২০ জানুয়ারী ২০২২

কবি মুনতাহা জামান মনি  এর কবিতা




এলোমেলো পথ
মুনতাহা জামান মনি 


বলেই তো ছিলেম আমি!
আমার পথ এতটা মসৃণ  নয়
যতটা তুমি ভাবো।

বহুদূর  হাঁটা তো দূরের কথা 
হয়ত একটু  হেঁটেই হোঁচট  খাবে
যতটাই কাছে টানো দূরত্ব  বাড়াই তবে।

দেখোনা নিজের  দৃষ্টিতে - আমাকে
বড্ড  গোলাটে  মনে হবে,
আমার দৃষ্টিতে  দেখতে জানলে
সুন্দর  সঠিক  লাগবে অনুভবে।

মানুষ  হলে-ও  মানুষ  আলাদা নিজের  মত
পূস্প যেখানে  গোছায় গোছায়
কাটা ও বিরাজমান  তত।

কড়া  নেড়ে  হৃদ দূয়ারে
জোর  খাটানো  ইচ্ছে গুলো
মরে গেছে  সে-ই  কবে। 

এই তো  বেশ আছি
হেসেই  ব্যাথা  উড়াবো,
যখন  আমি বন বিলাসী   হব
ফুল কুড়াবো -ছেড়ে  দিলেই  তবে।

মানি জামানের ধারাবাহিক উপন্যাস /৪





ধারাবাহিক উপন্যাস

সেদিন গোধূলি সন্ধ্যা ছিল
( ৪ র্থ পর্ব ) 
মনি জামান


মেবিন আর নিলয় অপেক্ষা করছে চারুর জন্য,ট্রেন থেকে নেমে ষ্টেশনে ওরা দুজন প্রায় তিরিশ মিনিট বসে আছে কিন্তু চারু এখনো এলো না।মেবিন ফোনটা হাতে নিয়ে ফোন করলো ওর বান্ধবী চারুর কাছে চারু ফোন রিসিভ করে বলল,কোথায় তোরা এখন,মেবিন বলল,ষ্টেশনে বসে আছি প্রায় আধা ঘন্টা হবে।আমরা ট্টেন থেকে নেমেই তোর জন্য অপেক্ষা করছি।
চারু বলল,নিলয় এসেছে নাকি ওর তো আসার কথা,মেবিন বলল,কি জানি,চারু বলল,তোরা অপেক্ষা কর আমি এখুনি চলে আসছি তোদের নিতে।
মেবিন ফোনটা কেটে দিলো চারুর আসবার অপেক্ষায় নিলয় আর মেবিন বসে রইলো আর বার বার ঘড়ি দেখছে মেবিন।নিলয় আর মেবিন দুজনেরই ট্রেন জার্নিতে রাতে ঠিকমত ঘুম হয়নি মেবিন নিলয় স্বপ্ন ঘুমে আছন্ন ছিল গোটা রাত জুড়ে।
প্রায় আধা ঘন্টা পরে চারু ওর বাবার গাড়ি নিয়ে হাজির হলো স্টেশনে,নিলয়কে দেখেই চারু মেবিনকে বলল,তুই যে বললি নিলয় আসিনি এইতো নিলয় খুব ভালো লাগছে নিলয়কে দেখে।
মেবিন স্বভাব সুলভ হেসে বলল,আরে বললে তুই তো প্যাচাল করতি তাই তোর জন্য সারপ্রাইজ রেখেছিলাম,চারু এক গাল হেসে বলল,হয়েছে এবার গাড়িতে উঠে বসো বস,নিলয় আর মেবিন চারুর গাড়িতে উঠে বসলো,চারু ড্রাইভারকে  বলল,গাড়ি ছাড়তে ড্রাইভার গাড়ি ছাড়লো।মেবিন চারুকে বলল,স্টেশন থেকে  তোদের বাসায় যেতে কত সময় লাগবে
চারু বলল,মাত্র আধা ঘন্টা কেন সমস্যা হচ্ছে তোর মেবিন বলল,খুব ঘুম পাচ্ছে গো চারু বলল,কি ব্যাপার সারারাত বুঝি!মেবিন চারুকে একটা ছোট্ট চড় দিয়ে বলল,খুব ফাজিল হয়েছিস তাই না।
চারু আর মেবিন দুজনেই হেসে উঠলো,
চারু আবার বলল,সত্যি করে বল আমাকে সব মেবিন বলল,কি বলবো সেটাই তো বুঝতে পারছিনা গো।চারু বলল,না বুঝার ভান করছিস না সব আমাকে বল চারু একটু অভিমানের সুরে বলল ঠিক আছে না বলিস শুনবো না আর তোদের কথা।
আমি তো তোর বেষ্ট বান্ধবী হতে পারলাম না,মেবিন চারুকে বলল,এই ফাজিল এখানে শুনবি না বাসায় চল তারপর সব তোকে বলবো।
চারু আর মেবিনের কথোপকথনে সময়টা কখন যে পার হয়ে গেলো একটুও টের পাইনি,এর মধ্য গাড়ি এসে থামলো চারুদের বাসার সামনের গেটে।
চারু গাড়ি থেকে নেমেই মেবিনকে বলল, নিলয় আর তুই নেমে আয়,মেবিন ও নিলয় দুজনেই গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়ালো।চারু ড্রাইভারকে বলল,ব্যাগ পত্র নামিয়ে বাড়ির ভিতর আসতে,বলেই নিলয় আর মেবিনকে সাথে নিয়ে বাড়ির ভিতর প্রবেশ করলো।চারুর মা ওদের জন্য অপেক্ষা করছিল ওদের দেখেই স্বাগতম জানালো এবং নিলয় আর মেবিনকে জিজ্ঞেস করলো তোমরা কেমন আছো,বাড়ির সবাই কেমন আছে নিলয় আর মেবিন সব বললো,চারুর মা মেবিনকে বলল,এই বুড়ো মেয়েটার কথা বুঝি মনে নেই আজ মনে পড়লো।
মেবিন বলল,মনে আছে আন্টি আর আছে বলেই তো মেয়েকে দেখতে এলাম।
চারুর মা চারুকে বলল,তুই ওদের নিয়ে রুমে নিয়ে আয় আমি নাস্তা নিয়ে আসি বলেই রান্না ঘরে চলে গেলো।
নিলয় আর মেবিন চারুর রূমে এসে বসলো,চারু নিলয় আর মেবিনকে ওয়াস রূম দেখিয়ে দিয়ে বলল,তোরা ক্লান্ত তাড়াতাড়ি ফ্রেস হয়ে নে মেবিন আর নিলয় দুজন ওয়াস রূমে গিয়ে ফ্রেস হয়ে তারপর এসে সোফায় বসলো,চারু মেবিন আর নিলয় খোশ গল্পে মেতে উঠলো,চারু হেসে বলল,কেমন কেটেছে তোদের দুজনের বল শুনি একটু,মেবিন বলল,কেমন কাটবে আর সবার যে রকম কাটে আমাদেরও তাই কেটেছে,এমন সময় চারুর মা ওদের জন্য নাস্তা বানিয়ে এনে টেবিলে দিয়ে বলল,নাস্তা সেরে নাও তারপর তোমরা গল্প কর বলেই রূমের দিকে চলে গেলো,চারু মেবিন ও নিলয়কে মেবিনকে সাথে নিয়ে নাস্তার টেবিলে এসে বসলো,তারপর নাস্তা পরিবেশন করার ফাকে ফাকে চারু দুষ্টমির তীর ছুড়ছে মেবিনের দিকে।
চারু নিলয়কে বলল,দুলাভাই কেমন কাটলো তোমার লং জার্নিটা বলো শুনি নিলয় কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না বলে দিলো ফাটাফাটি।চারু হেসে বলল,ওটা অমন বলেই,,,আবার হাহাহা করে হেসে উঠলো। মেবিন চারুকে বলল,শোন ইদানীং খুব ফাজিল হয়েছিস তুই!এটা ভালো হচ্ছে না কিন্তু।চারু বলল,ওমা কি বলিস সত্যকে সত্য বলা কি মহা অন্যায়!মেবিন বলল,হয়েছে এবার থাম তো তুই।
চারু আবার নিলয়কে বলল,দুলাভাই আরব্য রজনীর হাজার রাতের গল্পটা তুমি বলো আমি শুনি আমি জানি মেবিন কখনো বলবে না আমাকে,নিলয়ের কেন জানি দুলাভাই শব্দটা মারাত্মক ভালো লেগে গেলো কি একটা যাদু যাদু ভাব আছে দুলাভাই শব্দটার ভিতর।
চারু বলল,কি হলো দুলাভাই বলো শুনি!মেবিন চারুকে বলল,থামবি চারু পরে একসম সব শুনিস,চারু মেবিনকে বলল,আমি চিনি না তোকে তুই বলবি আর আমি শুনবো,আমি তো চিনি তোকে।নিলয় মেবিন আর চারু নাস্তা শেষ করলো তারপর চারু মেবিনকে বলল,আয় তোর রূম দেখিয়ে দেই এখন ঘুমাবি ঘুম থেকে উঠলে ঘুরতে বের হবো,চারু নিলয়ের রূমটাও দেখিয়ে দিল মেবিন আর নিলয় ওদের রূমে গেল ঘুমাতে।

চলবে.....

মমতা রায় চৌধুরী'র ধারাবাহিক উপন্যাস ৯৫ পর্ব




উপন্যাস 

টানাপোড়েন ৯৫

অপ্রত্যাশিত
মমতা রায় চৌধুরী

নদীর মনের ভেতরের তারগুলি ক্রমশ এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। কেমন যেন একটা বেসুরোভাব । হৃদয়তন্ত্রীতে যেন আর কোনো সুরেলা সুর  বেরোবে না। তার সঙ্গেই কেন এরকম হচ্ছে। নদীর স্বচ্ছন্দ গতিপথ কেন বারবার আটকে যাচ্ছে?তার ভেতরের সাজানো বাগান টা কেন এমনি করে তছনছ হয়ে যাচ্ছে?'
অনেক রাত অব্দি জানলার কাছে দাঁড়িয়ে  সিগারেটের পর  সিগারেট খেয়ে যাচ্ছে ।ধোঁয়ার কুণ্ডলী পাকিয়ে যাচ্ছে চারিদিকটা। তার জীবনটা তো এরকম হওয়ার কথা ছিল না।
প্রথমে তার জীবন থেকে তার সব থেকে কাছের মানুষ তার বাপি চলে গেল। বাপিকে তো আর সেখান থেকে ফেরানো যাবে না। ইচ্ছে করলো বাপি কে স্পর্শ করা যাবে না।
এরপর মা ও তার থেকে ক্রমশ দূরে সরে যাচ্ছে।
হঠাৎই নিচে ঝর্ণা মাসির কথার আওয়াজ পাওয়া গেল। 'বৌদি এখন কেমন বোধ করছ?'
নদী কথাগুলো না শোনার চেষ্টা করছিল। তবুও কথাগুলো কানে শোনা যাচ্ছিল ভাসা ভাসা।
রুপসা অনেক ক্লান্ত স্বরে বলল' ভাল ।'
তারপর হাত বাড়িয়ে টেবিল থেকে কাঁচের জলের ক্লাসটা নিতে যাচ্ছে ।
তখনই ঝর্ণা ছুটে এসে বলল' একি আমি রয়েছি তো ?তুমি কেন নিতে যাচ্ছো আবার কিছু একটা অঘটন ঘটাবে নাকি?'
রুপসা একটু মলিন হেসে বলল' তুমি আর কত করবে ঝর্ণা?'
ঝর্ণা বললো 'আমি তো কাজ করতেই এসেছি।'
রুপসা বলল 'তা হলেও তুমি না থাকলে আজকে আমি নিশ্চিন্তে কাজ করতে পারতাম না।'
তারপর উৎসুকভাবে এদিক-ওদিক দেখতে 
লাগল ।কাউকে খোঁজার চেষ্টা করছে যেন।
ঝর্ণা বললো 'তুমি কি মামনিকে  খোঁজ করছ?'
রুপসা বলল 'আজকের জন্মদিনটা মাটি হয়ে গেল ।জন্মদিনটা মাটি হয়ে গেল ঝরনা।'
ঝর্ণা বললো 'সব ঠিক হয়ে যাবে বৌদি?'
রুপসা বলল 'আমি জানি আমার মেয়েটা আমাকে কখনো ক্ষমা করতে পারবে না।'
ঝরনা একটু চুপ করে রইলো।
রুপসা জানলার দিকে তাকিয়ে আছে শূন্য দৃষ্টিতে চারপাশটা যেন মনে হচ্ছে শুধু ফাঁকা, শুধুই অন্ধকার, শুধুই অস্তিত্বহীন টিকে থাকা।
ঝর্ণা বললো' বৌদি আস্তে আস্তে সব ঠিক হয়ে যাবে।'
রুপসা বলল 'কি করে হবে ঝরনা? আমার মেয়ের একটা স্পেশাল দিন। আমি মা হয়ে তার কাছে থাকতে পারলাম না ।এর থেকে কষ্ট আর কি আছে বলতে পারো তুমি?'
ঝর্ণা বললো 'আজকে তুমি অফিস থেকে বের হতে পারলে না কেন বৌদি?'
রূপসার চোখে জল। 'তোমার দাদা মরে গিয়ে আমাকে মেরে গেছে। কেন যে আমি এই অফিসে চাকরি নিলাম?'
ঝর্ণা বললো 'কিছু খারাপ কিছু ঘটেছে?'
রুপসা তখনও শূন্য দৃষ্টিতে বিহ্বলভাবে তাকিয়ে আছে ঝর্ণার দিকে।
ঝর্না এবার বৌদির কাছে এসে  মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে বলল' কি করবে বলো ?আমরা তো নারী। আমরা জানি আমাদের শত প্রতিবন্ধকতা জীবনে আসে ।এই প্রতিবন্ধকতাকে ঠেলে আমাদের এগিয়ে যেতে হয়। সমাজ আমাদেরকে অন্য দৃষ্টিতে দেখে।
রুপসা বলে' আমি এভাবেই একদিন শেষ হয়ে যাবো জানো?'
ঝরনা বৌদির মুখে হাত দিয়ে বলে' খবরদার বৌদি এভাবে কথা বলবে না তুমি?'
রুপসা বলে 'ঝরনা আজকে তুমি আমার কাছে আছো বলে ,তোমার সঙ্গে দুটো কথা বলে আমি শান্তি পাই।'
ঝরনা বলে' তুমিও তো আমাকে কোন পাঁক থেকে তুলে এনেছ বৌদি ।আমার নতুন জীবন দিয়েছ।'

রূপসা বলে 'কিন্তু আমার জীবন যে পাঁকে পরিপূর্ণ হয়ে যাচ্ছে।'
ঝরনা বলছে 'বৌদি তুমি এভাবে কেঁদো না ।আমি জানি তোমার খুব কষ্ট হচ্ছে।'
রূপসা বলছে' আমার হৃদয়খানা টুকরো টুকরো হয়ে গেছে ঝরনা। আমার একমাত্র মেয়ে সে যদি আমাকে ছেড়ে চলে যায় । আমি বাঁচতে পারব না।'
ঝরনা বলছে 'না না আমাদের মামনি সে রকম মেয়েই না। ঠিক তোমাকে বুঝতে পারবে। একদিন দেখো বৌদি।'
রুপসা কেমন হাপুস নয়নে কাঁদছে ঝরনার বুকে মাথা রেখে।
' আমি আজকে যা কিছু করছি সব আমার মেয়ের জন্য করছি। আমার জীবনের কি আছে তুমি বল তো?'
ঝরনা বলছে' কেঁদো না বৌদি।  মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে ক্রমশ সান্তনা দিচ্ছে। আর বলছে চুপ চুপ।'
নদীর হঠাৎ করেই কথাটা কানে আসে। নদী ভাবতে থাকে তাহলে কি সে মামনিকে কী ভুল বুঝছে?'
ভাসা-ভাসা কথাগুলো কানে আসছে। একটু কৌতুহলী হয়ে উঠছে নদী।
সবকিছু যেন কেমন তালগোল পাকিয়ে
 যাচ্ছে ।নদীর হাত থেকে সিগারেটটা পড়ে
 গেল ।আর ইচ্ছে করলো না তুলে আর একবার সুখটান দিতে। আজকাল তো এই সুখটানেই বেঁচে আছে নদী।
এমন সময় সমুদ্র ফোন করে। রিং হয়ে যাচ্ছে নদীর ফোনে। নদী তাকিয়ে দেখে সমুদ্রর ফোন। 
আর মনে মনে বলে'এই শালা, আমাকে একটু শান্তিতে থাকতে দেবে না এক দন্ড।
কারণে-অকারণে ফোন করতেই হবে।'
নদী ভাবছে সত্যিই আজকাল ও যেন কি সব শব্দ উচ্চারণ করে ফেলে ,এটা তো তার ডায়রিতে কখনো ছিল না। দ্রুত কি পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে নদী। তবে কি এখনো তার ভেতরে একটু-আধটু সংস্কার বা নীতিবোধ কাজ করছে? যার জন্য এই শব্দ উচ্চারণ করার পরও কেমন যেন একটা অস্বস্তি হচ্ছে।'
আবার পরক্ষনেই নদী ভাবছে 'একটু বেশিই  রিয়াক্ট করে ফেলছে সমুদ্রের প্রতি। ওই তো আপদে-বিপদে অনেক থেকেছে।  তাই বলে নদীর জীবনে কোন প্রাইভেসি থাকতে পারে না?'
দু'তিনবার রিং হয়ে কেটে গেল। আবার ফোন বাজছে।
এবার নদী বিরক্ত হয়ে ফোনটা রিসিভ করল বলল 'কেন রে তুই ,সবসময় আমাকে এত জ্বালাস ?কি দরকার তোর?'
সমুদ্র একটু হকচকিয়ে যায় তারপর কিছুক্ষন নিরুত্তর থেকে বলে 'একটা খারাপ খবর আছে নদী?'
নদী বলল 'কোনো সুখবর থাকে না আমার জন্য।
তবুও বল শুনি?'
সমুদ্র বলল' এক্সিডেন্ট'।
নদী যেন আকাশ থেকে পড়ে ছিঃ ছিঃ ছিঃ।না জেনেবুঝে কেন সমুদ্রকে এতগুলো কথা শোনালো ।
তারপর একটু নরম সুরে বলল  'কার এক্সিডেন্ট?'
সমুদ্র বলল'আজ অরুনাভদার অ্যাক্সিডেন্ট হয়েছে?'
নদী বলল 'কি বলছিস তুই?
নদীর কাছে এটা একেবারেই অনাকাঙ্ক্ষিত অপ্রত্যাশিত তাই হতভম্ব ভাবে প্রশ্ন করল
'কখন ,কিভাবে?'
সমুদ্র বলল 'মেডিকেল কলেজের সামনেই। মারাত্মক চোট পেয়েছে। মেডিকেল কলেজে ভর্তি করা হয়েছে।'
নদী বলল 'এ বাবা, কি কথা শোনাচ্ছিস?'
সমুদ্র বলল 'আমরা প্রায় সবাই যাচ্ছি।  তুই কি আসবি?'
নদী বলল' আলবত যাব।'
সমুদ্র বলল 'অরুনাভদা কতটা প্রগ্রেসিভ জানিস তো সমস্ত ব্যাপারে ?পড়াশোনা বল ,কালচারাল বল...।'
নদী বলল' ঠিক আছে। তুই আমার বাড়ির সামনে চলে আয় ।আমি তোর সঙ্গে বাইকে চলে যাব।'
সমুদ্র বলল' ওকে।'
নদী ভাবছে  'এই তো কদিন আগে অরুনাভদার সঙ্গে কথা বলতে বলতে হাঁটছিলো ,কত মজার কথাই জানে। মন খারাপের দিনগুলোতে অরুনাভদা যেন মুশকিল আসান।
 ওয়ারড্রব থেকে জিন্সের প্যান্ট টা বের করে পরতে গিয়ে বোতাম লাগাতে লাগাতে ভাবছিল এসব কথা।
সঙ্গে একটা কুর্তি পরে নিল আর একটা উইন চিটার পরে নিল।, ঠান্ডা আছে, বাইকে গেলে লাগবে ঠান্ডাটা।
এক প্যাকেট সিগারেট নিয়ে নিল প্যান্টের 
পকেটে । সমুদ্র আর তীর্থ যা হ্যাংলা ।ওদের কাছে চাইলেও সহজে পাওয়া যাবে না ।যদিও চটাতে চাইবে না ।দেবে। তবুও লক্ষীর ভান্ডার পূর্ণ করে নিয়ে যাওয়া ভালো।
দরজাটা লক করে ফোনটা বুকপকেটে নিয়ে তাড়াতাড়ি সিঁড়ি দিয়ে নামছে, জুতোর আওয়াজ শুনে রুপসা ঝরনাকে ধাক্কা দিয়ে ব্যাপারটা বোঝার জন্য বাইরে যেতে বলল ইশারায়।
এরমধ্যে গেটের কাছে এসে হর্ণ বাজাচ্ছে সমুদ্র।
সিঁড়ি দিয়ে নামতে গিয়ে নদী হঠাৎ দাঁড়িয়ে পড়ল
ঝরনা মাসিকে দেখে।
ঝর্ণা বললো 'কোথায় যাচ্ছো মামনি?'
নদী বলল' একটু দরকার আছে মাসি ,বেরোচ্ছি।'
ঝর্ণা বললো' রাত হয়ে যাচ্ছে এখন বেরোলে?'
নদী একটু বিরক্ত হয়ে বলল 'ঝরনা মাসি কলকাতা শহরে এই সময়টা রাত নয়। বলো সন্ধ্যে। তারপর ঝর্নাকে বলল 'সরো ,সরো ,
সরো ।আমার তাড়া আছে।'
সমুদ্র তখনও হর্ন বাজিয়ে যাচ্ছে।
নদী বলল চেঁচিয়ে 'এই দাঁড়া নেমে গেছি।'তারপর মুখ ফিরিয়ে ঝরনা মাসিকে বলল'আমার ফিরতে দেরী হতে পারে?'

কবি রাজেশ কবিরাজ এর কবিতা




আবার মনে পড়ে 
রাজেশ কবিরাজ

আমি শহরের মানুষের ভালোবেসে দেখেছি
পাইনি গ্রামের মানুষের সেই স্বাদ,
সেই স্নেহভরা মায়াবী হাত ।  সেই হাত -
কবে ছেড়ে এসেছি  আমি ! তারপর
শেষ হয়ে গেছে কত অন্ধকার ভয়ঙ্কর  রাত ।

তারপর ভুলক্রমে এক অচেনা রূপসী
নারীকে ভালোবেসে দেখেছি, তারা শুধু 
খোঁজে রুপ আর কোটি কোটি  টাকা ।
তারা চেনে না'কো কোনদিন মানুষের মন,
ভালোবেসে দেখেছি সেই রূপসীদের প্রতিক্ষণ ;
তারা করেছে আমায় বারবার বোকা,
তাই এখন খুব ভালোবাসি থাকতে  একা একা ।

আমাকে দেখেনা আর খোলা সবুজ মাঠ,
আমিও দেখি না সেই পুরাতন খেয়াঘাট ।
সেই খেয়াঘাট, যে ঘাটের এপার ওপার -
দাঁড়িয়ে থাকে কত অচেনা মানুষ,
অনেক প্রতীক্ষায় সেই বয়ে চলা বিশাল
জলাধারী ঘোষখালি নদী হবে বলে  পার ।

আমাকে টানে আমার সেই ফেলে আসা
মাতৃতুল্য আগলে রাখা সেই সবুজ গ্রাম,
সোনালী ধানের ক্ষেত, সেই -
চেনা মানুষের মুখ প্রতিনিয়ত  বার বার ।

তারা আমাকে বলেছিল জাপ্টে ধরে
আমাদের ছেড়ে যাস না এই বিদেশে,
তবে যাচ্ছিস যখন যা, বাধা দেব না ।
তারা বলেছিল আমায় ভালো থাকিস  বারবার,
মনে পড়ে যদি আসিস আমাদের দেখতে আবার ।

কবি শামরুজ জবা'র কবিতা




আমরা বাঙালী 
 শামরুজ জবা 

পরিচয়ে আমরা বাঙালী, বাংলা আমাদের ভাষা,
এই ভাষাতে কথা বলে মিটাই মনের আশা। 
বাংলা আমার জন্মভূমি, বাংলা আমার দেশ,
এই দেশেতে বসত করে সুখে আছি বেশ।
অল্প আয়াসে শস্য ফলে,উর্বর বাংলার মাটি,
ফলে, ফুলে ভরা অপরূপ সৌন্দর্যের ঘাটি। 
হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খৃষ্টান সকলে ভাই ভাই, 
একে - অপরের বিপদ - আপদে সবাই এগিয়ে যাই। 

বাঙালী পরিচয়ে আমরা চলি এক সাথে, 
বাধা পেলে প্রতিহত করি শক্ত হাতে। 
শত্রুর বিরুদ্ধে লড়াই করে দিয়েছি বীরত্বের পরিচয়,
কখনই আপোষ করিনি আমরা ছিনিয়ে এনেছি জয়।

আমরা বাঙালী বীরের জাতি ইতিহাসের কথা, 
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু আমাদের মহান নেতা। 
আজও আমাদের অধিকার কেও করতে পারেনি খর্ব,
বাঙালী বলে পরিচয় দিতে তাই করি সকলেই গর্ব।

শামীমা আহমেদ/পর্ব ৫৪




শায়লা শিহাব কথন 
অলিখিত শর্ত 
(পর্ব ৫৪)
শামীমা আহমেদ 



রাহাতের সাথে কথা শেষ  করে তাকে বাসায় নামিয়ে ঘরে ফিরতে ফিরতে শিহাবের  প্রায়  রাত সাড়ে দশটা বেজে গেলো। সপ্তাহ শেষে   দুজনে  একসাথে আজ বেশ কিছুটা সময় কাটালো  "টেবিল টপ" রেস্টুরেন্টটায়। শিহাব রাতের মত কিছু খাবার খেয়ে নিয়েছে। সেখানে রাহাতকে ডিনার করাতে চাইলেও একেবারেই রাজি  করানো গেলো না।রাহাত জানালো,সারাদিনের ক্লান্তির পর সে বাসায় ফিরবে।মা আর শায়লা আপুর সাথে রাতের খাবার খাবে।শিহাব জানালো,আমার জন্যতো এখানে আর কেউ অপেক্ষায়  নেই। আমাকে এভাবেই জোড়াতালি দিয়ে জীবন কাটাতে হচ্ছে।এভাবেই মানিয়ে নিতে হচ্ছে।
রাহাত শিহাবের কষ্ট  বুঝতে পারলো।তাকে আশ্বাস দিলো, শীঘ্রই আপু আপনার জন্য খাবার নিয়ে অপেক্ষায় থাকবে। দিনশেষে আপনি যখন ঘরে ফিরবেন আপু আপনার দরজা খুলবে। আপনাকে অফিসে যাওয়ার প্রস্তুতে কাপড় এগিয়ে দিবে।আপনার পছন্দের খাবার রান্না করবে।আপনারা একসাথে বসে কফি খাবেন।একসাথে ঘুরে বেড়াবেন! রাহাতের কথায় শিহাবের চোখ চকচক করে উঠছিল!  সুন্দর আগামীর আশায় তার মনে স্বপ্নেরা উঁকি দিচ্ছিল।শিহাব বুঝতে পারলো হয়তো এতদিন সে রাহাতের মতই কাউকে মনে মনে খুঁজছিল যার কাছে মন খুলে সব কথা বলা যায়। যে তার না বলা কথাগুলোর বাস্তবে রূপ দেয়ার জন্য এগিয়ে আসবে।চমৎকার কিছু সময় কাটলো দুজনের। শিহাব মনের ভেতর অপার এক আনন্দ নিয়ে আজ ঘরে ফিরলো।মনে হলো সত্যিই পৃথিবীটা খুবই সুন্দর! এখনো সব বাধাবিঘ্ন পেরিয়ে ভালবাসার জন্য মানব হৃদয় উদ্বেলিত হয়।এখনো নিঁখাদ ভালোবাসার মূল্যায়ন হয়। তার  মনে হলো  নিজের প্রতিজ্ঞা ভেঙে সে কোন ভুল করেনি।হয়তো এমনই হয়,খারাপ সময় খুব বেশিদিন থাকেনা।শুধু শক্ত মনে দুঃসময়টাকে মোকাবেলা করতে হয়।শিহাব শায়লাকে ভেবে স্বপ্নের দোলায় দুলছে আজ।মনে হচ্ছে শায়লা তাকে ঘিরে আছে।শায়লার নিঃশ্বাস,শায়লার মাঝে গোলাপের সুরভির উন্মাদনা খুঁজে পাচ্ছে। খালি ঘরটাতে ঢুকেও  শিহাবের মনটা  আজ  আনন্দে উৎফুল্ল হয়ে আছে! যেন ঘরময় শায়লার উপস্থিতি সে টের পাচ্ছে।যেন এক্ষুনি শায়লা এসে বলবে, আহ! শিহাব,কত ক্লান্ত তুমি আজ, এ কথা বলেই হাতটা এগিয়ে সবকিছু নিয়ে শিহাবকে ভারমুক্ত করবে। আর শিহাব শায়লার অমন অপরূপ মায়াভরা কান্তির মুখাবয়াবে তাকিয়ে দিনের সব ক্লান্তি ভুলে যাবে। চট করে সে এক টানে শায়লাকে বুকে টেনে নিবে।শায়লার শত আপত্তিতেও একটি গাঢ় চুম্বনে তাকে আবেশিত করবে। শায়লার ছাড়িয়ে নেয়ার শত চেষ্টাকে ব্যর্থ করে শিহাব শক্ত করে তাকে বুকের সাথে বেঁধে রাখবে। যেন কত যুগের জমাটবাঁধা ব্যথার বরফ শায়লার বুকের উষ্ণতায় গলতে শুরু করবে। 
রাহাত আজ এমনি করে শায়লাকে কাছে পাওয়ার আশ্বাস দিয়েছে।বয়সে ছোট হলেও  রাহাত সবই বুঝতে পারছে।শিহাবের মন চাইছিলো রাহাতকে অতীতের সব খুলে বলতে কিন্তু রাহাত যেন শিহাবের সব কষ্ট বুঝে নিয়ে তা লাঘব করার জন্য নিজেকে প্রত্যয়ী করে তুললো। শিহাব ভাবলো,
রাহাতের মত এমন একটা ছোট ভাই আছে বলেই শায়লাকে পাওয়ায় আর কোন বাধা থাকলো না। আর শায়লার মত বোন যার আছে সেই ভাইতো পৃথিবীর ভাগ্যবানদের একজন। এমনি নানান ভাবনায় শিহাব মনের অজান্তেই নিজেকে শায়লার পরিবারের একজন ভেবে নিলো। বহুদিন শিহাব নিজ পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন।মা,বাবা,আরাফ, ভাবী,ভাতিজা, ভাতিজি, ভাইয়া  সবাইকে ভীষণভাবে মিস করছে আজ। ছোটবেলা থেকে বেড়ে ওঠা নিজেদের বাড়িঘর এলাকা সব ফেলে এসে অচেনা মানুষজনের সাথে থাকতে হচ্ছে।তবে শিহাব আশায় বুক বাঁধলো,শায়লাকে নিয়ে আবার তাদের পরিবার হাসি আনন্দে মেতে উঠবে। রিশতিনার সেই ঘটনাটির পর শিহাবদের পরিবারের আনন্দ যেন থমকে আছে।শায়লার প্রতি শুধু শিহাবের অগাধ বিশ্বাস শায়লা সবাইকে আপন করে নিবে,মা ভাবী তারাও শায়লার আপনজন হয়ে উঠবে! শিহাবের মনে হলো চারদিকের ছড়ানো ছিটানো সব দুঃখ কষ্ট গুলো যেন নিমেষেই দূর হয়ে যাচ্ছে, এক সুখের হাতছানিতে সবকিছু  এক কেন্দ্রে একীভুত হচ্ছে। শিহাবের মনের ভেতর নানান কথার ঝড় উঠেছে।শায়লাকে সব বলতে হবে।আজ রাতেই শায়লাকে সব বলবে সে।
শিহাব ফ্রেশ হয়ে স্লিপিং স্যুট পরে নিলো। ঘুমানোর আগে এক কাপ র'কফি হলে দারুন হতো।কিন্তু আলসেমিয়ে তা আর হলোনা।এখন শায়লার দিকেই মনের পাল্লা ভারী হয়ে আছে।কাল সকালে শায়লাকে নিয়ে জিগাতলার বাসায় যাবে। শায়লার সাথে এ ব্যাপারেও একটু কথা বলে নিতে হবে।ওকে মানসিকভাবে তৈরি  করে নিতে হবে।তবে বাসার সবকিছু আগে থেকে জানাবে না,তাহলে শায়লার কাছে কোন কিছুই নতুন মনে হবে না। আরাফের সাথে শায়লার প্রথম দেখা হওয়ার ক্ষণটার জন্য শিহাব উদগ্রীব হয়ে আছে। শায়লাকে বলবে কাল তুমি সবুজ রংয়ের একটা শাড়ি পরবে।শিহাবের মায়ের সবুজ রংটা খুব পছন্দ।
শিহাব ঘড়ি দেখলো। রাত প্রায় বারো টা ছুঁইছুঁই।নিশ্চয়ই শায়লা অপেক্ষায় আছে।শিহাব দেখেছে যত রাতেই শায়লাকে সে নক দেয় না কেন,শায়লা থেকে তার রিপ্লাই আসবেই।কিভাবে যে  ঘুমায় বুঝিনা! সে নাকি জেগে জেগে ঘুমায়! এ এক অদ্ভুত জীবনযাপন!
শায়লা ঘুমিয়েছো?
উহু,,
কেন ঘুমাওনি?
তোমার জন্য অপেক্ষায়। 
আমি যদি নক না দিতাম?
সারারাত অপেক্ষায় থাকতাম।জেগে থাকতাম।
কি বলো? এমনটি করলে শরীর খারাপ করবে।
হউক,তোমার জন্য আমি জেগেই থাকবো।
তারপর সারাদিন ঘুমাবে? তাহলে সংসার দেখবে কে? 
রাতজেগে থাকাটাই আমার আসল সংসার বুঝলেন জনাব।
শিহাবের হাতে মেসেজ লিখে যেন মন ভরছে না। লেখায় কি আর সব অনুভুতি প্রকাশ করা যায়? শিহাব কল দেবার অনুমতি চাইল।
শায়লা সম্মতি জানাতেই মেসেঞ্জারে শিহাবের মুখটা ভেসে উঠলো।যে মুখটা দেখবার জন্য শায়লা দিনরাত অপেক্ষায় থাকে,কিছুদিন না দেখলে আকুল হয়ে উঠে,একটিবার দেখবার জন্য মন ছটফট করতে থাকে।
শায়লার নীরবতায় শিহাব কথা বলা শুরু করলো,
শায়লা তুমি কি বুঝতে পারছো আমরা একটু একটু করে কোনদিকে এগিয়ে যাচ্ছি?
কোনদিকে আবার? ভাললাগছে এটাইতো সব! এই যে কথা বলছি, আর কি লাগবে?
নাহ,এটাই সব না। কাল আমাদের পরিবারের সবার সাথে পরিচয় হবে এরপর তুমি শুধুই আমার হবে,শুধুই আমার।
কথাগুলো বলতে বলতে যেন শায়লাকে তার খুব কাছে পাওয়ার অনুভুতিতে  শিহাব ওপ্রান্ত থেকে অস্ফুট এক মায়াজড়ানো কন্ঠে শায়লাকে জড়িয়ে নিতে চাচ্ছে।বারবার বলছে,শায়লা আমি টের পাচ্ছি তুমি আমার খুব কাছে চলে এসেছো!আমি তোমার সবটা ছুঁয়ে ছুঁয়ে যাচ্ছি!
শায়লা বুঝতে পারছে না শিহাবের এই মনের অবস্থায় তার কি করা উচিত।তার ভেতরেও অনেক কিছু ভেঙে মুচড়ে যাচ্ছে। অনেক অপ্রকাশিত অনুভুতির প্রকাশে শায়লাকে আপ্লুত করে তুলছে। দেহের শিরা উপশিরায় রক্তের স্রোত বাড়ছে। হৃদ কম্পনের আওয়াজ যেন শুনতে পাচ্ছে,আর তা ক্রমশই বেড়ে চলছে। শায়লা বুঝতে পারছে না কেন তার নিজের উপর কোন নিয়ন্ত্রণ থাকছে না।অন্ধকারেও শায়লার চোখ শিহাবকে দেখতে পাচ্ছে।মনে হচ্ছে শিহাব তার খুব কাছে এসে বসেছে।খুব কাছে,নিঃ শ্বাসের দূরত্ত্বে তাকে উষ্ণতায় বাঁধতে চাইছে। শায়লা শক্ত করে চোখ বন্ধ করে অনুভবের পূর্ণতায় এক সুখানুভবে নিজেকে ভরিয়ে নিলো।
দুজনেই কিছুক্ষন নীরব  রইল। শায়লা কল কেটে দিলো। বেড সুইচে ঘরে আলো জ্বালালো। মুখে হাত বুলিয়ে দেখলো বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে কপালে। নিজেকেও কেমন যেন নিস্তেজ লাগছে। গলা শুকিয়ে কাঠ! শায়লা পাশে রাখা এক গ্লাস পানি গলায় চালিয়ে নিলো।ভীষণ ইচ্ছে করছিল,এখন শিহাবকে কাছে পেতে। হঠাৎই আয়নায় চোখ পড়লো শায়লার।নিজেকে দেখে নিযেই লজ্জা পেয়ে গেলো।শায়লা দ্রুত ঘরের  বাতি নিভিয়ে দিয়ে দু'হাঁটুর উপর মাথা গুঁজে বসে রইল।ভেতরে এক চাপা উত্তেজনা।যেন শিহাবের ছুঁয়ে যাওয়া অনুভব! শায়লার ভেতর থেকে কান্নার সাগর উগড়ে বেরিয়ে আসতে চাইছে।নিজেকে অসহায় লাগছে।শিহাবের কাছে আশ্রয় খুঁজে ফিরছে। শায়লা মনের অজান্তেই কয়েকবার শিহাব শিহাব বলে ডেকে উঠলো।কিন্তু শব্দগুলো যেন কন্ঠ থেকে বেরুলো না তবুও শায়লার এ ডাক যেন শিহাবের কানে গিয়ে ঠিকই পৌছুলো। 
তক্ষুণি শিহাবের মেসেজ এলো।
শায়লা কি করছো?আমি তোমার ডাক শুনেছি।এইতো আমি, দেখো তাইতো সাড়া দিলাম!
শিহাব এক মূহুর্ত দেরি না করে  আবার মেসেঞ্জারে কল দিলো। শিহাবের ভরাট কন্ঠে 
শায়লা ! ডাকটিতে শায়লা যেন আরো বেশি আবেগাপ্লুত হলো! শায়লা বুঝতে পারে  না, কেন, যত রাত বাড়ে আর ততই আবেগের এমন চেপে বসা। এমন আবেগী কন্ঠে নিজেকে সঁপে দেয়া।বাইরে রাতের আঁধার যতই ঘন হতে থাকে চাওয়া পাওয়ার প্রাবল্য ততই যেন ঘিরে ধরতে থাকে ।মনে হয় যেন শত্রুপক্ষের প্রবল আক্রমণে প্রতিপক্ষকে জয় করে নিতে চাইছে।শায়লা বুঝেনা,  দিনের আলোয় লুকিয়ে থাকা অনুভুতিগুলি যেন রাত হলেই প্রতিবাদমুখর হয়ে ওঠে। ওদের পাওনাগুলো বুঝে নিতে চায়। বিনিময়ে জীবনাতিপাতে বেঁচে থাকার রসদ যোগায়।শায়লা জীবনের এই বাঁকগুলো  ঠিক বুঝে উঠতে পারে না।কেন দিন আর রাতের এই বৈষম্যের খেলা? কেন একজন মানুষের ক্সছেই সবটা সমর্পিত থাকে।কেন হাজারো মানুঢের চলাচলেও শুধু একজিন মানুষই দৃষ্টি আকর্ষণ করে। এসবের উত্তরে শুধু শিহাব ন্সমটই যেন প্রতিধ্বনিত হচ্ছে! শায়লা কোথায় যেন  ভাবনার অতলান্তে ডুবেছে সাথে কিছু লজ্জাও মিশেছে।
শিহাব ওপ্রান্তে অপেক্ষায়।শায়লা,আমি তোমার জন্য নতুন করে বাঁচবার প্রেরণা পেয়েছি।তুমি আমাকে কখনো ছেড়ে যেও না।



চলবে....