১০ ডিসেম্বর ২০২০

কবি মিশ্র


ইচ্ছে মতি


তোমার কাছে একটা সন্ধ্যা চেয়েছিলাম...

তুমি পাঠালে রাত্রি..

বললে, সন্ধ‍্যেটা এঁকে নিতে...


তোমাকে একটা জ‍্যোৎস্না চাইলাম

তুমি দিলে একটা অস্বচ্ছ মন

বললে, ওখানে জ‍্যোৎস্নাকে খুঁজে নাও..


আমি নদী হতে চেয়ে, প্রত‍্যাশায় চেয়ে রইলাম তোমার পানে, 

তুমি সাগর পাঠালে...

বললে নদীতে ভেসে কি হবে? 

সাগরে সাঁতার কাটতে না জানলে ??


আমি ঝড় হতে চাইলাম, 

তুমি ঢেউ তুলে আছাড় মারলে পাড়ে..

বললে , দেখ সামলাতে পারো কিনা??

ঝড় হয়ে কি করবে ??


চিৎকার করে বললাম, তাহলে একটা অন্ধকার দাও... 

তুমি হেসে বললে, আলোর খোঁজ পেলে না, অন্ধকার নিয়ে কি করবে ??


তাহলে তোমাকে দাও.. তোমাতে বিলীন হই...হারিয়ে যাই জাগতিক ইচ্ছা থেকে..

তুমি একটা আয়না দিলে...

বললে দেখ, তুমি আর আমি আলাদা নই....

আবদুল মালেক



যাওয়ার বেলায়


দেবশিশু পথ ভূলে এসেছি চলে

কাদামাটি মেখেছি সারা গায়ে

শেষ বিকেলের শীতের রোদ্দুর

গায়ে মেখে আল পথ ধরে

হেঁটেছি অনেক টা পথ ।


ডালা ভরে কুড়িয়েছি 

রাশি রাশি ফুল

যাওয়ার বেলায় ।

গৌরী প্রভা দাশ



সবাক চিত্র


আজকাল দিনগুলো কেমন যেনো

হেলায় হেলায় কেটে যাচ্ছে।

রাত ফুরিয়ে সকাল, দুপুর লম্বা হয়ে বিকেল....

 এর পর মৃদু পায়ে আসে সন্ধ্যা। 

বেলাগুলো একে একে 

চলে যাচ্ছে সময়ের সাঁকো পেরিয়ে। 


আমাকে বিমর্ষ দেখে আমার এক বন্ধু বললো-

জীবন জীবিকার কথা , ঘর গেরস্তের কথা অনেক তো হলো। 

 এবার খানিকটা নিজের কথা  বলো।


আমি ভাবনার করিডোরে তড়িৎগতিতে হেঁটে আসি।

তোমাকে ভিন্ন কিছুই দেখতে পাই না অতীত স্মৃতির ঝালরের দিকে দৃষ্টি মেলে । 


কখন যে সিঁড়ি ভেঙ্গে নামে খেয়ালগুলো, 

স্থবির মূর্তির মতো দৃষ্টি আটকে যায় প্রাচীন দেয়ালে। 

ফেলে আসা ক্ষণগুলো  বিমূর্ত হয়ে ফোটে।

 চিত্রায়িত হতে দেখি আমাদের যৌথ সময়ের 

আনন্দ বেদনার অবাক কাহিনী।

দেখতে দেখতে আমি স্মৃতির ঐশ্বর্য্যের মাঝে 

নিজেকে  হারিয়ে ফেলি।


বন্ধুকে কী করে বলি.......

 হারায়নি যে কখনো  কিছু,

তবে সে পায়ও নি কখনো কিছুই।


আইরিন মণীষা



বেকার জীবন 


অভিশাপের অপর নাম

বেকার নামক জীবন, 

থাকে না তার কোনো দাম

দুঃখেই নিত্য যাপন। 


আকাশ সমান দুশ্চিন্তা

ভবিষ্যৎ নিয়ে  ভাবনা,

রাজ্যের যত   কুচিন্তা

বাড়ায় শুধু তার  যাতনা



মিলেনা হিসেব জীবনের

হয়না পূরণ তার সাধ,

অনিশ্চিত সময় আগামীর

ইচ্ছেঘুড়ি পায় যে বাঁধ। 


কিছু মায়া  ও কিছু ছায়া

মরীচিকার পিছে ছুটে, 

বেকার জীবন খাটায় কায়া,

সুখ যদি কিছু জুটে। 


আশায় থাকে আসবে সুদিন

কাটবে সময় ভালো ,

ঘুচবে হয়ত বেকারের দু'দিন 

আসবে জীবনে আলো।

মোঃ রুহুল আমীন


 আর যেন না শুনি ধর্ষিতার আর্তনাদ

   

পৃথিবীর একজন মাত্র নারী

  যে শুধু আমার প্রিয়তমা

অন্য সব নারী আমার বোন

  কন্যা নয়তো আমার মা।


মায়ের মমতা বোনের আদর

  নয়তো কন্যার ভালবাসা

মিষ্টি মধুর মায়া ভরা ডাকের

  কত যে মিষ্টি সেই ভাষা।


ধর্ষক তুমিও তো নারীর সন্তান

   কিংবা হয়তো কারো ভাই

নয়তো কারও পিতা হও তুমি

  সেই হিসাবটা তোমার নাই?


রাস্তা বাজার আর শহর নগরে

  যেসব নারীরা চলে রোজ

তারাও কারো মা বোন কন্যা

   রাখনা কি এসব খোঁজ?

  

এতকিছু জেনেও নারীর প্রতি

   সহিংসতা চালায় যারা

মানুষ রুপের অমানুষ সবাই

  এই সমাজের কীট তারা।


গর্জে ওঠ সব দামাল ছেলেরা

  একসাথে করো প্রতিবাদ

আর যেন না শুনি কখনো

   কোন ধর্ষিতার আর্তনাদ।**************************************

           

মোঃ হুমায়ুন কবীর( পিন্টু)


দু:খ আমার মাথার মুকুট


দু:খ আমার মাথার মুকুট

কষ্ট আমার জ্বালা।

ভুল বুঝে চলে গিয়ে

আমায় করলে শুধু হেলা।


বন্ধু ভেবে তোমাই আমি

হৃদয়ে দিয়েছিলাম ঠাঁই, 

ভালবেসে ভুলে গেলে

একি তোমার প্রতিদান!


মিথ্যা তোমার ভালবাসা

নষ্ট তোমার মন,

ভালবেসে ভুলে বন্ধু

রেখে গেলে স্মৃতি। 


ভালবেসে যতন করে

রেখেছিলাম বুকে,

তিলে তিলে মনটা পুড়ে

অন্তর করলি কালা।


যত্ন করে দিলাম লিখে 

রত্ন করে রেখ,

আমার কথা মনে হলে

বইখানি খুলে পড়।

মৌসুমি আক্তার



কষ্ট


বর্গা চাষার মেয়ে আমি

ভেন্না পাতার চাউনি ঘরে,

ছেঁড়া চটে শয়ন মোদের,

সুখের নিদ্রা নয়ন ভরে ।


পান্তা জলে পোড়া মরিচ

সকালে খাই পেট ভরে,

লাল শাকে ভাত লাল করে

আহ্লদে খাই দ্বিপ্রহরে ।


শৈশব পেরিয়ে অধ্যাবসায় শেষে

নব জীবনে পদাপর্ণ ,

দেখিলাম আচমকা নয়ন খুলিয়া,

সুখে মাখা আহ্লদে কত সুখীজন ।


কষ্ট কেঁদে উঠিল মন

স্মরণে অতীত জীবন ক্ষণ,

কত কষ্টে ছিল জীবন,

বুঝিলাম পেয়ে সুখের বন।

ইঞ্জামামুল হক



সংসার


জন্মিলে মৃত্যু ডাক পারে । শিশুমন একপা একপা করে লিখে গল্প জীবনের । 'আগডুম বাগডুম' খেলার বয়স থেকেই হাতেগোনা কয়েকটা নুড়ি পাথর নিয়ে দাগ টেনে 'কাটাকুটি' খেলি । ঘাড়ে বই এর বোঝা বহন করার সময় হলেও ধানক্ষেত, লাঙল গরু আমাকে পিছুটানে সংসার ধর্ম বইতে ।


আমি বড় হয়ে গেছি বুঝতে বুঝতে মাথার কালো চুল সাদা হয়,

আমি ভুলে যায় জীবনের রঙধনু;

আমার হারানো প্রেম আলেয়ার ফাঁদে পড়ে কবরগাহে গভীর নিদ্রাযাপন করছে ।

সময় হয়নি এখনো স্বস্তি ।

গতকাল রাতে উনুনের ধারে বসে শীতকে পরাজয় করবো ভেবে আগুন নিয়ে খেলা করছি,

ফজর আযান হলেই আমাকে ছুটে যেতে হবে লাঙল হাতে

আমার সংসার,আমার জীবন সংগ্রাম

আমার হৃদয়ের আগুন জয়ে ।

আলেয়া আরমিন আলো



দুঃস্বপ্নের রাজত্ব 


তোমার এই আশাতিরিক্ত পরিবর্তনে

আমার আজন্মকালের নক্ষত্রমুখী স্বপ্নগুলো 

আঁধার ছায়াপথে দিকভ্রান্ত হয় 

আত্মাহুতি দিয়ে ধূলোয় লুটিয়ে পড়ে, 

থেমে যায় ইচ্ছেপাখিদের সোনালি ডানার উড়ান! 


দিন বদলের পালায় নিষ্প্রাণ হয়েছে আবেগ

রঙহীন বিবর্ণতায় নির্জীব সব প্রেমানুভূতি

এককালের প্রনয়ী কামনার উচ্ছ্বাসও

এখন বেগানা আড়ষ্টতায় বুকের রুদ্ধ খাঁচায়

আর্তনাদে গোঙায় অসহ্য বোবাকান্নায়।

এখন প্রেমের পিঠে সবুজহীন ডালপালায়  

রুক্ষতায় জেগে ওঠে শুধুই প্রয়োজন, 

অবহেলার আবর্জনার দুর্গন্ধে ঢাকা পড়েছে

ভালোবাসার অমিয় সুবাস।


আজকাল আর স্বপ্ন দেখা হয় না 

জাগ্রত নয়নে কিংবা রাতঘুমেও

এখন মন ও মননে কেবল দুঃস্বপ্নেরই রাজত্ব।

মমতা রায় চৌধুরী


বেলা শেষে স্কুল স্মৃতি 


আজ আমার স্কুলের শেষ বেলায় 

পড়েছে টান হৃদয়বীণায় ।

মনের কোনে দক্ষিণা বাতাস 

দিল যখন দোলা, তখন

হৃদয় উদাস করা ডাক মরমে কোন

হতাশ এনে বেদনা দিল নিবির করে। 

হায়ার সেকেন্ডারীর রেজাল্ট হাতে

একবার গিয়ে দাঁড়ালাম পড়ন্ত বিকেলের 

কামরাঙা গাছের স্মৃতি বিজড়িত স্নেহাঞ্চলে ।

মনের কোনে উঁকি দিল বিদায়ের ডাক, 

আর জমে থাকা হৃদমাঝারে সঞ্চিত ছবি, 

স্মরণ করালো প্রতিদিনের আলোড়িত স্মৃতি। 

সেই প্রথম দুরু -দুরু বুকে আসা -

পঞ্চম শ্রেণীর প্রথম 'ক' বিভাগের ক্লাস -

নূতন দিদিমণির গাম্ভীর্যপূর্ণ মুখচ্ছবি, 

ধীরে ধীরে স্নেহের বন্ধনে কবে 

পড়লো বাঁধা ভালোবাসার দুটি আঁখি। 

সহপাঠীর আদর জড়ানো হৃদস্পন্দন 

অনুভূত হয় বেলা শেষে তার প্রতি ক্ষন। 

মনে পড়ে - 

করবী, গোলাপ, গাঁদার একরাশ আতর মেখে

ছুটি শেষে হল্লা করে ঘরে ফেরার তাগিদ। 

আবার স্কুল চত্বরে দিদিমণিদের চোখ বাঁচিয়ে 

বসতো যখন টিফিন মজলিস ,

তখন প্রতি পল কাব্যিক হয়ে উঠতো। 

আবার কখন‌ও কাব্য এসে ভিড় জমাতো

রবীন্দ্র - নজরুল জন্মতিথিতে অথবা 

বর্ষামঙ্গল ভাষাদিবসের ছন্দ গাঁথার বাণীতে। 

আবার সরস্বতী পুজোটা হতো অন্যমাত্রার -

ঘর সাজাতে ছবি আলপনাতে, 

তাই দোতলার ঘরে জানলার কাছে 

কখন‌ও দাঁড়িয়ে প্রেমিককে খুঁজতাম 

প্রাক্ ভ্যালেন্টাইন ডেজের প্রস্তুতিতে। 

আবার কখন‌ও স্কুল স্পোর্টসের মাঠে 

'গো অ্যাজ ইউ লাইকেতে'- স্বাতন্ত্র মন্ডিত করে, 

অথবা অ্যাংকারিং এ নূতনত্বের ছোঁয়ায় 

কালচারাল প্রোগ্রামকে দীপ্তিময় করতে। 

কখন‌ও বা বসন্ত উৎসবে রঙীন করে সেজে উঠতাম 

সহপাঠীর হলুদ - সবুজ, লাল রাণীর আবিরে,

আর

আগুন রাঙা লাল পলাশের ফুলের আতর মেখে। 

ঋতু চক্রের আবর্তনের রঙে

আমরা বদলাতাম তার‌ই ছন্দে। 

হৃদয়ের একুল ওকুল দুই তীরে 

আজ বিদায় লগ্নে 

বাঁজছে বাঁশী হৃদযন্ত্রে ।

আমাকে যেতে হবে স্নেহের নীড় ছিন্ন করে, 

ব‌ইবে শুধু স্কুল স্মৃতি ফল্গুধারায় বেলাশেষে।