১৩ ডিসেম্বর ২০২০

চৈতালী দে


উড়ছে বুলবুল 

   


It's raining cats and dogs 

             " মুষলধারে বৃষ্টি "

আক্ষরিক অর্থ করলে দাঁড়ায় .....

   বিড়াল কুকুরের বৃষ্টি হচ্ছে !!

কিন্তু ঝুম বৃষ্টির সাথে 

বিড়াল কুকুরের সম্পর্ক কোথায় ?


অতি শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত ‘বুলবুল’!

 স্থলভাগে আছড়ে পড়া

 এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা##

বুলবুলি নীরব নার্গিস বনে

 ঝরা বন গোলাপের বিলাপ শোনে !

বৃষ্টি ঝরে রূপালী ফুল হয়ে ।


আকাশে কালো মেঘ

বাতাসে বৃষ্টির ঘ্রাণ

মুক্তোদানার ঝিরঝিরে বর্ষনে

ভিজে যাচ্ছে চারিপাশ

বৃষ্টির সুবাসে মন মাতাল আজ

এমন দিনে তারে কি বলা যায় ............ ।।


বৃষ্টি ভেজা প্রকৃতি

স্নিগ্ধতা ছড়ায় চারিপাশে

তবু এক টুকরো শুষ্কতা

টের পাই শুধু আমি

আচ্ছা বলতে পারো !

বৃষ্টিতে সব শুষ্কতা ভেজে না কেন ?


বৃষ্টিতে ভিজতে কার না ভালোলাগে

প্রিয় মানুষটির হাত ধরে ..........

বৃষ্টিতে যে সুর থাকে

                কথা থাকে

                থাকে বাসনা !!


আর

থাকে #স্বপ্ন !!


স্বপ্নটুকু জাগিয়ে দেবার চেষ্টা 

                কিন্তু

স্বপ্ন পূরণ করে দেবার

কোনো দায় নেই 

এই বৃষ্টির ......


বালিশ ছেঁড়া স্বপ্ন ধোঁয়া

উড়ছে উড়ুক

উড়ছে উড়ুক ।।


          ***************************************

সোহেল রানা'র গল্প

বিষাদ 

(উৎসর্গ—আজাদ সেখ কে)

            

            

মামুদ পাগল হয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়ায়। “পরনে ছিল নোংরা ও ছেঁড়া জামা -প্যান্ট, চুলগুলো বড়ো বড়ো উসকোখুসকো, দাড়ি ও গোঁফ গুলো বড়ো হয়ে কিছুটা মুখে ঢুকে পড়ে।“ কখনো কখনো মদের বোতলে জল খায়,পরে থাকা সিগারেট গুলো নিয়ে খেলা করে। মামুদের মা  মামুদকে অনেক খোঁজাখুঁজির পর রাস্তার পাশে মোড়ের দিকে বসে আনমনে খেলা করছে। এমনকি মনে মনে গান করে-  

  “        পিয়া তোমাকে এখনও ভালোবাসি , 

     তুমি আসবে ফিরে আমার এই বুকে। 

              ভালোবাসি শুধু তোমাকেই। “

মামুদ বাবা তুই এখানে আছিস চল বাড়ি চল। 

হঠাৎ পিয়ার সাথে মামুদের দেখা হয়,মামুদের কাছাকাছি গিয়ে পুরোনো প্রেমিককে চিনতে পেরে তার চোখ দিয়ে অশ্রু সজল নয়নে ঝরতে থাকে।

আপনি মামুদের কে, এই অসহায় পাগল ছেলেটার “মা”। 


             (৩ বছর আগের ঘটনা) 

কীভাবে এই অবস্থা হল, “ওই জঙ্গিপুর কলেজে বেটাকে কত স্বপ্ন নিয়ে ভর্তি করলাম ফিজিক্সে অনার্স কোর্সে। তাঁর সাথে পিয়া নামে একটি মেয়েকে সে খুব ভালোবাসতো। কিন্তু সেই মেয়েটার বিয়ে হয়ে যায় সরকারি চাকুরী করে এক ছেলের সাথে।“

 তারপর থেকে সে মানসিক চাপের, নেশা করতে করতে মদ, গাঁজা, বিড়ি, সিগারেট খেতে শুরু করে আস্তে আস্তে পাগল হয়ে যায়।

পিয়া কাঁদতে কাঁদতে গাড়িতে চড়ে ঘরে চলে যায়। নিজের প্রতি অনুশোচনা করতে থাকে। 

 মামুদ ক্লাস একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হয় বিড়লা হাইস্কুলে। সে মেধাবী ছাত্র, এমনকি স্কুলে ক্লাসের টপার। পিতা-রশিদ সেখ ,মাতা- ফিরদৌসী বিবি।  তাদের একমাত্র সন্তান ছিলো মামুদ। তারা গ্ৰাম থেকে শহরে এসেছে। রশিদ সেখ  একজন চাকুরীজীবি। সে  কোম্পানিতে চাকরি করেন। 


ক্লাস করতে করতে পরিচয় হয় পিয়ার সাথে। পিয়া একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছে পরে। কেননা সে পরে চান্স পেয়েছে। পিয়া পড়াশোনা ভালো, সে মেধাবী ছাত্রী ছিলেন। মধুমিতা ম্যাম বৈষ্ণব পদাবলী ক্লাস নিচ্ছে। ক্লাসে পিয়া আর মামুদ পাশাপাশি বসে মন দিয়ে ক্লাস করছে। ম্যামের বৈষ্ণব পদাবলীর ক্লাস করার কিছু দিনের পর দুজনের মধ্যে পূর্বরাগ থেকে অনুরাগে পরিনত হয়। 

মামুদ তোমাকে কতদিন বলবো সময়ে এসো, আমি কতক্ষণ তোমার জন্য অপেক্ষা করবো, প্রায় তিন ঘণ্টা থেকে অপেক্ষা করছি। রাস্তার ধারে কিছু বকেটা ছেলের টিটকারি শুনতে হয়। 

আচ্ছা বাবা রাগ করে না, “আমার বাবু-সোনা রাগ করে না, এইতো আমি চলে এসেছি “। 

দাও আমার জন্য কি নিয়ে এসছো,অবশ্যই এনেছি তোমার স্পেশাল খাবার “বাদাম”। তাইতো বাবু তোমাকে আরও বেশি বেশি করে ভালোবাসাটা বেড়ে যায়। 

পিয়া কালকে  রেজাল্ট দিবে, তুমি জানো? 

হ্যাঁ। “আমার খুব ভয় করছে মামুদ, কেন”? 

যদি রেজাল্ট খারাপ হয়ে যায়, তুমি ভালো রেজাল্ট করবে, আল্লাহর উপর ভরসা রাখো। 

( পরের দিন) 

ভালো রেজাল্ট করে দুজনেই ফিজিক্সে অনার্স নিয়ে কলেজে ভর্তি হলো, একসাথে কলেজ-টিউশন যাতায়াত করে। 

মামুদ কালকে  কোনো জায়গা ঘুরতে চলো, কালকে যাবে,

“ হ্যাঁ চলো”, কয়েকদিন পর গেলে ভালো হতো, না আমি কালকেই ঘুরতে যাবো, এমনকি তোমাকে সাথে যেতে হবে। 

“সেখানে গিয়ে কিছু শপিং করবো” ।   “আমার যাওয়া হবে না পিয়া”। 

“আমি বুঝতে পারছি কেন যাবে না”। তোমার কাছে টাকা নাই তারতার জন্যজন্য। 

“আমি থাকতে তোমার কোনো সমস্যা হবে না মামুদ, চলো কালকে তাহলে “। 

অনেক ঘুরাঘুরি করার পর সপিং করে, আসার মূহুর্তে, পিয়ার বাবা দুজনকেই দেখে ফেলে। 

পিয়া তোমাকে বাড়িতে ছেড়ে আসি, চলো। যেতে যেতে মামুদ পিয়া কে বলে, “পিয়া তোমাকে যদি হারিয়ে ফেলি, আমি কিন্তু পাগল হয়ে যাবো”। 

“পিয়া তোমাকে ছাড়া আমি বাঁচতে পারবো না “। 

“ I love you পিয়া,” মামুদ বাড়িতে বিয়ের কথা বলছে, আমি এখন বিয়ে করতে পারবো না,

অনেক ম্যানেজ করছি, এটা মনে হয় পারবো না। পরিবারের চাপে বিয়ে করতে হবে, আমি যতটা পারি ম্যানেজ করবো মামুদ। 

তুমি কাঁদছো মামুদ, এটা মনে হচ্ছে শেষ বাড়ি করে ছেড়ে গেলাম, আর দেখা হবে না পিয়া, আমার মনে হচ্ছে। 

“পাগল কোথাকার কাঁদতে নেই “, মামুদ আমি কিন্তু থামতে পারছি না, আমার কান্না বেরিয়ে আসছে “, প্লিজ মামুদ এখন কান্না করো না, আমার বাড়ির কেউ দেখে নিবে। 

পিয়া আমি কিন্তু কালকে আমার বাবা – মাকে দুজনের সম্পর্কের কথা বলবো। 

“দেখো মামুদ তোমার পরিবার মেনে নিলেও”, “আমার বাবা কিন্তু মানবে না “। 

ঠিক আছে কাল তাহলে দেখা হচ্ছে পিয়া। 

মামুদ বাড়ি গিয়ে একটা ফোন দিবে, তুমি সাবধানে বাড়ি যাও।


(একমাস পর পিয়া সাথে দেখা) 

পিয়া তোমাকে আমি পাগলের মত খুঁজেছি, তোমার বাড়ির সামনে এসে কতদিন ঘুরে গেছি, তোমাকে একটি বারের দেখার জন্য, তোমার ফোনের অপেক্ষায় সবসময় বসে আছি। কবে তুমি একবার ফোন করবে। 

“তোমার কি একবারও দেখার ইচ্ছে করনি”! 

“আর তুমি শাড়ি পড়ে আছো, হাতে নতুন চুড়ি, বা হাতে তোমার কি এটা, আংটি মনে হচ্ছে”। 

“তুমি কি বিয়ে করে নিয়েছো “। 

একটি বারের জন্য আমার কথা শোনো মামুদ, তুমি পাগলের মত করো না,  প্লিজ শোনো মামুদ। 

“সেদিন রাতে আমাকে মা বেধড়ক মার মেরেছে, এমনকি ফোনটাও ভেঙে দিয়েছে, তোমার সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়, তার পরের দিন কলকাতায় চলে জোর করে আমাকে নিয়ে চলে যায় এবং মামার বন্ধুর ছেলের সাথে বিয়ে দিয়ে দেয়”। 

আমি আর কি করবো ভেবে পাচ্ছি না, আর তোমার সাথে যোগাযোগ বন্ধ, না হলে আমি পালিয়ে আসতাম শুধু তোমার জন্য, তোমাকে একটিবার দেখার জন্য, আমার মামুদ কি অবস্থায় আছে, শুধু পরিবারের জন্য তোমাকে হারাতে হলো। 

এমনকি বাবা বলছে “ তুই যদি ওই ছেলেটার সাথে মেলামেশা ও যোগাযোগ করার চেষ্টা করিস , তাহলে আমার মরা মুখ দেখবি “ । 

তখন আমার কিছুই করার ছিল না মামুদ।

 “পরিবারের পছন্দ মতো ছেলেকে বিয়ে করে আমি সুখী আছি, সুখী নাই মামুদ বয়সের চাইতে দ্বিগুণ বয়সের ছেলেকে বিয়ে করে মানসিক প্রশান্তি নেই মামুদ” । 

বাবা- মা শুধু “ সরকারী চাকরিরত “ ছেলের সাথে বিয়ে দিয়েছে, আমার মেয়ে সুখে শান্তিতে থাকবে  এই ভেবে। 

“মামুদ তুমি আমাকে ভুলে যাও, আমার থেকে ভালো মেয়ে পাবে, সে তোমাকে আমার থেকে বেশি কেয়ার করবে”। 

“ভুলে যাও তুমি আমাকে, ভু- লে  যাও”। 

পিয়া তুমি জানো,” তোমাকে ভুলে যাওয়া তো দূরের কথা “। 

“তোমাকে ছাড়া আমি বাঁচতে পারবো না”।“আমি বেকার তাই, তোমার পরিবার আমার ভালোবাসার মূল্য দিলো না, এমনকি তুমিও “

  এরপর থেকে মামুদ সমস্ত নেশা করতে থাকে, মানসিক চাপে পাগল হয়ে যেতে শুরু করে। 

 প্রতিটা বাবা – মায়ের এই সমস্ত ভ্রান্ত ধারণা ভাঙতে হবে, সন্তান কোথায় ভালো থাকবে, কার সাথে ভালো থাকবে এটা কোনো মেয়ের বাবা ভাবে না। ভাবে শুধু সরকারি চাকরি করে, মানে ছেলে ভালো।  বেশিরভাগ মেয়ে  বলে সুখে আছি, কিন্তু তার অন্তরে শুধু কোথায় যেন অশান্তি, অসুখী থেকেও তার সাথে সংসার করে সারাজীবন কাটিয়ে দেয়। 

এই ভাবে পিয়ার কথা ভাবতে ভাবতে দিন যায়, মাস যায়, বছরের পর বছর যায় পিয়ার স্মৃতি নিয়ে পাগল হয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াতে থাকে মামুদ। 

শত শত মামুদ তাঁর ভালোবাসার মানুষটিকে না পেয়ে পাগল হয়ে যায়, কেউ এই পরিস্থিতিতে কোনো মেয়েকে কাছে পেয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসে, আর কেউ কাউকে না পেয়ে একাকিত্বের মধ্য দিয়ে নদী ভাঙনের মতো, এক মূহুর্তে সমস্ত কিছু যেন ভেঙে চুরমার করে দেয়, সেরকমই মামুদের জীবনে হয়েছিল। 


০৪/১০/২০২০

মহুয়া চক্রবর্তী


জীবনের প্রাপ্তি


এই জীবনে যেটুকু পেয়েছি

ভালো কি মন্দ দেখার সময় আজ আর নেই,

হাসিমুখে সবটুকু কুড়িয়ে নিয়েছি

কত আশা ভালোবাসা গভীর হৃদয় তলে

ঢেকে রেখেছি বুকে কত হাসি অশ্রু জলে।

দুচোখে আজ খরা নেমেছে কান্নার অবসর নাই।

সবার মুখের হাসি টাই

আজ আমার সকল দুঃখকে করে ছাই।

দিনের শেষে তব সম্মুখে দাঁড়াইনু

ওহে পরমেশ্বর

নিজ কর্ম করিয়া স্মরণে

সাঝের বেলায় সঁপিলাম তব চরণে।

তুমি যে জীবন দিয়েছো আমারে

নিজেই বিনাশ করি আজ নিজেরে ,

যা পেয়েছি এতেই খুশি আমি

আমার কাছে এটাই যে পরম দামি।

আমার যা আছে দোষত্রুটি যত

সবার কাছে নত হয়ে ক্ষমা চাই শত।

হয়তো সেদিনের  কোনো সন্ধ্যায়

অসমাপ্ত হয়ে রয়ে যাবে

আমার জীবনের শেষের কবিতাটায়।

এ.বি.এস ফাহিম



দূর্বোধ্য শহর



এই শহরটা খুবই দূর্বোধ্য লাগে।

কি? মেঘমেদুর বারিষা বয়ে চলে- 

হৃদয়ের মণিকোঠায়। 

এখানে মানুষ আয়োজন করে জন্মালেও,

বেওয়ারিশে লুটে পড়ে ব্যস্ত শহরের বদ্ধ ডাস্টবিনে।

ব্যাংকের নিকাশঘরটা কফির আড্ডায় মেতে উঠলেও,

ক্ষুধার্ত থাকায় বালকরা খুব বেশি কাঁদতে পারেনা-

তাদের মায়ের জন্য।

এই শহরে মানুষের চেয়ে পশুর রাজত্ব বেশি।অথচ-

কি নিদারুণ মানুষের মুখোশের আড়ালে তারা কাব্য রটে!


আচ্ছা এই শহরটা এমন কেন...?


এইখানে রোজ পঁচা লাশের গন্ধ শোকে- বৃদ্ধাশ্রম। 

ধর্ষকদের নিপীড়নে মা-মেয়ে উভয় খুঁজে আশ্রয়।

এই শহর ধর্ষকদের আগলে রাখে,মেরে ফেলে কবিদের।

পরাধীনতায় ডুবে আছি, নেই স্বাধীনতা মোদের।


এই শহরে নীল অপরাজিতারা ফুটে উঠতে ভয় পায়।

ভয় পায় ভাবলেশহীন উড়তে থাকা চিলগুলো। 

এইখানে ছুঁয়ে দেবার আগেই ঘুমিয়ে যায় লজ্জাবতীরা।

কেন এত অনাদারে পড়ে রই শহরটা।

আমরাও বাঁচতে চাই, বাঁচাতে চাই এই মলিন শহরকে?

মিটু রানী শর্মা




মায়া ঘেরা জগৎ


এই জগৎটা বড়ই বিচিত্র 

মায়ায় ঘেরা অপরূপ নাট্যমঞ্চ,

জীবনের তাগিদে চলছে অবিরত 

জীবনটা হচ্ছে একটা রঙ্গমঞ্চ। 


সারাদিনের ব্যস্ততা শেষে শান্তির ছায়ায়

খুঁজে মন একটু আরাম আয়েশ,

তাইতো মায়ার টানে ছুটছে বেগে

পাওয়ার আশায় করছে জীবন শেষ। 


কতো অবহেলা কতো যন্ত্রণা সহে

পার করে যায় জীবন বেলা,

মনে হচ্ছে মায়া ঘেরা জগৎ মাঝে 

জীবনটা এক পুতুল খেলা। 


যখন হাজারো কষ্ট বুকে দানা বাঁধে 

একাকীত্বে আনমনে লুকিয়ে কাঁদে,

মনে ভাবে ভবো মায়া ত্যাগে সুখ

কি হবে সাজিয়ে সংসার?মনের সাধে।


একদিন তো যেতেই হবে অন্দরমহলে 

সুন্দর এই পৃথিবী ছেড়ে, 

তাহলে কেন মৃত্যুর কথা মনে হলে

চোখের কোণে জল ঝরে।


কেন এত মায়া?কেন এত প্রেম?

নিঃস্ব হতে চাইলেও পারে না মন,

বেঁধে রাখে প্রকৃতির মায়ায়

আবদ্ধ করে রেখেছে,মায়া ঘেরা জগৎ জীবন।

নূরুজ্জামান হালিম




কবি


কবি খুব লোভী হয় 

গোপনে গোপনে, 

ভীতু তাই থিতু রয়

শয়নে স্বপনে।

সুরা আর সাকি তার

মননে মননে,

বাহিরে সে সৎ সাধু

সর্বভুক মনে।

তুহিন কান্তি ভট্টাচার্য এর ছড়া



দাদু-নাতি


দাদুর কাঁধে বসে নাতি

খিলখিলিয়ে হাসে

দাদু ভাবে, বাঁদর কেন

আমার আশেপাশে!


‘দাদু তুমি ছোট্ট বাবু

নেই মোটে দাঁত মুখে

খাওনা বুঝি আখ-পেয়ারা

দাঁত হারানোর দুখে!  


 মাথার ওপর মরুভূমি

চর জাগে কি টাকে?

চুল বুঝি সব নিয়ে গেছে

কুচকুচে দাঁড়কাকে!


চোখ দুটিতে চশমা কেন

কম বুঝি তার জ্যোতি

না হয় কিছু ঘাস খেলে রোজ

খুব কি তাতে ক্ষতি!


নাতির কথা শুনে দাদু

মিটমিটিয়ে হাসে

এবং বলে, ‘জবাব পাবি

তোরও সময় আসে।’

রিনাৎ সুলতানা

আস্বাদন


একমাত্র স্রোতস্বিনী নদীই জানে 

থেমে যাওয়ার যন্ত্রণা কত করুণ হয়,

পাহাড় থেকে নেমে আসা চঞ্চল ঝর্ণা জানে 

সুখ সে'তো সাগরের মোহনায়। 


বিটুমিনের উত্তপ্ততায় ধাবমান পথই জানে 

কত পাথর বুকে চেপে  মসৃণ হতে হয়,

ঝড়ের তাণ্ডব কি বোঝে কখনো ভাঙ্গনের মানে

কষ্টের তীব্রতায় রক্তাক্ত হৃদয়ের ক্ষয়। 


ডানা ওঠা পিপড়ে কি বোঝে ওড়ার মানে

আলোর ফুল্কিতে মৃতুর কোলাহল!

হৃদয়ের আরশিতে ব্যর্থতার গ্লানিই জানে 

অচঞ্চল জীবনের প্রতিটি সকাল। 


কেবল আগার আগারই জানে কতটা দহনে 

নিজেকে মেশালে সুগন্ধিও মাতাল হয়,

শুধুমাত্র নির্ভিক দাঁড়িয়ে থাকা পাহাড়ই জানে 

কিছু না বলেও অনেক কিছু বলা যায়।

শওকত মুহাম্মাদ




বিদায়ের ছাড়াছাড়ি 


যাই, প্রিয়ভূমি ছাড়ি 

রাশভারী তোমাকেও৷

আলিঙ্গনে চুমি সব চেনামুখ৷

জলে ভড়ে মনোলোক৷

হায়, আজিকে এ ভরা জলে কেন ডুবিলো তরীখানী মোর? সব আখিকোনে কেনইবা প্রহসনের মেকী জল, সখী?

আমিতো দেহান্তরে লুকায়িত, মনন্তরে তো নই!

তবু কেন নিস্তরঙ্গ এই জলের নেমন্তন?


সখী, তাবৎ খুঁজিও আমায়, সন্ধার সুখতারায়,

আর অবেলার কুয়াশায় অথবা ঘন মেঘের আরশীতে৷

যখন শেয়ালের দল ডেকে যাবে হীম ধরা প্রকম্পে৷

আমি যে হেথায় রহিবো প্রিয়, সাড়ম্বরে৷


তবু আমি যাই, যাই সব ছাড়ি,

প্রিয় তুমি, এমনকি আমার শ্বেতকায় প্রকোষ্ঠরেও....

রুমানা পারভীন রনি



আঁধারের গান


বুকের উঠোনে ঘনকালো সন্ধ্যা নামে

আকাশ জুড়ে তারার মেলা বসে,

তবুও উঠোন আলোকিত হয় না।

তুলসি তলায় মঙ্গল দ্বীপ জ্বলে না।

শ্যাওলার আস্তরনে হেঁটে বেড়ানো

ডাহুকী মায়ের কান্নায় বাতাস ভারী হয়,

ঢোঁরা সাপের মত কলমীলতা জলে ভাসে

শুক্লপক্ষের চাঁদের ছায়া পড়ে রাত আরও গাঢ় হয়।

শিশিরের শব্দের মত হীরকদ্যুতি ছড়িয়ে

টুপটাপ ঝরে পড়ে জ্যোৎস্নার আলো।

ভাঁটফুল ভুল করে সুরভী ছড়ায় উজার করে

বাতাসে ভেসে বেড়ায় সুবাস তার।

দাওয়ায় বসে রাত্রি যাপন করি

মনের কোণে লুকানো বিষন্নতা উবে যায়

আমি চাতকের মত রাতের সৌন্দর্য দেখি।

রাতের এমন নয়নকাড়া রুপ আগে দেখিনি

আমার ঘোর লাগে শুধু…