একান্ত মনেই লিখে চলেছেন লেখক। তার নিত্যদিনের আসা যাওয়া ঘটনার কিছু স্মৃতি কিছু কল্পনার মোচড়ে লিখছেন ধারাবাহিক উপন্যাস "টানাপোড়েন "।
টানাপোড়েন (৪৩)
খুনসুটি
সখী ভাবনা কাহারে বলে, সখী যাতনা কাহারে বলে তোমরা যে বলো দিবস-রজনী ,ভালোবাসা ভালোবাসা...। সকাল বেলাতেই আজ রবি ঠাকুরের গানে মেতে আছে শিখা। মাধু ভাবছে হঠাৎ শিখার হলো টা কি? অনেকদিন পর শিখা এমন গান শুনছে। মাধু রান্নাঘর থেকে গিয়ে সুরঞ্জন এর কাছে বলল ইশারায় দেখিয়ে 'কী বুঝছো?'
সুরঞ্জন বলল' কি বলছ?'
মাধু বলল ' গানটা শুনতে পাচ্ছ?'
সুরঞ্জন বলল 'হ্যাঁ। শিখার ঘর থেকে আসছে।'
মাধু বলল 'এগজ্যাক্টলি ওটাই তোমাকে বোঝাতে চাইছিলাম।'
সুরঞ্জন বলল' 'তাতে কি হয়েছে?'
মাধু বলল 'এমনি কি আর মনোজ ঠাকুরপো তোমাকে হাঁদা বলে?'
সুরঞ্জন বলল ' খবরদার তুমি আমাকে হাঁদা বলো না।'
মাধু বলল 'তা নয় বললাম না ।কিন্তু তোমার পেছনে এতগুলো কথা আমাকে খরচ করতে হলো ।ঠিক আছে ।সরি।'
সুরঞ্জন বলল 'হ্যাঁ ,এবার ব্যাপারটা খুলে বলো তো একটু।'
মাধু বলল 'আমাদের শিখা কতদিন পরে এই গান শুনছে বলো?আমার মনে হচ্ছে আস্তে আস্তে কাটিয়ে উঠতে পারছে।'
সুরঞ্জন বলল ,'তুমি খুব ভালো কথা বলেছ।'
মাধু বলল 'এবার গ্রামেতে পুজোটা কাটিয়ে এসে ওর মুড কিন্তু অনেকটা ঠিক হয়ে গেছে। তোমার কি মনে হয়?'
সুরঞ্জন বলল 'আমার থেকে তো তুমি বেশি ওকে নজরে রাখো ।তুমি ভালো বলতে পারবে?'
মাধু বললো 'দেখ,প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে একদম যাবে না।'
সুরঞ্জন বলল 'এই দেখো ,এড়ালাম কোথায়?'
মাধু বলল 'অতি চালাকের গলায় দড়ি।'
সুুরঞ্জন বলল 'তুমি কি আমার কথায় রাগ করছো?''
মাধু বলল 'রাগ করবো কেন? একটা সহজ প্রশ্ন ।সেটাও তুমি উত্তর দিতে পারলে না ।'
সুরঞ্জন হেসে বলল 'আমারও মনে হয় ওর ভেতরে একটা চেঞ্জে এসেছে।'
মাধুরীর চোখ মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠল বলল ' আমি বলেছিলাম না ঠিক হয়ে যাবে ,দেখো ঠিক হয়ে যাচ্ছে।'
সুরঞ্জন চিবুক দুটো ধরে বলল 'আমি জানি তো যেখানে আমার মা লক্ষ্মী আছে, সবকিছুই ঠিক করে দিতে পারবে।'
মাধু মুখ বাঁকিয়ে বলল 'ঢং এসব কথা বলে কোন লাভ নেই ,তাতে চিঁড়ে ভিজবে না।'
সুরঞ্জন হেসে বলল ' শুকনো খাবো আর কি বলবো বলো?'
ওদিক থেকে বৃষ্টি বলল "মাম মাম রান্নাঘর থেকে দুধ পোড়ার গন্ধ আসছে।'
মাধু সুরঞ্জন এর দিকে তাকিয়ে বলে 'সব তোমার জন্য পুরো নষ্ট হয়ে গেল ।( ছুটতে শুরু করল)।
রান্নাঘরে গিয়ে দেখে ঠিক তাই।
বৃষ্টি হাততালি দিয়ে বলল 'কি মজা,
কি মজা ।আজকে আর দুধ খেতে হবে না ।'
সুরঞ্জন বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে মুখে আঙ্গুল দিতে বলে। আর ফিসফিস করে কানের কাছে বলে ' মাম মাম শুনতে পারলে কিন্তু রেগে যাবে। চুপ কর।'
বৃষ্টি লক্ষী মেয়ের মত বাবার কথায় মুখে আঙ্গুল দিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো।
মাধু বাপ মেয়ের কারসাজি শুনতে পেয়ে রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে এসে বৃষ্টির কান দুটো মুলে দেয়।রেগে বৃষ্টিকে বলে 'খুব মজা না ।দুধ খেতে হবে না ?আমি এক্ষুনি গদাইদাকে ফোন করছি । আজ বাপ বেটি দুজনেই শুধু দুধ খেয়ে থাকবে।'
সুরঞ্জন আর বৃষ্টি দুজনেই গালে হাত দিয়ে সোফায় বসে পড়ল।
ওদিকে চিৎকার চেঁচামেচি শুনে শিখা নিচে নেমে আসলো। এসে বলল ' বৌদি ভাই কি হয়েছে গো?
এ বাবা এরা দুজন আমার কাকতাড়ুয়ার মত মুখ করে আছে কেন?'
মাধু বলল 'আজকে দুজনেরই পানিশমেন্ট আছে। খাওয়া নেই। বাপ বেটি দুজনেই দুধ খাবে শুধু।'
শিখা অবাক হয়ে গালে হাত দিয়ে বসে পড়ল ওদের মতো।
তারপর বলল ' কি বলছ বৌদিভাই ,দুধ খাবে। আর আমরা কি খাবো?'
মাধু বলল 'আজকে সানডে কি খাওয়া উচিত ।মটন কষা আর পোলাও।'
শিখা বললো 'ও বৌদিভাই, এক্ষুনি জিভে জল এসে গেছে আর বোলো না।'
এবার বৃষ্টি মুখ খুলল 'না ,তা কি করে হয় ?আমি তো রোজই দুধ খাই। সানডে ত দুধ খাই তার পরেও তো আমি মটন খাই।
মাধু বলল হবে না আজকে দুধ পুড়ে গেছে এক্সটা দুধ এসেছে তাই তোমাদের শুধু দুধ খেয়ে থাকতে হবে দরকার হলে তোমাদেরকে পনির রেজালা দিতে পারি কিন্তু একদমই নয় মটন কষা...?'
সুরঞ্জন বলল ' তুই বল এটা কি ঠিক?এর জন্য কি দায়ী আমরা ?রান্নাঘর , রান্নাঘরের দায়িত্বটা কার তুই বল?'
শিখা মাধুর দিকে তাকিয়ে বললো 'ওরে বাপরে ওটা হোম মিনিস্টারের। আমি ওদিকে নেই দাদাভাই ।তোমরা বুঝে নাও।'
সুরঞ্জন বলল 'তুই আমার বোন, না ,অন্য কারোর বোন বলতে পারিস?'
শিখা বললো 'দাদাভাই ওয়েট করো ফোন করছি।'
সুরঞ্জন বলল ' কাকে ফোন করবি?'
শিখা বলল 'স্বর্গলোকে '।
সুরঞ্জন অবাক হয়ে বলল 'তোর মাথাটা কি খারাপ হয়েছে?'
শিখা বললো 'না দাদাভাই ,আমার মাথা ঠিক আছে ।তোমারই মাথা খারাপ হয়েছে মটন কষার নাম শুনে।'
মাধু মুচকি মুচকি হাসছে।
সুরঞ্জন বলল' তুমি হাসছো?'
শিখা বলল'দেখো দাদাভাই সিম্পল হিসেব। বাবা মা এখন কোথায় আছে তুমি বলো?'
সুরঞ্জন বলল ' স্বর্গলোকে।'
শিখা বললো 'তাহলে এবার উত্তরটা তুমি সঠিক বললে।'
সুরঞ্জন মাথা নাড়লো।
শিখা বলল তাহলে সেই প্রমাণ দিতে হলে তো স্বর্গ থেকে বাবা- মাকে টেনে আনতে হয়। '
সুরঞ্জন বলল 'শিখা এবার কিন্তু তুই আমার কাছে মার খাবি। আমরা মরছি আমাদের জ্বালায়। আর তুমি মাঝখান থেকে ফোড়ন দিয়ে যাচ্ছিস।'
মাধু বলল 'শিখা, তুই যা বলেছিস।'
তারপর মাধু বলল 'বৃষ্টি হোম টাস্ক তাড়াতাড়ি করো ।ড্রইং এর টিচার আসবেনএকটু পরে। যাও তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নাও।'
বৃষ্টি মুখ কাচুমাচু করে চলে গেল।
আর সুরঞ্জন এক দৃষ্টিতে মাধুর দিকে তাকিয়ে বলল 'একবার ভেবে দেখো মাধু ,কাজটা কী ঠিক করছ ?'
মাধু বলল 'ঠিক ই তো করছি ।বেঠিক তো কিছু দেখতে পাচ্ছি না ।'
সুরঞ্জন বলল ' আচ্ছা আমার দোষ হলে, তোমারও দোষ আছে ।তাহলে তুমিও হাফ ,আমি ও হাফ।'
মাধু শিখার দিকে তাকিয়ে বলল ' কি বলছিস শিখা ,মাফ করে দেয়া যায়?'
শিখা সুরঞ্জন এর দিকে তাকিয়ে একটু মুচকি হেসে বললো 'বৌদিভাই দেখো প্রত্যেক আসামিকে কিন্তু সংশোধনের একটা জায়গা তৈরি করে দেয়া উচিত ।এদের ক্ষেত্রেও ...।'
মাধু বলল 'হ্যাঁ ঠিক বলেছিস । তবে তো সংশোধন হবে না । আবার এঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটতে পারে। মনে থাকবে তাই তো?'
শিখা বলল 'একদম ঠিক বলেছ।'
মাধু বলল' ঠিক আছে । এবারকার মত মাফ করে দেয়া গেল। পরের বার হলে কিন্তু বলে দিচ্ছি ওই দিন তোমাদের শুধু নিরামিষ খেয়ে থাকতে হবে।'
সুরঞ্জন বলল ' কিন্তু দোষটা যে কি করলাম সেটাই এখনো জানতে পারলাম না।'
মাধু অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল।
সুরঞ্জন বলল 'তুমি ওভাবে তাকিও না। আচ্ছা সেদিনটা যদি সানডে না হয় ।সেদিন মটন কষা থাকবে না আর পোলাও থাকবে না।'
মাধু বলল ' দেখলি শিখা মাফ করে দেয়া যায় এদের ?কত বদমাশ রে তোর দাদা।'
এবার মাধু হাতের বেলুন চাকি টা নিয়ে ছুটতে শুরু করল।
সুরঞ্জন ও ছুটতে ছুটতে নিজের রুমে গিয়ে পৌঁছালো মাধু হাঁপাতে হাঁপাতে সুরঞ্জন এর কাছে গিয়ে বলল 'তোমার ভিতরে এত দুষ্টু বুদ্ধি কাজ করে?'
সুরঞ্জন এবার মাধুকে হাত দুটো ধরে হ্যাচকা টানে নিজের বুকের কাছে নিয়ে চলে আসলো। আর বলল তুমি ঠিক এভাবেই থেকো মাধু। তোমার ভেতরে যেন কখনো কোন অন্য রকম পরিবর্তন না আসে। আই লাভ ইউ সো মাচ।
মাধু সুরঞ্জন এর হৃদ পিঞ্জরে বন্দি হয়ে থাকল। আর দুই হাতে দুটো আঙ্গুল দিয়ে মনোজের বুকের ভেতরে আলতো করে আঙ্গুল চালাতে লাগল ।
সুরঞ্জন নিজের মুখটা মাধুর মুখের কাছে গিয়ে গুনগুন করে বললো 'তোমায় হৃদ মাঝারে রাখবো ,ছেড়ে দেব না।.... তোমায় বক্ষ মাঝে রাখবো ছেড়ে দেবো না।'
(ক্রমশ )
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
thank you so much