২৪ সেপ্টেম্বর ২০২১

কবি সৌমিত বসু'র কবিতা




কুয়াশা

টুকরোগুলো কুড়িয়ে আনি আর সময় পেলেই জুড়তে বসে যাই।
অদ্ভুত জলে ছায়া ভাসে, 
ভাঙাচোরা ছায়া।
টুকরোগুলো এক একটি ছায়ার ভেতর পড়ে লম্বা হয়ে যায়, 
আর চেনাই যায় না তাদের এতটুকু।
টুকরোগুলো লুকিয়ে রাখি দরজার পেছনে
সময় পেলেও তাদের কথা মনে পড়ে না আর
মনে পড়ে না সেইসব ফাটলের কথাও।
জুড়তে বসার প্রশ্নও ওঠেনা।

পানবরজেরওপর দিয়ে 
ঝুপ করে নেমে এলো চাঁদ
মাঠের নাড়াগুলোজেগে রয়েছে তখনো
মাদা দিয়ে তিরতির করে বয়ে চলেছে জল,
 খোঁচা খেয়ে চাঁদ ফুঁসে উঠেছে অভিমানে, কি দিয়ে জুড়তে বসি খ'সে পড়া কথা?
কি দিয়ে জুড়তে বসি আঁচলের ফাঁক গ'লে নেমে আসা বৃষ্টি
 কিংবা ফুটো কলসি কাঁখে মেয়েটির
 বুড়ো আঙুলের ফাঁক গ'লে বের হয়ে আসা কাদার প্রলেপ,
জুড়তে বসে কেবলই ভুল হয়ে যায়,
জুড়তে বসে ছায়ার মতো ঝেঁপে ধরে এক একটি ডানাকাটা অন্ধকার।

রাত ড্রপ খেয়ে এগিয়ে যাচ্ছে ভোরের দিকে
জুড়তে বসে এক একটি ভুল হাত ধরে ডেকে আনছে অন্যটিকে।

সমিত মণ্ডল




লম্বা দাড়ি,জোব্বাপরা ঈশ্বর 
                

মনে মনে হাঁটো
২৫শে বৈশাখ থেকে ২২শে শ্রাবণ
লম্বা দাড়ি,জোব্বাপরা ঈশ্বর
মানুষের পড়ার ঘরে তুমি
জীবনের ক্যালেন্ডার।

সকলের ভাষা,শৈশব থেকে মৃত্যুর
মন্দির,মসজিদ,গির্জা একাকার
মনে মনে হাঁটেন
লম্বাদাড়ি,জোব্বাপরা ঈশ্বর।

মোবাইল রিংটোন,ট্রাফিক সিগন্যালে
সুর হয়ে বাজো
অনন্তকাল,এভাবেই
বাজতে বাজতে হাঁটো।

তোমাকে আঁকড়ে ধরে
অন্ধগলি খুঁজে পাক
ভুবনডাঙার টাটকা ভোর
লম্বা দাড়ি,জোব্বাপরা ঈশ্বর
মনের ভেতর উঁকি মারো
 নিত্যদিন...রবিঠাকুর।

মাধুরী বিশ্বাস




তুমি কৃষ্ণচূড়া হয়েছিলে
 

এত দিন তো তোমায় বন্ধু বলেই ডেকেছি ।
এত দিন ধরে তুমি আমি তার ছায়ায়
বসে ভেবেছি।
কেন ফুল ফোটে না এই গাছে ?
বছর, মাস, দিন গুনেছি ...
তবুও ফোটে নি কৃষ্ণচূড়া।
আমি বুঝতেই পারিনি 
তার ফুল আর তোমার অপেক্ষায় 
বসতে বসতে তার ছায়ায়,
হৃদয়টা কখন সেই কৃষ্ণচূড়া গাছ হয়ে গ্যাছে।
এতদিন তুমি কাছে ছিলে, 
গাছটি ছিল সবুজ শীতল।
এই ফাগুনে তোমার বিয়ে, তাই খেয়াল করোনি
আমি দেখেছিলাম...
সমস্ত সবুজ হলুদ হয়ে আছড়ে পড়েছিল মাটির বুকে ।
আমাদের কৃষ্ণচূড়ায় এবার ফুল ফুটেছে 
আগুনরঙের ফুল।
হঠাৎ সেদিন কাঁদলে যখন আমায় দেখে 
দেখলাম কৃষ্ণচূড়া জলছে দাউ দাউ করে 
ফুল নেই, ফুল নেই কোথাও, শুধু আগুন 
ডালে ডালে থোকা থোকা আগুন ।
আমি বুঝলাম....বন্ধু আমার, 
তুমি কৃষ্ণচূড়া হয়েছিলে আর কৃষ্ণচূড়া আমার হৃদয়।

খাদিজা আহমেদ সন্ধ্যেচূড়া




প্রশ্নোত্তর 


আচ্ছা... 
তুই কি স্বর্গের সমর্পণ
নাকি অমিয় আসক্তির ঘোর মায়া,
মহাবিশ্বের দীপ্ত ধ্রুবতারা
নাকি রন্ধ্র বিষের কাল ছায়া? 

আচ্ছা...
তুই কি বৈষয়িক প্রতীক্ষা
নাকি শৌর্য জাগরণের বিধান,
উন্মাদ স্বরের মুক্তির স্বরলিপি 
নাকি অনুভবের সঙ্গাহীন অভিধান? 

চিরন্তন প্রতীক্ষার অব্যপ্ত তিয়াস,কখনো মহোৎসবের আলপনা।
সুখ সোহাগের ব্যকরণিক জলসা,এ যে বিরামহীন বন্দনা। 
আচ্ছা... 
এ তুই কোন কালজয়ী উদ্দীপনার 
বেহিসাবি বেড়াজাল? 
মননশীল আত্মার অব্যক্ত বাহ্বা,
নাকি দেশদ্রোহী অবতার! 

তুই কি সুবোধের পান্ডুলিপি,
প্রেমান্ধের উজ্জ্বল্য ইতিহাস? 
নাকি...
উন্মুক্ত অম্বরের অফুরানি তারাবাজি 
দিগ্বিজয়ের উচ্ছ্বাস। 

আচ্ছা... 
তুই কি বড্ড অনুরাগের দিকভ্রান্ত প্রারম্ভ?
নাকি প্রতিবাদের বিশস্ত ভরসা 
দু' চোয়ালের উচ্চাঙ্গ। 

এ কোন...
নেশাতুর সূত্রতা 
যাতে আকর্ষিত প্রেমমন?
শাশ্বত স্রষ্টার সৃষ্টিশীল শৈল্পিকতা
জাগে যবে হৃৎস্পন্দন! 

গতিশীল নক্ষত্রের অশরীরী প্রতাপ
কখনো হিমশীতল শিহরণ, 
তুই কি অপ্রতিরোধ্য চঞ্চলতা?
নাকি আত্ম প্রণয়ের বন্ধন। 

এ কেমন নেশায় আসক্ত আমি
যার নেই কোনো বিশ্লেষণ। 
অবাধ্য অনুরাগের অজ্ঞাত বৈচিত্র্যতা
এ কোন যাদুকরী গুঞ্জন। 

জীবন্ত সৃজনের নব্যধারা,
বিশদ শব্দের বিপ্লবী উল্লাস।
অনাবিষ্টের তীব্র চেতন,
নাকি দিকভ্রষ্টের তৃপ্ত আশ। 

তুই কি অনন্ত আলোকবর্ষ, 
কি়ংবা অন্তহীন নিঃসঙ্গতা? 

নাকি... 
প্রারম্ভের পরিব্যপ্ত সমাস?
জ্যান্ত নিঃশ্বাসের অমলিন ঐশ্বর্য, 
হয়ত এ তুই আমার আমৃত্যু সর্বনাশ।

সুস্মিতা সৎপথী





নক্ষত্রকথা



প্রেম;
ঠিক একটা সহজ দুরুত্ব থেকে তুমি মেপে নিচ্ছ আজন্ম লালিত জোছনা,

এক, দুই, তিন...
বছর মাস দিন...
কিংবা,
আলোকবর্ষে...

বিরহ ;
সমস্ত নাক্ষত্রিক গণনার অভিমুখের বিপ্রতীপে আমৃত্যু লালিত জোছনা।।

মমতা রায়চৌধুরী'র উপন্যাস "টানাপোড়েন"১০

অন্তর দিয়ে উপলব্ধি করবার মতো আকর্ষণীয়  মমতা রায়চৌধুরী'র ধারাবাহিক উপন্যাস "টানাপোড়েন" পড়ুন ও অপরকে পড়তে সহযোগিতা করুন  




                        টানাপোড়েন (পর্ব ১০)
                                         
                                        দুশ্চিন্তা



                                                   রেখা ভেবেই  রেখেছিল আজ অলস ছুটির দুপুর, মনোজ ব্যারাকপুরে ছোট পিসি শাশুড়ির বাড়ি যাবে।সারা দুপর শুধু ঘুম আর ঘুম। সকাল সকাল কাজ গুছিয়ে নিয়েছে। পুটু রবিবার আসবে না ।সারা নির্জন দুপুরে রেখার শুধু ঘুম আর ঘুম।একটা ম্যাগাজিন ওল্টাতে ওল্টাতে কখন যে ঘুমিয়ে  পড়েছে। হঠাৎ কাকিমা কাকিমা বলে চিৎকার,ঘুম জড়ানো চোখে কান খাড়া করে শোনার চেষ্টা করলো। হ্যাঁ, রেখাকেই তো ডাকছে। বৃষ্টি পড়ছে ছাদে জামাকাপড় ভিজে যাচ্ছে। তাকিয়ে দেখে পাশের বাড়ির চৈতালি। ওর সাথে চোখাচোখি হতেই বলল  'কখন থেকে ডাকছি কাকিমা।'
আরে তুই কবে এসেছিস?
জানতেই পারি‌ নি তুই এসেছিস।
চৈতালি বলল  'পাঁচ ছয় দিন হবে। আসলে তুমি স্কুল নিয়ে এ‌ত ব্যস্ত। বেরিয়ে যাও সেই সকাল সকাল। এ দিকে ঢোকো অনেক দেরীতে। ভেবেছিলাম আজ দুপুর বেলায় আসব। তারপর তোমার কোন সাড়া শব্দ পেলাম না। ভাবলাম ছুটির দিন হয়তো তোমার কাজ আ‌ছে ‌।পরে সন্ধ্যের দিকে আসবো।
 রেখা বলল  'দাঁড়া চৈতি ।-বলেইছুটে গিয়ে জামাকাপড় নামিয়ে নিয়ে আসল। কিন্তু একটু ভিজে গেল। চৈতালি তখনো দেখে জানলার কাছে দাঁড়িয়ে আছে। 
রেখা জিজ্ঞেস করল  'তুই কি একবারে চলে আসলি। শ্বশুরবাড়িতে শাশুড়ি মা সাধ খাইয়ে দিয়েছে?
চৈতালি  চুপ করে আছে ।তোর ক মাস হল। ১0 এ পা দিলি না? আসলে জানলার ধারে দাঁড়িয়ে আছে ।ওকে বোঝাই যাচ্ছিল না। শেষে কাঁদতে শুরু করল।
 কান্নার আওয়াজে ওর মা ছুটে আসলো। ওর মা বলল  'আর ব'ল না দিদি বাচ্চাটা তো নষ্ট হয়ে গেছে।'
রেখা অবাক ব্যাগ্রভাবে  বলল "কি করে?
চৈতির মা বলল  "আমাদের পোড়া কপাল। মাসে মাসে যে ডাক্তার দেখানোর কথা ,ইনজেকশন নেওয়ার কথা সেগুলো শ্বশুরবাড়িতে কোন ব্যবস্থাই করে নি।'
রেখা অবাক হয়ে বলল,'সে কি? ওর শাশুড়ি মা তো ভালো। তাহলে এরকম কাজ করলেন কেন?
চৈতির মা বলল  'আমরাও তো ভালোই জানতাম । এখন দেখুন তার মুখোশটা বেরিয়ে এসেছে। ওরা চায় না ওর সন্তান হোক।'
রেখা বলল  'এ আবার কি কথা?'
চৈতির মা বলল ' কি আর বলব দুঃখের কথা দিদি। ওর ননদের বাচ্চা আছে ,তাই বলছে আর বাচ্চা নিয়ে কি হবে?বাচ্চাটা নষ্ট হয়ে গেছে ,ওর শাশুড়িমার কোনো হেলদোল নেই। বরং ওকে বলেছে তুমি বাবার বাড়িতে যেতে চাইলে চলে যাও ।এরপরে আর যেতে পারবে না। যেতে হলে আজই যেতে হবে। তখনো ওর ঐ রকম ব্লিডিং হচ্ছে ।মনের অবস্থাটা ভাবো দিদি।মেয়ে ফোন করাতে আমরা গিয়ে নিয়ে আসলাম।'
রেখা চিন্তিতভাবে বলল  ' আর ওর বর। সেও চায় না?'
চৈতির মা বলল  'একটা ছেলে ,মায়ের কথায় ওঠে বসে...বলেই চুপ করে গেল।'
রেখা বলল 'তাই বলে নিজের সন্তানের সঙ্গে কম্প্রোমাইজ?
চৈতির মা বলল "মেয়েকে তখনই বলেছিলাম নিয়ে আসি। ও রাজি হয়নি। ভেবেছিলো বাবা-মায়ের সংসারে টানাটানি। নুন আনতে পান্তা ফুরায়।আবার গিয়ে খরচ বাড়াবো? এই ভাবনাটা ওর কাল হলো।'
চৈতি তো কেঁদেই চলেছে।
রেখা মনের কষ্টটা অনুভব করে বলল ' কাঁদিস না ?গাছ থাকলে ফল ধরবে। তুই আগে সুস্থ হ।
চৈতির মা বলল  'আমরা শোনামাত্রই দিদি নিয়ে চলে এসেছি। ভালো করে ডাক্তার দেখিয়ে ,তারপরে ছাড়বো।
এতক্ষণ পর চৈতালি বলল 'মা বাবা ।মা বাবাই হয় ,কাকিমা।
রেখা ব‌লল  তুই তো বলেছিলি তোর শাশুড়ি মা খুব ভালো।
 চৈতির মা বলল 'বিয়ের পর কটা মাস ভালই ছিল। কিন্তু এখন পুরো অন্য রকম। ওকে এই অবস্থাতেও সব কাজ করিয়েছে ।ছেলের সামনে কিন্তু করায় নি ।ছেলে অফিসে চলে গেলেই সব কাজ ওকে দিয়ে করানো হতো। অথচ ডাক্তার ওকে বেড রেস্টে থাকতে বলেছিলেন।একথাগুলো মেয়ে আমাদেরকে জানায় নি। জানলে তো তখনই নিয়ে আসতাম।  এত বড় ক্ষতি তো আর হতে পারত না।'বলেই কাঁদতে লাগল।
রেখা বলল  'যা হবার তো হয়েই গেছে। এবার থেকে সাবধানে। ডাক্তারের কথামত চলবি।'
চৈতির মা বলল  'আমিও বলেছি ডাক্তার ক'মাস পর বাচ্চা নেওয়ার কথা বলেছেন। তখন  বাচ্চা পেটে আসলে আমাদেরকে জানাতে, আমরা তোকে গিয়ে নিয়ে আসবো। আমাদের সাংসারিক অনটনের কথা তোকে ভাবতে হবে না।'
রেখা বলল  'একদমই ঠিক কথা দিদি। এই চৈতি মন খারাপ করিস না আসিস হ্যাঁ বাড়িতে।'
চৈতির মা বলল  'সব সময় মন খারাপ করে বসে থাকে। ওই দেখো বকবক করেই যাচ্ছি।এদিকে তোমার সব জামাকাপড় ভিজে গেছে না গো। অনেকক্ষণ থেকেই ডাকছি আসলে ঘুমিয়ে পড়েছিলে তো।
রেখা বলল 'হ্যাঁ কি করে যে এত ঘুমিয়ে পড়লাম।'
চৈতির মা বলল  'পুটু কাজে আসে নি তো আজকে?'
রেখা বলল   'সে‌  তো আজ কদিন থেকেই আসছে না।'
চৈতির মা বলল ্'আজকে দেখলাম অটো করে যেতে'
একটু অন্যমনস্ক ভাবে যাচ্ছিল ।চোখে-মুখে চিন্তার ছাপ ছিল। আর কিছু জিজ্ঞেস করলাম না ।তখন আমি চৈতিকে নিয়ে আসছি ডাক্তারের কাছ থেকে।'
এ বাবা তাহলে কি হবে ?রেখা বলল ।ও কি কালকেও কাজে আসবে না? কালকে তো আমাকে স্কুলে যেতেই হবে ।আমার স্কুলের এক দিদিমনির ফেয়ারওয়েল আছে। না গেলে কি হবে বলো তো দিদি ।এতদিনের কলিগ ওরা আমার বাড়ির সমস্যার কথা বুঝবে না। ভারী চিন্তায় পড়ে গেলাম।
'ক'দিন হলো আসছে না 'চৈতির মা বলল।
রেখা বলল 'এই তো আজ ৫ দিন হল।কি জানি ভাইরাল ফিভার হলো কিনা? যাইহোক একটা তো খবর পাঠাবে দিদি। জানে তো আমাকে বেরোতে হয়।
চৈতির মা বলল ' কাজের লোকগুলোই এ রকম জানো তো।'
রেখা বলল  'আমরা ওদের ছাড়া চলতে পারব না। সে দুর্বল জায়গাটুকু ওরা বুঝে গেছে। কিন্তু ও যদি খবর না পাঠায় আমাকে তো অন্য লোক দেখতেই হবে।'
চৈতির মা বলল   'হ্যাঁ তা তো ঠিকই। এখন ওদের আবার ইউনিয়ন হয়েছে। ওদের এত বাড়বাড়ন্ত।একটা ফোন করে দেখতে পারো।
রেখার চোখে মুখে একটা দুশ্চিন্তার ছাপ, কাহা তক সম্ভব। রাত ৮ টায় বাড়ি ফিরে...? বাবা ,এদিকে বৃষ্টির ধোঁয়া ছুটছে। ক দিনের নিম্নচাপ..?
কাকিমা কাকু কোথায়? চৈতি বলল।
হ্যাঁ ,তাই তো একটা খবর তো নেওয়া হয় নি ।কি মরণ ঘুম আমার এসেছিল। আর বলিস না ছোট পিসি শাশুড়ির বাড়িতে গেছে। ওখানে কি হয়েছে কে জানে? দেখি একটা ফোন করি। তুই কোন দুশ্চিন্তা করবি না চৈতি। দেখবি সব ঠিক হয়ে যাবে। '
চৈতি বলে  'সেই আশাতেই তো আছি  কাকিমা।
রেখা আশ্বাস দিয়ে বলে 'ঠিক আছে রে ।ঐদিকের জানলাগুলো দিই নি। জানলাগুলো লাগিয়ে দিই  বুঝেছিস? পরে সময় করে আমার ছুটির দিন দেখে আসবি -বলেই হাতের জামা কাপড়গুলো নিয়ে টেবিলে রাখল ।আর হন্তদন্ত হয়ে জানলা লাগাতে লাগলো। ওদিকে ঝড়ো হাওয়ায় দরাম দরাম করে জানলাগুলো আওয়াজ হচ্ছে। পাশের বাড়ি ছেলেটার রোমান্টিক  গান লাগিয়েছে দেখো ।'এই মেঘলা দিনে একলা ।ঘরে থাকে না তো মন'। বাপরে বাপ ঘরে থাকার কি দরকার, বেরিয়ে গেলেই হয়। নির্ঘাত প্রেমে পড়েছে। যাক গে‌ বাবা ,যে পড়েছে পড়ুক ।আমি বরং
 মনোজকে একটা ফোন করি। রিং করলো কিন্তু ফোনের লাইনের কি অবস্থা?পুক  পুক্ করে আওয়াজ নেটের এত সমস্যা..? ধুত্তেরি ফোন ছেড়ে দিয়ে সন্ধ্যাবাতি দেবার জোগাড় করতে লাগলো। যা বৃষ্টির হাল ট্রেন বন্ধ না হয়ে যায়। দুশ্চিন্তায় পড়ল রেখা।
এবার কি করবে রেখা? টিভিটা খুল্লো অন্যমনস্ক ভাবে। খবরে দেখাচ্ছ আপাতত ট্রেন চলাচল বন্ধ আছে ।স্বাভাবিক পরিস্থিতি হলে ট্রেন আবার চালু হবে। যা বৃষ্টির অবস্থা, মনে হচ্ছে সমুদ্র এসে গ্রাস করবে। এখন রেখা কী করবে ,ভেবে ভেবে গা দিয়ে দরদর করে ঘাম ঝরছে।




ধারাবাহিক উপন্যাস "টানাপোড়েন"১০ ক্রমশ

তালুকদার ইমরোজ




আয়না 
  

কত কিছুই তো আবিষ্কার হলো
সভ্যতা এগুলো কত দিকেই,
তবুও অনেকটা ঘোর অন্ধকারে আজও রয়ে গেল মানুষ!
বিবেক এগুলো কত ইঞ্চি,
কত ইঞ্চি এগুলো মানুষের মন;
তা জানা যায় না খুব সহজেই…
আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে প্রতিদিন খুব যত্ন করে নিজেকে দেখি,
পরিপাটি করে সাজিয়ে নেই ঝলমলে মেকি অবয়ব।
মাঝেমধ্যে ভাবী,আহারে!
এমন একটি আয়না যদি আবিষ্কার হতো,যেখানে-
মানুষের মনের পশুগুলো
দেখা যেত অনায়াসে,
প্রত্যেকেই নিজেকে দেখে-
ঘৃণায় ঘৃণায় হয়ে উঠত পরিশ্রুত।

শহিদ মিয়া বাহর




চল সখি যমুনায় যাই


চল সখি যমুনায় যাই
ঢেউয়ের পিরিতের কাঁখে বাঁধি বুকের ভাদর
আশ্বিনের উজানের ছলকে পরাই পায়ের ঘুঙুর, যমুনা মেয়ের মত জোছনার পায়েল। 

চল সখি যমুনায় যাই
তোর দু:খগুলো বেঁধে রাখি জলের যৌবনে
দূরাগত জাহাজের মাস্তুলে খোঁপা খুলে পরাই তোর রাধিকা ফাগুন 
কাঁঠালিচাপার পিরানে হিম হিম সুবাস, পাল তোলা কইতরি বাতাস। 

চল সখি যমুনায় যাই
তুই আর আমি লাজুক ছায়া মেখে
স্নানের অবসরে লুকিয়ে রাখি বসন্তের মেঘ; যাবতীয় রাত্রির বিলাসী আঁধার। 

চল সখি যমুনায় যাই
জলে জলে ধুয়ে ফেলি আমাদের ধূলোমাখা সনাতন মুসাফির মন।

সানি সরকার





জন্মদিনের কবিতা, ঝুমঝুমকে 

পাখিটি ঠোঁটে একটি ধান শিস   নিয়ে এল 
আর কোথাও নয়, তোর বারান্দায়... 
তারপর ড্রয়িং রুমের  সেন্টার টেবলে 

পাখিদের মনে ছিল আজ ২৪ সেপ্টেম্বর, 
আজ তোর শুভ জন্মদিন 

পাখিরা বাস্তব চেনে, অতীত চেনে, দিনক্ষণও 
ওঁরা গোলাপি ঠোঁটে ভালবাসার চাদর বয়ে নিয়ে এসে 
সমস্ত বাড়িতে রামধনু এঁকে দ্যায় 

ভালবাসা এতটাই দামী ও মোলায়েম... 

পাখিদের জন্মদিন মনে থাকে 
আমার কিছুই মনে থাকে না  








রাহাত জামিল




অনিয়ম


নিয়ম গুলো বড্ড অনিয়ম!
বেলা ফুরালে বোধ হয় জীবন সঁপে যায়
অনিয়মের ঘরাপেটায়।
অসহ্য যন্ত্রনা কাতর রাত,
এ যেন শেষ হওয়ার নয়
এ রাত বড়ো কঠিন সুন্দর!
অপরূপ জোৎস্নাও কুৎসিত লাগে
অনিয়মের যন্ত্রণায়।
নির্জীব কাদার মত অসুখ 
যেন সেঁটে আছে পিঠে-বুকে;
আহ!সে কি অসহ্য পীড়া
মনে হয় রাত যেন অসীম হয়ে গেছে
নির্লিপ্ত স্বপ্নবাজ রজনী আজ কদর্য বীভৎস।
যাতনায় ক্লিষ্ট নয়ন যুগল একটু 
প্রশান্তি খোঁজে মধ্যরাতের জানালায়,
জীবনের বাসি ঋণ চুকিয়ে ফেলার
পোষণ হয় নিস্তরঙ্গ মননের অন্দরমহলে।

এ অদৃষ্ট থেকে মৃত্যুর সকরুণ আহ্বান নয়তো!

সুবহে সাদিকে তন্দ্রা ভঙ্গ হয়
আম্মার সুমধুর ইয়াসীন তেলোয়াতে!
সীমাহীন রাত তট পায় ভোরের আলোয়।

saaff

LOVE

asfdaef

LOVE