০৯ জানুয়ারী ২০২২




উপন্যাস 

টানাপোড়েন ৮৯
বিদায়
মমতা রায়চৌধুরী।
৩১.১২.২১
রাত্রি১.৩৫
আজ একটা দিন গেল বটে রেখার ,কতটা ব্যস্ততার মধ্যে দিয়ে তা বলার অপেক্ষা রাখে না।একদিকে গত রাত্রে সাড়ে বারোটায় বাড়ি ফেরা হঠাৎই কাকিমার শরীর খারাপ কথাটা শুনেই ছুটতে হলো ।মনোজকে নিয়ে দেশের বাড়ি কাকিমার কাছে । ফলে স্কুলে যেতে পারে নি । হঠাৎ কোন বাজলো'কেন দূরে থাকো শুধু আড়াল রাখো, কে তুমি কে তুমি আমায় ডাকো'। গাড়িতে যেতে যেতেই ভাবছিল এসমস্ত কথা। ফোনটা বের করে দেখে বড়দির ফোন।
রেখা ফোনটা রিসিভ করে বলে' হ্যাঁ দিদি বলুন।'
বড়দি বললেন' রেখা আজকে তুমি স্কুলে আসলে না?'
রেখা বলল' আসলে দিদি একটা প্রবলেম হয়ে গেছে।'
বড়দি বললেন'তুমি না আসলে তো এদিকে প্রবলেম হয়ে যাবে।'
রেখা বলল' হ্যাঁ আমি সেটা জানি।'
বড়দি বললেন" কি হয়েছে?'
রেখা বলল'আসলে আমার কাকিমা  হঠাৎ অসুস্থ। তাই সেখানে যাচ্ছি।'
বড়দি বললেন' ও তাই বুঝি?'
রেখা বলল' হ্যাঁ ,দিদি।'
বড়দি বললেন'হ্যাঁ সেখানে তো যেতে হবেই। ঈশ্বর কাছে প্রার্থনা করি যেন সবকিছু ঠিকঠাক হয়ে যায়।"
রেখা বলল' হ্যাঁ দিদি এটুকুই প্রার্থনা।'
বড়দি বললেন' কিন্তু স্কুলের প্রোগ্রামের ব্যাপারটা..।'
রেখা বলল' চিন্তা করবেন না দিদি প্রোগ্রামের যা-কিছু অ্যারেঞ্জমেন্ট সব আমি করেই 
রেখেছি ।শুধু দোকান থেকে যে জিনিসগুলো আনার দরকার ,সেগুলো নিয়ে নিতে হবে। আমি টিচারদের বলে দিচ্ছি।'
বড়দি বললেন 'সে তো ঠিক আছে কিন্তু পুরো প্রোগ্রামটা সঞ্চালনার ব্যাপার রয়েছে।'
রেখা বলল 'যদি কাকিমা স্টেবল  থাকেন, তাহলে আমি আজকে রাত্রে ফিরবো ।কালকে স্কুলে জয়েন করব দিদি.'।
বড়দি বললেন' আমি জানি তোমার কাজের ব্যাপারে কতটা তুমি সিরিয়াস ,।সে ব্যাপারে আমার কোন অভিযোগ নেই ।কিন্তু তা হলেও এ ব্যাপারটা তো আর তোমার হাতে নয় ।সেই জন্যই চিন্তা হচ্ছে।'
রেখা বলল' হ্যাঁ দিদি সেটাই তো?'
বড়দি বললেন 'ঠিক আছে। তুমি দেখো ফোনে যোগাযোগ করে ,কি করতে পারো ?আমাকে একটু জানিও কেমন?'
রেখা বলল 'হ্যাঁ দিদি সে তো জানাবো ই। আমি ঐদিন থে প্রেসেন্ট না থাকতে পারলে আমারও প্রচন্ড খারাপ লাগবে?'
বড়দি বললেন'হ্যাঁ সে তো ঠিকই। রিম্পার ও  খারাপ লাগবে। তোমাদের মধ্যে এত সুন্দর বন্ডিং ভাবতেই অবাক লাগে ।বেশিরভাগ  টিচারদের মধ্যে তো শুধু দলাদলি আর মনোমালিন্য।'
অপল্লো বিদায় সম্বর্ধনা ।'বিদায় 'শব্দটা আমার কাছে প্রচন্ড যন্ত্রণা দায়ক।'
বড়দি বললেন 'সেটা আমি উপলব্ধি করতে পারি।'
রেখা বলল তবু তো মেনে নিতেই হবে।
ঠাকুরের কথায়
যেতে নাহি দিব হায়
তবু যেতে দিতে হয়
তবু চলে যেতে হয়।'
বড়দি বললেন' একদম হক কথা।'
রেখা বলল ' কি করে যে প্রোগ্রামটা আমি সঞ্চালনা করব সেটাই বুঝতে পারছি না ।তবু চেষ্টা করব?'
বড়দি বললেন'সে আস্থা আমার আছে তোমার প্রতি। তোমরাও সাবধানে যেও।'
রেখা বলল' হ্যাঁ, দিদি।'
তারপর রেখা এটাই ভাবছিল যে পরের দিন যেহেতু রিম্পাদির বিদায় সম্বর্ধনা ফলে সমস্ত কিছুর প্রোগ্রাম এরেঞ্জ এর দায়িত্ব তার কাঁধে তুলে দিয়েছেন বড়দি। এমন কি,একটা মেমেন্টো এতদিনের স্কুলের স্মৃতি, সেখানে ভেতরের লেখাটা পর্যন্ত রেখাকে লিখে দিতে হয়েছে ।কিন্তু সেগুলো যে দোকানে ছিল, সেখান থেকে আনার দায়িত্ব ওই মুহূর্তে ঠিক করে নিতে হয়েছে  ।কেননা যদি কাকিমার বাড়াবাড়ি হয়ে থাকে তাহলে তো ফিরতেই পারবে না । বাড়ি পৌঁছে রেখা দেখল কাকিমা একটু স্টেবল।এদিকে মনেপ্রাণে চেয়েছিল অনুষ্ঠানে থাকতে। তাদের এতদিনের
সম্পর্ক। এতগুলো বছর একসঙ্গে কাটানো। শুধু স্কুল জীবন নয় , তারা সাংসারিক জীবনের সুখ-দুঃখ-কষ্ট সময়ের প্রতিটি পল শেয়ার করেছে। ।রিম্পাদি না থাকলে রেখার স্কুলের অস্তিত্ব কি রকম হবে সেটা ভেবে যেমন সে কষ্ট পেয়েছে , তেমনি আঁতকে  উঠেছে ।তার বিদায় যাত্রাটাকে সুন্দরভাবে সাজিয়ে দেবার দায়িত্ব তার কাঁধে ছিল । সমস্ত  প্রোগ্রাম এরেঞ্জ করা। ফোনে ফোনে অন্যান্য টিচারদের  দায়িত্ব দিয়ে,বড়দিকে জানিয়ে দেওয়া। রেখার  স্কুলে না আসলেও যাতে কোন অসুবিধা   না হয় । ঈশ্বর তো মনের কথা শোনেন ,সত্যি করেই যদি ঈশ্বরকে ডাকা যায়। রেখার কথাও  শুনেছেন ।
মনোজকে নিয়ে তড়িঘড়ি করে গেছে কাকিমার কাছে। সেখানে গিয়ে যেন ভূত দেখছে । সমু মানে সোমদত্তা বসে আছে ।
গাড়ি থেকে নামতেই ভোলা কাকা এসে বলল ', তুমি এসেছ চলো চলো চলো। '
রেখা বললো 'এখন কেমন আছে কাকিমা?'
ভোলা কাকা বলল 'এই ডাক্তার দেখে গেলেন ।আগের থেকে একটু ভালো।'
রেখা হাফ ছেড়ে  বলল 'বাঁচলাম টেনশনে ছিলাম। থ্যাংকস গড।'
ভোলা কাকা বলল 'ছোটবৌদি তো সারাক্ষণ শুধু তোমার নাম করেই যাচ্ছে।"
রেখা বললো 'চলো ,চলো, চলো ।আগে কাকিমাকে গিয়ে দেখি।'
রেখা আর মনোজ ভেতর ঢুকলো। 
কাকিমার ঘরে যেতেই ভোলা কাকা তার আগে বলল'ছোটবৌদি ,দেখো কাকে নিয়ে এসেছি।'
সমু বললো 'এখন মাকে ডেকো  না তো? একটু আগে ঘুমালো।'
রেখা বললো' থাক ডাকতে হবে না।'
ভোলা কাকা বলল'ছোট বৌদি ডাকতে  বলেছে।'
ভোলা কাকা আর সমুর কথা কাটাকাটিতে কাকা পাশের ঘর থেকে জিজ্ঞেস করলেন কে এসেছে রে?'
ভোলা কাকা বলল 'দিদিমণি এসেছে?'
কাকা আনন্দে উচ্ছ্বসিত হয়ে বললেন' কে ননী এসেছে।"
রেখা আর  মনোজ কাকার ঘরে গিয়ে উপস্থিত হয়।
রেখা কাকাকে  প্রণাম করে বলে 'এখন কেমন আছো?'
কাকা বললেন 'তোকে দেখতে পেয়েছি এখন ঠিক আছি।'
রেখা বলল" সমু কবে এসেছে?'
কাকা বললেন 'গত রাত্রে।'
রেখা বলল 'পাবলো কোথায়?'
কাকা বললেন 'ওকে রেখে এসেছে।'
 রেখা বলল 'আচ্ছা।'
রেখা আরো বলল 'দেখি কাকিমার কাছে যাই।'
কাকু বললেন 'ঠিক আছে',।
আবার  কাকিমার ঘরে গিয়ে উঁকি দিয়ে দেখে ঘরে তখন সমু নেই। রেখা সরাসরি কাকিমার ঘরে ঢুকে দেখল কাকিমা জেগে।
রেখা কাকিমাকে গিয়ে বলল ' কাকিমা এখন কেমন বোধ করছ?'
কাকিমা বললেন 'আগের থেকে ভালো।'
ঠিক তখনই আবার সমু ঘরে ঢুকে বলল এ'খন মাকে ডিস্টার্ব না করাই ভালো।'
রেখা বলল 'আমি তো চলে যাব কাকিমার সঙ্গে একটু দেখা না করলে হয়?'
কাকিমা বললেন'আয় আমার কাছে আয় বস।
 আমি ভীষণ খুশি যে তুই এসেছিস?'
অবশেষে ইতিমধ্যে মনোজ ঘরে ঢুকে পড়ে।
সমু যেন মনোজকে  চিনতে ই পারে না।
বেশ কিছুক্ষন ধরে কাকিমার কাছে থেকে বলে 'আমাদের ফিরতে হবে কাকিমা?'
কাকিমা বললেন "থাকতে পারবে না।'
রেখা বললো "না কাকিমা স্কুলে কালকে যেতেই হবে।'
কাকিমা কাকে যেন খুঁজে বেড়াতে লাগল তারপর বললো "ভোলা।'
ভোলা কাকা পাশেই ছিল বলল 'এই তো বৌদি।'
কাকিমা বললেন 'জামাই মেয়ে যেন না খেয়ে  যায় দেখো।'
ভোলা মাথা নেড়ে বলল 'এই নিয়ে ভাবতে হবে না তোমায়।"
হল এখন কোন খাওয়ার ঝামেলায় যাব না কাকিমা।
মনোজ এবার তাড়া দিয়ে বলল'তাড়াতাড়ি চলো রাত হয়ে গেলে কিন্তু কুয়াশা পাবে, গাড়ী চালাতে অসুবিধা হবে।'
রেখা বলল "ঠিক আছে কাকিমা ,তুমি তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে ওঠো। আমরা এখন উঠি।'
কাকিমা বললেন 'কিছু খাওয়া দাওয়া করলে না।'
রেখা বলল "ওসব অন্যদিন হবে কাকিমা।ঠিক আছে ,আসছি তাহলে।' যাও বা একটু বসতো  সমুর ভাব ভঙ্গি দেখে কিছুতেই ভালো লাগছিলো না।
বাড়িতে ফিরতে ফিরতে রাত বারোটা বেজে গেল
 পরেরদিন স্কুলে রিম্পাদির ফেয়ারওয়েল।
অবশেষে রিম্পাদিকে  বিদায় জানাতেই হচ্ছে।
সকাল থেকে মনটা বিষাদে পরিপূর্ণ ছিল। অবশেষে যাব যাব করে আজকের দিন বেদনায় ভারাক্রান্ত করে দিয়ে রিম্পাদি চলে যাবে নতুন কর্ম জীবনে। গাড়িতে আসতে আসতেএসবই ভাবছিল
স্কুলে পৌঁছে রিম্পাদিকে খোঁজ করছিল।
বড়দি বললেন 'কাকে খুঁজছো? রিম্পাকে?
 সে রাস্তায় আছে।'
রেখা বলল 'ও আচ্ছা।'
বড়দি বললেন 'তুমি এদিকে সব প্রোগ্রাম সেট করে ফেলো।'
রেখা বলল 'হ্যাঁ দিদি।'
 প্রোগ্রাম সেট করতে করতেই রিম্পাদি এসে হাজির হলো।
রেখার তো চোখে জল ছল ছল করছে।
অনুষ্ঠান শুরু হয়ে গেল।
প্রথমে স্নিগ্ধার গান দিয়ে উদ্বোধনী সংগীত।
'তোমারেই মেনেছি জীবনের ধ্রুবতারা..।'
পাদের জন্য আনা কিছু স্কুলের তরফ থেকে উপহার সামগ্রী যেটা সারা জীবন ভালোবাসার স্মৃতিসুধা হিসেবে থেকে যাবে।
এরপর বিষাদ ঘন পরিবেশে রিম্পাদিকে নিয়ে দু চার কথা বলা।
এরপর পুরানো সেই দিনের কথা দিয়ে মেয়েদের স্মৃতিচারণ।
এরপর সৌমীয়ার কবিতা আবৃত্তি।
এরপর বড়দি দু চার কথা বললেন।
তারপর রেখাকে স্মৃতিচারণ মেয়ের কথা বললে রেখা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়ে।
রিম্পাদি রেখাকে জড়িয়ে ধরে কান্নায়ll ভেঙে পড়ে। রিম্পাদির ও একই অবস্থা।'
কান্না ঝরা মুহূর্ত। কাল থেকে আর রিম্পাদি স্কুলে আসবে না। রেখার পাশে  জায়গাটি শুধু ফাঁকা ফাঁকা আর ফাঁকা। অন্তরাত্মা হু হু করে উঠলো। এরমধ্যে বড়দি রিম্পাদি সম্পর্কে বক্তব্য রাখলেন। সমাপ্তি সংগীত'তুমি রবে নীরবে হৃদয়ে মম।
এবার রিম্পাদি আর রেখা দুজনেই হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো। এ যেন বাঁধ ভাঙ্গা বাদল ঢেউয়ের উচ্ছ্বাস।
বাড়ি ফেরার পথে রিম্পাদি আজকে গাড়ি নিয়েএসেছিল ।রেখাকে বাড়ির কাছে নামিয়ে দিল। 'বিদায় '  ছোট্ট একটা শব্দ কিন্তু এর মধ্যে রয়েছে  বিচ্ছেদ বেদনায় ভরা এক আবেগঘন মুহূর্ত। 'বিদায় 'জানানোটা কতটা কষ্টের। তবুও "বিদায়' জানাতেই হয়
রেখার কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লাইনটা বারবার মনের ভেতরে অনুরণিত হতে থাকে।
"যেতে নাহি দিব হায়
তবু যেতে দিতে হয়
তবু চলে যেতে হয়।'

কবি রুকসানা রহমান এর কবিতা





গেরুয়া আলোর পথে
রুকসানা রহমান 

কেন যে শূ্ন্যতায় কষ্টের নীবর বেদনায় ঘুরেফিরে
সেই তুমি ভেসে ওঠো আমার সমুদ্রের অতলতায়
আধাঁর দৃষ্টিতে স্বপ্ন এসে ভীড় করে 
জলজ জানালায়।
বসে আছি একোন দিগন্ত ছেড়ে কোন দিগন্তে
ভেঙ্গে গেছে যার প্রনয়ের দ্ধার  অনন্ত প্রতিক্ষায়
নিশুতি রাতের  বাহুডোর । 

আমার ঘরে রাত নামে,যেন খড়রৌদ্রের বিরহ পত্রনিয়ে।
খুঁজিকি আজও  তবে নিরবে নির্জনে
সেই স্মৃতিময় তোমাকে...
তুমি কি কখনো খোঁজো একা হলে ? 

ক্লান্ত অশ্বথের শাখায় মিয়ানো চাঁদের আলোয়
চমকে ওঠা মন শিশির ভেজা চোখ আজও
হাওয়ার দীর্ঘশ্বাস উড়ে,ওড়ে মরুর বাঁকে ঐ-কারাভ্যানে
নিঃশ্বেস হয়ে ও আমি কি দেখেছি তারে
নীল নদের তীরে নিঠুর সেই মুখ! 

জীবনের কত যে গল্প পড়ে থাকে বিকেলের
গেরুয়া আলোর পথে।
নিরবে নিশিথে এসেছিলে আশ্চর্য কৌশলে প্রাণের
আকুতি জানিয়ে
সেই তুমি একটু একটু করে মুছে দিলে স্বপ্নের আত্মার পান্নার সব রঙ
যেমন করে মোহের খেলার আর্কষণের ভালোবাসা শেষ হলে পাশ কেটে চলে যায় নীরদ তীর্থস্নানে
হৃদয় রেখায় নিরব বিষের শিবিরে কোকিল 
পালক ছড়িয়ে।

মনি জামানের ধারাবাহিক উপন্যাস ১ম পর্ব

শুরু হলো এই সময়ের অন্যতম তরুণ কবি মনি জামানের ধারাবাহিক উপন্যাস "সেদিন গোধূলি সন্ধ্যা ছিল"







সেদিন গোধূলি সন্ধ্যা ছিল
(১ম পর্ব)
মনি জামান 

আজ নিলয়ের মনটা খুব খারাপ মেবিনের কথা বার বার মনে পড়ছে,নিলয় ফোনটা হাতে নিয়ে মেবিনের নাম্বারে ফোন করলো
অপর প্রান্ত থেকে জানিয়ে দেওয়া হল,দুঃখিত এই মূহুর্তে সংযোগ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।নিলয় আবার ফোন করলো অপর প্রান্ত থেকে একই উত্তর দুঃখিত এই মুহুর্তে সংযোগ দেওয়া সম্ভব হচ্ছেনা।
বিষন্নতায় ছেয়ে গেলো নিলয়ের মন ফোনটা রেখে দিয়ে মনটা ভিষণ খারাপ লাগছে নিলয়ের,কয়দিন হলো মেবিনের সাথে কথা হয়নি,সেই ২০১৮ সালের ১৬ই ডিসেম্বর বিজয় দিবসে মেবিনের সাথে প্রথম দেখা ও পরিচয় হয়েছিলো নিলয়ের একটি কবিতা আবৃত্তির অনুষ্ঠানে।
সেই থেকে দুজনের পরিচয় আর এই পরিচয়ের সূত্র ধরেই ধীরে ধীরে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে দুজনের মাঝে,সেখান থেকে আজ পার্যান্ত কখনো মেবিনের ফোন বন্ধ পাইনি নিলয়। আজ মনটা ভিষণ খারাপ লাগছে মেবিনের জন্য ভাবছে কোন কিছু কি হলো,নাকি ফোনে চার্জ নেই এমন উল্টা পালটা ভাবনা নিলয়কে অস্থির করে তুলছে,মেবিন ফোনটা কেন বন্ধ করে রেখেছে কোন সমস্যা হয়নি তো?আবার ভাবছে ধ্যাত তা কেন হবে মেবিন তেমন মেয়েই নয়।
যদিও ওরা ভিন্ন ভিন্ন ইউনিভার্সিটিতে পড়ে নিলয় আর মেবিন দুজনের ভিন্ন অবস্থান হলেও সব সময় ফোনে কথা হয় দুজনের, মাঝে মাঝে দুজন নির্জনে বসে ঘন্টার পর ঘন্টা কথা বলে।
নিলয় জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষ ইংরেজীতে পড়ে,আর মেবিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতিতে দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। 
নিলয়ের গ্রামের বাড়ি মুরাদ নগর এক অজপাড়া গাঁয় থেকে এসেছে ঢাকায় পড়তে, নিলয়ের ভিতর সেই গ্রাম্য সরলতার স্পষ্ট ছবি তার অবয়ব জুড়ে।নিলয় মেধাবি ছাত্র দেখতেও মন্দ নয় মোটামুটি সুন্দর,আর মেবিনের বাবা মুজাহিদ প্রফেসর,মা পারভীন বেগম গৃহিণী,এক ভাই প্রিন্স,প্রিন্স বড় আর মেবিন ছোট নাটোরের অভিজাত পরিবারে মেবিন বড় হয়েছে এবং সবার আদরের সে।
মেবিন নিলয় সম্পর্কে সব জেনে শুনে তারপর নিলয়কে ভালবেসেছে,কারণ গ্রামের এই সহজ সরল ছেলেটার ভিতর মেবিন সরলতার স্পষ্ট ছাপ খুঁজে পেয়েছে যেখানে নেই কোন কৃত্তিমত্বার কোন ছাপ।
এটাই মেবিনের ভাল লাগার একমাত্র কারণ,কিন্তু মেবিন ধনীর একমাত্র মেয়ে হয়েও নিলয়ের মত ছেলেকে ভালোবাসে নিলয়ের ভয় এখানে যদি মেবিন কখনো নিলয়কে ভুল বুঝে হারিয়ে যায় তার জীবন থেকে।এই ভয়টা আজ নিলয়ের ভিতর তোলপাড় শুরু করে দিয়েছে কি করবে এটাই ভাবছে বসে বসে হঠাৎ মেবিনের ফোন এলো, নিলয়ের অপেক্ষার বাধ ভাঙ্গা আনন্দ মনকে ভরে তুললো সব এলোমেলো ভাবনা গুলো উধাও হয়ে গেল মনে একটা শিহরণ যেন সমস্ত শরীরে ছড়িয়ে পড়লো। 
নিলয় তাড়াতাড়ি ফোনটা রিসিভ করলো অপর প্রান্ত থেকে মেবিনের কন্ঠ ভেসে এলো,কেমন আছ নিলয় তুমি?নিলয় বলল,ভাল আছি তবে তোমার ফোনটা বন্ধ ছিল কেন?মেবিন বলল,ফোনে চার্জ ছিলনা নিলয় শুনে  বলল,তাই!তবে ফোন বন্ধ না করেও চার্জে বসাতে পারতে,উত্তরে মেবিন শুধু বলল ও আচ্ছা বুঝলাম।
নিলয় বলল,কি বুঝলে সোনা তুমি,মেবিন নিলয়ের প্রশ্নটা এড়িয়ে বলল,কাল তো ইউনিভার্সিটিতে গ্রীষ্মের ছুটি হয়ে যাচ্ছে চলনা আমরা দুজন কক্সবাজার থেকে ঘুরে আসি।
মেঘ না চাইতে বৃষ্টি নিলয় বলল, কক্সবাজার!সত্যি যাবে বলো!কবে যেতে চাও বলো আমাকে?মেবিন বলল,আগামী সপ্তাহে,নিলয় সম্মতি জানিয়ে দিল আগামী সপ্তাহ মানে কি বার,মেবিন বলল,আগামী শনিবার।
নিলয় আর মেবিন সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলো আগামী শনিবার ওরা দু'জন কক্সবাজারের উদ্দেশ্য রওনা হবে,আজ নিলয়ের খুশির বাঁধ ভাঙ্গা জোয়ার বইছে মনে তার প্রিয়তমা মেবিনকে খুব কাছ থেকে একান্ত ভাবে দেখতে পাবে,সমুদ্রের তীর ঘেঁষে দুজন দুজনে হাত ধরে হাটবে কত আনন্দ আজ নিলয়ের মনে।
নিলয় মেবিনের হাতে হাত রাখবে উন্মত্ত সমুদ্রের নোনা জলে জলকেলি খেলবে,সূর্য অস্ত যাবে সেটা দেখবে আরো কত কি মনে আসছে আজ।
রাতে নিলয়ের আর ঘুম আসছে না কি যেন শিহরণ সমস্ত শরীরে ছড়িয়ে পড়ছে,মেবিনের কথা ভাবতে ভাবতে নিলয়ের সারারাত কিভাবে কেটে গেল নিলয় বুঝতেই পারলো না।
পরের দিন সারাদিন নিলয় আর মেবিন দুজন ঘুরলো,দিন শেষে রূমে ফিরে পড়া শেষ করে খেয়ে শুয়ে পড়লো তারপর গত রাতের ঘুমকে পরাজিত করে নিলয় ফোনটা হাতে নিলো এবং মেবিনকে ফোন করলো,অপর প্রান্ত থেকে মেবিন বলল,এত রাতে কেন ফোন দিয়েছো?
নিলয় বলল,কেন জানি ঘুম আসছে না আমার গত কাল রাতে ও শুধু তোমার কথা মনে পড়েছে,মেবিন এক গাল হেঁসে বলল, আমারও তোমার কথা খুব খুব মনে পড়ছে তাই আমিও জেগে আছি।
নিলয় বলল,জানো এই যে ঘুম না আসা এটা কি প্রেম রোগ?মেবিন হেসে বলল,বোধহয়।
নিলয় বলল,তুমি সত্যি সুন্দর শুধু ঝগড়াটা বাদ দিলে মেবিন বলল,কি আমি ঝগড়াটে?ঠিক আছে তুমি ভালো একটা মেয়ে দেখে প্রেম কর আমি গেলাম।
নিলয় বলল,প্লীজ যেওনা আমি এমনি বলেছি ফান করে,তুমি তো জানো এই জন্য তোমাকে কাক পাখি বলি।
মেবিন অভিমানের সুরে বলল,হয়েছে এখন রাখো আর ঘুমিয়ে পড়,নিলয় মেবিনকে ফোনে একটা চুম্বন করে জানতে চাইলো আগামী শনিবার কয়টার সময় বেরুবো আমরা,মেবিন বলল,সকাল দশটার ট্রেনে যাবো আমরা।
নিলয় বলল,ঠিক আছে কাক পাখি শুভ রাত্রি তাহলে এখন রাখছি বলে ফোনটা কেটে দিয়ে রেখে দিল।
নিলয় আদর করে মেবিনকে সব সময় কাক পাখি বলে ডাকে,মেবিনের ও ভাল লাগে নিলয়ের মুখ থেকে এই ডাকটা শুনতে। 

চলবে.....




শায়লা শিহাব কথন
অলিখিত শর্ত (পর্ব ৫১)
শামীমা আহমেদ 

রিশতিনার প্রশ্ন শুনে বেশ কিছুক্ষণ নীরব থেকে শিহাব বললো,
---আমি ভালো আছি। তা তুমি হঠাৎ দেশে?
---হ্যাঁ, এসেছি একটা জরুরী প্রয়োজনে।শিহাব তুমি সত্যি করে বলো কেমন আছো?
রিশতিনা এই নিয়ে তিন তিনবার জানতে চাইল, শিহাব কেমন আছে।কিন্তু কেন এই জানতে চাওয়া? সেতো অন্য একটি জরুরি কাজে দেশে এসেছে।শিহাবের জন্যতো নয়!
চার চারটি বছর শিহাবের কিভাবে দিন হয়েছে, রাত কেটেছে, কতটা যন্ত্রনায় অপমানে ক্ষোভে তার প্রতিটি প্রহর কেটেছে।তার হিসেব কি আর এই এক মূহুর্তে দেয়া সম্ভব?
শিহাব নিজেকে বেশ শক্ত করে নিয়ে বললো,তুমিই বলো কেমন থাকতে পারি?
রিশতিনা এক মূহুর্তও অপেক্ষা না করে বলে উঠলো, আমি জানি আর এই সবকিছুর জন্য আমিই দায়ী। সে আমি ভীষণভাবে বুঝতে পারি। নিজের উপর আমি নিজেই দোষারোপ করি। সেদিন যদি,,,
----থাক সেসব কথা।
কেন থাকবে শিহাব?তোমারতো কোন দোষ ছিলনা। আমিই তোমার জীবনটা ওলোট পালোট করে দিয়েছি।
--আচ্ছা এখন রাখতে চাইছি।আমাকে আর কল না দিলে খুশি হবো।
রিশতিনা যেন এ কথাটি একেবারেই আমলেই নিলো না।
সে বলেই চললো,,,তুমি তো এখন উত্তরা থাকো।সেক্টর ১৩ তে বাসা।কুশল সেন্টারে অফিস।গাজীপুরে ফ্যাক্টরি,, সবাই জিগাতলায় থাকলেও তুমি একাই এখানে থাকছো।তোমার সেই বাইকটা এখনো আছে।শীত গ্রীষ্মে,ঝড় বৃষ্টি জল ঝড়ে চলার সঙ্গী হয়ে আছে। শুধু জানিনা,সেখানে কোন নতুন
যাত্রী সঙ্গী হয়েছে কিনা? 
---এত কিছু তুমি কেন বলছো?রিশতিনা,তুমি তোমার নতুন জীবন নিয়ে সুখে থাকো।আমি এখন রাখতে চাইছি।
রিশতিনার থমথমে কন্ঠে বুঝাই যাচ্ছে ও প্রান্তে রিশতিনার ভেতরেও অনেক জমানো কথার ভার।অনুরোধের সুরে বললো,
শুধু আরেকটা কথা বলবো,
কী বলবে?
রিয়াজ কেমন আছে?
রিয়াজ?রিয়াজ কে? শিহাবের কন্ঠে যেন রাজ্যের বিস্ময়! 
আমাদের ছেলে।আমি তো তাকে আপন করে পেলাম না।আমার নামের সাথে মিলিয়ে আমি ওকে রিয়াজ নাম দিয়েছি।
সে তোমার ইচ্ছে। শিহাব চরম বিরক্তি প্রকাশ করে বললো,তুমি আমার এত খোঁজ খবর কিভাবে পেলে? আর কেনইবা তা রাখছো।
সবই তো শেষ, কেন এত আগ্রহ আর?
---রোমেল ভাইয়ার কাছ থেকে আমি নিয়মিত  তোমার খোঁজ খবর নিয়েছি।তোমার ভাল মন্দে দূর থেকে হলেও শুভকামনা করেছি।
রোমেল? আমার বন্ধু রোমেল? শিহাবের বিস্ময়ের সীমা রইল না!
হ্যাঁ, রোমেল ভাইয়া।সে আমার কাজিন। সে আমাকে সবসময় তোমার খবর জানিয়েছে।
----তোমার এটা করা ঠিক হয়নি।তোমার লেখাপড়ায় ক্ষতি করে।
রিশতিনা বুঝতে পারে শিহাবের অভিমানটা অনেক গভীরে। রিশতিনার তাইতো সহজ স্বীকারোক্তি, 
শিহাব,আমি তোমাকে এখনো ভুলতে পারিনি, পারবোও না কোনদিন।
কিন্তু তোমার এটা ঠিক হচ্ছে না রিশতিনা।
আমি এখন রাখবো।তুমি আমাকে আর কল দেবে না।
একটা কথা ছিল।
শিহাব যেন শুধুই শুনে যাওয়ার জন্য বললো,
কি কথা আবার?বলো,
আমি তোমার সাথে দেখা করে তা বলতে চাই।যক্স
শিহাব নিজেকে ভীষণভাবে সংযত রেখে শুধু বললো,সেটা সম্ভব নয়।
কেন নয়? আমি এক সপ্তাহের জন্য দেশে এসেছি।তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে।
রিশতিনার সাথে কথা বলায় শিহাব যেন বারবার শায়লার কাছে অপরাধী হয়ে যাচ্ছে।
তার অনেক কষ্টের রাত পেরিয়ে আজ শায়লার কাছে থিতু হতে চাওয়া।শায়লাকে আপন করে আগামীর স্বপ্ন বোনা। শিহাব তবুও কথস চালিয়ে যাচ্ছে।
তুমিতো আমাকে একা ফেলে গিয়ে  দূর থেকে আমার সব খোঁজই নিয়েছো।আমার মনের কষ্টের কতখানি লাঘব করতে পেরেছো তাতে?
শিহাব আমি পরিস্থিতির স্বীকার।আমি তোমাকে সব খুলে বলবো।আমি শুধু একটিবার তোমাকে দেখতে চাই।শুধু 
একটিবার।এই জীবনে আর কোনদিন তোমাকে বিরক্ত করবো না।
কাল দুপুরে আমি গুলশানের ফোর সিজন্সে লাঞ্চে অপেক্ষায় থাকবো।
হঠাৎই মেসেঞ্জারে শায়লার কল বেজে উঠলো।রিশতিনার কথায় ছেদ পড়লো। 
ওপ্রান্তে রিশতিনা বলেই চলেছে,,
শিহাব, আমাদের ভালবাসা, আমাদের সন্তানের কসম দিয়ে বলছি,আমি এই একটিবার শুধু তোমাকে দেখবো। তোমাকে দেখার জন্য আমার প্রাণটা জিইয়ে রেখেছি।
তুমি আসবে আমি অপেক্ষায় থাকবো।
বলেই রিশতিনা শিহাবের উত্তরের অপেক্ষায় না থেকে ফোন কেটে দিলো।
শিহাব দ্বিধাদ্বন্দে পড়ে গেলো।খুব অল্পদিনের হলেও রিশতিনা তার বিবাহিত স্ত্রী, তারই সন্তানের মা।এটাতো অস্বীকার করার উপায় নেই। বৈধ মতেই তাদের বিয়ে হয়েছিল।যদিও রিশতিনার বাবা তা মেনে নেয়নি বলে আজ তারা বিচ্ছিন্ন জীবন কাটাচ্ছে।তার প্রতি রিশতিনার সেই আবেগতো আগের মতই আছে।তাতে সাড়া দেয়া কি অন্যায় হবে?
আইনগত ভাবে ভাবলে তারতো পূর্ণ অধিকার আছে তার প্রতি, তার সন্তানের প্রতি।
সাথে সাথে আরাফের মুখটা ভেসে উঠলো! মনে হলো,কে যেন আরাফকে ছিনিয়ে নিতে চাইছে! শিহাব পাশে থাকা বালিশখানি আঁকড়ে ধরলো। 
মেসেঞ্জারে বারংবার শায়লার কল আসছে।শিহাবের মনের ভেতর রিশতিনার অতীত স্মৃতি আর আজকের কথাগুলো কেমন যেন ঘুরপাক খাচ্ছে।কিছুতেই সে স্বাভাবিক হতে পারছে না।মনে হচ্ছে টাইম মেশিনে চড়ে সে সেই ঝিগাতলার দিনগুলোতে ফিরে গেছে আবার একটু আগে রিশতিনার কথাগুলো কানে প্রতিধ্বনিত হচ্ছে।শিহাব দুই হাতে কান চেপে ধরলো।সেই বিভীষিকাময় দিনগুলো!  উফ! কি অসহ্য যন্ত্রণা!  একদিকে সদ্য বিয়ে হওয়া দুজনার বিচ্ছেদ,এরপরই সন্তান আগমনের খবর! রিশতিনার বাবার বাড়িতে বন্দী জীবন।শিহাব এক নিদারুন গোঙানিতে সারারাত ছটফট করেছে।ক্রুদ্ধ রিশতিনার বাবা তাকে যে কোন মূহুর্তে এরেস্ট করানো হুমকি।শিহাবের  মায়ের ছেলের দুশ্চিন্তায় শয্যাশায়ী হয়ে যাওয়া।মায়ের প্রাণ বাঁচাতে শিহাব তার জীবনের সব অন্যায় মেনে নেয়।
শুধু আরাফকে পেয়ে সে বেঁচে থাকার একটা অবলম্বন খুঁজে পায়।
একের পর এক আঘাতে শিহাব পুরোনো পরিবেশ ছেড়ে উত্তরায় চলে এসে সবকিছু ভুলে থাকবার চেস্টা করছিল।প্রতিটি বিকেল সন্ধ্যা তার একাকীত্বের সাক্ষী হয়ে আছে। কোন অনৈতিক সম্পর্কে সে জড়ায়নি।ভদ্র ঘরের সন্তান হওয়ার কারণে একার জীবনেও সমাজে নিজেকে ভালো প্রমান করতে হয়েছে।
মেসেঞ্জারে শায়লার কল বেজেই যাচ্ছে।একটার পর একটা দীর্ঘ রিংটোন। 
শিহাব অবচেতন মনে হাত বাড়িয়ে শায়লার কলটা রিসিভ করলো।
ওপ্রান্তে শায়লা শিহাব,শিহাব করে ডেকেই যাচ্ছে।শিহাবের কানে যেন কিছুই পৌছাচ্ছে না।
শায়লা অস্থির হয়ে উঠলো!সে বলেই চলেছে,শিহাব তুমি কি ঘুমিয়ে গেছো?কল রিসিভ করছিলে না কেন? কথা বলছো না কেনো? তুমি কি অসুস্থ? 
শিহাবের নীরবতায় শায়লা ছটফট করতে লাগলো।বেশ অনেকক্ষন পর শিহাব কথা বলে উঠলো। 
না মানে হ্যাঁ, একটু ঘুমিয়ে পড়েছিলাম।
ঠিক আছে।ঘুমিয়ে পড়ো।আমি রাখছি।
না শায়লা,না তুমি রাখবে না,তুমি যাবে না,তুমি আমার পাশে থাকো।তুমি পাশে থাকলে আমার ভালো লাগে।শায়লা বেশ অবাক হলো!
মনে হচ্ছে শিহাব কেমন যেন ভীত সন্ত্রস্ত। মনে হচ্ছে সে কোন অন্ধকার যায়গায় একা দাঁড়িয়ে আছে।শায়লাকে সে পাশে পেলে ভরসা পাবে।
শায়লা বুঝতে পারছে না,এমন  আবেগহীন কাঁপা কাঁপা কন্ঠে শিহাব কেন এসব বলছে?
শায়লা কথা দাও,আমাকে ছেড়ে তুমি কোনদিন যাবে না।আমার আরাফকে তুমি বুকে আগলে রাখবে। 
শায়লা বুঝতে পারলো অতীত নিয়ে শিহাব ভীষণ ভেঙে পড়েছে।শায়লা বুঝে নিলো শিহাবকে এগুলো থেকে বের করে আনতে হবে।
শায়লা শিহাবকে আস্বস্ত করতে চাইল।তাকে শান্ত করতে সে এই প্রথম শিহাবকে ভিডিও কল করলো।
শায়লাকে দেখে শিহাব একটু শান্ত হলো। শায়লা বলেই চলেছে,তুমি মন খারাপ করোনা।আমাকে আরাফের কাছে নিয়ে চলো।দেখো আমি কেমন করে তাকে আপন করে নেই।
শায়লা ভাবলো,আমরা কেবল মাতৃস্নেহের কথাই জানি,একজন পিতাও যে সন্তানের হারিয়ে যাওয়ার ভয়ে কতটা ভীত হয়ে উঠতে পারে,শিহাবকে দেখলে তা বুঝা যায়।
শিহাব কেমন যেন আদুরে গলায় বলছে,শায়লা তোমার কোলে মাথা রেখে আমার ঘুমাতে মন চাইছে।তুমি আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছো।আমি পরম নিশ্চিন্তে তোমার মাঝে সবটুকু নির্ভরতায় সারারাত ঘুমিয়ে থাকতে চাই। শায়লা,কবে আমার এই কাঙ্ক্ষিত রাতটি আসবে? তুমি আমি সারারাত গান শুনবো।দুজনে গল্প করবো।তুমি আমার হাতটি ধরে রাখবে শক্ত করে। আমি কিন্তু সত্যি সত্যিই একটু একটু ঘুমাবো।আর চোখ মিটমিট করে তোমাকে দেখবো।
শিহাবের কথাগুলো শুনে শায়লার চোখ জলে ভরে উঠলো। এমন স্বপ্নতো সেও দেখে।তাইতো,কবে আসবে তাদের এমন দিন? 
শিহাব  নিজেকে বুঝাতে পারছে না,কিভাবে আজকের এই রাতটা কাটবে।রিশতিনা বারবার তার স্বাভাবিক জীবনকে এলোমেলো করে দেয়।আর শায়লা বারবার তা গুছিয়ে দেয়।
শিহাব খুব কঠিনভাবে মনকে জানিয়ে দিলো,কোনভাবেই  রিশতিনার সাথে সে দেখা করবে না। নয়তো আবার না জানি কোন
ঝড় এসে শায়লাকে নিয়ে সাজানো স্বপ্নটা তছনছ করে দেয়। এমন ভাবনায় শিহাব নিযেকে একটু স্থির করে নিলো। হঠাৎই একটা মেসেজের শব্দ! 
শিহাব তাকাতেই দেখলো, শায়লার একটা খুব সুন্দর ছবি শিহাবের মেসেজে ঢুকলো। বিকেলের আলোতে শায়লাদের বাড়ির ছাদে তোলা।খোলা চুলে কাজল আঁকা চোখে একটা হলুদ শাড়িতে বিকেলের সূর্যের আভায় শায়লাকে যেন  একটি অপ্সরীর মত লাগছে!
হঠাৎ কোন অবাক করা কিছু দিয়ে যেমন ছোট্ট শিশুদের কান্না থামানো যায়,শায়লার ছবিটাতেও শিহাব যেন তেমনি আগ মূহুর্তে এতকিছু ঘটে যাওয়া নিমেষেই ভুলে গেলো! মুগ্ধ হয়ে সে ছবিটার দিকে তাকিয়ে রইল।শিহাবের চোখে মুখে যেন এক আলোর দ্যুতি খেলে গেলো!শিহাব চট করেই মোবাইলটায় চুমু বসিয়ে দিলো আর বলে উঠলো,,, শায়লা, আই লাভ ইউ,,আই লাভ ইউ আ লট!
শিহাবকে শান্ত করতে পারায় শায়লার মাঝেও স্বস্তি ফিরে এলো।শায়লা একগাদা লাভ রিএক্ট পাঠিয়ে গুড নাইট জানালো।
আজ রাতের মত বেঁচে থাকার অবলম্বন পেয়ে শিহাব যেন হালকা পালকের মত হয়ে উত্তাল  সাগরেও স্বপ্নডিঙায় ভাসতে শুরু করলো।


 চলবে....

কবি আলমগীর হোসাইন এর কবিতা




সুখের বিদায়
আলমগীর হোসাইন

লাল বেনারসি শাড়ি পরিয়ে বিদায় দিতে পারিনি
সাদামাটা গোলাপ পাপড়ির মেহেদী সন্ধ্যায়
মন না চাহিতেই রঙ্গ উল্লাসে সাজিয়ে দিলাম
সুখ সম্বৃদ্ধি কল্যাণের পথে বাবার গৃহ ত্যাগে
নতুন জীবনে নব সাথী লয়ে স্বামী গৃহে যেতে দিলাম।
 
বিদায় ক্ষণ আখি যুগল নোনা জলে ছলছল
তালাবদ্ধ খেলনাগুলো শো কেইস এ সাজানো আজো
ধুলোর আস্তরণে ঝাপসা লাগে অতীত স্মৃতির বহু কিছু
তোমার বিদায়ে খালিলাগে মায়ের ঘরের অনেক কিছুই
স্বপনে এসে কি যেন বললে বুঝতে পারিনি মাগো
বহু চেষ্টা করেও  স্বপনের কথা স্মরণে আসেনি আদৌ
সুখের পরশে স্বর্ণালী সময়ে পদার্পন যুগল প্রেমী মন
মোর অনাগত সময়ের বিসর্জনে সুখ কামনা তোমার।

কতো কথা মনে পড়ে ক্ষণ সময়ে মোর 
সুখ বিলাসে রঙ্গিন স্বপ্নে সাজাও তোমার ঘর
ছোট্ট বেলার পুতুল খেলার সেই মাটির পুতুল
তোমার বিদায়ে ভেঙে গেলো আঠারো বছর পর।

মোর জীবনের স্বপ্ন স্বাধ তোমাকে ঘিরে মাগো
পুতুল খেলারচ্ছলে তোমায় শাসন করেছি যতোই
বিদায় লগ্নের নোনা জলে ধুয়ে মুছে দিও সব
মা মনি আমার লক্ষিবতী সুখে থেকো জীবন ভর।

কবি বদরুল আলম এর কবিতা




কষ্ট কড়চা
বদরুল আলম 

কোনহানে তোমার ঘর
কোন ইস্টিশানের লগে ?
যেইহানে হিজলের নাল
ফুল তরতাজা হইয়্যা ফোটে,
যেইহানে বটের পাতার আবডালে 
কোকিলের কান্দনের সুর বাজে,
যেইহানে কালা পানির বিলে
পদ্মফুল ফোটে,সেইহানে হিষ হিষ করে
সাপেরা মাছ খায়,ধানের ডগায় 
নাল ফড়িং আর ভ্রমর নাইচ্যা বেড়ায়,
পাখিরা খেলে ডুব সাঁতার ?
আমারে তাড়াতাড়ি কও
গাঙের কোন দিকে যামু আমি?
উত্তরে পাড়ভাঙ্গা ভিষণ রাগ
দক্ষিণে কাল নাগিনীর  ফনার মতোন
তালগাছ সমান বড় বড় তুফান।
বুকের মধ্যিহানে কালধুতরার 
বিষের মতো জ্বালা, 
চোক্ষে নামে ঘোর কালা সন্ধ্যার মতোন
আসমান সমান ঘুম,
তোমারে দেহিবার মনে লয়,
চাইয়া চাইয়া আমার চোক্ষু দুইহান
হইলো ক্ষয়।
আমার সোনার গতরহান জ্বলে
আমার পরানহান জ্বলে,
আহারে ক্ষিধার জ্বালা
তার চে ডাঙ্গর য্যান পিরিতের জ্বালা।
কোনহানে তোমার ঘর 
কোন ইস্টিশানের লগে ?

কবি সুচিতা সরকার এর কবিতা




সব শেষের শেষে উপরাম্ভ থাকে না

সুচিতা সরকার


সব শেষের শেষে উপরাম্ভ থাকে না।
গাঢ় নীল আকাশের নীচে শুয়ে থাকা 
হলুদ বালিয়াড়িতে রাতে যখন শীত নামে,
চাঁদের আলো তাকে উষ্ণতা দিতে পারে না।
সব আলোক উৎস জীবনদায়ী হয় না। 
কিছু আলো শুধুই স্বপ্ন দেখায়। 
স্বপ্নালু চোখে পোকারা একসময় মৃত্যু পায়।