শুরু হলো এই সময়ের অন্যতম তরুণ কবি মনি জামানের ধারাবাহিক উপন্যাস "সেদিন গোধূলি সন্ধ্যা ছিল"
সেদিন গোধূলি সন্ধ্যা ছিল
(১ম পর্ব)
মনি জামান
আজ নিলয়ের মনটা খুব খারাপ মেবিনের কথা বার বার মনে পড়ছে,নিলয় ফোনটা হাতে নিয়ে মেবিনের নাম্বারে ফোন করলো
অপর প্রান্ত থেকে জানিয়ে দেওয়া হল,দুঃখিত এই মূহুর্তে সংযোগ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।নিলয় আবার ফোন করলো অপর প্রান্ত থেকে একই উত্তর দুঃখিত এই মুহুর্তে সংযোগ দেওয়া সম্ভব হচ্ছেনা।
বিষন্নতায় ছেয়ে গেলো নিলয়ের মন ফোনটা রেখে দিয়ে মনটা ভিষণ খারাপ লাগছে নিলয়ের,কয়দিন হলো মেবিনের সাথে কথা হয়নি,সেই ২০১৮ সালের ১৬ই ডিসেম্বর বিজয় দিবসে মেবিনের সাথে প্রথম দেখা ও পরিচয় হয়েছিলো নিলয়ের একটি কবিতা আবৃত্তির অনুষ্ঠানে।
সেই থেকে দুজনের পরিচয় আর এই পরিচয়ের সূত্র ধরেই ধীরে ধীরে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে দুজনের মাঝে,সেখান থেকে আজ পার্যান্ত কখনো মেবিনের ফোন বন্ধ পাইনি নিলয়। আজ মনটা ভিষণ খারাপ লাগছে মেবিনের জন্য ভাবছে কোন কিছু কি হলো,নাকি ফোনে চার্জ নেই এমন উল্টা পালটা ভাবনা নিলয়কে অস্থির করে তুলছে,মেবিন ফোনটা কেন বন্ধ করে রেখেছে কোন সমস্যা হয়নি তো?আবার ভাবছে ধ্যাত তা কেন হবে মেবিন তেমন মেয়েই নয়।
যদিও ওরা ভিন্ন ভিন্ন ইউনিভার্সিটিতে পড়ে নিলয় আর মেবিন দুজনের ভিন্ন অবস্থান হলেও সব সময় ফোনে কথা হয় দুজনের, মাঝে মাঝে দুজন নির্জনে বসে ঘন্টার পর ঘন্টা কথা বলে।
নিলয় জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষ ইংরেজীতে পড়ে,আর মেবিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতিতে দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী।
নিলয়ের গ্রামের বাড়ি মুরাদ নগর এক অজপাড়া গাঁয় থেকে এসেছে ঢাকায় পড়তে, নিলয়ের ভিতর সেই গ্রাম্য সরলতার স্পষ্ট ছবি তার অবয়ব জুড়ে।নিলয় মেধাবি ছাত্র দেখতেও মন্দ নয় মোটামুটি সুন্দর,আর মেবিনের বাবা মুজাহিদ প্রফেসর,মা পারভীন বেগম গৃহিণী,এক ভাই প্রিন্স,প্রিন্স বড় আর মেবিন ছোট নাটোরের অভিজাত পরিবারে মেবিন বড় হয়েছে এবং সবার আদরের সে।
মেবিন নিলয় সম্পর্কে সব জেনে শুনে তারপর নিলয়কে ভালবেসেছে,কারণ গ্রামের এই সহজ সরল ছেলেটার ভিতর মেবিন সরলতার স্পষ্ট ছাপ খুঁজে পেয়েছে যেখানে নেই কোন কৃত্তিমত্বার কোন ছাপ।
এটাই মেবিনের ভাল লাগার একমাত্র কারণ,কিন্তু মেবিন ধনীর একমাত্র মেয়ে হয়েও নিলয়ের মত ছেলেকে ভালোবাসে নিলয়ের ভয় এখানে যদি মেবিন কখনো নিলয়কে ভুল বুঝে হারিয়ে যায় তার জীবন থেকে।এই ভয়টা আজ নিলয়ের ভিতর তোলপাড় শুরু করে দিয়েছে কি করবে এটাই ভাবছে বসে বসে হঠাৎ মেবিনের ফোন এলো, নিলয়ের অপেক্ষার বাধ ভাঙ্গা আনন্দ মনকে ভরে তুললো সব এলোমেলো ভাবনা গুলো উধাও হয়ে গেল মনে একটা শিহরণ যেন সমস্ত শরীরে ছড়িয়ে পড়লো।
নিলয় তাড়াতাড়ি ফোনটা রিসিভ করলো অপর প্রান্ত থেকে মেবিনের কন্ঠ ভেসে এলো,কেমন আছ নিলয় তুমি?নিলয় বলল,ভাল আছি তবে তোমার ফোনটা বন্ধ ছিল কেন?মেবিন বলল,ফোনে চার্জ ছিলনা নিলয় শুনে বলল,তাই!তবে ফোন বন্ধ না করেও চার্জে বসাতে পারতে,উত্তরে মেবিন শুধু বলল ও আচ্ছা বুঝলাম।
নিলয় বলল,কি বুঝলে সোনা তুমি,মেবিন নিলয়ের প্রশ্নটা এড়িয়ে বলল,কাল তো ইউনিভার্সিটিতে গ্রীষ্মের ছুটি হয়ে যাচ্ছে চলনা আমরা দুজন কক্সবাজার থেকে ঘুরে আসি।
মেঘ না চাইতে বৃষ্টি নিলয় বলল, কক্সবাজার!সত্যি যাবে বলো!কবে যেতে চাও বলো আমাকে?মেবিন বলল,আগামী সপ্তাহে,নিলয় সম্মতি জানিয়ে দিল আগামী সপ্তাহ মানে কি বার,মেবিন বলল,আগামী শনিবার।
নিলয় আর মেবিন সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলো আগামী শনিবার ওরা দু'জন কক্সবাজারের উদ্দেশ্য রওনা হবে,আজ নিলয়ের খুশির বাঁধ ভাঙ্গা জোয়ার বইছে মনে তার প্রিয়তমা মেবিনকে খুব কাছ থেকে একান্ত ভাবে দেখতে পাবে,সমুদ্রের তীর ঘেঁষে দুজন দুজনে হাত ধরে হাটবে কত আনন্দ আজ নিলয়ের মনে।
নিলয় মেবিনের হাতে হাত রাখবে উন্মত্ত সমুদ্রের নোনা জলে জলকেলি খেলবে,সূর্য অস্ত যাবে সেটা দেখবে আরো কত কি মনে আসছে আজ।
রাতে নিলয়ের আর ঘুম আসছে না কি যেন শিহরণ সমস্ত শরীরে ছড়িয়ে পড়ছে,মেবিনের কথা ভাবতে ভাবতে নিলয়ের সারারাত কিভাবে কেটে গেল নিলয় বুঝতেই পারলো না।
পরের দিন সারাদিন নিলয় আর মেবিন দুজন ঘুরলো,দিন শেষে রূমে ফিরে পড়া শেষ করে খেয়ে শুয়ে পড়লো তারপর গত রাতের ঘুমকে পরাজিত করে নিলয় ফোনটা হাতে নিলো এবং মেবিনকে ফোন করলো,অপর প্রান্ত থেকে মেবিন বলল,এত রাতে কেন ফোন দিয়েছো?
নিলয় বলল,কেন জানি ঘুম আসছে না আমার গত কাল রাতে ও শুধু তোমার কথা মনে পড়েছে,মেবিন এক গাল হেঁসে বলল, আমারও তোমার কথা খুব খুব মনে পড়ছে তাই আমিও জেগে আছি।
নিলয় বলল,জানো এই যে ঘুম না আসা এটা কি প্রেম রোগ?মেবিন হেসে বলল,বোধহয়।
নিলয় বলল,তুমি সত্যি সুন্দর শুধু ঝগড়াটা বাদ দিলে মেবিন বলল,কি আমি ঝগড়াটে?ঠিক আছে তুমি ভালো একটা মেয়ে দেখে প্রেম কর আমি গেলাম।
নিলয় বলল,প্লীজ যেওনা আমি এমনি বলেছি ফান করে,তুমি তো জানো এই জন্য তোমাকে কাক পাখি বলি।
মেবিন অভিমানের সুরে বলল,হয়েছে এখন রাখো আর ঘুমিয়ে পড়,নিলয় মেবিনকে ফোনে একটা চুম্বন করে জানতে চাইলো আগামী শনিবার কয়টার সময় বেরুবো আমরা,মেবিন বলল,সকাল দশটার ট্রেনে যাবো আমরা।
নিলয় বলল,ঠিক আছে কাক পাখি শুভ রাত্রি তাহলে এখন রাখছি বলে ফোনটা কেটে দিয়ে রেখে দিল।
নিলয় আদর করে মেবিনকে সব সময় কাক পাখি বলে ডাকে,মেবিনের ও ভাল লাগে নিলয়ের মুখ থেকে এই ডাকটা শুনতে।
চলবে.....
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
thank you so much