২৭ জানুয়ারী ২০২১

সাবা সাবরিন




পাকদণ্ডী


তোমার হৃদয়ের পাকদণ্ডী বেয়ে সেই কবে 

থেকে, উঠছি তো উঠছিই। এই ওঠার কি 

কোনও শেষ নেই? না কি বারবার পড়ে 

গিয়ে আবারও উঠি? শুধু উঠছি এটুকুই 

মনে থাকে। ওঠার আগে পিছের সব স্মৃতি 

যে বিস্মৃতির অতলে হারিয়ে যায় বারবার। 

প্রতিবার উঠতে থাকা যেন এক একটি 

নতুন পৃথিবীর সূচনা। মহা বিস্ফোরণের 

পর যেভাবে নতুন পৃথিবীর সূচনা হয় ঠিক

সেভাবেই তোমার দিকে যাওয়ার পথটাও 

একটু একটু করে প্রশস্ত হয়। হয়তোবা-

কোনদিন ঠিক পোঁছে যাব তোমার কাছে, 

তখন আর পথের কোন কষ্টই আমার মনে 

থাকবে না। তখন তুমি আর আমি মিলে 

নতুন পৃথিবীর সূচনা করব। যে পৃথিবীতে 

শুধু প্রেম ছাড়া আর কিছুই থাকবে না।

সালমা খান




মায়া ঘোর 



স্মৃতি গুলো খন্ড খন্ড করে জোড়া

দেই রোজ আমি 

অংক কষে গণনা করি সমগ্র  জায়গায়  তুমি ।

আয়ত্ত করবো বলে, আর্তস্বরে ডাকি বহুবার

দূর থেকে সাড়া দেয়  অতীন্দ্রিয়  কে এক আঁধার ,

তোমাকে যতই  বাঁধি বাহুডোরে

হাত ফসকে  চলে যাও অনেক  দূরে।

যতই  তোমাকে মেলাতে  যাই অমৃতে গন্ধ গরলে ,

হয় না সব, ভেসে যায়  অন্ধ জলে।

যখনি তোমার চোখে চোখ  রাখি

আদ্যপ্রান্ত  আমুল ট্র্যাজেডি 

হাসে  নির্মম  নিয়তি।

যতই আমি মায়ার ঘোরে হাঁটি

অবচেতনের গহীনে দেখি 

আকাশ জুড়ে  অজস্র তারবাতি,

ছুঁয়ে  দিতেই হোঁচট  খেয়ে পড়ি।

মোঃ হা‌বিবুর রহমান




মুখচ্ছ‌বি ভা‌সে তবুও হৃদয়প‌টে



তার মু‌খের‌ দি‌কে ‌কেন যেন আর তাকা‌তেই পারিনা,

অ‌নেকবার তাকা‌নোর চেষ্টা ক‌রেও তাকা‌তে পা‌রি‌নি।

হে‌রে যে‌তে যে‌তেও হারিনি আবার ভুল‌তেও পা‌রি‌নি।

বার বার তাকা‌নোর চেষ্টা ক‌রেও অব‌শে‌ষে মন চায়‌নি।

অথচ, তার প্রতি তেমন ঘৃণা বা অ‌ভিমানও জন্মায়‌নি।

কিন্তু কেন যেন তার দি‌কে আমার তাকা‌তে মন চায়‌নি।

অ‌নেক ভে‌বে‌ছি, বেশ গ‌বেষণা ক‌রেও উত্তর মে‌লে‌নি।

মন থে‌কে তাহ‌লে কি তার নাম চিরত‌রে মু‌ছে ফেল‌বো?

জা‌নি এটা কখনই সম্ভব নয় বা মো‌টেই সহজসাধ‌্য নয়,

আর তা‌কে যতই ভুলার চেষ্টা ক‌রিনা কেন পা‌রি না তা

কেন যেন সে ছায়ার মত ক‌রেই অনুসরণ ক‌রে আমাকে,

তার মুখচ্ছ‌বিটা ভে‌সে উ‌ঠে  আমার নরম হৃদয়পুরে‌টে।

রীনা দাস


 


কালীপূজো


কৌটি টাকার কালী পূজো !

কি এসে যায় তাতে ?

কেউ তো আর এক পয়সা

দেয়না আমার হাতে ?


হাজার খুশীর নিত্য লহর

চলছে আনাগোনা

আমার মনে খুশীর ছোঁয়া

পাইনা এককনা ৷


যেদিকে দেখি আলোর মালা

জ্বলছে পথ, ঘাট

সে আলোতে আমার মনে 

বসেনা চাঁদের হাট ৷


পূজোর আলোয় সবার মন

আনন্দে যায় ভরে

খিদের জ্বালায় ঘুম আসেনা

ছটফট করি ঘরে ৷


মায়ের পূজোয় খুশী হোতাম

পেতাম যদি ভাত

রুক্ষ মেজাজ ঠান্ডা হতো

খুশীতে হোতাম মাত ৷


ঝাঁ চকচকে হোকনা শহর

বহুতল শত বাড়ি

গরীব,দুঃখী কষ্ট পেলে 

হয় কি মনোহারি ?

এন এ আলম ( সীমু )




কবি


ওহে কবি তুমি রবি তুমি কখনো চাঁদের জোছনা 

তুমি প্রেম তুমি বিদ্রোহ

তুমি নদী আটকে দেওয়া বালুচরের অটল মোহনা 


ওহে কবি তুমি জ্বলন্ত অগ্নির জ্বলন্তঅক্ষর,

মনের জ্বলন্তভাষা। 


ওহে কবি তুমি শীতল প্রেমের রাজপুরুষ 

তুমি মিঠা, ঝাল কিছু তামাশা। 


ওহে কবি তুমি পাতালপুরীর রূপকথা

আবার,  

তুমিই বিধবার সাদা বসনা। 


ওহে কবি তুমি অনাহারক্লিষ্ট মায়ের করুণ চোখের যাতনা 

ওহে কবি তুমি ক্ষুধার্ত দেব-শিশুর 

ভাবলেশহীন ভাষা বোঝা এক সাধনা 


ওহে কবি  তোমার কবিত্বশক্তি যেন কখনওই

কলম চালাতে থামেনা। 


ওহে কবি তুমি রবি

তোমার আলো যেন কভু নিভে না।

মহুয়া চক্রবর্তী




 ভালোবাসা 



ভালোবাসা -  তাকে কি দেখেছো কখনো !  সে কেমন হয় গো , তার স্পর্শ পেয়েছো কি? জীবন জুড়ে শুধু অবহেলার চোরাবালি, যেখানে শুধু তলিয়ে গেছি আমি। 

 ভালবাসাকে শুধু দূর থেকে দেখেছি,

দূর থেকেই সে দিয়ে গেছে হাতছানি

যখন কৃষ্ণচূড়ার বুকে, লাল আবিরের দল খেলে,

 আমি তখন বিষাদ মনে শূন্য পথ পানে চেয়ে থাকি, সে আসবে ভেবে। 

মনের ঘরে জীবন প্রদীপ খানি জ্বালিয়ে রাখি।

তুমি আসবে বলে, কামিনীর সাজে সেজে, 

আশার প্রদীপ জ্বালিয়ে হাত

নিজের প্রাণের মাঝে।

কবে আসবে তুমি,

সম্মুখের পথে

দীপ্ত শিখাটি নিয়ে আছি

তোমার পথপানে চেয়ে   পুড়বে বলে রয়েছে আশায় 

আমার নিরব হিয়া।

কবে পাবো তোমার ভালোবাসার

ছোঁয়া।

মিলন ভৌমিক




কল্পনার দেশ


পৃথিবী যদি কল্পনার দেশ হতো

মানবজাতি থাকত সুখে।

সীমাহীন দারিদ্রতা পৃথিবীতে

যদি না থাকতো, থাকতো মহাআনন্দে।

দুঃনীতি,কম'হীন,দূবলশ্রেনী

যদি না থাকতো, প্রতিবাদ, বিক্ষোভ,ধম'ঘটে,

 হতোনা গণআন্দোলন।

সাইকোথ্যাব যদিনা থাকতো

ওরা অনেক বছর বাঁচত।

শক্তিধর রাষ্ট্রযন্ত্রের দাদাগিরি

শোষনও শাষনে যদিনা থাকতো

ছোট্ট রাষ্ট্র গুলো শান্তি পেত।

বুদ্ধিজীবীরা পৃথিবীময় যদি একহতো

স্বর্গের দেশ হতো।

মহাভারতে রথের কল্পনা থেকে

রকেটের যদি হয় সৃষ্টি,

যুগের শেষে কল্পজগৎ

হতে পারে বাস্তব মুখী।

কল্পদেশে থাকবো বেঁচে

অনন্তকাল ধরে,

বিদায় চাইনা পৃথিবীর কাছে।

টুলটুল দেবনাথ (শিপ্রা) নিবন্ধ




মধুসূদনের কাব্য প্রতিভা

মধুসূদনের কাব্য প্রতিভা(১ম ভাগ)


ছাত্রজীবন থেকেই মাইকেল নিজের কবি শক্তির পরিচয় দিয়েছিলেন। কবি প্রধানত ইংরেজি ভাষাতে কবিতা রচনা করতেন এবং একদিন তিনি মহাকাব্য রচনা করতে সক্ষম হবেন বলে মনে করেছিলেন। সে সময় রিচার্ডসন তার কবিতা পড়ে মুগ্ধতা প্রকাশ করেছিলেন। ভূদেব মুখোপাধ্যায় ছিলেন মধুসূদনের বন্ধু এবং তিনি স্বীকার করে গিয়েছেন যে ইংরেজি সাহিত্যে তাদের সময়ে কোন ছাত্রই মধুসূদনের সমকক্ষ ছিলেন না।

                 

কলেজ জীবনে কবি তার এক বন্ধু কে বলেছিলেন, 'I happened to be a great poet, with I am almost sure I shall be'. তার এই কথা পরবর্তীকালে প্রমাণিত হয়েছিল।আ ১৮৪৩ সালে তিনি আত্মীয়-স্বজন পিতা-মাতা কাউকে না জানিয়ে খ্রিস্টান ধর্ম গ্রহণ করে মাইকেল নামে অভিহিত হন। ফলে তিনি হিন্দু কলেজে পড়ার অধিকার হারান এবং পরে Bishop's কলেজে ভর্তি হন। তারপর ১৮৪৮সালে একদিন সকলের অজ্ঞাতসারে মাদ্রাজে চলে আসেন। মাদ্রাজে তিনি শিক্ষকতা শুরু করেন পাশাপাশি ' পত্রিকা পরিচালনার কাজ হাতে নেন।মাদ্রাজে থাকাকালীন সময়ে তিনি তামিল,তেলেগু, গ্রিক ও হিব্রু ভাষার উপর অধিকার অর্জন করেন। পূর্বে তিনি সংস্কৃত ইংরেজি এবং ফরাশী ভাষাতেও বিশেষ দক্ষতা অর্জন করেছিলেন। মাদ্রাজ থেকে প্রকাশিত 'Madras Circulator' Magazine 

এ মধুসূদন দত্ত 'Timothy pen poem' ছদ্মনামে A Vision Captive Lady' শীর্ষক একটি ইংরেজী কাব্যে পৃথ্বীরাজ সংযুক্তার কাহিনী তুলে ধরেন। সময়টা ছিল ১৮৪৮-১৮৪৯ খ্রিস্টাব্দ ।তিনি এই কাব্য রচনা করেg অনেকটা খ্যাতি লাভের আশা করে থাকলেও ফল হলো তার বিপরীত। তার উপর ইংরেজ সম্পাদকের কাছে অনেক ভর্তসিৎ হন। পাশাপাশি বেথুন সাহেব মধুসূদনের কাব্য পাঠে তার প্রভূত প্রশংসা করে থাকলেও গৌড় দাস লিখেছিলেন যে,মধুসূদন যদি মাতৃভাষার শ্রীবৃদ্ধির জন্য তার প্রতিভা নিয়োজিত করেন তবে তিনি স্বদেশের ও উপকার করবেন এবং নিজেও সুখ্যাতি লাভ করবেন।গৌরদাস বসাক একথা বন্ধুকে জানিয়ে দিয়ে বেথুন সাহেবের সাথে সহমত হয়ে মধুসূদনকে বাংলা কাব্যে অবতীর্ণ হতে অনুরোধ করেন।

স্বপন কুমার ধর



 চলো, কাজ করি


না, আর বসে থাকবো না, চলো কাজ করি,

বসে থাকার অর্থই,

মস্তিষ্কে আজন্মার জন্ম দেওয়া,

প্রতিনিয়ত বেঁচে থাকার লড়াইয়ের জন্য,

কারো কাছে হাত পাতা, মাথা নিচু করা,

কিছু আবেদন-নিবেদন-আর্তি একান্তে,

দয়ার ভিক্ষে না পেলে, চোখে জল, ঝাপসা চারিদিক,

মনে অশান্তি, জীবন হতাশময়।


না, আর বসে থাকবো না, চলো কাজ করি,

বাধা-বিপত্তিতে হার মানবো না,

নিজের পায়ে দাঁড়াবো, আগামীর পথ খুলবো,

আলো আসবেই, অন্ধকার কাটবে- ই,

গাছের পাতারা উদ্বেল হবে,

সমুদ্রের ঢেউ ও পা ছুঁয়ে যাবে,

সীমাহীন আকাশের একপ্রান্ত থেকে,

অন্ধকারময় জীবনে শুকতারা ও দেখাবে,

আলোর প্রবেশ দ্বার, জীবন হবে গতিময়,

না, আর বসে থাকবো না, চলো কাজ করি।

আইরিন মনীষা




আবার কি হবে দেখা 



বেলা যে আমার পড়ে এলো 

স্মৃতিফলকে রয়ে গেলো, 

ভাবি বসে এই অবেলায়

আসবে কি ফিরে আঙ্গিনায় । 


বলছি আমি তোমার কথা

বিরহে বাড়ছে মনের ব্যথা,

অভিসারে তুমি আসতে যখন

খুঁজে পেতো সুখ মননে তখন। 


আবার কি হবে দেখা বন্ধু

দুইজনে গড়বো  প্রেমের সিন্ধু,

মিলনের সুরে হারাবো দুজনে

দূর দূরান্তের ওই নির্জনে...।


অপেক্ষার প্রহর হয় না শেষ 

রয়েছি এখনো তোমাতেই বেশ,

আসো যদি ফিরে কাননের পর

আমার জীবনে আসবে নতুন ভোর।