০৮ জানুয়ারী ২০২২

মমতা রায়চৌধুরী/৮৮ পর্ব




উপন্যাস 

টানাপোড়েন ৮৮

বিদায়

মমতা রায়চৌধুরী




বাড়িতে যতই মেজ পিসিমা খোঁচা দিয়ে কথা বলুন না  কেন ?শিখা কিন্তু গায়ে মাখছে না,মাখার চেষ্টা ও করছে না।'
বৌদিভাই তো বলেই দিয়েছে 'পিসিমা ক'দিনের জন্য এসেছেন কিছু বললে , কিছু মনে করিস না।'
তখন শিখা বলেছিল 'কিন্তু বৌদি ভাই..?'
তখন মাধুরী মুখে আঙ্গুল দিয়ে বলেছিল' কোন কথা নয় এবং বলেছিল বৌদি ভাইয়ের কথাটা মেনে নিতে।'
তাই আজ অনেক কথা শোনানোর পরও কোনো কথা বলে নি, avoid করে গেছে। রাস্তা দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে শিখা  এসবই ভাবছিল। 
তারপর বেলঘড়িয়া থেকে ট্যাক্সি ধরে দক্ষিণেশ্বরে নেমে পড়ে । কোথাও যেতে ভালো লাগছে 
না ।তাই মায়ের কাছে, মাকে দর্শন করতে, তার আশীর্বাদ নিতে একাকী বেরিয়ে পড়া।মাকে পুজো দিতে গিয়ে  সেখানে লম্বা লাইন দেখে ভাবে অনেকটা সময় লেগে যাবে। কিন্তু পুজো দেবে বলে ভেবেছে যখন ,দেবেই।'
বৌদিভাইকে একটা মেসেজ করল' আমার ফিরতে দেরী হবে। চিন্তা ক'রো না।'
মেসেজ করতে করতে একটা ফোন ঢুকলো
ফোনটা করেছে কল্যান । 
শিখা ফোনটা রিসিভ করল'হ্যালো',।
কল্যান বলল'কিছু জানালে না তো?'
শিখা' নিরুত্তর।'
কল্যান বলল 'আজকে আমি কলকাতায় এসেছি। দেখা করবে আমার সঙ্গে?'
শিখা বললো 'আমি তো পুজো দিতে এসেছি।'
কল্যাণ বলল 'কোথায় ? দক্ষিণেশ্বর?'
শিখা বলল' হ্যাঁ।'
কল্যান বলল 'f ফ্যামিলির সাথে এসেছো?'
শিখা বলল' না ,আমি একা।'
কল্যাণ বলল: আমি দমদমে আছি তাহলে আমি পৌঁছে যাব দক্ষিণেশ্বরে।'
শিখা মনে মনে ভাবল এটা আবার কি সংযোগ রে বাবা। কিছুই বোঝা যাচ্ছে না।
কল্যাণ বলল' কিছু বলছো না যে?'
শিখা বলল ' কি বলবো ?আপনার যদি ইচ্ছে হয় পুজো দিতে আসবেন? মায়ের কাছে সবার  দরজা খোলা।'
কল্যান হেসে বলল 'হম খুব কায়দা করে উত্তর দিলে। Good

শিখা বলল' পুজোর লাইন দিতে যাব। ব্যাগ জমা রেখে দিতে হবে।'

কল্যান বলল 'একটু ওয়েট করো একসঙ্গে পুজো দেবো ।আমি দক্ষিণেশ্বর স্টেশনে পৌঁছে গেছি।

শিখা চুপ করে থাকলো
কল্যান বলল'তাহলে মৌনতা সম্মতির লক্ষণ ধরে নিচ্ছি।'
শিখা বলল 'আসলে পুজো দিতে দেরি হয়ে 
যাবে ।বাড়ী পৌছাতে দেরি হয়ে যাবে।'

কল্যাণ বলল 'সেরকম হলে বাড়ি পৌঁছে দেবো?'

শিখা সঙ্গে সঙ্গে বললো' না না বাড়ি পৌঁছে দিতে হবে না। মনে মনে ভাবল বাব্বা বাড়িতে মেজ পিসি  আছে ।আরো কত কথা যে শোনাবে তার ঠিক ঠিকানা নেই । সুঁচ ফোটানো  কথা বড্ড ভয় লাগে।'
কল্যানের  মনে একটা টানটান উত্তেজনা, মনে লেগেছে খুশির হাওয়া। কি এক অনাবিল আকর্ষণে ছুটে চলেছে। পরনে নীল শার্ট, ক্রিম প্যান্ট। হাতে ছিল  একগুচ্ছ গোলাপ ফুল।

 কল্যান ভাবছে' কি করে ফুলগুলো শিখাকে দেবে? ভেবে নিয়েছে আজকে দেবেই।'

শিখা পায়চেরি করছে আর বারবার ঘড়ি দেখছে।
এরমধ্যে মধ্যেই কল্যান ঢুকে গেল । 
কল্যাণ শিখাকে ফোন করলো ।শিখার ফোন রিং হতেই শিখা ফোন রিসিভ করে বলল 'হ্যালো'।
কল্যান বললো' কোথায় আছো?'
শিখা বলল' গেট থেকে ডানদিকে।'
কল্যান খেয়াল করল  শিখা ফোনে কথা বলছে ,দেখতে পেয়ে বলল  ' দেখতে পেয়েছি।'
কল্যান   বলল' বাহ কি সুন্দর লাগছে  নীল শাড়িতে। 'নিঙ্গারিয়া নীল শাড়িতে শ্রীমতি চলে...।'গুন গুন করে গান ধরল ।
শিখাও লক্ষ্য করলো 'বাহ খুব সুন্দর লাগছে।'
একি  কাকতালীয়ভাবে দুজনের  ড্রেস ই নীল।
হা করে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলো। 
কল্যান হাতটা চোখের সামনে নেড়ে বলল ' কি দেখছ?'
শিখার যেন হঠাৎ করেই ধ্যান ভঙ্গ হলো। হেসে বলল ' না কিছু না এমনি।'
কল্যাণ ভনিতা না করে  একগুচ্ছ গোলাপ ফুল দিয়ে'  বলল 'এটা তোমার জন্য'।
শিখা তো হতবাক হয়ে গেছে ।কি করবে বুঝে উঠতে পারছে না । শেষে শিখা দুহাত ভরে ফুলগুলো  নিলো। আর জোরে জোরে গোলাপের সুগন্ধ মনে প্রানে নিয়ে নিল। তারপর বলল 'থ্যাঙ্ক ইউ।'
কল্যান বললো 'চলো তাড়াতাড়ি পুজোটা দিই।'
শিখা বললো 'হ্যাঁ চলুন।'
কল্যান বললো' এখনো কি আপনিতেই ঠেকে থাকবো।'
শিখা শুধু হাসল।
কল্যান যেন সেই হাসিতে একমুঠো ভালোবাসার স্ফুরণ দেখতে পেল।
তারপর আস্তে আস্তে দুজনেই পুজোর ডালা সাজিয়ে লাইনে দাঁড়ালো। আগের থেকে লাইনটা অনেকটাই হালকা আছে। প্রায় আধ ঘন্টা কেটে গেল। 
অবশেষে মায়ের কাছে গিয়ে পুজো দিল। দুজনেই আশীর্বাদ নিল। তারপর পুজো দিয়ে বেরিয়ে ভেবেছিলো গঙ্গার ধারে গিয়ে বসবে,একটু গল্প করবে। সামনে কল্পতরু উৎসব ।সেজন্য এমনিতেই একটু ভিড়। দুজন আবার আনমনে হাঁটছে উদ্দেশ্যহীনভাবে। হাঁটতে হাঁটতে বালি ব্রিজের উপর এসে দাঁড়ালো ।একমনে তাকিয়ে গঙ্গার দিকে। শান্ত ধীর গতিতে বয়ে চলেছে জাহ্নবী। একদিকে বেলুড় মঠ ,অন্য দিকে দক্ষিণেশ্বর। কল্যাণ শিখার দিকে তাকিয়ে গুনগুন করে গান ধরল'তোমারে লেগেছে এত যে ভাল,
 চাঁদ বুঝি তা জানে...।'
শিখা কল্যাণের দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকে।
কল্যাণ শিখার দিকে তাকিয়ে যেন চোখে চোখে কথা হয়ে গেল।
এরমধ্যে শিখার ফোন বেজে উঠলো। 'আকাশের হাতে আছে একরাশ নীল...।'রিসিভ করে বলল হ্যালো'।
শিখার বৌদি ফোন করেছে। মাধুরী বলল কোথায়? ঠিক আছিস তো?
শিখা বলল হ্যাঁ ঠিক আছি।ঠিক সময়ে পৌঁছে যাব।
মাধুরী বলল 'ঠিক আছে। সাবধানে আসিস।'
শিখা বলল 'ঠিক আছে।'
শিখা ফোনটা কেটে কল্যাণের দিকে তাকিয়ে ইশারায় বলল 'এবার যেতে হবে।'
কল্যান বলল 'চলো কোথাও গিয়ে একটু খেয়ে নিই।'
শিখা বলল 'এমনিতেই দেরি হয়ে গেছে।'
কল্যাণ বলল 'তাহলে চলো।'
শিখা বলল কলকাতায় কিছু কাজ ছিল?
কল্যান বললা' না তো।'
শিখা হেসে বলল 'ও।'
কল্যান বললো 'কিসে যাবে?'
শিখা বলল 'ট্যাক্সিতে।'
কল্যাণ বলল 'ঠিক আছে। এরমধ্যে একটি ট্যাক্সিকে 'এই ট্যাক্সি, ট্যাক্সি বলে হাত দেখাল।'
ট্যাক্সি এসে দাঁড়ালো ।গেট খুলে দিল শিখা বসল এবার কল্যান ও  এসে পাশে বসলো।
শিখা বলল 'আপনি?'
কল্যাণ বলল 'আমিও তোমার সঙ্গে যাবো।'
শিখা বলল 'না আমি যেতে পারবো।'
কল্যান বলল'ঠিক আছে ।আমি জানি তুমি যেতে পারবে। আমি বাড়ির ভেতরে যাবো না। সামনেটায়  আমি  নামিয়ে দেবো।'
শিখা প্রসন্নতার হাসি হাসলো।
এরপর দুজনেই চুপচাপ ।কেউ কোন ভাষা খুঁজে পাচ্ছে না। শেষে কল্যাণ আবার গান ধরে' -
'রোদে জ্বলা দুপুরে,
 সুর তুলে নুপুরে বাস থেকে তুমি যবে নাবতে।
একটা কিশোর ছেলে একা কেনো দাঁড়িয়ে?
সে কথা কি কোনোদিন ভাবতে?'
….
দ্বীপ জ্বলা সন্ধ্যায়।
 দ্বীপ জ্বলা সন্ধ্যায় হৃদয়ের জানালায় কান্নার খাঁচা শুধু রেখেছি…
স্বপ্নের জাল বৃথা বুনেছি।'

কল্যান অত্যন্ত আবেগ তাড়িত হয়ে শিখার হাতে হাত রাখলো।
শিখা হাতটা সরিয়ে নিল না। কেমন যেন বিদ্যুত খেলে গেল সারা শরীরে।
কল্যান শুধু বলল'চলো হারিয়ে যাই দূর নীল সমুদ্রে।'

কবি মোঃ ইসমাঈল এর কবিতা







জীবন 

 মোঃ ইসমাঈল



জীবনটা নয় কোনো প্রকারেই ছেলেখেলা
হারিয়ে ফেলিতেছ জীবন থেকে কী সুন্দর বেলা।
চেষ্টা করো শ্রম দিয়ে করতে কিছু জীবনে 
সফল হলে আনন্দ পাবে খুব যে মনে।

জীবনের গতিতে কর্মের পিছনে যাও এগিয়ে
দেখবে নিজ থেকে হঠাৎ অদম্য সাহস আসবে বেরিয়ে।
তখন তুমি পাবে না কোনো কিছুতেই ভয়
কেননা তোমার জন্যই অপেক্ষা করিতেছে বিজয়।

জীবন মানেই নয় কোনো প্রকার যন্ত্রণা
যদি তুমি এড়িয়ে চলতে পারো সকল কুমন্ত্রণা।
উপভোগ করতে চেষ্টা করো সুন্দর এই জীবনটাকে
হাসি-খুশি আর আনন্দ দিয়ে সতেজ রেখো মনটাকে। 

জীবনে থাকতে পারে অনেক ব্যর্থতা
পরিশ্রমের মাঝেই আবার ফিরে পাবে সফলতা।
নিজেকে রাখতে হবে সবসময় নমনীয় 
ধারন করতে হবে এমন একটা চরিত্র, যেটা হবে দুর্দমনীয়।

কবি রুকসানা রহমান এর কবিতা  





ভোগবাদী সমাজ
রুকসানা রহমান        

        

জনজীবনের সমাজ ব্যাবস্হা সূর্য ভস্মে মাথা রেখে
পথচলা।এখন আর এক ফোঁটা কান্নার জল মুছে দিতে
কতশত বছর পার হবে জানিনা। নারীদের নিয়ে এখন
কেবলই মুখরোচক গল্প মিডিয়া খবরের কাগজে
যেন ওৎ পেতে থাকে কোন নারী কি করলো পুরুষ নামক অহংকারী কিছু পুরুষত্বের ষাড়গুলোকে 
আড়ালে রেখে।
কোনদিনই কি নির্বিঘ্নে পথ পেরুনো হবেনা নারীদের ?  
ভাবতে অবাক লাগে তথাকথিত আধুনিক সমাজ আজও সেই শোষক শাসন থেকে বের হতে পারেনি।
একই শিকড়ের বন্ধনে আসা নারী যেনো মাটির পুতুল।
আদিম পোষাক দেখতে চায় সৃষ্টির  শ্রেষ্ঠতম ফুল...! 

আজ বারবার মনে পড়ছে কবি হুমায়ুন আজাদের
কবিতার কিছু লাইন.....
আমি জানি সব কিছু নষ্টদের  অধিকারে যাবে।
সাধের সমাজতন্ত্র ও নষ্টদের অধিকারে যাবে 

সত্যিই আজ  সমাজ নষ্টদের অধিকারের ব্যবস্হায় জীবন খাতার পাতায়,পাতায় সূর্যদাহে পুড়ছে
,ভয়ংকর রাষ্ট আর সমাজ ব্যাবস্হায় কৃষ্ণগহব্বরে বন্দী আজও নারী।
অথচ সমাজ প্রতিবন্ধীদের মত ক্রাচে ভর দিয়ে হাঁটে।
সময়ের নিজস্ব নিয়মে কার কি হচ্ছে মজা লুটছে
কিছু বলার প্রয়োজন বোধ করেনা। ভাবখানা এমন
বাবা, নিজের প্রাণ বাঁচাও। 

ঘরের চৌকাঠের ভিতর নারীর ঠিকানা-
তাদের আকাশ চিনে কি লাভ ?
শরীরের মাপ ঠিক রাখা, প্রনম্য আগুনের ভিতর দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করাই নারীর জন্য উপযুক্ত।
দহনে-দাহনে বেঘোরে পোড়াই নারীর ধর্ম
নারীর মৃত্যুর পর নারীর প্রশংসা, পুড়বে মেয়ে, উড়বে
ছাই, তবেই মেয়ের গুণ গাই।
নারী যেন খয়রাতি জীবন দিয়ে যেতে হবে তাকে সর্বস্ব  
ত্যাগে।
সমাজের তথাকথিত মানুুষরূপি হায়নারা যেনো কাম
অগ্নিকাণ্ড জন্মের কুণ্ডলির ভিতর শোষক-শাসকের
পৈতিক ক্রাচ চাষাবাদ সময়ের ক্ষূধার্ত খাদকের জন্য
কি নারীর জন্ম ?
মনুষ্য নেকাব পড়ে ওরা জনসম্মুখে ভদ্রতার নেকাব
পড়ে বুক ফুলিয়ে হাঁটে 
কেউবা জাতীয় সংগীত শুনতে শুনতে সুযোগ পেলেই
তাদের সাধের ধর্মগ্রন্থ তখন সরিয়ে অণূর্বর জমিতে 
উন্মাতাল খেলার মক্ত হয়ে ওঠে   রাষ্ট ও সমাজ।
মোমের মতন গলে যাচ্ছে পবিত্র ভালোবাসার আখ্যান। 

অপবাদে জড়ানোর ভয়ে দাবিদারহীন; মাটির উপর
দাঁড়িয়ে বাঁচতে চেষ্টা করে আজও নারীরা।
ফুঁফিয়ে ওঠা কালের বেদনার হাহাকারে নারী নামের
ফিসফাস রক্তপাতে এক একটি রক্তজবা।
এভাবেই চোরাকুঠুরীর চাবি বদলের খেলায় অস্হি মাংসের ভিতর চলে ভালোবাসার নামে উপভোগের মানচিত্র। 

তবুও কি নারী হাল ছাড়ে, ছাড়বে না বলেই আজও
ইতিহাসের পাতায়-পাতায় খোঁজে নিজেদের অধিকার। খুঁজে চলছে একা সমান্তরাল জীবন প্রশস্তদিন।
তবুও আদি পর্বের ক্ষয়ে যাওয়া সময় ফেরেনা
নতুন কোন অক্ষর কেবলই ছায়া লেগে থাকে পোড়া
চোখে।
তবুও নারীরা বাচেঁ, বাচঁতে হয় সংসার সমাজের রক্তচক্ষু, অপবাদের বোঝা ঘাড়ে নিয়ে ও কেউ কেউ
অক্ষর খুঁজে পায়।
বাচেঁ একা একেবারেই একা একার আকাশের নিচে
দাঁড়িয়ে স্বস্হির নিঃশ্বাসে।
আজ প্রশ্ন দাঁড়িয়েছে নারী স্বাধীনতা এখনো আর কতদুর, নারী স্বাধীনতা মানে ভোগপণ্য নয় এটি
সামাজিক অবস্হান যার মৌলিক স্বীকৃতি সমাজে
অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আজকের নারী ঘরের  সঙ্গে, সঙ্গেই
অনেক বেশি বাইরেরও।কাজের প্রয়োজনেই বাধ্য করছে তাকে যে পোষাকে নারী স্বচ্ছন্দ সেটাই অগ্রাধিকার দিতে।
কাজেই পশুদের হাত থেকে রক্ষা পায়না,এখানেই
গভীর সত্য লুকিয়ে আছে,তা হলো পশুদের হাত থেকে
নিস্তার পাওয়া বা না পাওয়া নারীর পোষাক দ্বারা
নির্ধারিত  হয় না।নির্ধারণ করে সমাজের মনোভাব
নারীর প্রতি সন্মান শ্রদ্বাশীল না হওয়া পর্ষন্ত একশ্রেণী পশু সুলভ মানুষ নারীকে পণ্য হিসেবে ব্যবহার করবে, 
সেই সমাজ বা রাষ্টের কখনো মাথা উচু করে দাঁড়াতে
পারবেনা এবং উন্নতি ও হবেনা।
নারী ধর্ষণের মতন নির্যাতন  থাকলে।

হালিমা মুক্তা এর টাইম যান /২য় পর্ব





টাইম যান
( ২য় পর্ব ) 
হালিমা মুক্তা

ঠিক দুপুর নিপু তানজিম এর খেলনা গোছাচ্ছে। স্কুল থেকে ফিরে সব এলোমেলো দেখে নিপু তানজিম এর উপর রেগে যায়। আম্মা আম্মা তোমার ছেলে সব এলোমেলো করে রেখেছে সব খেলনা গুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে এ কি করেছে ঘরের অবস্থা দেখে যাও। ডাকাডাকি করছিস কেন পারলে গোছা। নিপুর মায়ের রান্নাঘর থেকে উত্তর। এই তানজিম টা না!নিপু একাই বকবক করছে। আর ঘরময় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখা খেলনা গোছাচ্ছে। হঠাৎ নিপুর ভোর বেলার কথা মনে পড়ে যায় সেই হেলিকপ্টার জান এর কথা। নিপু আবারো একটু শিহরিত হয়। কেমন যেন গা ছমছম করে ওঠে। রান্নাঘর থেকে আওয়াজ আসে নিপু তুমি গোসল করে ফ্রেশ হও নামাজের বেলা কিন্তু যায়। নামাজ ,খাওয়া স্যারের পড়া ওহ একটুও শান্তি নেই মায়ের কথা শুনে বিরক্ত মুখ নিয়ে নিপু কল পাড়ের দিকে হাঁটা দেয়। 

নিপু ভালো ছাত্রী কিন্তু পড়াশোনায় অমনোযোগী এটা নিয়ে নিপুর মায়ের কাছে প্রায়ই বকা খেতে হয়। সময়ের কাজ সময়ে করেনা। টাইম এর দিকে কোন খেয়াল নেই। এই মেয়ে বড় হচ্ছে না কি দিন দিন সব বুদ্ধি লোপ পাচ্ছে। কিন্তু তানজিম কে মা কিচ্ছু বলেন না। সারাঘর এলোমেলো করা চিল্লাচিল্লি তো তার আছেই।কিছু বললেই মা বলেন বড় হলে ঠিক হয়ে যাবে। তুমি তোমার কাজ করো। সামনে তোমার পরীক্ষা। এবার ক্লাস ফাইভে উঠবে আর পড়াশোনায় অমনোযোগী হলে হবে না এবার মনোযোগ দাও। নিপু বয়স অনুপাতে একটু হেলদি। তার সবকিছুতেই অমনোযোগী ও একটু স্লো হওয়ার পিছনে বোধহয় এটাই কারণ।

রাতে ভাল ঘুম হয় না নিপুর। কেমন যেন একটা অস্বস্তিতে ভরে উঠছে তার ছোট্ট মন। খানিক এপাশ-ওপাশ করে বিছানা থেকে উঠে ঘরের লাইট জ্বালায়। আসলে একা একা ঘুমানোর অভ্যাস টা এখনো ভালো ভাবে গড়ে ওঠেনি নিপুর। হঠাৎ ওর ছোট্ট কচি মনটা খারাপ হয়ে যায়। এইতো কদিন আগেও তো আম্মুকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়েছি। এখন তানজিম টা বড় হয়ে যাওয়াতে আমাকে এখন! তাছাড়াও মা বলেন তোমার ১০ বৎসর হয়েছে এখন থেকে তোমার আলাদা বিছানায় ঘুমাতে হবে এবং নিয়মিত নামাজ পড়ার অভ্যাস করতে হবে। কিন্তু নিপুর ধারণা ওই তানজিম টাই সব। ওর জন্যই আম্মুর কাছ থেকে তার তাড়াতাড়ি!নাহলে আরো কিছুদিন আম্মুর সাথে ঘুমাতে পারতো সে।

চলবে...