উপন্যাস
টানাপোড়েন ১৮৫
হু হু করা ডাক
মমতা রায়চৌধুরী
অকারণেই রেখার মনটা আজ হু হু করছে । কিছু কিছু সময় থাকে যখন এর কোনো অর্থই খুঁজে পাওয়া যায় না। তখন কোনো কিছুতে সাড়া দিতে ইচ্ছে করে না ।
লাইফ কেয়ারে ইউ এস জি টেস্ট করে ফিরে আসার পর ই রেখার ফোন বেজেছে।কিন্তুএত কাজের চাপ ছিল যে ফোন ধরার সময় পায়
নি । আবার সময় পায় নি বললেও ভুল
হবে । ওই যে বললাম অকারণের হৃদয়ের হুহু তান কিছুটা ।যাই হোক এখন আবার কয়েকবার ফোন বাজল। এবার তো ফোনটা রিসিভ করতেই হয়, যে কলতান শুরু করেছে ফোন বাবাজি । শ্যামের বাঁশি বলে কথা।
বিকেলে চায়ে চুমুক দিতে দিতে টেবিল থেকে ফোনটা নিয়ে দেখল স্কুল থেকে বড়দি ফোন করেছেন।
রেখা মনে মনে ভাবল আজকে বড়দি তো রেগে যাবেন। আগের ফোনগুলো বড়দিরই ছিল।
ছি:, ছি :,ছি: এটা ঠিক করেনি রেখা সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে বলল' হ্যালো"
অপরপ্রান্ত থেকে গম্ভীর গলায় একটু বিরক্তির সুরে বললেন "কি ব্যাপার রেখা তোমাকে এতবার ফোন করছি তুমি ফোন তুলছো না ?ভাবতে পারছ যে আমি তোমাকে জরুরি কাজের জন্য ফোনটা করেছি হাসি ঠাট্টা মজা করার জন্য নয়।
রেখা ভাবল যা রেগে আছেন এখন মিষ্টি মিষ্টি করে কথা বলতে হবে বলতে বড়দির সাথে।
"না , বড়দি আসলে আমি একটু ব্যস্ত ছিলাম তাই ফোনটা ধরতে পারিনি সরি।"
আমিও সেটাই ভাবছিলাম মরে তো তুমি ফোন রিসিভ করো যাই হোক কাজের কথায় আসি।
"হ্যাঁ,বড়দি বলুন।"
"আগামীকাল কলেজে একটা এস.ডিও অফিস থেকে প্রোগ্রাম অ্যারেঞ্জ করেছে।"
"কি প্রোগ্রাম বড়দি?"
"সেটাই তোমাকে বলছি ,একটা বসে আঁকো প্রতিযোগিতা আছে।"
'আমাদের স্কলের অংশগ্রহণের কথা বলা হয়নি সেখানে টিচার চেয়ে পাঠিয়েছেন ।আমি তোমার নাম দিয়েছি ।'
"এখন তো স্কুল ছুটি বড়দি। আমার পক্ষে এত দূর থেকে এগিয়ে প্রোগ্রাম অংশগ্রহণ করা একটু টাফ ব্যাপার হবে আপনি লোকাল কারক কে বলুন না?"
"রেখা আমি জানি স্কুল ছুটি আর সবাইকে সব কাজ দিয়ে হয় না এটা তুমি জানো তো?
"সেসব ঠিক আছে বড়দি কিন্তু আমারও তো সুবিধা অসুবিধা থাকতে পারে?'
''সে তো পারেই। কিন্তু আমি তোমার উপর ভরসা করি।
কটার সময়?
কাল সাড়ে তিনটে যেতে বলেছে ন।
কি করতে হবে?
কিছু না ওখানে হয়তো জাজমেন্টের জন্য রাখতে পারেন।
"আসলে বড়দি কখন ছাড়া পাব ট্রেনের ব্যাপার।"
"জানি রেখা অসুবিধে হবে ,তবু স্কুলের কথা ভেবে তোমরা যদি এগিয়ে না আস কি করে হয় বলো?"
"আপনি তো যে কাজ বলেন আমি সে কাজ করি বড়দি।"
"আমি জানি তো আর সেই জন্যই তো ভরসা করা যায় বলেই তোমার কাছে বারবার সাহায্যের হাত বাড়াই।"
"আর তাছাড়া এস ডি ও অফিস তোমাকে ভাল চেনে এবং ওখানকার সৌভিক দা' তোমার নাম করছিলেন।"
"ওই যে কন্যাশ্রীর সঙ্গে যুক্ত ছিলাম তখন নোডাল টিচার ছিলাম তারপর থেকেই এইচডি অফিসের যোগাযোগটা একটু বেশি হয়েছে ।
না রেখা সবার পরিচিত এক রকম হয় না কাজের উপর নির্ভর করে আরও অনেকে কন্যাশ্রী নটি যাচ্ছিল এটুকু আমি হলফ করে বলতে পারি তোমার মতো দায়িত্ব নিয়ে কয়জন করেছে বলতে পারো?'
বড়দি নিজের কাজের কথা নিজে মুখে কি করে বলি বলুন ।সে তো মূল্যায়ন করবেন আপনারা। স্কুলে এসেছি, যে কাজ দেবেন সেটা সঠিকভাবে পালন করার চেষ্টা করব।"
"জানি তো সেই জন্যই তো মূল্যায়ন করছি। কোভিদ পরিস্থিতিতে তুমি যেভাবে কন্যাশ্রীর বিষয়ে কাজ করেছ বিশেষত মেয়েদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে এটা প্রশংসার যোগ্য।"
"বাড়িতে না গিয়ে তো উপায় ছিল
না ।যোগাযোগ করতে পারছিলাম না।"
"সেই জন্যই তো বলছি সবাইকে কাজের দায়িত্ব দিলেও সেটা সঠিকভাবে করতে পারে না।'
"আর সৌভকদা তো আমাকে একদিন বলেই দিলেন আপনাদের যোগ্য কন্যাশ্রী নোডাল টিচার রেখা চৌধুরী। উনি যেভাবে আমাদেরকে সেই সময় সাহায্য করেছেন বিভিন্ন তথ্য দিয়ে তার জন্য আমরা কৃতজ্ঞ।'
রেখা হাসতে শুরু করল আর বললো 'অবশ্যই আমাকে কিছু টিচার এজন্য কথাও শুনিয়েছিলেন, বলেছিলেন যে বাড়ি বাড়ি গিয়ে কাজ করতে হচ্ছে? অনেকটা কটাক্ষের ছলে। যাক সেসব বিতর্কে আমি যেতে চাইছি না দিদি।"
"ঠিক আছে। তাহলে ওই কথাই রইল তুমি অবশ্যই পৌঁছে যেও কাল, ঠিক আছে।"
"হ্যাঁ, দিদি যাব আসলে শরীরটাও ঠিক যাচ্ছে না তো দিদি।"
"তোমাকে তো জিজ্ঞেস করাই হয়
নি। দেখেছো, তুমি কি টেস্ট করাতে গিয়েছিলে?"
"হ্যাঁ ডাক্তারবাবু হোল এবডোমেন ইউএসজি করতে বলেছেন।"
"ও তাই বুঝি? করিয়েছো?"
" হ্যাঁ দিদি, আজকেই করিয়েছি …সেজন্যই তখন ফোনটা ধরতে পারিনি।'
' ওহ সরি রেখা ,তোমাকে আমি সেই সময় ডিস্টার্ব করেছি"।
"তাহলে কি তোমার অসুবিধা হবে? কি বল? তাহলে অন্য টিচারকে বলবো?"
"না থাক, আপনি চাইছেন যখন আমি যাব।"
"না খুব অসুবিধে হলে তাহলে আমাকে অন্য টিচার দেখতে হবে তবে তোমার উপর আশাভরসা টা আমার বেশি। এবার তুমি যেটা বলবে সেটাই হবে।*
"না বড়দি আপনি দিয়ে দিন আমার নাম।'
Ok
"ভালো থেকো।"
"হ্যাঁ বড়দি ,আপনিও ভালো থাকবেন।"
সবেমাত্র ফোনটা রেখেছে ঠিক সেই সময় শুধু দেখছে পেছনে এসে কিউ কিউ 'করছে।'
"কি হয়েছে তোর ?কটা বাজে ?খিদে পেয়ে গেছে।'
" ঠিক আছে, চলো খেতে দেব।"
তুতু লেজ নাড়ছে আর কিউ কিউ আওয়াজ করছে।
রেখা ওর মুখের কাছে নিজের মুখটা নিয়ে ভালো করে আদর করে দিলো তারপর বলল 'গায়ে গন্ধ হচ্ছে, স্নান করতে হবে। কালকে তোমাদের সকাল-সকাল স্নান করিয়ে দেব কেমন?'
তুতু কি বুঝলো রেখার কথা কে জানে ফ্যালফ্যাল করে রেখার মুখের দিকে তাকিয়ে রইল তারপর আরেকবার কিউ কিউ আওয়াজ করলো।
রেখা আর কালবিলম্ব না করে রান্নাঘরে গিয়ে ভালো করে মেটে দিয়ে ভাত মেখে ভাত নিয়ে ওদেরকে খেতে দিতে
গেল।
ওদেরকে রেখা ভাত দিচ্ছে আর বলছে সবাই চুপ করে বসো ।আমি সবাইকে দেব। কি সুন্দর সব নিজের নিজের ডিসের কাছে সবাই বসে রইল। রাস্তা দিয়ে এইসময় কজন লোক যাচ্ছিল তারা দেখে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল। এরা তো রাস্তার কুকুর না দিদি? রেখা বলল "প্রথমে আপত্তি আছে আপনাদের কথাতে" কুকুর' শব্দটা ব্যবহার করবেন না ।
ভদ্রলোক বললেন "আসলে আমি এভাবে বলতে চাই নি ওরা যে শ্রেণীতে পড়ে সেই শ্রেণী টাকে উল্লেখ করেছি আর ভুল হবে না আপনি ওদেরকে সন্তানস্নেহে লালন পালন করেন তো বুঝতে পেরেছি।'
রেখা বলল 'হ্যাঁ দাদা ,একদম
তাই ।ওদের নাম আছে। আপনারা নাম ধরে ডাকবেন, দেখবেন কি সুন্দর লেজ নাড়ে আর সাড়া দেয়। "
"ও তাই বুঝি?"
অনেকক্ষণ ভদ্রলোক ওদের দিকে তারিয়ে তারিয়ে। খাবার দেয়া উপভোগ করল তারপর বলল 'একটা প্রশ্ন করব?'
রেখা কৌতূহলে তাকিয়ে রইল।
তারপর বলল" বলুন না কি বলবেন?"
আপনি নিজে হাতে রান্না করেন না..?
কথাটা সম্পূর্ণ হওয়ার আগেই পার্থ বলল "বৌদি নিজের হাতে রান্না করেন ।দেখছেন না নিজের হাতে খাবার পরিবেশন করছেন 'হ্যাঁ এবার এদিক ওদিক কোথাও গেলে তখন কাউকে বলে যান। তখন তারা খাবারটা দিয়ে দেন।"
"খুব ভালো এরকম মানবিক কজন হতে পারে বলুন।&"
"ঈশ্বর আপনার মঙ্গল করুন।"
রেখা একগাল হেসে বলল "ঈশ্বর সকলের মঙ্গল করুন। তারপর পার্থর দিকে তাকিয়ে বলল "কি ব্যাপার পার্থ হঠাৎ তুমি এদিকে।".
"পার্থ বলল" দাদা নেই?'
ও তো কিছু জিনিস আনতে গেছে মার্কেটে।"
"কিছু বলবে?"
*একবার চৈতির বাবাকে দেখতে যেতে পারবে কিনা সেটাই জিজ্ঞেস করতাম।*
"ঠিক আছে, তুমি নামায় রাত্রের দিকে একবার এসো ,আর না হলে ফোন করে নিও।'
'ঠিক আছে বৌদি "তাই হবে।"
"মাসিমা কেমন আছেন,?'
"এমনি ঠিকই আছে এখন বয়স হচ্ছে তো এটুকু তো লেগেই থাকবে।'
"মা তোমার কথা বলছিলো একবার যেও না বৌদি মায়ের সঙ্গে দেখা করে এসো।"
"সময় পাচ্ছি না ।তারমধ্যে দেখো আজকে আবার বড় দি ফোন করেছিলেন এদিকে সামার ভ্যাকেশন অথচ কালকে যেতে হবে ।তবু নিজের স্কুল নয় ওখানকার একটা কলেজে।'
"ওমা তাই নাকি?"
"তাছাড়া আর কি বলছি।"
ও তো শুনলেই বলবে ছুটির দিনগুলোতে ও তোমাকে ডেকে নিতে
হয় ।"
পার্থ হেসে বলল" দাদা তো ঠিকই বলেছে?
" ঠিক আছে বৌদি আসছি রাত্রে পারলে আসব।"
"ঠিক আছে তাই এসো ।রেখা পার্থর চলে যাওয়া দিক আর গোধূলি বেলার ম্লান আলোর দিকে তাকিয়ে থাকলো ।মনে হল যেন সুর্য ডুবুডুবু এ যেন গঙ্গাসাগরে ডুবে যাওয়া মৃত মুনিয়া পাখির মত লাগছে। রেখা তার দিকে অনেকক্ষণ তাকিয়ে দেখল মনটা যেন কেমন হঠাৎ করে হু হু করে উঠলো।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
thank you so much