১০ সেপ্টেম্বর ২০২১

সুমনা



 অন্ধকার-রোদ্দুর আর টিন চশমা


মেয়েটাকে বরাবর আমি দেখে এসেছি , কাছ থেকে , খুব কাছ থেকে ;

দূরবীনের কাঁচের মসৃণ আঁচে আমি ওকে ছুঁয়ে ও দেখেছি প্রচন্ড উত্তাপে---

ভিজে চুলের জলে যখন সদ্যোস্নাত গ্রীবা রোদ পোহাতে এসেছে সবে,

আমি তখন ও ওকে ছুঁয়েছি।

ও রাগে, কৌতুহলে বিষ্ময়ে বলেছে, আমার চোখের সামনে যে জমাট বাঁধা কালো,তা নিয়ে ঠাট্টা করেন?

ও বিশ্বাসই করে না, আমি প্রতিটা স্পর্শের পঙ্গুত্বে ওকে ছুঁয়েছি।

বিকেলের রোদ এসে পড়ে আমার নিথর জানলার কাঠে;

ঠিক পাশেই ঘুমিয়ে থাকে আমার অবশ শরীর, বুড়ো কলমের নিব, আর সেই দূরবীন!

বোধ হয় তার স্নিগ্ধতায় ভেসে ওঠে একটা হাত;

আমি তাকে ছুঁই,আলগা খোঁপায় জুঁই!

আর থাকে রোদ্দুর ওর ঠোঁটে।

তাও পাগলিটা বলে, ভালোবাসেন বলেই মিথ্যে বলেন?

না, মিথ্যে বলে বাকি সব, এই ঘর, এই লোক, এই পাড়া!

অবুঝ আঙুল হাতড়িয়ে ও বলে, কি মিথ্যে বলে ?

আমি এমন সময়ই বোবা হয়ে যাই, 

সঙ্গে সঙ্গে উগ্র সন্ধ্যা নামে, 

ওই জানলার কাঁচে মুখ মিলিয়ে যায় ইলেকট্রিক আলোয়,

সব সুবাস কেড়ে নেয় ওদের আধুনিক শব্দ।

চোখের সামনে হুড়মুড়িয়ে নেমে পড়ে টিনচশমার আবছা ধূসর ছবি।

জানলার দুই পারে পড়ে থাকে দুটো নিস্তব্ধ পঙ্গু ভালোবাসা।

রোকসানা সুইটি



 কদাচিৎ দুঃস্বপ্ন

 


প্রতিশ্রুতি ছিলো সমুদ্রের বিশালতা দেখতে যাওয়ার,

নাকি মিথ্যা স্বপ্নের ব্যসাতী সাজিয়ে  প্রলুব্ধ করলে!

জানা হলোনা... 


সাহস হয় যদি কোন দিন একাকিত্বের বাঁধন ছেঁড়ার...

তবে কী শূন্যতা ঘেরা জীবন পূর্ণতায় ভরপুর হবে?  

কি এক কদাচিৎ দুঃস্বপ্ন গ্রাস করেছিলো , 

সেই চোখের বিস্ময়ে  বিশালতা খুঁজে পাইনি পড়ন্ত বিকেলে, 


পড়ে যাওয়া কফির মতোই  উপচে পড়লো স্বপ্ন গুলো...

পুড়ে যাওয়া স্বপ্নেরা ভাবনার করিডোরে হেঁটে যায় নিঃশব্দে...

তবে কি, কখনো কখনো অপ্রয়োজনেও ভালোবাসা হয়!

মোহাম্মদ সোহেল রানা



ক্ষমা করে দিও দাদীমা



দাদীমা তোমার কোলে হয়েছি

আমি শিশুকাল থেকে মানুষ,

কত যাতনা দিতাম দাদীমা গো

যখন আমি ছিলাম ছোট্ট অবুঝ।


শীতের রাতে দাদীমা গো রাখতে 

আমায় তোমার ঐ বুকে জড়িয়ে,

দাদাভাই আমার শীতে কষ্ট পাবে

সর্বদা তুমি থাকতে সেই ভয়ে।


রাতের খাবার খাইয়েছো দাদীমা 

মোরে কত আদর সোহাগ করে,

দাদীমা তোমার সোহাগে শতকষ্ট 

মান-অভিমান যেতো আমার ঝরে।


দাদা কেমন দেখিনি আমরা কেহ

ছোট থেকে ডেকেছি দাদা তোমায়,

দূর প্রবাসে এলাম যখন আঁচল দিয়ে

মুখটি মুছে বলে ছিলে ভুলোনা আমায়।


ওগো দাদীমা তোমার দেওয়া শিক্ষা

আমি সর্বক্ষণ যাচ্ছি পালন করে।

কারো সঙ্গে করবে না ঝগড়া ঝাটি

শক্রকে ক্ষমা করে রাখবে বুকে ধরে।


নয়টি বছর প্রবাস জীবন আমার

দাদীমা সবার স্বপ্ন পূরণ করতে গিয়ে,

আজ কোরবানি ঈদের দিনে বিধাতা

পৃথিবী থেকে তোমায় গেলেন নিয়ে।


ক্ষমা করে দিও দাদীমা!শেষ বিদায়ে

পারলাম না তোমায় স্পর্শ করে দিতে,

পারলাম না রাখতে তোমার মনের আশা

নিথর দেহ কাঁধে করে গোরস্থানে নিতে।


দাদীমা তুমি ছিলে অতি পরহেজগার 

তার প্রমাণ দিয়ে গেছে এ মৃত্যু তোমার

কোরবানীর পবিত্র দিনে তুমি চলে গেলে

দোয়া করি পরকালে জান্নাত যেনো মিলে।

শরিফুর রহমান



প্রেম আরতি 



হেরিয়া তব সুধাময়ী রূপ 

তপস্বীর ধ্যান হয়েছে ভঙ্গ, 

তপোবন ছেড়ে সাধনা ভুলিয়া 

প্রেম যমুনায় মজেছে অঙ্গ। 


মম মন্দিরে তব প্রতিমা বসেছে

উলুধ্বনিতে বাজিছে শঙ্খ, 

ধূপের গন্ধে মাতাল মদিরা 

অারতিতে ভাসে হৃদ মৃদঙ্গ। 


ষষ্ঠী বুঝিনা; বুঝিনা দশমী 

যেতে নাহি দেবো কস্মিনকালে, 

পান করায়ে অাজি প্রেমেরো সুধা

পোড়াবো তোমায় হৃদ চিতানলে।


সজিব আল হাসান এর ছোট প্রবন্ধ


ছোট প্রবন্ধ 



বাস্তব জীবনে আমরা এমন কিছু কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়ে যাই যেটার জন্য আমরা কখনই প্রস্তুত থাকিনা। আমাদের জীবনে যদি খারাপ সময়টা না আসতো আমরা হয়তো জীবনের আসল মানেটা বুঝতে পারতাম না।


খারাপ সময়টা এসে বুঝিয়ে দেয়, আমি আসলে যেভাবে চলতেছি, এভাবে জীবন চলেনা। খারাপ সময়টা না আসলে হয়তো জানা হতোনা বাস্তবতা এত বেশি কঠিন। খারাপ সময়টা না আসলে হয়তো আমি আমার ভুলগুলো কখনোই বুঝতে পারতাম না, আমার এক জীবন কেটে যেত ভুলে ভুলে।


তবে প্রত্যেকটা মানুষের জীবনে এমন কিছু ভয়ঙ্কর যন্ত্রনাদায়ক মূহুর্ত আসে যা সে কখনোই চিন্তা করেনি। খারাপ সময় আসা দরকার, তবে কিছু কিছু পরিস্থিতি আমাদের জীবনে ঘটে যায়। যেগুলো আমরা কখনো কল্পনাও করিনি তবুও এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়।


সেই পরিস্থিতি থেকে মাথা নিচু করে চলে আসা ছাড়া আর কিছুই থাকে না। সে কঠিন সময়ে আমরা কথা বলার মত সুযোগ পাইনা, আমাদের কথা বলার শক্তি হারিয়ে যায়।



শিবনাথ মণ্ডল




মাটির খুকুই খাঁটি



খুকুর এখন প্রাপ্ত বয়স হয়েছে

দেবো তার বিয়ে

মাসি পিসি এলো সবাই

ফুলের মালা নিয়ে।

আমার খুকুর বিয়ে হবে

রাজার ছেলের সাথে

তাইতো আজ খুশির দিন

বিয়ে হবে রাতে। 

সন্ধ‍্যাবেলা খবর এলো

রাজা পাঠাবেন না বর

পণ নাদিলে বিয়ে হবেনা

পাঠালেন এই খবর।

খবর শুনে মেয়ের বাড়ি

কান্নার উঠলো স্বর

খুকুবলে নাইবা এলো

রাজ পুত্তর বর।

বিয়ে আমি করব না

দিয়ে টাকার পণ

রাজভোগ চাইনা আমি

চাইনা রাজ‍্যধন।

চাষির ঘরের বউহয়ে

সুখে করবো ঘর

সবাই  আমার আপন হবে

থাকবেনা কেউ পর।

খুকুমণির কথা শুনে

সবাই হলেন অবাক

রাজার ছেলের বিয়ে হলোনা

কী দেবেন তার জবাব?।।