০৪ ফেব্রুয়ারী ২০২২

মনি জামান এর ধারাবাহিক উপন্যাস পর্ব৭

ধারাবাহিক উপন্যাস




সেদিন গোধূলি সন্ধ্যা ছিলো
( ৭ ম পর্ব ) 
মনি জামান



ভবদা গ্রামের এক দিনমুজুর শওকত আলির তিন মেয়ের ভিতর আসমা সবার বড়,আসমার দুচোখ ভরা ছিল স্বপ্ন আর দশটা মেয়ের মত।আসমার স্বপ্ন সে লেখা পড়া শিখে একদিন অনেক বড় হবে যদিও বাবা শওকত আলি গরীব দিনমজুর একজন কৃষক তবুও আসমা এই স্বপ্নটাই দেখতো রাতদিন।একদিন সে বড় ডাক্তার বা ইঞ্জিয়ার হয়ে বাবা মাকে সাহায্য করবে কারণ আসমা খুব মেধাবী একজন মেয়ে,
ছোট বোন দু'টোকে লেখা পড়া শিখাবে মানুষের মত মানুষ করে গড়ে তুলবে।আসমা মা বাবার বড় সন্তান ওর কোন ভাই  ছিলনা তাই দায়িত্ব বোধটা ওর ভিতর বেশি কাজ করতো।
ভবদা গ্রামের দরিদ্র দিনমজুর শওকত আলি দিনমুজুরের কাজ করতো তারপরও মেয়ের পড়ালেখার খরচের জন্য কখনো কোন সময় কার্পণ্য করেনি,ধার দেনা করে হলেও খরচ ঠিক যোগান দিত।
আসমা যেমন সুন্দরি তেমনি বুদ্ধিমতি সে খুব মেধাবি একজন ছাত্রী ছিলো স্কুলের,মাস্টারা আসমার প্রসংশায় পঞ্চমুখ ছিলো,আসমা এস এস সিতে গোল্ডেন প্লাস পেয়ে পাশ করে ভবদা গ্রামের সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলো,সবাই প্রসংশায় ভাসিয়েছে হতদরিদ্র বাবা শওকত আলিকে।
পাশ করার পর আসমা ভবদা কলেজে আই এ প্রথম বর্ষে ভর্তি হয়েছিলো,আসমা দেখতে এতটাই সুন্দরী ছিল যে প্রবাদে আছে গবরে পুষ্প জন্মে ঠিক এমন একটা মেয়ে সে,যেমন রূপ তেমনি গুন আচার আচারণ ও কথাবার্তায় অসাধারণ সদা হাস্যজ্জ্বল।
পাড়ার ছেলেরা আসমাকে খুব বিরক্ত করত আসমা কাউকে শক্ত কথা না বলে তাদের ডেকে সুন্দর করে বুঝিয়ে  পড়ালেখার প্রতি উৎসাহ দিতো এ কারণে আসমা খুব প্রিয় ছিল ভবদা গ্রামের সকল শ্রেণীর সকল মানুষের কাছে।
পাড়ায় কারো বিপদ শুনলে ছুটে যেত এবং সাহার্য করতো,পাড়ায় পাড়ায় গিয়ে অশিক্ষিত চাচা চাচীদের স্বাস্থ্য সম্পর্কে ও বাচ্চাদের লেখাপড়ার জন্য পরামর্শ দিতো এ কারণে গ্রামের সবাই আসমাকে খুব ভালোবাসত এবং পরস্পর বলা বলি করতো গোবরে পুষ্প জন্মেছে শওকাত আলির ঘরে,তারা আরো বলতো এমন মেয়ে যদি আমাদের ঘরে জন্ম হত।
আসমা লেখাপড়ার প্রতি এতোটাই মনোযোগী যে একদিনের জন্য হলেও কলেজের ক্লাশ কোনদিন মিস করেনি সে নিয়মিত কলেজ করতো,যে রাস্তা দিয়ে আসমা কলেজে আসা যাওয়া করতো ঐ রাস্তার পাশে করিম সাহেবের তিনতালা বাড়ি,করিম সাহেব ভবদা গ্রামের ঐতিহ্যবাহি নাম করা মানুষ ছিলেন উচ্চ শিক্ষিত অর্থে বৃত্তে শিক্ষা দীক্ষায় সব দিক থেকে সবাই করিম সাহেব ও তার পরিবারকে সম্মান করত।
করিম সাহেবের তিন ছেলে বড় ছেলে আমেরিকা পরবাসি,মেজ ছেলে ব্যাংকে চাকরি করে ঢাকাতে আর ছোট ছেলে জিকু ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে শেষ বর্ষের ফাইনাল ইয়ারের ছাত্র।আসমা একদিন কলেজে যাবার পথে,করিম সাহেবের ছোট ছেলে জিকুর সাথে আসমার প্রথম দেখা হয়,আসমাকে দেখে জিকু অবাক হয়ে যায় গ্রামে এত সুন্দর মেয়ে,প্রথম দেখাই জিকুর এতটাই ভালো লাগলো যে আসমাকে ডেকে পরিচয় জেনে নিলো।
এর পর থেকে জিকু প্রায় কলেজে যাবার রাস্তায় আসমাকে ডেকে কথা বলতো,কারণ জিকুর খুব পছন্দের মেয়ে ছিল আসমা এভাবে দুজনের পরিচয় আর প্রায় দুজনের মধ্য কথা হত।কথা বলতে বলতে ধীরে ধীরে দুজন দুজনের প্রতি দুর্বল হতে শুরু করলো অতঃপর প্রেমে জড়িয়ে পড়লো।
আসমার খুব ভাল লাগলো জিকুকে কারণ জিকু যেমন সুন্দর তেমনি সুদর্শন আর ভদ্র ছেলে,জিকু ও আসমাকে তার দেখা শ্রেষ্ঠ সুন্দর একটা মেয়ে হিসেবে পছন্দ করলো।প্রেম বোধহয় এমনই যে ধীরে ধীরে আসমার দুচোখে স্বপ্নের প্রজাপতিরা এসে ভিড় করতে শুরু করলো,আসমার ভাবনা চিন্তায় এখন জিকু ছাড়া কিছু ভাবতে পারে না,আসমা মাঝে মাঝে কেমন যেন আনমনা হয়ে যেতো জিকুর ভাবনায়।
এভাবে দিন যায় দিন আসে সময় যেতে শুরু করলো,আসমাকে জিকুর ভালোবাসা এতোটাই আলোড়িত করলো যে ভালো লাগার ভালবাসার মানুষটার সানিধ্য পেতে আসমা ব্যাকুল হয়ে থাকতো,জিকু আসমাকে তার ভালবাসার কথা স্বপ্নের কথা এমন ভাবে বলতো শুনে আসমা মনে মনে আগামীর স্বপ্নে বিভোর হয়ে যেত।জিকু আসমাকে একদিন বিয়ের কথা বলল,আসমাঃ এটা কি কখনো সম্ভব তোমার সাথে আমার বিয়ে,
জিকুঃ কেন সম্ভব নয় আসমা!
আসমাঃ আমার বাবা খুব গরীব মানুষ সেখানে তোমরা কত বড়লোক,তোমার পরিবার কি এ বিয়ে মেনে নেবে?
জিকু আসমাকে নির্ভয় দিয়ে আশ্বাস দিয়ে বললঃ মেনে না নিলে প্রয়োজনে তোমাকে নিয়ে আমি বাড়ি ছাড়বো এবং একটা জব করবো তবুও তোমাকে হারাতে চাইনা আমি,তোমাকে যে আমি অনেক ভালোবাসি।
এই পর্যান্ত বলে নিলয় একটু বিরতি নিয়ে থামলো,
মেবিনঃ তারপর কি হল বলো,
নিলয়ঃ তারপর ভবদা গ্রামের সবাই জেনে গেল আসমা আর জিকুর প্রেমের কথা,
আসমা জিকুর প্রেমের কথা জিকুর পরিবার ও যখন জানতে পারে তখন জিকুকে প্রচণ্ড চাপ দিতে শুরু করলো, জিকুর মা এবং পরিবারের সবাই মিলে তবুুও জিকু অনড় সে আসমাকে ছাড়া অন্য কোন মেয়েকে বিয়ে করবে না।
জিকুর মা খুব অহঙ্কারি আর গরীব বিদ্বেষী লোভী একজন মহিলা ছিলো,সে গরিবের মেয়ে আসমাকে কোন মতে মেনে নিতে রাজি নয়,তাই ছেলে জিকুকে ডেকে সাফ জানিয়ে দিল তুমি যদি ঐ মেয়েকে বিয়ে কর তাহলে তোমার এ বাড়িতে জায়গা হবে না তোমাকে বাড়ি ছাড়তে হবে এবার ভেবে দেখ কি করবে তুমি।
জিকু মায়ের কথা শুনার পর মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়ে নিল সে চাকরি করবে ছোট চাকরি হলেও তারপর জিকু চাকরি খুঁতে শুরু করলো অবশেষে একটা প্রাইভেট কোম্পানির চাকরি পেলো জিকু পেয়েই চাকরির খবরটা আসমাকে জানালো এবং আসমাকে দেখা করতে বললো।
আসমা জিকুর সাথে দেখা করলো দু'জনে কথা বললো তারপর সিদ্ধান্ত নিয়ে নিল বিয়ে করবে,জিকু আসমাকে সাথে করে নিয়ে গেলো ভবদা কাজী অফিসে,আগেই সেখানে উপস্থিত ছিল বন্ধু ফিরোজ। 
বন্ধু ফিরোজের সাক্ষী করে তারপর জিকু আসমা দুজনে কবুল পড়ে বিয়ে রেজিস্টার করল কাজী অফিসে বসে।
বিয়ের পর জিকুর বন্ধু সাংবাদিক ফিরোজ
জিকুকে দশহাজার টাকা ধার দিলো,জিকু
টাকা নিয়ে ফিরোজকে বললো আমি আসমাকে নিয়ে কুমিল্লায় যাচ্ছি তুই কাউকে বলিস না আর দরকার পড়লে তোর সাথে যোগাযোগ করবো বলে আসমাকে সাথে নিয়ে কুমিল্লা কর্মস্থলের উদ্দেশ্য রওনা হলো।
জিকু চাকরি পেয়ে কুমিল্লায় আগেই একটা বাসা ভাড়া করে রেখেছিল সেই বাসায় আসমাকে নিয়ে উঠলো,তারপর আনুষঙ্গিক সংসারের জিনিশ পত্র কিনে নতুন জীবন শুরু করল।
জিকু আসমাকে একান্ত স্ত্রী হিসেবে পেয়ে নিজেকে ধন্য মনে করলো,একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধা আর ভালবাসার বন্ধন আসমা আর জিকুকে যেন শক্ত করে বেধে দিল।
জিকু অফিসে যখন যেতো আসমা স্বামী জিকুর জন্য নিজ হাতে দুপুরের খাবার বানিয়ে হটপটে সুন্দর করে গুছিয়ে দিতো,জিকু আসমাকে পেয়ে এতোটাই খুশি ছিলো আসমা জিকুর কলিজাতে রূপান্তরিত হয়ে গেছে,আসমা ছাড়া জিকু কিছুই ভাবতে পারতো না।
জিকুকে পেয়ে আসমার ভালবাসা আজ যেন পূর্ণতা পেয়েছে,স্বপ্ন সুখ গুলো যেন মুঠো মুঠো হাতে এসে যেন ধরা দিয়েছে।
জিকু আসমাকে কতটা ভালবাসে আসমা সেটা আজ মর্মে মর্মে অনুভব করতে পারছে,গরিব বাবার মেয়ে সে কখনো ভাবেনি তার কল্পিত সুখ গুলো একদিন সে এমন করে বাস্তবে স্পর্শ করতে পারবে।
চলবে...

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

thank you so much