২৭ ডিসেম্বর ২০২১

মমতা রায় চৌধুরী/৭৮




উপন্যাস 


টানাপোড়েন ৭৮
যন্ত্রণার আঁচড়
মমতা রায় চৌধুরী


স্কুলে ঢুকতে ই এক অভিভাবক এসে জিজ্ঞেস করলেন'আপনি কি রেখা ম্যাম?'
রেখা বলল' হ্যাঁ ।কেন বলুন তো?'
অভিভাবক বললেন 'নমস্কার,আপনি ফোন করেছিলেন?'
রেখা বলল ' আমি?
অভিভাবক বললেন ' প্রজেক্ট এর ব্যাপারে।'
রেখা বলল'হ্যাঁ ,ফোন করেছিলাম আপনার মেয়ের নাম কি?'
অভিভাবক বললেন' রিয়া মল্লিক।'
রেখা হাত বাড়িয়ে বললেন ', হ্যাঁ হ্যাঁ, দিন।'
বড়দি লক্ষ্য করে একবার মুচকি হেসে ঘরে ঢুকে পড়লেন।
গার্জেনের কাছ থেকে খাতাটা নিয়ে বড়দিকে গিয়ে রেখা বলল'দেখলেন দিদি তাও একজন গার্জেন এসে দিলেন ।বাকিদের মধ্যে কেউ তো সুইচড অফ করে দিচ্ছেন, আবার কেউ ফোন ই  তুলছেন না।'
বড়দি বললেন 'খুবই সমস্যার কথা।'
রেখা বলল' তাহলে কি করবো এখন?'
বড়দি বললেন'আর দুটো দিন দেখো, যদি না দেয়, তখন নয় বিষ্ণুকে পাঠাবো'।
রেখা বলল ' ঠিক আছে বড়দি, যেমন বলছেন তেমনই হবে। আসছি তাহলে  বড়দি।'
বড়দি মাথা নেড়ে সম্মতি জানালেন।
রেখা চলে আসছে ঠিক তখনই পেছন থেকে বড়দি ডাকলেন। 'রেখা শোন।'
রেখা গিয়ে বলল'কিছু বলবেন বড়দি?'
বড়দি বললেন'সামনের সপ্তাহে রিম্পার ফেয়ারওয়েল দেয়া হবে। তোমাকে আগে থেকেই জানিয়ে রাখছি, কারণ তুমি তো মাঝে মাঝেই ছুটি নিচ্ছো এজন্য।'
বড়দির কথাটা শুনে রেখার বুকের ভেতরে যেন একটা কেমন যন্ত্রনার আঁচড় কেটে গেল। রেখার চোখে মুখের অভিব্যক্তিতে তা স্পষ্ট ধরা পরলে ,বড়দি বললেন 'দেখ রেখা ,পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সদ প্রচেষ্টায় বহু শিক্ষক-শিক্ষিকার দীর্ঘ প্রতীক্ষিত  বাড়ির কাছে যাবার স্বপ্ন 'উৎশ্রী'সোনায় সোহাগা করে দিয়েছে। সেজন্য মন খারাপ না করে এটাকে মেনে নাও।'
রেখা বলল' হ্যাঁ দিদি, সে তো মানতেই হবে।'
এরইমধ্যে রিম্পাদির গলা শোনা গেল 'রেখা কোথায় গেল বলতে বলতেই বড়দির ঘরের দিকে উঁকি দিয়ে দেখে ঢুকে বলল 'তুই এখানে ।আমি কত জায়গায় তোকে খুঁজে বেড়াচ্ছি ।একবার ক্লাসের দিকে গেলাম ভাবলাম বোধহয় টুয়েলভের ক্লাসে আছিস ,গিয়ে দেখলাম নেই।'
রিম্পাদি রেখার কাছে এসে হাত দুটো ধরে ঝাঁকুনি দিয়ে বলল' কিরে কথা বলছিস না?'
রেখার চোখের জল দেখে রিম্পা  একটু অবাক হয়ে গেল। রিম্পা বলল 'কি হয়েছে?'
বড়দি হেসে বললেন 'রিম্পা তোমার সামনের সপ্তাহে ফেয়ারওয়েল টা আছে ওকে জানালাম তার থেকে মুখটা কেমন ভার হয়ে আছে দেখো।'
রিম্পা  বলল' আমি জেনেও ওকে সাহস করে বলতে পারছিলাম না ।বড়দি ,যাইহোক আপনি বলে দিয়েছেন, ভালোই হলো। না হলে হঠাৎ করে আগের দিন জানতে পারলে আরো বেশি কষ্ট পেত।'
রেখা বলল 'না ,না কষ্ট পাবার কি আছে ?ধরে তো আর কাউকে রাখা যাবে না।'
রিম্পা বললেন 'দেখলেন বড়দি?'
বড়দি বললেন 'অভিমানবশত কথাগুলো বলছে। ওর ভেতরটা তো যন্ত্রণায় দগ্ধ হচ্ছে।'
রিম্পা পরিস্থিতি হালকা করার জন্য রেখার গাল দুটো ধরে  বলল' 'বড়দি, দেখুন  ফর্সা গাল দুটো কেমন অভিমান এ লাল হয়ে গেছে।'
বড়দি  বললেন'হ্যাঁ তাই তো?'
রেখা বলল ' বড়দি আসছি।''
রিম্পা  বলল 'বড়দি  আসছি।'
বড়দি বললেন "হ্যাঁ এসো।'
আরো বললেন আচ্ছা আজকে টিচার্স নন টিচিং স্টাফ সকলের সঙ্গে দুটো থেকে একটা মিটিং আছে ।ওটা পঞ্চমী নোটিশ টা সার্ভ করল কিনা দেখ তো?'
রিম্পা বলল 'ঠিক আছে বড়দি।'
রিম্পা আর রেখা যখন স্টাফ রুমে ঢুকলো অনিন্দিতার বিয়ে নিয়ে আলোচনা হচ্ছিল।
কে কি শাড়ি পরবে? কে কি অর্নামেন্টস পড়বে বেশ জমিয়ে আলোচনা চলছে। টিফিন আওয়ার্স ক্লাসের চাপ নেই।
অনুরাধা বলল 'হ্যাঁ রে রেখা। তুই কি শাড়ি পরবি?'
রেখা কোন উত্তর দিল না।
অনুরাধা সকলের মুখের দিকে তাকিয়ে একটা বিশেষ ভঙ্গি করলো।
শিবানী বলল'রিম্পাদি যাচ্ছ তো?'
রিম্পা বলল'( যাবার ইচ্ছে তো আছ?'
অনুরাধা বলল 'রে'খার কিছু হয়েছে রিম্পা? '
 রিম্পা বলল'⁹ না তো?'<
শিবানী বলল "ওর মুখটা ভারী, তাই বলছিলাম।
রিম্পা শিবানীর কথায় কান না দিয়ে বলল' সবাই শোনো একটু মিটিং আছে । বড়দি আমাকে বলতে বললেন ,তাই বললাম।'
এরইমধ্যে ঘন্টা পড়ল।
এরমধ্যে বড়দি ঝড়ের গতিতে স্টাফ রুমে ঢুকে বললেন 'আজকে মিটিং ডাকা হয়েছে মূলত পরীক্ষা সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে আলোচনা করার জন্য।
আগামী সপ্তাহে স্কুলের টেস্ট পরীক্ষা শুরু হচ্ছে।
আপনারা সবাই চেষ্টা করবেন এই সময় গুলোতে ছুটি না নেবার ‌। পরীক্ষার দিনগুলোতে কোন সি এল গ্রান্ট হবে না।'
শিবানী বলল 'কিন্তু দিদি, কারুর তো কোনো আর্জেন্ট প্রয়োজন হতে পারে?'
অনুরাধা বলল' হ্যাঁ দিদি ঠিকই তো।'
বড়দি সে কথার কোন গুরুত্ব না দিয়ে বললেন' নম্বর দেওয়ার ক্ষেত্রে কোনো কার্পণ্য করবেন না আর নম্বরগুলো এবং খাতাগুলো খুব যত্ন করে রেখে দেবেন সংসদ চেয়ে পাঠালে পাঠানো হতে পারে।'
অনুরাধা বলল 'দিদি পরীক্ষাসংক্রান্ত বাইরে একটা কথা বলতে চাই?'
বড়দি বললেন 'হ্যাঁ বলুন।'
অনুরাধা বলল 'অনিন্দিতা জানতে চাইছে কতজন মোটামুটি ওর বিয়েতে অ্যাটেন্ড করছে। '
বড়দি বললেন 'সেটা আলোচনা করে তোমরা ঠিক করো।'ঠিক আছে মিটিং এখানেই শেষ হলো।'
শিবানী বলল "রেখা কিছু বল বিয়েতে যাবার ব্যাপারে?"
অনুরাধা বলল'সব ব্যাপারে ওর  উৎসাহ বেশি থাকে। মনমরা হয়ে থাকলে ভালো লাগে না।স্কুল থেকে গাড়ি করা হচ্ছে ।কে কে যাবে আমাকে জানিও।'
শিবানী বলল' হ্যাঁ কজন যাচ্ছে সেই বুঝে সেরকম গাড়ি করতে হবে।'
রিম্পা বলল 'আমি আর রেখা যাচ্ছি।"
শিবানী বললো 'তাহলে আমরা মোট 10 জন হচ্ছি'। 'অনুরাধা বললো তাহলে দুটো গাড়ি করতে হবে।
ইতিমধ্যে টিফিন শেষ হওয়ার  ঘন্টা পড়ে গেছে পাঁচ মিনিট হয়ে গেল। 
বড়দি এসে বললেন" আপনাদের আলোচনা এখনো হচ্ছে? দেখুন দেখুন কার কি ক্লাস আছে?'
আলোচনায় যেন একটা ছন্দ পতন ঘটল। প্রত্যেকে তড়িঘড়ি করে ক্লাসে যাবার জন্য তৈরি হয়ে গেল।'
রেখার কানে আজকে এই সমস্ত কথা কোনো রেখাপাত করল না।ক্লাস ছিল না বলে স্টাফ রুমে ই ছিল রেখা।তখন ফোন বেজে উঠলো। রিংটোন বাজতে শুরু করলো-
'সবাই তো সুখী হতে চায়..?
রেখা ফোনটা রিসিভ করে বলল' হ্যালো'।
মনোজ বলল' কখন ফিরছো?'
রেখা বলল 'স্কুল ছুটি হলে?'
মনোজ বলল আজকে বড়দিকে বলে একটু তাড়াতাড়ি আসতে পারলে না পার্থদের বাড়ি কাজ ছিল।'
রেখা বলল' বলার স্কোপ পাই  নি।'
মনোজ  বললো' তোমার কি কিছু হয়েছে?'
রেখা বলে কই না তো?
মনোজ  বলল' মনে হচ্ছে যেন ভেতরে কত কষ্ট, কিছু লুকিয়ে যাচ্ছ?'
রেখা বলল' না সেরকম কিছু নয়।'
মনোজ  বলল' আজকে একবারও ফোনও করলে না?'
রেখা বললো' সময় পাই নি।'
মনোজ বলল 'ঠিক আছে ফোন রাখছি।'
ফোনটা কেটে দিয়ে শুধু ভাবতে লাগলো যাকে ভালোবাসা যায় তাকে চিরদিন আটকে রাখা যায় না ।ভালোবাসা তো ক্ষনিকের সুখ দিয়ে চিরস্থায়ী করে যায় ।শীতে শিশির স্নাত দূর্বা ঘাসে সূর্যের কিরণে উজ্জ্বল আলোর সৃষ্টি করে তাও তো ক্ষণস্থায়ী অথচ তা মনমুগ্ধকর ।সেই সুখস্মৃতি নিয়েই পরের দিনের অপেক্ষা। রিম্পাদি রেখার জীবনে সেই সুখস্মৃতি ।কল্পনার সমুদ্রে সুখটাকে নেড়েচেড়ে আগামী দিনগুলোতে পথ চলা।  গোধূলি বেলায় সেই ম্লান সূর্যের আলোর দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে রেখা শুধু বলে ওঠে এই তো জীবন।এই তো জীবন।এই তো জীবন।

ফারজানা আফরোজ 




স্বপ্ন বাড়ি


 
মেঘের ওপার আমার বাড়ি
বাড়ি ঘিরে স্বপ্ন বুনি
আলোয় সাজুক স্বপ্ন বাড়ি
মনের মাঝে পিদিম খানি
জ্বলে নিভে দিবা-নিশি।

মেঘের ওপর ভাসছে বাড়ি
মেঘ থেকে রং করি চুরি
তাই তো বাড়ি রং বাহারি
বাড়ির মাঝে নকশা আঁকি।

চাঁদের বুড়ি নকশা কাটে
হরেক রকম গল্প বলে
সোনালি সব স্বপ্ন বুনি
ছন্দে ছন্দে চলে তরী।

দূর্বা ঘাসে শিশির ঝরে
রবির আলোর ঝিলিক পেয়ে,
মুক্তো যেন হেসে ওঠে।
আকুল‌ হল নয়ন খানি
ঝরা পাতার শব্দ শুনি।

সাঁঝের আকাশ রঙিন হলে
নদীর জলে গিয়ে মেশে।
ধীরে আঁধার নেমে আসে
সন্ধ্যাতারা পূব আকাশে।
হৃদ মাঝারে ইমন বাজে রাগে
বাজুক তবে বাজুক প্রাণে।

কাঁঠাল চাঁপা গন্ধ ছড়ায়
বনবীথির নিবিড় ছায়ায়-
সবুজ যেথা রং ছড়ায়,
কাটে না তার মোহ,মায়া।

ফয়জুর রহমান  ( ইংল্যান্ড ) 





দিন চলে যায় 


জীবন যখন খুব ছোট্ট হয়ে আসবে, 
সেদিন ও গোলাপ ফুটবে, 
শাপলা জলে ভাসবে, পাখিরা গাইবে, 
চারিপাশে প্রিয়জন থাকবে ! 

এই সুন্দর রাতদিন,
কালের গর্ভে একদিন, 
ঠিকই হারিয়ে যাবে। 

কেউ না কেউ হয়ত মনে রাখবে !
যতদিন বেঁচে থাকবে।
ভালোবাসা কখনো কি ফুরাবে ! 

প্রতিটি জীবন বেঁচে থাকবে,
তারই প্রিয়জনের অন্তরে,
সেদিন কেন তুমি কাঁদবে !  
সবাই ই একদিন চলে যাবে।

শামীমা আহমেদ /পর্ব ৪১





শায়লা শিহাব কথন
অলিখিত শর্ত (পর্ব ৪১)
শামীমা আহমেদ 

মায়ের ডাকে নিজের ঘর থেকে শায়লা বেরিয়ে এলো। ডাইনিংএ এসে মায়ের সাথে নাস্তা সারলো। সব কিছু মা'ই এগিয়ে দিলো। শায়লা  কেমন যেন একটা জড়তা নিয়ে অতিথির  মত বসে রইল।মা যা এগিয়ে দিচ্ছে শুধু সেটাই নিচ্ছে। শায়লা শুধু নিজের গ্লাসে  পানি ঢেলে নিলো। এক গভীর ভাবনায় সে ডুবে আছে।অন্য সময় নিজেই সকালে টেবিলে নাস্তা সাজিয়ে মাকে ডাকতো।একসাথে নাস্তা করতো।মায়ের সবকিছুর খোঁজ নিতো কিন্তু আজ  অন্য রকমের পরিবর্তন তার মাঝে। মা শুধু বিস্মিত হচ্ছিল! শায়লা যে কল্পনায় শিহাবের ভাবনায় ডুবে আছে মায়ের কাছে তো তা অজানা।আজ সকালের শিহাবের মেসেজটি দেখার পর আরো যেন সুখ স্বপ্নে বিভোর হয়ে আছে সে। অবশ্য শায়লার মনের এই পরিবর্তন   এ বাড়িতে একমাত্র রাহাতই বুঝতে পারে। শায়লা নাস্তা সেরে চায়ের কাপ হাতে নিয়ে টেবিল ছেড়ে উঠে এলো।মা অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল।
দরজায় কলিং বেল বেজে উঠলো। শায়লার সেদিকে একেবারেই খেয়াল নেই।মা এগিয়ে এসে দরজা খুললেন।কাজের বুয়া বাসায় ঢুকলো। শায়লা তাকে পাশ কাটিয়ে নিজের রুমে ঢুকে গেলো।অন্য সময় এই কাজের বুয়ার সাথে  আজ  রান্নায় কী আয়োজন , আর সেজন্য কী কী করণীয় তার নির্দেশনা দিয়ে রান্নার খুন্তিটা নিজের হাতে নিয়ে নিতো। কিন্তু অসুস্থ হওয়ার পর থেকে আর রান্নাঘরে যাওয়া হয়নি।আর শায়লার এ ব্যাপারে কোন আগ্রহও যেন নেই।সারাক্ষণ  অচেনা একটি মানুষের জন্য  কোন সুদূরের ভাবনায় একেবারে নির্লিপ্ত হয়ে থাকা।

চায়ের কাপ হাতে নিয়ে শায়লা নিজের ঘরে এলো ।ঘরের  দরজা লাগিয়ে বিছানার দিকে এগিয়ে গেলো। বিছানায় বসতেই মেসেঞ্জারে  শিহাবের কল। শায়লা বেশ কিছুক্ষন মোবাইল স্ক্রিনে তাকিয়ে শিহাবকে দেখে নিলো কেমন যেন একটা অনুভুতি হতে লাগলো। চায়ের চুমুক দেয়া ভুলে গেলো।চোখ মোবাইলে আটকে গেলো। হাত বাড়িয়ে মোবাইলটা ধরতে শায়লার হাত কাঁপছিল। 
সাইড টেবিলে চায়ের কাপ রেখে শায়লা কল রিসিভ করলো।এমনিতেই সকালের কলটা ধরা হয়নি। কল ধরতে দেরী হলে শিহাব ভীষণ অস্থির হয়ে উঠে। শায়লা তাই দ্রুতই কলটা রিসিভ করলো। আজ প্রায় দশদিন পর শিহাবের কন্ঠস্বর শুনছে। শায়লা একদম অনুভুতিহীন নিঃসাড় হয়ে গেলো। 
ওপ্রান্তে শিহাব বলেই চলেছে, শায়লা তুমি কেমন আছো,শায়লা তুমি কেমন আছো? 
অস্ফুট স্বরে শায়লা ছোট্ট করে উত্তর দিলো
ভালো।সে নিজেই তা শুনেছে কিনা  সন্দেহ।
হ্যাঁ শায়লা আমি চাই তুমি দ্রুতই ভালো হয়ে উঠো, তোমাকে নিয়ে আমি ভীষণ চিন্তিত হয়ে গিয়েছিলাম।কেন তুমি আমার কথা ভুল বুঝে এতটা অসুস্থ হয়ে গেলে?
শিহাবের কথায় শায়লার সেদিনের রেস্টুরেন্টের  সব স্মৃতি ভেসে এলো।রিকশায় করে সেই যে তার একা একা বাসায় ফিরে আসা।পথটা সেদিন খুব দীর্ঘ লাগছিল।আশেপাশের মানুষগুলোকে অদৃশ্য  লাগছিল।শায়লা ভেবে নিয়েছিল তার জীবনটা আজ এখানেই যেন শেষ হয়ে যায়। জীবনটাকে আর টেনে নেয়ার ইচ্ছে তার নেই। শিহাবকে মনে হচ্ছিল পৃথিবীর সবচেয়ে   বিশ্বাসঘাতক  একজন মানুষ। 
ওপ্রান্তে শিহাব অপেক্ষায়। শায়লার বুকের ভেতর অনেক জমাটবাধা উত্তর। কিন্তু অভিমানে অনুযোগে তা আর বেরিয়ে আসতে চাইছে না। শায়লার চোখ জলে ভরে উঠলো। 
শিহাব ঠিকই বুঝতে পেরেছে শায়লার এই নীরবতার মানে।
শিহাব বলেই চলেছে, শায়লা রাহাতের সাথে আমার কথা হয়েছে।তুমি কি সবকিছু জেনেছো? রাহাত কী সবকিছু তোমাকে জানিয়েছে।শায়লা একেবারেই নিরুত্তর। 
শায়লার মনে অবস্থা শিহাব বুঝতে পারলো।
সেদিনের কথাগুলোর জন্য সে নিজেও বেশ অনুতপ্ত।কিন্তু সেদিনের সেই কথাগুলো না হলে আজ এত কাছে আসার, মনস্থির করা যেতো না।সবকিছুতে সৃষ্টিকর্তার একটা কার্যকারণ থাকে,আর তা অবধারিতভাবে  ঘটবেই। শিহাব এই কথাটি ভীষণভাবে বিশ্বাস করে।শায়লার এমন পিনপতন নীরবতায় শিহাব বুঝে নিলো শায়লার ভেতরের ক্ষতটা এখনো শুকায়নি। শিহাব ভেবে নিলো ঠিক আছে ও আরেকটু সময় নিক। শিহাব বলে চললো, শায়লা আমি অফিসে যাচ্ছি। যাবার আগে তোমার কন্ঠস্বরটা শোনার খুব ইচ্ছে হচ্ছিল। ঠিক আছে। তোমার মন ভালো হলে আমাকে কল করো।আজ সকালের মেসেজট দেখেছো কি? শিহাব তাই ইচ্ছে করেই মেসেঞ্জারে কল দিয়েছে।
এবার শায়লা শুধু বললো,দেখেছি। 
আচ্ছা তাহলে পরে কথা হবে।অফিসে দেরী হয়ে যাচ্ছে।শায়লা আমরা দুজনে একদিন ঐ অনেকদূরে  আমার সেই প্রিয় জায়গাটিতে বেড়াতে যাবো।
শায়লার 'আচ্ছা' শব্দটি খুব নিচুস্বরে শোনা গেলো।
শিহাব বাই বলে কলটা এন্ড করে দিলো। অভিমানী মন নিয়ে নীরব থাকলেও এখন যেন শিহাবের শূন্যতাটা ধক করে এসে বুকে লাগলো। শায়লা শিহাবের ছবিটি দেখছিল মন দিয়ে।সানগ্লাস দিয়ে চোখটা ঢেকে আছে কিন্তু শায়লার শিহাবের চোখ দুটো দেখতে খুব ইচ্ছে করছে।এরপর শিহাবকে বলবে সানগ্লাস ছাড়া একটা ছবি পাঠাতে।দেখা যাক আর এভাবে কথা বলা হয় কিনা যে এতটা আবদার করবে। বিষয়টি হয়তো শিহাব সহজভাবে নিবে নয়তো একেবারেই
এড়িয়ে যাবে।শায়লা নিজের মনের সাথে নিজেই কথা বলে চলেছে। 

রাহাত অফিসের লাঞ্চ ব্রেকে বের হয়ে অফিসের গাড়ির সাহায্য নিয়ে  গুলশান আড়ং এ চলে এলো।শায়লা আর মায়ের জন্য দুটো  শাড়ি কিনবার উদ্দেশ্যে। নায়লার জন্য আগেই  কেনা হয়েছিল।সেগুলো  নিয়ে তো আর যাওয়াই হলোনা। একদিন যেতে হবে মাকে নিয়ে। শিহাব চট করে দুটো  শাড়ি চয়েস করে নিলো। শায়লার জন্য খুব সুন্দর একটা সাগর নীলের সিল্ক শাড়ি আর মায়ের জন্য নরম কটন শাড়ি।মা এতেই বেশ আরামবোধ করে। 
শিহাব অফিসে পৌঁছে লাঞ্চ বিরতিতে শায়লার খোঁজ খবর নিলো।সে শাওয়ার নিয়েছে কিনা,খেয়েছে কিনা,এখন কি করছে? শায়লা এবেলায় যেন একটু ফ্রি হয়েছে। একে একে সবগুলো প্রশ্নের উত্তর দিয়ে গেলো।শিহাবেরও মন সারাদিন   শায়লাকেই ভেবে চলে আর এই ভেবে অবাক
হয়ে যায় সে কতভাবেই না শায়লাকে সতর্ক করেছিল যেন দুজনের মধ্যে কোন ভালবাসার সম্পর্ক না দাঁড়ায়।কিন্তু সব শর্তই আজ আর মনের দাবীর কাছে হার মানলো।শিহাব আবার সেই কথাটিই ভেবে নিলো, সব কিছুই বিধাতার ছকে ফেলা এক অকাট্য নিয়তি। হয়তো তার বাকি জীবনটা শায়লার
সাথেই বাঁধা।নাহ! শায়লাকে নিয়ে আর কোন ছেলেখেলা হয়।কারো মন নিয়ে এভাবে অন্যায় আচরণ মোটেও গ্রহণ যোগ্য নয়।শুধু একটি আবদারই শায়লার কাছে থাকবে, সে যেন মায়ের আদর বঞ্চিত  তার শিশু সন্তান আরাফকে মায়ের ভালবাসা দিয়ে বড় করে তোলে। এ ব্যাপারটা আগেই শায়লাকে জানিয়ে তার সম্মতি নিয়ে রাখতে হবে।
শায়লার কাছ থেকে ফোনে বিদায় নিয়ে শিহাব কাজে মন দিল।


চলবে...

শান্তা কামালী/৫০ তম পর্ব





বনফুল
( ৫০ তম পর্ব ) 
শান্তা কামালী

বিকাল পাঁচটা বাজতেই জুঁই ছাদে উঠে প্রিয় ফুলের গাছ গুলোতে পানি দিচ্ছে আর দেখছে গাছগুলো কেমন ফুলে ফুলে ভরে উঠছে,ভীষণ সুন্দর লাগছেব !  ছাদে উঠে জুঁইয়ের মনটা ঝরঝরে হয়ে গেলো,ঘন্টা খানিক সময় ছাদেই কাটিয়ে সন্ধ্যা নামার সাথে সাথে নিচে নেমে এলো জুঁই। বেসিনে হাত মুখ ধুয়ে বাবা-মার জন্য অপেক্ষা করছে কখন ওনারা নামাজ শেষ করে আসবে... ময়না টেবিলে নাস্তা পরিবেশন করছে, জুঁইয়ের মা-বাবা নামাজ আদায় করে এলেন। জুঁই বাবা-মার সাথে চা নাস্তা খেয়ে উপরে উঠে এলো। অনেক দিন পড়াশোনার সাথে কোনো যোগাযোগ নেই.... 
পড়ার টেবিলে বসে তিনঘণ্টা সময় পড়তে চেষ্টা করলো জুঁই। দশটা বাজতেই জুঁই নিচে নেমে এসে ডিনার শেষ করে বাবা-মাকে গুডনাইট বলে ওপড়ে উঠে গেলো। রাত প্রায়এগারোটা পলাশ যাওয়ার পরে এই প্রথম ভিডিও কল করলো জুঁইকে, আনন্দে বাকরূদ্ধ হয়ে গেছে জুঁই।কোনো রকম কথা বলছে না দেখে পলাশ বললো এই জুঁই কি হয়েছে তোমার, কথা বলেছো না কেন ?  
পলাশের কথায় জুঁই নিজের মধ্যে ফিরে এলো... 
জুঁই বললো আগে তোমাকে ভালো করে দেখতে দাও,  পলাশ তুমি কিন্তু অনেকটা রোগা হয়ে গেছো। 
পলাশ হাহাহা হাহাহা করে হেসে উঠলো জুঁই তুমি সত্যি সত্যিই একটা বদ্ধ পাগলী ।
অনেক সময় দু'জনে কথাবার্তা বললো। এখন পলাশ ভার্সিটি কাছে স্থানীয় একটি বাড়িতে পেয়িং গেস্ট হিসাবে একটা সিঙ্গেল রুমে থাকছে। এইজন্যই ভিডিও কল করা সম্ভব হয়েছে । পলাশ বললো জুঁই আস্তে আস্তে পড়াশোনায় একটু মন দাও, শরীরের প্রতি যত্ন নিও লক্ষীটি । 
এখন রাখছি, গুডনাইট পলাশ ফোন রাখার আগে একটা ফ্লাইং কিস ছুঁড়ে দিলো জুঁই, বললো সেম টু ইউ, গুডনাইট।


চলবে....

রাবেয়া পারভীন/১ম পর্ব

শুরু হলো রাবেয়া পারভিনের নতুন ধারাবাহিক গল্প " দুরের বাশিঁ "




দুরের বাঁশি
(১ম পর্ব)



দুইদিন ধরে হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে থেকে অস্থির হয়ে উঠেছে লাবন্য। অসুস্থ হয়ে ভর্তি হয়েছিলো হাসপাতালে, খুব যত্নআত্তিও পাচ্ছে তবুও যেন হাঁপিয়ে উঠেছে,। মনে হচ্ছে  কারাগার। দুই বেলা ডাক্তার আসছে  দেখছে । এক ডাক্তার তো এসেই দাঁত কেলিয়ে  হাঁসে অযথাই  ব্যাক্তিগত প্রশ্ন করে  করে  ঝালাপালা করে দিচ্ছে লাবন্য কে। একেক সময়  মনে মনে হাঁসিও পায় লাবন্যর। এই দুনিয়ায় কত রকমের মানুষ যে আছে। গতকাল  সারারাত ঘুম হয়নি  লাবন্যর।  ভোর বেলা বিছানা থেকে নেমে কেবিনের বারান্দায়  এলো লাবন্য।  বারান্দাটা  পূব দিকে তাই আজকে  সূর্য উঠা ভোর দেখবে সে। চারপাশে  আবছা অন্ধকার। অন্ধকার ভেদ করে  আলো ফুটছে চারপাশে।  কি মিষ্টি  সকাল, মৃদুমন্দ  হাওয়া বইছে। এমন সুন্দর একটা ভোরে  শুভকে যদি  কাছে  পাওয়া  যেত। শুভর হাতে  হাত রেখে সূর্য  উঠা দেখতে পারতো । লাবন্যর এলো চুলে  হাত বুলিয়ে দিত।   ভাবতে  চেষ্টা করলো লাবন্য  শুভ এখন কি করছে ?  নিশ্চই  ঘুমাচ্ছে। ওকে কখনো জিজ্ঞেস করা হয়নি  খুব ভোর বেলা সে ঘুম থেকে উঠে কিনা ।  আস্তে আস্তে  সূর্য দেখা দিল আকাশে  কি সুন্দর !  একটুও তেজ নেই। লাল টুকটুকে  ঠিক যেন ভোরের আকাশের  কপালে গোল টিপ।   ঐ সূর্যের মত  বড় আর লাল টুকটুকে একটা টিপ কপালে পরবে একদিন  লাবন্য  তারপর শুভকে দেখাবে  বলবে 
-দেখোনা  শুভ আমাকে কেমন লাগছে ?
শুভর মুখটা মনে করে  নিজের মনেই হাসলো লাবন্য।  কি যে সুন্দর  মুখটা শুভর । ঐ মুখে চেয়ে চেয়ে পার করে দেয়া যায় অনন্ত কাল। নির্ঘুম সারারাত শুধু শুভকেই ভেবেছে আচ্ছন্নের  মত  শুয়ে থেকে মনে হয়েছে  শুভ যেন তাঁর বুকের কাছটিতে এসে বসেছিল। খুব খুনশুটি করছিলো  আর উপভোগ করছিলো লাবন্য।  একটা অজানা ভালোলাগায় ভরে ছিলো  মন।


চলবে...