২৫ ডিসেম্বর ২০২০

শুভমিতা বিশ্বাস



স্মৃতির শীত পোশাক



শীত এলেই আমার মনে পরে যায় পুরোনো রোদ্দুরের কথা

যে রোদ্দুরের প্রতিদিন সাতরঙের মাদুরটা বিছিয়ে দিতাম

নরম উলের ভেতরে নিজের ঠান্ডা শরীরটাকে গুছিয়ে রাখতাম

ঠাম্মার শালের ভেতর মুখ গুঁজে শীত আর আমি লুকোচুরি খেলতাম

এই শীতকালেইতো,গোটা ছাদটা পশমের রাংতা দিয়ে মুরিয়ে দিতাম

পুরোনো বালিশগুলো যখন, মায়ের হাত ধরে রোদ পোহাতে আসত 

আমি তখন দৌড়ে গিয়ে মায়ের  হাত ধরে লতিয়ে যেতাম

গোটা শীতকাল জুড়ে গল্প লিখতাম,

বুড়ো আকাশের কাছে ছড়া শুনতাম

কুয়াশাতে বসে আগুনের সিদ্ধি লাভ করতাম

শীত এলেই আজও মনে পরে যায়

মায়ের হাতের বোনা নীল হলুদ সোয়েটারের কথা

মনে পরে যায় পুরোনো কুয়াশা,আলসে রোদ্দুর

মনে পরে যায়,চিলেকোঠার পাশে সোনার মতো উজ্বল শাল গায়ে আমার

 ধূসর রঙের ঠাম্মাকে।

পরাণ মাঝি



শিরোনামহীন


হয়ত জেনে গেছে পাখি সজনের স্বাদ 

অভিজ্ঞতার ফসলের ধারা উপধারা সব উন্মাদ।


শাবককে তাই ডানায় ঢেকেছে, বন্ধ দরজা, বুকের ভেতর ডুব সাঁতার,

সাদা খাতায় তাই মাটি খুঁড়ে সাজাচ্ছি আক্ষরিক কবর ।


লকলক করে বেড়ে ওঠা পংক্তিরা শিরোনামহীন ---


ঋণ বাড়লেও পা রেখেছি সবুজ ঘাসে, 

প্রতিক্ষারা হাঁটু মুড়ে বসে আছে 

                     এ জীবন্ত শবের চারপাশে।  


চূর্ণী নদীর  জলে ভাসিয়ে দিলাম আজ হৃদয়ে  যা ছিল সবি তা,

তুমি ভালো থেকো রক্তিমা , ভালোবেসো শ্রেয়সী কবিতা !



মুন চক্রবর্তী

 


শিশিরে শিশিরে


কবিতা আবৃত্তি হলে শব্দ সুন্দর হয়ে উঠে

অপেক্ষার সকাল শিশিরের আলতো ছোঁয়ায় ঘাস প্রাণ  পেয়ে থাকে

শিশিরের বিশাল রাতের কথা জানে শুধু দারিদ্রতা

মূখের আর্দ্রতা মেটাতে বিশাল আয়োজন পার্লরে।

এই শিশিরের শুভ্রকান্তিতে ভূস্বর্গ সেজে উঠে আলাপনে

হলুদ ফ্রকের বাহারিতে শস্য পূর্ণ বসুন্ধরা

পাকা ধানের আইল ধরে ছেঁড়া ফ্রকেরা বেপরোয়া

দুটি শালিক আর চড়ুইয়ের মাতামাতি রৌদ্দুরে

শিশিরে শিশিরে জমে থাকা চোখের জল দারিদ্রতা।

সকাল জানান দেয় দু’টি রুটির তাগিদ পথে প্রান্তরে 

বিলাসিতায় ডাইনিং টেবিলে বাহারী শিশির

পাহাড়ি নেমে আসে কমলার বনে শিশিরে শিশিরে!

রবিরাম হালদার



শপথ নিন

মানবিকতা ধুলায় গড়ায়

মনুষ্যত্ব খায় খাবি,

মানুষের আচরণ দর্শনে

পশুত্বে যাবে ভাবি৷

সীমান্তে সংগ্রামের হুঙ্কার

বাতাসে বারুদের গন্ধ,

জাগুক মনুষ্যত্ব মূল্যবোধ

রক্তপাত হোক বন্ধ৷

আমরা সকল মানুষ জন

মূল্যবোধের পাঠ নেব

আদর্শবান মানুষ গড়তে

সঠিক দিশা দেব৷

ভাবছেন দেরি হয়ে গেছে

হোক না দেরি বন্ধু,

মানুষের মত মানুষ গড়তে

লঙ্ঘিব বাধার সিন্ধু৷

আগামী দিনে মানুষ গড়তে

শপথ নিন আজ,

শিক্ষক বন্ধুরা শুরু করুণ

মানুষ গড়ার কাজ৷

পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ জীব মানুষ

ভুললে চলবেনা ভাই,

আসুন আমার মানুষ বন্ধু

মনুষ্যত্বের গান গাই৷৷


মুনমুন ইসলাম মুনা



পাঁজরের হাড়


আমি পূর্ণিমা 

মৃদু আলোর রানী ভরা জ্যোৎস্না,

ধারকৃত পাঁজরের হাড়।

ধূসর কালো কার্পেটের বুকে আমার 

সকল প্রোজ্জলিত এক গ্রহ 

উজ্জ্বলতা সবি তোমার।

তাই বলে কি তুমি চেয়েছিলে?

পূর্ণিমা হয়ে আলো দিয়ে যাবো আর

ক্ষয়ে যাবে অমাবস্যায়।

এক চিমটি আদরের লোভ

মেঘের ঢেউ এসে করে কান্নায় কলরব।

সন্ধ্যা বাতির আলো হয়ে আসি ভোরের ঘোর

অবধি জ্বলে আমার ভালোবাসার জ্যোতি। 

অবশেষে মৃদু আলোর ভরা পূর্ণিমা দীর্ঘশ্বাস

ফেলে হারিয়ে যায় আরেকটি শূন্যতার রাত্রি।

তবুও তুমি বুঝলে না,,,

আমি যে তোমার ধারকৃত পাঁজরের হাড় 

স্বর্গীয় নিখুঁত শিল্পে বানানো দুই আত্মার 

ভালোবাসার সাথী।

মাহমুদু হাসান গালিব

 


মেঘবলাকার ইতিকথা


মেয়েটি মেঘ হতে চেয়েছিল,

ডিঙি নৌকোর ছেঁড়া মাস্তুলে আঁকতে চেয়েছিল মদিরতার আমেজ,

বলাকার সাদা ডানায় ভেসে;

 এক আকাশ লিখতে চেয়েছিল নভোনীলের বুকে

খেয়ালখাতার আস্তিনে লুকোতে চেয়েছিল;

কিছু উদ্দাম যাতনাপুঞ্জ....

যা স্থবির করে বারবার,মুছে দেয় কল্পলোক;

রাতের বিষণ্ণতাঘেরা নির্মোহ কেকাধ্বনির মতো।

কোনো একদিন,ঝাপসা কুয়াসার চাদরে,

দেখা গিয়েছিল রামধনুর রঙমিলান্তি,

সাময়িক;হয়তো বা অলিক

অথবা কোনো আগামী রূঢ়বাস্তবের আগাম খতিয়ান

বোঝেনি; মগ্নঘোরাশ্রিতা শ্রান্ত দিগাঙ্গনা,

জোনাকির আনম্র আলোয় দেখেছিল

বিধাতাকে একটু একটু চুঁইয়ে পড়তে;

কালের শিখিপাখা রঙ বদলেছিল ক্ষণিকেই।

মেয়েটি আর উড়ে বেড়ায় না,

আঁধারিয়া বাতাস ঢেকে শুয়ে থাকে গুটিসুটি,

গম্ভীর স্বরে গোঙায় যন্ত্রণায়; বিশ্বাসভঙ্গের ভাঙাচাবি

আলগোছে ঝোলে পিঠের ওপর,

জঙধরা তালাটায় আর মোচড় দেওয়া হয় না,

খুলে যায় না কোনো আশ্চর্য গুহার জাদুদরওয়াজা

যেখানে থরে থরে রূপকথা লুকিয়ে থাকে।

মেয়েটি এখন বর্ষা হয়েছে,

কারণ-অকারণে ঝরে পড়ে সাহারার বুকে,

প্লাবন নামায়;তছনছ করে যাপনচিত্র

একূলের ধ্বংসায়ণ লেখে ওকূলের সৃষ্টিসূত্র,

ভাঙার মাঝে গড়ে ওঠার এক নৈসর্গিক পিছুটান 

তবু কোনো একদিন গুরুগুরু স্বরে;

কিছু ব্যথা নেমে আসে সময়ের বুক চিরে,

বিদীর্ণ করে শুষ্কহৃদয় শোনায় বিরহিয়া অঙ্গীকার,

প্রলয় শেষে;বৃষ্টিস্নাত ছাতিমফুল রোদ মেখে হাসে

সময় চলে আবার সময়ের রাস্তায়;

শুধু এক মেঘদূতী হারায় বিস্মৃতির অন্তরালে।

রিনা নাসরিন


 মা তুমি


মা তুমি সতি সাধ্য তুমি অর্ণপূর্ণা 

তুমি জন্মধাত্রীর গর্ভধারণী মা 

তুমি নচিকেতা তুমি অন্নেশ্বা। 

তুমি নির্যাতিত তুমি দেশের অহংকার। 


তুমি স্নিগ্ধ মায়াবিনি শরৎ এ উড়া 

শান্তির প্রতীক

তুমি অশ্ব তুমি তপস্যা আবার তুমি পূর্ণিমা 

রাতের চাঁদ। 

তোমার যেমন নাম যশ আছে তেমনি আছে

তোমার বদনাম

শত্রুদের দমন করে হয়েছো তুমি অম্লান। 


পিতার অহংকার তুমি তেমনি সবার 

চোখে জয়তী

স্বামীর ঘরে হয়েছো রমণী

ক্ষণে ক্ষণে বাদলের ধারায় বদলে যায় নাম 

তুমি ছাড়া অচল পুরুষ তবু ও পাবেনা 

কখন ও দাম।

কবি সৈয়দা



হিরন্ময় সুখ


আজ কি আকাশ দেখ‌লে?

চোখ ঝাপসা হ‌লে অাকাশ মেঘাচ্ছন্ন ঠে‌কে

‌রে‌লি‌ঙে চিবুক ঠে‌কি‌য়ে বৃ‌ষ্টি বিন্দু মু‌খে মে‌খেছি,জা‌নো।

আহ্ , আহা মন ছলছল দী‌ঘির মৌনতায় ডু‌বে‌ছি

আজ একবা‌রো কি ডা‌য়েরীর পাতাটা কো‌লে নি‌য়ে ময়ূরের পালক ছুঁ‌য়ে‌ছি‌লে?

কি হ‌বে ,স্মৃ‌তির ঝলক তু‌লে এনে ঝু‌লি‌তে ভ‌রে


ঝর্নার জ‌লে মুখ তু‌লে চোখ ভি‌জি‌য়ে‌ছি ,‌শো‌নো।

ম‌নে হ‌চ্ছি‌লো ডু‌বে যা‌চ্ছি ,ডু‌বে যা‌চ্ছি অতল গভী‌রে 


আজ কি হ‌লো এরপর ,ব‌লি আসো

 থাক ,ব‌লে ত‌বে কি হ‌বে? শুন‌বেনা । বড্ড আনমনা হ‌য়ে‌ছো । কি ভা‌বো অমন ,ব‌লো‌তো।


‌দেখ‌ছোনা লি‌খে রে‌খে‌ছি তন্ময়তা বু‌কের হিরন্ময় তটভূ‌মি‌তে,‌

যেখানটা‌তে বুনন ক‌রে গে‌লে মে‌ঘের ঘনঘটা।

ওয়াসিম খান



পথিক 


পথিক ছুটে অজানা পথে 

কিসের এতো তাড়া?

থমকে পথে হঠাৎ ভাবে 

ঠিকানা তার তো হারা ।


পিছনে ফিরে তাকাই দুরে 

কিসের এতো মায়া?

শূন্য পথে পথিক একা

দেখে নাকো কারো ছায়া ।


দুপুর বেলা কিসের টানে 

কান্দে কেন মন?

পথিক মনে চৈতী বায়ে

পোড়ায় সারা ফাগুন।


দিবস শেষে পথিক পথে 

অকারনে সে হাসে।

ঝড়ের রাতে চাঁদটি খোঁজে 

বৃথাই হিসাব কষে ।

ওয়াহিদা খাতুন



বড়োদিন


বড়োদিনের ছুটি

খেলবো লুটোপুটি ;

মণ্ডামিঠাই গজা

হবে ভীষণ মজা;

পড়াশুনা নাই

আনন্দে গান গাই;

মনের সুখে গাবো

ব্রিটানি কেক খাবো ;

মোটরশুঁটি কড়াই

গরম লুচির লড়াই!!