন কালি মাখিয়ে এ গ্রাম থেকে বের করে দেওয়া।
কেউ বলছে এমন বিচার হোক যাতে ভবিষ্যতে কেউ আর এমন অপরাধ এই গ্রামে আর না করে,কেউ বলছে মাথার চুল কেটে গলায় জুতার মালা পরানো হোক।আসমা জানে আজ তার কথা কেউ বিশ্বাস করবে না তাই নির্বাক দাঁড়িয়ে আছে,সারা রাত ঘুম হয়নি শরীর ভিষণ ক্লান্ত লাগছে বাকরুদ্ধ সে।
একজন বলল,আসামির কাছে কিছু জিজ্ঞেস করা হোক সে দোষী না নির্দোষী,
তারও তো কিছু বলার থাকতে পারে
সবাই সমস্বরে বলে উঠলো হ্যাঁ আসামি কিছু বলুক,প্রশ্ন করা হলো আসমাকে যে ঘটনা ঘটেছে তা নিয়ে তোমার কিছু বলার থাকলে বলতে পারো,আসমা কিছুই বললো না,আসমা নিরবে সমস্ত অপরাধ আজ নিজের কাধে তুলে নিয়েছে,কারণ সে জানে আজ তার কথা কেউ শুনবেনা ,জীবনে কি চেয়েছিল আর কি পেতে যাচ্ছে সে।
আজ তার রাজকুমার জিকুর উপর খুব অভিমান আসমার,কেন সে তাকে ছেড়ে চলে গেল,বিচারে সিদ্ধান্ত হল আসমার মাথার চুল কেটে গলায় জুতার মালা পরিয়ে সমস্ত গ্রাম ঘুরানো হবে,ঘুরানো শেষে এ গ্রাম ছাড়া করে দেওয়া হবে তাকে।
মোমেনা বেগম হুকুম করলো আসমার মাথার চুল কাটার জন্য,একজন এগিয়ে এসে আসমার মাথার চুল কাটতে শুরু করলো,কোন প্রতিবাদ করলো না আজ আসমা। এ নির্মম ভাগ্য পরিহাস মেনে নেওয়া ছাড়া তার কিছুই করার নেই তার আজ সে জঘন্য যড়যন্ত্রের স্বীকার তাই নিরবে বসে রইলো চুপচাপ চোখে জল ঝরছে অঝোরে,আজ এ নিষ্ঠুর পৃথিবীর প্রতি আসমার আর কোন অভিযোগ নেই,জিবনের সব চাওয়া পাওয়া আর কষ্ট গুলো সব নিজের কাছে জমা রেখেছে কারো কাছে প্রকাশ করলো না।
আজ ছেলে নয়নকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছে আসমার,কিন্তু আসমা জানে তাকে দেখতে দেওয়া হবেনা তাই ইচ্ছেটা গোপনই রেখে দিল।আসমাকে সব চুল কেটে নেড়া করা হলো তারপর গলায় জুতার মালা পরানো হলো মুখে চুন কালিও মাখাতে মোমেনা বেগম ভুল করলো না।
আসমাকে পাড়ায় পাড়ায় ঘুরানো হলো
পাড়ার মানুষেরা ছিঃ ছিঃ বলে মুখ ঘুরিয়ে নিচ্ছে, দলে দলে ছোট ছোট ছেলে মেয়েরা আনন্দ উল্লাস করে ইট পাটকেল ছুড়ে মারছে আসমাকে,আর বলছে পাগলি পাগলি করে পিছু পিছু চিৎকার করছে,পাড়ার এক ছেলে ফিরোজকে সংবাদ দিল আসমার এই বিচারের নির্মম ঘটনার কথা।
ফিরোজ শুনে ছুটলো মোমেনা বেগমের বাড়ি,এসে যা দেখলো তা কোন মানুষ করতে পারে ফিরোজের জানা ছিলো না,ফিরোজ দেখতে পেলো অনেক লোকজন আসমাকে টানতে টানতে নিয়ে যাচ্ছে ফিরোজ লোকজনকে বলল,আপনারা আইন হাতে এভাবে তুলে নিতে পারেন না,সবাই বাড়ি চলে যান প্রশাসন আছে আসমা অপরাধী হলে তারা বিচার করবে।
ফিরোজের কথা শুনে সবাই মনে মনে একটু ভয় পেয়ে যার যার বাড়ির দিকে চলে গেলো,ফিরোজের দু'চোখে পানি আবেগ তাড়িত কন্ঠে বলল,ভাবি আমাকে কেন একটি বার খবর দিলেননা।আসমা নির্বাক কিছু বললো না,আজ আসমার কিছুই নেই সে সর্বহারা সে বোবা হয়ে গেছে।
ফিরোজ আসমাকে বলল,ভাবি চলেন আমার বাড়ি বলে আসমাকে সাথে নিয়ে বাড়ির দিকে রওনা হলো,সবাই বলতে শুরু করলো দেখ দেখ ফিরোজ ঐ মাগীর সাথে,কেউ বলল জানি জানি বলে সবাই হাসা হাসি করলো।
ফিরোজ শুনেও না শুনার ভান করে আসমাকে সাথে নিয়ে বাড়ি পথে হাঁটা শুরু করলো।বিকালে ফিরোজ বলল,ভাবি আজ থেকে আপনি আমার বাড়িতে থাকবেন,আমি বাজারে যাচ্ছি গিয়ে ডাক্তার পাঠাচ্ছি বলেই ফিরোজ তার ছোট বোন জান্নাতকে ডেকে বলল,ভাবির কাছে থাকিস কোথাও যাসনা যেন, বলে ফিরোজ চলে গেলো ভবদা বাজারে,হাট থেকে আসমার জন্য শাড়ি ব্লাউজ ঔষধ আর কিছু ফল কিনে নিয়ে ফিরোজ বাসায় এলো।
রাত নামলো আসমা জান্নাতকে বলল,বোন একটা কলম আর একটা কাগজ দেবে আমাকে,জান্নাত বলল,কেন দেবনা ভাবি আমি এনে দিচ্ছি,একটু পর জান্নাত কাগজ আর কলম এনে দিলো আসমাকে।গভীর রাত মনের কষ্টে আসমা লিখলো
-------
কষ্ট তুই একটু অপেক্ষা কর,
আজ রাত ভর সমুদ্র উত্তাল 
হয়নি।
স্রোতম্বী নদী হয়তো মোহনা 
খুঁজে পায়নি,সমুদ্রের ঠিকানা।
গাঙচিল উড়ে উড়ুক কষ্টেরা 
খুরে খায় খাক।
তবুও একটু অপেক্ষা কর,পূর্ণ 
একটি পূর্ণিমা উদিত হোক আজ।
ভোরের আলো ফুঁটলে না হয় 
সলিল সমাধির একটি গল্প 
লিখিস।
উত্তাল সমুদ্রে ভেসে যাওয়া 
একটি মৃত লাশের। 

লিখা শেষ হলে আসমার দু'চোখ ভেঙ্গে অঝোর ধারায় যেন বৃষ্টি পড়তে শুরু করলো,আসমা ভাবছে এ পৃথিবীতে তার আর কেউ আপন রইলো না।সন্তান থেকেও নেই,মা বাবার বাড়ি এ কলঙ্কিত মুখ নিয়ে আসমা আর কখনো ফিরে যাবে না।তার রাজকুমার জিকুর কাছেই ফিরে যাবে সে,আসমা সারা রাত ঘুমালোনা মনে হয় ঘুম ও তার শত্রু হয়ে গেছে।
ভোরের আলো ফুটলো আসমা চোখ বুজে শুয়ে আছে,আস্তে আস্তে বেলা বাড়ছে। সকাল আটটায় ফিরোজ আজ ঢাকায় যাবে,আসমাকে ডাকলো ভাবি নাস্তা খেয়ে নেন।আসমা উঠে ফ্রেস হয়ে নাস্তার টেবিলে এসে বসলো,জান্নাত ফিরোজ আর আসমাকে নাস্তা দিল,নাস্তা খাওয়া শেষে আসমা ফিরোজকে বলল,একটা কথা রাখবে ভাই,ফিরোজ বলল, কি কথা বলেন ভাবি।
আসমা বলল,আমার একটা ডায়রি আছে অনেক লেখা একসময় তোমার দৈনিকে ছাপাবে ভাই বলে ফিরোজের হাতে রাতের লেখাটাও দিয়ে বলল তোমার কাগজে দিও।ফিরোজ বলল,ঠিক আছে ভাবি কাল আপনার এই লেখাটা দৈনিক ভবদা সাহিত্য পাতায় প্রকাশ হবে,আমি আজ ঢাকায় যাচ্ছি একটু কাজে কাল সকালে ফিরবো, কোন কিছুর দরকার হলে জান্নাতকে বলবেন,বলেই ফিরোজ ব্যাগ পত্র নিয়ে বেরিয়ে গেলো।
আসমা সারারাত ঘুমালো না জীবনে কি চেয়েছিলো আর কি পেলো,ভাবছে আজ কলঙ্কিনী সে এ মুখ এই সমাজে কি করে দেখাবে।সমাজের এই ঘৃণ্য যড় যন্ত্রের কাছে আজ পরাজিত সে।


চলবে....