স্বপ্নসিঁড়ি সাহিত্য পত্রিকার পাতায় লেখক শামীমা আহমেদ'র নতুন ধারাবাহিক উপন্যাস "অলিখিত শর্ত"
শায়লা শিহাব কথন
অলিখিত শর্ত
(পর্ব ১৩)
শামীমা আহমেদ
গতকাল ফ্যামিলির সাথে খুব ঘুরে বেড়ালেন বুঝি?
শায়লার এ প্রশ্ন এড়িয়ে গিয়ে শিহাব পাল্টা প্রশ্ন লিখে দিল।
----আপনার কেমন কাটলো?
কেমন আছেন আপনি?
শুভ সকাল।
---ভালোই কেটেছে।
আমি ভালো আছি।এখনো বিছানা ছাড়েন নি?ভাবী বেড টি দেয়নি?
শিহাব এবারও শায়লার কথাকে অন্যদিকে ঘুরিয়ে নিলো।এইতো উঠবো!আপনি চা খেয়েছেন?
হ্যাঁ, সেই কোন ভোরবেলা।এখন কয়টা বাজে সে খেয়াল আছে?খুব ক্লান্ত বুঝি?
---হ্যা,অনেকটা।ছুটির দিন হলেও অনেক ইনফরমাল কাজ থেকে যায়।যা সারা সপ্তাহ জমিয়ে রাখা হয়।আমরা তো কেউ সংসার পরিবার ছাড়া নই?
হু, সেতো অবশ্যই।
তা পরিবারে কে কে আছে?আপনার বাবু ক'জন?
শায়লা আজকাল বেশ গুছিয়ে কথা বলা রপ্ত করেছে।কর্মক্ষেত্র মানুষকে অনেক কিছু শেখায়। সুন্দর করে কথা বলায় নিজেকে যেমন প্রকাশ করা যায় আবার নিজেকে ডিফেন্ডও করা যায়।
শায়লা ভাবলো, এভাবে পরিচয়ের প্রথমে কাউকে ব্যক্তিগত প্রশ্ন করা কি ঠিক হচ্ছে? কিন্তু প্রশ্ন না করলে জানবোই বা কিভাবে? শায়লা প্রায়ই এই দ্বন্দ্বে পড়ে যায়।কাউকে প্রশ্ন করে তার সম্পর্কে জানতে চাইলে,আবার কী জানি সে কী মনে করে বসে! কিন্তু কিছু জানতে না চাইলে তার সম্পর্কেতো জানাই হবে না?
আসলে খুবই বিনীত স্বভাবের শায়লা অন্যের প্রতি সন্মান দেখাতে ভীষণ সচেতন। এটা সে তার বাবার কাছ থেকে পেয়েছে।ভীষণ অমায়িক মানুষ ছিলেন আজাহার সাহেব।
কি হলো? চুপ করে আছেন যে? শিহাব শায়লার ধ্যান ভাঙালো?
নাহ! ভাবছিলাম এভাবে সরাসরি এত কিছু জানতে চাওয়া?
তাতে কী? পরিচিত হতে হলে তো জানতেই হবে।
তা, একই প্রশ্ন তো আমারও! নিশ্চয়ই আপনারা দুজন বসে সকালের চা খেয়েছেন গল্প করে,পত্রিকা পড়ে ছুটির দিনের সকাল কাটিয়েছেন।
শায়লা বুঝতে পারলো।কৌশলে তার সম্পর্কে জানতে চাইছে। কিন্তু শায়লা নিজেকে গুটিয়ে রাখল।
শিহাবের নিজের সম্পর্কে জানাতে কোনো দ্বিধা নেই কিন্তু আজ আর সে প্রসঙ্গে যেতে ইচ্ছে করছে না।যদিও শায়লার সাথে কথা বলে তার বেশ আরামই লাগছে। বেশ গুছিয়ে ভদ্রতা বজায় রেখে কথা বলছে।
শিহাব কারো সাথে একটু মন খুলে কথা বলতে পারে না।তার অবস্থা জানার পরেই সবাই প্রেম নিবেদন করে বসে।শিহাব এগুলোতে আজকাল বেশ বিরক্ত বোধ করে।
তবে শায়লাকে তার জানতে আগ্রহ হচ্ছে। সাধারণত বিবাহিত নারীরা এতটা ফ্রি হয়ে কথা বলতে পারে না। কথার ইঙ্গিতে স্বামীর পদ পদবী অবস্থান জানিয়ে দেয়।যেন অপরপক্ষ বুঝতে পারে সে একজন ধনী ক্ষমতাবান ব্যক্তির স্ত্রী।
মেয়েরা সব দিক দিয়েই সুবিধা নিতে চায়।
নিজের স্বাধীনতাও চায় আবার অপরপক্ষে যদি লেস ক্যালিভারের কেউ থাকে তবে স্বামীর পরিচয়ে স্ট্যাটাস জাহির করতে চায়।
শিহাব এসব ব্যাপারে বেশ সংযত আচরন করে।অবশ্য এমনিতেই মহিলাদের প্রতি সে বেশ সন্মান রেখেই কথা বলে।
শিহাব বুঝতে পারছে শায়লা নিজেকে জানাতে চাচ্ছে না।শিহাবেরও কোন পীড়াপীড়ি নেই।
শিহাব নিজেকে খুব ভাল করেই জানে।
যাদের সাথেই তার কথা হয় বা কিছুদিন হয়েছে কোন অভদ্র আচরণ সে করেছেএমন কোন অভিযোগ তারা করতে পারবে না।
বরং তাদের নানান প্রস্তাবে শিহাবের না উচ্চারণে তারা খুবই বিস্মিত হয়েছে! কোন লাভ হবে না জেনে নিজেরাই গুটিয়ে নিয়েছে।
শায়লাকেও শিহাব ভেবে নিল। সময় হলেই বুঝা যাবে। প্রেমের সম্পর্ক ছাড়াও দুইজন নারী পুরুষের মধ্য নিস্পাপ নিটোল একটা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক হতে পারে।
শায়লা শিহাবের ভাবনার হিসেব হয়তো এখন করতে পারছে না তবে নিজের মনেও কিছু যোগ বিয়োগ করে নিচ্ছে।একটু সাহস নিয়ে হলেও কথা এগিয়ে নিতে হবে।এইটুকু কথায় তো শালীনতা স্পষ্ট হচ্ছে। অবশ্য সময় গেলেই বুঝা যাবে।
শায়লা জানতে চাইল, ভাবী কি জব করেন?
না অন্য কোথাও থাকেন?
--শিহাব অন্য প্রসঙ্গে চলে গেলো।
আচ্ছা কী মনে করে আমাকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠালেন? আবার একজন অচেনা মানুষের সাথে এমন নির্ভয়ে কথাও বলছেন?
শায়লার ভেতরে শিহাবকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠানোর আগের দ্বিধাদ্বন্দ্বের কথাগুলো মনে পড়ে গেল।কিন্তু সেগুলোকে আড়াল করে বেশ সাহসিকতায় বললো আপনার প্রোফাইল পিক তো অবশ্যই নজর কেড়েছে।যদিও ভাবছি সেটা আপনার নাও হতে পারে। তবে এফবির বায়োতে সততায় শিহাব কথাটার ভরসায় আগ্রহী হলাম।
বাহ! সত্য বলার জন্য ধন্যবাদ।
মোবাইল ফোনে টাইপ করতে করতে শিহাবের হাত ব্যাথা করছিল।ইচ্ছে হচ্ছিল কল দিয়ে কথা বলতে।কিন্তু শায়লা এখুনি কথা বলতে রাজী হবে কি?
থাক, পরিচিতি আরেকটু এগুলেই কল দেয়া যাবে।
শায়লা লিখলো,
আচ্ছা আপনি সেদিন গানের কথা বলছিলেন। কী ধরনের গান শোনেন আপনি?
সব ধরণের,, যেমন ইংলিশ স্প্যানিশ হিন্দি উর্দু থেকে শুরু করে বাংলায় মারফতি মুর্শিদি বাউল আধুনিক রোমান্টিক, স্যাড সং,
----এত ভাষার গান? বুঝেন কি করে?আমিতো পাশের দেশের ভাষা হিন্দিই আজ পর্যন্ত বুঝলাম না।
---সব গান আক্ষরিক অর্থে বুঝতে হয় না।গানের সুর নিজেই ভিতরে প্রবেশ করে অর্থটা বুঝিয়ে দেয়।
শায়লা ভেবে নিল বেশ কথা জানে। কিছুতেই আসল কথায় ধরা দেবে না।তবে আজ আর নয়।সেদিনের কথা না বলা আজ পুষিয়ে দিল।
ওপ্রান্তে শিহাব ভাবলো
অনেক কথা হলো। এখন থামতে হবে।
দুজনের মোবাইল পর্দায় একসাথে ভেসে উঠল, আজ আর নয়।
দুজনেই অবাক হলো! হাসির ইমোজি দিয়ে
বাই জানালো।
আজ শায়লার মনের আকাশে কেমন যেন অন্যরকম ভালোলাগা ছুঁয়ে গেল।
চলবে.....