২৬ মার্চ ২০২১

দেবব্রত সরকার



বেদনা 



তোমরা সবাই লড়াই করো

আমাদের যত যন্ত্রনা

তোমার সবাই মিথ্যে বলো

আমাদের সত্য সত্য না


তোমরা আমরা শব্দ বেঁধে 

আমার তোমার লাভটা কি

তোমরা হাস আমরা কেঁদে

বলো কুর্শি পেয়ে ফলটা কি


নিজের আখের অক্ষরেতে

নেতা ! জনগণের দরদ কই 

 হচ্ছ জয়ী তাদের ভোটে

অথচ থালা হাতে আমরা ওই ।

জারা সোমা




মালী



বোঝাপড়াগুলো পাড়ি জমায় পাহাড়ে

তারপর  জমে ওঠে খাঁজ প্রতিখাঁজে


  নিরেট ব্যথার একক গল্পগুলো 


প্রিয় আঙুল ছুঁলেই গলে জল 

শোকের দর্পণে জীবনের জলছাপ 


গুটিপায়ে মাঘ আসে দোরগোড়ায়


শহুরে  বনফায়ারের ধোঁয়া ও ছাই

 কীভাবে যেন হারিয়ে ফেলে আলাপচারিতা


উত্তরে বাতাসের কানে কেউ যেন বলে ওঠে


প্রেম এসে গতিপথ বদলে ফিরে গেছে মেঘমুলুকে

 আদাব ও আদর করার মালীর অভাবে।

গোলাম কবির




খুব জানতে ইচ্ছে করে 


এই অখণ্ড ভারত একবার ভেঙেছিলো ১৯৪৭ এ, যুদ্ধে যুদ্ধে তারা স্বাধীনতা অর্জন করেনি, করেছিলো সেই পুরাতন ইস্যু হিন্দু এবং মুসলিম।  হয়েছিলো কতো সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা -
ভাঙার আগে ইতিহাস বলে সে কথা, 
আমি বলি না। সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার 
সেই কালো থাবা ছুঁয়ে গেছে আমাদের নোয়াখালীতেও, ইতিহাসই বলে সে কথা। 
তারপর? দীর্ঘশ্বাস নিয়ে প্রিয় স্বদেশ ছেড়েছিলো কতো বাঙালি হিন্দু ও মুসলমান, 
কেউ পরিচয় পেলো ঘটি আবার কেউ বাঙাল। দেশভাগের অভিশাপে ভাগ হলো পাঞ্জাবও, 
ভারত ও পাকিস্তানে হৃদয় ভাঙা কষ্ট নিয়ে 
চলে গেলো তারা এতোটা বছর! 
কিন্তু সেই হৃদয় ভাঙা কষ্ট গেলো না 
এখনো কোথাও! মানুষ আর মানুষ হলো না, 
হিন্দু নয় তো মুসলমানই থেকে গেলো! 
শিক্ষা হলো না শাসক গোষ্ঠীর কোথাও, 
এখনো আবার সেই একই ইস্যুতে ষড়যন্ত্রে মেতেছে ষড়যন্ত্রকারী শাসক গোষ্ঠী, 
ওরা কী মানুষের হৃদয়ের আবেগ ও কান্না 
শোনে না, নাকি অন্ধ ও বধির! 
খুব জানতে ইচ্ছে করে, 
খুব জানতে ইচ্ছে করে!

প্রেমাংশু শ্রাবণ




বর্ষা ও বসন্তের বিলম্বিত

 
কাছে এসো,
বাড়াও চিবুক
তোমার মধ্যমায় ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখি
সবুজ অরণ্য। 

বাড়াও দু'হাত
মাপি আঙ্গুলের যৌথ আয়োজন 
ওষ্ঠ ও অধরে লিখি
অন্তর্লীন অশান্ত অভিধান। 

আরো কাছে এসো,শুনি
চুলের গভীর ঘন বনে
কি সুঘ্রাণে-------
বয়ে চলে বর্ষা ও বসন্তের বিলম্বিত। 

শরীরে সঙ্গীত দাও
হারাবো সে নৃত্য ভঙ্গিমায়, 
আসনের উপাত্ত রেখে

মমতা রায়চৌধুরী


 


বসন্ত এসেছে



দেখো, আজ বসন্ত এসেছে

ওই রাঙা পলাশ পথে।

তাই ফাগুনের দোল,

লাগলো হৃদয় তটে।

দেখো, আজ কৃষ্ণচূড়া, পলাশ

শিমুল ডাকছে কেমন তোমায়

আজ বসন্ত এসেছে,

তোমার আমার হিয়ায়।

বন মেতেছে, মন মেতেছে,

বসন্তের উত্তাল হাওয়ায়।

আজ ফাগুনের নেশা লাগল

ভালোবাসার ছটায়।

বসন্ত এসেছে আজ

তোমার আমার হিয়ায়।

ওয়াহিদা খাতুন




বসন্তছোঁয়া


শনশন বাতাস বহে মহুয়ার ওই বনে--

উদাস বাউল মনটা আমার কুহুকুহু শুনে--

মাতলা নদীর উধাও হাওয়ায় মনটা ভেসে যায়--

বলগা হরিণ নেচে চলে দূরে বনো-ছায়--

আবির মাখা কুহুধ্বনি ওঠে প্রতিক্ষণে;

শনশন বাতাস বহে মহুয়ার  ওই বনে--!


বনোমালী গেয়ে চলে কেয়াগাছের ডালে;

নাচছে সবাই কোমর বেঁধে ঝুমুর গানের তালে;

ঝুমঝুম ঝুম নূপুর বাজে সুরের মোর্ছনায়--

হাড়িয়া আর মাদল নিয়ে হেতালের তলায়--

বসন্তেরি কিযে যাদু লাগলো সারা মনে--!

শনশন বাতাস বহে মহুয়ার ওই বনে--!! 


রচনাকাল:-২৫/০৩/২০২১ সকাল ৯টা ৫৩ মিনিট! (গান নং ৪৫)

অলোক দাস




ভালোবাসা হীন পাথর

একটি বহু প্রাচীন বটগাছ I দিয়েছে মানুষকে অক্সিজেন, পক্ষিকুলকে দিয়েছে আশ্রয় I গ্রীষের তাপে দিয়েছে আশ্রয় পথিককে I বটগাছ আর দিতে পারে না অক্সিজেন, ওর সব পাতা ঝরে গেছে I ওর আয়ু শেষ I ও একটা ভালোবাসা হীন পাথর I কেউ আসে না ওর কাছে I ওর পাশে বকুল, টগর, শিউলি পলাশ I নীচে সবুজ গাসের আরণ্যক I কোকিল আসে ভোরে, বসে পলাশ বোনে I মানুষের ভালোবাসা সীমাবদ্ধ I যে নারী মা, দেরি হোলে বাড়ি ফিরতে, দাঁড়িয়ে থাকতো ! যে বলতো খোকা আজ এতো দেরি? বাবা বলতো খোকা খুব খাটাখাটুনি হচ্ছে না? এটাই ভালোবাসা I

স্বপন কুমার ধর


 


একাকীত্ব



একা ঘরে আমি, বসিয়া রহিয়াছি,

করিয়া রুদ্ধ দ্বার,

ভাবিতেছি মনে সঙ্গী না থাকিলে,

জীবন-টাই কী অসার!


বহুদিন পরে, কিছুদিনের তরে,

গিয়াছে যে সে, বাপের বাড়ি,

জননী যে তার,থাকে একা একা,

বাড়িটি যে তার , লাগে ফাঁকা ফাঁকা।


একদা তাহার সবাই যে ছিল,

ছিল না একাকীত্ব,

জীবিকার তরে, আজ যে তারা,

রয়েছে ভীষন ব্যস্ত।


মনে ভাবি হায়! সকলের-ই কী কপাল,

"মা" থাকে একা দূরে,

ইচ্ছে থাকিলেও, পারেনা থাকিতে,

মা'র কাছে সদা কেহ।


ঘুরিবে যে কাল, আসিবে এদিন,

আমাদের সবার-ই জীবনে,

বুঝিব এ ব্যথা, যাহা সহিতেছে মাতা,

আপন বার্ধক্য কালে।

মোঃ হাবিবুর রহমান ( নিবন্ধ )




ইথা‌রে লুপ্ত মূল্যবান ভাবতত্ত্ব


     

জীব‌নে কত শতবার যে ম‌নের অতল গভীর হই‌তে বি‌ভিন্ন সম‌য়ে নি‌জের অজা‌ন্তেই অনেকটা স্বয়ংক্রিয়ভা‌বেই অ‌নেক দামী দামী কথা উৎসা‌রিত হইয়াছে তাহার বু‌ঝি কোন ইয়ত্তা নাই। 


            যখনই এই সমস্ত মূল্যবান কথাগু‌‌লি নি‌জের অজা‌ন্তেই নি‌জের মন হই‌তে বা‌হির হইয়া আ‌সি‌তো তখনই ম‌নে হইত যে আহা! ইহা য‌দি রেকর্ড করিয়া রাখা যাই‌তো তাহা হই‌লে কতই না ভা‌ল হ'য়ত। 


             সময়, সু‌যোগের অনুকুল কিংবা ম‌নের য‌থেষ্ট দৃঢ়তার অভা‌বেই তাহা বু‌ঝি সেই মুহূ‌র্তে আর রেকর্ড করা সম্ভব হয় নাই‌ কিংবা লি‌খিবার মন মান‌সিকতা গ‌ড়িয়া না উ‌ঠিবার কার‌ণেই বু‌ঝি উহা চিরত‌রের জন্য তখন ইথা‌রে হারাইয়া গিয়া‌ছে। 


              মন হই‌তে হঠাৎ হঠ‌াৎ উৎসা‌রিত এই সমস্ত মহামূল্যবান ভাবতত্ত্ব সম‌য়ের বিবর্ত‌নের সা‌থে সা‌থে নানান অনুকুল ও প্র‌তিকুল প‌রি‌বেশ প‌রি‌স্থি‌তি‌তে স্থান, কাল, পাত্রের উপর ভি‌ত্তি ক‌রিয়া ই‌তিপূ‌র্বে অতী‌তে নানান সম‌য়ে উৎসা‌রিত হ‌ইয়াছিল। 


               বোধ ক'‌রি আজ‌কের মত তথ্য-প্রযু‌ক্তির য‌দি এত উন্ন‌তি সা‌ধিত হইত তাহা হই‌লে হয়তবা ঐ সমস্ত লুপ্ত মূল্যবান ভাবতত্ত্বসমূহ আমরা চিরস্থায়ীভা‌বে আজও বু‌ঝি দু‌নিয়া‌তে ধরিয়া রা‌খি‌‌তে পারিতাম। 


                তাই মা‌ঝে মা‌ঝেই ম‌নে হয় আহা! আমার কোন উদীয়মান একজন বৈজ্ঞা‌নিক ভাই য‌দি এমন কোন যন্ত্র তৈরী ক‌রি‌তে সমর্থ হইত কিংবা ‌অালাউ‌দ্দি‌নের চেরা‌গের যাদু-ম‌ন্ত্রের ব‌দৌল‌তে হয়ত য‌দি আমরা পূ‌র্বের মু‌ছে যাওয়া বা আমা‌দের মন হই‌তে অবলীলায় তাৎক্ষ‌ণিকভা‌বে হা‌রি‌য়ে যাওয়া সমস্ত অব্যক্ত কথারা‌জি আর অপ্রকা‌শিত ম‌নের সেই অমূল্য ভাবতত্ত্বগু‌‌লি আবারও নতুন করিয়া ফি‌রিয়া পাইতাম তাহা হই‌লে আজ কি মজাই না হইত!


                 আর আজ য‌দি সত্যি স‌তিই তাহা ফি‌‌রিয়া অা‌না সম্ভব হইত তাহা হই‌লে উহা লোকচক্ষুর সম্মু‌খে উন্মুক্ত ক'‌রি‌তে পা‌রি‌লে তাহা বোধ ক‌রি কতই না মজার হইত যাহা মা‌ঝে মা‌ঝে ভা‌বিয়া যেন কল্পণার রাজ্য হই‌তে ঘু‌রিয়া আ‌সিয়া এ‌কেবা‌রে শুন্য হা‌তে ফি‌রি‌লেও ‌তাহা ভা‌বি‌তে বেশ ভালই লা‌গিয়া থা‌কে। 


                  ইহা যেন এমন যে, আজ হয়ত তাহা সম্ভব হই‌তে‌ছে না ঠিকই কিন্তু দুই‌ দিন প‌রে যে উহা সম্ভব হই‌বে না তাহা কিন্তু মো‌টেই‌‌ সেই রকম ন‌হে। তাই ভ‌বিষ্য‌তের নতুন আ‌বিষ্কা‌রের আন‌ন্দে মনটা যেন এখন‌ই কেমন একরকম উ‌তলা হ‌ইয়া উ‌ঠিয়া ম‌নের গভী‌রে এক নতুন আব‌হের সৃ‌ষ্টি ক‌রে আর ঠিক তখ‌নি যেন বেজায় পুল‌কিত হইয়া নি‌জেকে বেশ ভাগ্যবান ও ধন্য ব‌লিয়া ম‌নে হয়।


                   বর্তমা‌নে তথ্য প্রযু‌ক্তির উন্ন‌তির সা‌থে সা‌থে বু‌ঝি যু‌গের হাওয়া অ‌নেকখানিই পাল্টাইয়া‌ গিয়া‌ছে। য‌দিও ব‌য়োঃবৃ‌দ্ধির সা‌থে সা‌থে মানু‌ষের কিছু স্মৃ‌তিভ্রম ঘ‌টিয়া থা‌কে কিংবা স্মরণ শ‌ক্তি একটু লোপ পাইয়া থা‌কে তথা‌পি প্রযু‌ক্তি যেন তাহার সেই ঘাট‌তিটি একবা‌রেই শতভাগ পূরণ ক‌রিয়া দিয়া‌ছে। 


                    কোন বিষ‌য়ে কিছ‌ু মনে রাখা আজ ‌তাই কোন ব্যাপারই নয়। ক‌ম্পিউটার, এন‌ড্রয়েড কিংবা নানান ধর‌নের মু‌ঠো ফো‌নের উদ্ভাব‌নের মাধ্য‌মে তাহা যেন এ‌কেবা‌রেই জল‌বো তরলো হইয়া গিয়া‌ছে।


                     আজ আমার দুই-এক কলম লি‌খিবার সামান্য ‌যে‌হেত‌ু অভ্যাস হইয়া দাঁড়াইয়াছে তাই এখন লি‌খিবার প্রাক্কা‌লে সেই সমস্ত লুপ্ত অার অব্যক্ত ভাবতত্ত্বগু‌লি য‌দি আজ হা‌তের গোঁড়ায় থা‌কিত তাহা হই‌লে বোধ ক‌রি তাহার এক‌টি এক‌টি ক‌রিয়া লইয়া অ‌তি সযত‌নে আর সহ‌জেই দুই-এক কলম লি‌খিয়া জনসমু‌ক্ষে অনায়া‌শেই হা‌জির ক‌রি‌তে পা‌রিতাম। 


                      শুধু বু‌ঝি আ‌মি নয়; আমার মত এই বি‌শ্বের শত সহস্র মানব মানবীর ম‌নেও ‌হয়তবা একই ধর‌নের চিন্তা বা অনুভূতির সৃ‌ষ্টি হইয়া‌ছে কিন্তু আ‌মি তাহা আগ বাড়াইয়া সর্বা‌গ্রে সবার অ‌ক্ষির সম্মু‌খে তু‌লিয়া ধ‌রিয়া নি‌জে‌ নি‌জেই ইহার কৃ‌তি‌ত্বের দাবীদার ব‌লিয়া দাবী ক'‌রি‌তে আজ তাই সাহস পাইলাম।