০৪ ফেব্রুয়ারী ২০২২

মমতা রায় চৌধুরী'র ধারাবাহিক উপন্যাস ১০১






উপন্যাস 

টানাপোড়েন ১০১

বুনোঝড়

মমতা রায় চৌধুরী


রেখার বেখেয়ালী মনে উঠেছে অতীতের ঢেউ সেসব ঢেউয়ের উচ্ছ্বাসে  কখন যে ভোর হয়ে গেল বুঝতেই পারে নি। জানলার ফাঁক দিয়ে সূর্যের কিরণ তেরচাভাবে ভাবে এসে পড়েছে। চমক ভাঙ্গে।
অন্যদিকে  তুলি ,পাইলট এত জোরে চেঁচাচ্ছ যে আর বিছানায় শরীরটাকে রাখতে পারল না। কান খাড়া করে শুনল। ওদের আওয়াজটা কি ধরনের আওয়াজ অনুধাবন করার চেষ্টা করলো ।এই আওয়াজ এর মধ্যে দিয়ে বোঝা যায় ওরা কি চাইছে, কি করছে? এখনকার আওয়াজ এর মধ্যে পরস্পর পরস্পরের প্রতি একটা আক্রমণাত্মক মনোভাব প্রকাশ পেল ।
রেখা ভাবে 'এরা তো খুব সুন্দর মিলেমিশে থাকে। তবে মাঝে মাঝে এতটা রেগে যায় কেন, কে জানে? '
রেখা উঠে পরল দরজাটা খুলেই দেখতে পেল  মনোজের ঘরে আলো জ্বলছে ।
ওদিকে যেতে গিয়েও মিলি ,তুলি ,পাইলটদের চিৎকারে ,আগে সেদিকটায় গিয়ে ধমক দেয়' তুলি ,পাইলট এত গলার আওয়াজ কেনো? 
একটু চুপ করে গেল। তারপর প্রত্যেকে যেন কিছু বলতে চাইল ।পরস্পর পরস্পরের অভিযোগ জানাতে শুরু করলো । রেখা গ্রিলের ফাঁক দিয়ে হাত দিয়ে প্রত্যেকের মাথায় আদর করে
 দিল ।তারপর চলে আসলো  ।
রেখা দ্রুত ছুটল বাথরুমের দিকে। এত জোরে বাথরুম পেয়েছে বলার অপেক্ষা রাখে না।
বাথরুম থেকে একেবারে প্রাতঃক্রিয়া ও  অর্ধস্নান সেরে ফ্রেশ হয়ে গোপালকে তুলল ,গোপালের ভোগ নিবেদন করলো।
গোপালের কাছে প্রণাম করে প্রার্থনা করল'   'হে ঈশ্বর সকলকে ভাল রেখো। সারাদিনটা যেন ভালো যায়।'
আজ কাজের অত তাড়া নেই। নূতন কাজের মাসি লেগেছে। অবশেষে সুমিতাকে বিদায় করা গেছে। মাসি বয়স্ক হলেও গুছিয়ে কাজ করে।
 সুমিতার মতো ফাঁকিবাজ নয়। অথচ প্রথম দিন যখন এই মাসিকে কাজে নিয়ে আসে মনোজ, রেখা তখন একটু বিরক্ত হয়েছিলো। মাসির সামনে কিছু বলে নি ঠিকই।
 কিন্তু পরে বলেছিল বাজখেকো গলায় 'সুমিতাকে নিয়ে এত ভুগলাম আবার নিয়ে এসেছ এই বয়স্ক মাসিকে।ভালো লাগে না ছাই।'
 মুখ গম্ভীর করে রেখা চলে এসেছিলো নিজের ঘরে।
পরে মনোজ এসে  নিজেকে দেখিয়ে আশ্বাস দিয়ে বলেছিল' আমার উপর বিশ্বাস রাখ ,আমার
 উপর । এ মাসি সুমিতার মত হবে না।'তারপর রেখার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়েছিল।'
মাঝে মাঝে মনোজের রোমান্টিক আবেগে রেখা ভেসে যেতে চায় কিন্তু আবার মাঝে মাঝে ওর মাথায় কি যে ঘুনপোকা ধরে কে জানে?
রেখা আজ বুঝতে পারে ' মনোজ ঠিক কথাই বলেছিল । এ মাসি সত্যিই ভালো।'
সুমিতা থাকলে এতক্ষণ বসে বসে ভাবার কোন স্কোপ ছিল? বাপরে বাপ সারাক্ষণ টেনশন আর টেনশন ।সকাল থেকে উঠে নাকানি-চোবানি খেতে হতো।
  ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে সাতটা বাজে আপন মনে বলে উঠল' এ বাবা এত বেলা হয়ে গেছে মাসি আসার সময় হয়ে গেছে ।'
রান্নাঘরের দিকে গেল মাসির জন্য চা করতে হবে, নিজেদের জন্যও করতে হবে।  জলটা কাপ মেপে মেপে প্যানে দিল ফোটাতে , সঙ্গে আদা গোলমরিচ, লবঙ্গ ,তুলসী পাতা দিয়ে দিল একটু থেঁতো করে। গ্যাসের অন্য চুলায় দুধ গরম করতে বসিয়ে দিল , আটার লেচি কেটে রুটি বানিয়ে বাচ্চাগুলোকে খাওয়াতে গেল। যাওয়ার সময় মনোজের ঘরে একবার উঁকি দিল। আর মনে মনে বলল' একি রে বাবা টেবিলের কা'ছে মাথা রেখে ঘুমোচ্ছে, কি ব্যাপার ?কি হল? তারপর ভাবলো "না যাই একবার বাচ্চাগুলোকে খাইয়ে এসে ঘরে ঢুকে দেখি তিনি কি করছেন?'
বাচ্চাগুলো খাবার খাইয়ে এসে ওদের থালাগুলো বেসিনে  রেখে, চা নিয়ে ঢুকলো মনোজের ঘরে।
কাছে গিয়ে মনোজকে ধাক্কা দিয়ে বলল ' কি ব্যাপার এভাবে ঘুমাচ্ছ কেন ?সারারাত কি এভাবে ঘুমিয়েছো?'
মনোজ ঝাঁঝালো কন্ঠে বলল 'কেন আমি তো ঘরে কাজ করতে এসেছি ,ঘুমাবো কেন সারারাত এখানে বসে?'
মনোজের কথা শুনে রেখা হতভম্ব হয়ে গেল  কি বলতে চাইলও আর কি মানে হয়ে গেল।
মনে হল যেন চোর ধরা পড়ে গেছে তাই সাফাই গাইছে।
রেখা শুধু বলল 'আমি এভাবে বলতে চাই নি, তুমি যেভাবে বলছো?
মনোজ বললো' সকাল সকাল এত জ্ঞান দিওনা।'
রেখা ও কেমন যেন একটু রেগে গেল বলল' এই তুমি এভাবে কথা বলছ কেন ?আমি কি এমন বলেছি তোমায়?'
মনোজ হঠাৎই বলে উঠলো 'অসভ্য মেয়ে মানুষ।'
রেখার পা থেকে মাথা পর্যন্ত কথাটি শুনে গা ঘিনঘিন করে উঠলো। আর বলল "তোমার মাথা ঠিক নেই  ।কাকে, কি কথা বলতে হয়, সেটা তুমি শেখো নি।'
মনোজ বলল'' না না এখন তোমার কাছ থেকে শিখব ,এটা তোমার ক্লাস রুম নয়।'
রেখা বলল 'তুমি আমাকে কি ভাবো বলতো?'
মনোজ বলল' কি ভাবি সেটা তো বলেই দিলাম।'
রেখা আর  নিতে পারল না। 
বলল 'আমি এভাবে কথা শুনতে অভ্যস্ত নই  আমাকে এভাবে বলবে না।'
মনোজ বলল" সেটা তুমি যা ভালো বোঝো তাই করবে।"
আর কোন কথা বাড়ালো না শুধু বলল 'ছি: তুমি আমার স্বামী হয়ে এসব কথা বলছো ছি: ছি: 
ছি :।
রেখা ভাবছে' কি এমন সে করেছে যার জন্য মনোজ এ ভাবে বলল।'
তাছাড়া কাজের মাসি এসে যাবে । এসময় ওর কাছে না থাকাই ভালো ।আরো কি ছাইপাশ বলে দেবে তার ঠিক-ঠিকানা নেই। আজকাল এরকমই ব্যবহার করছে। কালকেই তো শাশুড়ি মার ওখান থেকে ঘুরে আসল। ওখান থেকে কিছু কি হয়েছে?
আজও সেই পৌষ সংক্রান্তি। আজই ঘটেছিল রেখার জীবনে আর এক দাগী অধ্যায়। 

আজ আবার পৌষ সংক্রান্তি  আগের দিন অনেক নিয়ম-কানুন ছিল ,সেগুলো করেছে  আজও রয়েছে কিছু নিয়ম। তবুও মনে থেকে যায় সে কলঙ্কিত জীবনের কাহিনী।
মনে পড়ে মকর সংক্রান্তির আগের দিন সকাল থেকেই" রেখার শাশুড়ি মা নানা কারণে ঝগড়া করার ইস্যু খুঁজছিলেন। হঠাৎই দোতলা থেকে এসে যখন নিজের রুমে তিন তলায় ঢুকে যাবেন তখন রাঁধুনিকে শুনিয়ে বলছেন  'আমার দুয়ারের সামনে কেন এত নোংরা ,এত জল। পরেরদিন মাসি আসুক 
কাজে ,জিজ্ঞেস করবো 'ঘর সামনে মুছেনি আদবে কথাগুলো যে রেখাকে শুনিয়ে বলা রেখা সেটা বুঝতে পারে কিন্তু রেখা মানতে পারে না যে ,একটা কাজের মেয়ে সে গরীব হতে পারে কিন্তু তারও একটা মূল্যবোধ তার আত্মসম্মান আছে ।কারণ সে তো কাজে ফাঁকি দেয়  নি ।সে ভালোমতোই করে গেছে কিন্তু যেহেতু ওটা ফ্রন্ট প্যাসেজ তাই যাতায়াতের সময় পায়ে পায়ে  জলময় হয়েছে হয়তো  সে দোষটা কিন্তু কাজের মাসির নয় ।তাই যখন শাশুড়ি মা ওইসব কথা বললেন, তখন রেখা চুপ করে থাকতে পারে নি।
' রেখা তখন রাঁধুনিকে লক্ষ্য করে বলেছে 'কোথায় কি নোংরা আছে দেখি।l আমি মুছে দিচ্ছি '
 রাধুনি  বলল '' হয়তো ভুলে গেছে.
 তখন রেখা বলল না মাসি কিন্তু কাজে ফাঁকি দেয় না। মাসি ঠিকঠাকই মুছে গেছে, পায়ে  পাই হয়তো জল জল হয়েছে ।যাই হোক সেই অবস্থায় তুই ব্যাপারটা থেমে গেল কিন্তু তুষের আগুন জ্বলে উঠল ঠিক সন্ধ্যেবেলায়। ঠিক সন্ধে বলা যায় না ।রাত আটটা নাগাদ রেখার শরীরটা ভাল ছিল না । মেয়েলি প্রবলেম থাকার জন্য শুভ কোন জিনিসে করতে পারবে না ।কিন্তু নিয়মকানুনগুলো করতে হবে ।ওদিকে শাশুড়ি মা কিন্তু কোন নিয়ম-কানুন এর ধার ধারে না অথচ লোকের কাছে তিনি বলেন এ বাড়িতে যে বউ এসেছে কোন নিয়ম কানুন সে করে না ।ফলে আগে যে মেয়েটি কাজ করত হঠাৎ সে দেখা করতে আসে। বিয়ে হয়ে গেছে শ্বশুরবাড়ি থেকে এসেছে বাপের বাড়িতে ।রেখার মাথায় একটা বুদ্ধি খেলে গেলো ,সে তো ভেবেছিল যে পাড়াতুতো ভাইপো এসেছিল চালের গুড়ি দিতে আর নতুন পিঠার সাজ দিতে ,যাতে পিঠে করা হয় ।সে পিঠের সাজ পোড়াতেই হবে ,না হলে সারা বছর পিঠে করা যাব না ।পিঠে খাওয়া যাবে না ,এটা নিয়ম। তাছাড়া অনেক কিছু নিয়ম আছে পিঠে করে সেগুলো করতে হয়। আলপনা দিতে হয় লক্ষ্মী মায়ের আরাধনা করতে হয়। কাজের মেয়ে কৃষ্ণা যখন আসে তখন রেখা বলে কৃষ্ণা একটা কাজ করে দেবে গো? কৃষ্ণা বলল কি কাজ বৌদি?
রেখা বলল ' আজকে তুমি আমাকে একটু আলপনা দিয়ে যাবে আমিতো ছুতে পারব না মোমবাতি জ্বালাতে হবে ধান ,দূর্বা ,সিঁদুর দিতে হবে। ছাদে গিয়ে আলপনা দিয়ে সাজিয়ে পিঠে, খড়, দূর্বা সিঁদুর দিয়ে মা লক্ষ্মীর আরধনা করতে হবে।
আর ঘরে ঘরে একটু আলপনা দিয়ে দিতে হবে।
কৃষ্ণা বলল ' এ আবার কি কঠিন কাজ নিশ্চয়ই করে দেবো। বৌদি  আমাকে একটু দেখিয়ে দিও ।'
রেখা বলল' হ্যাঁ ,সে তো দেখিয়ে দেব আমি শুধু ছুঁতে পারব না ।সেইজন্য বলা। আর তাছাড়া ভাইপো আছে তোমাকে সাহায্য করবে।
যেমনি বলা তেমনি কাজ। ওরা ঠিক যথারীতি আলপনা দিয়ে সব নিয়ম রীতি সব করে দিয়ে গেল শাখ বাজিয়ে দিয়ে গেল। ওরা যেতে না যেতেই মনোজ যখন ঘরে আসলো ,একটা কি কাজে  মনোজকে ডেকে আমার শাশুড়ি মা বললেন 'দেখো আমার দুয়োরের সামনে দেখো কি অবস্থা ?দরজার থেকে বেশ খানিকটা দূরেই একটা চালের জায়গা সেটা কে ওরা সরিয়ে রেখেছিল   ।দেখে যা কি সব কাণ্ড। তখন মনোজ বলেছিল ' তোমার দরজার কাছে তো নেই। বেশ খানিকটা তো দূরেই 
আছে ।তাতে কি অসুবিধা হচ্ছে তোমার? যদি অসুবিধা হয় এটা যে রেখেছে তাকে বল সরিয়ে দিতে।
শাশুড়ি মা বলেন 'বাবা ব'লে মরবো নাকি ?এতে আগুন জ্বলে যাবে।'
মনোজ বলে 'তুমি এসব কি কথা বলছো মা ,আগুন জ্বলবে কেন?'
মা বললেন _তুই জানিস না বাড়িতে কি সব কাণ্ড করে বেড়ায় তোর বউ?'
রেখা ঘর থেকে সব শুনতে পাচ্ছে কিন্তু কিছু বলছে না।
যখন আবার ঐ একই কথা রিপিট করে যাচ্ছে এ বাড়িতে টেকা দায় হয়ে দাঁড়াবে ।
ঠিক তখনই রেখা গিয়ে বলে ' 'কি সমস্যা হয়েছে আপনার। এটা তো আপনার কোন সমস্যা করছে না, আর এইখানে জায়গা কোথায় বলুন ?কোথায় 
রাখবো ?সেই নিয়ে কি ভাষl শব্দ ব্যবহার করল ভাবতে অবাক লাগছে । বলল 'অসভ্য ঘরের মেয়ে বাড়িতে এসে হার মাস  জালিয়ে ,পুড়িয়ে, খাক করে দিল।  অলক্ষীও
বলল । লক্ষ্মীর আরাধনা হচ্ছে ঠিক, ঐদিনই রেখাকে  কিভাবে নানা কটু কথায় হেনস্থা করতে লাগল ।
তখন রেখা বলেছিল একটা কথা আপনি এভাবে অসভ্য মহিলা অসভ্য মহিলা বলবেন না খারাপ লাগে শুনতে ।এটা ঘুরিয়ে যদি আপনাকে বলা হয়।
 এই কথা নিয়ে শুরু হয়ে গেল অশান্তি ।ননদকে ফোন করে কাঁদতে কাঁদতে এত চিৎকার করে বলছেন। পাড়ার লোকও শুনতে পাচ্ছে আর তারপর শুরু হয়েছে রেখার নামে নানা ধরনের আজেবাজে কথা ।ভেবেই পেল না যে, সে কি কাজটা 
করেছে ?সে তো বাড়ির মঙ্গলের জন্য এসব করেছে।
 সে তখন বলল  'ঠিক আছে আমি মুছে দিচ্ছি সব ।তাতে তো আপনার শান্তি হবে ।আপনার বয়স হয়েছে এভাবে উত্তেজিত হবেন না। দরজা দিয়ে আসতে  যাচ্ছে এমন সময়জোরে দরজা ধাক্কা মারলো শাশুড়িমা। ভাগ্যিস রেখা হাত সরিয়ে নিয়েছিল। সরিয়ে না নিলে রেখার হাত কেটে বাদ হয়ে যেত।
মনোজ প্রচন্ড অশান্তি শুরু করল রেখার সাথে ।
রেখাভেবে পায় না যে তার দোষটা কোথায়? সে কি 
করেছে ?আসলে রেখার জীবনের প্রাপ্তি এটা নয় ।রেখা ভাবে সে চূড়ান্ত ভুল করেছে এই পরিবারে বিয়ে করে এসে। তার মনের প্রশান্তির সে কখনো খোঁজ পায় নি ।যখন স্বামীর কাছ থেকে একটু ভালোবাসা পেতে শুরু করেছে ।ঠিক তখনই দেখা গেছে কোন না কোন  কারনে মনোজের বুনোরাগ হঠাৎ করে এসে হাজির হয়ে সবকিছু লন্ডভন্ড করে দিয়েছে ।রেখার জীবনে আজও ঠিক তাই 
হলো ।রেখার দু-চোখে শুধু জল গড়িয়ে পড়তে লাগল।

কবি শিবনাথ মণ্ডল এর কবিতা




শিক্ষার অবদান
 শিবনাথ মণ্ডল


ওই দেখ মা ছেলে মেয়ে
যাচ্ছে বিদ‍্যালয়ে
শ্রেণী কক্ষে ঢুকবে সবাই 
জাতীয় সঙ্গীত  গেয়ে।
মাগো আমি স্কুলে যাব
দাওনা ভর্তিকরে
ছুটি হলেই তোমার কোলে
আসবো আমি ফিরে।
আমি যখন বাড়ি ফিরব
ব‍্যাগটি কাঁধে করে
তুমি তখন দাঁড়িয়ে থেকো
ওই রাস্তার ধারে।
লেখাপড়ার বিকল্প নেই মা
এই বিশ্বের মাঝে
ছোটো থেকে বড় হওয়ার
একটায় সুযোগ আছে।
মা বলে সোনাছেলে আমার
দারুণ শিক্ষা দিলে
সব মায়েদের কোলে যেন
আসে এমন ছেলে।।

কবি পারভীন শীলা'র কবিতা




আজও খুঁজে ফিরি 
পারভীন শীলা 

এখনো এইখানে অনেক কিছু আছে তুমি ছাড়া।
রৌদ্রছায়া_নীলাভ আকাশ_মস্ত বড়ো ময়দান, 
ফলবতী বৃক্ষ_উঁচু পাহাড়_সুউচ্চ মিনার-মন্দির,
রাত্রি -দিন_ চিন্তার আবেগ_ স্বপ্নের সোপান_ সব আছে_শুধু তুমি নেই!
তবুও তোমাকেই যেন খুঁজে ফিরি মিলনেই।

কত সাম্রাজ্য ভেঙে গেছে
কত উত্থান-পতন হয়েছে সমাজের
কত নীল-নীলান্ঞ্জনা এসেছে সবুজের মাঠে
কত পানকৌড়ি পড়েছে বিলের ধারে
আবার ফিরে গেছে দেহ নিয়ে তারা
প্রেম বিরহ তখনও ছিলো এখনো আছে ঢের,
তারপরও তোমাকেই যেন খুঁজে ফিরি 
আমি-আমরা_এই রৌদ্রছায়ার উপর ফের।

কবি নীলাঞ্জন কুমার এর কবিতা




জেল্লা জমক 

নীলাঞ্জন কুমার 


দেখে শুনে তন্ময় আছি জেল্লা জমকে, 
কোথা থেকে চিত্রকাব্য হয়ে যায় ।
তাকে নিয়ে পণ্য করে অসহ্য সময় । 
তুমি আমি তো তাতেই মশগুল ।


সুন্দর-ই মুখ্য । বাকি সব হাস্যকর ।
হিসেবী উচ্চারণে  তখন হাজারো ওলটপালট ।


জমকালো সবকিছু শুধু চোখে । ক্ষণিকের ।

শামীমা আহমেদ এর ধারাবাহিক উপন্যাস ৫৭





শায়লা শিহাব কথন 
অলিখিত শর্ত 
(পর্ব ৫৭)
শামীমা আহমেদ 

আরাফের ক্রমাগত বাবা বাবা  ডাকেও শিহাবএকেবারেই নিরুত্তর ও নির্জীব হয়ে রইল।রিশতিনা একদৃষ্টে শিহাবের দিকে তাকিয়ে রইল।শিহাব দেখতে আগেরমত তেমনি সুন্দর আছে। আজ প্রায় চার বছর পর সে শিহাবকে দেখছে।এর মাঝে কোনদিনও আর এক মূহুর্তের জন্য তাদের দেখা বা কথা হয়নি।রিশতিনার চোখ দিয়ে অঝোর ধারায় কান্না নেমে আসছে। 
বাবা বাবা ডেকে ডেকে  আরাফ একটু একটু করে বিছানার কিনারায়  চলে এলো। যে কোন মুহুর্তে সে একটা দূর্ঘটনা ঘটিয়ে ফেলবে।এই দৃশ্যে  শিহাব যেন  হুশে ফিরে এলো।শিহাব দৌড়ে গিয়ে আরাফকে বুকে জড়িয়ে নিলো।
প্রচন্ড ভয় পেয়েছে সে! আরাফ বাবার বুকে একেবারে খাঁমচে ধরে মিশে রইল। শিহাব যেন প্রাণ ফিরে পেলো।সারাটা সপ্তাহ সে ছেলেটাকে না দেখে থাকে। এমনকি ফোনেও কথা কম বলে। আরাফের মুখে বাবা ডাক শুনলে সে নিযেকে স্থির রাখতে পারেনা। আর মা হয়ে চার চারটি বছর পর আজ সন্তানকে দেখতে আসা? মায়ের অধিকার নিয়ে কথা বলা। যেখানে আবার  আরেকজনের সাথে  নতুন সংসার করছে
সেখানে আরাফকে ছেলের দাবী নিয়ে কেন আসা? আর স্বামীর প্রতি কি এমন দ্বায়িত্ব সে দেখিয়েছে। সে লন্ডনে যেতে না চাইলে কেউ কি তাকে জোর করে নিতে পারতো ?  শিহাবের ভেতরে এতদিনের যত ক্ষোভ রাগ আর অভিমান একসাথে হয়ে রিশতিনার প্রতি তা ঘৃণা হয়ে বেরিয়ে এলো।
রিশতিনা চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়ে শিহাবের
খুব কাছে এসে দাঁড়িয়েছে।  শিহাব তা বুঝতে পেরে এক ঝটকায় দূরে সরে গেলো। আর বেশ স্পষ্ট করে  বলতে থাকলো,না আরাফ আমার সন্তান।শুধু আমার সন্তান। তুমি ওর কেউ না।আমি আরাফের বাবা।
রিশতিনা বলে চললো, শিহাব তুমি আমার সম্পর্কে ভুল জেনেছো।আমি কাউকে বিয়ে করিনি।বাবা শত চেষ্টা করেও আমাকে দ্বিতীয় বিয়ে করাতে পারেনি। আমি বাবাকে শুধু পড়াশুনার দোহাই দিয়ে বিয়ে  ঠেকিয়েছি।
তাদের নজরদারীর ভিতরেও আমি শুধুই তোমার কথাই ভেবেছি।
রিশতিনার কোন কথাই শিহাব যেন শুনছে না।বিশ্বাস করতে চাইছে না। রিশতিনা অবিরল ধারায় কেঁদেই চলেছে।
বলেই চলেছে, শিহাব তোমাকে আমি একদিনের জন্যও ভুলিনি। তোমার আমার জীবনে যা ঘটেছে তা আমার বাবার জন্যই হয়েছে।আজতো সে  আর বেঁচে নেই। তাইতো আমার সংসারে আমি ফিরে এসেছি।
রিশতিনার সাথে ঘটে যাওয়া প্রতিটি ঘটনা শিহাবকে তিলে তিলে কষ্ট  দিয়েছে।  কত কত রাত সে একা একা কেঁদেছে। ছোট্ট শিশুটি মেয়ের দুধ বঞ্চিত হয়েছে।বন্ধুবান্ধব, আত্মীয় স্বজনদের কাছে তাদের পরিবারকে ছোট হতে হয়েছে।তবুও সেইসব দুঃসহ স্মৃতি নিয়েই সে একরকম মৃতপ্রায় জীবন কাটিয়েছে।সে আর সেইসব দুঃসহ স্মৃতিতে  ফিরে যেতে চায় না। রিশতিনার পারিবারিক মর্যাদা  তাদের চেয়ে অনেক উচ্চে।তার বাবা ব্যারিস্টার ছিল।ভীষণ  অহংকারী  এবং ক্ষমতার দাপুটে ব্যক্তি বারংবার শিহাবদের পরিবারকে অপমান করেছে। শিহাব ভেবে নিলো,রিশতিনাকেও তাদের সেই পারিবারিক  অবস্থানেই থাকতে হবে।শিহাব আর পিছনে ফিরে তাকাতে চায় না। বাবা মাকে এই শেষ বয়সে সে আর আহত করতে চায়না।
শিহাবের জীবন আজ অন্য ধারায় বয়ে গেছে।তার জীবনে শায়লা এসেছে। শায়লাই হবে আরাফের মা।শিহাব রিশতিনাকে ফিরে যেতে বললো।  
রিশতিনা তুমি তোমার মৃত বাবার ইচ্ছে পূরণ করে তার আত্মার শান্তি দাও। তোমাদের পরিবারে ফিরে যাও।
---আর আমার জীবনের শান্তি?রিশতিনার পালটা প্রশ্ন।
সে তুমি তোমার মত করে খুঁজে নাও।বারবার তুমি আমার জীবনটাকে এলোমেলো করে দিও না। আমি জীবনে খুব গোছানো মানুষ  ।তুমি  বারবার তা তছনছ করোনা।
রিশতিনাকে হারিয়ে শিহাব যতটা কাতর ছিল শায়লাকে পেয়ে আজ যেন ততটাই দৃঢ় হয়েছে।কিছুতেই সে আর পিছু ফিরবে না। রিশতিনাকেও  সে আর কোন বাঁধনে বাঁধবে  না।
রিশতিনা শিহাবের হাত ধরতে চাইলে শিহাব তা হতে দিলো না। রিশতিনা ভীষণ অবাক হয়ে শিহাবের দিকে তাকালো।
টেবিলের উপর রাখা রিশতিনার হ্যান্ডব্যাগে মোবাইল বেজেই যাচ্ছে। রিশতিনা তা রিসিভ করছে না। শিহাবের কাছে তার কোন আকুতিই যেন খাটছে না।
রিশতিনা এই ভেবে ভীষণ অবাক হচ্ছে এমন করে শিহাব তাকে ভুলে গেছে!সরিয়ে দিতে চাইছে! অনেক আশা নিয়ে সে আজ এসেছিল। 
শিহাব তার অবস্থানে স্থির রইল। সে এখন বেশ বুঝতে পারছে কেন বাড়িতে প্রতিটা মানুষ এমন থমথমে ভাব নিয়ে ছিল।ভাবী এত আতংকিত ছিল।
রিশতিনা ফোনের দিকে এগিয়ে গেলো।
হ্যান্ডব্যাগটির পাশে আজো শিহাব আর রিশতিনার বিয়ের দিনের ছবিটির ফটোফ্রেম রাখা।  রিশতিনা ফ্রেমটি হাতে তুলে নিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়লো। সেই দিনের সেই আবেগের মূহুর্তের ছবিটি আজ কতটাইনা মিথ্যা হয়ে গেলো।শিহাব অনেক বদলে গেছে।আর ভাবলো,যাবেই তো আমি তো তাকে অনেক কষ্ট দিয়েছি। 
রিশতিনা ব্যাগ থেকে মোবাইল বের করলো।রিশতিনার মায়ের ফোন।মেয়েকে বাসায় না পেয়ে ফোনে খোঁজ করছেন।রিশতিনার অভিব্যক্তিতে বুঝা গেলো ওপাশ থেকে মায়ের  বেশ বকাঝকাই হচ্ছে। রিশতিনা চুপ করে সবটা শুনে নিলো। শুধু বললো, আচ্ছা। 
রিশতিনা এখন ভেবে নিলো , রোমেল ভাইয়ার কাছে তাহলে যা শুনেছে সেটাই ঠিক। শিহাব এখন অন্য একজনকে ভালোবাসে। রোমেল ভাইয়ার এমন খবরের সত্যতা পেতেই রিশতিনার ছুটে আসা।তবে সে কোনদিনই ভাবেনি শিহাব তাকে ফিরিয়ে দিবে। সন্তান রেখে কত মায়েরাইতো আজকাল চাকরীর জন্য,উচ্চশিক্ষার জন্য দেশের বাইরে যায়, তাতে কি সন্তানের অধিকার হারায়? তবে রিশতিনার যাওয়াটাতো সেরকম সহজ কিছু ছিল না। অমন দুধের শিশুকে সে ছেড়ে গেছে এটাতো তার বিরাট অন্যায় হয়েছে। রিশতিনার সব ক্ষোভ গিয়ে পড়ে তার বাবার উপর।এখন মাও তাকে রেহাই দিচ্ছে না। রিশতিনা এটাও ভাবে শিহাব যদি তাকে সেদিন জোর করে ছিনিয়ে আনতো, তবে তো আজ তাদের জীবন অন্যরকম হতো। 
আরাফ ভীষণ ভয় পেয়েছে।! যদিও অনেক খেলনা পেয়ে আর রিশতিনেকে মা জেনে সে খুব খুশি হয়েছিলো কিন্তু হঠাৎ করে অজানা একজন মানুষ এসেছে  যাকে মা ডাকতে হয়েছে আবার  তার সাথে বাবার ঝগড়াও হচ্ছে! এসব ভেবে আরাফ ভয়ে একেবারে শক্ত হয়ে বাবার পিঠে পড়ে আছে। সে এখন তার চাচী আর দাদীর কাছে যেতে চাইছে।সে ভাবছে, এতদিনতো তাদের কাছে আমি ভালোই ছিলাম।শিশুমন কখনোই বাবামায়ের কলহ মেনে নিতে পারে না।বাবা মায়ের মাঝে বৈরীভাবে সন্তানেরা নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে।
শিহাবের ভাবী সুমাইয়া উপরে চলে এলো। আজ সকালে হঠাৎই রিশতিনার আগমনে সেও ভীষণ চমকে গেছে! ওদিকে শিহাব আসতে চাইছে শায়লাকে নিয়ে, সে আগেই বুঝেছিল এমন একটা  পরিস্থিতি হতে পারে।সুমাইয়া দরজায় আসতেই আরাফ বাবার কোল থেকে তার দিকে হাত বাড়িয়ে যেতে চাইছে। বুঝ হওয়ার পর থেকে আরাফ যাকে মা বলে জেনে এসেছে সে তো সুমাইয়াই।সুমাইয়ারও আরাফের জন্য বুকটা খাঁ খাঁ করছে। সে দ্রুত গিয়ে শিহাবের কাছ থেকে আরাফকে রীতিমতো ছিনিয়ে নিলো। আরাফ সুমাইয়ার কোলে গিয়ে শুধু দাদীর ঘর দেখাচ্ছে। সে দাদু দাদু বলছে।সুমাইয়া শিহাবের কাছে জানতে চাইলো, শিহাব তুমি কি সিদ্ধান্ত নিয়েছো? সন্তান তোমাদের। আমিতো নিয়ে যেতে পারি না।

এবার, রিশতিনা এগিয়ে এলো, বেশ অপরাধীর মত বললো, ভাবী,মা হয়েও আমি নিজ সন্তানকে ফেলে গেছি।কেন কোন কার্যকারণে, কার চাপে সবই আপনাদের জানা। আর আজ যখন সব পিছে ফেলে আবার আমি তোমাদের কাছে ছুটে এলাম, তোমরা আমাকে ফিরিয়ে দিলে।ভালোই হলো।আমার নিজের দোষ আমি কাটিয়ে গেলাম। আমার সন্তানের নাম আরাফ,,সেটাও আমার অজানা ছিল,আজ জানলাম। তুমিই ওকে মায়ের আদরে বড় করেছো।আমার স্বামীর প্রতিও আমি দায়িত্ব পালন করিনি,কোন অধিকারেই আমি তোমাদের কাছে গ্রহনযোগ্য নই।আর যার কাছে অধিকার ছিল সেও বদলে গেছে। সে আজ অন্য কারো হয়ে গেছে। আমার যা হারাবার তা হারিয়ে গেছে। আমার বাবা 
আর মায়ের ইচ্ছা পূরনেই আমার জীবনকে উৎসর্গ করে যাবো। তবে মনে এতদিন এটাই শান্তি ছিল যে, ভাবী, তুমি আরাফকে মায়ের আদরে বড় করছো। তবে  আজ অন্য কেউ আরাফের মা হতে চাইছে তাই খুবউ উৎকন্ঠা নিয়ে  যাচ্ছি। অন্য একজন কেউ কি  আরাফের সত্যিকারের মা হয়ে উঠতে পারবে? তবে মনে হচ্ছে তার মনে অনেক শক্তি নয়তো কেমন করে সে শিহাবের মন থেকে আমাকে একেবারে মুছে দিয়েছে।
ভাবী তোমরা ভালো থেকো।আমার ছেলে বড় হয়ে নিশ্চয়ই কোন একদিন তার জন্মদাত্রী মায়ের খোঁজ করবে আর নাড়ীর টানে তার কাছে পৌঁছে যাবে। কথাগুলো বলেই, রিশতিনা হ্যান্ডব্যাগটি হাতে নিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো। যাবার আগে আরাফকে ছুয়ে দেখতে চাইলেও তা যেন ভবিষ্যতের জন্যই জমা রাখলো। চোখে মুখে একটা সোনালী দিনের স্বপ্ন নিয়ে রিশতিনা ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো। আরাফ  ছোট্ট ভীত পাখির ছানার মত চাচীর বুকে একেবারে যেন মিশে রইল।
সুমাইয়া শিহাবের পিঠে হাত রাখল।শিহাব ঝরঝর করে কেঁদে ফেললো। শিহাব এতক্ষন যা করেছে সবই এতদিনের জমানো রাগ অভিমানেরই বহিঃপ্রকাশ!  রিশতিনাকে শিহাব কতটা ভালোবাসতো সেতো ভাবীর চেয়ে বেশি কেউ জানতো না। সুমাইয়ারও চোখ ভিজে উঠলো।শিহাব তার দেবর হলেও সে তাকে একেবারে নিজের ভাইয়ের মতই দেখে। রিশতিনাকে নিয়ে শিহাবের এমন কোন কথা সুমাইয়াকে বলেনি তা হয়নি।
সুমাইয়া বেশ বুঝতে পারলো শিহাব কতটা কষ্টে দিনে দিনে এমন পাথর হয়েছে। যেভাবেই হউক শিহাব নিজে থেকে একটা সিদ্ধান্তে এসেছে এটাতেই সুমাইয়ার স্বস্তি! সে শিহাব আর আরাফকে তার শ্বাশুড়ির ঘরে এগিয়ে নিলো। শিহাব বুঝতে পারছে না, সে কি কাজটি ঠিক করলো কিনা? রিশতিনার জন্য তার ভেতরে দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে। শিহাব ধীর পায়ে সুমাইয়াকে অনুসরণ করে মায়ের ঘরের দিকে পা বাড়ালো।
যদিও শিহাবের মা বেশ শক্ত করে শায়লার হাতটি ধরে ছিলো  তবুও  অনেকক্ষন শিহাবের দেখা না পেয়ে শায়লা বারবার ভীত হরিণীর মত দরজার দিকে চোখ ফেলছিল।
চলবে.....

মনি জামান এর ধারাবাহিক উপন্যাস পর্ব৭

ধারাবাহিক উপন্যাস




সেদিন গোধূলি সন্ধ্যা ছিলো
( ৭ ম পর্ব ) 
মনি জামান



ভবদা গ্রামের এক দিনমুজুর শওকত আলির তিন মেয়ের ভিতর আসমা সবার বড়,আসমার দুচোখ ভরা ছিল স্বপ্ন আর দশটা মেয়ের মত।আসমার স্বপ্ন সে লেখা পড়া শিখে একদিন অনেক বড় হবে যদিও বাবা শওকত আলি গরীব দিনমজুর একজন কৃষক তবুও আসমা এই স্বপ্নটাই দেখতো রাতদিন।একদিন সে বড় ডাক্তার বা ইঞ্জিয়ার হয়ে বাবা মাকে সাহায্য করবে কারণ আসমা খুব মেধাবী একজন মেয়ে,
ছোট বোন দু'টোকে লেখা পড়া শিখাবে মানুষের মত মানুষ করে গড়ে তুলবে।আসমা মা বাবার বড় সন্তান ওর কোন ভাই  ছিলনা তাই দায়িত্ব বোধটা ওর ভিতর বেশি কাজ করতো।
ভবদা গ্রামের দরিদ্র দিনমজুর শওকত আলি দিনমুজুরের কাজ করতো তারপরও মেয়ের পড়ালেখার খরচের জন্য কখনো কোন সময় কার্পণ্য করেনি,ধার দেনা করে হলেও খরচ ঠিক যোগান দিত।
আসমা যেমন সুন্দরি তেমনি বুদ্ধিমতি সে খুব মেধাবি একজন ছাত্রী ছিলো স্কুলের,মাস্টারা আসমার প্রসংশায় পঞ্চমুখ ছিলো,আসমা এস এস সিতে গোল্ডেন প্লাস পেয়ে পাশ করে ভবদা গ্রামের সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলো,সবাই প্রসংশায় ভাসিয়েছে হতদরিদ্র বাবা শওকত আলিকে।
পাশ করার পর আসমা ভবদা কলেজে আই এ প্রথম বর্ষে ভর্তি হয়েছিলো,আসমা দেখতে এতটাই সুন্দরী ছিল যে প্রবাদে আছে গবরে পুষ্প জন্মে ঠিক এমন একটা মেয়ে সে,যেমন রূপ তেমনি গুন আচার আচারণ ও কথাবার্তায় অসাধারণ সদা হাস্যজ্জ্বল।
পাড়ার ছেলেরা আসমাকে খুব বিরক্ত করত আসমা কাউকে শক্ত কথা না বলে তাদের ডেকে সুন্দর করে বুঝিয়ে  পড়ালেখার প্রতি উৎসাহ দিতো এ কারণে আসমা খুব প্রিয় ছিল ভবদা গ্রামের সকল শ্রেণীর সকল মানুষের কাছে।
পাড়ায় কারো বিপদ শুনলে ছুটে যেত এবং সাহার্য করতো,পাড়ায় পাড়ায় গিয়ে অশিক্ষিত চাচা চাচীদের স্বাস্থ্য সম্পর্কে ও বাচ্চাদের লেখাপড়ার জন্য পরামর্শ দিতো এ কারণে গ্রামের সবাই আসমাকে খুব ভালোবাসত এবং পরস্পর বলা বলি করতো গোবরে পুষ্প জন্মেছে শওকাত আলির ঘরে,তারা আরো বলতো এমন মেয়ে যদি আমাদের ঘরে জন্ম হত।
আসমা লেখাপড়ার প্রতি এতোটাই মনোযোগী যে একদিনের জন্য হলেও কলেজের ক্লাশ কোনদিন মিস করেনি সে নিয়মিত কলেজ করতো,যে রাস্তা দিয়ে আসমা কলেজে আসা যাওয়া করতো ঐ রাস্তার পাশে করিম সাহেবের তিনতালা বাড়ি,করিম সাহেব ভবদা গ্রামের ঐতিহ্যবাহি নাম করা মানুষ ছিলেন উচ্চ শিক্ষিত অর্থে বৃত্তে শিক্ষা দীক্ষায় সব দিক থেকে সবাই করিম সাহেব ও তার পরিবারকে সম্মান করত।
করিম সাহেবের তিন ছেলে বড় ছেলে আমেরিকা পরবাসি,মেজ ছেলে ব্যাংকে চাকরি করে ঢাকাতে আর ছোট ছেলে জিকু ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে শেষ বর্ষের ফাইনাল ইয়ারের ছাত্র।আসমা একদিন কলেজে যাবার পথে,করিম সাহেবের ছোট ছেলে জিকুর সাথে আসমার প্রথম দেখা হয়,আসমাকে দেখে জিকু অবাক হয়ে যায় গ্রামে এত সুন্দর মেয়ে,প্রথম দেখাই জিকুর এতটাই ভালো লাগলো যে আসমাকে ডেকে পরিচয় জেনে নিলো।
এর পর থেকে জিকু প্রায় কলেজে যাবার রাস্তায় আসমাকে ডেকে কথা বলতো,কারণ জিকুর খুব পছন্দের মেয়ে ছিল আসমা এভাবে দুজনের পরিচয় আর প্রায় দুজনের মধ্য কথা হত।কথা বলতে বলতে ধীরে ধীরে দুজন দুজনের প্রতি দুর্বল হতে শুরু করলো অতঃপর প্রেমে জড়িয়ে পড়লো।
আসমার খুব ভাল লাগলো জিকুকে কারণ জিকু যেমন সুন্দর তেমনি সুদর্শন আর ভদ্র ছেলে,জিকু ও আসমাকে তার দেখা শ্রেষ্ঠ সুন্দর একটা মেয়ে হিসেবে পছন্দ করলো।প্রেম বোধহয় এমনই যে ধীরে ধীরে আসমার দুচোখে স্বপ্নের প্রজাপতিরা এসে ভিড় করতে শুরু করলো,আসমার ভাবনা চিন্তায় এখন জিকু ছাড়া কিছু ভাবতে পারে না,আসমা মাঝে মাঝে কেমন যেন আনমনা হয়ে যেতো জিকুর ভাবনায়।
এভাবে দিন যায় দিন আসে সময় যেতে শুরু করলো,আসমাকে জিকুর ভালোবাসা এতোটাই আলোড়িত করলো যে ভালো লাগার ভালবাসার মানুষটার সানিধ্য পেতে আসমা ব্যাকুল হয়ে থাকতো,জিকু আসমাকে তার ভালবাসার কথা স্বপ্নের কথা এমন ভাবে বলতো শুনে আসমা মনে মনে আগামীর স্বপ্নে বিভোর হয়ে যেত।জিকু আসমাকে একদিন বিয়ের কথা বলল,আসমাঃ এটা কি কখনো সম্ভব তোমার সাথে আমার বিয়ে,
জিকুঃ কেন সম্ভব নয় আসমা!
আসমাঃ আমার বাবা খুব গরীব মানুষ সেখানে তোমরা কত বড়লোক,তোমার পরিবার কি এ বিয়ে মেনে নেবে?
জিকু আসমাকে নির্ভয় দিয়ে আশ্বাস দিয়ে বললঃ মেনে না নিলে প্রয়োজনে তোমাকে নিয়ে আমি বাড়ি ছাড়বো এবং একটা জব করবো তবুও তোমাকে হারাতে চাইনা আমি,তোমাকে যে আমি অনেক ভালোবাসি।
এই পর্যান্ত বলে নিলয় একটু বিরতি নিয়ে থামলো,
মেবিনঃ তারপর কি হল বলো,
নিলয়ঃ তারপর ভবদা গ্রামের সবাই জেনে গেল আসমা আর জিকুর প্রেমের কথা,
আসমা জিকুর প্রেমের কথা জিকুর পরিবার ও যখন জানতে পারে তখন জিকুকে প্রচণ্ড চাপ দিতে শুরু করলো, জিকুর মা এবং পরিবারের সবাই মিলে তবুুও জিকু অনড় সে আসমাকে ছাড়া অন্য কোন মেয়েকে বিয়ে করবে না।
জিকুর মা খুব অহঙ্কারি আর গরীব বিদ্বেষী লোভী একজন মহিলা ছিলো,সে গরিবের মেয়ে আসমাকে কোন মতে মেনে নিতে রাজি নয়,তাই ছেলে জিকুকে ডেকে সাফ জানিয়ে দিল তুমি যদি ঐ মেয়েকে বিয়ে কর তাহলে তোমার এ বাড়িতে জায়গা হবে না তোমাকে বাড়ি ছাড়তে হবে এবার ভেবে দেখ কি করবে তুমি।
জিকু মায়ের কথা শুনার পর মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়ে নিল সে চাকরি করবে ছোট চাকরি হলেও তারপর জিকু চাকরি খুঁতে শুরু করলো অবশেষে একটা প্রাইভেট কোম্পানির চাকরি পেলো জিকু পেয়েই চাকরির খবরটা আসমাকে জানালো এবং আসমাকে দেখা করতে বললো।
আসমা জিকুর সাথে দেখা করলো দু'জনে কথা বললো তারপর সিদ্ধান্ত নিয়ে নিল বিয়ে করবে,জিকু আসমাকে সাথে করে নিয়ে গেলো ভবদা কাজী অফিসে,আগেই সেখানে উপস্থিত ছিল বন্ধু ফিরোজ। 
বন্ধু ফিরোজের সাক্ষী করে তারপর জিকু আসমা দুজনে কবুল পড়ে বিয়ে রেজিস্টার করল কাজী অফিসে বসে।
বিয়ের পর জিকুর বন্ধু সাংবাদিক ফিরোজ
জিকুকে দশহাজার টাকা ধার দিলো,জিকু
টাকা নিয়ে ফিরোজকে বললো আমি আসমাকে নিয়ে কুমিল্লায় যাচ্ছি তুই কাউকে বলিস না আর দরকার পড়লে তোর সাথে যোগাযোগ করবো বলে আসমাকে সাথে নিয়ে কুমিল্লা কর্মস্থলের উদ্দেশ্য রওনা হলো।
জিকু চাকরি পেয়ে কুমিল্লায় আগেই একটা বাসা ভাড়া করে রেখেছিল সেই বাসায় আসমাকে নিয়ে উঠলো,তারপর আনুষঙ্গিক সংসারের জিনিশ পত্র কিনে নতুন জীবন শুরু করল।
জিকু আসমাকে একান্ত স্ত্রী হিসেবে পেয়ে নিজেকে ধন্য মনে করলো,একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধা আর ভালবাসার বন্ধন আসমা আর জিকুকে যেন শক্ত করে বেধে দিল।
জিকু অফিসে যখন যেতো আসমা স্বামী জিকুর জন্য নিজ হাতে দুপুরের খাবার বানিয়ে হটপটে সুন্দর করে গুছিয়ে দিতো,জিকু আসমাকে পেয়ে এতোটাই খুশি ছিলো আসমা জিকুর কলিজাতে রূপান্তরিত হয়ে গেছে,আসমা ছাড়া জিকু কিছুই ভাবতে পারতো না।
জিকুকে পেয়ে আসমার ভালবাসা আজ যেন পূর্ণতা পেয়েছে,স্বপ্ন সুখ গুলো যেন মুঠো মুঠো হাতে এসে যেন ধরা দিয়েছে।
জিকু আসমাকে কতটা ভালবাসে আসমা সেটা আজ মর্মে মর্মে অনুভব করতে পারছে,গরিব বাবার মেয়ে সে কখনো ভাবেনি তার কল্পিত সুখ গুলো একদিন সে এমন করে বাস্তবে স্পর্শ করতে পারবে।
চলবে...

কবি শিল্পা ম্যাক এর কবিতা





একা
শিল্পা ম্যাক

অবশেষে মানুষ জেনেছে
 অনেক ভিড়েও মানুষ একা
কেউ কেউ খুব একা
নিরাকার অন্ধকারের মতো
বিধবার হাহাকারের মতো
দূর আকাশের উড়ন্ত চিলের মতো
অমাবস্যার দ্বিপ্রহরে করুণ সুরে ডাকা কুকুরের কান্নার মতো
ঝুম দুপুরের নির্জনতার মতো
ভরা পূর্ণিমায় উছলে পড়া 
জোছনার মতো
কুয়াশা ভেজা ঘাসের ডগায়
এক বিন্দু শিশিরের মতো
নিঃসঙ্গতায় ছেয়ে থাকা হলদে রঙের 
পড়ন্ত বিকালের মতো
সন্ধ্যা নামার মুখে পশ্চিমের আকাশে
হেলে পড়া ডুবন্ত সূর্যের মতো
ঘোর নিশিতে নিয়ন আলোয় 
ঠায় দাঁড়ানো অসহায় ল্যাম্প পোষ্টের মতো
কেউ কেউ খুব একা
বুকের মধ্যে না বলা কষ্টের মতো 
একলা একা
ভীষণ একা ।

কবি হা‌বিবুর রহমান হা‌বিব'র কবিতা                   




দ্বীপ জ্বে‌লে                                    
হা‌বিবুর রহমান হা‌বিব                       


জীবন যন্ত্রণার আ‌বেশ আমার ছিল ভূবন ভরা,                   
তু‌মি ডে‌কে ছি‌লে আর ডে‌কো না।                                       
চ‌লে যাব বহু দূ‌রে রেখ না স্মৃ‌তি আর,                                      
নি‌ভির আঁধা‌রে একা ফে‌ল না আঁ‌খি জল,                                
চির নেভা দ্বীপ আর জ্বে‌লো না,                                                   
মায়াময় যন্ত্রণার আ‌বেগ আর পর‌শে।                                  
অকার‌ণে বাড়া‌বে জা‌নি তোমার ব‌্যাথার মায়া,                       
দেখা হ‌বে না কোন নি‌ভির প্রান্ত‌রে,                                           
উজ্জল অনন্ত শিখা হৃদয় বৃ‌ন্তে তোমার,                                                   
বেদনার হা‌সির মায়ায় ছলনা রে‌খো না ম‌নে,                      
ফি‌রে চে‌য়েও না পিছু আর।               
জা‌নি ভুল‌তে পার‌বে না জীবন নদীর স্রো‌তে,                          
যে পথ চির‌চেনা গেলাম তা‌রে আজ ভু‌লে।                           
নিঃশ্বা‌সে ভিল না বিষ বিশ্বাস ছিল বহু দূর,                      
তীর বৃদ্ধ জীবন অঙ্কু‌রে আমার ক্ষয়,                                   
সন্ধ‌্যা তারার ম‌তো এ‌সে‌ছিলাম,                                      
নি‌ভে গেলাম রা‌তের আঁধা‌রে,আঁধা‌রে ।

কবি বর্নালী সেনগুপ্ত'র কবিতা




উন্মোচন
 বর্নালী সেনগুপ্ত

উষ্ণতা দিয়ে মাপতে চাও পুরুষ,নারীত্বকে !
বেশ নগ্ন করে দিলাম
তোমার সামনে,
ওই দেখো তোমার জন্মস্থান,মাতৃযোনী।
দেখতে চাও পাহাড় কেমন উঁচু ?
উন্মুক্ত বক্ষে দন্ডায়মান 
তোমার সহোদরা,
দেখো,উপভোগ করো যতখুশি।
কেন নত তোমার মুখ?
যৌনতা পাচ্ছোনা বুঝি সুখ?
নানান বাহনায় হাত দাও ,বাসে ,ট্রেনে,
তবে? কিসের দ্বিধা ?
ধর্ষক না হলে পৌরুষের পরাজয় !
এইখানেই তোমার চিরকালের পরাজয়।
হায়,পুরুষ স্তন দেখলে,
দেখলেনা শিশুর প্রথম আহার !
যোনীকে মাপলে নীল ছবিতে,
তোমার জন্ম ওই গভীরতাতে !
ভুলে যাও কি অনায়াসে !
পুরুষ নামে নির্ভয়াদের ঘৃণা আসে।

কবি সজল কুমার মাইতি'র কবিতা





মায়ের  উষ্ণতা 

সজল কুমার মাইতি



একটি কুকুর 
                 তার চারটি ছানা 
নিত্য নতুন খেলা করে 
                   কেউ করেনা মানা।
মা তাদের আদর করে 
                       বুকের দুধে পালন করে 
হেথা হোথা ঘুরে বেড়ায় 
                     শাসন তাদের নেইকো জানা।
মাঠের কোনে গাছের তলায় 
                      মায়ের বুকে জড়িয়ে সবাই 
শীত গ্রীষ্মের বালাই নেই 
                      ঘুমের দেশে দেয় যে হানা।
সকাল সন্ধে স্বাস্থ্য খোঁজে 
                       মানুষজনের আনাগোনা 
লোভী মানুষ তাদের মাঝে 
                        উধাও করে একেক ছানা।
পাগল মা খুঁজে বেড়ায় 
                       মানুষ দেখলে কামড়ে তাড়ায়
মায়ের বুকে ওম খোঁজে 
                      একটি কেবল কুকুর ছানা।