১৬ সেপ্টেম্বর ২০২১

দীপান্বিতা রায় সরকার


ডাক 


ডুবে গেলে অথৈ 

ঘুমের  ভিতর ঘুমের আবেদনেই

ভ্রম ছিল, কখনও মৃত্যু  খুঁজিনি 


 এবার তো হতে পারি পার,

 সন্ধ্যার আঁধার জোনাকির আলো

এসো, নিমগ্ন হও, আমাকেও অন্তত এতটুকু জানো 


রেখ না কিছু শস্যের মজুতে 

জন্মান্তরে পিঠে গেঁথে দাও ঘ্রাণ 

বীজ থেকে বীজে, প্রবাহ সমীপে দাও প্রাণ... 


সহস্র বিন্দুতে জমে থাকা এই সমুদ্র, মন, আর 

ডুবুরি শরীর, স্তরে স্তরে জমে থাকা আলো 

এসো নিমগ্ন হও, এবার অন্তত  আমাকেও এতটুকু জানো

পিয়াল রায়


যদি কাউকে বলা যেত


যদি কাউকে বলা যেত 

কত হৃদয় ডুবেছে এখানে আপন রক্ত পানে

ঝড়ের আঁচলে দাফন মাসুম ফুলের প্রাণ

কত বুলবুল নিহত রাজার খেয়ালে পুড়ে

কালো মেঘে মেঘে ঘেরাও কত হৃদমর্মর গান

কত বাগিচাকে নিয়ে গেছে টেনে মৃতদের চোরাটানে 


মাটিও এখানে শায়িত কত ছলনার কৌশলে 

প্রতিদিন কত দীর্ঘশ্বাসে হয়রান কিসমত

ধীরে ধীরে এসে এখানে ঠেকেছে প্রস্থান নির্ভর

কত পথিকের অশ্রুক্লিষ্ট বিষণ্ণ পারাবত

ধুলোয় উড়েছে হৃদয়ের শব প্রেমের কপট ছলে 


মাটির মর্মে কান পেতে দেখো তুমি 

মাটির যত শোরগোল দাগ মাটির ওপরে শেষ 

নিচে পৃথিবীর গোপন কোনায় বেদাগ চারণভূমি


তাহমিনা শিল্পী


গভীর ঘুমের রাত্রিবাস


আধখানা বিমর্ষ চাঁদের আলোয়

স্বপ্নপোড়া চোখে জমিযে রাখি

ভগ্নাবশেষ জীবনের যাবতীয় গদ্য-পদ্য

আয়োজন করে বলবো,তার ফুরসৎ নেই।

সবার এত তড়িঘড়ি,

গলার কাছে আটকে যায় হা-হুতাস 

পাখি হলে ভালো হত

অন্তত দু একজনের পিছু নেয়া যেত

কিচিরমিচির করে খোলা যেত যত কথার ঝু্লি

নয়ত নীল সরোবরে খেলা যেত ডুব-সাঁতার।

বাতাসে ছড়াত  নতুন গান,

তারপর সব ভুলে গভীর ঘুমের রাত্রিবাস।


মোঃ ইমরান হোসেন


কবির মৃত্যু, কবিতার মৃত্যু


একজন বললেন, আজকে কবিতার মৃত্যু হবে

আরেকজন বললেন কবিতার নয়, আজ কবির মৃত্যু হবে

উৎসুক জনতা মূক হয়ে দাড়িয়ে আছে

তাদের আশা, হয় কবি নয়তো কবিতার মৃত্যু উপভোগ করা!

সকলে আনন্দ চায়; মৃত্যু চায়; মানে মৃত্যুর ভেতর দিয়ে আনন্দ চায়

এই কবিতা যদি বেঁচে থাকে ; 

উৎসুক জনতার দাঁতের চোয়াল খুলে পড়বে কবিতার শব্দ উচ্চারণ করতে গিয়ে

কান বধির হয়ে যাবে, শুদ্ধ বাংলায় ঢেউ তরঙ্গের মতো গালিগালাজ শুনে

চোখ খসে পড়বে নিজেদের অপকর্মের দৃশ্য কবিতা উৎপাদনের ছাউনিতে দেখে।

অতএব কবিতার মৃত্যু হোক

মুদ্রার একপিঠে অন্ধকার থাকলে অপর পিঠ চোখ দিয়ে দেখা যায়!

তাই কবির বাঁচার সম্ভাবনা আছে। কিন্তু কবি বাঁচবে না!

কবিকে মরতেই হবে,কবিকে আত্মহত্যা করানো হবে

কবি বেঁচে থাকলে উৎসুক জনতার কান আবার বধির হবে;

শাস-রোধ হয়ে ব্রেইন স্ট্রোক ঘটবে।

ফলে জনতার কোটি চোখ জন্ম নিতে হবে। 

প্রতি জন্মের সাথে - সাথে চোখ গলে খসে পড়বে।

কেননা কবি আবার কবিতা লিখবেন।

কিন্তু দুঃখের বিষয়, চোখ তো একবার জন্ম নেয়

অতএব কবির মৃত্যু হবে, কবিতার মৃত্যু হবে।


গোলাম কবির


 নিজস্ব নদী 


 সবারই যে একটা নিজস্ব নদী আছে তা

 শুনে পরিচিত বন্ধুদের মাঝে কেউ কেউ

 আমাকে পাগল ভেবে বসে আছে! 

 আবার, কেউ এটাকে মেয়াদ উত্তীর্ণ

 মাদকদ্রব্যের ফল বলে ঠাট্টা করতেও

 পারে কিন্তু আমি এটাই মানি! 

 তাই, যখন মন খারাপ থাকে আমি তখন 

 প্রিয়তম নদীর সাথে মন খুলে কথা বলি!

  দেখি কখনো আমার কষ্টের কথা শুনে

  ওরও চোখ দুটিও জলে ভরে ওঠে,

  ও তখন নিজেরই আবেগ সামলাতে না 

 পেরে বন্যা বইয়ে দেয়, 

 যা শুধু আমিই টের পাই। 

 আমার যখন মন ভালো থাকে -

 তখন নদীটার সামনেই গুনগুন করে 

 গান গাই, ও তখন আমার গান শুনে 

 খিলখিল করে হাসতে থাকে, 

 কখনোবা রসিকতা করে বলে -

 এই বুড়োবয়সেও ঢঙ গেলো না তোমার ! 

 আবার ধরো, হঠাৎ করেই আমার 

 ইচ্ছে হলো নদীর গান শুনবো, 

 তখন অমাবস্যা কিংবা পূর্ণিমার রাত 

এসবকিছু বিবেচনায় আসে না আমার!

 নদীর সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে থেকে অথবা

 ওর তীরে বসে থেকে চুপচাপ থাকি, 

মনেহয় - ও যেনো আমার সামনে গান

করছে মিহিসুরে! কখনো তা ভাটিয়ালি,

 কখনো বাউলদের মতো সুরে 

আবার কখনো মনেহয় ঠিক সুবীর নন্দীর মতো

গলায় আমাকে শুনিয়ে যাচ্ছে, 

" একটা ছিলো সোনার কন্যা, মেঘবরণ কেশ ! " 

এতোসব কিছুর পর কি করে তোমরা বলো,

 আমি ঠিক বলছি না! 

আসলে প্রত্যেকটা মানুষের হৃদয়েই 

তো থাকে একটা প্রবহমান নদী! 

তা তোমরা মানো কিংবা না ই মানো!


 hhh

পূর্ণিমা ভট্টাচার্য ( টুকুন )


আয় বৃষ্টি


বৃষ্টি তোর সকালবেলা আসার কিসের তাড়া,

তখন আমার অনেক কাজ হয়না কিছুই সারা।

আসবি তুই দুপুর বেলা আমার অবসরে,

ভিজবো তখন জড়িয়ে তোকে

সবার অগোচরে। 

তা না হলে সন্ধ্যের পর আকাশ যখন কালো,

ঝমঝমিয়ে ঝরিস তখন থাকিস এলোমেলো।

বারান্দার একটি কোনে চুপটি করে বসে,

দেখবো তোকে বিভোর হয়ে চায়ে চুমুক দিয়ে।

ঝড়বি যে তুই অঝোর ধারায় জারুল শাখা বেয়ে,

আনমনে তে তোর  গান যে উঠবো মাঝে গেয়ে।