১৪ জুলাই ২০২২

মমতা রায়চৌধুরী এর ধারাবাহিক উপন্যাস উপন্যাস টানাপোড়েন ১৮৫




উপন্যাস 


টানাপোড়েন ১৮৫
হু হু করা ডাক
মমতা রায়চৌধুরী

অকারণেই রেখার মনটা আজ হু হু করছে । কিছু কিছু সময় থাকে যখন এর কোনো অর্থই খুঁজে পাওয়া যায় না।  তখন কোনো কিছুতে সাড়া দিতে ইচ্ছে করে না ।
লাইফ কেয়ারে ইউ এস জি টেস্ট করে ফিরে আসার পর ই রেখার ফোন বেজেছে।কিন্তুএত কাজের চাপ ছিল যে ফোন ধরার সময় পায় 
নি । আবার সময় পায় নি বললেও ভুল
 হবে । ওই যে বললাম অকারণের হৃদয়ের হুহু  তান  কিছুটা ।যাই হোক এখন আবার কয়েকবার ফোন বাজল। এবার তো ফোনটা রিসিভ করতেই হয়, যে কলতান শুরু করেছে ফোন বাবাজি । শ্যামের বাঁশি বলে কথা।
বিকেলে চায়ে চুমুক দিতে দিতে টেবিল থেকে ফোনটা নিয়ে দেখল স্কুল থেকে বড়দি ফোন করেছেন।
রেখা মনে মনে ভাবল আজকে বড়দি তো রেগে  যাবেন। আগের ফোনগুলো বড়দিরই ছিল।
ছি:, ছি :,ছি: এটা ঠিক করেনি রেখা সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে বলল' হ্যালো"
অপরপ্রান্ত থেকে গম্ভীর গলায় একটু বিরক্তির সুরে বললেন "কি ব্যাপার রেখা তোমাকে এতবার ফোন করছি তুমি ফোন তুলছো না ?ভাবতে পারছ যে আমি তোমাকে জরুরি কাজের জন্য ফোনটা করেছি হাসি ঠাট্টা মজা করার জন্য নয়।

রেখা ভাবল যা রেগে আছেন এখন মিষ্টি মিষ্টি করে কথা বলতে হবে বলতে বড়দির সাথে।
"না , বড়দি আসলে আমি একটু ব্যস্ত ছিলাম তাই ফোনটা ধরতে পারিনি সরি।"
আমিও সেটাই ভাবছিলাম মরে তো তুমি ফোন রিসিভ করো যাই হোক কাজের কথায় আসি।
"হ্যাঁ,বড়দি বলুন।"
"আগামীকাল কলেজে একটা এস.ডিও অফিস থেকে প্রোগ্রাম অ্যারেঞ্জ করেছে।"
"কি প্রোগ্রাম বড়দি?"
"সেটাই তোমাকে বলছি ,একটা বসে আঁকো প্রতিযোগিতা আছে।"
'আমাদের স্কলের অংশগ্রহণের কথা বলা হয়নি সেখানে টিচার চেয়ে  পাঠিয়েছেন ।আমি তোমার নাম দিয়েছি ।'
"এখন তো স্কুল ছুটি বড়দি। আমার পক্ষে এত দূর থেকে এগিয়ে প্রোগ্রাম অংশগ্রহণ করা একটু টাফ ব্যাপার হবে আপনি লোকাল কারক কে বলুন না?"
"রেখা আমি জানি স্কুল ছুটি আর সবাইকে সব কাজ দিয়ে হয় না এটা তুমি জানো তো?
"সেসব ঠিক আছে বড়দি কিন্তু আমারও তো সুবিধা অসুবিধা থাকতে পারে?'
''সে তো পারেই। কিন্তু আমি তোমার উপর ভরসা করি।
কটার সময়?
কাল সাড়ে তিনটে যেতে বলেছে ন।
কি করতে হবে?
কিছু না ওখানে হয়তো জাজমেন্টের জন্য রাখতে পারেন।
"আসলে বড়দি কখন ছাড়া পাব ট্রেনের ব্যাপার।"
"জানি রেখা  অসুবিধে হবে ,তবু স্কুলের কথা ভেবে তোমরা যদি এগিয়ে না আস কি করে হয় বলো?"
"আপনি তো যে কাজ বলেন আমি সে কাজ করি বড়দি।"
"আমি জানি তো আর সেই জন্যই তো ভরসা করা যায় বলেই তোমার কাছে বারবার সাহায্যের হাত বাড়াই।"
"আর তাছাড়া এস ডি ও অফিস তোমাকে ভাল চেনে এবং ওখানকার সৌভিক দা' তোমার নাম করছিলেন।"
"ওই যে কন্যাশ্রীর সঙ্গে যুক্ত ছিলাম তখন নোডাল টিচার ছিলাম তারপর থেকেই এইচডি অফিসের যোগাযোগটা একটু বেশি হয়েছে ।
না রেখা সবার পরিচিত এক রকম হয় না কাজের উপর নির্ভর করে আরও অনেকে কন্যাশ্রী নটি যাচ্ছিল এটুকু আমি হলফ করে বলতে পারি তোমার মতো দায়িত্ব নিয়ে কয়জন করেছে বলতে পারো?'
বড়দি নিজের কাজের কথা নিজে মুখে কি করে বলি বলুন ।সে তো মূল্যায়ন করবেন আপনারা। স্কুলে এসেছি, যে কাজ দেবেন সেটা সঠিকভাবে পালন করার চেষ্টা করব।"
"জানি তো সেই জন্যই তো মূল্যায়ন করছি। কোভিদ পরিস্থিতিতে তুমি যেভাবে কন্যাশ্রীর বিষয়ে কাজ করেছ বিশেষত মেয়েদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে এটা প্রশংসার যোগ্য।"
"বাড়িতে না গিয়ে তো উপায় ছিল
 না ।যোগাযোগ করতে পারছিলাম না।"
"সেই জন্যই তো বলছি সবাইকে কাজের দায়িত্ব দিলেও সেটা সঠিকভাবে করতে পারে না।'
"আর সৌভকদা তো আমাকে একদিন বলেই দিলেন আপনাদের যোগ্য কন্যাশ্রী নোডাল টিচার রেখা চৌধুরী। উনি যেভাবে আমাদেরকে সেই সময় সাহায্য করেছেন বিভিন্ন তথ্য দিয়ে তার জন্য আমরা কৃতজ্ঞ।'
রেখা হাসতে শুরু করল আর বললো 'অবশ্যই আমাকে কিছু টিচার এজন্য কথাও শুনিয়েছিলেন, বলেছিলেন যে বাড়ি বাড়ি গিয়ে কাজ করতে হচ্ছে? অনেকটা কটাক্ষের ছলে। যাক সেসব বিতর্কে আমি যেতে চাইছি না দিদি।"
"ঠিক আছে। তাহলে ওই কথাই রইল তুমি অবশ্যই পৌঁছে যেও কাল, ঠিক আছে।"
"হ্যাঁ, দিদি যাব আসলে শরীরটাও ঠিক যাচ্ছে না তো দিদি।"
"তোমাকে তো জিজ্ঞেস করাই হয় 
নি। দেখেছো, তুমি কি টেস্ট করাতে গিয়েছিলে?"
"হ্যাঁ ডাক্তারবাবু হোল এবডোমেন ইউএসজি করতে বলেছেন।"
"ও তাই বুঝি? করিয়েছো?"
" হ্যাঁ দিদি, আজকেই করিয়েছি …সেজন্যই তখন ফোনটা ধরতে পারিনি।'
' ওহ সরি রেখা ,তোমাকে আমি সেই সময় ডিস্টার্ব করেছি"।
"তাহলে কি তোমার অসুবিধা হবে? কি বল? তাহলে অন্য টিচারকে বলবো?"
"না থাক, আপনি চাইছেন যখন আমি যাব।"
"না খুব অসুবিধে হলে তাহলে আমাকে অন্য টিচার দেখতে হবে   তবে তোমার উপর আশাভরসা টা আমার বেশি। এবার তুমি যেটা বলবে সেটাই হবে।*
"না বড়দি আপনি দিয়ে দিন আমার নাম।'
Ok
"ভালো থেকো।"
"হ্যাঁ বড়দি  ,আপনিও ভালো থাকবেন।"
সবেমাত্র ফোনটা রেখেছে ঠিক সেই সময় শুধু দেখছে পেছনে এসে কিউ কিউ 'করছে।'
"কি হয়েছে তোর ?কটা বাজে ?খিদে পেয়ে গেছে।'
" ঠিক আছে, চলো খেতে দেব।"
তুতু লেজ নাড়ছে আর কিউ কিউ আওয়াজ করছে।
রেখা ওর মুখের কাছে নিজের মুখটা নিয়ে ভালো করে আদর করে দিলো তারপর বলল 'গায়ে গন্ধ হচ্ছে, স্নান করতে হবে। কালকে তোমাদের সকাল-সকাল স্নান করিয়ে দেব কেমন?'
তুতু কি বুঝলো রেখার কথা কে জানে ফ্যালফ্যাল করে রেখার মুখের দিকে তাকিয়ে রইল তারপর আরেকবার কিউ কিউ আওয়াজ করলো।
রেখা আর কালবিলম্ব না করে রান্নাঘরে গিয়ে ভালো করে মেটে দিয়ে ভাত মেখে ভাত নিয়ে ওদেরকে খেতে দিতে
 গেল।
 ওদেরকে রেখা  ভাত দিচ্ছে আর বলছে  সবাই চুপ করে বসো ।আমি সবাইকে দেব। কি সুন্দর সব নিজের নিজের ডিসের কাছে সবাই বসে রইল। রাস্তা দিয়ে এইসময় কজন লোক যাচ্ছিল তারা দেখে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল। এরা তো রাস্তার কুকুর না দিদি? রেখা বলল "প্রথমে আপত্তি আছে আপনাদের কথাতে" কুকুর' শব্দটা ব্যবহার করবেন না  ।
 ভদ্রলোক বললেন "আসলে আমি এভাবে বলতে চাই নি  ওরা যে শ্রেণীতে পড়ে সেই শ্রেণী টাকে উল্লেখ করেছি আর ভুল হবে না আপনি ওদেরকে সন্তানস্নেহে লালন পালন করেন তো বুঝতে পেরেছি।'
রেখা বলল 'হ্যাঁ দাদা ,একদম
 তাই ।ওদের নাম আছে। আপনারা নাম ধরে ডাকবেন, দেখবেন কি সুন্দর লেজ নাড়ে আর সাড়া দেয়। "
"ও তাই বুঝি?"
অনেকক্ষণ ভদ্রলোক ওদের দিকে তারিয়ে তারিয়ে। খাবার দেয়া উপভোগ করল তারপর বলল 'একটা প্রশ্ন করব?'
রেখা কৌতূহলে তাকিয়ে রইল।
তারপর বলল" বলুন না কি বলবেন?"
আপনি নিজে হাতে রান্না করেন না..?
কথাটা সম্পূর্ণ হওয়ার আগেই পার্থ বলল "বৌদি নিজের হাতে রান্না করেন ।দেখছেন না নিজের হাতে খাবার পরিবেশন করছেন  'হ্যাঁ এবার এদিক ওদিক কোথাও গেলে তখন কাউকে বলে যান। তখন তারা খাবারটা দিয়ে দেন।"
"খুব ভালো এরকম মানবিক কজন হতে পারে বলুন।&"
"ঈশ্বর আপনার মঙ্গল করুন।"
রেখা একগাল হেসে বলল "ঈশ্বর সকলের মঙ্গল করুন। তারপর পার্থর দিকে তাকিয়ে বলল "কি ব্যাপার পার্থ হঠাৎ তুমি এদিকে।".
"পার্থ বলল" দাদা নেই?'
ও তো  কিছু জিনিস আনতে গেছে মার্কেটে।"
"কিছু বলবে?"
*একবার চৈতির বাবাকে দেখতে যেতে পারবে কিনা সেটাই জিজ্ঞেস করতাম।*
"ঠিক আছে, তুমি নামায় রাত্রের দিকে একবার এসো ,আর না হলে ফোন করে নিও।'
'ঠিক আছে বৌদি "তাই হবে।"
"মাসিমা কেমন আছেন,?'
"এমনি ঠিকই আছে  এখন বয়স হচ্ছে তো এটুকু তো লেগেই থাকবে।'
"মা তোমার কথা বলছিলো একবার যেও না বৌদি মায়ের সঙ্গে দেখা করে এসো।"
"সময় পাচ্ছি না ।তারমধ্যে দেখো আজকে আবার বড় দি ফোন করেছিলেন  এদিকে সামার ভ্যাকেশন অথচ কালকে যেতে হবে ।তবু নিজের স্কুল নয় ওখানকার একটা কলেজে।'
"ওমা তাই নাকি?"
"তাছাড়া আর কি বলছি।"
ও তো শুনলেই বলবে ছুটির দিনগুলোতে ও তোমাকে ডেকে নিতে
 হয় ।"
পার্থ হেসে বলল" দাদা তো ঠিকই বলেছে?
" ঠিক আছে বৌদি আসছি  রাত্রে পারলে আসব।"

"ঠিক আছে তাই এসো ।রেখা পার্থর চলে যাওয়া দিক আর গোধূলি বেলার ম্লান   আলোর দিকে তাকিয়ে থাকলো ।মনে হল যেন সুর্য ডুবুডুবু এ যেন গঙ্গাসাগরে ডুবে যাওয়া মৃত মুনিয়া পাখির মত লাগছে। রেখা তার দিকে অনেকক্ষণ তাকিয়ে দেখল মনটা যেন কেমন হঠাৎ করে হু হু করে উঠলো।

কবি শহিদ মিয়া বাহার এর কবিতা "মেরু রেখার ওপ্রান্তে হারাই"



মেরু রেখার ওপ্রান্তে হারাই

শহিদ মিয়া বাহার


আমি হাত রাখি শিল্পচারী অনামিকায় 
কি এক মায়ার ছায়া লাগে
ভেজা ভেজা বিকেলের ধূসর করতলে
যেন ছুঁয়েছে এ হাত, বহুদিনকার চেনা-চেনা  মোহ-মোহ  নীল কাবেরীর সুবর্ণ জল--!

তোমার মেরুরেখার ওপ্রান্তে
নেশা নেশা জোৎস্না নামে অবিকল দেবতার মত---
আমি জানু পেতে বিছিয়ে দেই 
               সান্ধ‍্য প্রদীপের আলোয় 
           নিমগ্ন প্রণতির জলপদ্ম বিহার--!

তুমি চুম্বকমতি মোহিত ময়ূরাক্ষী সই,
আকর্ষণ মগ্নতায়---
জারুল পাতার মুরলী সুরের তানে 
বিবশ কর উত্তর আর দক্ষিণ মেরু আমার!
আমি নির্জীব লৌহ দন্ডের মত বায়বিক আকর্ষণে ছুটে যাই 
তোমার মেরুকণার গহীন সাকী পেয়ালায়
আবেশ ধারকের বিদ‍্যুৎ প্রবাহের মতোন, 
প্রদোষ প্রহর, নিদ্রাহীন নিশুতি যাপনে--!

তুমি আশ্চর্য আলোর মত রাসায়নিক চোখ মেলে বেঁধে রাখ আমায়
গভীর মোহনেশা বিক্রিয়ার অনুসঙ্গ প্লাবনে--
আমি জারিত হতে হতে বিজিত সত্তা হারাই 
তোমার দৃষ্টির উপত‍্যকা, অরণ‍্যে
যেখানে জোনাকিরা কূল হারায় অনিরুদ্ধ যন্ত্রনায়--- ঘোর তমসায়!

আর কতদূর নিয়ে যাবে হে চুম্বকদেবী  
সীমান্ত কেটে কেটে
            গভীর তমিস্রায় আমায়--!?

কবি মহিউদ্দিন আহমেদ এর কবিতা "মানিক বন্দোপাধ্যায় '




মানিক বন্দোপাধ্যায় 

(চতুর্দশপদী)
 
মহিউদ্দিন আহমেদ 


তোমার প্রতি ডাল পাতা রন্দ্রে মূর্ত মাটির ঘ্রাণ,
ধরিত্রীর বুকে কি অভূতপূর্ব এক বৃক্ষ তুমি !
জীবনের বালুচর ভরিয়ে আনো পদ্মার বাণ,
স্বপ্ন তরীতে আঁকো জীবন-কাব্য ধন্য জন্মভুমি।
কি করে বেঁধে ফেলো ক্ষুধা ক্লিষ্ট দারিদ্র্য চিত্রকথা ?
নিকষ আঁধারে পথ দেখিয়ে আদিম রত্ন ধন,
বুকের গভীরে অনিন্দ্য কাব্যিক  আপামর-ব্যথা,
অবাক নয়নে পাপড়ি মেলে জনতা জনার্দন।

স্বপ্নের বীজ বুনে চলো খুঁজে নিয়ে নির্জন দ্বীপ,
ধূলিমাখা জীবনে গেঁথে অবিনাশী পদ্যের ঘ্রাণ,
কূয়াশা-পর্দা ঠেলে প্রকৃতি ভালে দিয়ে লাল টিপ,
পথহারা নদীতে জেগে উঠে দুর্বার কলতান ।
মশালে তোমার দেখে পথ বিভ্রান্ত সব পথিক,
দুর্দান্ত বাতিঘর তুমি আঁধার জগৎ-মানিক ।

কবি এইচ আলিম এর দুটি কবিতা "তখন পুরুষ হয়ে উঠি" ও "জলপথের পথিক"





তখন পুরুষ হয়ে উঠি

এইচ আলিম

তোমার ঠোঁটের ভাজ, 
নাকের গড়ন আর-
চোখের ভাষা পড়তে পড়তে
পুরুষ হয়ে উঠি।

পুরুষ হলে, তুমি কি-
গোলাপেরমত লাল হয়ে যাও?
আমার লাল কিম্বা কালোতে কিচ্ছুই 
আসে যায় না। আমি চাই-
তুমি প্রকৃতিরমত প্রশস্ত হও
প্রশস্ত হতে হতে
বুকের বনভূমিতে বসত গড়ে তোল। 

অথচ, সেদিন তোমার উড়োচুলের
ঢেউ দেখেই প্রেমে পড়ে গেলাম।
তোমার হাতের মেহেদি রঙ
চোখের কাজল, 
কানের ঝুমকো,
কলাপাতা জামা, 
কালো রঙের জুতা,
কাচের চুড়ি, নেইল পলিশ
চুলে ভরা ভাজ করা কাঁধ
কফিমগে লিপিস্টিকের ছোঁয়া
দেখতে দেখতে আবারো-
আবারো মন পুরুষ উঠি।






জলপথের পথিক

এইচ আলিম



একদিন তোমাকে দক্ষিণের 
টিপের কথা বলেছিলাম বলে
তুমি লাল রঙের টিপ পড়ে এলে। 
লাল টিপ পড়লে আমার সূর্যের কথা মনে হয়। 
বারবার যেন জ¦লে উঠি ক্রোধে,
বনে আগুন জ¦ললে ভেতরে পুড়ে যাওয়া
কঙ্কালের কয়লা দেখি। কি উত্তাপ তার। 
তাপিত কয়লায় সব হেরে যায় আমার,
সকালের নাস্তা, দুপরের ভাত, রাতের রুটি
সব হারিয়ে যায়, 
তথাপি তুমি কালো শাড়িতে লাল টিপ দিলে। 
আমার শোকের বিষয় জেনে তুমিও মুচকি হাসো
তুমিও হাসতে হাসতে নতুন আয়নাতে দেখ
কলমিফুলের পড়ে থাকা পাপঁড়ি।
সব ভুলে যাও কি করে, 
সব মুছে দাও কি করে,
হৃদয় পটে আঁকা ছবিও
মুছে দিলে দামী টিস্যুতে?
এবার ফিরে যাও লাল টিপের কালো শাড়িতে
আমি জলপথের পথিক... 
জলবিহীন হাঁটি সবুজবনে। 

কবি সুশান্ত হালদার এর কবিতা "বালখিল্য সমাচার" 





বালখিল্য সমাচার 

সুশান্ত হালদার 


সব ক্ষতি পুষিয়ে নেয়া যায় না 
যেমন বাবার ঋণ,মায়ের জঠরের ঋণ,দেশ ও মাটির ঋণ
দেশ বলতে বাতাস মাটি জল বৃক্ষ আকাশ পশুপাখির কলতান 
মানুষকে ইচ্ছে করেই উহ্য রাখলাম,কারণ 
মানুষ হলো সেই জীব
যারা শ্রেষ্ঠত্বের দাবিদারে ভুলে গেছে সব অতীত ইতিহাস 

তোমাকে ভালোবেসে বলেছিলাম নক্ষত্রের আদলে মুখ তোমার 
রাশিফলে যদি বিচ্যুতি হয় কক্ষপথ আমার 
নেটওয়ার্কবিহীন পৃথিবী যদি ডুবে যায় সমুদ্র তলে সিংহভাগ 
টানা বৃষ্টিতে যদি অবশিষ্টাংশও খুঁজে পাওয়া না যায় আর 
তবে কী ভুলে যাবে আমার দেয়া সব উপচার
যে ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে ঘুরেছে কক্ষপথে সংঘর্ষ এড়াবার 

তিন তিনবার প্রদক্ষিণ শেষে এখন নক্ষত্র খুঁজি না আর 
সাড়ে তিন হাত মাটি পেলেই ভুলে যাব পৃথিবীর এইসব বালখিল্য সমাচার!

কবি রহমান মিজানুর এর কবিতা "মধুমাস"




মধুমাস 

রহমান মিজানুর


আমরা তো আম খাই
মুড়ি দিয়ে মাখিয়ে,
আঁটি চাটি আয়েশে
মুখটারে বাঁকিয়ে।
দুনিয়ার সেরা স্বাদ
বুঝি এই আমেতে,
থাকাটা কি সম্ভব
সেই স্বাদে না মেতে?

কাঁঠালের আঁঠা মাখি
হাতে গোঁফে দাড়িতে,
বিশাল এ ফলটারে
নিয়ে এসে বাড়িতে।
টপাটপ গিলে খাই
কোষ; কী যে রসালো!
খাওয়া শেষে বিচি গুনি
বেশিটা কে খসালো!

চেহারাটা মাইক্রো
কাঁঠালের মতো,
স্বাদে গুণে অনুপম
বলি আর কতো?
রসে টইটুম্বুর 
টসটসে জেলী,
একবারে মুখে পুরে
জিহ্বায় খেলি!
ফলটারে চিনেছো?
গেজ করো কিছু,
নামে জিবে পানি আসে 
সেটা হলো লিচু।

নুন কাঁচালঙ্কায়
ভালমতো চটকে,
টসটসে কালোজাম
টুথপিকে লটকে
খেতে কিযে স্বাদ ভাই
চেখে যদি দেখতে,
আঙুলে চাটা ছেড়ে
ফেসবুকে লেখতে??

-

কবি আহমেদ কামাল খোকন এর কবিতা "গৃহবাসিনী"






গৃহবাসিনী 

আহমেদ কামাল খোকন


সে বড় চঞ্চল হাতে এটা সেটা করে,
মাটির চুলোয় আগুনের উত্তাপ, তার বুকের উত্তাপ পুড়িয়ে দেয়, সংকর আগুনে পুড়ে যায় যৌবন।
সম্পর্কের সমন্বয় সাধনে, অল্প বয়সি দুটি পায়ের হঠাৎ বয়স বাড়ে, তবুও পদক্ষেপ চালিয়ে নিতে হয়।
চন্দ্রগ্রহনের মতই ধীরে ধীরে, চোখের উপর ছায়াবাজীর ভেলকি দেখায়, অদৃশ‍্য পুতুল নাচের নেপথ‍্য কুশিলব।
কিছু গান সেই কবে শুনেছিল, কোন্ ভালো সময়ে!
ভালো সময় আর আসে না, পুরনো সুর বাঁজে না এখন আর।

কত জন! বেদেনি সেজে ঘুরে বেড়ায়, বোষ্টমী সাজে কেউ  কেউ, সে কোনো একটা টিপের দাবি নিয়ে, খিড়কির বাইরে, একদম পা ফেলতে পারে না!

কোনো যাযাবর, কোনোদিন, তৃষ্ণায় দুয়ারে দাঁড়ালে, তাকে ডেকে বলবে বালিকা, ওহে পথিক! তোমার পথ কি একলা চলার ? কতটা সংকীর্ণ? পাশে নিতে পারবে?

চাইলেও সে যেতে পারবে না, চেনা জানা সীমানার বাইরে যেতে হয় না, মননে এমনই শক্ত সে বোধ! কে কবে প্রোত্থিত করে দিয়েছে, কেউ জানে না, সে কোত্থাও যাবে না।
সে কখনো খোলা আকাশ দেখবে না, কার বাগানে কি ফুল ফুটেছে জানবে না, কার ললাট, কোন্ ঠোঁটের স্পর্শে কেঁপেছে, এমন বিহ্বল সময় সে ছোঁবে না।
সে এক অদেখা খোলসে বন্দি, আত্ম-নিমগ্ন গৃহবাসিনী।
সে কোত্থাও যাবে না।