১৭ ফেব্রুয়ারী ২০২১

অমিত কাশ‍্যপ


 


হারাণজেঠু



শহর কখন গড়িয়ে গড়িয়ে গ্রামের পথে 

এখন গ্রামে আর মাটির পথ নেই 

মোরামের পর মসৃণ পিচরাস্তা

মাটির বাড়ি অবলুপ্তির পথ, অট্টালিকার শোভা নজর কাড়ে

গ্রাম-শহরের মেলবন্ধন, এরই নাম সম্পর্ক


গ্রামের প্রবীণ মানুষ হারাণজেঠু, স্বাধীনতা দেখেছেন 

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের স্মৃতি তাও ম্লান নয়

নবীন প্রজন্মের সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে বলেন 

এরই নাম সম্পর্ক, বিজ্ঞানের জয়যাত্রায় আলোময় আজ গ্রাম

গ্রাম ভরে যাচ্ছে শহুরে গন্ধে আর শোভনতায়

গোলাম কবির




মেয়ে, সাবধান! 


ফুলের বাগানে মৌমাছি উড়বে 
এটাই স্বাভাবিক, কিন্তু এখন দেখছি
 মৌমাছি নয় শুধু সাপ আর বিচ্ছু,
আবার কিছু জোঁকও আছে সেখানে।
এরকম বৈরী সময়ে মেয়ে,সাবধান! 
তুমি যেনো যেও না, 
বরং নিজেকে সামলে রেখো 
এই বিপন্ন সময়ে। 
ওরা তোমাকে ছোবল দেবে,  
রক্ত শুষে নিয়ে ছুঁড়ে ফেলে দেবে 
কিংবা শেয়ালের  মুরগির মতো 
ছিঁড়ে খুঁড়ে  নিষ্প্রাণ দেহে 
পাট খেতে ফেলে রাখবে তোমায়। 
ভালবেসে একদিন তোমার খোঁপায় 
ফুল গুঁজে দিতো যে যুবক, 
সে এখন জন্মান্ধ সময়ের ফেরে 
নেশায় মাতাল! ঘর বাঁধার ছলে 
তোমার জন্য হতে পারে
 শরৎ বাবু'র দেবদাসের চুনিলাল।

প্রেমাংশু শ্রাবণ




ফেব্রুয়ারী  এলেই


ফেব্রুয়ারী এলেই
আমার বুকের অবাধ্য অক্ষরগুলো
হুড়মুড় বেরিয়ে পড়ে
কলমের মোক্ষম শৃঙ্খল ছিঁড়ে
ঝরতে থাকে শিমুল পলাশ আরো কতো লালফুল
!

ফেব্রুয়ারী এলেই
আমি জেনে যাই প্রতিবাদী অক্ষরগুলো
অসম্ভব স্বাধীন হবে
অদম্য শ্লোগানে শ্লোগানে মুখর হবে দিকবিদিক,

উচ্চকিত কথারঙে বর্ণাঢ্য মিছিল হয়ে
দাপিয়ে বেড়াবে
ফুল পাখি নদী গাছ----
আকাশের উঠোনে উঠোনে
কলাবউ কিষাণের বিস্মিত চোখের তারায় তারায়
খুঁজে নেবে
বীজরঙা মাটির অঘ্রাণ।

ফেব্রুয়ারী এলেই
আমার অক্ষরেরা মানবে না
বেড়াজাল কোনো
উষ্ণতার কোদালে ছেনে ছিঁড়েখুঁড়ে তুলে নেবে
ইচ্ছেদের পাললিক ভ্রুণ।

নিজেই নিজেদের হুকুমদার এরা
আমাকেও অস্বীকার করবে ফের....

নিত্যন্ত অক্ষরহারা স্তব্ধ-কলম আমার
শুকনো মসৃণ ডগায় ফিরবে
নতজানু হবে
যেনো বা ক্রন্দনরত এক শহীদ মিনার!

এবং
ফেব্রুয়ারী এলেই
আমি জেনে যাই
অক্ষম কলমে আজ
হারানো অক্ষরের শোকে কিছুই
লেখা হবে না আর

শ্যামল রায় এর তিনটি কবিতা




ভালোবাসার উঠোন চেয়েছি


এমন একটা ভালোবাসার উঠোন চেয়েছি

দাঁড়িয়ে বলতে পারি ,,তুমি কি করছো?

আমি জোর গলায় বলতে পারব

তুমি কেমন আছো ?আমার জন্য।

আমি ভালবাসার একটা উঠোন চেয়েছি

যেখানে শিউলি ফুল ছড়িয়ে থাকবে

দেখতে পাবো কখনো রোদ্দুর

বৃষ্টি ভেজা

শুধুই তোমাকে শুধু তোমাকে।

আকাশটা আরো নীল দেখতে চেয়েছি

ব্যস্ততার মাঝে তোমার ঢেউ চেয়েছি

আমি নদীর বা সমুদ্রের পাড়ে দাঁড়াই

অপেক্ষা করি-----

তোমার চোখ দেখতে ।।

একটু উষ্ণতার জন্য

একটু বাতাসের জন্য

শ্বাস নিতে

একটা উঠোন চেয়েছি

শুধুই ভালোবাসার উঠোনে

শিউলি ফুলগুলো ছড়িয়ে পড়ুক।।




প্রথম তোমাকে ছোঁয়া

 

আমি প্রথম তোমাকে ছুঁয়েছিলাম যেদিন

শব্দ ছিল। ছিল পলাশ বকুল জুঁই 

নতুন রঙে রঞ্জিত হয়েছিলে

ইচ্ছে ছিল ডিঙ্গি নৌকোয় চেপে

বেড়াবে ঘুরে ঘুরে।

আমি সঁপে দিয়েছিলাম

জীবনের সবটুকু

ঘন কালো অন্ধকার মুছে দিয়ে

আলো বিন্দু খুজে নিয়েছিলাম

ছিল স্বপ্নে ঘেরা সিঁড়ি

সত্যের জয় গান।

আমি যতটুকু ছুঁয়েছিলাম তোমাকে

নির্ভেজাল ভালোবাসাটুকু দিয়ে

খুজে নিয়েছিলাম আত্মতৃপ্তি দুজন

দিন যেয়ে মাস ,বছরের পর বছর

তবুও মনে হয় স্বপ্ন হাঁটতে শেখেনি আজও

বিচ্ছিন্ন এক দ্বীপের মধ্যে

স্বপ্নের ভালোবাসা

স্বপ্নের মেঘগুলো

ঘুরপাক খায়

 পাল্টে যায় কখনো কখনো।

অথচ ইচ্ছের যাতায়াত

এক একটা ভালবাসার ঠিকানা জানতাম

আজ যেন বকুল গাছের নিচেয়

প্রশ্ন একাধিক? সম্পর্কের বুনন এর কাছে

সযত্নে আদর কাঠফাটা রোদ্দুরের এর মতো

রাত  যতটা গভীর হয়

এসব ভাবনারা সেতু গড়ে

আমিও কখনো কখনো

জীবন বোধ খুঁজে নিতে

সচেষ্ট হই। কবিতার ঠোঁটে।

আমারও চুম্বন এঁকে দিতে

তুলি রংএ মন খারাপে ঢেউ হয়।

এখন বেশ বুঝতে পারি

প্রথম চুম্বনের পর

প্রথম ছুঁয়ে দেখার পর

কাটাকুটি খেলা

বড্ড সুখ ও কষ্টে

আমাকে লন্ডভন্ড করে আজ ও।




এ কেমন তোমার মন


এ কেমন তোমার মন

ভুলে ভুলে থাকো সর্বক্ষণ

এ কেমন তোমার মন

পড়েনা মনে একটু খানি

কতইনা স্মৃতিকথা।

প্রথম চুম্বনের কথা

কাছাকাছি আসা

আল ভেঙে সবুজ ছায়া খুঁজে নেওয়া

সবটাই কি বৃথা!

এ কেমন তোমার মন?

ছুটির বিনোদনে

কতইনা খুনসুটি

তোমার সম্মতি ছিল সর্বদা

আজ মনে হয় তোমার কি দশ হাত,

ভুলে যাচ্ছো ক্ষণে ক্ষণে

হৃদয় থেকে ঢেলে দেওয়া স্মৃতি কথা

কপূর হয়ে যাচ্ছে কেন?

অথচ তোমাকে ঘিরে আমার

স্বপ্ন দেখা ,তাপ নিয়ে বেঁচে থাকা

অথচ তুমি ভুলে থাকো কেন?

স্বাদবদল এ এসেছে কি কেউ?

তাই ভুলে থাকছো

আমাকে মরুভূমিতে শুয়ে রেখে?

এ কেমন তোমার মন,

হৃদয় নিংড়ে ভালোবাসা দাও

যতদিন বাঁচবো স্মৃতিতে তোমাকে রেখে।

মোহাঃ হাসানুজ্জামান




বিপ্লবের আহ্বান                          


করব লড়াই তাদের সাথে

ধরব অতীত এর পথ-

রক্তে মোদের আজও সে জোয়ার

মনের মাঝে আছে হিম্মত।


তারা তো কেবল হিংসা জানে

ধ্বংসের পথে অবিচল-

আমরা আনিব নতুন বিপ্লব

বুকে আছে মোদের সেবল।


পারবেনা তারা অগ্রসর হতে 

কি আছে তাদের সাধ‍্য-

আমরা যে সব তরুনের দল

ওদের পিছুটানে করব বাধ্য।


তারা তো সব ক্ষমতা লোভী

পুঁজিপতি বুর্জোয়ার দল-

ধ্বংস করব তাদের পরিকল্পনা

ভবিষ্যত প্রজন্ম পাবে তার সুফল।


কন্ঠে মোদের অমৃত বানী

বাহুতে অসীম জোর- 

শেষ হবে তাদের সম্প্রদায় 

আনব প্রজ্জ্বলিত নতুন ভোর।

ফরমান সেখ




 নতুন যৌবন


কেবলি মোর  ফুটেছে ফুল

    যৌবনের যে বনে,

খেওনা কীট  একটু দাড়াও

    দুঃখ পাবো মনে।


অনেক যত্নে  করছি বাগান

      পরিশ্রম ও ঢের,

এখন যদি নাওগো খেয়ে

    হয়ে যাবে হের ফের।


আমার জীবন  বাকি অনেক

    আছে অনেক স্বপ্ন,

কেবলি মোর  নতুন পোষাক

    করোনা মোর নগ্ন।


শক্ত হয়ে  দাড়াও তুমি  

     আসুক যত ঝড়,

অসৎ পাত্রে  তবুও গো

    ফেলিওনা সর।


চাপে পড়ে  যখন-তখন

   করিওনা গো ভুল,

থাকবে না  বাগানখানি

  থাকবে নাকো ফুল।


কামড়াও না  যৌবন তুমি

  বন্যায় যাবো ভেসে,

মান সন্মান  সবই যাবে

   থাকবে নাকো শেষে।


ধর্য্য ধরো  একটু আরো  

     আসুক ফল গাছে,

দিবো খেতে  অমৃত ফল   

 করোনা ভুল পাছে।


আঁকড়ে রাখি  তোমার ভয়ে

   ভালোবাসার বন্ধন,

কখনো বা  ভেঙে পড়ি

  বসে করি ক্রন্দন।


হাকিকুর রহমান




কান্না কুড়োতে চাই


কান্না কুড়োতে এসেছি মাগো, এই অবেলায়-

কুকড়িয়ে যাওয়া মনের কান্নাগুলো

যে গুলোকে তুলে রেখেছো শিয়রের কাছে-

আমি তো কান পেতে সেগুলোকে শুনতে পাই,

তাতে, আমার কি দোষ হলো, তুমিই বলো।


সোনার ফসলেতে ভরে আছে ক্ষেত-

রাঙা মাটির বিরান পথটা তবুও কেন কাঁদে,

শূন্য আঙিনাটাই বা কেন কাঁদে,

বুঝতে পারিনে মাগো, তোমার ছায়ার

পরশ পেতে, বুকের আলোতে বিলীন হতে

আমিও যে কাঁদি।


শারদ সকালে ঝরা বকুলের কান্না

কেন শুধু আমিই শুনতে পাই, মাগো-

ঝর্ণার জল, গোল নুড়িগুলোকে বুকের

ভেতরে নিয়ে বয়ে যায় যখন, তার

কান্নার প্রতিধ্বনিও যে আমি শুনি।


বুনো সূর্যের আলোয় একাকী মরুদ্যানটা

কি হাসে, না কি কাঁদে, সে খবরটা

কেইবা রাখে? আলোর প্রার্থনায়

মায়ের পাখার নিচে বসে ছোট্ট পাখিটা

কি হাসে, না কি কাঁদে, কেইবা জানে।


তবুও বুকের পাজরে থিতিয়ে থাকা

কান্নাগুলোকে কুড়িয়ে যেতে চাই, মাগো।

স্বপন কুমার ধর




একান্তে



যখন তার পাই না দেখা,

লাগে কেবল ফাঁকা ফাঁকা।

যখন সে কাছে থাকে,

মনে হয় যেন,সব কিছুই আছে।

যখন সে যায় চলে,

ভাবি মনে তলে তলে।

এরকম কেন,হয় যে আমার,

নুতন করে তাই,ভাবি আবার।


ভাবি অনেক আছে কথা,

বলতে হবে এবার সেটা।

কিন্তু যখন হয় দেখা,

বলতে পারিনা কোনই কথা।

কোনটা বলবো,কি করে বলবো,

না কী কেবল,ওর কথাই শুনবো।

আবোল তাবোল কী রে বলি,

গন্ডগোল সব হয়ে যায় খালি।

সময় এভাবে কেটে যায়,

বুঝতে পারিনা,সে কি ভাবছে আবার।

ফাহমিদা ইয়াসমিন ( ইংল্যান্ড )




 কল্পকথা ও বাস্তব পাঠশালা



আমার কল্পণার ঘর তুমি।

যেখানে নীল আকাশ ছাদ 

আর সবুজ ঘাস হতে পারে স্বর্গসংসার।জগতের সব প্রেমগুলো জোগাড় করে গাঢ় টিপসই দেব প্রকৃতির পরতে পরতে।

যেখানে তুমি আর আমি 

আমি আর তুমি দুজনে দুজনার 

এটাই হবে আমাদের সংসার।


তোমার সাথে থাকাই আমার আনন্দ,হোক সেটা ধুসর মরুভুমি 

অথবা গহীন অরণ্য 

তোমার হৃদয় মাঝে শুয়ে থাকব অনন্তকাল।তুমি শুনতে পারবে আমার হৃদস্পন্দন আমি তোমার অনুভব বুঝে যাব প্রাকৃতিক স্পর্শে ।

রাতটা  পার করে দেই  প্রিয়  তোমার সাথে কথা বলে বলে তুমি যা বল মনে হয় সবগুলো কথায় মধুরবচন।


মিলেমিশে থাকব একাকার তুমি আর আমি

তোমার হৃদয়কুঠুরির  প্রতিটি স্তবকে লেখা থাকুক আমাদের প্রতিচ্ছবি লিখে রাখো আমি তোমার।

হৃদয়ে লিখে রাখা কল্পকথাগুলো বড়ই মধুর।আহা যদি এমন হত তাহলে মিশে যেতাম বাস্তবের পাঠশালায়।

সৈয়দা আইরিন পারভীন




মানুষ ভালোবাসা যাপণ করে আর প্রেম রচনা করে।


সৈয়দা আইরিন পারভীন


আমাদের অনেকের ধারণা প্রেম মানেই শুধু দুইজন কপোত কপোতীর হাসি, কান্না, সুখ, দুঃখের কথামালা। আসলেই কি তাই ?


প্রেমপঞ্চভূত। প্রেম একটা তীব্র অনুভুতি ও অনুরাগ। আমার মা মারা যাওয়ার পর বাবাকে দেখতাম ষ্টীল এর আলমিরা খুলে নিঃশব্দে কি জানি দেখতেন। সেই মূহুর্তে আমরা কোন ভাই বোন বাবার সামনে গেলে বাবা বিরক্তবোধ করতেন। হঠাৎ বাবাও একদিন মারা যায়। তারকিছু দিন পর যখন ভাই বোনরা মিলে ষ্টীল এর আলমিরাটা খুলি তখন দেখি আমার মায়ের হাজারো স্মৃতি চিহৃ থরে থরে সাজানো।যেই ভালোবাসা আমার বাবা যাপন করেছিল এবং মৃত্যুর এক যুগের  ও বেশীসময়  সেই স্মৃতি বুকে নিয়ে মধুর প্রেম রচনা করেছিল।


প্রত্যেক বাবা মা তার সন্তানকে খুব ভালোবাসেন। নিজের জীবনটাও দিতে কার্পন্য করে না। সন্তানের প্রতি আমাদের যে ভালোবাসা আদর সোহাগ তা কিনা বাৎসল্য প্রেম।


পিতামাতার প্রতি সন্তানের থাকে ভালোবাসা, শ্রদ্ধাবোধ, আবেগ, অনুভুতি। আর এই ভালোবাসায় শান্ত প্রেম।


প্রভুর প্রতি আমাদের যে শ্রদ্ধা ভালোবাসা ও আনুগত্য থাকে তা দাসত্ব প্রেম।


আর সখ্য প্রেম সেতো অবারিত বিশাল আকাশ। বন্ধুত্ব যা কিনা কিছুই মানে না। বন্ধু  মানে বিপদের আশ্রয়, বন্ধু মানে অনেক কষ্টের ভার লাগব।


এরপরে ও কি আমি বলবো প্রেম মানে শুধু দুইজন ??? তাহলে কেন আমরা ফেইস বুকে কোন বন্ধু একটা প্রেমের কবিতা বা পংক্তি লিখলে বলি আপনি এই বয়সে ও প্রেমের চিন্তা  করছেন।


প্রেম থাকে মানুষের জীবনে সারাজীবন সারাক্ষন সারাবেলা। প্রেম বয়স ভেদে নয়। প্রেম পঞ্চভূত। প্রেম ঝলসানো অনুভুতি। প্রেম স্বর্গীয়, প্রেম শ্বাশত।