১৯ নভেম্বর ২০২১

রাবেয়া পারভীন এর ছোট গল্প" স্মৃতির জানালায়" (১ম পর্ব)





স্মৃতির জানালায়
(১ম পর্ব) 
রাবেয়া পারভীন

                                                                      কি যে হয়েছে ঢাকা শহরের  রাস্তাঘাটের  অবস্থা  ভাবতেই মেজাজ খারাপ হয়ে যায়। যানজট লেগেই আছে। কিছুতেই যেন সঠিক সময়ে কর্মক্ষেত্রে  পৌঁছার কোন উপায় নেই।  চারপাশের আটকে পড়া না না রকম যানবাহনগুলির দিকে তাকিয়ে বিরক্তিতে  কপাল কুঁচকে উঠল মাহতাব সাহেবের।  রোদটাও ভিষন কড়া। এই সকাল সাড়ে নয়টাতেই ভিষন তেতে উঠেছে। তবু রক্ষা তিনি গাড়ীর ভিতরে বসে আছেন। রিক্সা, অটোরিকশা আর বাস যাত্রীদের  কথা চিন্তাই করা যায়না। মনে পড়ে গেল  একসময়  তিনিও এইসব রিক্সা অটোরিকশার  যাত্রী  ছিলেন। অবশ্য  তখন  ঢাকা শহরের এইসব যানজটের কোন অস্তিত্বই ছিলনা।  এক মাইলের  ভাড়া ছিল চারআনা। তখন এই চারআানা বাঁচাবার জন্য প্রায় সময়েই পায়ে হেঁটে যাতায়াত করতেন। সে সব দিনের কথা মনে পড়লে মন খুব ভারাক্রান্ত  হয়ে উঠে,  মাঝে মাঝে হা্ঁসিও পায়!  হায়রে!  দুর্ভাগ্যের দিন,  সে সব দুর্ভাগ্যের সময় পার হয়ে  সৌভাগ্যের সিড়িতে উঠতে  কতই না সংগ্রাম  করতে হয়েছে। আজকের এই যে,  নিজের পয়সায় কেনা আরামদায়ক মোটরগাড়ীতে বসে আছেন তিনি , এ তার নিরলস সংগ্রামের। সফল প্রাপ্তি।  
চলবে.....

মমতা রায়চৌধুরী'র ধারাবাহিক উপন্যাস "টানাপোড়েন

কান্ত মনেই লিখে চলেছেন লেখক।  তার নিত্যদিনের  আসা  যাওয়া ঘটনার কিছু স্মৃতি কিছু কল্পনার মোচড়ে লিখছেন ধারাবাহিক উপন্যাস "টানাপোড়েন "





টানাপোড়েন (৪৭)

বোঝাপড়া
মমতা রায়চৌধুরী

' বাংলার  মুখ আমি  দেখিয়াছি,
 তাই আর পৃথিবীর রূপ 
খুঁজিতে চাই না আর'-
জীবনানন্দ দাশের কবিতার এই লাইন দুটি রেখার বারবার মনে পড়ছে ।জন্মভূমি ,জন্মভিটে এ যে কি আত্মিকটান ।শুধুমাত্র যারা তাকে ছেড়ে দূরে আছে তারাই বুঝতে পারে মায়ের নাড়ির টান ।এসব ভাবতে ভাবতে হঠাৎ কাকিমা বললেন' হ্যাঁ রে তোর পঞ্চানন কাকার কথা মনে আছে ননী ?'
রেখা বলল 'গাড়ি করে আসার সময় কাকার দোকান টা দেখলাম। আমি তোমাদের জামাইকে দোকানটা দেখালাম। কেমন আছে গো কাকিমা পঞ্চা কাকা?'
কাকিমা কিছুক্ষন চুপ করে থাকলেন।
রেখা আবার জিজ্ঞেস করল  'ও কাকিমা , পঞ্চাকাকা কেমন আছেন?'
কাকু বললেন ' সবাই একে একে ছেড়ে চলে গেছে রে ননী। আমি অভাগাটাই পড়ে আছি। (কাঁদতে শুরু করলেন)।
রেখা বলল ' এ বাবা কবে?'
কাকিমা বললেন' ১ বছর হবে।'
রেখা বললো  'কি হয়েছিল পঞ্চা কাকার?'
কাকু বললেন 'সেদিন যে চলে যাবেন কে জান তো ননী ?আমরা দুজনে মিলে গল্প করলাম, ঠাকুরদালানে বসলাম ।তারপর যে যার বাড়ি চলে  এলাম ।কিছুক্ষণ পরে  এসে পঞ্চার নাতনিটা খবর দিল। মানা যায় কি বল?'
রেখা বললো  'এভাবে হঠাৎ চলে গেলেন মানুষটা?'
কাকিমা বললেন'হ্যাঁ রে।'
রেখা বলল  'সব কি গ্রামের প্রাণপুরুষ একে চলে যাচ্ছেন?'
কাকু বললেন'আগের মত গ্রাম আর নেই রে? হিংসা,দলাদলি রাজনীতি... গ্রাস করেছে।'
রেখা বলল 'আর বুলু জেঠিমা?'
কাকিমা কাঁদতে শুরু করলেন।
রেখা বলল  'ও কাকিমা কাঁদছো কেন? বলো না বুলু জেঠিমা?'
কাকিমা বললেন' আছে ।না মরে বেঁচে?'
রেখা বললো' কেনো এ কথা বলছো?'
কাকিমা বললেন  'পাগল হয়ে গেছে।'
রেখা বলল  ,ও বাবা ,কি করে?'
কাকিমা বললেন  'সবার ই তো সন্তান রয়েছে ,সব অমূল্য সন্তান।'
রেখা বলল  'নীলুদা ,নীলুদা এখানে থাকে না?'
কাকিমা বলল  'না সে তো স্কলারশিপ পাওয়া ছেলে ।সে তো বিদেশে চলে গেছে আর ছোট যে থাকে ।সে তো বাড়িতে বউকে নিয়ে নিত্য অশান্তি ।বুলু জেঠিমা কত সৌখিন মানুষ ছিলেন তার হাল যদি দেখবি ,দুই চোখ ফেটে জল বেরোবে ননী ।'
রেখা বলল 'কাকিমা ,জেঠিমা কে দেখতে পাবো?'
কাকিমা বললেন  'আমি আছি তো আমার সঙ্গে যাবি দেখে আসবি।'
রেখা বললো  'ঠিক আছে।'
মনোজ বললো 'সবই তো ঠিক আছে ।তুমি বাড়ি ফিরবে না?'
রেখা বলল 'এই তো মাত্র আসলাম বাবা, এরইমধ্যে বাড়ি বাড়ি করছো?'
মনোজ অবাক হয়ে বলল-'এই আসলে ?ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখো কটা বাজে? বাইরে এসো তাহলে বুঝতে পারবে সূর্য অস্তচলগামী।'
রেখা দেখল ঘড়িতে সাড়ে পাঁচটা বাজে।
কাকিমাকে বলল'আজকে আর বুলু জেঠিমাকে দেখতে যাওয়া হবে না কাকিমা ,বাড়ি ফিরতে হবে?'
কাকু কাকিমা দুজনেই অবাক হয়ে বললেন' সে কিরে থাকবি না ননী?'
রেখা বললো  'কি করে থাকবো কাকিমা ?বাড়িতে আমার তো  বাচ্চা আছে?'
কাকু বললেন  'বাচ্চা আছে ?তোর আবার বেবি কবে হলো?'
কাকিমা বললেন 'কি রে আমাদেরকে খবরটাও দেবার প্রয়োজন মনে করিস ননী'?
রেখার মনোজ দুজনেই হো হো করে হেসে উঠলো।
রেখা বলল  'কাকিমা -কাকু, তোমরা পারোও বটে ।তোমরা ছাড়া আমার কে আছে বলো? এত বড় ভালো খবরটা তোমরা জানতে পারতে না?'
কাকিমা বললেন 'তাহলে ,তাহলে কার বাচ্চা?'
মনোজ বলল  'কাকিমা আমাদের একটি স্ট্রীট ডগ আছে। তার নাম হচ্ছে মিলি, আর তার বেবি হয়েছে চারটে। সেগুলোকেই ও লালন পালন করছে।'
কাকু বললেন' দারুন ব্যাপার তো ননী?
'তাহলে তোর নাতি নাতনীদের কি নাম রেখেছিস?'
রেখা উৎসাহের সঙ্গে বলল'আমার একটি নাতনি আর তিনটি নাতি।'
কাকিমা বললেন  'বাহ ,বাহ।'
রেখা বলল ' ওদের নাম পাইলট, কর্নেল ,ক্যাপ্টেন আর মেয়েটার নাম হচ্ছে তুলি।'
কাকু বললেন  'বাহ খুব সুন্দর নাম রেখেছিস তো ননী।'
রেখা বলল ' জানো কাকু -কাকিমা। ওরা এত ভালো, কি বলবো তোমায় ।
আর আমার মিলিটাও যেন একটা বড় বেবি?'
মনোজ বলল  'কাকিমা ওদের গল্প যদি রেখা শুরু করে,ও শেষ হবে না আজকে। গুছিয়ে নাও তাড়াতাড়ি।ওঠো। ফিরতে হবে তো?'
কাকিমা বললেন  'এটা কি বলছে বাবা ।এতদিন পরে এসেছো বাড়িতে ।থাকবে না বাড়ির মেয়ে?'
মনোজ বলল 'ও কাকিমা আমার কোন ব্যাপার নয় ।তাহলে ও যদি থাকে থাকুক না ।আমাকে তো ফিরতেই হবে।'
কাকিমা বললেন' তাই কখোনো হয় বাবা। একসাথে এসেছো ।তুমি থাকবে না সেটা কি ভালো দেখাবে?'
মনোজ  বলল ' না দেখানোর কি আছে কাকিমা ?আমার তো কাজ আছে ।অফিসে আছে ।তারপরেই বাচ্চাগুলো আছে ।ওদের খাওয়ানোর ব্যবস্থা করতে হবে তো ?দুজন একসঙ্গে থাকা যাবে না?'
কাকিমা রেখার দিকে তাকিয়ে বললেন '  কি বলছে জামাই?'
রেখা বলল 'ও তো ঠিকই বলছে কাকিমা?'
কাকিমা বললেন' তাহলে একটা দিনের জন্য থাকবি না ননী?'
রেখা বলল 'আমারও তো স্কুল আছে কাকিমা। সে নয় স্কুলটা আমি ম্যানেজ করে নেব কিন্তু তোমাদের জামাইয়ের অফিস আছে। ওর খাবার তৈরি করা তারপর সেই বাচ্চাগুলো রয়েছে। ঝামেলা আছে?'
কাকিমা বললেন' একান্তই যদি জামাই বাবাজি থাকতে না পারে, তাহলে তুই একটা রাত থেকে যা না মা? আমাদের ভালো লাগবে।'
রেখা বললো  , থেকে  যেতে পারলে আমারও ভালো লাগতো ।যতই হোক এতদিন পরে এসেছি। নিজের গ্রামটাও একটু ঘুরে দেখতে পারতাম।'
মনোজ বলল'আজ তো সন্ধ্যা হয়ে গেল ।তুমি আর আজকে গ্রাম ঘুরে দেখতে পারবে না ।তোমাকে তাহলে দুদিন থাকতে হবে।'
কাকিমা উৎসাহের সঙ্গে বললেন  'তাহলে থেকেই যা দুদিন।'
এরমধ্যে ফোনের রিং হয়ে যাচ্ছে। কেউ ফোন ই তুলছে না।
মনোজ শেষে বিরক্ত হয়ে বলল  'রেখা' তোমার ফোন বেজে যাচ্ছে।'
রেখা বলল  'আমার ফোন?'
মনোজ বলল ' তোমার নয় তো,কি আমার ফোন ?তোমার ব্যাগে?'
রেখা বললো  'এই যা মনে হচ্ছে রিম্পাদির ফোন জানো তো, পৌঁছে বলেছিল ফোন করতে ।ছি ছি ফোন করতে ভুলে গেছি।'
রেখা ছুটে গিয়ে ব্যাগ খুলে ফোনটা ধরতে গেল।
এরমধ্যে ফোনটা কেটে গেল।
রেখা ফোনটা খুলে দেখছে পাঁচবার মিস কল হয়েছে।
এবং এই পাঁচটি মিস কল ই  রিম্পাদি করেছে।
রেখা নিজেই ফোন করলো 'ফোনে রিং হতে লাগলো 'যতবার দেখি মা গো তোমায় আমি ।সাধ মেটেনা...।'
এবার ফোনটা রিসিভ করল অপরপ্রান্ত থেকে বলল 'হ্যালো'।.
রেখা বলল ' রিম্পাদি?'
ফোনের অপরপ্রান্ত থেকে বলল ' না। মা তো একটু কাজ করছে।'
রেখা বলল 'তোতাই?'
তোতাই বলল  'হ্যাঁ ।কে ?রেখা মাসীমনি?'
রেখা বলল  'হ্যাঁ ।কেমন আছো সোনা?'
তোতাই বলল ' ভালো আছি মাসিমনি ।তোমরা ভালো আছ সবাই?'
রেখা বলল 'হ্যাঁ ।ভালো আছি। তোমার লেখাপড়া কেমন চলছে?'
তোতাই বললো  'ভালোই চলছে। কিন্তু স্কুল খোলা নেই বলে বন্ধুদের খুব মিস করছি মাসি মনি।'
রেখা বলল ' হ্যাঁ ।সে তো ঠিকই ।এই তো ১৬ নভেম্বর থেকে  আবার স্কুল খুলে যাবে।'
তোতাই বলল  'হ্যাঁ ।সেই আনন্দেই আছি তো। কিন্তু?'
রেখা বললো  'কিন্তু কি মা?'
তোতাই বলল 'স্কুল তো সাড়ে নটা থেকে ।কি করে যাব? টিউশন পড়ে আসতে আসতেই তো নটা বেজে যাবে।'
রেখা বলল  'হ্যাঁ ।সেটা একটা সমস্যা জানিস তো? তবে তোদের একটা প্লাস পয়েন্ট আছে ,তোদের তো জোরাজুরি নেই। তোদের যেদিন মনে হবে যাবি?'
এর মধ্যেই দেখি রিম্পাদির গলা পাওয়া যাচ্ছে ।'এতক্ষণ কার সঙ্গে কথা বলছিস তুতু?
বন্ধুদের সঙ্গে এত কি কথা রে?'
তোতাই রেগে গিয়ে বলল 'তুমি তো শুধু আমাকে বন্ধুদের সঙ্গে গল্প করতেই দেখো। এটা বন্ধুদের ফোন ?এটা তো রেখা মাসির ফোন।'
রিম্পাদি আঁচলে হাত মুছতে মুছতে এসে বলল 'তুই এদিকে আয় বাবু ,জলটা একটু ভর একোয়া গার্ড থেকে। আমি ফোনটা ধরছি।'
তোতাই বলল ' ওকে।'
রিম্পাদি বলল 'হ্যাঁ রে রেখা তোকে আমি ফোন করতে বলেছিলাম না?'
রেখা বলল  'সরি, সরি রিম্পাদি একদম ভুলে গেছি,।'
রিম্পাদি বলল  "না রে এটা তো হওয়ারই কথা ।এতদিন পর গেছিস ।আমি এমনি তোর সঙ্গে একটু মজা করলাম।'
রেখা বলল  'আমরা ভালভাবেই এসে পৌঁছেছি।'
তোতাই বলল 'মা সবকটা বোতল ভরা হয়ে গেছে এবার?'
রিম্পাদি বলল  'রেখা কথাটা শুনতে পেলি?ভরা হয়ে গেছে। এবার কি করবে ?ভরা হয়ে গেছে এবার তুমি রুমে চলে যাও । পড়তে বসো।'
তোতাই বলল 'ok'
রেখা বলল  'না গো রিম্পাদি ।আমাদের তোতাই খুব ভালো মেয়ে ।কত কথা শোনে বলো তো? না হলে বয়সন্ধিকালের যে সমস্ত সমস্যা হয় ছেলেমেয়েদের নিয়ে ,ওর ক্ষেত্রে কিন্তু সেরকম হয় নি? কি বলো?'
রিম্পাদি  বলল  'না রে ।ওকে বোঝালে বোঝে ।এখনো তো সে রকম সমস্যায় পড়তে হয় নি ।তবে মাঝে মাঝে একটু জেদ লক্ষ্য করা যায়।'
রেখা বলল 'যাই হোক ওকে বুঝিয়ে ব'লো আর ওকেও বোঝার চেষ্টা ক'রো। বোঝাপড়াটা যেন ঠিক থাকে।""
রিম্পাদি বলল  'হ্যাঁ ,সে তো ঠিকই।'
ওদিক থেকে মনোজ চেঁচাচ্ছে ', যাবে তো না কি?'
রিম্পাদি বলল 'হ্যাঁ রে মনোজের গলা পাওয়া যাচ্ছে না ? চেঁচাচ্ছে কেন?'
রেখা বলল  'হ্যাঁ গো রিম্পা দি ।এদিকে তো আমাদের ফিরতে হবে ।অন্যদিকে কাকিমা -কাকু জোর করছে থেকে যেতে ।কি যে করি ।বুঝতে পারছি না।'
রিম্পাদি বলল  'ঠিক আছে। যদি মনে হয় তোর কোন অসুবিধা না থাকে বাড়িতে, সেই বুঝেশুনে কাজ কর না ।অনেকদিন পর গেছিস কাকু-কাকিমার ও  ভালো লাগবে আর তোর ও ভালো লাগবে।'
রেখা বলল 'হ্যাঁ, সে তো বুঝতে পারছি কিন্তু জানো তো আমার বাড়িতে কচি কচি বাচ্চা রয়েছে কি হবে বলো তো ?ওর অফিস আছে?'
রিম্পাদি বলল  'সে তো বুঝতে পারছি ।বিকল্প কোনো ব্যবস্থা নেই ,ওদের খাবার করার?'
রেখা বলল  'আগে পুটু কাজ করতো মেয়েটি খুব ভাল ছিল। ওকে বললে এসব করে দিতো। এখন যে মেয়েটা আছে না ,কি বলবো তোমাকে ?একেবারে ধরিবাজ মেয়ে।'
রিম্পাদি বলল  'তাহলে কি করবি?'
রেখা বলল 'দেখি মনোজের সাথে কথা বলে। পাশের বাড়ি চৈতির মা আছে । বললে হয়তো করে দেবে কিন্তু কেমন লাগে?'
রিম্পাদি বলল  'তুই তো রোজ রোজ বলবি না ।নিশ্চয়ই অসুবিধা আছে বলে বলছিস। পাশাপাশি থাকেন এটুকু না করার কিছু নেই ।একবার বলে দেখ।'
রেখা বলল  'হ্যাঁ দেখি ওর সাথে কথা বলে। ঠিক আছে ।ভালো থেকো রিম্পা দি।'
রিম্পাদি বলল  'হ্যাঁ তুইও ভালো যদি থাকিস। যদি থাকিস ,তাহলে পরে আমাকে জানাস।ভালোভাবে দিনগুলোকে উপভোগ করিস কেমন?'
রেখা বলল 'ok'
মনোজ বলল  'হলো তোমাদের কথা ।ফোন ধরলে তো আর ছাড়তে চাও না?'
রেখা বলল ' রাগ করছ কেন?' 
মনোজ বললো ' রাগ করবো না। ঘড়িতে বাজে কটা দেখো ,ফিরতে হবে তো?'
রেখা বলল  'আমি যদি আজকে থেকে যাই।তাহলে কি কোন অসুবিধা হবে ?মানে মিলিদের খাবার দাবারের ব্যাবস্থা?'
মনোজ বলল ' না ,অসুবিধে তো হবে একটু ।সেটা ম্যানেজ করে নেয়া যাবে।'
এরইমধ্যে সঞ্জু এসে তাড়া দিল ' দাদা একটু তাড়াতাড়ি করুন।'
রেখা বললো  'তাহলে চৈতির মাকে একটু ফোন করে বলে দেবো ?কালকে রান্নার ব্যবস্থাটা করে দিতে?'
মনোজ বললো  'থাক কালকে বলতে হবে না ।দরকার হলে আমি রান্না করে রেখে দেব । আর কাকে বলব বলো তো ?লাগলে দেবে গৌরী সেন...?'
রেখা হেসে লুটোপুটি খেলো।
মনোজ বলল 'কাকু-কাকিমা ,আসছি ।আপনাদের মেয়ে রইল।'
কাকিমা বলেন  'হ্যাঁ ,যখন থাকবেই না বাবা।আর কি বলি ।সাবধানে এসো।'
কাকু ঘর থেকে বলেন'পৌঁছে ফোন করে দিও বাবা?'
মনোজ কাকু -কাকিমাকে প্রণাম করে করতে করতে বলল  'হ্যাঁ ফোন করে দেবো।'
কাকিমা কাকু খুব খুশি হলেন আর বললেন ' ননী আজকে থেকে গেল। আমাদের যে কত ভালো লাগছে বাবা ।তোমাদের মধ্যে এই সুন্দর বোঝাপড়াটা থাকুক ।ভালো থেকো তোমরা। আমরা আশীর্বাদ করছি।'

রিনা দাস




শুনুন মন্ত্রীমশাই শুনুন


ঈশ্বর,প্রকৃতি ও মানুষ
এক সুরে গাঁথা,বাস্তব সত্য
এই তিন মিলে পরিপূর্ণ
নিখিলের পরিধি ও বৃত্ত ৷

হিন্দু,মুসলিম,বৌদ্ধ,খৃষ্টান
নয় মানুষের পরিচয়
কর্মের দ্বারাই আসে পরিচিতি
কর্মেই হয় জয় ৷

আজো দাঁড়িয়ে আছেন শহিদেরা
যাঁরা সৃষ্টি করেছেন ইতিহাস
ভগৎ,ক্ষুধি,প্রফুল্ল,সূর্য সেন
বিনয়,বাদল,দিনেশ,সুভাষ ৷

শহিদের স্মৃতি হৃদয়ে তোমাদের
এখনো পায়নি ঠাঁই ?
রক্তলব্ধ স্বাধীনতার মূল্য
তোমরা দিতে পার নাই ৷

ইতিহাস দেখছে তোমাদের ঔদ্ধত্য
দেখছে তোমাদের পাশবিকতা
তোমাদের পায়ের নীচে পিষ্ট আজ
রক্তাক্ত অসহায় মানবিকতা ৷

রুকসানা রহমান




পৃথিবী ঘুমায় নিরুদ্দেশে 


কিছু স্বপ্ন  ভেজা শিশির সবুজ পালকে ওড়ে।
কিছু লেখা খেলার মায়াজালে  বাঁধে, ভালোবাসা! 

এই ছায়া,ছায়ামেঘ আবছায়া,উল্টে যাওয়া রিকশা,হঠাৎ বুকের পাঁজর ভাঙ্গা, তবু ছোটা সাতাশ নাম্বার  থেকে বত্রিশের লেক পাড়,জলসিড়ি ভেঙে 
বসা।
বিকেলের গেরুয়া রঙ লুটায় জলে, কিছু আশা অপেক্ষা জল জানালায়
কষ্টের বলয় এঁকে বলে-

কুছ ভি,না,কঁহ্যো
তোলা থাক,কিছু রাত,শ্রাবণের ঐ-দ্বার
পৃথিবী ঘুমায় এখন নিরুদ্দেশে।

লেখক শান্তা কামালী'র ধারাবাহিক উপন্যাস "বনফুল"২৭

চোখ রাখুন স্বপ্নসিঁড়ি সাহিত্য পত্রিকার পাতায় লেখক শান্তা কামালী'র  নতুন ধারাবাহিক  উপন্যাস "বনফুল" 






বনফুল
( ২৭ তম পর্ব ) 

চারদিক থেকে ক্যামেরা জুম করে আছে।ফ্লাশের আলোর ঝলকানিতে বেশ বিব্রত পলাশ।একের পরে এক প্রশ্ন ছুঁড়ে দিচ্ছে সাংবাদিকেরা। এরপর কি করবেন?কতোক্ষন পড়াশোনা নিয়ে থাকেন, আপনার এ্যাম্বিশন কি?ইত্যাদি প্রশ্নের উত্তর দিতে দিতে প্রায় সে ক্লান্ত।এমন সময় এসে গেলো অহনা আর সৈকত।ওরা এসে ঘরে বসতেই একজন প্রশ্ন করলো, আপনার কেউ স্পেশাল আছেন? তিনি কি খবর টা জেনে উইস করেছেন? 
এবার পলাশ বেশ গম্ভীর হয়ে বললো, ব্যাক্তিগত প্রশ্ন করবেন না প্লিজ।
অহনা ইশারায় পলাশ কে জানালো ওরা এসে গেছে, সে আসছে। 
পলাশ এবারে ইন্টারভিউ টা সংক্ষেপ করতে শুরু করলো। পরিস্কার বলে দিলো,"আমার ইচ্ছে আছে কোনো নামীদামি ভার্সিটি থেকে বিজনেস ম্যানেজমেন্টে মাস্টার্স করার।কিন্তু সামর্থ্য সায় দিচ্ছে না। দেখা যাক কি করা যায়।পরিবারের মানুষদের সাথে আলোচনা করতে হবে। প্লিজ, আপনারা আজকের মতো এই পর্ব এখানেই শেষ করুন।
সাংবাদিকেরা আস্তে আস্তে নিজেদের ব্যাগ,ক্যামেরা গুছিয়ে নিলেন। 
পলাশ টেরও পায়নি,তার ইন্টারভিউ এতোক্ষন লাইভ টেলিকাস্ট হচ্ছিলো। সাংবাদিকরা ধন্যবাদ দিয়ে বেরোবার সময় ও বুঝতে পেরে খুব লজ্জিত হয়ে সৈকত কে বললো, ইস্ আগে বুঝতে পারলে,ওদের সামনে তোমাদের পরিচয় করিয়ে দিতাম। 
অহনা বললো, না করিয়ে ই ভালো করেছেন ভাইয়া।জুঁই ফোন দিয়েছে, এক্ষুনি গাড়ি নিয়ে আসছে।ওর আব্বা আমাদের সবাই কে আজ সন্ধ্যার চা'য়ের আসরে দাওয়াত দিয়েছেন। রেডি হয়ে নিন।পনেরো মিনিটের মধ্যে এসে যাবে।

                                                                                                  চলবে...

শামীমা আহমেদ এর ধারাবাহিক গল্প "অলিখিত শর্ত"১৬

 স্বপ্নসিঁড়ি সাহিত্য পত্রিকার পাতায় লেখক শামীমা আহমেদ'র  নতুন ধারাবাহিক  উপন্যাস "অলিখিত শর্ত"






শায়লা শিহাব কথন 
অলিখিত শর্ত 
                                              (পর্ব ১৬)
   শামীমা আহমেদ 


রাহাত অফিসের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে যাওয়ার পরপরই শায়লা মাকে নিয়ে বেরুলো।বাসার কাছেই একটা ভালো হসপিটালে আজ মায়ের  চেকাপ করিয়ে কিছু টেস্ট করিয়ে আনবে। এমনিতে  অবশ্য  মা স্বাস্থ্যগত নিয়মকানুন খুব মেনে চলেন। স্বামী  হারানোর পর দীর্ঘদিন সন্তানদের দেখভাল করে রাখতে হয়েছে।তখন থেকে মা বুঝে গেছেন তিনি নিজে সুস্থ না থাকলে সন্তানদের কে দেখে রাখবে? তাইতো শায়লা আর রাহাতের মাকে নিয়ে খুব একটা চিন্তিত হতে হয় না।তবুও বয়স হয়েছে কখন কোন আড়ালে আবার কোন রোগ বাসা বাঁধে। শায়লা মাকে ফাস্টিং অবস্থায় নিয়ে গেলো। সুগার চেক করাবে সাথে এমারজেন্সির ডক্টরের এডভাইস মত ব্লাডের অন্যান্য দিকগুলো টেস্ট করানো হবে। সেখানে প্রেসার দেখা হলো। এই বয়সেও বেশ ভালোই কন্ট্রোল্ড প্রেসার।শায়লা মায়ের সাথে থেকে সবকিছু করিয়ে আনলো।আজ সন্ধ্যায় কিছু আর আগামীকাল সকালে সব রিপোর্ট পাওয়া  যাবে।
শায়লা তখুনি বাসায় না ফিরে কাছেই একটা ভালো রেস্টুরেন্টে মাকে সাথে নিয়ে সকালের নাস্তা করে নিলো।প্রতিদিন সকালে মা  নাস্তা বানানো নিয়ে দিনের শুরু করতো।নিজের দিকে খেয়াল দেয়ার সময় কই? শায়লা ছুটে অফিসে বেরিয়ে গেছে। রাহাত নায়লা কলেজ ইউনিভার্সিটিতে। সব চাপ একা সামলিয়েছে।
মায়ের এসব বিষয় শায়লা খুব ফিল করে।

উত্তরা এলাকায় রেস্টুরেন্টের অভাব নেই।দিন দিন নতুন নতুন সব নাম দিয়ে  রেস্টুরেন্ট খোলা হচ্ছে।ছেলেমেয়েরা খুবই আধুনিক হয়ে গেছে। সব ইয়াং ছেলেপেলেদের হ্যাং আউট,গেট টুগেদার,জন্মদিন সেলিব্রেট, আড্ডা হৈ চৈএ এইসব জায়গা সরগরম থাকে।
শায়লা  ভাবলো মাকে নিয়ে আজ একটু  ঘুরাঘুরি করবে ।সুপারশপে নিয়ে মায়ের পছন্দের কিছু কেনাকাটা করাবে।এসব ক্ষেত্রে মায়েরা একটু আড়ষ্ট হয়ে থাকে।মায়েরা ঘরে থাকতেই বেশি আরাম বোধ করে।আর শখের জিনিস কিনে দেয়ার জন্য সন্তানদের কাছে বায়না করে। পৃথিবীর কী অদ্ভুত খেলা! মা বাবারা একদিন নিজের সন্তানদের মতই হয়ে যায়। শায়লা "স্বপ্ন" সুপার শপের প্রতিটি ফ্লোর মাকে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখালো।মা নিজের পছন্দে ঘরের সাংসারিক কিছু জিনিসপত্র, ফ্রোজেন খাবার ,রাহাতের পছন্দের চিপস,চকলেট কিনলো।মায়ের অনেকদিনের ইচ্ছা ছিল একটা ননস্টিক ফ্রাইপ্যান কেনার।আজ শায়লা দেখেশুনে সেটা কিনে দিলো। সাথে এক সেট চায়ের কাপ।রঙিন এক সেট গ্লাস।নায়লা জামাই নিয়ে এলে অন্তত সামনে তো ভালো কিছু দিতে হয়। শায়লা খুব জোর করে মাকে এক জোড়া বিদেশি স্যান্ডেল কিনে দিল।ঘরে পরবার জন্য। বাবার মৃত্যুর পর আর মায়ের চাওয়া পাওয়ার দিকে তাকানো হয়নি। এখন রাহাত  মোটা স্যালারীর ভালো চাকরি  করছে। শায়লাকে রাহাতের বলা আছে মায়ের শখ, ইচ্ছা, প্রয়োজন  কিছুই যেন অপূর্ণ না থাকে সেদিকটায় খেয়াল রাখতে।

প্রায় বারোটা পর্যন্ত ঘুরাঘুরি শেষে  শায়লারা বাসায় ফিরে এলো। গতকালের রান্নার অনেক খাবার ফ্রিজে।আজ আর রান্নার ঝামেলা নেই। শায়লা মাকে কাপড় বদলানোতে সাহায্য করে একটু রেস্ট নেয়ার জন্য  বললো। নিজের ঘরের দিকে পা বাড়াতেই ব্যাগের ভিতর ফোন বেজে উঠল! রাহাতের ফোন।মায়ের খোঁজখবর নেয়ার জন্য। শায়লা সব জানালো।রাহাত খুব খুশি হলো।
শায়লা নিজের ঘরে এলো।নাহ! শিহাবের কোন মেসেজ নেই।ভাবলো, একটু খোঁজ নেয়া যাক।উনিই তো সবসময় খোঁজখবর করেন। শায়লা মেসেজ পাঠালো,কেমন আছেন? কি করছেন? 
জাস্ট মেসেজ রেখে ঘুরতেই রিপ্লাই চলে এলো, যেন শায়লার মেসেজের অপেক্ষাতে ছিল!এইতো একটু অফিসের জন্য বেরুবো। সবাই অফিসে এলে, কাজকর্ম শুরু করলে তারপর আমি যাই।
আচ্ছা, আমিও একটু বেরিয়েছিলাম।এইতো কাছেই লুবানা হসপিটালে মায়ের চেকাপের জন্য।
শিহাব জানতে চাইল, কোন লুবানা হস্পিটাল?
কেন উত্তরায় আমার বাসার খুব কাছেই,
কেন চেনেন নাকি?
ফট করে মেসেঞ্জারে শিহাবের কল চলে এলো।শিহাব এতটাই আশ্চর্য হয়ে গেছে যে কল করবার জন্য অনুমতি নেয়ার কথা ভুলেই গেছে।
শায়লা কল রিসিভ করতেই বললো
কাছে মানে?
আমার ফ্ল্যাটের পেছনেই।আহ! আগে জানলেতো আমি চলে আসতাম। মাকে নিয়ে এলেন, আমি সাথে থাকতে পারতাম।
শায়লা কিছুক্ষণ নির্বাক হয়েছিল।একেবারে হতভম্ব হয়ে গেলো! নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছিল না। এমনও হয় নাকি?
যদিও সে অনেকদিন যাবৎ ভাবছিল শিহাব কোথায় থাকে তা জানতে চাইবে।
শায়লা নিযেকে একটু স্বাভাবিক করে নিয়ে বললো, না আমরাতো চলে এসেছি।সকালে গিয়েছিলাম।কিছু টেস্ট করাতে।
তা রিপোর্ট কবে দেবে? 
এইতো কাল সকালে যেতে হবে।
ঠিক আছে। আমাকে জানাবেন কেমন রিপোর্ট এলো।
শিহাবও এতটাই অবাক হলো যে,মিরাকল শব্দটা বোধহয় এরকম সিচুয়েসশনের জন্য
সৃষ্টি হয়েছে! 
শায়লা অবচেতন মনে  কল্পনায় শিহাবকে ভেবে চললো। মাকে নিয়ে সে আর শিহাব  হাসপাতালের বিভিন্ন ফ্লোরে উঠছে নামছে! শিহাবের হাতে মায়ের সব কাগজ পত্র আর শায়লা মায়ের কাছ ঘেষে ঘেঁষে হাঁটছে!
কেমন যেন একটা অস্বস্তি ভাব চলে এলো শায়লার ভেতর। যাকে কখনো দেখেনি কেমন করে তার চলাচল কল্পনায় আসে।মানুষের ব্রেনের অসম্ভব রকমের কল্পনাশক্তি! অদেখাকেও জীবন্ত করেভ তোলে।কল্পনা আর বাস্তব এত কাছাকাছি! এত কাছের বসবাসের দুজন মানুষ কেমন করে অচেনা থেকে আজ চেনা হয়ে উঠছে।
শায়লা শিহাবের প্রোফাইল ঘুরে এলো।হ্যাঁ,কিছু ছবি আছে, তবে তাতে একেবারেই বুঝা যাচ্ছে না ছবিগুলো কোথায় তোলা!
শায়লা শিহাবের নাম দিলো রহস্যমানব।এতটা কাছে জানার পর কেমন যেন অনুভুতি হচ্ছে শায়লার।মনে হচ্ছে এই এখুনি বাসা থেকে বেরুলেই বুঝি তার সাথে দেখা হয়ে যাবে! যেন  তার সাথে  কত যুগের পরিচয়! হঠাৎ  করে কথাও হলো।বেশ সহজ সাবলীলতায় কথা বলে চললো।
শায়লা তার বিছানায় একেবারে নির্জীব কাঠের পুতুলের মত বসে রইল!

শিহাব  নিজেকে গুছিয়ে নীচে নেমে এলো। শিহাবের এক্সপোর্ট ইম্পোর্ট বিজনেস।কিছু গার্মেন্টস কোম্পানীর ড্রেস ম্যাটিরিয়ালসের সাপ্লায়ার।পাশাপাশি নিজেও গাজীপুরে ছোট্ট একটা গার্মেন্টস ফ্যাক্টরির  মালিক।তার দুটো  শোরুম আছে উত্তরায় নর্থ টাওয়ারে।মাঝে মাঝে সেখানেও ঢুঁ দিতে হয়।ক্যাশ রিসিভ করা প্লাস ক্রেতার চাহিদা ও অন্যান্য  দিক দেখবার জন্য যেতে হয়।যদিও  সেখানে সব বিশ্বাসী মানুষদেরই রাখা হয়েছে।তবুও,  নিজেকে কাজে ব্যস্ত রাখা আর কি!
বিদেশি বায়ারদের সাথে নানান সময়ে লাঞ্চ ডিনারে যাওয়া, তাদের সাথে সময় কাটানো।প্রতিযোগিতামূলক সময়ে চোখ কান খুলে ব্যবসা করতে হয়। ব্যবসায় যেমন বন্ধুত্বের সৃষ্টি হয় তারাই আবার প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে শত্রুতে পরিণত হয়।নিত্যদিন যেসব বন্ধুদের সাথে উঠাবসা তারাই গোপন শত্রু হয়ে একসময় বেরিয়ে আসে।তবে শিহাবের সবচেয়ে বড় শক্তি তার মায়ের দোয়া।মা ভক্ত শিহাবকে মা'ই শিখিয়েছে সততা নিয়ে কাজ করলে তার পুরষ্কার পাবেই। আর মানুষের  সাথে সুন্দর  ব্যবহার।হতে পারো তুমি অনেক ধনী কেউ কিন্তু গরীব ধনী  সবার সাথে একই ব্যবহার করবে। শিহাব মায়ের আদেশ অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলে। তবে এই বয়সে মা তাকে নিয়ে ভীষণ  চিন্তা করে। রিশতিনা চলে যাবার পর মা ভীষণ ভেঙে পড়ে। শিহাব  ছোট বেলায় মাকে অনেক জ্বালাতন করতো। তবুও মা হাসিমুখে সব মেনে নিতো। কিন্তু এখন দুশ্চিন্তায় ডুবে যায়।
শিহাব নিজের কর্মস্থল অফিস উত্তরা কুশল সেন্টারের সাততলায়।বাইক থামতেই চেনাজানাদের সাথে সালাম আদাব বিনিময় চললো।এমনিতেই শিহাবের বাইক থামলে দোকানের মানুষজন তাকে একনজর দেখবার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়ে।
শিহাব দ্রুতই লিফটে উঠে গেল।
লিফটে সাততলার ফ্লোরে নামতেই কবিরের সাথে দেখা। স্যারকে দেখে সে সালাম দিল।কবির শিহাবের অফিসের হেল্পিং হ্যান্ড। শিহাবের অফিসরুম কাগজপত্র গুছিয়ে রাখে।প্রাথমিক ফোন রিসিভ করে।বেশ অনেকদিন হলো আছে এখানে। চোখে সানগ্লাস পরা শিহাবের ঘি রঙা শরীরে মেরুণ শার্ট, নেভিব্লু প্যান্ট আর সাথে শাইনিং ব্ল্যাক সু তে একেবারে সেইরকম জেমস বন্ড হিরোর মত লাগছে। আর শিহাবের লুকের একনিষ্ঠ ভক্ত কবির অবাক হয়ে ওর স্যারকেই দেখছে!ওর ঐ একটাই কথা স্যার আফনে ফিল্মে যান। আপনি হিরো হইবেন আর আমি দিলদার হমু।শিহাব শুধু হাসে। 
বাইরে প্রচন্ড গরম।শিহাব দ্রুত এসি
রুমে ঢুকতেই কবির জানালো, খালেক সাহেব এসেছিলেন। আপনি আসেননি তাই পরে আসতে বলছি। 
ঠিক আছে। উনি আসলে ভিতরে পাঠিয়ে দিও।এখন আমার জন্য কফি আনো।আর এক প্যাকেট বেনসন। শিহাব পাঁচশত টাকার একটা নোট এগিয়ে দিলো।
টুং করে মেসেজ এলো।
শায়লার মেসেজ।
আচ্ছা আপনি  অফিসে যাবেন বলছিলেন।
আপনার অফিসটা কোথায়?
কেন আসবেন নাকি
নাহ! মাথা খারাপ? এমন অচেনা মানুষের অফিসে যাবো?
আমি এখনো অচেনা?
হ্যা, সবকিছু কি আর জেনেছি আপনার?
না তা জানাইনি।তবে লুকানোর ও কিছু নেই।
শিহাব সততায় বিশ্বাসী বুঝলেন। আমার মা আমাকে শিখিয়েছেন।
আপনার মা? কোথায় থাকেন? 
জিগাতলা আমাদের নিজের বাড়িতে।
ওহ! আচ্ছা।
শিহাবের কফি চলে এলো।কবিরের পিছনে খালেক সাহেব।
ভেতরে আসুন।
শিহাব শায়লাকে বাই জানালো।
খালেক সাহেব আর শিহাব কফি কাপ নিয়ে নিজেদের মধ্যে কথায় ব্যস্ত হলো।
শিহাবের গার্মেন্টসের পরর্বতী শিপমেন্টের অর্ডার নেয়ার  জন্য খালেক সাহেবের অফিস তাকে পাঠিয়েছে।
শিহাব খালেক সাহেবের কাছে তার অফিস পরিচিতির কাগজ পত্র চাইল।
কফিতে চুমুক দিতে দিতে ল্যাপটপ অন করে মেইলগুলো চেক করতে শুরু করলো।

কবির  কিছু স্যাম্পল নিয়ে এলো  শিহাবকে দেখাতে। শার্ট, প্যান্টের বাটন,কাপড়, সুতা, মেশিনারিজ পার্টস।  শিহাব একে একে সব চেক করলো। মেইলে দেয়া ডেস্ক্রিপশনের সাথে মিলিয়ে নিলো। বিভিন্ন দেশ থেকে এই স্যাম্পলগুলো এসেছে। শিহাবের অনুমোদন  হলেই ওর গার্মেন্টসে ইউজ হবে।
এবার খালেক সাহেবের সাথে কথা হলো। তাদের বিজনেস পেপারস সব দেখলো। শিহাব উলটে উলটে সব দেখলো।তাদের লাইসেন্স,এক্সপোর্ট ইম্পোর্ট পারমিশন , ইনকাম ট্যাক্স  পেপারস,,,
শিহাব সময় চেয়ে নিলো। নিজে খোঁজ খবর করে তবেই তাদের সাথে যোগাযোগ করবে।
খালেক সাহেব বিদায় নিলে শিহাব জিগাতলায় মাকে ফোন দিল। আরাফের খোঁজ খবর নিতে হবে।শিহাব খুব বেশি কল দেয় না। আরাফ তাহলে বাবার কাছে আসার জন্য কান্নাকাটি জুড়ে দেয়। এমনিতে সবার সাথে ভালো ই থাকে। বড় হয়ে ও যখন জানবে ওর মা ওকে রেখে চলে গেছে, তখন কি মা জাতটিকে সে আর ভালবাসতে পারবে? শিহাব মোবাইলে রাখা রিশতিনার ছবিটি বের করে দেখলো।
শিহাবের বুকের ভেতরটা হু হু করে উঠল। 
চলবে...

BVb

LOVE

VBFb

LOVE

BVb

LOVE

fgfd

LOVE