১৫ নভেম্বর ২০২১

কবি ফাল্গুনী চক্রবর্তী এর কবিতা





বিরতির শেষে


বয়েসের উঠোন বাঁধ ভাঙছে
জরি আর রাঙতার ডোরে 
তাজ পরা বেশ চাঁদ
রুপোলি স্নানঘরে কাঁচা হলুদেরা
সোনালি সপ্নের সি৺থি আ্ঁকে
আদরের কৌটো খুচরো রাখছে
কুয়াশার পানপাত্র চিরে সিলিকন
হয়ে নামে অজানার পিয়াল
তুমি আমি বিশেষণ নই
তাই প্রেম ঈশরীয় হয়ে
একটু একটু কথা ইটের
গায়ে মিলিয়ে যাচ্ছে বেপনাহ। 

আমিনা তাবাসসুম সম্পাদিত "শব্দ পিয়াসী"র আত্মপ্রকাশ

তারুণ্যের সৃষ্টির ঢল নেমেছে শব্দ পিয়াসী পত্রিকায় 

 

      অনুষ্ঠানের উপস্থিত সম্মানীয় অথিতিদের সঙ্গে সম্পাদক আমিনা তাবাসসুম 


তিথি সরকার ,বহরমপুর : তরুণ কবির হাতে তারুণ্যের সাহিত্য ধ্বজা। যে কোন একটি পত্রিকাকাকে কেন্দ্রে রেখে গড়ে ওঠে এক বিশেষ পরিবার। এই পরিবারের সঙ্গে পত্রিকা, পাঠক ও লেখকদের মাঝে যে আত্মিক যোগাযোগ তৈরি হয় তা যে-কোনও সম্পর্কের ঊর্ধ্বে। একটি পত্রিকা এমনই চম্বুকীয় টান বহন করে সবসময়। এক্ষেত্রে সমস্ত দিক দিয়ে সতর্ক কিন্তু খোলামেলা পত্রিকা সম্পাদক, যিনি নেতৃত্ব দেন সেই পরিবারের। 


পত্রিকা হাতে নবীন প্রজন্ম ও প্রবীন প্রজন্ম সৃষ্টির উল্লাসে কবিবৃন্দ 

    তেমনই একটি নতুন পত্রিকা এমনই মাধুর্যে ভরা। যেখানে তারুণ্যের সৃষ্টিতে ঢল নেমেছে বললে কম বলা হয়। এমনই তো একটি পত্রিকার চরিত্র ও বৈশিষ্ট্য হওয়া উচিৎ বলে মনে করছেন, সাহিত্যিক ও সাংস্কৃতিক মহল। অনেকের মন্তব্য, পুরনো দিনের কথা আবার মনে পড়ল। আমরা পোস্টকার্ড-এর দিন দেখেছি, পত্রিকা দপ্তরগুলিতে তারুণ্যের উজ্জ্বল উপস্থিতি ছিল, পোস্টকার্ড, ইনল্যাণ্ড লেটারে। 


            খোশ মেজাজে কবিরা 

এখন বৈদ্যুতিন মাধ্যমের যুগ। যে-কোনও মুহূর্তে পৌঁছে যাওয়া যায় পৃথিবীর যে-কোনও প্রান্তে। সাহিত্য সংস্কৃতির পালেও এখন হাওয়া লেগেছে বিশ্বায়ণের। তাতে কী ক্ষতিগ্রস্ত সাহিত্য প্রশ্ন অনেকের। কিন্তু, মুদ্রণ পত্রিকা বন্ধ হওয়ার না। সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য আছে থাকবে। আসবে নানান প্রযুক্তিও। কিন্তু মুদ্রিত পত্রিকা বের হবে নিজস্ব গতিতে। 


              কবি আমিনা তাবাসসুম 

    তেমনই একটি নতুন পত্রিকার জন্ম দিলেন, মুর্শিদাবাদ জেলার গঙ্গাধারীতে। নওদা ব্লকের এই জেলা সীমান্ত গ্রামে বসবাসকারী তরুণ কবি আমিনা তাবাসসুম। তাবাসসুম কবিতা লেখেন নিজের আনন্দে। নিজের লেখাটিকে নির্দিষ্ট গণ্ডিতে আঁটকে রাখেননি এই কবি। ছড়িতে দিয়েছেন নিজের মতো করে। তরুণ এই কবির কবিতা পৃথিবীর বিভিন্নপ্রান্তে, নিজ যোগ্যতায় প্রকাশিত হয়। এই সময়ের এই কবির কথায়, 'যদি কবিতার সঙ্গে প্রেম না থাকত, কবিতা লিখতাম না। কবিতার সঙ্গে বন্ধনের জন্যেই আমি একক চেষ্টায় আজ 'শব্দপিয়াসী' সাহিত্য পত্রিকাটি সম্পাদনা করতে পেরেছি। ' জেলা সীমান্তের এই গ্রামে বসে স্নাতকোত্তর স্তরে সাম্মানিক নিয়ে পাঠরত তরুণ এই কবি দুঃসাহস দেখিয়েছেন, একটি মুদ্রণ পত্রিকা প্রকাশ করার। যা এই প্রজন্মের লেখকদের ও তরুণদের কাছে কুর্ণিশ যোগ্য। 


            পত্রিকার  প্রচ্ছদ শিল্পী প্রীতি দেব 

    গত রবিবার ১৪ নভেম্বর ২০২১, দুপুরে হরিহরপাড়ার  একটি বেসরকারি গানের স্কুলে আমিনা তাবাসসুম সম্পাদিত 'শব্দ পিয়াসী' সাহিত্য পত্রিকার আত্মপ্রকাশ ঘটল এক সুন্দর সাহিত্য-সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে। পত্রিকার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন মঞ্চে উপবিষ্ট স্থানীয় সাহিত্য-ব্যক্তিত্বরা। তাঁদের আলোচনায় উঠে আসে আঞ্চলিক সাহিত্যচর্চা ও সাংস্কৃতিক বিবর্তনের বিভিন্ন দিক। কবিতা পাঠ, সঙ্গীত অনুষ্ঠানটিকে অন্য মাত্রা যোগ করে। 

     
            পত্রিকা প্রকাশ দৃশ্যে কবিবৃন্দ  


    পত্রিকা সম্পাদক ও কবি আমিনা তাবাসসুম জানান, 'পত্রিকায় অনেক নতুন লেখক লিখেছেন। অনেকে প্রথম লিখেছেন শব্দ পিয়াসী-তে এমন লেখকের লেখাও আমি ছেপেছি। তাঁদের লেখা সবসময়ই স্বাগত আমার পত্রিকায়। এই ধারা কিন্তু অব্যহত থাকবে। তেমনই আগামীদিনে করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসলে আমি বৃহদাকারে নবীন কবিদের নিয়ে পত্রিকার অনুষ্ঠান করবো।'

মাহ্জাবীন মিতি




তোমাকে পাবার ছলে


তোমার ওই বুকে বুনোফুলের গন্ধ হব
তোমার কপালে শেষ বিকেলের মিষ্টি রোদ
তোমার উড়নচণ্ডী চলমান জীবনে
একটা দমকা হাওয়া হয়ে 
উড়িয়ে নেবো তোমায়...

সবকিছু ঠিক করার ছলে 
বার বার অগোছালো করে দিব .....
পারিপাট্যয় আমার বড্ড অনিহা 
আমি চাই বিস্তীর্ণ সবুজের ঢাল
যেথায় আমি আদিম মানবীর মত
চাষে বেড়াবো তোমার শরীরের প্রতিটি কোষ

বন্য বাইসনের পায়ে শেকল পড়ানোর চেষ্টায়
নিজেকে প্রকাশ করবো
এক সুদক্ষ তীরন্দাজ হিসেবে
প্রচন্ড ঝড়ের কবলে অর্ধ ডুবন্ত 
জাহাজের, নাবিক হয়ে 
ঠিক সামলে নেব তোমায়... 

তুমি শুধু এক পৃথিবী বিশ্বাস নিয়ে 
আমার চোখে, চোখ রেখো...

শামীমা আহমেদ এর ধারাবাহিক গল্প "অলিখিত শর্ত" ১৩

 স্বপ্নসিঁড়ি সাহিত্য পত্রিকার পাতায় লেখক শামীমা আহমেদ'র  নতুন ধারাবাহিক  উপন্যাস "অলিখিত শর্ত"






শায়লা শিহাব কথন 
অলিখিত শর্ত 
                                              (পর্ব ১৩)
   শামীমা আহমেদ 




                                        তকাল ফ্যামিলির সাথে খুব ঘুরে বেড়ালেন বুঝি?
শায়লার এ প্রশ্ন এড়িয়ে গিয়ে শিহাব পাল্টা প্রশ্ন লিখে দিল।
----আপনার  কেমন কাটলো?
কেমন আছেন আপনি?
শুভ সকাল।
---ভালোই কেটেছে।
আমি ভালো  আছি।এখনো বিছানা ছাড়েন নি?ভাবী বেড টি দেয়নি?
শিহাব এবারও শায়লার কথাকে অন্যদিকে ঘুরিয়ে নিলো।এইতো উঠবো!আপনি চা খেয়েছেন?
হ্যাঁ, সেই কোন ভোরবেলা।এখন কয়টা বাজে সে খেয়াল আছে?খুব ক্লান্ত বুঝি?
---হ্যা,অনেকটা।ছুটির দিন হলেও অনেক ইনফরমাল কাজ থেকে যায়।যা সারা সপ্তাহ জমিয়ে রাখা হয়।আমরা তো কেউ সংসার পরিবার ছাড়া নই?
হু, সেতো অবশ্যই।
তা পরিবারে কে কে আছে?আপনার বাবু ক'জন?
শায়লা আজকাল বেশ গুছিয়ে কথা বলা রপ্ত করেছে।কর্মক্ষেত্র  মানুষকে অনেক কিছু শেখায়। সুন্দর করে কথা বলায় নিজেকে যেমন প্রকাশ করা যায় আবার নিজেকে ডিফেন্ডও করা যায়।
শায়লা ভাবলো, এভাবে পরিচয়ের প্রথমে কাউকে ব্যক্তিগত প্রশ্ন করা কি ঠিক হচ্ছে? কিন্তু প্রশ্ন না করলে জানবোই বা কিভাবে? শায়লা প্রায়ই এই দ্বন্দ্বে পড়ে যায়।কাউকে প্রশ্ন করে তার সম্পর্কে জানতে চাইলে,আবার কী জানি সে কী মনে করে বসে! কিন্তু কিছু জানতে না চাইলে তার সম্পর্কেতো জানাই হবে না? 
আসলে খুবই বিনীত  স্বভাবের শায়লা অন্যের প্রতি সন্মান দেখাতে ভীষণ সচেতন। এটা সে তার বাবার কাছ থেকে পেয়েছে।ভীষণ অমায়িক মানুষ ছিলেন আজাহার সাহেব।
কি হলো?  চুপ করে আছেন যে? শিহাব শায়লার ধ্যান ভাঙালো?
নাহ! ভাবছিলাম এভাবে সরাসরি এত কিছু জানতে চাওয়া?
তাতে কী? পরিচিত হতে হলে তো জানতেই হবে।
তা, একই প্রশ্ন তো আমারও! নিশ্চয়ই  আপনারা দুজন বসে সকালের চা খেয়েছেন  গল্প করে,পত্রিকা পড়ে ছুটির দিনের সকাল কাটিয়েছেন।
শায়লা বুঝতে পারলো।কৌশলে তার সম্পর্কে জানতে চাইছে। কিন্তু শায়লা নিজেকে গুটিয়ে রাখল।
শিহাবের  নিজের সম্পর্কে জানাতে কোনো দ্বিধা নেই কিন্তু আজ আর সে প্রসঙ্গে যেতে ইচ্ছে করছে না।যদিও শায়লার সাথে কথা বলে তার বেশ আরামই লাগছে। বেশ গুছিয়ে ভদ্রতা বজায় রেখে কথা বলছে।
শিহাব কারো সাথে একটু মন খুলে কথা বলতে পারে না।তার অবস্থা জানার পরেই সবাই প্রেম নিবেদন করে বসে।শিহাব এগুলোতে আজকাল বেশ বিরক্ত বোধ করে।
তবে শায়লাকে তার জানতে আগ্রহ হচ্ছে। সাধারণত বিবাহিত নারীরা এতটা ফ্রি হয়ে কথা বলতে পারে না। কথার ইঙ্গিতে স্বামীর  পদ পদবী অবস্থান জানিয়ে দেয়।যেন অপরপক্ষ বুঝতে পারে সে একজন ধনী ক্ষমতাবান ব্যক্তির স্ত্রী।
মেয়েরা সব দিক দিয়েই সুবিধা নিতে চায়।
নিজের স্বাধীনতাও চায় আবার অপরপক্ষে যদি লেস ক্যালিভারের কেউ থাকে তবে স্বামীর পরিচয়ে  স্ট্যাটাস জাহির করতে চায়।
শিহাব এসব ব্যাপারে বেশ সংযত আচরন করে।অবশ্য এমনিতেই মহিলাদের প্রতি সে বেশ সন্মান রেখেই কথা বলে।
শিহাব বুঝতে পারছে শায়লা নিজেকে জানাতে চাচ্ছে না।শিহাবেরও কোন পীড়াপীড়ি নেই।
শিহাব নিজেকে খুব ভাল করেই জানে।
যাদের সাথেই তার কথা হয় বা কিছুদিন হয়েছে কোন অভদ্র আচরণ সে করেছেএমন কোন অভিযোগ তারা  করতে পারবে না।
বরং তাদের নানান প্রস্তাবে শিহাবের না উচ্চারণে তারা  খুবই বিস্মিত হয়েছে! কোন লাভ হবে না জেনে নিজেরাই গুটিয়ে নিয়েছে।
শায়লাকেও শিহাব ভেবে নিল। সময় হলেই বুঝা যাবে। প্রেমের সম্পর্ক ছাড়াও দুইজন নারী পুরুষের মধ্য নিস্পাপ নিটোল একটা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক হতে পারে।
শায়লা শিহাবের ভাবনার হিসেব হয়তো এখন করতে পারছে না তবে নিজের মনেও কিছু যোগ বিয়োগ করে নিচ্ছে।একটু সাহস নিয়ে হলেও কথা এগিয়ে নিতে হবে।এইটুকু কথায় তো শালীনতা স্পষ্ট হচ্ছে। অবশ্য সময় গেলেই বুঝা যাবে।
শায়লা জানতে চাইল, ভাবী কি জব করেন?
না অন্য কোথাও থাকেন?
--শিহাব অন্য প্রসঙ্গে চলে গেলো।
আচ্ছা কী মনে করে আমাকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠালেন? আবার একজন অচেনা মানুষের সাথে এমন নির্ভয়ে কথাও বলছেন? 
শায়লার ভেতরে শিহাবকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠানোর আগের দ্বিধাদ্বন্দ্বের কথাগুলো মনে পড়ে গেল।কিন্তু সেগুলোকে আড়াল করে বেশ সাহসিকতায় বললো আপনার প্রোফাইল পিক তো অবশ্যই নজর কেড়েছে।যদিও ভাবছি সেটা আপনার নাও হতে পারে। তবে এফবির বায়োতে সততায় শিহাব কথাটার ভরসায় আগ্রহী হলাম।
বাহ! সত্য বলার জন্য ধন্যবাদ।
মোবাইল ফোনে টাইপ করতে করতে শিহাবের হাত ব্যাথা করছিল।ইচ্ছে হচ্ছিল কল দিয়ে কথা বলতে।কিন্তু শায়লা এখুনি কথা বলতে রাজী হবে কি?
থাক, পরিচিতি আরেকটু এগুলেই কল দেয়া যাবে।
শায়লা লিখলো,
আচ্ছা আপনি সেদিন গানের কথা বলছিলেন। কী ধরনের গান শোনেন আপনি?
সব ধরণের,,  যেমন ইংলিশ স্প্যানিশ হিন্দি উর্দু থেকে শুরু করে বাংলায় মারফতি মুর্শিদি বাউল আধুনিক রোমান্টিক, স্যাড সং,
----এত ভাষার গান? বুঝেন কি করে?আমিতো পাশের দেশের ভাষা হিন্দিই আজ পর্যন্ত বুঝলাম না।
---সব গান আক্ষরিক অর্থে বুঝতে হয় না।গানের সুর নিজেই ভিতরে প্রবেশ করে অর্থটা বুঝিয়ে দেয়।
শায়লা ভেবে নিল বেশ কথা জানে। কিছুতেই আসল কথায়  ধরা দেবে না।তবে আজ আর নয়।সেদিনের কথা না বলা আজ পুষিয়ে দিল।
ওপ্রান্তে  শিহাব ভাবলো 
অনেক কথা হলো। এখন থামতে হবে।
দুজনের মোবাইল পর্দায় একসাথে ভেসে উঠল, আজ আর নয়।
দুজনেই অবাক হলো! হাসির ইমোজি দিয়ে
বাই জানালো।
আজ শায়লার মনের আকাশে কেমন যেন অন্যরকম ভালোলাগা ছুঁয়ে গেল। 



                                                                                                  চলবে.....

লেখক শান্তা কামালী'র ধারাবাহিক উপন্যাস "বনফুল"২৪

চোখ রাখুন স্বপ্নসিঁড়ি সাহিত্য পত্রিকার পাতায় লেখক শান্তা কামালী'র  নতুন ধারাবাহিক  উপন্যাস "বনফুল" 





বনফুল
                ( ২৪ তম পর্ব ) 



                                                   ঠাৎ করে সৈকতের ফোন বেজে উঠল। সৈকত ঘুমিয়ে পড়েছিলো ফোন বাজতে ঘুম ভাঙ্গলো, ফোন হাতে নিতেই চমকে উঠলো!  অহনা ফোন করেছে।
ফোন রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে অহনা বললো আসলামু য়ালাইকুম,
সৈকত প্রতিউত্তরে অভিবাদন জানালো ওয়ালাইকুম আসসালাম , 
অহনা বললো কেমন আছেন ভাইয়া?  
সৈকত ভালো আছি, তুমি? হুমম আমিও.... ; না মানে ভাবলাম নাম্বার যখন এনেছি একবার ফোন দিই। 
খুব ভালো করেছো, আমি ও ফোন দিতাম না, ঠিক তা নয়, হয়তো সকালে ফোন দিতাম। তুমি আগে ফোন দেওয়ায় তোমাকে অসংখ্য ধন্যবাদ অহনা, আমি খুব খুশি হয়েছি। 
অহনা বললো ভাইয়া,জুঁইদের বাড়িতে যে রক্তকরবী ফুল টা বুকপকেটে ভরে দিয়েছিলাম, সেটা কোথায় রেখেছেন? 
ওহ্,ওটা জামার বুক পকেটেই 
আছে। 
মশাই কোথায় রাখতে বলেছিলাম? 
সেখানেই রাখতাম, কিন্তু আমরা দুজন একই ঘরে, তাই..…
ওহ্, লজ্জা করছে! ঠিক আছে, সকালে একবার দেখবেন সে কেমন আছে। 
সৈকত আমতাআমতা করে জবাব দেয়,নিশ্চয়ই, নিশ্চয়ই দেখবো। 
 তাহলে এখন রাখছি,
গুডনাইট....।
সৈকত ও বললো গুডনাইট। 

এভাবেই চলে গেল দুইমাস।

 আগামী কাল পলাশের রেজাল্ট পাবলিশ হবে,এটা ভেবে  ভেবে জুঁই এক ফোঁটা  ঘুমতে পারলো না! 
খুব সকালে উঠে রেডি হয়ে নিচে নেমে এলো জুঁই। সামান্য কিছু খেয়ে মাকে বললো, আম্মু বেরোচ্ছি।
জুঁইকে বেরোতে দেখে ড্রাইভার তারাহুরো  করে গাড়ি বের করলো।জুঁই গাড়িতে উঠে বললো ভার্সিটিতে যাবো।
এই টাইমে রাস্তায় বেশ জ্যাম থাকে। ভার্সিটিতে পৌঁছাতে প্রায় সাড়ে দশটা বেজে গেল। গেটের ভেতর ঢুকতেই হৈচৈ শোনা যাচ্ছে। একটু সামনে এগোতেই দেখতে পেলো জুঁইয়ের পরিচিত একজন সিনিয়র আপু কে।
জুঁই তাকে জিজ্ঞেস করলো কি হয়েছে আপু?এতো হৈচৈ কেন? 
আপু উত্তরে জুঁইকে বললো একটা ছেলে রেকর্ড মার্কস পেয়ে পাশ করেছে, এই নিয়ে সবাই আনন্দ করছে। 
ছেলে মেয়েদের এতো ভীড় যে জুঁইয়ের পক্ষে কিছুতেই সামনে এগিয়ে জানা সম্ভব হচ্ছিল না,কোন ছেলেটাএতো 
ভালো রেজাল্ট করেছে।
এর কিছুক্ষণ পরেই পলাশকে গেটে ঢুকতে দেখে ওর মেসের সব বন্ধুরা পলাশকে কাঁধে তুলে হৈচৈ শুরু করলো। এবার জুঁইয়ের  বুঝতে বাকি রইলো না কে সে ব্যক্তি......
জুঁই য়ের দুচোখের পাতা ভিজে গেলো আনন্দাশ্রুতে।



                                                                                              চলবে....

মমতা রায়চৌধুরী'র ধারাবাহিক উপন্যাস "টানাপোড়েন"৪৩

কান্ত মনেই লিখে চলেছেন লেখক।  তার নিত্যদিনের  আসা  যাওয়া ঘটনার কিছু স্মৃতি কিছু কল্পনার মোচড়ে লিখছেন ধারাবাহিক উপন্যাস "টানাপোড়েন "





টানাপোড়েন (৪৩)

  খুনসুটি


                                                     

রুকসানা রহমান এর ধারাবাহিক উপন্যাস "উদাসী মেঘের ডানায়"২৭

চলছে নতুন  ধারাবাহিক  উপন্যাস "উদাসী মেঘের ডানায়
লেখাটি পড়ুন এবং অন্যদের  পড়তে সহযোগিতা করুন  লেখককের মনের অন্দরমহলে জমে থাকা শব্দগুচ্ছ একত্রিত হয়েই জন্ম  লেখার। 
আপনাদের মূল্যবান কমেন্টে লেখককে  লিখতে সহযোগিতা করবে। 






উদাসী মেঘের ডানায় 
                                              (পর্ব ২৭)


                                   দুই বাড়িতে আনন্দে মেতে আছে সবাই, আত্বীয়- স্বজনদের নিয়ে। তৃষ্ণা অপু কখনো সামিয়াকে নিয়ে
মার্কেটিং এ ব্যাস্ত। কাল গায়ে হলুদ কেনাকাট
শেষ করে বাসায় ঢুকতেই তৃষ্ণাকে বললো- আর কিন্তু  মার্কেটে যাওয়া নয়, সব কেনাকাটা শেষ।?
তৃষ্ণা- মা আর কেনাকাটা নেই।
মা-কি হাল,করেছো এই কয়দিনে চেহারার, যাও হাতমুখ ধুয়ে খেয়ে রেষ্ট নাও। আজ আর রাত জাগবেনা।
এই বলে চলে গেলেন রান্নাঘরে।
সামিয়া-সত্যি রে তোকে ক্লান্ত দেখাচ্ছে, আজ একটু কম কথা বলিস পরশুদিন চলে যাবি তখন যত পারিস গল্প করিস।
তৃষ্ণা- অপু কথা বললে আমি কি করে মানা করি বলো!
সামিয়া - আমি বলবো না হয়।
তৃষ্ণা- না-না তুমি কিছু বলবেনা।
সামিয়া হেসে বললো-আচ্ছা যা বলবোনা।
তৃষ্ণা-  সামিয়া আকাশটা কেমন থমথমে ভাব মেঘ করেছে, বৃষ্টি হবে মনে হয়।
সামিয়া- হবে মনে হয়না,বেশ ঝিরঝিরানি বৃষ্টি হচ্ছে,
এই তৃষ্ণা একটা কথা মনে পড়লো।
তৃষ্ণা- কি কথা?
সামিয়া- মা বলে জন্মের সময় বৃষ্টি হলে বিয়ের সময়
বৃষ্টি হয়।
তৃষ্ণা- এসব মুরুব্বীদের মন গড়া কথা।
সামিয়া- আমি খালাকে জিগ্যেস করে আসি এই বলে
চলে গেলো।
তৃষ্ণার মনটা অস্হির অপু কখন ফোন করবে।
এমন সময় অপু ফোন করে বললো- আরও দুটো দিন ধোর্য ধরতে হবে। তোমাকে দেখতে ইচ্ছে করছে আসি।

তৃষ্ণা- মাথা খারাপ অপু তোমার বাসায় ছোট চাচা চাচিমা খালা বোনরা এসেছে, কি ভাববে বলোতো?

তাহলে ভিডিও অন করো একটু দেখবো।
ভিডিও অন করতেই অপু  রবি বাবুর কবিতা পড়লো-
"হে অচেনা
দিন যায় সন্ধ্যা হয় সময় রবে না
তীব্র আকস্মিক,
বাধা বন্ধন ছিন্ন করে দিক
তোমারে চেনার,অগ্নী দীপ্ত শিখা উঠুক উজ্জ্বলী
দিবো তাতে জীবন অন্জলী"
আমি জানিনা তৃষ্ণা আজ কেন জানি তোমাকে আরও
কাছে পাবার জন্য আমার আবেগের দুয়ার ভেঙ্গেছে
প্রাণের ভাষা যেনো ডানা মেলে দিয়েছে।
তৃষ্ণা- এতো ভালোবাসার সুখ আমার সইবে তো?

অপু- এসব বলতে হয়না, বিধাতারই লেখা নয়তো
কেন আবার দেখা হলো দুজনার, তাইতেো তোমার
মাঝে, আমি আমাকে খুঁজে পেয়েছি।
আর শোন কালকে গায়ে হলুদের ভিডিও ছেড়ে রাখবে
প্রতিটি মুহূর্ত আমি দেখতে চাই।




                                                                                       চলবে...

সাবিলা রওশন





আমি ওদের বীরাঙ্গনা বলি
 

যে মুখোশগুলো রোজ সুখ বিক্রি করে আমি তাদের বীরঙ্গনা বলি,
ওরা শোক বহন করে 
ওরা কষ্ট পায় রাতের অগোচরে। 
ওরা বোঝাটাকে পরতে পরতে উপলব্ধি করে। 
ওরা শুধু তোমাদের মতো অমানুষ নয়।
ওরা সভা করে না উশৃংখলার।
ওরা মার খায় রোদেপুড়ে। 
ওরা অসহায় হলেও কারও ভালোবাসাকে চাবুক মারে না।
ছোবল মারেনা শেষ প্রহরে। 
ওরা তোমাদের মতোই আবেগপ্রবণ।
ওদেরও কান্না পায়!
কিন্তু ওদের রুমাল দিয়ে কেউ চোখ মুছে দেয় না। 
ওরা বিচ্ছেদ ঘটায় না দিনরাত্রি, 
ওরাও মানুষ তোমাদের মতো, 
পার্থক্য এটাই ওরা তোমাদের মতো বেহায়া নয়।
ওদেরও মন স্পর্শ পেতে চায়, 
ওরাও প্রেমে পড়ার মতো প্রেম করে!

কবি বিকাশ সরকার আলোউৎসবে এবং আমরা দুইজন/







ভালোবাসা থেকে প্রেম 

দেবব্রত সরকার 

(আজ তৃতীয়  কিস্তি) 

                                                                     বিকে   এইদিন  একটু বেশ অন্যরকম মেজাজেই পেলাম।  মাথার চুল থেকে পায়ের নখ পর্যন্ত আদ্যোপান্ত কবি। তবে বেশ ছিমছাম গোছালো পরিষ্কার। নিজে হাতেই চা বানালেন। ঘরের খাটে গিয়ে বসলাম তিনজনে। না ঠিক নয় ! আমি চেয়ারে বসলাম।  কারণ  কবির মুখটি যাতে সামনাসামনি  দেখতে পাই তারই জন্য। সামনে রাখা দোকানের খাস্তা চানাচুর চিপস বিস্কুট অনেক কিছু। 


মোহাম্মাদ আবুহোসেন সেখ এর গল্প





ভিক্ষারি রাজা


                                                ছর তিনেক আগে যে ছেলেটা হাফপ‍্যান্ট পরে এ পাড়ায় ও পাড়ায় ভবঘুরের মতো ঘুরে বেড়াতো,সেই ছেলেটাকে দেখি বুট,র্শাট-র্কোট পড়ে বাইক নিয়ে ঘোরে।হঠাৎ কি এমন কাজ পেল সে এত রাজার বেশে ঘরে।এই প্রশ্ন সবার মুখে মুখে।অবশেষে দেখতে পাই হঠাৎ তার দরজায় লাঠি মারে পুলিশ মামা।গ্রামের দূর্ভীক্ষ পীড়িত মানুষেরা ভিড় জমিয়ে দিল তার দরজার সামনে।তাদের সবার মনে একটাই প্রশ্ন মামা এল কেন?••••কিছু সময় অপেক্ষার পর সবাই জানতে পারে ওর রাজার বেশে ঘোরার কাহিনী।ওর বাবা ঘর থেকে বের হতেই এক পুলিশ মামা বলতে লাগলো যে আপনার ছেলে কথাই?••••ছেলেটির বাবা ভয়ে ভয়ে বলল ছেলেতো বাড়িতে নেই বিদেশ গিয়েছে কাজের জন‍্য।তার পর ছেলেটির বাবা বলল কি হয়েছে স‍‍্যার,আমার ছেলেকে খুজছেন কেনো?••••মামা বলতে লাগল আপনার ছেলে নারী পাচারকারী সে এই পযর্ন্ত পাঁচটা মেয়েকে পাচার করেছে।শুধু তাই নয় সে রাজনীতির দূর্নীতিদের সাথে মিশে একজনকে টাকার বিনিময়ে খুন করেছে।আপনার ছেলেকে বাড়ি আসতে বলুন তা না হলে আপনাকে ধরে নিয়ে যাব,এবং যাবর জীবন জেল হতে পারে,অথবা ফাঁসি হতে পারে।এই কথা শোনার পর ছেলেটির বাবা মাথা ঘুরে মাটিতে পড়ে গেলো।তাড়াতাড়ি মাথায় পানি দিয়ে সুস্থ করে বাড়িতে থাকতে বললেন এবং ছেলেকে খুব দ্রুত বাড়িতে আনতে বলে গেলেন।।
               
              এরপর দুদিন পরে ছেলেকে কল দিলো বাবা তুই কোথায় তাড়াতাড়ি বাড়িতে আয় আমার শরীর খুব অসুস্থ।ছেলেটি তার বাবাকে খুব ভালো বাসতো তাই সে দেরি না করে তাড়াতাড়ি বাড়িতে চলে এলো।যেদিন বাড়িতে এলো সেদিন রাতে তাকে মামা ধরে নিয়ে গেলো।এদিকে ছেলেটির বাবা গ্রামের মেম্বারের কাছে যায় তাকে ছাড়িয়ে নিয়ে আসার জন‍্য।মেম্বার বলেন ঠিক আছে আমি উকিলের সাথে কথা বলে দেখছি কি করা যায়। উকিলের সাথে মেম্বারের কথা হলো উকিল বললেন এক লক্ষ টাকা দিলে আমি ওকে জামীন করে দেবো।এবার মেম্বার ছেলেটির বাবার কাছে বললেন উকিলের সাথে কথা হয়েছে  দেড় লক্ষ টাকা দিলে জমীন করিয়ে দেবো।কিন্তু উকিল একলক্ষ বলেছে মেম্বার টাকা খাবার জন‍্য দেড়লক্ষ বলেছে। কিন্তু ছেলেটির বাবা যে অতি গরিব সে এত টাকা কোথায় পাবে দেবে।অবশেষে তিনি ভাবলেন যে জমি বিক্রি করে দেবে।এবং জমি বিক্রি করলেন বাড়ি সহ তিনলক্ষ টাকায়।ফুটপাত হলো তার বসবাসের ঠিকানা।দেড়লক্ষ টাকা  উকিলের দিলেন তারপর উকিল ছেলেটির হয়ে কেশ লড়লেন। কিন্তু জর্জ যদিনা জামীন দেয় উকিলের কিছু করার থাকে না••••••ঠিক তেমনি ঘটলো জর্জ জামীন দিলো না উকিলের কথায়।এদিকে দেড়লক্ষ টাকা আর ফেরত পেলো না। 
  তার পর আবার অন‍্য উকিল ধরলো কিন্তু তাতেও ওর জামিন হলো না।এই ভাবে চার পাঁচটা উকিল ধরলেন কিন্তু তার জামিন হলো না।এদিকে দেখতে দেখতে দু -বছর হয়ে গেলো,এবং ছেলেটির বাবার সব টাকা শেষ।তারপর ভাবলেন যে ছেলে বাড়িতে আসুক বা না আসুক আমার আর কিছুই করার নেই।ছেলের আসা ছেড়ে দিলেন এবং ছেলেটির বাবা বলতে লাগলেন যে ওর যেন ফাঁসি হয়ে যায়,তাতে আমি শান্তি পাবো।কিন্তু বাপ যতই অভিশাপ দিকনা কেন তবুও ছেলের জন‍্য মন কাঁদে।

          এরপর বেশ কিছু দিন কাটার পর হঠাৎ একদিন এক ভদ্রলোকের সাথে ছেলেটির বাবার বেশ পরিচিত ভাব জমে উঠলো।একদিন ছেলেটির বাবা ঐ ভদ্রলোকের কাছে সব বললেন তার ছেলের অপকর্মের কথা।ভদ্রলোকটি যে উকিল ছিল সেটা ছেলেটার বাবা জানতো না।ভদ্রলোকটি কথা গুলো সব শুনলেন এবং শোনার পর খুব দয়া হলো।ঐ ভদ্রলোকটা বললেন আপনার ছেলেকে আমি জামিন করিয়ে দেবো।ছেলেটির বাবা বলেন আমি অনেক উকিল ধরেছি সবাই এই একই কথা বলেছে কিন্তু কেউ পারেনি।আর আপনি কি করে পারবেন?আপনি তো কোনো উকিল না,তাহলে কি করে পারবেন?ভদ্রলোকটি বললেন বলছিতো আমি আপনার ছেলেকে জামিন করে দেবো।আমাকে একটু বিশ্বাস করুন••••••তা কত টাকা লাগবে ছেলেটির বাবা বললেন।ভদ্রলোকটি বললেন বেশিনা এই ধরুন কুড়ি হাজার টাকা লাগবে।কিন্তু ছেলেটির বাবার টাকা সব শেষ সে এতো টাকা দিতে পারবেনা বলে জানিয়ে দিলো।ঐ ভদ্রলোকটি বললেন যেমন করে পারেন দীন।যখন এই কথা বারবার বললেন ••••তখন ছেলেটির বাবা বললো দেখছি চেষ্টা করে।বাড়িতে ছিল দুটো গরু,তিনটে ছাগল সে সেগুলোকে বিক্রি করে টাকা দিল।তার পর ছেলেটির হয়ে কেশ লড়লেন ঐ ভদ্রলোকটি অর্থাৎ উকিলটি। এবার আর জর্জ জমিন না দিয়ে থাকতে পারল না, ফলে তার জামিন হয়ে গেলো।।

                এবার ছেলেটির বাবা ঐ ভদ্রলোক তথা উকিলকে জড়িয়ে ধরে বললেন যে আপনার এই উপকারের  ঋণ আমাকে চিরঝৃণী করে দিলো।আপনার জন‍্য আমি সবসময় দোয়া করবো।উকিলটি বললেন সবই উপর আল্লার ইচ্ছা আমি কিছুই করিনি •••••••আপনি তার থেকে বরং ঐ  উপর আল্লাহকে খুসি করুন নামাজ পড়ুন।এবং লোভ লালসা সব ভূলে গিয়ে যা আছে তাই নিয়ে সুখে শান্তিতে বসবাস করুন।আর আপনার ছেলেকে একটু বোঝাবেন যাতে এই ধরনের অপকর্মের কাজ সে আর কখনো না করে।।।