০৩ জুন ২০২২

মমতা রায় চৌধুরী র ধারাবাহিক উপন্যাস পর্ব ১৭৭





উপন্যাস 

টানাপোড়েন   ১৭৭
চোর

মমতা রায় চৌধুরী



সারাটা বেলা কেটেছে দুশ্চিন্তা আর অস্থিরতার মধ্যে দিয়ে। এখন বৃষ্টি নেই কিন্তু আকাশ মেঘে ঢাকা যেটুকু আলো এই শহর পেয়েছে মেঘ থেকে স্মিমিত আলো তাতে এই শহরতলী কে যেন আরও জীর্ণ করে রেখেছে। কিছুক্ষণ রেখা জানলার কাছে দাঁড়িয়ে মানুষের আনাগোনা দেখতে লাগল আসলে সারা দিন বৃষ্টির পরে এখন বৃষ্টি টা একটু কম হওয়াতে মানুষ বেরিয়েছে। কত মানুষের কত প্রয়োজন কেউ অর্থের জন্য ছুটে কেউ যশের জন্য কেউবা আনন্দ উপভোগের জন্য আবার কেউ বা হতাশা বিষাদ দুঃখ কান্না নিজের মনের ভেতরে সঞ্চয় করে শহরেই বাসা বাঁধে। একমাত্র এই শহরে তো কোনকিছুর খবর রাখে না কার কি হলো কি গেল কি কি করলো? শহর একেবারে দরাজ এসব ব্যাপারে। কিন্তু মাটির যে স্নেহ যে টান যারা মাটির কাছাকাছি থেকেছে শুধুমাত্র তারাই অনুভব করতে পারে। মর্মে মর্মে অনুভব করছে শহরে থাকার জীবন। এখানে পথের ধুলো আকাশে ধোয়া বাতাসেও যেন বিষ মেশানো ভালো করে নিঃশ্বাস নেবার উপায় নেই তাইতো শহরের মানুষ দূরে যায় প্রাণ ভরে শ্বাস নেবার জন্য প্রকৃতির স্নিগ্ধ কোলে।
আজ এত বছর বিবাহিত জীবনের এই শহরটাকে আপন করতে পারলো না রেখা। এই শহরে সব সময় মানুষকে একপেশে করে রাখে। অনুভূতি গুলো শেয়ার করার জায়গা থাকে না। মানুষগুলো কেমন অচেনা মনে হয় আত্মিক বন্ধনই যেন তৈরি হয় না। না হলে স্বামী-স্ত্রীর পবিত্র সম্পর্কের মধ্যেও আজকে মনোজের ভেতরে যে টানাপোড়েন চলছে, তার কাছে কেন মুখ ফুটে বলতে পারছেনা কি জন্য? শহরের মানুষগুলো তোমার জটিল সব সময় যেন একটা প্যাঁচখুঁজে বেড়ায়। একটা স্নেহ শীতল হৃদয় খুঁজে পাওয়া মুশকিল? রেখা অবাক হয়ে যায় স্ত্রী স্বামীর কাছাকাছি থাকা সত্বেও মনের কাছে যেতে পারেনি। তবে শহরের সব মানুষই যে খারাপ সে কথা বলা যায় না তাই যদি হতো পাশাপাশি থাকা পার্থ ,চৈতালির মা, কাকিমা(পার্থর মা) এরাতো কত খোঁজ খবর নেয়। কিন্তু তাহলেও একটা দূরত্ব থেকেই যায় সব কথা তো বলা যায় না।না হলে সকালে পার্থ  এসেছিল মনোজের কথাটাকে রেখাই বা খুলে বলতে পারল না কেন?
রেখাও কি তাহলে আস্তে আস্তে শহরের বিষে আচ্ছন্ন হয়ে যাচ্ছে?
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সমস্ত কিছুই বদলে যেতে থাকে।
এমন সময় পাশের বাড়ির চৈতালির মার চিৎকারের আওয়াজ পাওয়া গেল।
রেখা কানটা খাড়া শোনার চেষ্টা করলো ওদিকে মিলি আর ওর  বাচ্চারাও খুব চিৎকার করছে।
কী হলো কে জানে?
রেখা এবার ড্রইং রুমের জানালাটা এসে খুলল।
চৈতালির মার আওয়াজ 'চোর ,চোর , চোর বলে চিৎকার করছে?'
রেখা মনে  মনে ভাবল পার্থ যে সকালবেলায় কথাটা বলেছিল তাহলে তো এখন ভয়ের ব্যাপার হয়ে যাচ্ছে।
রেখা হাঁপাতে হাঁপাতে এসে মনোজকে বলল' কি গো শুনছো?'
মনোজ মুখ তুলে তাকিয়ে রইল কৌতুহলে।
চৈতি দের বাড়িতে মনে চোর এসেছে?
মনোজিত অবাক হয়ে বললো চোর এসেছে সন্ধ্যেবেলায় চোর আসে বাপের জন্মে বাবা শুনিনি।
আরে বাবা কারেন্টটা তো অনেকক্ষণ আগে গেছে সেটা ভাবো তারপর হচ্ছে মেঘলা ওয়েদার শুনশান পরিবেশ না হবার তো কিছু নেই।
মানুষ কি একটা ভাবল তারপর বলল হ্যাঁ তা অবশ্য ঠিক।
এইতো কদিন আগেই এ ব্লকেও চুরি হয়েছে।
রেখা বলল সেই জন্যই তো বলছি।
সকালবেলায় পার্থ এই কথাটা বলেছিল। যাওনা পাশাপাশি থাকি।
মনোজ ফোনটা রেখে বলল হ্যাঁ ঠিকই বলেছে যাওয়া উচিত।
মনোজ দরজা খুলে বেরোতে গেল। তখন রেখা বললো সাবধানে। আবার তুমি সামনে গিয়ে দাঁড়ানোর কোনো দরকার  নেই।
মনোজ বেরিয়ে গেলো।
রেখা মনে মনে ভাবল ছিঃ এটা কি বলল মনোজ কে। সত্যি সত্যি শহুরে মানসিকতা ধরে গেছে মনে হচ্ছে রেখাকে। শহরের এই ক্যান্সার থেকে মুক্তি নেই। রেখা ড্রইং রুমের জানালার কাছে দাঁড়িয়ে রইল কিছুক্ষণের জন্য যেন সেই চিৎকারটা ও থেমে গেল।
ভাসা-ভাসা কথা শোনা যাচ্ছে। কাউকে ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে তোমরা এখানে কেন এসেছিলে রেখা কান টাকার একটু খাড়া করলো
ভালো বোঝা যাচ্ছে না।
তবে মনে হয় চোর ধরা পড়েছে। রাম ধোলাই খাবে এখন। পাবলিকের মার খাইনি তো বাছাধনেরা এবার বুঝিয়ে দেবে অন্নপ্রাশনের ভাত হজম করিয়ে দেবে।
রেখা এবার রান্নাঘরের দিকে এগোলো বাচ্চাগুলোর খাবারের ব্যবস্থা করতে হবে নটা বাজতে চলল।
খাবার গরম করতে করতেই ওদিকে দরজায় নক করার আওয়াজ শুনতে পেল।রেখা মনে মনে ভাবল যে এসেছে তার জানা উচিত। কলিংবেল লাগানো আছে। কলিং বেলটা তো আর এমনি এমনি লাগানো হয়নি।
আবার দরজায় নক। রেখা বিরক্তি ভাবে গিয়ে দরজাটা খুলল। দরজা খুলতেই গটগট করে ভেতরে চলে আসলো তারপর মনোজদের ঘরে চলে গেল।
রেখা বলল 'কিরে তুই যে স্মার্টলি ভেতরে চলে আসলি?''
তুলি  একবার কি কারণে রেখার  দিকে তাকিয়ে সোজা মনোজদের ঘরে ঢুকে গেল।
রেখা বলল 'তুতু (তুলি) আজকাল এই নামেই ডাকে। তুমি যে এসে শুয়ে পড়লে খাবার খাবে না চলো চলো খাবার খাবে।
ওমা সত্যি সত্যি কি সুন্দর কথা বোঝে একেবারে রেখার পেছনে পেছনে গিয়ে হাজির হল খাবারের জায়গায়। সবাইকে পেপার পেতে পেতে দিল তার ওপর খাবার দিল। খাবারের থালা টা হাতে নিয়েই একবার উঁকি মেরে বোঝার চেষ্টা করলো কি ব্যাপারটা ঘটলো যে চৈতিদের বাড়িতে।
এবাবা ধারে-কাছে না মনোজ না পার্থ কাউকে দেখতে পাচ্ছে না।"
তবে কোন এক জায়গায় যে  জট লা হচ্ছে সেটা বোঝা যাচ্ছে।
রেখা আর  বেশি সময় নষ্ট করলো না এঁটো থালা নিয়ে । রাত্রে আবার রুটি করা আছে।
ও বাবা তুলিও পেছনে পেছনে আসা শুরু করেছে। রেখা বলল" হ্যাঁরে তুতু  এখন তো রাত হয়েছে। বাইরে পাহাড়ে টা কে দেবে তুমি ঘরে বসে থাকলে?'পর রেখা মনে মনে ভাবল থাক যতক্ষণ না পেয়েছে ততক্ষণ ঘরে থাক পরে বের করে দেয়া যাবে।
এবার ঝপ ঝপ রুটি করে নিল। ফ্রিজ থেকে তোর কাঁটা বের করে গরম করে রাখল। পেঁয়াজ কেটে রাখল কাঁচালঙ্কা ও কয়েকটা ধুয়ে রেখে দিল।
সবেমাত্র হাতটা দিয়ে আঁচলে মুছছে ঠিক তখনই ফোন বেজে উঠল। ফোনের কলতান রেখাকে তাড়াতাড়ি ফোন এর কাছে কাছে যেতে বাধ্য করলো।
ফোনটা রিসিভ করেই বললো' হ্যালো'
"হ্যাঁ ম্যাডাম কেমন আছেন?"
"ও আপনি ,ভালো আছি ।আপনারা ভালো আছেন? 
"এই চলছে।"
বলছি নেক্সট পর্ব লেখা কমপ্লিট?
না পুরোটা এখনো লেখা হয়নি।
সম্পাদক চিন্তিতভাবে বলল সে কি ?কেন,?
'নানা কাজে ছিলাম'।
আশাকরি রাত্রের মধ্যে লিখে পাঠাতে পারবো।
আপনি জানেন ম্যাডাম আপনার লেখা পড়ার জন্য পাঠকেরাই তো আগে জিজ্ঞেস করেন পরের পর্ব ঠিক পাবো তো,?
আমি সম্পাদক হিসেবে তাদেরকে সান্তনা দিয়ে বলি নিশ্চয়ই পাবেন।'
তাই বলছি পাঠকের ক্রেজটাকে নষ্ট করে দেবেন না।
'না না একি বলছেন?'
'ঠিক আছে, রাখছি তাহলে। ভাল থাকবেন।'
'হ্যাঁ আপনিও।'
এমন সময় মনোজ ঢুকলো। মনোজ দরজা লাগাতে যাচ্ছে তখন রেখে চিৎকার করে বলে লাগিও না তুতু আছে ভেতরে ওকে বের করতে হবে।
তারপরেই বলল হ্যাঁ গো কি হয়েছিল চইদি দের বাড়ি?
আর বোলো না এক কেলেঙ্কারি।
আরে ওদের গাছের নারকেল পারতে গেছিল দুটো ছেলে।
রেখা অবাক হয়ে বলল সে কি?
আর বৌদি ওটাই চোর চোর বলে চেঁচাচ্ছিল।
ছেলেদুটো ধরা পড়েছে।
হ্যাঁ সেই জন্যই তো আরো খারাপ লাগছে?
'এটা খারাপ লাগার কি আছে?'
আরে ছেলেদুটো তো চেনা ছেলে ঘোষ দের বাড়ির ছেলে।
আরে ছেলেদুটো সত্যি কথাই বলেছে' আসলে ওদের বন্ধুদের মধ্যে নাকি বাজি ধরা হয়েছে নারকেল পেড়ে আনার উপরন্তু তাদের প্রাপ্তির ভান্ডার পূর্ণ হল চোর বদনাম দিয়ে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

thank you so much