০৪ এপ্রিল ২০২১

দেবব্রত সরকার




মধুমতি


একটি কবিতা লেখার চেষ্টা করছি 

কত বার কাটাকাটি করছি ধরছি

অথচ কবিতা আমাকে ধরা দিলনা

যা দিলো তা শুধু একরাশ শব্দ ব্যঞ্জনা


আমি তো তোমাকে নিয়েই ভাবছি সারা রাত 

দিন শেষ হলে ফিরে আসো দিয়ে থাকো সাথ

এ কেমন তুমি আমাকে বলো কি চাও একা

তোমাকে তো দিইনা কিছুই দিই শুধু ব্যথা


তবুও ভালোবাসো তুমি তোমার মতো করে

প্রেম করো বুকে চোখে মুখে অপূর্ব আদরে

আমি ভেবে যায় সারারাত সারাদিন তুমি

কি ভাবে ভুলবো ছুঁয়ে আমারই বদনামি


অনেক ভাবনা ভেবে ফিরে যায় ঘুমে

আবার ডেকে যে তোলে কবিতায় চুমে

তোমার ঠোঁটের উপর লিখেছি  শ্রুতি

তুমি তো কবিতা নও তুমি মধুমতি ।



 


প্রতিমা রায়বিশ্বাস


 


লিপ্সা


তোমার তোমার তোমার কথায় সকাল সন্ধ্যা রাত্রি।

চোখের জলে সাঁতার কাটে এখন অতীত যাত্রী।

মনের ভিতর অনেক জাগা, জায়গা অনেক বিঘা।

শূন্য রঙের মন মেখে তাই আজও ফুটে থাকা।


জলের ভিতর আবির গুলে আমার চোখে চেয়ে 

প্রাপ্তি ছিল জল থই থই স্রোতের সারি গেয়ে।

আবার আমার সাহিল ভ'রে  উঠছে আবেগ প্রাণ।

রোপন আশায় যাই ছুঁয়ে তার বীজের অমোঘ টান।


ফসল ফলায় অনেক স্মৃতি এই তো দিনের ফল।

দেওয়াল ঘিরে চারটি দিকে অথৈ অশ্রু জল।

তোমার কথায় অনেক ভেজাল অনেক মিথ্যা স্বাদ।

তবুও আমার লিপ্সা অনেক মিথ্যা হয়েই থাক।

আসমা মতিন (লণ্ডন)




হরিৎ প্রান্তরের মেয়ে



ফুল ফসলের লীলাময়ী শ্যমল নিকেতনে 

নির্জন পথ ধরে মেয়ে টি সহস্র বার হেঁটেছে 

ভ্রমণ করেছে সহস্র মনের গহীনে 

শ্রম ঘাম ভোজী সবুজ প্রান্তরে থোকা থোকা ব্যথা 

ব্যথার স্বাদ ও চেকে দেখার চেষ্টা করতো সে

রস ভরা আম কাঁঠালের বনবাদরে চরে বেড়াতো সে অকুণ্ঠে পান করেছে সকল ফলের রস।বহুজাতি বহু ভাষাভাষী মানুষ মানুষের কাঁচাঘর,পাকাঘর শ্রেনী ভেদও একই চত্বরে তবে তার কাছে মানবপ্রেমই জয়ী হতো।

আজানের মধুর সুর নাগধূপের ধোঁয়া পাহাড়ী ভ্রমরের গুনঞ্জন পাখিদের শিস দেয়া ঘুম ভাঙানো ভোর।

পথে যেতে যেতে দুটিপাতা একটি কুঁড়ি, কৃষ্ণচুড়ার রঙ  চা এর গাছ গোলাপ পাপড়ির সাথে অনেক কথা বলা হতো তার 

নবীণ স্রোতস্রিনী  প্রাকৃতির উদ্যানে মিলেমিশে একাকার তার অনুভূতি চাশ্রমিকের অবিরাম শ্রম,রমণীরা  পায়ে খাড়ু গলায় হাসুলী বাজুবন্ধ বাহুতে, সারাটা দিন তাদের পাতা তুলার দৃশ্য এ নিয়ে ছিলো তার গভীর ভাবনা 

এমনি এক নৈসর্গিক লীলভূমির নাগরিকগণ হাসিকান্নায় ব্যস্ত জনপদে

মেয়ে তার আপনারে খোঁজে পাওয়া মনে মনে কথা বলা।

বাংলাবাড়ির বারান্দার দুই পাশে শিউলি করবীর শাখায়  প্রভাতী শিহরণ দেখার আনন্দ পুরোটা ই সে লুটেছে

বাগানে রাত ঝরাতো ফুল ফুলের মালায় ভোরের বারান্দায়  শৈশব সাজিয়ে সে রাখতো।

কৃষ্ণচুড়া গন্ধরাজ কলাবতী আরও কত কি ফুলের সৌরভ এগুলো বাগানে পরস্পরের আত্মীয় হয়েই ছিলো ।

দুপুর যখন পশ্চিমে একটু হেলান দিতো 

 শীতকালের উষ্ণ রোদ ফুল বাগানে 

 ফরিং ধরার হৈচৈ পড়তো খেলার সাথিরা

সেই  শ্যামলিমা মায়া বিথীকা 

আর কোথাও নেই তুলনা।

হটাৎ একদিন নিয়মের কাছে হার মেনে নিতে হলো, মালতিলতার ফটকে জড় হলেন সকল, সকল হৃদয়ে বেদনা বিধুর  অথচ বিদায় জানাতে হবেই 

সময়ের স্রোতে  প্রবাহিত হলো ভাটির দিকে 

হে শৈশব কোনও এক রাজকুমারের ঘোড়ার গাড়িতে চড়ে বিদায় হে শৈশব তোমাকে বিদায়। 

চাপাতার ঘ্রাণ গন্ধরাজ ফুল হে কৃষ্ণচূড়া তোমাকে বিদায়।

কবিতা হালদার





গ্রীষ্মের দাবদাহে




চৈত্রের অবসানে তপ্ত দুপুরে কত কথা আসে মনে

ছুটে যেতে চায় তোমার চির শান্তির কাননে।

 

রুদ্র তোমার দারুন দীপ্তি মায়ের আঁচল তলে।

তৃষিত হরসে চৈত্র পবনে কিযেন চায় উতলা প্রাণে


মাতাল মহুয়া কলস কাঁখে কয়না কথা অভিমানে!

বোনের পলাশ ডেকে বলে করুন নয়নে!


অতিষ্ঠ আমার প্রাণ গ্রীষ্মের দহনে 

এক- লোটা জল দাও, বন্ধু তৃষিত পরানে !


রাখাল ছেলে ছড়ায় ধেনু মাঠে ঘাটে ভরদুপুরে  

ছুটে যায় তৃষিত পরানে মধুকরের মধূপ আহরণে।


বসন্ত বিদায়ে, কুঞ্জবনের ছায়ায় পড়েছে আজ কত রঙের মায়া

সব রাং মিলেমিশে যাবে

কৃষ্ণ চরণে, 

যমুনার কূলে বিরহী রাধার তৃষিত পরানে।।

শ্যামল রায়ের একগুচ্ছ কবিতা



সুতোয় গাঁথা ফুলগুলো

এক

সুতোয় বেঁধে রেখেছি ফুলগুলো

আলোর পথ দেখব

খুশিতে মেতে উঠবো।

আবার সুতোয় বেঁধে রেখেছি আগুন

পুড়িয়ে দেব যত সব আছে জঞ্জাল

অথচ সুতোয় বাঁধা আছে

 প্রেম জড়ানো ফুলগুলো।

আমি সারাটা দিন লেপটে থাকি

সুতোই বাধা ফুলগুলো জড়িয়ে রেখে।


দুই

বিশ্বাস বলে কিছু থাকে

বিশ্বাস ভাঙলে

সত্যটা অজানা থাকে

ভুলটা ভেঙে দেয় সুন্দর পাড়

এই ভাবে দেখতে দেখতে

চেনা-অচেনা নিয়ে

বেঁচে থাকার পর চলে যেতে হয়।


তিন

পিঁপড়েরা পিলপিল করে হেঁটে বেড়ায়

আমি শুধু দেখি

পিঁপড়েদের দেখে ভুলে যাই বিচ্ছেদ

আমরাও যেন বেঁচে থাকি

আসল ঠিকানায় জোট বদ্ধ থেকে।


চার

এখানে শুদ্ধ বাতাস আছে

এখানে নির্ভেজাল ভালোবাসা আছে

উড়িয়ে দাও তোমার আঁচলখানি

সবুজ ঘাসে পেতে বসে

শুদ্ধ বাতাস

আমাদের কথা শুনুক

জীবনের রং জড়ানো পথ

আলোকিত হয়ে উঠুক

সোহাগ নিয়ে দুজনের ভিতর।

পাঁচ

শব্দের পর শব্দ সাজাই নৌকা বানাই

দুহাত ছুঁয়ে দেখি। চোখে চোখ রাখি।

ভেসে বেড়াই সভ্যতার কাছে

জীবনের গান হতে।

তুমি জীবনের কাছে

বিশ্বাস নিয়ে নিঃশ্বাসে থেকো

আমিতো জোসনা জুড়ে স্বপ্ন আঁকি।

সর্বক্ষণ আনন্দ বুকে , বৃষ্টি আর রোদ্দুরে

শুধুই তোমাকে ভাবি

আমি যেন কখনো একা না হয়ে বাঁচি।

মোহাঃ হাসানুজ্জামান




তুমি আছ তাই




চশমার পাওয়ার বেড়েছে আমার

দৃস্টি শক্তি হয়েছে ক্ষীণ,

তবুও কমেনি অন্তরের ভালোবাসা

তোমার প্রেমে আমার বসন্তবেলা।


উদাস বাউলের বীরহ সুর

বাড়াই মনের যাতনা,

মুগ্ধ আমি তোমার প্রেমে

যেমন চাঁদের গায়ে জোৎস্না।


শপথ ছিল মোদের মাঝে

কাটবে জীবন একসাথে,

তোমার অমূল্য হৃদয় টাতে

থাকব আমি আজীবন সম্পূর্ণরূপে।


আমার নেই শক্তি সামর্থ

তবু পায়না আমি ভয়,

জীর্ন শীর্ণ হয়েছি যন্ত্রনায়

তুমি আছ হবে এজীবনে জয়।


আমি হয়েছি আজ দূর্বল

তবুও কাটেনা বেলা দূর্ভাবনায়,

জীবন বোধের এই খেলায়

গাইবো মোরা ভালোবাসার সেই গান।



-

স্বপন কুমার ধর

 


আগ্নেয়গিরি



ছোটবেলা থেকেই দেখছি তোমায়,

যখন রেগে যাও,

ছড়িয়ে পড়ো দাবানলের মত,

অগ্ন্যুৎপাতের বিস্ফোরণ ঘটাও।


তোমার গর্ভের উত্তপ্ত লাভা,

ছড়িয়ে পড়ে চারিদিকে,

সরিয়ে দাও তুমি বৃষ্টির আশা,

উড়িয়ে দিয়ে মেঘকে।


স্পর্শ করেনা সুনামী তোমায়,

যতই থাকুক সেনানী,

বিজ্ঞান ও যেন থমকে দাঁড়ায়,

হয়ে কেবল অভিমানী।


জানিনা তোমার কখন, কিভাবে,

প্রশমিত হয় ক্ষোভ,

শান্ত হলে দেখতে কী পাও না,

ছড়ানো প্রাকৃতিক দুর্যোগ!

ইকবাল বাহার সুহেল



প্রেমের ডায়রী থেকে 



নৈঃশব্দ্যে কান পাতি

নিস্তব্ধতারও কিছু বলার থাকে ,

যে ভাষায় প্রকাশ থাকে না

সেই ভাষারও একটা ভাষা থাকে !

নৈঃশব্দ্যের শ্রোতা যদি মনের কান্না হয়

নুনা জলে ক্ষত হয় ! হৃদয় ছিড়ে রিক্তের স্রোত হয় !


কথা বলে কথক 

পড়তে জানাটা তার দায় ,

ভালোবাসতে পারাটাই যদি স্বাধীনতা হয়

নিজের স্বপ্নটা নিজেকেই আগলে রাখতে হয় !

ভেতরের আলোটা নিজেকেই খুজতে হয় , খুজে নিতে হয় 

সৃষ্টির আবেগ , মনের উল্লাসটা বুঝতে হয় ! সবকিছুই মেনে নিতে হয়।

মোহাম্মদ সোহেল রানা।




স্বর্গ সুখের চাবি



তোর সব কথায় এখন 

নয়ের যেনো বিধ্বস্ত ক্ষয়,

সকাল বেলা দিস'রে কথা 

সন্ধ্যাবেলায় তোর নাহি রয়।


ভোরের আযান শুনে পাখি

যখন করে উঠে চিকিমিকি,

সাঝসকালে উঠে যে তুই 

খুলিস মিথ্যা কথার উঁকি।


মুখে যা বলিস তুই কিছুক্ষণ

পর থাকেনা তোর মনে,

এমন যদি করিস সখী 

তুই সর্বক্ষণ আমার সনে।

 

পাগল হয়ে দেখবি একদিন 

আমি চলে যাবো দুর বনে,

 কষ্টে পেয়ে তুইও একদিন

হাহাকারে কাঁদবি মনে মনে।


মুখে তোর এখন লেগে থাকে

মিষ্টি হাসির  ছড়াছড়ি, 

আমার একটু হাসি দেখলে 

লাগিয়ে দিস আড়ি।


ভালোবেসে এত কষ্ট যদি

সখী আমায় তুই দিবি,

যদি আমি মরে যাই সখী

 বলিস তুই কোথায় রবি?


সব ছেড়ে চলে আয়'না দুজন 

নামাজ ইবাদত করে চলি,

ভালোবেসে দুজন দুজনার হয়ে

চল সুখের নীড় গড়ে তুলি।


নামাজ জান্নাতের সন্ধান মিলে 

বলে গিয়েছেন প্রিয় নবী,

নামাজ পড়লে ইবাদত করলে

মিলবে  স্বর্গ সুখের চাবি।