
ইথারে লুপ্ত মূল্যবান ভাবতত্ত্ব
জীবনে কত শতবার যে মনের অতল গভীর হইতে বিভিন্ন সময়ে নিজের অজান্তেই অনেকটা স্বয়ংক্রিয়ভাবেই অনেক দামী দামী কথা উৎসারিত হইয়াছে তাহার বুঝি কোন ইয়ত্তা নাই।
যখনই এই সমস্ত মূল্যবান কথাগুলি নিজের অজান্তেই নিজের মন হইতে বাহির হইয়া আসিতো তখনই মনে হইত যে আহা! ইহা যদি রেকর্ড করিয়া রাখা যাইতো তাহা হইলে কতই না ভাল হ'য়ত।
সময়, সুযোগের অনুকুল কিংবা মনের যথেষ্ট দৃঢ়তার অভাবেই তাহা বুঝি সেই মুহূর্তে আর রেকর্ড করা সম্ভব হয় নাই কিংবা লিখিবার মন মানসিকতা গড়িয়া না উঠিবার কারণেই বুঝি উহা চিরতরের জন্য তখন ইথারে হারাইয়া গিয়াছে।
মন হইতে হঠাৎ হঠাৎ উৎসারিত এই সমস্ত মহামূল্যবান ভাবতত্ত্ব সময়ের বিবর্তনের সাথে সাথে নানান অনুকুল ও প্রতিকুল পরিবেশ পরিস্থিতিতে স্থান, কাল, পাত্রের উপর ভিত্তি করিয়া ইতিপূর্বে অতীতে নানান সময়ে উৎসারিত হইয়াছিল।
বোধ ক'রি আজকের মত তথ্য-প্রযুক্তির যদি এত উন্নতি সাধিত হইত তাহা হইলে হয়তবা ঐ সমস্ত লুপ্ত মূল্যবান ভাবতত্ত্বসমূহ আমরা চিরস্থায়ীভাবে আজও বুঝি দুনিয়াতে ধরিয়া রাখিতে পারিতাম।
তাই মাঝে মাঝেই মনে হয় আহা! আমার কোন উদীয়মান একজন বৈজ্ঞানিক ভাই যদি এমন কোন যন্ত্র তৈরী করিতে সমর্থ হইত কিংবা অালাউদ্দিনের চেরাগের যাদু-মন্ত্রের বদৌলতে হয়ত যদি আমরা পূর্বের মুছে যাওয়া বা আমাদের মন হইতে অবলীলায় তাৎক্ষণিকভাবে হারিয়ে যাওয়া সমস্ত অব্যক্ত কথারাজি আর অপ্রকাশিত মনের সেই অমূল্য ভাবতত্ত্বগুলি আবারও নতুন করিয়া ফিরিয়া পাইতাম তাহা হইলে আজ কি মজাই না হইত!
আর আজ যদি সত্যি সতিই তাহা ফিরিয়া অানা সম্ভব হইত তাহা হইলে উহা লোকচক্ষুর সম্মুখে উন্মুক্ত ক'রিতে পারিলে তাহা বোধ করি কতই না মজার হইত যাহা মাঝে মাঝে ভাবিয়া যেন কল্পণার রাজ্য হইতে ঘুরিয়া আসিয়া একেবারে শুন্য হাতে ফিরিলেও তাহা ভাবিতে বেশ ভালই লাগিয়া থাকে।
ইহা যেন এমন যে, আজ হয়ত তাহা সম্ভব হইতেছে না ঠিকই কিন্তু দুই দিন পরে যে উহা সম্ভব হইবে না তাহা কিন্তু মোটেই সেই রকম নহে। তাই ভবিষ্যতের নতুন আবিষ্কারের আনন্দে মনটা যেন এখনই কেমন একরকম উতলা হইয়া উঠিয়া মনের গভীরে এক নতুন আবহের সৃষ্টি করে আর ঠিক তখনি যেন বেজায় পুলকিত হইয়া নিজেকে বেশ ভাগ্যবান ও ধন্য বলিয়া মনে হয়।
বর্তমানে তথ্য প্রযুক্তির উন্নতির সাথে সাথে বুঝি যুগের হাওয়া অনেকখানিই পাল্টাইয়া গিয়াছে। যদিও বয়োঃবৃদ্ধির সাথে সাথে মানুষের কিছু স্মৃতিভ্রম ঘটিয়া থাকে কিংবা স্মরণ শক্তি একটু লোপ পাইয়া থাকে তথাপি প্রযুক্তি যেন তাহার সেই ঘাটতিটি একবারেই শতভাগ পূরণ করিয়া দিয়াছে।
কোন বিষয়ে কিছু মনে রাখা আজ তাই কোন ব্যাপারই নয়। কম্পিউটার, এনড্রয়েড কিংবা নানান ধরনের মুঠো ফোনের উদ্ভাবনের মাধ্যমে তাহা যেন একেবারেই জলবো তরলো হইয়া গিয়াছে।
আজ আমার দুই-এক কলম লিখিবার সামান্য যেহেতু অভ্যাস হইয়া দাঁড়াইয়াছে তাই এখন লিখিবার প্রাক্কালে সেই সমস্ত লুপ্ত অার অব্যক্ত ভাবতত্ত্বগুলি যদি আজ হাতের গোঁড়ায় থাকিত তাহা হইলে বোধ করি তাহার একটি একটি করিয়া লইয়া অতি সযতনে আর সহজেই দুই-এক কলম লিখিয়া জনসমুক্ষে অনায়াশেই হাজির করিতে পারিতাম।
শুধু বুঝি আমি নয়; আমার মত এই বিশ্বের শত সহস্র মানব মানবীর মনেও হয়তবা একই ধরনের চিন্তা বা অনুভূতির সৃষ্টি হইয়াছে কিন্তু আমি তাহা আগ বাড়াইয়া সর্বাগ্রে সবার অক্ষির সম্মুখে তুলিয়া ধরিয়া নিজে নিজেই ইহার কৃতিত্বের দাবীদার বলিয়া দাবী ক'রিতে আজ তাই সাহস পাইলাম।